01-05-2023, 02:20 PM
|| কন্টেন্ট ||
~ বুম্বা ~
সাংসারিক কাজের চাপ, অফিসের কাজের চাপ, শারীরিক অসুস্থতা এবং সর্বোপরি সময়ের অভাব .. এই সবকিছুর জন্য আমার সৃষ্টি থ্রেড নেগলেক্টেড হচ্ছে। এই থ্রেডে লেখা দেওয়া প্রায় অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে। তবে উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও এই থ্রেডে দেখা দিতে না পারার আরও একটা বড় কারণ হলো কনটেন্টের অভাব। কত আর স্মৃতিকথা লিখবো, কত আর কবিতা লিখবো, কত আর ছোটগল্প লিখবো, কত আর প্রতিবেদন লিখবো! নাক খুঁটে গোল পাকাতে পাকাতে একসময় হাত শূন্য হয়ে যায়। তাই লেখা কমে গেছে। নিশ্চয় ভালো মালের, থুড়ি ভালো লেখার যোগান দিতে পারছি না .. তাই সৃষ্টি থ্রেডের মুখ ভার। তবে দোকান এখনই বন্ধ করছি না .. এই ব্যাপারে আমার পাঠকবন্ধুরা এবং নিন্দুকেরা উভয়েই নিশ্চিত থাকতে পারেন।
সেদিন গিয়েছিলাম দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে। সেখানে ফুড কোর্ট আছে .. বিশাল ভিড়। দেখি চারিদিকে লোকজন গিলছে, থুড়ি খাচ্ছে অনেকরকম খাবার। সেখানে আগেও অনেকবার খেয়েছি। বিশাল দাম, কিন্তু খাবারের মান বেশ খারাপ। বাসি-পচা নয়, তবে খাবারগুলোর কোনো টেস্ট নেই। কেমন যেন পানসে! তবু লোকজন খাচ্ছে, লাইন দিয়ে খাবার কিনছে। আমি আর ভ্যানিলাও কিছু একটা খাবো ঠিক করেছি। তার মধ্যেই আমি অবশ্য চারিদিক দেখে নিচ্ছি, যদি কোথাও কোনো কনটেন্ট পাই!
লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে জোর কদমে হেঁটে গিয়ে সিজলারের ধোঁয়া ওঠা পাত্র নিয়ে চলে গেলো। সেটি দেখে এক বয়স্ক মহিলা বললেন , "খুব ভালো জায়গা রে বাবু এটা .. দেখে মন ভরে গেলো। সন্ধেবেলা ধুনো দিচ্ছে। আজকাল বাড়িতেই কাউকে ধুনো দিতে দেখা যায় না।" তার ছেলে বোঝাচ্ছে, "মা এটা ধুনো নয় ,খাবার।" সেই শুনে তার মা দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে বললেন, "শহরের লোকে ধুনোও খায়! বেশ বেশ ..'
যাইহোক, আমরাও ঘটনাচক্রে সিজলার অর্ডার দিয়েছিলাম। দুই বাটি ধোঁয়া নিয়ে একটা সিট দখল করলাম। ভ্যানিলার কোনো ইচ্ছে ছিলো না এখানে আসার, ও অন্য কোথাও যেতে চেয়েছিলো। আমিই কনটেন্ট এর লোভে এসেছি। ছেলের কথা না শোনার শাস্তি হিসেবে সে সবেতেই অভিযোগ করবে .. এটা বেশ বুঝতে পারলাম। ভ্যানিলার প্রথম অভিযোগ, "সিজলার খুব গরম!"
ঠাণ্ডা সিজলারের আবিষ্কার এখনো হয়নি .. সেটা আর ওকে কে বোঝাবে! ওর বক্তব্য, "কোল্ড কফি , ফায়ার পান , আইস টি ... এসব থাকলে কোল্ড সিজলারও নিশ্চয় আছে।" কোনোরূপ তর্কে না গিয়ে আমি বললাম, "আছে হয়তো, তবে এখানে কিনতে পাওয়া যায় না। একটু ওয়েট কর সোনা আমার, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। সে বললো , "টাইম নেই , বাড়িতে অনেক কাজ!" যে ছেলে নিজের পড়াশোনা, খেলাধুলা, খাওয়াদাওয়া আর ঘুম .. এই চারটি জিনিস ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো ক্রিয়াপদ আছে কিনা জানে না, তার আবার বাড়িতে কি কাজ! যাই হোক, আর কথা না বাড়িয়ে আমিই তাই প্লেটে ফুঁ দিতে শুরু করলাম।
খেয়ে দেখলাম বেশ খারাপ খেতে, কিন্তু গরম। তাই, দ্রুত খাওয়া অসম্ভব। অগত্যা অপেক্ষা করতেই হলো। লক্ষ্য করলাম সামনের টেবিলে একটি মেয়ে আর তিনটি ছেলে বসে আছে। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে সম্ভবত। মেয়েটা ওইটুকু সময় টেবিলে বসে কয়েক হাজার সেলফি তুললো। ছেলেগুলোকে অবশ্য তার একটাও ছবি তুলতে দেয়নি। তারা অর্থাৎ ছেলেগুলো সবেতেই "হা হা হা" করে যাচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞ মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝতে পারলাম তিনজনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে মেয়েটির মন জিতে নেওয়ার জন্য। একটু বাদে মেয়েটির হাতে একটা চুড়ি আটকে যায় পরতে গিয়ে। সে হাত এগিয়ে দিলে তিনজনের মধ্যে একজন ছেলেই সুযোগ পায় সমস্যা সমাধানের। বাকি দুজন তখনও হাসছে। কারা যেন রটাচ্ছে বুম্বা নামের একজন থার্ডক্লাস লেখক/কবি লিখেছেন ..
অনেক হাসির পরেই আসে অনেক মনখারাপ
অনেক খাওয়ার পরেই আসে অনেক পেটখারাপ
ইশশ, সত্যিই থার্ডক্লাস কবিতা। তাই না? সবাই ঠিকই বলে, 'বুম্বা' আর 'পটি' সম্বন্ধীয় ব্যাপার-স্যাপার .. এই দুটো সমার্থক শব্দ।
যাইহোক, অনেক কষ্ট করে আমরা সিজলার শেষ করলাম। আমাদের টেবিলের কাছেই দু'জন মহিলা বসেছিলেন। পাহাড়প্রমাণ খাবার নিয়ে বসেছেন। কিন্তু তারা আলোচনা করছেন ডায়েট প্ল্যান নিয়ে। তাদের কথার বিষয়বস্তু হলো .. দু'জনেই ডায়েট করছেন ওজন কমাতে। কিন্তু আজ তাদের চিট মিল। তারা এতো জোরে কথা বলছে, যে না চাইলেও আমার কানে সবই আসছে। আমি ভাবলাম , 'মন্দ কি! কনটেন্ট ইজ কলিং।' তাদের কথা শুনে বুঝলাম, এরকম চিট মিল তারা মাঝে মাঝেই করে ফেলেন। তাই অপরাধবোধে ভোগেন। এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ একটি মেডিটেশন কোর্স করছেন। সেখানে বলা আছে .. চিট করা নাকি সবচেয়ে বড় পাপ। কথার পৃষ্ঠে কথা, তার পৃষ্ঠে কথা শুনে বুঝলাম, দু'জন মহিলার মধ্যে একজন পরকীয়াও করছেন। অর্থাৎ উনি শুধু মিল নয় অন্যকিছুও চিট করেন। কিন্তু মেডিটেশন কোর্স করেও ফল হচ্ছে না। যিনি পরকীয়া করেন না সেই মহিলার বক্তব্য .. তিনি পরকীয়া করেন না, শুধু মিলেই চিট করেন। অর্থাৎ নিজের সঙ্গে চিট। অন্য কারো সঙ্গে তো চিট করছেন না। সুতরাং এটা পাপ হতে পারে না। অপর মহিলাও সহমত হলেন যে চিট মিল পাপ নয়। চিটফান্ড পাপ হতে পারে। তিনি এটাও যোগ করলেন যে, পরকীয়া করেও তিনি পাপ করেননি। কারণ , তার বরও পরকীয়া করছে। তাই ম্যাচ আপাতত চিট - চিট হয়ে ড্র যাচ্ছে। বর্তমান পরকীয়াকে চিট করে যে পরপরকীয়া করবে সে লিড করবে। পরকীয়ার উপর পরকীয়াকে 'পরপরকীয়া' বলে। না মানে কেউ বলেনি, আমিই বললাম আর কি।
যাইহোক, সিজলার খেয়ে আমাদের মুখটা কেমন যেন হয়ে গেলো। ভ্যানিলা বললো .. ভার্জিন মোজিতো খাবে। আমিও তাই কিনলাম। কিন্তু খেয়ে দেখলাম লেবুর বিচি চিবিয়ে ফেললে মুখে যেমন বিশ্রী একটা তিতকুটে স্বাদ হয় সেইরকম কিছু একটা হলো। তার সঙ্গে নাম না জানা কিছু গাছের পাতা আর বরফ জল। যার এক একটার মূল্য ১৬৬ টাকা করে!
আমি ঠিক করলাম আর কোনোদিন ওই মলের ফুডকোর্টে খাবো না। ভ্যানিলা বললো, "পাপা তুমি লাস্টে আমার সঙ্গেই অলটাইম এগ্রি করো, কিন্তু ঠকে যাবার পর। প্রথমে সহমত হয়ে গেলে ঠকাটা এড়ানো সম্ভব হয়।" ছেলের কথায় মুচকি হেসে বললাম, "ভাগ্যিস ঠকেছি .. না ঠকলে তো কনটেন্ট পেতাম না!"