10-05-2023, 01:01 AM
![[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]](https://i.ibb.co/tMNvNCn/Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg)
দ্বিতীয় পার্ট
৬ষ্ঠ পর্ব
বানতলা পার করে সোজা চলতে থাকে আদিত্যর বাইক ইতিমধ্যে পিয়ালী বেশকয়েকবার আদিত্যর পিঠের উপর ঘুমে ঢুলে পরেছে কিন্তু পরক্ষণেই আবার সজাগ হয়ে আশেপাশে এমনকি পিছনেও দেখছে এভাবে কয়েকবার হবার পর আদিত্য বলে, "আপনি নিশ্চিন্তে একটু চোখ বুজে ঘুমিয়ে নিতে পারেন, আর কেউ আমাদের পিছু করছে না তাই ভয়ের কিছু নেই"।
পিয়ালী আদিত্যর পিঠে মাথা রেখে বললো, "আপনি নিশ্চিত রাতের ওই লোকগুলো পিছু করছে না?"
"কাল রাতে ওরা পালিয়ে গেলেও ওদের যা অবস্থা আমি করেছি তাতে আগে হাসপাতালে যেতে হবে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তারপর ওদের যে পাঠিয়েছে তাদের কাছে গিয়ে সব বললে পরে সেই মহাশয় নতুন লোক সেট করবেন তাই কাজটা সময়সাপেক্ষ"।
"কিন্তু ওরা যদি আনন্দ নিকেতনের খোঁজ পেয়ে যায় তাহলে?.. আমার জন্য সবটা নষ্ট হবে"
"সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না ওটা আমি বুঝবো আমার উপর ছেড়ে দিন, এবার নিশ্চিন্তে ঘুমোন পৌঁছে আমি ডেকে দেবো ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করবেন আর কদিনের জন্য ছুটি নিয়ে নেবেন"
"আমি কারো অধীনে কাজ করিনা তাই কারো থেকে ছুটি নেওয়ার দরকার হবে না আর আমার হাতে এখন কোনো কেস নেই"
"গুড, আর নিজের বান্ধবীদের আবার বলে বসবেন না যে এখানে আছেন"
"ওকে"
"ঘুমোন"
পিয়ালী আর কোনো কথা না বলে আদিত্যর পিঠে মাথা রাখলো আর একটু পরেই তার চোখে ঘুম নেমে এলো।
আদিত্য পিয়ালীকে নিয়ে আনন্দ নিকেতনের মেইন গেট দিয়ে না ঢুকে অন্য দিক দিয়ে নিজের তাঁবুর পাশের গেট দিয়ে ঢুকলো পিয়ালী তখনও ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আদিত্য আলতো স্বরে ডাকলো,
"উঠে পরুন.. মিস সরকার.."
"উমমম"
"উঠে পরুন আমরা এসে গেছি"
পিয়ালী আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারিদিকে একবার তাকিয়ে বাইক থেকে নামলো আদিত্য নেমে নিজের তাঁবুর দিকে একপা এগোতেই একটা ক্রুদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনে দুজনে চমকে উঠলো,
"এই যে এখন আসার সময় হলো বলি কাল সারাদিন কোথায় ছিলে? একটা ফোন করেই খালাস?"
দুজনে তাকিয়ে দেখে এক বৃদ্ধ বয়স আন্দাজ ৬৫ হবে তিনি রিসর্টের দিক থেকে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনিই কথাগুলো বলছেন, পিয়ালী দেখলো আদিত্য বৃদ্ধের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, প্রথমে পিয়ালীর একটু খারাপ লাগলো তার মনে হলো এই বৃদ্ধ এখানে থাকার জন্য আদিত্যর উপরে হয়তো রেগে আছেন তাই ওকে কথা শোনাচ্ছেন কিন্তু একটু পরেই তার সেই ভুল ভেঙে গেল সে বুঝতে পারলো এই বৃদ্ধ আদিত্যকে বকছেন তার কারণ আদিত্যর প্রতি তার অপত্য স্নেহ, একসময় বৃদ্ধ থামলেন তার দৃষ্টি পিয়ালীর দিকে, এবার তার স্বর পুরো বদলে গেল আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "যাক এতদিনে তাহলে সুবুদ্ধি হলো তোমার? খুব ভালো কতবার বলেছি ঘরে একটা বউ না থাকলে চলে না, আমি বুড়ো হয়েছি কোনদিন কত্তাবাবুর পিছনে পিছনে চলে যাবো তার ঠিক নেই সেদিন বুঝবে."
বৃদ্ধ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু এবার আদিত্য তাকে থামালো "অখিল জ্যেঠু আপনি যা ভাবছেন তা নয়"
"তা নয় মানে.. ও তোমার."
"না, উনি আমার পরিচিত দুদিন আগে এই রিসর্টে এসেছিলেন আর উনিই পার্স ফেলে গিয়েছিলেন,আর মিস সরকার উনি অখিল জ্যেঠু... এই আনন্দ নিকেতন এবং এখানে থাকা সবার গার্জেন"
এবারে বৃদ্ধ পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে বললো "আমার ভুল হয়ে গেছে মা,আমি বুঝতে পারিনি আমকে ক্ষমা করে দাও"
"এমা ছিঃছিঃ একি বলছেন আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু হয়নি" পিয়ালী সশব্যাস্ত হয়ে উঠলো এবং ঝুঁকে বৃদ্ধকে একটা প্রণাম করলো, বৃদ্ধ "ভালো থাকো মা,সুখে থাকো" আশীর্বাদ করে আবার বলতে শুরু করলেন,
"আর বোলো না মা এই ছেলের জন্য আমার বড্ড চিন্তা নিজের জন্য একটুও চিন্তা করে না ছেলেটা"
"জ্যেঠু উনি আপাতত এখানেই থাকবেন ওনার একটু বিপদ হয়েছে তাই আমি নিয়ে এসেছি আপনি ব্যাবস্থা করুন" আদিত্য বৃদ্ধকে থামিয়ে কথাটা বললো, তাতে বৃদ্ধ আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না ব্যাবস্থা হয়ে যাবে কিন্তু সকাল থেকে তোমার কিছু খাওয়া হয়েছে নাকি কিছুই পেটে পরেনি?"
"না জ্যেঠু সত্যিই কিছু খাওয়া হয়নি আর ওনারও না"
পিয়ালীকে দেখালো আদিত্য, তাতে বৃদ্ধ বললেন "ঠিক আছে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে নাও, তা এখানে পাঠিয়ে দেবো কি?"
"এখানেই দিন আজকে" আদিত্যর কথা শুনে বৃদ্ধ চলে গেলেন, পিয়ালী বৃদ্ধর পিছনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
"আপনাকে বড্ড ভালোবাসেন উনি"
"উনি সবাইকেই ভালোবাসেন, যান যতক্ষণ না আপনার নিজের রুমের ব্যবস্থা হচ্ছে ততক্ষণ আমারটাই ইউজ করুন ভিতরে ওয়াশরুম আছে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন"।
দেশপ্রিয় পার্কে মনোজিত বাবুর বাড়ির ড্রয়িংরুমে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তাদের কারো মাথায় ব্যাণ্ডেজ, কারো হাতে প্লাস্টার আবার কেউ পায়ে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় ক্রাচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনের সোফায় মনোজিত বাবু আর প্রীতমবাবু বসে আছে আর মনোজ উত্তেজিত স্বরে কথা বলছে "তোরা এতজন মিলে একটা মেয়েকে তুলে আনতে পারলি না?"
"কি করবো দাদা? পুরো দিন ফলো করেছি কিন্তু একা পাইনি সবসময় ওর সাথে একটা ছেলে ছিল" একজন মিনমিন করে উত্তর দিল তাতে যেন মনোজ আরও রেগে ওঠে,
"চুপ কর.. একটা ছেলে ছিল, ওই ছেলেটাকে শেষ করে মেয়েটাকে নিয়ে আসতে পারলি না?"
লোকগুলো আর কোনো কথা না বলে মাথা নীচু করে রইলো এবার প্রীতমবাবু বললেন "কিন্তু রাতে মেয়েটির মেস থেকে তুলে আনতে পারলি না?"
"সেখানেই তো গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানেও ওই ছেলেটা আবার সামনে চলে আসে আর আমাদের এই অবস্থা করেছে"
"চুপ কর 'একটা ছেলে এই অবস্থা করেছে' বলতে লজ্জা লাগে না তোদের?" মনোজ আবার গর্জে ওঠে "তোরা না নিজেদের সাউথ কলকাতার বড়ো বড়ো মস্তান বলিস আর একটা ছেলে একা মেরে তোদের হাতপা ভেঙে দিল?"
"হ্যাঁ দাদা বিশ্বাস করুন"
"চোপ" এবার মনোজিত বাবু গর্জে উঠলেন "সবকটা অকর্মার ঢেঁকি, মাল খেয়ে গাড়ি চালিয়ে বোধহয় কোথাও ঠুকে এই অবস্থা করেছে আর এখন গাঁজাখুরি গল্প শোনাচ্ছে"
"না স্যার বিশ্বাস করুন"
"চুপ কর" আবার ধমকে ওঠেন মনোজিত বাবু,"এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন দূর হয়ে যা এখান থেকে"
মনোজিতবাবুর ধমক খেয়ে লোকগুলো একে একে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
"মেয়েটি বোধহয় বুঝতে পেরেছে খবর নিয়েছি ভোর হতে না হতেই মেস ছেড়ে কোথাও চলে গেছে আর মেসের কাউকে বলে যায়নি" এতক্ষণে প্রীতমবাবু কথা বললেন। উত্তরে মনোজ প্রায় হিংস্র স্বরে বললো,
"যাবে কোথায় ঠিক খুঁজে বের করবো"
"আপাতত ওকে ছেড়ে দাও মনোজ, ওর বিষয়ে পরে ভাবা যাবে কোর্টে তো আসবে তখন ভাববে এখন আমাদের সামনে অন্য বিপদ" প্রীতমবাবু কথা বললেন।
"কিরকম বিপদ?" মনোজিত বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
"বিপদের নাম অভিরূপ ব্যানার্জী, আমাদের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে জানিনা ওর মাথায় কি চলছে সবকিছু জেনে গেলে আমাদের জন্য খুব খারাপ হবে, ও আমাদের ছাড়বে না"
"তাহলে তো যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।"
"ঠিক বলেছেন মনোজিতবাবু কিন্তু প্রবলেমটা হলো এখন অরুণাভ আমাদের সাথ দেবে না, অভিরূপ ব্যানার্জীর কিছু হলে ও আমাদের ছাড়বে না আগে ওর ব্যবস্থা করতে হবে"
"কি ব্যবস্থা করবেন?"
"আপনি বলেছিলেন আপনি মৌমিতাকে বলবেন ওকে বোঝাতে, বলেছিলেন?"
"বলেছিলাম"
"ও কি বললো?"
"বললো, কথা বলবে অরুণাভর সঙ্গে"
"তাতে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না যতটা আমি অরুণাভকে চিনেছি ও মানবে না"
"তাহলে বাপ ব্যাটা দুটোকেই একসাথে শেষ করবো" মনোজ আবার হিংস্র স্বরে কথাটা বললো আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর গালে একটা থাপ্পড় এসে পরলো, সবাই চমকে উঠে দেখে মৌমিতা এসেছে আর সেই থাপ্পড়টা মেরেছে রাগে সে ফুঁসছে, সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে এতটা ব্যাস্ত ছিল যে মৌমিতার আসাটা খেয়াল করেনি, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে বললো,
"কি বললি আরেকবার বল.. জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলে দেবো"
"মৌ তুই এখানে এইসময়?" মনোজিতবাবু মেয়ের এই হটাৎ আবির্ভাবে হতচকিত হয়ে গেছেন, মৌমিতা বাবার উপরে ঝাঁঝিয়ে উঠলো,
"কেন তাতে খুব অসুবিধা হয়ে গেল তাই না?"
"না..আসলে মানে." মনোজিতবাবু আমতা আমতা করতে থাকেন"
"বাবা মনোজ তোমার সামনে অরুণাভকে মারার কথা বলছে আর তুমি চুপ করে শুনছো?"
"তাতে কি হয়েছে? তোর বর আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছে" মনোজ তেজের সাথে কথা বলে তাতে মৌমিতা আরও রেগে যায় সে একপ্রকার হুংকার ছাড়ে
"অরুণাভর গায়ে যদি একটা আঁচড়ও পরে তাহলে তোকে আমি খুন করবো"
"বাব্বা মৌমিতা, খুব দরদ হয়েছে দেখছি" প্রীতমবাবু খোঁচা মারার মতো কথাটা বললেন,
"ঠিক বলেছেন আঙ্কেল খুব দরদ কারণ ওই অরুণাভ আমার হাজবেন্ড আমার সন্তানদের বাবা তাই ওর কোনো ক্ষতি আমি বরদাস্ত করবো না"।
"তাহলে তোমার হাজবেন্ডকে বোঝাও যাতে আমাদের পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়"
"অরুণাভর যা ইচ্ছা ও সেটাই করবে, তবে আপনি সাবধানে থাকুন নাহলে বিপদে পরতে পারেন"
"মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?"
"মনোজ আমার ভাই ও ভুল করলে ওকে আমি শাষণ করতে পারি, দরকার পরলে ওকে একটা নয় পাঁচটা থাপ্পড় মারতে পারি কিন্তু কেউ যদি আমার ভাই বা আমার স্বামীর ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে আমি তাকে শেষ করে দিতে দুবার ভাববো না"
"আমার ক্ষতি কি বলছিস তুই দিদি?" থাপ্পড়ের জন্য প্রথমে দিদির উপর একটু রেগে গেলেও এখন রাগ কমেছে সে দিদিকে প্রশ্নটা করে, উত্তরে মৌমিতা তাকে একটা প্রশ্ন করে,
"তুই কোনো মেয়ের সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছিলি ওনার কাছে?"
"হ্যাঁ, কিন্তু.."
"মেয়েটা উকিল, তাও হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছে ওর থেকে দূরে থাক আর ওর পিছনে যাস না, আর আপনি.. যেটা বললাম মনে রাখবেন আমার হাজবেন্ড আর ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টাও করবেন না, আপনার আর আপনার ছেলের প্ল্যান আমার জানতে বাকি নেই" শেষের কথাটা প্রীতমবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলা তাতে প্রীতমবাবুও শীতল অথচ ক্রুর স্বরে বললেন,
"আমাকে থ্রেট করছো?"
"যেটা ভাববেন, আপনি তো ভালো করেই জানেন যে কাউকে মেরে ফেলতে আমার হাত কাঁপে না"
"এই কথাটা যদি অভিরূপ ব্যানার্জী জানতে পারে কি হবে ভেবে দেখেছো? যদি তিনি জানতে পারেন যে.."
"যান বলে দিন" প্রীতমবাবুকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মৌমিতা বলে ওঠে, "যান বলে দিন আমরা জেলে যাবো তো? তার আগে হয় আপনাকেও শেষ করবো আর নাহয় আপনার কীর্তিও ফাঁস করে আপনাকে নিয়ে জেলে যাবো"
"আমার কীর্তি?"
"অভিরূপ ব্যানার্জীর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' এর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো তো আছেই তাছাড়া আরও কত কি করেছেন সব ভুলে গেছেন নাকি?"
প্রীতমবাবু এতদিন এদের অসহায়ত্ব উপভোগ করতেন তিনি ভাবতেও পারেননি যে একদিন তাকেও মুখের উপর জবাব পেতে হবে তিনিও ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মৌমিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন মৌমিতাও পাল্টা একইভাবে তাকিয়ে রইলো, মনোজিতবাবু পরিস্থিতি গরম হচ্ছে অনুভব করে সেটা স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে বললেন, "আচ্ছা আচ্ছা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে লাভ নেই, আমরা সবাই পার্টনার একই নৌকায় আছি নৌকা ডুবলে আমরা সবাই ডুববো"।
প্রীতমবাবু কিন্তু আর বসলেন না ক্রুদ্ধ স্বরে "আমার কাজ আছে আমি আসছি" বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
নিজের গোপন আড্ডায় গিয়ে রাগে ফেটে পরলেন প্রীতমবাবু রীতিমতো চেয়ার টেবিল হাতের সামনে যা পেলেন সেগুলোতে কখনো লাথি মেরে আবার কখনো আছড়ে ফেলে ভাঙতে থাকেন তিনি, তার কিছু অনুচর সেখানে ছিল কিন্তু মালিকের এই রাগী রূপ দেখে সামনে যেতে সাহস পায় না।
"আমাকে থ্রেট করলো... আমাকে... খুব সাহস হয়েছে মৌমিতা তাই না?" নিজে নিজেই গজরাতে থাকে প্রীতমবাবু, "আমাকে জেলে পাঠাবে? তার আগে তোমাদের সবকটাকে আমি পৃথিবী থেকে বার করে দেবো, আর সবার আগে অরুণাভকে.. দেখি কিভাবে আটকাও আর আমার কি করতে পারো.. এই কে আছিস?"
এতক্ষণ মালিকের রাগের ভয়ে কেউ সামনে যায়নি কিন্তু এখন মালিক নিজে ডাকছে তাই না গেলেও বিপদ, কয়েকজন একসাথে এলো, "হ্যাঁ স্যার বলুন"
"তোদের একটা কাজ করতে হবে.. না একটা নয় অনেকগুলো তবে একটা একটা করে, পারবি?"
"স্যার কবে আপনার হুকুম তামিল হয়নি বলুন? কি করতে হবে বলুন?"
"ন্যাকামি করিস না" গর্জে উঠলেন প্রীতমবাবু, তারপর একটু থেমে বললেন, "এবারের কাজগুলো অত সহজ নয়"
"বলেই দেখুন না স্যার"
প্রীতমবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন বোধহয় নিজেকে শান্ত করে মনে মনে প্ল্যানটা ছকে নিলেন আর তারপর সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন কি করতে হবে।
"হয়ে যাবে স্যার, চিন্তা করবেন না" সবাই একযোগে বলে উঠলো।
"হওয়া চাই.. নাহলে তোদের কাউকে আস্ত রাখবো না" আবার গর্জে উঠলেন প্রীতমবাবু।
"এসব কি করছেন?"
"দেখতেই তো পাচ্ছেন কি করছি?"
"এসবের দরকার নেই"
"দরকার আছে, এটা তো আপনার রুম এখানে আপনি থাকেন আর এটা এরকম অপরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন?"
আনন্দ নিকেতনে আসার পর থেকে যেন পিয়ালীর সময় আর কাটতে চায় না তাকে একটা আলাদা গেস্টরুম খুলে দেওয়া হয়েছে সেখানেই সে থাকে কিন্তু সমস্যা হলো আদিত্যর কথা মেনে সে কোর্টে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আর এরফলেই তার সমস্যা হয়েছেহ সারাদিন করার মতো কোনো কাজ নেই তার হাতে কোর্টে বা নিদেনপক্ষে তার চেম্বারে গেলেও তার সময় কেটে যায় কেউ না কেউ ঠিক আসে আর নিতান্তই না এলে আইনের বইগুলো আবার পড়তে শুরু করে বা নিজের বান্ধবীদের সাথে গল্প করে, কিন্তু এখানে সেসব বন্ধ আদিত্যই বারণ করেছে আর পিয়ালী সেটা মেনেও নিয়েছে আদিত্যর উপরে তার বিশ্বাস আছে যে সে যখন বলেছে তখন তার ভালোর জন্যই বলেছে।
কিন্তু ওই যে এক সমস্যা যে এতদিন একা থাকতো সবকাজ নিজে হাতেই করতে হতো কিন্তু এখানে কেউ তাকে কিছু করতে দেয় না, কয়েকবার এখানে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করতে চেয়েছিল কিন্তু সবাই এইবলে বারণ করেছে যে অখিল বাবু তাহলে ওদের আস্ত রাখবেন না।
শেষপর্যন্ত আর কোনো উপায় না দেখে আদিত্যর তাঁবুতে এসে ঢুকেছে আর যা ভেবেছিল ঠিক তাই একদম অগোছালো হয়ে আছে, আগের বার যখন এসেছিল তখনও একইরকম ছিল আর এখনো একইরকম আছে, তাই সে আদিত্যর পার্মিশন ছাড়াই ছড়ানো ছিটানো জিনসপত্রগুলো গোছাতে লাগলো, একদিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে এইসময় আদিত্য তাঁবুতে ছিল না রিসর্টের অফিসে ছিল কিছু ফাইল আর হিসাব দেখছিল আর বাদশাও ওর সাথেই ছিল সেইজন্যেই পিয়ালী ঢুকতে পেরেছে নাহলে পারতো না আর একে তো আদিত্যর থাকার জায়গাটা একটা তাঁবু তাতে লক করার জায়গা নেই দুই এখানে সবাই পরিচিত আর বিশ্বাসী লোক এবং তৃতীয় তাঁবুতে অন্য লোকের নিয়ে নেবার মতো জিনিস কিছুই নেই তাই তাঁবু খোলাই থাকে।
পিয়ালী ঢুকে গোছগাছ শুরু করেছে এমন সময় আদিত্য ফিরে এলো, আর ঢুকে পিয়ালীর কাণ্ড দেখে প্রশ্নটা করে,
"এসব কি করছেন?"
"দেখতেই তো পাচ্ছেন কি করছি?" পিয়ালী আদিত্যর দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয়,
"এসবের দরকার নেই"
"দরকার আছে, এটা তো আপনার রুম এখানে আপনি থাকেন আর এটা এরকম অপরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন?"
"আমি একা থাকি আমার এতেই চলে যায় অসুবিধা হয় না"
"অসুবিধা হয় না বলে এরকম থাকবেন?" পিয়ালী কথার সাথে সাথে আদিত্যর জামাকাপড়গুলো সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখতে থাকে।
"ঠিক আছে অনেক করেছেন আর করতে হবে না, এবার ছাড়ুন"
"কেন বলুন তো? আমাকে তাড়াতে চাইছেন কেন?"
"তাড়াতে চাইছি না শুধু আপনার এই কাজ বন্ধ করতে বলছি"
পিয়ালীর গোছানো প্রায় শেষ হয়ে গেছে বাকিটুকুও দ্রুত শেষ করে আদিত্যর দিকে ফিরে বললো, "এবার দেখুন তো কেমন লাগছে,ভালো লাগছে?"
"তা লাগছে কিন্তু আপনাকে এসব করতে বলেছেটা কে?"
"কে আবার কেউ না? খালি বসে ছিলাম তাই করলাম আমার খালি বসে থাকতে ভালো লাগে না"
"আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আমি আপনার ভালোর জন্যই আপনাকে কাজে যেতে বারণ করেছি"
"আমি তো আপনার কাছে কোনো এক্সপ্ল্যানেশন চাইনি, আমি জানি এবং বিশ্বাসও করি যে আপনি যেটা করেছেন এবং যা বলেছেন সেটা আমার ভালোর জন্যই, কিন্তু কতদিন? কতদিন এইভাবে থাকবো?"
কথা বলতে বলতে দুজনে আদিত্যর তাঁবুর বেতের মোড়াদুটো বাইরে নিয়ে এসে তার উপরে বসলো আদিত্য বললো,
"দেখুন আপনি এখানে থাকলে আমার বা আমাদের কারো কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু মনে হচ্ছে আপনার অসুবিধা হচ্ছে, কোর্টের ওখানে কেউ আছে নাকি যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলে মন খারাপ?"
পিয়ালী কিছুক্ষণ আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বললো "না কোর্টের ওখানে নেই"
"তাহলে কোথায় আছে বলুন তাকে নিয়ে আসছি"
"তার দরকার নেই"
"কেন?"
পিয়ালী কিছুক্ষণ চুপ করে একদৃষ্টিতে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর যে কথাটা সে বলবেনা ভেবেছিল যেটা এতদিন ধরে শুধুমাত্র তার মনের ভিতরেই ছিল সেটাই ঝর্ণার ধারার মতো সব বাধা ডিঙিয়ে বেরিয়ে এলো,
"যদি বলি সেই মানুষটা আপনি?"
কথাটা শুনে আদিত্য প্রথমে একটু চমকে গেল তারপর তার গলার স্বর একটু কঠিন হলো সে বললো,
"ইয়ার্কির একটা লিমিট থাকা উচিত আর এসব বিষয় নিয়ে ইয়ার্কি করাও ঠিক নয়"।
পিয়ালী আর থাকতে পারলো না তার ভিতরের কথাটা বলেই ফেললো,
"ইয়ার্কি নয় সত্যি... আই লাভ ইউ"
"হোয়াট?" আদিত্য মোড়া থেকে উঠে দাঁড়ায় তার মুখ শুধু গম্ভীর আর কঠিন নয় হটাৎই রাগে লাল হয়ে ওঠে, তাকে উঠতে দেখে পিয়ালীও উঠে দাঁড়ায় তার বুক দুরুদুরু করতে শুরু করেছে কিন্তু এখন আর ফেরার উপায় নেই। আদিত্য এখন পিয়ালীর দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু পিয়ালী তার জোরে জোরে নিঃশ্বাস পরার শব্দ শুনতে পারছে সে আবার বলে,
"আই রিয়েলি লাভ ইউ....আদিত্য.."
"গেট লস্ট" আদিত্য রাগে ফেটে পরলো "হাউ ডেয়ার ইউ... সাহস কিভাবে হয় আপনার? খেলছেন না আমার সঙ্গে? হ্যাঁ?"
"আদিত্য এসব তুমি কি বলছো? খেলছি মানে?" পিয়ালী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কথাটা বলে, তাতে আদিত্য আরও রেগে যায়,
"শাট্ আপ। খুব ভালো করেই জানেন কিভাবে ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে হয় তাইতো? আর হবে নাই বা কেন একজন ক্রিমিনালের মেয়ে তো.. এইসবই শিখবেন"।
আদিত্যর শেষ কথাটা যেন পিয়ালীর বুকে কুঠারাঘাত করে সে স্তম্ভিত হয়ে যায় কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে, ওদিকে আদিত্য বলে চলেছে
"দুদিন ভালো করে কথা বলেছি আর অমনি সুযোগ পেয়ে গেলেন তাই না? আর সুযোগ পেতেই সেটা নিলেন"
"আয়্যাম সরি" এতক্ষণে পিয়ালী আস্তে আস্তে কথা বলে "আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি যে."
"শাট্আপ এণ্ড লস্ট আমি আপনার মুখও দেখতে চাই না"
আদিত্যর কথা শুনে পিয়ালী একমুহূর্ত আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে যে সে অনেক কষ্টে তার চোখের জল আটকে রেখেছে, সে আর কিছু না বলে এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় আর আদিত্য রাগে একটা বেতের মোড়ায় লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দেয় তারপর অপরটায় বসে মাথাটা দুহাতে ধরে নীচু করে রাখে।
একটু পর পর পিছন থেকে কেউ একটা হাত আদিত্যর কাঁধে রাখে সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য মাথা তোলে "আপনাকে বললাম না.." ঝাঁঝিয়ে কথাটা বলে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েই থমকে যায় সে সামনে পিয়ালী দাঁড়িয়ে নেই তার বদলে আছেন বৃদ্ধ অখিল বাবু আদিত্যর ডাকে অখিল জ্যেঠু।
"জ্যেঠু আপনি?"
"তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিল"
"বসুন" বলে আদিত্য যে মোড়াটায় সে বসে ছিল সেটা এগিয়ে দেয়, বৃদ্ধ সেটাতে বসলে আদিত্য অপরটা কুড়িয়ে এনে নিজে বসে, বৃদ্ধ বলতে শুরু করেন,
"কত্তাবাবু যেদিন তোমাকে এখানে আনার কথা বললেন তখন প্রথমে আমার একটু আপত্তি ছিল সেটা সবসময়ই হয় কারণ অনেকেই ওনাকে ঠকিয়েছে তবুও ওনার এই স্বভাবটা পাল্টায়নি কিন্তু উনি শুনলেন না তোমাকে এখানে নিয়ে আসলেন ধীরে ধীরে তুমি ওনার বিশ্বাসের একজন হয়ে উঠলে একটা সময় পর অবশ্য আমিও বুঝলাম তোমাকে নিয়ে আমি ভুল ছিলাম আর বিশ্বাস করো তাতে আমি খুশীই হয়েছি। ধীরে ধীরে উনি তোমাকে আনন্দ নিকেতনের দায়িত্ব দিলেন এবং স্বীকার করছি যে তুমি সেই দায়িত্ব ভালো ভাবেই পালন করেছো"।
"আয়্যাম সরি জ্যেঠু কিন্তু আপনি বলতে কি চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না" বৃদ্ধ থামতেই আদিত্য প্রশ্ন করে, বৃদ্ধ একটু হেসে আবার শুরু করেন
"কত্তাবাবু তোমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন আমাকে বারবার বলতেন 'অখিল ছেলেটাকে কোনোদিন এখান থেকে তাড়িয়ে দিও না, ছেলেটার কেউ নেই', আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম 'আপনি কিভাবে জানলেন আপনাকে বলেছে?'।
তিনি বললেন 'সবকথা কি আর মুখে বলতে হয়? ওর মুখ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি যে ওর মনে কিছু একটা কষ্ট আছে যেটা ও নিজে একা একা বয়ে চলেছে'।" বৃদ্ধ বোধহয় হাঁফিয়ে গিয়েছিলেন তাই একটু থামলো আর এতটুকু শুনে আদিত্য বৃদ্ধর দিকে তাকালো কোনো কথা বললো না, একটু থেমে বৃদ্ধ আবার শুরু করলেন,
"আমি তখন অতটা বুঝতে পারিনি কিন্তু ধীরে ধীরে আমিও বুঝতে পেরেছি সেটা মাঝে মাঝে ভেবেছি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো তুমি বিব্রত হতে পারো এই ভেবে আর করিনি, কিন্তু আজ আমি তোমাদের কথাগুলো শুনলাম, এদিকে তোমাদের খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম আর তখনই শুনলাম, মেয়েটা যে তোমাকে ভালোবাসে সেটা আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যেদিন তুমি ওকে নিয়ে এলে, ওর চোখ বলে দিচ্ছিল তুমি হয়তো ধরতে পারোনি আর আমি এটাও বুঝতে পেরেছি যে কোথাও না কোথাও তুমিও ওকে পছন্দ করো, তাহলে ওকে ফেরালে কেন? তোমার অতীতের জন্য? কিন্তু তাতে তো ওই মেয়েটার কোনো দোষ আছে বলে মনে হয় না, তাহলে?"
আদিত্য বৃদ্ধর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মাথা নীচু করে রাখে বৃদ্ধ আদিত্যর মাথায় একবার স্নেহভরে হাত বুলিয়ে বলেন,
"প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা অতীত থাকে কিন্তু মানুষ যদি সেটা নিয়েই পরে থাকে তাহলে তো জগত চলবে কিভাবে?"
"আমার অতীত সম্বন্ধে আপনি কিছুই জানেননা জ্যেঠু"
"আমার জানার প্রয়োজনও নেই কারোরই প্রয়োজন নেই তুমি এখন আনন্দ নিকেতনের একজন এখানে তুমি নতুন মানুষ নতুন জীবন তোমার.. তাই বলছি অতীত নিয়ে পরে থেকো না তাতে তুমিও কষ্ট পাবে আর যারা তোমাকে ভালোবাসে তারাও পাবে, তোমাকে নতুনকে কাছে আসতে দিতে হবে নিজের জীবনে জায়গা দিতে হবে, ওই মেয়েটাকে তোমার কাছে আসতে দিতে হবে, আদিত্য জীবন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা তোমার থেকে বেশী আমি তোমাকে খারাপ কিছু বলবোনা..তুমি যাও ওর কাছে ও কিন্তু কষ্ট পেয়েছে"।
"আর ওকে কষ্ট আমি দিয়েছি"
"তাহলে আগে গিয়ে ক্ষমা চাও, ক্ষমা চাইলে কেউ ছোটো হয়ে যায় না"
"আর ও যদি আমাকে ক্ষমা না করে?"
"করবে... ওকে বোঝাও যে তুমি ওকে যা বলেছো সেগুলো ওর জন্য নয় সেগুলো তোমার অতীতের স্মৃতি"
"আর ও যদি আমার অতীতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে?"
"তাহলে বলবে দেখবে মনটা হালকা হবে, যাও ওর কাছে"। কথা শেষ করে বৃদ্ধ উঠে চলে গেলেন আদিত্য তখনও বসে রইলো।
নিজের ঘরে ঢুকেই পিয়ালী কান্নায় ভেঙে পরলো সে আদিত্য এইরকম রিয়েক্ট করবে আদিত্যর কথাগুলো তার ভিতরে একের পর এক আঘাত করেছে সে ঠিক করলো আর সে এখানে থাকবে না চলে যাবে এখান থেকে এমনিতেও আদিত্য তার মুখ দেখতে চায় না।
বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পরে নিজেকে কিছুটা সামলে নিল পিয়ালী উঠে নিজের জিনিসগুলো গোছাতে শুরু করলো বেশি জিনিস সে আনেনি যে মেসে থাকতো সেখানে আর যাওয়া হয়নি তার, স্যুটকেস গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েই থমকে গেল সামনে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে,
"আয়্যাম সরি" ছোট্ট করে বললো আদিত্য কিন্তু পিয়ালী কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে এগোতে যেতেই আদিত্য পাশে সরে তার পথ আটকালো আবার বললো "আয়্যাম রিয়েলি সরি"।
"একজন ক্রিমিনালের মেয়েকে সরি বলছেন? তার দরকার নেই কারণ আপনি কোনো ভুল করেননি সত্যিই তো আমি একজন ক্রিমিনালের মেয়ে"
আদিত্য বুঝতে পারলো পিয়ালী রেগে রয়েছে শুধু রাগ নয় কিছুটা অভিমানও হয়েছে তাই এইধরনের কথা যে সে বলতে পারে এবিষয়ে আদিত্য একপ্রকার নিশ্চিত ছিল তাই সে চুপ করে শুনলো তারপর পিয়ালী থামতে আবার বললো, "আয়্যাম সরি"
"হোয়াই... কেন সরি আপনি?" এবারে পিয়ালী রাগে ফেটে পরলো, "আপনার সরি বলার কিছু নেই আপনার জায়গায় আপনি ঠিক, আপনাদের চোখে হয়তো একজন ক্রিমিনালের মেয়েকে ভালোবাসা অপরাধ, বা আপনারা হয়তো মনে করেন যে একজন ক্রিমিনালের মেয়ে ভালো হতে পারে না তার কাউকে ভালো লাগতে পারে না সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না কিন্তু এটা ভুল.. এটা ভুল মিস্টার আদিত্য সিংহ রায়"।
পিয়ালীএকটু থামলো তার জোরে জোরে নিঃশ্বাস পরতে থাকে আর আদিত্য চুপ করে শুনতে থাকে পিয়ালী আবার শুরু করে,
"একজন ক্রিমিনালের মেয়েও ভালো হতে পারে তারও কাউকে ভালো লাগতে পারে সেও একজনকে ভালোবাসতে পারে সেও স্বপ্ন দেখতে পারে কারণ সেও একজন মানুষ আপনি তাতে বাধা দিতে পারেন না। আপনি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছেন আর আপনার সেই অধিকার নেই, আমাকে ভালো নাই লাগতে পারে আপনি আমাকে ভালো নাই বাসতে পারেন আপনি আমাকে একজন ক্রিমিনালের মেয়ে বলে ঘৃণা করতেই পারেন কিন্তু তাতে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যায় না, আমার আপনাকে ভালোবাসা আপনার চোখে মিথ্যা হতে পারে অপরাধ হতে পারে কিন্তু আমার কাছে সেটা নয়, আমি আপনাকে প্রথমদিন দেখার পর থেকেই পছন্দ করি, ভালোবাসি আর সেটা আমার কাছে কোনো ভুল নয় কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু আপনাকে এসব কথা বলার কোনো বাধ্যবাধকতা আমার নেই আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, আপনি বলেছেন যে আপনি আমার মুখ দেখতে চান না.. তাই হবে আর কখনও আপনি আমার মুখ দেখবেন না, ভালো থাকবেন"।
পিয়ালী আদিত্যর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আদিত্যর কথা শুনে আবার দাঁড়িয়ে পরলো, পিয়ালী যতক্ষণ বলছিল আদিত্য চুপ করে শুনছিল এবার সে কথা বলতে শুরু করে,
"আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ঘৃণা করি? আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনাকে যদি আমি ঘৃণাই করি তাহলে আপনার পার্স ফেরত দেবার অছিলায় আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম কেন? কি মনে হয় আপনার? এখানে কেউ কোনো জিনিস ফেলে গেলে প্রত্যকেকে সেটা ফেরত দেওয়ার জন্য আমি যাই? নাকি তার জন্য অন্য ব্যবস্থা আছে, কোনটা?"
পিয়ালী দাঁড়িয়ে পরলো সে একটু অবাক হলো এইকথাটা এতদিন তার মাথায় আসেনি আদিত্য আবার তাকে একটা প্রশ্ন করে,
"আপনি কখনো ভেবেছেন যে আমি যদি আপনাকে ঘৃণাই করি তাহলে যে সেদিন আপনার জন্মদিনে আপনার একবার বলাতেই আপনার সাথে পুরো দিনটা কাটালাম সেটা কি করতাম?"
পিয়ালীর রাগ কমতে থাকে আর অবাকভাব বাড়তে থাকে সে সত্যিই এই কথাগুলো ভাবেনি এতদিন তার মাথাতেও আসেনি কিন্তু এখন তার মাথায় এলো এই আদিত্যই তাকে পাহারা দেবার জন্য সারা রাত তার মেসের বাইরে জেগে বসে ছিল, এই আদিত্যই তার বাবার মৃত্যুর পরে সমস্তরকম কাজকর্ম করেছে এমনকি ডেথ সার্টিফিকেটটা পর্যন্ত যত্ন করে রেখেছিল"।
"কেন করেছিলেন ওসব?" অবশেষে পিয়ালী মুখ খোলে।
"কারণ আমি আপনার সাথে থাকতে চাইছিলাম"
"কেন?"
"কারণ আমিও আপনাকে পছন্দ করি, আর সেটা আজ থেকে নয় অনেকদিন থেকে, কিভাবে হলো জানিনা কারণ আমি এই জিনিসটা থেকে নিজেকে দূরে রাখছিলাম নিজের মনটাকে পাথরে পরিণত করেছিলাম অথচ একদিন অজান্তেই সেই পাথরে প্রাণের স্পন্দন দেখা দিল আর সেটা সেদিন বুঝতে পারলাম যেদিন শুনলাম অ্যাক্সিডেন্টে আপনি মারা গেছেন... আপনার কোনো ধারণা নেই সেদিন আমার মধ্যে কি চলছিল, তারপর সেদিন যখন এখানে আপনাকে আবার দেখলাম সেদিন কতটা খুশী হয়েছি আপনাকে বোঝাতে পারবোনা" আদিত্য থামলো সে যে নিজের মনের সাথে খি পরিমাণ যুদ্ধ করে কথাগুলো বললো সেটা পিয়ালী বুঝতে পারলো না, তার রাগ এখন প্রায় কমে গেছে তার বদলে সে বিস্ময় এবং এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকে, আদিত্য থামতেই সে জিজ্ঞেস করে "তাহলে একটু আগে আমার সাথে ওরকম করলেন কেন?"
পিয়ালীর রুমটা যেখানে সেখান থেকে একটু দূরেই একটা বসার জায়গা আছে আদিত্য সেদিকে হাঁটতে শুরু করলে পিয়ালীও স্যুটকেস রেখে পিছু নেয়, দুজনে সেখানে গিয়ে বসে পিয়ালী আবার বলে, "কি হলো বলুন আমার সাথে ওরকম করলেন কেন?"
"কারণ আমার ভাগ্যটা অন্যান্যদের তুলনায় একটু বেশীই খারাপযখনই কাউকে ভালোবাসতে শুরু করি বা তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তখনই আমাকে তার থেকে দূরে চলে যেতে হয় এই যেমন ধরুন কতগুলো বছর আমি সিংহ রায়দের নিজেদের লোক না হয়েও ওদের মধ্যে ছিলাম কিন্তু যখনই আমার মনে হতে লাগলো যে এবার আর ভাবনা নেই এদের নিয়েই বেঁচে থাকবো তখনই আমার সত্যিটা সবার সামনে চলে এলো আর আমি ওদের থেকে দূরে হয়ে গেলাম, আমি চেয়েছিলাম যাতে অন্তত বন্ধু হিসেবে আপনার সাথে থাকতে পারি, আমি আপনাকে হারাতে চাইছিলাম না। আপনার বাবার প্রতি আমার কোনো রাগ বা ঘৃণা নেই উল্টে একটা আফশোষ আছে যে আমি ওনাকে বাঁচাতে পারিনি আমার পৌঁছাতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল"।
"তাহলে আমাকে আমার বাবার বিষয়ে ওই কথাগুলো বললেন কেন?"
"ওগুলো আপনার জন্য ছিল না, কিন্তু হটাৎ আপনি প্রপোজ করায়... এক মুহূর্তে আমার অতীত আমার চোখের সামনে ভেসে আসে আর মাথায় রাগ উঠে যায় রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তার জন্য দুঃখিত, সরি"।
"অতীত? আপনার অতীত মানে?" পিয়ালী প্রশ্ন করে।
উত্তরে আদিত্য আবার একটা প্রশ্ন করে, "সেদিন যখন আমি আপনাকে বললাম যে আমি আদিত্য সিংহ রায় নই তখন আপনার একবারো মনে হয়নি যে আমি যদি আদিত্য সিংহ রায় না হই তাহলে আমি কে? কেন আদিত্য সেজে অতগুলো দিন কাটালাম?"
সত্যি এটাও পিয়ালীর মাথায় আসেনি আসলে পিয়ালী আবার আদিত্যকে কাছে পেয়ে সেটা নিয়েই খুশি ছিল বেশি কিছু ভাবতে চায়নি সে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে কাটানো সময়টা উপভোগ করতে চেয়েছে কিন্তু এখন আদিত্যর কথায় তার মাথাতে প্রশ্নটা এলো, কিন্তু সে বললো, "আপনিই তো বলেছিলেন যে অতীন্দ্রবাবু আপনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন"।
"কিন্তু তার আগেও তো আমার একটা জীবন ছিল একটা পরিচয় ছিল সেটা কি হতে পারে, একথা মাথায় আসেনি?"।
"না আসেনি, কারণ আপনি অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই আমি শুধু আপনাকে ভালোবেসেছি"।
"আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই?"
"হ্যাঁ, ভালোবেসে ফেলেছি আর এটা কোনো অন্যায় নয়"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils

