28-04-2023, 08:59 PM
- চাল, ডাল, চিনি, জিরে, আটা... এই এটা কি? এটা কেন এনেছো? এটা তো আমি লিস্টে লিখিনি!
বাজারের ব্যাগ থেকে লিস্ট দেখে সদাই নামাচ্ছিল ছিল নম্রতা তার মধ্যে দেখতে পাই লিস্টে না লেখা একটা জিনিস, আলতা; তাই প্রশ্নটা কিছুটা উচ্চস্বরেই ছুড়ে দেয় প্রকাশের দিকে। প্রকাশ জামাকাপড় বদলে এসে সবে বসেছিল।
সে গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বলল - ওই... হ্যাঁ লেখা ছিল না... তো কি... আমি নিজেই নিয়ে এসেছি।
- তো কি মানে! কেন এনেছো? একেই সংসারের এই অবস্থা তার উপর কি এসব বাড়তি খরচ নয়! এই টাকায় বকুনের একটা খাতা তো হয়ে যেত নাকি!
- উমম... তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি কি নিজে একটা জিনিস আনতে পারি না নাকি?
- আহা তা কখন বললাম! আলতাটা তো আর তুমি নিজে পড়ার জন্য আনোনি নিশ্চয়ই! তাহলে কে এসব বাজে খরচ করতে বলেছিল শুনি?
- বাজে খরচ না হয় একটু হলোই! আর তাছাড়া আমি আমার আসার অটো ভাড়াটা বাঁচিয়ে ওটা নিয়ে এসেছি, তাই বাড়তি খরচ কিছু হয়নি। আর সংসারের অভাবের জন্য কি তুমিই শুধু নিজের শখগুলো বিসর্জন দেবে?
নম্রতার গলার স্বর নরম হয়ে আসে। প্রকাশ তার জন্য আলতা কিনতে নিজে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে ভেবেই মনের মধ্যে তার শীতল স্রোত বয়ে যায়। একদিকে ভালোলাগা কাজ করে আর অন্য দিকে খারাপ লাগা। তবে মুখে কিছুই প্রকাশ করে না।
সে শুধু চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে বলে - খালি খালি এতটা পথ হাঁটতে গেলে কেন বলতো? আর আমার আলতা পরার শখ তা আমি কখন তোমায় বললাম?
- তুমি কি ভাবো বলতো আমায়? এত বছর তোমার সাথে সংসার করার পর যদি তোমার শখগুলো খেয়াল না করতে পারি তাহলে কি হয়! হ্যাঁ মানছি কাজের চাপে সংসারের দিকে তেমন খেয়াল দিতে পারি না। তবে তুমি কি ভালোবাসো না বাসো, তুমি কি পছন্দ করো না করো এগুলো কি জানিনা ভেবেছো! আর তাছাড়া তুমিও তো সেলাইয়ের কাজ করার পাশাপাশি সংসার সামলাও, আমাদের ভালো-মন্দ, পছন্দ-অপছন্দ খেয়াল রাখো। তাহলে আমি এটুকু করতে পারি না? কোথায় ভাবলাম তুমি খুব খুশি হবে তা না। মানছি এখন আমার সামর্থ্য...
সে আর কিছু বলে ওঠার আগেই নম্রতা এসে নিজের হাতদিয়ে তার মুখটা আটকে দেয়। দুজনে চুপটি করে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নম্রতা মৃদু হেসে প্রকাশের হাত ধরে বলে - দেখো একদিন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে শুধু হয়তো একটু সময় লাগবে। আর কে বলেছি আমি খুশি হইনি? খুব খুশি হয়েছি! তুমিতো বোঝো বলো, সংসারের কথা ভেবেই মাঝে মধ্যে একটু কঠোর হয়ে পড়ি...
- থাক আর কিছু বলতে হবে না বুঝেছি। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম যে তুমি খুশি হয়েছো। আর তাছাড়া, এই ওপরকার কঠোর মানুষটার ভেতরটা যে একেবারে নরম, তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে হুমম।
নম্রতা মৃদু হাসে। এবার প্রকাশ তার হাত ধরে টেনে তাকে চেয়ারে বসায়। পাশ থেকে আলতাটা তুলে নিয়ে খুলতে থাকে। এই দেখে এবার নম্রতা আবার বলে - এই কি করছো তুমি বলতো?
- কেন দেখতে পাচ্ছ না আলতাটা বার করছি।
নম্রতা উঠে তার হাত থেকে ওটা কেড়ে নিতে গেলে সে তাকে বসিয়ে দিয়ে আবার বলে - চুপ,চুপ করে বসো এখানে।
- তোমার মাথায় কী চলছে বলতো? আর আমার মেলা কাজ পড়ে আছে।
প্রকাশ উত্তর দেয় না। আলতাটা খুলে সে নীচে বসে নম্রতার পা টা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে বলে - সে আমি সব জানি। এখন দেখি পা টা দাও।
নম্রতা ঝুঁকে আপত্তি জানিয়ে বলে - এই না না, তুমি পায়ে হাত দিচ্ছ কেন? আমার পাপ লাগবে!
- চুপ করে বসো। লাগুক পাপ অমন পাপ লাগা ভালো।
ততক্ষণে সে নম্রতার ডান পা টা নিয়ে আলতাটা পড়াতে শুরু করেছে। নম্রতা আর কিছু বলতে পারে না। তার মনে প্রকাশের কথাটা বাজে। মনে মনে ভাবে - সত্যি এমন পাপ লাগা মাঝে মধ্যে ভালো। অভাবে না পড়লে কি কোনদিন সে বুঝতে পেত যে এই মানুষটাও এমন ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ভাবপ্রবণ হতে পারে!
নম্রতা গালে হাত দিয়ে দুচোখ ভরে তার মানুষটাকে দেখতে থাকে।
একে অপরের ভালো-মন্দের খেয়াল রেখে, একে অপরের ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলোর দিকে একটু নজর দিয়ে, দুজনেই একটু একটু সেক্রিফাইস করে একে অপরের পাশে থাকলে প্রচন্ড খারাপ সময়গুলোও সামলে ওঠা যায়। এর মাঝেও ছোটখাটো সুখ খোঁজা যায়, আর এক সময় সমস্ত ঝড় কাটিয়ে ওঠা যায়। ঠিক যেমন ওরাও উঠবে।
কলমে অলিগলি_রুপা সাহা।
বাজারের ব্যাগ থেকে লিস্ট দেখে সদাই নামাচ্ছিল ছিল নম্রতা তার মধ্যে দেখতে পাই লিস্টে না লেখা একটা জিনিস, আলতা; তাই প্রশ্নটা কিছুটা উচ্চস্বরেই ছুড়ে দেয় প্রকাশের দিকে। প্রকাশ জামাকাপড় বদলে এসে সবে বসেছিল।
সে গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বলল - ওই... হ্যাঁ লেখা ছিল না... তো কি... আমি নিজেই নিয়ে এসেছি।
- তো কি মানে! কেন এনেছো? একেই সংসারের এই অবস্থা তার উপর কি এসব বাড়তি খরচ নয়! এই টাকায় বকুনের একটা খাতা তো হয়ে যেত নাকি!
- উমম... তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি কি নিজে একটা জিনিস আনতে পারি না নাকি?
- আহা তা কখন বললাম! আলতাটা তো আর তুমি নিজে পড়ার জন্য আনোনি নিশ্চয়ই! তাহলে কে এসব বাজে খরচ করতে বলেছিল শুনি?
- বাজে খরচ না হয় একটু হলোই! আর তাছাড়া আমি আমার আসার অটো ভাড়াটা বাঁচিয়ে ওটা নিয়ে এসেছি, তাই বাড়তি খরচ কিছু হয়নি। আর সংসারের অভাবের জন্য কি তুমিই শুধু নিজের শখগুলো বিসর্জন দেবে?
নম্রতার গলার স্বর নরম হয়ে আসে। প্রকাশ তার জন্য আলতা কিনতে নিজে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে ভেবেই মনের মধ্যে তার শীতল স্রোত বয়ে যায়। একদিকে ভালোলাগা কাজ করে আর অন্য দিকে খারাপ লাগা। তবে মুখে কিছুই প্রকাশ করে না।
সে শুধু চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে বলে - খালি খালি এতটা পথ হাঁটতে গেলে কেন বলতো? আর আমার আলতা পরার শখ তা আমি কখন তোমায় বললাম?
- তুমি কি ভাবো বলতো আমায়? এত বছর তোমার সাথে সংসার করার পর যদি তোমার শখগুলো খেয়াল না করতে পারি তাহলে কি হয়! হ্যাঁ মানছি কাজের চাপে সংসারের দিকে তেমন খেয়াল দিতে পারি না। তবে তুমি কি ভালোবাসো না বাসো, তুমি কি পছন্দ করো না করো এগুলো কি জানিনা ভেবেছো! আর তাছাড়া তুমিও তো সেলাইয়ের কাজ করার পাশাপাশি সংসার সামলাও, আমাদের ভালো-মন্দ, পছন্দ-অপছন্দ খেয়াল রাখো। তাহলে আমি এটুকু করতে পারি না? কোথায় ভাবলাম তুমি খুব খুশি হবে তা না। মানছি এখন আমার সামর্থ্য...
সে আর কিছু বলে ওঠার আগেই নম্রতা এসে নিজের হাতদিয়ে তার মুখটা আটকে দেয়। দুজনে চুপটি করে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নম্রতা মৃদু হেসে প্রকাশের হাত ধরে বলে - দেখো একদিন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে শুধু হয়তো একটু সময় লাগবে। আর কে বলেছি আমি খুশি হইনি? খুব খুশি হয়েছি! তুমিতো বোঝো বলো, সংসারের কথা ভেবেই মাঝে মধ্যে একটু কঠোর হয়ে পড়ি...
- থাক আর কিছু বলতে হবে না বুঝেছি। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম যে তুমি খুশি হয়েছো। আর তাছাড়া, এই ওপরকার কঠোর মানুষটার ভেতরটা যে একেবারে নরম, তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে হুমম।
নম্রতা মৃদু হাসে। এবার প্রকাশ তার হাত ধরে টেনে তাকে চেয়ারে বসায়। পাশ থেকে আলতাটা তুলে নিয়ে খুলতে থাকে। এই দেখে এবার নম্রতা আবার বলে - এই কি করছো তুমি বলতো?
- কেন দেখতে পাচ্ছ না আলতাটা বার করছি।
নম্রতা উঠে তার হাত থেকে ওটা কেড়ে নিতে গেলে সে তাকে বসিয়ে দিয়ে আবার বলে - চুপ,চুপ করে বসো এখানে।
- তোমার মাথায় কী চলছে বলতো? আর আমার মেলা কাজ পড়ে আছে।
প্রকাশ উত্তর দেয় না। আলতাটা খুলে সে নীচে বসে নম্রতার পা টা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে বলে - সে আমি সব জানি। এখন দেখি পা টা দাও।
নম্রতা ঝুঁকে আপত্তি জানিয়ে বলে - এই না না, তুমি পায়ে হাত দিচ্ছ কেন? আমার পাপ লাগবে!
- চুপ করে বসো। লাগুক পাপ অমন পাপ লাগা ভালো।
ততক্ষণে সে নম্রতার ডান পা টা নিয়ে আলতাটা পড়াতে শুরু করেছে। নম্রতা আর কিছু বলতে পারে না। তার মনে প্রকাশের কথাটা বাজে। মনে মনে ভাবে - সত্যি এমন পাপ লাগা মাঝে মধ্যে ভালো। অভাবে না পড়লে কি কোনদিন সে বুঝতে পেত যে এই মানুষটাও এমন ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ভাবপ্রবণ হতে পারে!
নম্রতা গালে হাত দিয়ে দুচোখ ভরে তার মানুষটাকে দেখতে থাকে।
একে অপরের ভালো-মন্দের খেয়াল রেখে, একে অপরের ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলোর দিকে একটু নজর দিয়ে, দুজনেই একটু একটু সেক্রিফাইস করে একে অপরের পাশে থাকলে প্রচন্ড খারাপ সময়গুলোও সামলে ওঠা যায়। এর মাঝেও ছোটখাটো সুখ খোঁজা যায়, আর এক সময় সমস্ত ঝড় কাটিয়ে ওঠা যায়। ঠিক যেমন ওরাও উঠবে।
কলমে অলিগলি_রুপা সাহা।