Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
খেলোয়াড়
#1
খেলোয়াড় - ১

অপি যেদিন সেঞ্চুরি করল, রীমা আপু সেদিন চেঁচাতে চেঁচাতে গলা ভেঙে ফেলেছিল। রাস্তায় নেমে পাড়ার দাঁড়িওয়ালা বদমেজাজী চাচাদের সাদা পাঞ্জাবি রঙিন করে দিয়েছিল ওড়না কোমরে পেঁচিয়ে নির্লজ্জ্বের মত দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে। অন্য কোন দিন হলে তাকে "বেয়াদব" টাইপের দুয়েকটা গালি হজম করতে হত। কিন্তু সেদিন কারো কিছু বলার মত সাহস হয়নি। আপুই পাড়ার সব মেয়েদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। বুড়ো ভামেদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের প্রথম সেঞ্চুরি সবাই মিলে রঙে ঢঙে উৎযাপন করা হয়েছিল। অবশ্য সেকথা আমার আবছাভাবেও মনে পড়েনা। কিন্তু রীমা আপু কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমে বুড়োদের গায়ে রঙ ছিটাচ্ছে, একথা অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠেনা। বড় চাচার অঢেল সম্পত্তি, একটামাত্র আদরের কন্যা। ব্রিলিয়ান্ট এই চাচাত বোনটি দেশের প্রথম সারির ভার্সিটি থেকে পাশ করেও ক্যারিয়ার গড়তে পারেনি। মেয়ে মানুষের চাকরি বাকরি করার দরকার নেই, সেই বেদবাক্য অনুসরণ করে বড় চাকুরে পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পরও আপু বেশিরভাগ সময় বাপের বাড়িতে কাটায়। দুলাভাই ভাল মানুষ। তবে শ্বাশুড়ীর সঙ্গে স্বাধীনচেতা বৌয়ের বনিবনা হয়না। দুলাভাই আসলেই ভাল মানুষ, বৌ বাপের বাড়ি থাকলেও তার কোন আপত্তি নেই। উনি বড় বিজ্ঞানি টাইপ কিছু একটা। দিনরাত রিসার্চ নিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়ি আসেন। আপুর বাচ্চাকাচ্চা নেই, বাসায়ই বসে থাকে। আমাদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটায়। তবে সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে যে কাজটা করে, তা হল রাত জেগে ক্লাব ফুটবলের ম্যাচগুলো দেখা আর দিনের বেলায় আমাদের সঙ্গে বার্সা-রিয়াল নিয়ে টীন এজারদের মত তর্ক করা। বয়স ত্রিশের বেশি হয়েছে, কিন্তু চঞ্চলতা এখনো কমেনি। খেলা নিয়ে তর্ক করার সময় এখনো কোমর বেঁধে গলা চড়িয়ে তোলে। ফুটবল বোদ্ধা দুই চাচাত ভাই বাদে আমরা সবাই এ ব্যাপারে তার সঙ্গে ভয়ে ভয়ে কথা বলি। তর্ক করার লোকেরও অভাব নেই। আমাদেরটি সহ তিন চাচার বাড়ি পাশাপাশি। আপুর বানানো কেক, পুডিং, ফাস্ট ফুডের লোভে প্রতিদিনই দুয়েকজন তার সঙ্গে গল্প করে আসে।

ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ক্রিকেটের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। দেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর বসেছে। আপু যথারীতি এক্সাইটেড। দুলাভাই আমাদের সবার জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিটের ব্যবস্থা করলেন। সবাই মহা খুশি। উনার মত লোক ছুটি নিয়েছেন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য! ভাবা যায়? কেউ কাউকে কিছু না বললেও আমরা জানি, উনি আপুকে ইমপ্রেস করার জন্যেই এত আয়োজন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আপু কিন্তু এতে খুশি না হয়ে বরং বেজার হল। গান বাজনা নাচানাচি দেখতে যাবার ইচ্ছে তার নেই, বরং বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ বরের সঙ্গে বসে দেখতে চায়। কিন্তু দুলাভাইয়ের কিছুতেই সময় হবেনা। আপু শেষ পর্যন্ত রাগ করে আমাদের সঙ্গে গেলইনা। অনুষ্ঠান খারাপ হয়নি। একগাদা শালা শালীদের নিয়ে দুলাভাইও বেশ মজা করলেন। উনি মজা করতে পারেন, সে ধারণা ছিলনা। মমতাজের মরার কোকিলে শুনে গোঁফ ছড়িয়ে কেমন হো হো করে হাসছিলেন, দেখে আমারও হাসি পেয়েছিল। আমরা এদিকে দাপাদাপি করলেও আপু ওদিকে ঘরে বসে ফুঁসছিল।

পরদিন গিয়ে দেখি আপু গোমড়া মুখে সোফায় পদ্মাসন করে বসে আছে। গতকাল কি কি হল তা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ওসব শুনতে চাইল না। কিছুক্ষণ অস্বস্তি নিয়ে বসে থেকে উঠে চলে যাচ্ছি, আপু ডাক দিল।
- ঐ, শোন!
- বল, আপু।
ওদিকে তাকিয়ে বললাম।
- কালকের খেলার টিকেট যোগার করতে পারবি?
একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করল।
- করা যাবে।
ঠোঁট বাঁকিয়ে বললাম। টিকেট তো পাওয়া যাবে, কিন্তু দাম আকাশ ছোঁয়া। প্রথম ম্যাচ, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার।
- দুইটা টিকেট কিনবি, বুঝছস?
- দুলাভাই ছুটি পাইছে? তোমরা দুইজন যদি যাও, উনিই তো টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারে।
প্রাইম ব্যাঙ্কে দুলাভাইয়ের বন্ধু আছে একজন, সে-ই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট দিয়েছিল।
- না, ওর ছুটি নাই। তুই দুইটা টিকিট যোগার কর, আমার সাথে যাবি। কোন সমস্যা?
একগুঁয়ে কন্ঠে আদেশ দিয়ে তীব্র চাহনি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
- না, সমস্যা নাই।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম। মাঠে হৈ হৈ করার চেয়ে ঘরে বসে গা এলিয়ে খেলা দেখতেই বেশি ভাল লাগে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গেলে অন্য কথা, মেজাজী মেয়েমানুষ সঙ্গে নিয়ে হৈ হৈ ও করা যাবেনা খুব একটা। ভ্যাপসা বিকেল আর পানসে সন্ধ্যার জন্য প্রস্তত হয়ে গেলাম।
- আর শোন, বাংলাদেশের জার্সি আছে তোর কাছে?
- না।
- আচ্ছা। থাকলেও লাভ নাই। পুরান টা দিয়া হবেনা। নতুন জার্সিটা সুন্দর হইছেনা?
চটপট কথা বলছে আপু।
- হু, ভাল হইছে।
- আজকে দুইটা জার্সিও কিনে আনবি। আর শোন, হুদা গেঞ্জি দিয়ে হবেনা, সঙ্গে ট্রাউজার।
এই ভয়ই করছিলাম। খেলাধুলার ব্যাপারে একদম আঁটঘাট বেঁধে নামা চাই। এখন টিকেট আর জার্সির জন্যে দুই দিকে যেতে হবে।
- এই ধর!
বলে নাটকীয় ভঙ্গিতে হাতের মুঠোয় রাখা টাকা বসা অবস্থায়ই আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। বেশ অবাক হলাম, আপু কাউকে টাকা পয়সা দেয়না। আমাদের দিয়ে এটা ওটা আনায়, কিন্তু কখনোই টাকা দেয়না। সেটা এক টাকার জিনিস হোক, আর এক হাজারের হোক। আমরা তার ঘর থেকে এটা ওটা দামী জিনিস সরিয়ে, সুস্বাদু কেক টেক খেয় সে পয়সা উসুল করি। আজ আমাকে অগ্রীম টাকা দিচ্ছে বলে বুদ্ধিদীপ্ত মুখে একটু বিব্রতির ছাপ। টাকা মুঠোয় নিয়ে হাতটিও এতক্ষণ লুকিয়ে রেখেছিল।
- কই যাস!
আমি ঘুরে হাঁটা ধরতে চেঁচিয়ে উঠল আপু।
- কি হইল আবার?
- তোর চুলের এই অবস্থা ক্যান? বান্দরের মত মাথা খাজ্জাইতেছিস! যা, আগে সেলুনে গিয়া বস। ছোট করে চুল কাটবি, নাহইলে চুল টাইনা ছিঁড়মু।
ঠিক নেই, আসলেই চুল ধরে টানাটানি করতে পারে। ছোটবেলায় আমাদের সবাইকে উনার কাছে পড়তে হয়েছে। নানা রকম সৃজনশীল উপায়ে শাস্তি দিত, এখনো ভয় ভয় লাগে।
আরেকবার গাঁইগুঁই করলাম, টিকিটগুলো দুলাভাইয়ের বন্ধুর মাধ্যমে নিলে সহজ হবে। আপুর রুদ্রমূর্তি দেখে চুপ করে গেলাম।

বিকেলে জার্সি কিনতে গিয়ে বিপদে পড়লাম, সাইজ টাইজ কিছুই তো জানা হয়নি। মোবাইল বের করে কানে দিলাম। মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছি কি জিজ্ঞেস করব। কি জিজ্ঞেস করব, "আপু, তোমার বুক কত?" নাহ! হয়তো স্রেফ টি শার্টৈর সাইজ জিজ্ঞেস করলেই হবে..  M X XL... ফোন ধরলনা কেউ। চারবার চেষ্টা করে আপুকে না পেয়ে একদম বড় সাইজেরটা নিয়েই চলে এলাম।
সকাল সকাল টিকিট হাতে পেলাম, দাম দিতে হয়েছে পাঁচ গুণ। গোসল সেরে টিকিট আর জার্সি নিয়ে আপুর ওখানে চলে এলাম। আপু যখন জার্সি পড়ে ড্রইং রুমে এল, ভাবলাম সাইজ ছোট হয়ে গেছে। বুকের নিচে, বগলের আশেপাশে কুঁচকে থাকা কাপড় টেনে ঠিক করছে যত্নসহকারে।
- ছোট হইছে নাকি, আপু?
ভয়ে ভয়ে বললাম।
- ক্যান? নাহ!
চওড়া হাসি দিয়ে আমাকে আস্বস্ত করল। টানটান সবুজ জার্সির ওপর দিয়ে গোলকের মত বুকদুটো কেমন উঁচু হয়ে আছে। রীমা আপু বেশ লম্বা চওড়া। সব সময় সালোয়ার কামিজ পড়ে থাকে বলে সবকিছু অত ভালভাবে চোখে পড়েনি।
- কি দেখিস?
- নাহ! কিছুনা!
ঝট করে চোখ নামিয়ে বলি।
- চল, দেরি হয়ে যাবে।

আপু আমার আগে আগে সিঁড়ি বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে পড়ল। আমি ধীরে সুস্থে নেমে দেখি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে চোখে বিরক্তি নিয়ে আমার আগমন পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
- কিরে, এতক্ষণ লাগে?
- বাইরে কি কর, গাড়ি কই?
- নাই, আম্মা নিয়া গেছে।
- তো, ক্যামনে যাইবা?
- ক্যামনে আবার! তুই কি দিয়া যাস?
- লোকাল বাসে..
মুখ গোমড়া করে বললাম বিড়বিড় করে।
আজীবন ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়া আপুর কাছে লোকাল বাস কেমন লাগবে জানিনা, তবে আমার ধারণা ছিল গাড়িতে বসে আরাম করে গা এলিয়ে দিতে পারব।

রিক্সা নিয়ে চলে এলাম মহাসড়কে। লোকাল বাসে না উঠে লেগুনায় উঠলাম। বাসের গাদাগাদি আপুর কেমন লাগবে ঠিক নেই। আজ এই রাস্তার গাড়িগুলোতে যাত্রী শুধু মিরপুরের। কিশোর তরুণদের চোখেমুখে উত্তেজনা। লেগুনায় মেয়েদের একটা গ্রুপ খিলখিল করে হাসাহাসি করছে। আপু জানালার পাশের সিটে বসেছে। বেড়িবাঁধের ওপাশ পানিতে পরিপূর্ণ, যতদূর চোখ যায়। তীব্র বাতাসের ধারায় লম্বা খোলা চুল উড়ছে, আমার মুখে আছড়ে পড়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ব্যাপারটা উপভোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্ত গালে সুড়সুড়ি লাগায় বারবার চুল সরিয়ে দিতে হচ্ছে। আপু একমনে নীল আকাশ আর ভাসমান কচুরিপানা দেখছিল, কন্ডাক্টরের গলা শুনে এদিকে তাকিয়ে আমার অবস্থা দেখে হেসে ফেলল। তারপর কিছু না বলে চুলগুলো মুচড়ে ডান কাঁধের সামনে নিয়ে নিল। এখন আর সুড়সুড়ি লাগছেনা, কিন্তু মনে হচ্ছে কি যেন ছিল - কি যেন নেই।
- ভাড়া দে!
আপু ব্যাগ, পার্স কিছুই নিয়ে আসেনি, সঙ্গে সম্ভবত কোন টাকা পয়সাও নেই। মানিব্যাগ বের করে ভাড়া দিলাম। ভাগ্যিস টাকা পয়সা কিছু এনেছিলাম।
বাস থামল স্টেডিয়ামের কাছে। চারদিকে কড়া নিরাপত্তা, লোকজন গিজগিজ করছে। টিকিটদুটো বের করে চার নাম্বার গেটের দিকে এগোলাম। বিশাল লাইনে অসহিষ্ণুভাবে দর্শকরা দাঁড়িয়ে আছে। চেকআপ টেকআপের পর একজন একজন করে ভেতরে ঢুকতে পারছে। লাইনের ভেতরে দাঁড়িয়েই অনেকে ব্ল্যাকে টিকিট বেচা লোকেদের সঙ্গে দর কষাকষি করছে। কাঠফাটা রোদে মিনিট পনেরো দাঁড়িয়ে থাকার পর লাইন স্টেডিয়াম গেটের ভেতর প্রবেশ করল। আমার পেছনে আপু দাঁড়িয়েছিল। পেছন থেকে শুধুশুধু লোকজন সামনে ঠেলাঠেলি করছে। আপু আমার ঘাড়ে হাত রেখে ব্যালেন্স করছে। নরম বুক ঘামে ভেজা পিঠের সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছে মাঝেসাঝে। স্টেডিয়ামে মেয়েমানুষ খুব একটা আসেনা। নারীসঙ্গ বঞ্চিত বাঙালি টিশার্ট ট্রাউজার পড়া যুবতী মেয়ে দেখে হাঁ করে চেয়ে আছে। খেলা শুরু হয়ে গেছে। ভেতর থেকে হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। আপু কয়েকবার আমার পিঠের উপর ঢলে পড়ল। তারপর পেছন ফিরে বিরক্তি নিয়ে ভালমানুষের মত মুখ করে দাঁড়ানো মাঝবয়েসি লোকটির দিকে তাকিয়ে আমাকে ডাকল,
- আকাশ, আমার পিছনে দাঁড়া তো!
বিনা বাক্যব্যয়ে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। লাইন যতই সামনে এগোচ্ছে ততই মন্থর হয়ে যাচ্ছে, পেছন থেকে ধাক্কাও বাড়ছে। অনেক চেষ্টা করেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছেনা। আপুর পিঠের ওপর চাপ পড়ছে, পিঠে চাপ পড়ার আগে ধাক্কা লাগছে সুউচ্চ নিতম্বে। মনে মনে বিব্রতবোধ করছি, তবে আপু কিছু বলছেনা।
অবশেষে দুই স্তর বিশিষ্ট চেকপয়েন্ট মাড়িয়ে ভেতরে ঢোকা গেল। গ্যালারি টিকেটের দাম কম, তবে আপু যেরকম সৌখিন মানুষ গ্যালারির উত্তাল পরিবেশে বিরক্ত হয়ে যায় কিনা তাই প্রচুর পয়সা খরচা করে ক্লাব কর্ণারের টিকিট যোগার করেছি। ছায়াঢাকা এক প্রান্তে কিছু আসন খালি ছিল। সেখানে গিয়ে বসে পড়লাম দুজন পাশাপাশি। গরমে ঠেলাঠেলির পর পানির তৃষ্ণা পেয়েছে, আপুও বলছে পানির ব্যবস্থা করতে। পানির ব্যবস্থা করা কোন ব্যাপার না, তবে স্টেডিয়ামের ভেতর দশ টাকার পানির বোতল যেভাবে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা হয়ে যায় তাতে মেজাজ বেশ খারাপ হয়। ঢকঢক করে পানি গিলে খেলার দিকে মনযোগ দিলাম। ভারতের ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় জুড়ে লাফালাফি করার মত কিছুই ঘটেনি। দুই ব্যাটসম্যানের জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়েছে প্রতিপক্ষ। বিরতির সময় খাবারের ব্যবস্থা করতে বেরোলাম। স্টেডিয়ামের ভেতর পানির মত খাবারেরো আগুন মূল্য। আপুর কিছুই পছন্দ হলনা। খাবার টাবার বাদ দিয়ে ফিরে গেলাম খেলা দেখতে। তামিম সাকিবদের মারমুখী ব্যাটিং সবাই বেশ উপভোগ করল, কিন্তু পাটকাঠির মত লোয়ার অর্ডার নিয়ে ৩৭০ তাড়া করা সম্ভব নয়। শেষটা যতই ঘনিয়ে আসতে লাগল, সবাই তত বেশি চুপ মেরে যেতে থাকল। আপু গোমড়া মুখ করে অস্থিরভাবে আমার পায়ের উপর চাটি মেরে চলেছে। কোন কিছু নিয়ে আপসেট হলে আমাদের কারো গায়ে আনমনে চাটি মারা তার অভ্যাস, কখনো কখনো আলতো করে লাথিও মারে! দুয়েকটা চার হলে লাফিয়ে উঠছিল, উত্তেজনায় আমার উরু খামছে ধরছিল। তবে অমনটা খুব বেশি হবার সুযোগ পেলনা। অনেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে খেলার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অনুধাবন করতে পেরে।
- চল!
আপুও অবশেষে উঠে দাঁড়াল। চুপচাপ তাকে অনুসরণ করে রাতের মিরপুরে বেরিয়ে এলাম। বাস পেতে সময় লাগল। মহিলাসহ বাঁদড়ঝোলা বাসে ওঠা সম্ভব না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সিএনজি যোগার করা গেল একটা। রাতের ঘন আঁধার কেটে বাসার দিকে ছুটে চলেছে অটোরিক্সা। জ্যাম পেরিয়ে বেড়িবাঁধের খোলা রাস্তায় উঠার আগেই আপু ঝিমুতে শুরু করল। একসময় আমার ঘাড়ে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। অনেক্ষণ ধরেই এমনটা হচ্ছিল বলে লক্ষ্য করিনি, এবার সিএনজিওয়ালা পেছনে তাকিয়ে বলল "আপা তো পইড়া যাইতাছে, ধরেন!"
তুরাগের পানিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা আলোঝলমল স্টীমার থেকে চোখ ফিরিয়ে আপুর দিকে খেয়াল করলাম। কিভাবে "ধরব" ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, পরে ডান হাত আপুর গলার পেছন দিয়ে মুড়িয়ে বাহু চেপে ধরলাম। এভাবে আধঘন্টার মত পার হল, বাড়ির সামনে অটোরিক্সা থামল। আমার কাছে ভাড়া নেই, আপু চোখ কচলাতে কচলাতে উপরে উঠল ভাড়া আনতে।
- আপার মন খারাপ, বাংলাদেশ হারছে!
শুকনোমত সিএনজিওয়ালা চুকচুক করে করুণ হেরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি ঠোঁট উল্টে বোঝালাম, হয়তো তাই হবে।
আপু ভাড়া নিয়ে নেমে এল। চোখেমুখে পানি দিয়েছে, অনেকটা ফ্রেশ দেখাচ্ছে। সিএনজিওয়ালা গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যেতে আমিও বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। সারা দেহে ক্লান্তি চেপে বসেছে, বিছানায় গা এলিয়ে দিতে মন চাইছে।
- ঐ, কই যাস!
আপু চেঁচিয়ে উঠল।
- বাসায়..
পেছন তাকিয়ে বললাম।
- যাওয়া লাগবনা, উপরে আয়। আন্টিরে ফোন করে বলে দিতেছি। বাসায় কেউ নাই, তুই থাক এইখানে।
- তুমি ভয় পাও কবে থেকে আবার! আমার ঘুমে ধরছে।
বিরক্ত হয়ে বললাম। কারণ এখন উনার সঙ্গে গেলে খেলা নিয়ে প্যাঁচাল পাড়তে শুরু করবেন এবং আমাকেও তাতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করবেন।
- ঘুমাইতে মানা করছি নাকি? আয়!

ক্লান্ত দেহে সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠলাম, লিফট কোন কারণে আজ বন্ধ। ড্রইং রুমে ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুরছে। ঢুলুঢুলু চোখে সোফার সামনে কার্পেটে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। সোফায় খসখস শব্দ শুনে বুঝলাম আপু এসে বসেছে। এখন প্যাঁচাল শুরু হবে।
- কিরে আকাশ, খিদা লাগেনাই?
- হু..
- ফ্রীজে খিচুরি আছে, গরম করে নে।
- এইসব খামুনা এখন।
পাশ ফিরে সোফার দিকে মুখ করে বললাম। আপুর ফর্সা পায়ের পাতা আমার চোখের সামনে, ক্রস করে রেখেছে। সবুজ ট্রাউজারের প্রান্ত গোড়ালি ঢেকে রেখেছে।
- সবজী খিচুরি, সমস্যা হবেনা। যা গরম করে নিয়া আয়।
- তুমি খাবা?
- না, আমি কিছু খাবনা!
গম্ভীর গলায় বলল আপু।
- তাহইলে থাক।
- না খাইলে নাই..
ব্যঙ্গের সুরে বলে পা দুটো আমার কোমরের উপর তুলে দিলেন। আপুর কথা না শুনলে এরকম আচরণ সহ্য করতে হয়। গাঁইগুঁই না করে একটা গড়ানি দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। শব্দ শুনে বুঝলাম আপু সোফা ছেড়ে উঠে গেছে। বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে ভেবে শান্তিতে ঘুমানোর প্রস্ততি নিচ্ছিলাম এমন সময় আবার পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। টী টেবিলে ভারী কিছু ঠক করে রাখার আওয়াজ এল। দু মিনিট পরেই বাজে একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা দিল। ব্যাপারটা কি তা বুঝতে ঝট করে ঘাড় উঁচিয়ে সোফায় বসা রীমা আপুর দিকে তাকালাম। বরাবরের মত পদ্মাসনে বসে আছে, হাতে কাচের গ্লাস। তাতে লালচে রঙয়ের তরল, উপরে দুটুকরো বরফ ভাসছে। ঘোলা চোখ সামনের দেয়ালে একটা পেইন্টিংয়ে নিবদ্ধ। আপুর এই রুপ দেখে অবাক হলাম। বিয়ের পর থেকে মাঝেসাঝে লাল পানি খাওয়ার খবর আমাদের অজানা নয়। তবে আজ এমন কি হল যে...
- বাংলাদেশ আজকে খারাপ খেলছে..
হতাশাটা খেলা নিয়ে কিনা তা জানতে এই প্রসঙ্গ উঠানোর চেষ্টা করলাম। আপু ঝট করে আমার দিকে তাকালেন।
- তুই ঘুমাস নাই?
- উঁহু... অত আপসেট হওয়ার কি আছে... এমন হয়..
সান্তনামূলক দুয়েকটা বাক্য আওড়ালাম। আপু কিছু বলল না। মুখভঙ্গি দেখে মনে হলোনা খেলার ফলাফল নিয়ে সে চিন্তিত।
- ঘুমা!
আমাকে থামিয়ে ডান পা দিয়ে ঘাড়ে ধাক্কা দিল। কার্পেটে শুয়ে পড়তে পায়ের পাতায় ঠেলে ঠেলে আমাকে উপুড় করে দিল। এমনিতে তার প্যানপ্যান শুনে আমাদের মেজাজ খারাপ হয়, আজ আমার কথাই আপুর ভাল লাগছেনা। উষ্ণ পায়ের পাতার ছোঁয়া লাগছে পিঠে। আপু আলতো করে সারা পিঠ জুড়ে আনমনে পা বুলিয়ে দিচ্ছে। আপু সব্যসাচী মানুষ, হাত পা সমান চলে। তবে এরকম আগে হয়েছে বলে মনে পড়েনা। আজ কি হল তা ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে এল।
[+] 5 users Like riddle's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:20 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:20 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:21 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:22 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:22 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:22 PM
RE: খেলোয়াড় - by riddle - 27-12-2018, 10:23 PM
RE: খেলোয়াড় - by ronylol - 28-12-2018, 11:04 AM
RE: খেলোয়াড় - by al0o0z - 02-07-2019, 11:30 AM
RE: খেলোয়াড় - by Amipavelo - 02-07-2019, 04:39 PM
RE: খেলোয়াড় - by TZN69 - 03-07-2019, 06:49 AM
RE: খেলোয়াড় - by prodip - 03-07-2019, 09:15 PM
RE: খেলোয়াড় - by arn43 - 10-09-2021, 09:24 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)