05-05-2023, 09:54 PM
(This post was last modified: 29-11-2023, 04:13 PM by Neellohit. Edited 8 times in total. Edited 8 times in total.)
২০১৭ সালের মে মাসের এক সন্ধ্যায় আমার ফোনটা বেজে উঠলো অচেনা নম্বর , ফোনটা তুললাম ফোনের ওপর থেকে ভেসে এলো আমার পিসির কণ্ঠ '' বুল্টু বলছিস ?'' '' হ্যাঁ পিসি বলো '' '' ওমা কি করে বুঝলি আমি ?'' '' তোমার গলার স্বর আমি চিনবো না ? বলো কি হয়েছে ? ফোন করলে ?'' '' বাবা খুব বিপদে পড়েছি তুই হয়তো জানিসনা তোর ভাই নীলুর ক্যান্সার হয়েছে '' '' সেকি ?'' '' হ্যাঁ রে, চিকিৎসা করাচ্ছি এখানে কিন্তু এখন ডাক্তাররা এখন বলছে বম্বের টাটা হসপিটালে নিয়ে যেতে , ওখানে একটা সস্তায় থাকার জায়গা ঠিক করে দিতে পারবি ?'' '' অন্য কোথাও কেন তোমরা আমার বাড়িতেই থেকে নীলুর চিকিৎসা করাবে , আমার বাড়িতে জায়গার কোনো অভাব নেই পিসি তুমি বা পিশুন ওকে নিয়ে চলে এস সব ব্যবস্থা করে দেব আমার নিজের গাড়ি আছে যাতায়াতের কোনো সমস্যাই হবে না '' '' আমি বা তোর পিশুন যাবো না নীলুর সাথে ওর বৌ যাবে তুই জানিস তো ওর বিয়ের ব্যাপারটা ? '' '' হ্যাঁ মায়ের কাছে শুনেছি . মেয়ে বলে তোমাদের আপত্তি ছিল বাবাইয়ের কোথায় তোমরা মেনে নিয়েছো '' '' ভুল করেছিলাম রে মেয়েটা খুব ভালো রে আমাদের খুব যত্ন করে শ্রদ্ধা করে '' '' ভালো তো '' '' তাহলে ওদের ট্রেনের টিকিট কাটতে বলি ?'' '' ট্রেনে আস্তে হবে না নীলুর কষ্ট হবে আমায় ডিটেইলস পাঠাও আমি ফ্লাইটের টিকিট কেটে পাঠাচ্ছি '' '' তোর ওপরে এমনিই চাপ দিচ্ছি তার ওপরে আবার প্লেনের খরচা ......'' '' পিসি আমার কি কোনো দায়িত্বনেই ছোট ভাইয়ের বিষয়ে নীলুকে দাও ফোনটা '' '' হ্যালো দাদাভাই ? '' '' শোন তোর আর তোর বৌয়ের ডিটেইলসটা মেইল কর আমি ফ্লাইটের টিকিট কেটে পাঠাচ্ছি পরশুই চলে আয় একদম হেসিটেট করবিনা '' '' আচ্ছা দাদাভাই আমি পাঠাচ্ছি '' একটু পরেই নীলু আমায় মেইল করে সব পাঠালো আমিও টিকিট কেটে ওকে ফিরতি মেইলে টিকিট পাঠিয়ে দিলাম | এয়ারপোর্ট থেকে ওদের আনতে গিয়ে দেখলাম নীলুকে চেনাই যাচ্ছে না কেমোথেরাপির জন্য সব চুল উঠে গ্যাছে মুখটা যেন পুড়ে গ্যাছে ওদের নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এলাম আমার ফ্ল্যাটে ছাড়তে ঘর তার একটাতে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম , পরেরদিন ছুটি নিয়ে নীলুকে আমার কন্টাক্ট ইউস করে বেস্ট ডাক্তার দেখালাম , উনি ভর্তি করতে বললেন হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিলাম নীলুর বৌ শর্মিলাকে নিয়ে বাড়িতে এলাম খুব মিষ্টি মেয়েটা শুধুই কাঁদছে , বাড়িতে এসে পিসির সাথে কথা বলিয়ে দিলাম | পরেরদিন থেকে আমার পার্সোনাল গাড়িটার ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দিলাম কি করতে হবে আর শর্মিলার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বললাম '' শোনো হাসপাতালে কোনো পেমেন্ট করতে হবে না ওটা আমার দায়িত্ব আমি যা করার করে দিয়েছি তোমার চিন্তা নেই এই টাকাটা রাখো যদি কিছু খরচা করতে হয় '' শর্মিলা টাকা নিতে চাইছিলো না আমি বললাম '' শোনো শর্মিলা নীলু আমার ছোট ভাই আর পিসি যে আমার কত আপন তোমার ধারণা নেই হয়তো তাই তুমি হেসিটেট করছো , ভাইয়ের জন্য এটুকু করার অধিকার আমার বোধহয় আছে '' শর্মিলা মুখটা নামিয়ে নিলো আমার কথা মেনে নিলো বললো '' আমি জানি দাদাভাই ইন্দ্রনীলের ( নীলুর ভালো নাম ) কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি আপনি যা বলবেন তাই হবে '' '' যাও ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে রেস্ট নাও , সারাদিন অনেক ধকল গ্যাছে কাল সকালে গাড়ি নিয়ে নীলুকে দেখতে যাবে , যখন দরকার গাড়িতেই যাতায়াত করবে এটা আমার নিজের গাড়ি অফিসের নয় তাই কোনো অসুবিধা নেই আর ড্রাইভার খুব পাকা ড্রাইভার সব চেনে ও তোমায় হেল্প করবে '' শর্মিলা মাথা নেড়ে বললো '' আচ্ছা দাদাভাই '' ও নিজের ঘরের দিকে চলে গ্যালো আমি আমার ঘরে এসে ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে ব্যালকনিতে ড্রিঙ্কস নিয়ে বসলাম , ঘন্টাখানেক পরে শর্মিলার গলার স্বরে চটক ভাঙলো '' দাদাভাই আসবো?'' '' আমি ড্রিংকসের বোতল আর গ্লাস লুকিয়ে বললাম '' হ্যাঁ এস '' ঘরে ঢুকে বোধহয় গন্ধ পেয়ে বললো '' সরি ডিস্টার্ব করলাম '' '' না না বলো আসলে আমি একটু ড্রিংক করছিলাম , কিছু মনে করোনা '' '' না না ঠিক আছে আমি কিছু মনে করিনি আমি বলছিলাম খালি পেতে খাচ্ছেন ? কিচেনে দেখলাম কাজুবাদাম আছে এনে দিই ? বা কিছু একটু বানিয়ে দিই '' '' তুমি ব্যস্ত হয়না আমি কাজু নিয়ে নিয়েছি '' এক এক ঘরে মন ভালো লাগছিলোনা তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু গল্প করি যদি আপনার অসুবিধা হলে থাকে '' '' অরে না না কিসের অসুবিধা বোসো '' বলে পাশে রাখা চেয়ারটা দেখিয়ে দিলাম শর্মিলা বসলো '' আমি কি তোমার সামনে ড্রিংক করতে পারি ?'' '' এমআআ এবার কিন্তু আপনি ফর্মাল হচ্ছেন '' আমি হেসে আবার লুকোনো ড্রিঙ্কস বার করে আনলাম , অনেকক্ষন কথা হলো ওর সাথে খুবই বুদ্ধিমতী এবং প্র্যাকটিকাল মেয়ে , কথা বলে বুঝলাম নীলুর চিকিৎসা করতে গিয়ে পিশুনের ব্যবসা শেষ ওদের নিজেদের বাড়িও বিক্রি করতে হয়েছে , এখন ভাড়ার বাড়িতে থাকে আর ও মেনেই নিয়েছে যেকোনোদিন নীলু চলে যাবে , হলোও তাই মাত্র পনেরদিন বেঁচেছিল , পিসি পিশুনের অনুমতি নিয়ে ওর অন্তিম সংস্কারের কাজ মুম্বাইতেই করলাম ,শর্মিলার প্রতি আমার যুগপত কৃতজ্ঞতা আর সহানুভূতি ছিল , কৃতজ্ঞতা এই কারণে যে আমি প্রায় সারা মাসই কলকাতার বাইরে থাকি শর্মিলী বাবাই মায়ের খেয়াল রাখতো আমি তো শুধু টাকার যোগান দিয়েই কর্তব্য পালন করি আর শর্মিলা মা আর বাবাইকে নিজের মা বাবার মতোই সেবা করতো , আমার সব অভাব ওই পূরণ করার চেষ্টা করতো , এবার বলি সহানুভূতির কারণ ওর বর আমার পিসতুতো ভাই নীলু আমার খুব নেওটা ছিল এতো অল্প বয়সে ওর মৃত্যু আমায় খুব নাড়া দিয়েছিলো মেনে নিতে কষ্ট হতো , নীলুর অন্তেষ্টির পর বাড়ি ফিরে আমি শর্মিলাকে সান্তনা জানাতে পারছিলামনা যদিও শর্মিলা বাস্তবটা আগে থেকেই জানতো তবুও অনেক্ষন চুপচাপ নিজের ঘরে বসে কাঁদছিলো আমি কিছু বলিনি আমি চাইছিলাম ও কাঁদুক মনটা হালকা হোক আমি নিজের ঘরের ব্যালকনিতে বসে ড্রিংক করছিলাম বেশ কিছুক্ষন পরে শর্মিলা দরজায় নক করলো আমি বললাম '' এসো '' শর্মিলা হাতে একটা প্লেটে কাজুবাদাম নিয়ে সামনে রাখলো '' খালিপেটে খাচ্ছেন তাই আনলাম '' '' শর্মিলা বোসো '' পাশে রাখা আর একটা চেয়ারে শর্মিলা বসলো , দুজনেই চুপ করে আছি বেশ কিছুক্ষন পরে আমিই বললাম '' যেন শর্মিলা নীলুটা ছোটবেলায় আমার খুব নেওটা ছিল আমাদের বাড়িতে এলে সবসময় আমার সাথে এঁটে থাকতো '' '' জানি দাদাভাই ও সবসময় আপনার কথা বলতো বোধহয় সেইজন্যই আমিই মা'কে বলেছিলাম আপনাকে বললে চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা হবে '' '' ঠিক করেছো , তোমায় একটা কথা বলি এরপর থেকে তুমি সবসময় মনে করবে নীলু না থাকলেও ওর দাদাভাই আছে আমি বয়সে অনেকটাই বড়ো যদিও তবুও আমায় ভাসুর কম বন্ধু বেশি বলেই ভেবো যেকোনো সমস্যাই হোক প্রথম আমায় তুমি জানাবে '' '' নিশ্চই দাদাভাই তবে আপনি তো জানেন ব্যবসার সব পুঁজি শেষ , আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা যদি করে দিতে পারেন ......'' '' আমি নিশ্চই চেষ্টা করবো যতদিন না পাচ্ছি আমি তোমার একাউন্টে কিছু টাকা পাঠাবো কোনো আপত্তি করবে না মনে রেখো আমি নীলুর দাদাভাই '' শর্মিলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো '' কালকের দিনটা যাক আমি অফিস থেকে ছুটির ব্যবস্থা করে পরশুর ফ্লাইটে তোমায় নিয়ে কলকাতায় ফিরবো '' দুদিন পরে অফিস থেকে কদিনের ছুটি নিয়ে শর্মিলাকে নিয়ে কলকাতায় ফিরলাম , মুখাগ্নি যেহেতু আমি করেছিলাম তাই শ্রাদ্ধের কাজ করে মুম্বাইতে ফিরলাম , মাসখানেক পরে বাবাইয়ের ফোন পেলাম পিশুনও মারা গ্যাছেন বাবাই শর্মিলা আর পিসিকে আমাদের বাড়িতেই নিয়ে এলেন বাবা জ্যাঠার এই একটাই বোন খুব আদরের , কলকাতা থেকে দূরে থাকি মা বাবাইয়ের জন্য চিন্তা থাকেই , মনে মনে ভাবলাম ভালোই হলো , কিন্তু কয়েকমাস পরে পিসিও চলে গেলেন সেই থেকে শর্মিলা মা আর বাবাইয়ের কাছেই রয়ে গ্যালো |