05-05-2023, 03:19 PM
১.
(ক্রমশ)
বিরাশি বছরের জেঠামশাই হঠাৎ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
২.
জেঠামশাইয়ের আর আপনজন কেউ নেই বলেই তিনি ভাইপো প্রিয়মের কাছে, পৈতৃক-ভিটের একতলাতে থাকতেন।
৩.
পক্ষাঘাত জেঠামশাইকে চিরতরে শয্যাশায়ী করে ফেলল।
৪.
প্রিয়ম তখন বাধ্য হয়েই জেঠামশাইয়ের দেখাশোনার জন্য রাত-দিনের একজন সেবিকার ব্যবস্থা করল।
৫.
আলো মেয়েটি ট্রেইনড না হলেও কাজে ভালো; সে কম পয়সায় রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত রোগী-সেবার ডিউটি করতে রাজি হয়ে গেল।
৬.
প্রিয়মের সদ্যই বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে।
৭.
প্রিয়মের বাবা-মা দু'জনেই গত হয়েছেন।
৮.
প্রিয়ম পৈতৃক-বাড়ির দোতলায় একা থাকে এবং সন্ধের পর অফিস থেকে ফিরে নিয়মিতই আজকাল মদ খায়।
৯.
আজ প্রিয়ম অফিস থেকে বাড়ি ফেরবার সময় তাকে আলোই দরজা খুলে দিল।
১০.
আজ সন্ধেবেলা প্রিয়ম মদ খেল না।
১১.
রাত ন'টা নাগাদ আলো উপরের হাফ সিঁড়ি উঠে এসে, প্রিয়মকে ডেকে জানাল: "জেঠামশাইকে খাইয়ে, শুইয়ে দিয়েছি..."
১২.
প্রিয়ম সামান্য ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করল: "তুমি কিছু খেয়েছ?"
১৩.
আলো স্মিত হেসে বলল: "আমি বাড়ি থেকে খাবার এনেছিলাম... আপনি এবারে খেয়ে নিন।"
১৪.
প্রিয়ম খেয়াল করল, আলো মেয়েটি বেশ ফর্সা, ঋজু, ছিপছিপে, টিকোলো নাক, ডাগর চোখ, লালচে গাল যুক্ত এবং বয়স আন্দাজ তিরিশের নীচেই।
১৫.
আলোর ঘন, আর জোড়া ভুরুর উপরে দগদগে সিঁদুরের টিপটাও প্রিয়মের চোখ এড়াল না।
১৬.
আলো কানাঘুষো শুনেছিল, এই বাড়ির দাদাবাবু ডিভোর্সি; তাই প্রিয়মের সামনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়েই ওর ভয়ানক মেয়েলি অস্বস্তি শুরু হল এবং তার টানেই আলো বুকের ওড়নাটাকে আরেকটু টেনেটুনে নিল।
১৭.
প্রিয়ম গলাটা খানিক ঝেড়ে, জিজ্ঞেস করল: "শুনলাম, তোমার নাকি হঠাৎ স্বামী ছেড়ে চলে গেছে বলে, এখন আতান্তরে পড়ে এইসব আয়ার কাজ করতে হচ্ছে?"
১৮.
আলো আস্তে করে মাথা হেলাল: "ঠিকই শুনেছেন..."
১৯.
কথাটা বলেই আলো মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে, আবার সিঁড়ি বেয়ে নীচের দিকে নামতে শুরু করল।
২০.
প্রিয়ম হঠাৎ পিছন থেকে প্রশ্ন করল: "তোমার কোনও বাচ্চা-কাচ্চা হয়নি?"
২১.
আলো নীরবে দু'দিকে মাথা নেড়ে, অনেকটা নীচে নেমে গেল।
২২.
প্রিয়ম হঠাৎ গলা তুলে, রেলিং ধরে ঝুঁকে বলে উঠল: "আমারও কেউ নেই... আমিও খুব একা!"
২৩.
আলো, প্রিয়মের প্রায় চিৎকার সম কথাটা শুনে, চমকে উপর দিকে ফিরে বলল: "আস্তে... জেঠামশাইয়ের ঘুম ভেঙে যাবে!"
২৪.
বাচ্চা ছেলের মতো দু'দিকে মাথা নাড়ল প্রিয়ম: "ভাঙুক গে... উঠে তো আর আসতে পারবে না! তা ছাড়া ও বুড়ো ঘুমের ওষুধ খায়... ঘুম সহজে ভাঙবে না।"
২৫.
আলো হঠাৎ ওর পুরু লালচে ঠোঁট দুটোয় ফিক্ করে হেসে উঠে, উপর দিকে তাকিয়ে বলল: "আপনি খেয়ে নিন; খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকলে মাথা গরম হয়ে যায়!"
২৬.
প্রিয়ম তবু অসংলগ্নভাবে মাথা নেড়ে বলল: "জানো, বউটা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি রোজ রাতেই গ্যালন-গ্যালন মদ গিলতাম; কিন্তু আজ একফোঁটাও খাইনি, অন্ গড!"
২৭.
আলোর ওর জোড়া, আর ঘন ভুরু দুটো উপর দিকে তুলল: "কেন?"
২৮.
প্রিয়ম একটা বড়ো করে দম নিয়ে হাসবার চেষ্টা করল: "তোমাকে দেখে!"
২৯.
আলো আবার ওর সরু কোমড় ও তার পিছন দিকের কলসির মতো সুডৌল পাছাটাকে দোলাতে-দোলাতে, অতি ধীরে সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসতে-আসতে, গলায় ছদ্ম বিস্ময় ফুটিয়ে বলল: "হঠাৎ আমাকে দেখে আপনি মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেন! কেন?"
৩০.
দোতলার সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছাতেই, প্রিয়ম, আলোকে দু'হাত বাড়িয়ে নিজের বুকে টেনে নিতে-নিতে বলল: "এই জন্যে গো, শুধু এই রাতটুকুর জন্যে..."
৩১.
আলো বিনা-বাঁধায় প্রিয়মের শক্ত বুক-পেশিতে নিজেকে মিশিয়ে দিতে-দিতে বলল: "শুধুই এই রাতটার জন্য?"
৩২.
প্রিয়ম কথাটা শুনেই আরও জোরে আলোকে নিজের মধ্যে পিষে নিতে-নিতে, দু-আঙুল দিয়ে আলোর থুতনিটাকে উঁচু করে ধরে বলল: "নাহ্, ভুল বলে ফেলেছি... বোধ হয় সারা জীবনের জন্যই!"
৩৩.
এই কথাটা শোনবার পর আলো যেন সামান্য কেঁপে উঠল; ওর চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠল অজানা কোনও আবেগে; আলো তখন আস্তে-আস্তে মুখ বাড়িয়ে, প্রিয়মের ঠোঁটে সজোরে মিশিয়ে দিল নিজেকে।(ক্রমশ)