25-04-2023, 04:56 PM
(This post was last modified: 25-04-2023, 05:00 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দ্ব্যশীতিতম অধ্যায়
সামনে ড্রাইভারের পাশে মধু পিছনে দীপশিখা।গাড়ী ছেড়ে দিতেই দীপশিখা পিছন দিকে তাকালেন।দ্বৈপায়ন ধামের প্রতি কেমন একটা টান অনুভূত হয়।পাকা রাস্তাধরে চলেছে গাড়ী।দীপশিখা বললেন,মধু আপনি এখানে কি করেন?
লম্বা জিভ কেটে লজ্জায় গদ্গদ মধু বলল,আপনি আমারে আপনি-আজ্ঞে করবেন না।আমি চাকর বাকর মানুষ ফাইফরমাশ খাটি--।
তুমি আমাকে চেনো?
আপনি বাবুর বুইন।চেনবো না কেন, কত শুনেছি আপনার কথা।
দীপশিখার কৌতূহল বাড়ে তার কথা অনেক শুনেছে?দীপশখা জিজ্ঞেস করলেন,তোমাকে বলেছেন?
আমাকে বলবে ক্যান?আমার বাপুরে বলতেন।বাপু মরে যবার পর আমি কাজে লেগেছি।বড় মশায়ের দিব্যি ছেল তাই ডাক্তারবাবু চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।
চোখের জল আড়াল করতে দীপশিখ মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
গাড়ি স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল।দীপশিখা গাড়ী থেকে নেমে স্টেশনের দিকে হাটতে থাকেন।পিছনে মধুকে দেখে বললেন,তুমি আর আসছো কেন?
আপনেরে টেরেনে তুলে দিয়ে যাবো ডাক্তার দিদি বলেছে।টাকা দেন টিকিট কিনে আনি।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে মধু টিকিট কাটতে চলে গেল।দীপশিখা একটা ফাকা বেঞ্চে বসলেন।
কিছুক্ষন পর মধু ফিরে এসে টিকিট আর কিছু খচরো পয়সা দীপশিকগার দিকে এগিয়ে দিল।দীপশিখা টিকিটটা নিয়ে বললেন,পয়সা তুমি রেখে দাও।
মধু শিউরে উঠে বলল,না না ডাক্তারদিদি জানতি পারলি রাগ করবে।
ডাক্তারদিদি তো দেখছে না।
মধু হেসে বলল,লুকোয় করলি দোষের না?
দীপশিখার মুখে কথা সরেনা।হাত বাড়িয়ে ফেরত পয়সা নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলেন।পাশে জায়গা রয়েছে মধু দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললেন,বোসো।
মধু দূরত্ব বাচিয়ে পাশে বসল।সিগন্যাল লাল হয়ে আছে গাড়ীর আসতে দেরী আছে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন,সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়ে কাটা এগিয়ে চলেছে।আচ্ছা মধু এই গাড়ীটা কার?
গাড়ীটা ডাক্তারবাবুর ছেল।
ডাক্তারবাবুর ছিল মানে?
ডাক্তারবাবু অসুস্থ হবার পর কে চড়বে গাড়ী।গোবিন্দকাকাই এদিক সেদিক ভাড়া খাটে।
ডাক্তার বাবু জানতেন?
ডাক্তারবাবুই বলেছেন।তবে কল দিলি চলে আসে।আজ সারাদিন তো দিদির সাথে সাথে ছেল।কলকাতা থেকে একজন ডাক্তার এসিছেল শ্মশানে দিদির বন্ধু, তানারে ইস্টিশনে পোউছে দেলেন।
দীপশিখার মনে কৌতূহল জাগে কিন্তু মধুকে সেসব জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে গেলেন।সিগন্যাল নীল হয়েছে।প্লাটফর্মে লোকজন বাড়তে থাকে।বাড়িতে এখন পলি আর বৌদি একা।পলি বলছিল দিব্যকে খবর দিয়েছে ও নাকি আসছে।প্লাটফর্মে গাড়ী ঢুকতে দীপশিখা উঠে এগিয়ে গেলেন।খুব বেশী ভীড় নেই।জানলার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলেন।জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মধুকে দেখে হাত নাড়তে থাকেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।
সারাদিন কি করছে একা একা কে জানে।ওকে সঙ্গে আনলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।পলির ডাক্তার বন্ধু এসেছিল কথাটা মনে বাজে।কোথা থেকে এসেছিল?নিশ্চয়ই ওকে খবর দেওয়া হয়েছে।বৌদি পলির বিয়ের নিয়ে খুব চিন্তিত।সব গোলমাল পাকিয়ে যায়।মধুর কাছে নতুন কথা শুনলেন।দিবাদা তাকে নিয়ে চিন্তা করতো।পলি কখনো এসব কথা বলেনি।
রাণাঘাটে ঢুকতে যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়।একী সবাই এখানে নামবে নাকি।খেয়াল হয় তাকেও নামতে হবে।দীপশিখা উঠে দাড়ালেন।এখান থেকে অন্য ট্রেনে উঠতে হবে।ট্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কতকাল।প্লাট ফর্মে নেমে ঘোষোণা শুনলেন ছয় নম্বরে ট্রেন দাড়িয়ে,অনেকে লাইন পেরিয়ে ছুটছে।দীপশিখা ওভার ব্রিজে উঠে লাইন পেরোলেন।তাকে শিয়ালদা নামতে ভেবে সামনের দিকে একটা কামরায় উঠলেন।
জানলার ধারে একটা সিটে বসলেন।তার সামনে তারই বয়সী প্রায় এক মহিলা বসে আছেন।ট্রেনে ক্রমে লোক বাড়তে থাকে।সামনে বসা ভদ্রমহিলা তাকে দেখছেন।কলেজ আর বাড়ি করে সময় কেটেছে।পথে ঘাটে খাজুরে আলাপের সুযোগ হয়নি,অভ্যস্থও নন।মুখে গাম্ভীর্য এটে দীপশিখা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন।বহুকাল পরে দিবাদাকে দেখিলেন চেহারা অনেক বদলে গেছে।হাসপাতাল হতে ফিরব্রে না জানলে বলেনি কাল রাতেই রওনা হতেন।মনুর বয়সী একটি যুবক জানলা দিয়ে সামনের মহিলাকে এক ভাড় চা এগিয়ে দিয়ে আবার চলে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করে।সেই ছেলেটি ট্রেনের ভীড় ঠেলে এসে মহিলার পাশে রাখা ব্যাগ সরিয়ে বসে পড়ল।ওদের কথাবার্তায় বুঝতে পারেন মা ও ছেলে।সারাদিন মনুটা কি করল কে জানে।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।রাতে ওরা ফলাহার করবে সম্ভবত।পলি বলছিল দিব্য রওনা হয়েছে।কাল হয়তো পৌছে যাবে।একা আসছে নাকি বৌকে নিয়ে আসবে সেসব কিছু বলেনি।মধু লোকটি বেশ।পলির সঙ্গে সঙ্গে থকে।গোপনে পাপ করলে কি দোষের নয়।মধু তেমন কিছু ভেবে বলেনি তবু কথাটা ভুলতে পারেন না দীপশিখা।
হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে এসেছে সুখ।সারাদিন এত চিন্তা ছিলনা রাত হবার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা বাড়তে থাকে।জরুরী কাজ আছে কি কাজ কিছু বলে যায়নি।ঘুম থেকে তুলেও বলে যেতে পারতো লিখে জানাবার কি হল।মোবাইলটাও রেখে গেছে ফোন করে খবর নেবে তার উপায় নেই।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে মোমোর কোনো বিপদ হল নাতো?মোমোর পরিচিত কাউকে চেনে না যে গিয়ে খোজ নেবে।ঘুম থেকে উঠে পোশাক পরে মোমো তৈরী হল তার ঘুম ভাঙ্গলো না ভেবে নিজের প্রতি রাগ হতে থাকে। বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো।বাস ট্রাম চলছে ব্যস্ত মানুষের ভীড় পথে।সেদিকে তাকিয়ে সুখ একটা সিগারেট ধরালো।
একবার মনে হয়েছিল কাজ সেরে মোমো হয়তো কলেজে চলে গেছে।কিন্তু কলেজে গেলে তো এত রাত হবার কথা নয়।দরকার আছে কি দরকার সেটা বলে যেতে কি হয়েছিল?আজব মহিলা তো।সুখ কিছু ভাবতে পারেনা।আজ রাতে তার ঘুম হবে না।হঠাৎ নজর আটকে যায়।মোমো না?----হ্যা মোমোই তো কম্পাউণ্ডের গেট দিয়ে ঢুকছে।কেমন ক্লান্ত বিধ্বস্ত লাগছে মোমোকে। সিগারেটের টুকরো ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলতে ভিতরে ঢুকে এল।
দরজা খুলে দিতে দীপশিখা কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।সুখ লক্ষ্য করে ঘরে ঢুকে পোশাক না বদলেই বিছানায় এলিয়ে দিল নিজেকে।মনে হয় বেশ পরিশ্রান্ত এখন কথা বলা ঠিক হবে না।পাখার স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে কাপড় উঠিয়ে পা টিপতে লাগল।অনেক হাটাহাটি করেছে পায়ে ম্যাসেজ করলে আরাম হবে। দীপশিখা চোখ বুজে শুয়ে আছেন।
বেশ আরাম বোধ করেন দীপশিখা।কিন্তু শুয়ে থাকলে হবে না।চোখ মেলে বললেন,একটা কুর্তা এনে দাও।
সুখ ওয়ারড্রোব খুলে একটা খাটো ঝুলের জামা নিয়ে এল।দীপশিখা জামা খুলে ফেলেছেন।মনুর হাত থেকে কুর্তিটা নিয়ে গায়ে দিয়ে শাড়ি খুলে ফেলে বললেন,রাতের খাওয়া হয়েছে?
দরকার নেই।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।
দীপশিখা বিছানা থেকে নেমে বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেলেন।
পিছন পিছন সুখ গিয়ে বলল,এখন রান্না করবে? বললাম না দরকার নেই।
আমার দরকার আছে।সারাদিন পেটে একটা দানা পড়েনি।
সুখ অপ্রতিভ হয় বলে,তোমার জরুরী কাজ মিটেছে?
হু-উ-উম।
দীউশিখা চা করে একটা কাপে ঢালতে থাকেন।
ফোনটাও নিয়ে যাওনি আমি এদিকে চিন্তায়-চিন্তায় মরি--।
চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,কে তোমাকে আমার জন্য চিন্তা করতে বলেছে?
সুখ অবাক হয়ে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।এভাবে কথা বলছে কেন মোমো।ওতো এভাবে কথা বলতো না।কোথায় গেছিল কিছু কি হয়েছে?চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে সুখ। এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না। রাতে শুয়ে জিজ্ঞেস করলেই হবে।ফিরে এসেছে এতেই শান্তি।সুখ চা নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।
ফ্রিজ হতে মাছ বের করতে গিয়ে থেমে গেলেন দীপশিখা।মাছগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন।কটা দিনের ব্যাপার মাছ খাওয়ার দরকার কি?দীপশিখার চোখ জলেঝাপ্সা হয়ে এল।মধু বলছিল ডাক্তারবাবু আপনের কথা ভাবতেন।কেবল অন্যকে দোষারোপ করলেই হবে।তার নিজেরও কি কোনো দোষ নেই?এখন মনে হচ্ছে তিনি দিবাদাকে বুঝতে ভুল করেছেন।কেবল নিজের উচ্চাকাঙ্খাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
সামনে ড্রাইভারের পাশে মধু পিছনে দীপশিখা।গাড়ী ছেড়ে দিতেই দীপশিখা পিছন দিকে তাকালেন।দ্বৈপায়ন ধামের প্রতি কেমন একটা টান অনুভূত হয়।পাকা রাস্তাধরে চলেছে গাড়ী।দীপশিখা বললেন,মধু আপনি এখানে কি করেন?
লম্বা জিভ কেটে লজ্জায় গদ্গদ মধু বলল,আপনি আমারে আপনি-আজ্ঞে করবেন না।আমি চাকর বাকর মানুষ ফাইফরমাশ খাটি--।
তুমি আমাকে চেনো?
আপনি বাবুর বুইন।চেনবো না কেন, কত শুনেছি আপনার কথা।
দীপশিখার কৌতূহল বাড়ে তার কথা অনেক শুনেছে?দীপশখা জিজ্ঞেস করলেন,তোমাকে বলেছেন?
আমাকে বলবে ক্যান?আমার বাপুরে বলতেন।বাপু মরে যবার পর আমি কাজে লেগেছি।বড় মশায়ের দিব্যি ছেল তাই ডাক্তারবাবু চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।
চোখের জল আড়াল করতে দীপশিখ মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
গাড়ি স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল।দীপশিখা গাড়ী থেকে নেমে স্টেশনের দিকে হাটতে থাকেন।পিছনে মধুকে দেখে বললেন,তুমি আর আসছো কেন?
আপনেরে টেরেনে তুলে দিয়ে যাবো ডাক্তার দিদি বলেছে।টাকা দেন টিকিট কিনে আনি।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে মধু টিকিট কাটতে চলে গেল।দীপশিখা একটা ফাকা বেঞ্চে বসলেন।
কিছুক্ষন পর মধু ফিরে এসে টিকিট আর কিছু খচরো পয়সা দীপশিকগার দিকে এগিয়ে দিল।দীপশিখা টিকিটটা নিয়ে বললেন,পয়সা তুমি রেখে দাও।
মধু শিউরে উঠে বলল,না না ডাক্তারদিদি জানতি পারলি রাগ করবে।
ডাক্তারদিদি তো দেখছে না।
মধু হেসে বলল,লুকোয় করলি দোষের না?
দীপশিখার মুখে কথা সরেনা।হাত বাড়িয়ে ফেরত পয়সা নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলেন।পাশে জায়গা রয়েছে মধু দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললেন,বোসো।
মধু দূরত্ব বাচিয়ে পাশে বসল।সিগন্যাল লাল হয়ে আছে গাড়ীর আসতে দেরী আছে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন,সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়ে কাটা এগিয়ে চলেছে।আচ্ছা মধু এই গাড়ীটা কার?
গাড়ীটা ডাক্তারবাবুর ছেল।
ডাক্তারবাবুর ছিল মানে?
ডাক্তারবাবু অসুস্থ হবার পর কে চড়বে গাড়ী।গোবিন্দকাকাই এদিক সেদিক ভাড়া খাটে।
ডাক্তার বাবু জানতেন?
ডাক্তারবাবুই বলেছেন।তবে কল দিলি চলে আসে।আজ সারাদিন তো দিদির সাথে সাথে ছেল।কলকাতা থেকে একজন ডাক্তার এসিছেল শ্মশানে দিদির বন্ধু, তানারে ইস্টিশনে পোউছে দেলেন।
দীপশিখার মনে কৌতূহল জাগে কিন্তু মধুকে সেসব জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে গেলেন।সিগন্যাল নীল হয়েছে।প্লাটফর্মে লোকজন বাড়তে থাকে।বাড়িতে এখন পলি আর বৌদি একা।পলি বলছিল দিব্যকে খবর দিয়েছে ও নাকি আসছে।প্লাটফর্মে গাড়ী ঢুকতে দীপশিখা উঠে এগিয়ে গেলেন।খুব বেশী ভীড় নেই।জানলার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলেন।জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মধুকে দেখে হাত নাড়তে থাকেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।
সারাদিন কি করছে একা একা কে জানে।ওকে সঙ্গে আনলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।পলির ডাক্তার বন্ধু এসেছিল কথাটা মনে বাজে।কোথা থেকে এসেছিল?নিশ্চয়ই ওকে খবর দেওয়া হয়েছে।বৌদি পলির বিয়ের নিয়ে খুব চিন্তিত।সব গোলমাল পাকিয়ে যায়।মধুর কাছে নতুন কথা শুনলেন।দিবাদা তাকে নিয়ে চিন্তা করতো।পলি কখনো এসব কথা বলেনি।
রাণাঘাটে ঢুকতে যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়।একী সবাই এখানে নামবে নাকি।খেয়াল হয় তাকেও নামতে হবে।দীপশিখা উঠে দাড়ালেন।এখান থেকে অন্য ট্রেনে উঠতে হবে।ট্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কতকাল।প্লাট ফর্মে নেমে ঘোষোণা শুনলেন ছয় নম্বরে ট্রেন দাড়িয়ে,অনেকে লাইন পেরিয়ে ছুটছে।দীপশিখা ওভার ব্রিজে উঠে লাইন পেরোলেন।তাকে শিয়ালদা নামতে ভেবে সামনের দিকে একটা কামরায় উঠলেন।
জানলার ধারে একটা সিটে বসলেন।তার সামনে তারই বয়সী প্রায় এক মহিলা বসে আছেন।ট্রেনে ক্রমে লোক বাড়তে থাকে।সামনে বসা ভদ্রমহিলা তাকে দেখছেন।কলেজ আর বাড়ি করে সময় কেটেছে।পথে ঘাটে খাজুরে আলাপের সুযোগ হয়নি,অভ্যস্থও নন।মুখে গাম্ভীর্য এটে দীপশিখা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন।বহুকাল পরে দিবাদাকে দেখিলেন চেহারা অনেক বদলে গেছে।হাসপাতাল হতে ফিরব্রে না জানলে বলেনি কাল রাতেই রওনা হতেন।মনুর বয়সী একটি যুবক জানলা দিয়ে সামনের মহিলাকে এক ভাড় চা এগিয়ে দিয়ে আবার চলে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করে।সেই ছেলেটি ট্রেনের ভীড় ঠেলে এসে মহিলার পাশে রাখা ব্যাগ সরিয়ে বসে পড়ল।ওদের কথাবার্তায় বুঝতে পারেন মা ও ছেলে।সারাদিন মনুটা কি করল কে জানে।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।রাতে ওরা ফলাহার করবে সম্ভবত।পলি বলছিল দিব্য রওনা হয়েছে।কাল হয়তো পৌছে যাবে।একা আসছে নাকি বৌকে নিয়ে আসবে সেসব কিছু বলেনি।মধু লোকটি বেশ।পলির সঙ্গে সঙ্গে থকে।গোপনে পাপ করলে কি দোষের নয়।মধু তেমন কিছু ভেবে বলেনি তবু কথাটা ভুলতে পারেন না দীপশিখা।
হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে এসেছে সুখ।সারাদিন এত চিন্তা ছিলনা রাত হবার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা বাড়তে থাকে।জরুরী কাজ আছে কি কাজ কিছু বলে যায়নি।ঘুম থেকে তুলেও বলে যেতে পারতো লিখে জানাবার কি হল।মোবাইলটাও রেখে গেছে ফোন করে খবর নেবে তার উপায় নেই।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে মোমোর কোনো বিপদ হল নাতো?মোমোর পরিচিত কাউকে চেনে না যে গিয়ে খোজ নেবে।ঘুম থেকে উঠে পোশাক পরে মোমো তৈরী হল তার ঘুম ভাঙ্গলো না ভেবে নিজের প্রতি রাগ হতে থাকে। বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো।বাস ট্রাম চলছে ব্যস্ত মানুষের ভীড় পথে।সেদিকে তাকিয়ে সুখ একটা সিগারেট ধরালো।
একবার মনে হয়েছিল কাজ সেরে মোমো হয়তো কলেজে চলে গেছে।কিন্তু কলেজে গেলে তো এত রাত হবার কথা নয়।দরকার আছে কি দরকার সেটা বলে যেতে কি হয়েছিল?আজব মহিলা তো।সুখ কিছু ভাবতে পারেনা।আজ রাতে তার ঘুম হবে না।হঠাৎ নজর আটকে যায়।মোমো না?----হ্যা মোমোই তো কম্পাউণ্ডের গেট দিয়ে ঢুকছে।কেমন ক্লান্ত বিধ্বস্ত লাগছে মোমোকে। সিগারেটের টুকরো ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলতে ভিতরে ঢুকে এল।
দরজা খুলে দিতে দীপশিখা কোনো কথা না বলে সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।সুখ লক্ষ্য করে ঘরে ঢুকে পোশাক না বদলেই বিছানায় এলিয়ে দিল নিজেকে।মনে হয় বেশ পরিশ্রান্ত এখন কথা বলা ঠিক হবে না।পাখার স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে কাপড় উঠিয়ে পা টিপতে লাগল।অনেক হাটাহাটি করেছে পায়ে ম্যাসেজ করলে আরাম হবে। দীপশিখা চোখ বুজে শুয়ে আছেন।
বেশ আরাম বোধ করেন দীপশিখা।কিন্তু শুয়ে থাকলে হবে না।চোখ মেলে বললেন,একটা কুর্তা এনে দাও।
সুখ ওয়ারড্রোব খুলে একটা খাটো ঝুলের জামা নিয়ে এল।দীপশিখা জামা খুলে ফেলেছেন।মনুর হাত থেকে কুর্তিটা নিয়ে গায়ে দিয়ে শাড়ি খুলে ফেলে বললেন,রাতের খাওয়া হয়েছে?
দরকার নেই।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।
দীপশিখা বিছানা থেকে নেমে বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেলেন।
পিছন পিছন সুখ গিয়ে বলল,এখন রান্না করবে? বললাম না দরকার নেই।
আমার দরকার আছে।সারাদিন পেটে একটা দানা পড়েনি।
সুখ অপ্রতিভ হয় বলে,তোমার জরুরী কাজ মিটেছে?
হু-উ-উম।
দীউশিখা চা করে একটা কাপে ঢালতে থাকেন।
ফোনটাও নিয়ে যাওনি আমি এদিকে চিন্তায়-চিন্তায় মরি--।
চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,কে তোমাকে আমার জন্য চিন্তা করতে বলেছে?
সুখ অবাক হয়ে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।এভাবে কথা বলছে কেন মোমো।ওতো এভাবে কথা বলতো না।কোথায় গেছিল কিছু কি হয়েছে?চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে সুখ। এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না। রাতে শুয়ে জিজ্ঞেস করলেই হবে।ফিরে এসেছে এতেই শান্তি।সুখ চা নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।
ফ্রিজ হতে মাছ বের করতে গিয়ে থেমে গেলেন দীপশিখা।মাছগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন।কটা দিনের ব্যাপার মাছ খাওয়ার দরকার কি?দীপশিখার চোখ জলেঝাপ্সা হয়ে এল।মধু বলছিল ডাক্তারবাবু আপনের কথা ভাবতেন।কেবল অন্যকে দোষারোপ করলেই হবে।তার নিজেরও কি কোনো দোষ নেই?এখন মনে হচ্ছে তিনি দিবাদাকে বুঝতে ভুল করেছেন।কেবল নিজের উচ্চাকাঙ্খাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।