27-04-2023, 03:28 PM
ত্রয়োবিংশতি পর্ব
ওদের কথার মাঝেই একটা গাড়ির আওয়াজ এলো লতা এসে বলল -ওরা সবাই এসে গেছে গো দাদু। লতা নিশিকান্ত বাবুকে দাদু বলেই ডাকে। রাধার মা-বাবা আর দিপুর বাবা এসে ঢুকল বসার ঘরে। নিশিকান্ত বাবু কাশীনাথকে হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে তন্দ্রাকে বললেন - বৌমা রাধাকে একটু সাজিয়ে গুজিয়ে নিয়ে এসো। তন্দ্রা চলে গেল। নিশিকান্ত বাবু কাশীনাথকে সংক্ষেপে সব কিছু বললেন। রাধার মা সবিতা ও বাবা গোপাল সবটাই শুনলেন। গোপাল বাবু জিজ্ঞেস করলেন ছেলে কোথায় , ছেলের বাবার সাথে পথেই আলাপ হয়েছে। নিশিকান্ত বাবু - এখুনি আসছে পাত্র-পাত্রী। তন্দ্রা দিপুকে একটা পাঞ্জাবি পাজামা পড়িয়েছে আর রাধাকে নিজের একটা বেনারসি পড়িয়ে নিয়ে এলো। সবিতা নিজের মেয়েকে চিনতেই পারছেনা এ যেন অন্য রাধা। গোপাল বাবু - দিপুকে দেখে বললেন - বাবা আমিযে তোমার মতো পাত্র পাব আশা করিনি আমার আর কিছুই দেখার নেই বা বলারও নেই। আমি খুবই গরিব মানুষ তিন তিনটে মেয়ে আমার রাধার পরে আরো দুটো মেয়ে - মিরা আর নিরা রয়েছে ওদেরও বিয়ে দিতে হবে। নিশিকান্ত বাবু বললেন - তোমাকে কিছুই করতে হবে না তোমার এই হবু জামাই করবে, এখন থেকে তোমাদের সব দায়িত্য দিপুর ওপরে ছেড়ে দাও। কাশীনাথ বাবু চুপ করে ওদের দেখছিলেন আর শুনছিলেন বললেন - আগে তো দিপুকে শিখতে হবে অনেক কিছু নিশিকান্ত বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেলন -অবশ্য যার মাথার উপরে আপনার হাত আছে তাকে তো শিখতেই হবে সব। নিশিকান্ত বাবু বললেন - আরে দাদা দিপু খুবই ভালো ছেলে, দেখবেন ও খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে ফেলবে। একটু থিম আবার বললেন - আজকে আমার বৌমা একটা সুখবর দিয়েছে তাই আমার মনে হয়েছে যে আজকেই সব শুভ কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। আমার বৌমা মা হতে চলেছে আমার ঘর আলো করে ফুটফুটে ছেলে আসছে কাশীনাথ বাবু। আমার আজ খুব আনন্দের দিন। গোপাল বাবু দিপুর দিকে তাকালেন দিপু নিচু হয়ে ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে নিজের বাবা আর নিশিকান্ত বাবুকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াল। গোপাল বললেন - বাবা আমার অনেক জন্মের পুন্য ফলে তোমার মতো জামাই পেলাম আজ থেকে আমার যা আছে সব তোমাকে দিলাম। দিপু - আমার কিছুই চাইনা আমার কাকাবাবু আমাকে অনেক দিয়েছেন শুধু রাধাকে পেলেই আমি খুশি। কাশীনাথ রাধাকে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন - মা তুমি পারবে তো একা হাতে সংসার সামলাতে ? রাধা মাথা নেড়ে হ্যা বলতে তন্দ্রা বলল - মুখে বল উনি তো তোর আর এক বাবা তাইনা এতো লজ্যা পাচ্ছিস কেন। রাধা তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে এবার মুখে বলল - হ্যা আমি পারবো বাবা আমিও তো তোমার আর এক মেয়ে আমার দিদিরা পারলে আমিও পারব। কাশীনাথ বাবুর আবেগে গলা বুজে এলো মুখে কিছুই বলতে পারলেন না। তাই দেখে রাধা - কি হলো বাবা তোমার আমি কি তোমাকে দুঃখ দিলাম ? কাশীনাথ রাধার কাঁধে হাত রেখে ধরা গলায় বললেন - নারে মা তুইতো আমার আর এক মেয়ে আজ থেকে আর মেয়েরা বাবাকে দুঃখ দেয়না বাবার দুঃখের ভাগিদার হয় যেমন আমার আর দুই মেয়ে ভাগাভাগি করে নিয়েছে আর থেকে তুইও নিবি। রাধা কাশীনাথকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
রাতের খাবার খাইয়ে সবাইকে আবার গাড়িতে করে নিশিকান্ত বাবু ফেরত পাঠালেন। কাশীনাথে বাবুর গ্রামের পাশের গ্রামেই গোপাল বাবুর বাড়ি। তবে যাবার আগে নিশিকান্ত বাবু দিপু আর রাধার বিয়ের দিন ঠিক করেদিলেন বললেন - আমার মৃনালের বিয়ের ১০ দিন বাদে একটা ভালো দিন আছে সেদিনই দিপু আর রাধার বিয়ে হবে। একটু বাদেই কুনাল আর মৃনাল বাড়ি ফিরল। দুজনে এসেই দিপুর খোঁজ করতে লাগল। তন্দ্রা দিপুকে ডেকে এনে দুই ভাইয়ের সামনে দাঁড় কোরাল। কুনাল বলল - সাবাস দিপু আমার কিন্তু একটা বাচ্ছা হলে হবে না খুব কম করে তিনটে লাগবে। আর শুনলাম যে তোমারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে রাধার সাথে আর তোমার বিয়ের এক বছরের মধ্যে বাচ্ছা চাই আর ওই বাচ্ছাকে নিয়ে তোমাদের মিয়ার বর্ষপূর্তি উৎসব করব। যেন হাসি মস্করার মধ্যে দিয়ে সবার রাতের খাবার খাওয়া শেষ হলো সবাই যে যার মতো ঘুমোতে গেল।
বেশ সকাল সকাল সবাই তৈরী হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরল। রাধার গ্রাম আসতে তন্দ্রা বলল - দিপুকে বলল তোমাকে আমরা এখানে তোমার হবু শশুর বাড়িতে নামিয়ে দিচ্ছি আমরা ফেরার পথে তোমাকে নিয়ে যাব। দিপু বলল - কেন গো দিদি আমি কি দোষ করলাম। আরে বাবা তোমার শশুরের ভিটে দেখবে না আর তাছাড়া এখানে রাধা নাই বা থাকল ওর দুই বোনে মিরা আর নিরা আছে তো তাদের সাথে একটু আলাপ পরিচয় সেরে নাও। দিপু আর কি করে নেমে পরল গাড়ি থেকে সামনেই গোপাল বাবুর বাড়ি। দিপু নেমে গোপাল বাবুর বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল বাড়ীর কাছে আসতে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল তুমি এখানে কি করে এলে। দিপু বোকার মতো মেয়েটিকে দেখতে লাগল জিজ্ঞেস করল - তুমি আমাকে চেন নাকি ? মেয়েটি - দূর থেকে তোমাকে আসতে দেখে মা বললেন যে তুমিই আমাদের জামাই বাবু আর জামাই বাবু আমি নিরা। দিপু এবার একটু সহজ হয়ে বলল - তোমার দিদি তো কাকাবাবুর বাড়িতে কালকে রাতে মা-বাবার সাথে তোমরা এলেনা কেন।