Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি (চতুর্থ পর্ব প্রকাশিত)
☝️☝️☝️

প্রথমাংশ উপরে


ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি


 তৃতীয় পর্বের দ্বিতীয়াংশ


আরও মিনিট পাঁচেক হেঁটে আমরা পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছলাম। নামে ফাঁড়ি হলেও দেখলাম যে পরিমাণ পুলিশী ব্যবস্থা তাতে এটাকে থানা বললে ভুল বলা হবে না। বড়বৌদি সোজা ভিতরে ঢুকে গেল, ভিতরে টেবিল চেয়ারে বসে উর্দিধারীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল ইনচার্জের ব্যাপারে! বড়বৌদির রূপের কারণেই কীনা জানিনা দেখলাম কনস্টেবলটা সটান আমাদের ইনচার্জ কেবিনে নিয়ে গেল। আর কে জানত এখানেই আরও এক মহাচমক অপেক্ষায় ছিল আমাদের জন্য!

ইনচার্জকে দেখেই বড়বৌদি যেন ভীষণ বিস্মিত হল, "নিশীথ! তুমি!" সামনের সুঠাম চেহারার খাকি পোশাকের কান্তিময় চেহারাটাও যেন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল, "কামিনী! তুমি! এখানে!" দুজনের বক্তব্য শুনে বুঝতে অসুবিধা হল না, এরা দুজনেই পূর্বপরিচিত। একটু পরে বিহ্বলতা কাটলে বুঝলাম আমার ধারণা মিথ্যা নয়। বড়বৌদি আর এই থানার ইনচার্জ দুজনেই ক্লাসমেট ছিল। ভদ্রলোকের নাম নিশীথ বটব্যাল, বর্তমানে ডিএসপি র‍্যাঙ্কে আছেন। পোস্টিং বাংলাতেই ছিল, কিন্তু আমাদের একজন নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে ধুম্রগড়ে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। নিশীথবাবু অবশ্য এসব ব্যাপারে খুব একটা দুঃখিত হয়েছেন বলে মনে হল না, শুধু বললেন, "একটাই আফসোস! নেতাটাকে জেলে ভরার সুযোগ পেলাম না, কয়েক লক্ষ টাকা হাপিশ করে দিয়েছে লোকটা কেন্দ্রের রাস্তা উন্নয়ণ প্রকল্প থেকে! কিন্তু রাজ্যসরকারের হাত মাথায় আশীষ হিসাবে আছে তাই, ফাইনাল রিপোর্ট সাবমিটের আগেই আমাকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হল আর একজন পা চাটা অফিসারকে তদন্ত কেসের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হল। শুনেছি ও ব্যাটা নাকি নিজের রিপোর্টে লিখেছে, ইনভেস্টিগেশনে কোন তছরূপী খুঁজে পাওয়া যায় নি! ভাবা যায়! নেতা একেবারে ক্লিনচিট!" বৌদি ঘাড় নাড়ল, "এ আর নতুন কী ব্যাপার!" এটাসেটা কথা হতে হতে বুঝলাম, নিশীথদা বড়বৌদির স্রেফ ক্লাসফ্রেন্ড ছিল না, যেরকম ফিলিংস দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বন্ধুর থেকে একটু বেশীই কিছু ছিল। যাইহোক, কথায় কথায় আমাদের ধুম্রগড়ে আসার প্রসঙ্গ যথারীতি উঠল, বড়বৌদি মোটামুটি সুকুমারবাবুর আগমণ থেকে অন্তর্ধান অবধি সবটাই মোটামুটি খুলে বলল, সুরঞ্জনের অশ্লীল কবিতার আড়ালে লুকোনো গুপ্তধন সূত্রও বাদ গেল না। নিশীথবাবু হাঁ করে সবটা শুনছিলেন, "পোদ্দার পরিবার নিয়ে বহু কথা আমি শুনেছি এখানে আসার পর এমনকি সুরঞ্জন পোদ্দারের কীর্তি কাহিনী সব শুনে তাঁকে আমার একজন মহাপুরুষ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু এই গুপ্তধনের কেসটা প্রথম শুনলাম। আচ্ছা একটা জেরক্স কপি আছে বললে তাই না? ওটা দেখি একবার?" বৌদি আমার দিকে ইশারা করতেই আমি প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে খুলতে যেতেই নিশীথবাবু বাধা দিলেন, "তোমার পকেট থেকে একটা কাগজ পড়ল মাটিতে, দেখ ওটাই কী না?" আমি ঘাড় নাড়লাম, "না না জেরক্সটা আমি ভাঁজ করে মানিব্যাগে রেখেছি। ওটা কেন হবে!" বলতে বলতে আমি কাগজটা কুড়িয়ে ভাঁজটা খুলতেই মনে হল পায়ের তলা থেকে মাটি খসে গেছে। আমার মুখ পাণ্ডুরবর্ণ ধারণ করেছে দেখেই বড়বৌদি চট করে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, "কী রে! কীসের কাগজ ওটা বলবি তো? অ্যাই বাপান? দেখি আমাকে দে?" বলে বৌদি কাগজটা হাত থেকে নিয়ে নিল। চার ভাঁজের করা একটা সাদা রঙের কাগজ। ছাপার কালিতে চিঠির আকারে লেখা আছে,


[Image: 20230429-225201.jpg]


কামিনী দেবী,
        যদি নিজের আর আপনার সাধের দেবরের প্রাণের মায়া থাকে তবে ধুম্রগড় থেকে দূরে থাকুন। পরে আবার বলবেন না যেন সাবধান করিনি।
                                              আপনার,
                                           শুভাকাঙ্ক্ষী

চিঠিটা পড়ে বড়বৌদির মুখে একটু চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল, "তোর পকেটে কে এটা রেখেছে বা কখন রেখেছে কিছু মনে পড়ছে?" আমি ঘাড় নাড়লাম, "নাহ! কে হাত দেবে পকেটে?" নিশীথ বাবু বললেন, "হয়তো ট্রেনে কেউ করেছে কিংবা তোমরা যেখানে ছিলে এতক্ষণ? একটু খেয়াল কর?" আমি আবার মাথা নাড়লাম, "ট্রেনে তো একদমই নয় মনে হয়, ট্রেনে চেপে আমি ঝালমুড়ি কিনতে ওয়ালেট বের করেছিলাম, স্পষ্ট মনে আছে তখন পকেটে এরকম কোন ভাঁজ করা কাগজ ছিল না। বাকী রাস্তা পুরোটাই বসে এসেছি, যে কয়েকবার বাথরুম গেছি, তখন ট্রেনে তখন তেমন একটা ভীড় ছিল না। আর ইস্টিশন থেকে তো রিকশায় চেপেই শান্তিনীড়ে গেছি। আর এখন তো বড়বৌদির সাথে রাস্তা দিয়ে হেঁটে এলাম। সুতরাং…" বড়বৌদি বলে উঠল, "ইস্টিশনে নামার সময় হয়েছে।" আমি বললাম, "কিন্তু সেটাই বা কীভাবে?" বড়বৌদি বলল, "খেয়াল করে দেখ, কয়েকজন গান গাইছিল রেলের কামরায়, বেশ ভীড় জমেছিল তখন। সত্যজিৎ আমাদের ব্যাগগুলো নিয়ে নামল ধুম্রগড়ে, তার পিছনে আমি নামলাম আর সবার পিছনে তুই। ট্রেনের গেটের কাছে ভীড়ও হয়েছিল, ওইসময় মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যমনস্ক হয়। আমার ধারণা ঐ ফাঁকেই কেউ কাগজটা তোর পকেটে গুঁজে দিয়েছে।" আমি ঘাড় নাড়লাম, "হতে পারে! কিন্তু এই কাগজটা থেকে কিছুই কি জানা সম্ভব নয় কে দিল তার ব্যাপারে?" বড়বৌদি একটু ভেবে বলল, "আচ্ছা নিশীথ এখানে কোন ছাপাখানা আছে নাকি?" নিশীথবাবু ঘাড় নাড়লেন, "একটাই ছাপাখানা আছে পুরো ধুম্রগড়ে! রঙ্গিনী প্রেস। কিন্তু হঠাৎ ছাপাখানার প্রসঙ্গ কেন?" বড়বৌদি বলল, "কতদুরে এখান থেকে? একবার ওখানে যেতে হবে। কেউ না কেউ তো চিঠিটা ছাপিয়েছে, হতে পারে লোকটার সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যেতে পারে?" নিশীথবাবু উঠে দাঁড়ালেন, "বেশ চল! এখান থেকে মিনিট পাঁচেক লাগবে গাড়ীতে। কিন্তু তুমি শিওর যে, এখান থেকেই হুমকি চিঠিটা ছাপা হয়েছে?" বৌদি ঘাড় নাড়ল, "সুদূর বঙ্গ থেকে চিঠি ছাপিয়ে নিশ্চয়ই কেউ ধুম্রগড়ে এসে পকেটে দেবে না! এখানকারই কেউ তাতে সন্দেহ নেই।" 

গাড়ীতে বসে আমি ভাবলাম, লোকে বলে পুলিশের গাড়ীতে চাপলে নামতে নামতে লোকে বুড়ো হয়ে যায়! নিশীথবাবু মনে হয় গম্ভীর সিরিয়াস মুডটা হালকা করতেই আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন হঠাৎ, "বড়বৌদির খুব খেয়াল রাখ মনে হচ্ছে?" আমি হেসে ঘাড় নাড়লাম, "বৌদি আমার বৌদি কম মা বেশী! তা আপনি এখানে একাই থাকেন?" নিশীথবাবু হাসলেন, "আবার আপনি কেন? তুমি করেই বলবে, আর নিশীথদা বলে ডাকবে বুঝেছ? একলা না থেকে উপায়, এইসব জায়গায় পরিবার এনে বিপদ করার আছে!" বড়বৌদি জিজ্ঞেস করল, "নিশীথ তোমার ছেলেমেয়ে কটা?" নিশীথদা বলল, "এক মেয়ে। ক্লাস নাইনে পড়ছে।" এরপর টুকটাক আরও দুএকটা কথা হতে না হতেই রঙ্গিনী প্রেস চলে এল। একজন বছর ষাট-পঁয়ষট্টির লোক আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন, নিশীথদা পুলিশের পোশাকেই ছিল, বলল, "একটা কেসের জন্য আপনার প্রেসে আসতে হয়েছে। একটু সাহায্য লাগবে।" ভদ্রলোক দেখলাম অমায়িক, হাসিমুখেই রাজী হলেন। নিশীথদা চিঠিটা এগিয়ে দিল, "দেখুন তো এই চিঠিটা আপনার এখান থেকেই ছাপা হয়েছে কি না?" ভদ্রলোক চিঠিটা পড়লেন, তারপর ঘাড় নাড়লেন, "নাহ! এটা আমাদের প্রেস থেকে ছাপা হয় নি।" নিশীথদা বলল, "ঠিক স্মরণ করতে পারছেন, আপনারটা ছাড়া তো গোটা ধুম্রগড়ের কোথাও আর কোন প্রেস নেই।" ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন, "সেটা ঠিক, তবে এই চিঠিটা আমাদের তো নয়ই কোন প্রেসেই ছাপানো হয় নি। আসলে এটা ছাপানো চিঠি নয়!" আমরা হতবাক হয়ে গেছি, কী বলছেন ভদ্রলোক! "এটা মুদ্রিত চিঠি নয়?" ভদ্রলোক ফের বললেন, "মুদ্রিত তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু ছাপাখানা মুদ্রিত নয়। এটা বাংলা টাইপরাইটারে লেখা!" নিশীথদা এবার ঘাড় নাড়ল, "ঠিক এটা তো খেয়াল করা উচিৎ ছিল, চিঠি টাইপরাইটারেও লেখা যায়, ছাপাখানা যাওয়ার প্রয়োজনই নেই!" ভদ্রলোক বললেন, "আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে পারি, হয়তো আপনাদের সাহায্যে লাগতে পারে।" বড়বৌদি লুফে নিল কথাটা, "অবশ্যই! বলুন, সামান্য কিছু জানতে পারলেও বড় উপকার হবে!" ভদ্রলোক চিঠিটা একটা টেবিলে রেখে, আতস কাঁচ বের করলেন একটা, "বলার আগে আমাকে একবার নিঃসন্দেহ হতে হবে! এক মিনিট ধৈর্য ধরুন।" প্রায় মিনিট খানেক খুঁটিয়ে দেখে ভদ্রলোক বললেন, "চিঠিটা টাইপরাইটারে লেখা এতে কোন সন্দেহই নেই। তবে টাইপরাইটারটা সম্পর্কে বলা যেতে পারে, এটা রেমিঙটন কোম্পানির প্রথম দিকের মেকানিক্যাল বাংলা টাইপরাইটার মডেলের। 

[Image: Screenshot-20230430-215046-Gallery.jpg]

দেখুন ভাল করে বুঝতে পারবেন, ধুম্রগড় শব্দতে 'ম'এ র-ফলাটা অনেকটা নীচে পড়েছে, কিন্তু প্রাণের শব্দতে 'প' এ র-ফলা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা হয় নি। 

[Image: Screenshot-20230430-215055-Gallery.jpg]

আবার এদিকে দেখুন, শুভাকাঙ্ক্ষী শব্দতে যুক্তাক্ষর ঙ আর ক্ষ এইদুটো ঠিকঠাক লাগে নি। আরেকটা জিনিস দেখুন ওই শুভাকাঙ্ক্ষী শব্দতেই, 'শ' এ 'হ্রস্ব-উ' দিলেও শ এর রূপে পরিবর্তন আসে নি। যেখানে 'শ' এ 'হ্রস্ব-উ' দিলে সাধারণত সেটা এরকম (শু) দেখতে হয়। এগুলোই হচ্ছে রেমিঙটন কোম্পানির প্রথম কয়েকটা বিশেষ করে ৮০০ আর ৮৫০ মডেলের সবচেয়ে বড় ত্রুটি। পরের দিকের রেমিঙটনের মডেলগুলোতে এই ভুলটা আপনি পাবেন না। কোম্পানী নিজের ভুল শুধরে নিয়েছে। আমার একটা বন্ধুর কলকাতায় টাইপরাইটারের দোকান ছিল। আমি বছর দশ-পনের আগে যখন কলকাতা যাই, তখন ওর দোকানের টাইপরাইটারগুলো ঘাঁটতে গিয়ে এই জিনিসটা দেখি। সেই সূত্রেই আরও বেশী নিশ্চিত হচ্ছি!" ভদ্রলোক পুরো প্রাঞ্জল করে আমাদের বোঝালেন। বড়বৌদি সব শুনে ঘাড় নাড়ল, "রেমিঙটনের বাংলা টাইপরাইটার! আচ্ছা এখানে কার কার টাইপরাইটার আছে আপনি জানেন?" ভদ্রলোক ঘাড় নাড়লেন, "জানি, পুরো ধুম্রগড়ে মোট তিনটে টাইপরাইটার আছে, একটা পুলিশ ফাঁড়িতেই আছে, নিশীথবাবু জানেন, দ্বিতীয়টা আছে এখান থেকে একটু দূরে গেলে পাবেন শান্তিনীড় বলে একটা বাড়ী আছে সেখানে আর তৃতীয়টা এখনও আছে কিনা জানিনা, তবে ছিল সেটা জানি, ওই এখানকার সাবেক জমিদার বাড়ী পোদ্দারপ্রাসাদে।" আমি বলে উঠলাম, "তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল, পুলিশ তো আমাদের হুমকি চিঠি দেবে না, আর পোদ্দার পরিবারের কেউ নেই এখানে, ঐ সত্যজিৎ ছাড়া আর কারও কাজ নয় এটা! শান্তিনীড়ের সত্যজিৎ!" আমি শেষের কথাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম। ভদ্রলোক কিন্তু অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন, "উঁহু! সত্যজিৎ সামন্তের টাইপরাইটার আমি দেখেছি, সেটা হবে না কারণ ওটা হাল আমলের গোদরেজ কোম্পানীর এবং সেটাও ইংরেজী টাইপরাইটার, বাংলা নয়।" আমি কান চুলকালাম, "হতে পারে উনি পরে বাংলা কিনেছেন!" ভদ্রলোক ফের মাথা নাড়ালেন, "সেটা বলা মুশকিল তবে সত্যজিৎ একটু ফিট ফাইন থাকেন, বছর পঞ্চাশ আগের কোন মডেল খামোখা উনি কেন কিনতে যাবেন যখন ওর থেকে অনেক ভাল মডেল ওই রেমিঙটনেরই পেয়ে যাবেন।" বড়বৌদি এবার বলে উঠল, "তাহলে একমাত্র বাকী রইল পোদ্দার দের  টাইপরাইটার। আপনি কী বলতে পারবেন, সেটা ইংরেজী টাইপরাইটার না বাংলা টাইপরাইটার?" ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন, "যতটা জানি, জমিদার সুরঞ্জনের আমলেই কেনা হয়েছিল, ওনাদের আমলে ধুম্রগড়ের সব সরকারী কাজকর্ম বাংলাতেই হত। গুটিকয়েক সাহেবদের সাথে ইংরেজী কাজকম্মো কলকাতায় গিয়ে হত। তাই বাংলা টাইপরাইটার কেনার সম্ভাবনাই বেশী। তবে যেহেতু আমি চোখে দেখিনি তাই নিশ্চিত বলতে পারছি না। কিন্তু হ্যাঁ এটা বলতে পারি, যে সময়টা শুনেছি তার ভিত্তিতে, যে, ঐ সময় রেমিঙটন ৮০০ বাংলা টাইপরাইটার বাজারে এসে গিয়েছিল।" এরপর আর বেশী কিছু তেমন উল্লেখযোগ্য কথা হল না আরও দুয়েকটা কথা বলে, শুভেচ্ছা বিনিময় সেরে আমরা বেরিয়ে এলাম। নিশীথদা আশ্বাসের সুরে বলল, "কোন চিন্তা কর না, তোমাদের জন্য দুজন কনস্টেবল আমি নিরাপত্তায় রেখে দেব কিন্তু তার আগে আমাকে একটা বিষয়ে বল, শান্তিনীড় আর সত্যজিতের ব্যাপারটা সম্পর্কে। তখন থানায় একবার ঐ শুয়োরের নাম শুনলাম এখন আবার শুনলাম আর বাপানের কথা শুনে মনে হল খুবই অপছন্দ করে ওকে, জানতে পারি ঘটনাটা কী?" এবার সত্যজিতের সাথে দেখা হওয়া থেকে রামুদের কথোপকথন সবটাই বললাম যতটা ভদ্রভাবে বলা যায়। দেখলাম নিশীথদার নাক লাল হয়ে গেছে, "ওই লোকটা উল্টো বলেছে, হোটেলের লাইসেন্স আছে ওর, গাছ কাটার নয়! কুত্তার বাচ্চাটা লাইসেন্স নিয়ে নয়, গোপনে গাছ কেটে পাচার করে দেয়। সামনেই বিহার, আমাদের পৌঁছতে পৌঁছতেই দামী দামী গাছগুলো কেটে ট্রাক ভর্তি করে বিহার সীমান্তে পৌঁছে দেয়। বহু চেষ্টা করেছি কিন্তু রেড হ্যান্ডে কিছুতেই ধরতে পারছি না। একবার বাগে পাই হারামজাদাকে!" একটু থেমে গম্ভীর সুরে বলল, "ওই বাড়ীতে তোমাদের থাকার কোন প্রয়োজন নেই, আমার কোয়ার্টারে উঠবে। দুটো রুম আছে সমস্যা নেই। আমি হাবিলদার পাঠিয়ে হোটেল থেকে তোমাদের জিনিসপত্র সব আনিয়ে নেব।" বড়বৌদি বাধা দিতে গেল, কিন্তু নিশীথদা শুনবে বলে মনে হল না। বৌদি অনুনয়ের সুরে বলল, "সেই একইরকম রয়ে গেলে, সেই আগের মতই জেদী, একরোখা। নিজে যেটা ভাল বুঝবে সেটাই, অন্য কারও মতের তোয়াক্কা কোনদিন করলে না।" নিশীথদা ঘাড় নাড়িয়ে হন হন করে গাড়ীতে গিয়ে বসল। ব্যস তারপরই আমরা পোদ্দার বাসার দিকে রওনা দিলাম।



"কী রে কোন জগতে আছিস, কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?" হঠাৎ বৌদির নরম হাতের ছোঁয়ায় আর আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। যাচ্চলে! ফেউয়ের কথা ভাবতে গিয়ে মন হারিয়ে ফেলেছিলাম মনে হয়। "নিশীথদা কোথায়?" আমার প্রশ্ন শুনে বৌদি একটু বিরক্ত হল, "আজকাল তোর কি মাথা খারাপ হচ্ছে নাকি? শুনলি তো পোদ্দারদের বাসার পুরোনো খানসামার এক বংশপুত্তুর এখনও এই পোদ্দার বাড়ী সামলাচ্ছে। তোর নিশীথদা ওকেই ডাকতে গেছে।" আমি কোথাও কেউ নেই দেখে বৌদিকে জড়িয়ে ধরলাম হঠাৎ, নরম বুকে মুখটা রেখে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা যদি এই ধুম্রগড়ের পদ্মবন কবিতার লাইন মেলে তবে কি ওই তিনচোদনে হাততালি, চার চোদনে ঘর খালি এসব ফালতু লাইনেরও কোন মানে আছে?" বড়বৌদি নিজের বিরাট বুকে আমার মাথাটা আলগোছে চেপে চুলে নরম আঙ্গুলের বিলি কাটতে কাটতে বলল, "মানে তো থাকতেই পারে। এখন দেখার আছে কী মানে থাকে? কোন জট রয়েছে এই ধুম্রগড়ের ধুম্রজালে!"


সূর্যের রক্তিম আভা ললাটে লাল ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছে, বাসা বাঁধছে অন্ধকার, উঠতে শুরু করেছে ধোঁয়া, ধুম্রগড়ের ধোঁয়া…বিষাক্ত!



(তৃতীয় পর্বের সমাপ্তি)

(ক্রমশঃ)



প্রথম প্রকাশঃ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩০
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি - by মহাবীর্য দেবশর্মা - 30-04-2023, 09:46 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)