22-04-2023, 09:57 AM
পদের মায়া বিপদের ছায়া
দোলা আরো একবার বসার ব্যবস্থা থেকে খাবারদাবারের যোগান সমস্তকিছুর উপর চোখ বুলিয়ে নেয়। আজ একটা বিশেষ দিন। আজ সবকিছু নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন। সে সন্তুষ্ট হলো, "যাক, মনে হচ্ছে সব ঠিকই আছে।"
বড় সুইমিং পুল এবং সাজানো বাগান সমেত তাদের বিশাল বাড়িটি এক বড়োসড়ো অতিথি দলকে মনোরঞ্জন করার জন্য সত্যিই একটি চমৎকার স্থান। প্রথম যেদিন দোলা এই বাড়িতে পা রাখে, সেদিন সে জয়কে মশকরা করে বলেছিল যে তারা যখন এখানে পার্টি রাখবে, তখন তাদের বাগানটিতে কপোত-কপোতীরা লুকিয়ে দুষ্টুমি করার জন্য অনায়াসে অঢেল জায়গা খুঁজে পাবে। আর এক ঘন্টার মধ্যেই অতিথিরা আসতে শুরু করে দেবে। সে ঠিক করলো যে একটা হলুদ রঙের সুতির আরামদায়ক মিডি আর হিল্স পড়ে অভ্যাগতদের সাদর অভ্যর্থনা জানাবে। যদিও জয়দের কোম্পানি অনুষ্ঠানটিকে একটা সাধারণ পিকনিকের শ্রেণীতে ফেলেছে, তবু এই বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য চমৎকার খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
জয়কে বিয়ে করে দোলার জীবনটা যথেষ্ঠ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটছে। তারা আমেরিকায় সাউথ ফ্লোরিডা অঞ্চলে মায়ামি শহরে থাকে। জয় মেগানেট সল্যুশন্সের মতো এক নামজাদা সফ্টওয়ার কোম্পানিতে প্রজেক্ট লিডারের পদে চাকরি করে। মাস গেলে মোটা মাইনে পায় আর হাত খুলে খরচ করে। প্রতি সপ্তাহান্তে সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে যায়। সারাদিন দুজনে জলকেলি করার পর সন্ধ্যাবেলায় কখনো ডাইন-ইনে, কখনো বা টেক-আউটে, কিংবা কোনো দামী রেস্তোরাঁয় খেয়েদেয়ে বাড়ি ফেরে।
মাস তিনেক আগে অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে জয় দেশে ফেরে। একদিন তার বোন রমার সাথে দেখা করতে দোলা তাদের বাড়িতে আসে। ওরা একই কলেজে পড়ত। দোলা জানতো যে তার বান্ধবীর একটা দাদা আছে, যে বিদেশে মস্তবড় চাকরি করে। তবে আগে কখনো তাদের সাক্ষাৎ হয়নি। সেদিনই তাদের প্রথম আলাপ। আর প্রথম দর্শনেই জয় দোলার প্রেমে পড়ে যায়। আর পড়বে নাই বা কেন? দোলাকে অবিকল স্বর্গের অপ্সরাদের মত দেখতে। তার লাস্যময়ী রূপযৌবন দেখে যে কোনো পুরুষেরই মাথা ঘুরে যাবে। তার পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতা, চৌষট্টি কিলো ওজন আর ৩৮ডিডি-৩০-৪২ চিত্তাকর্ষক গঠন কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল বয়সের পুরুষদের মনে হিল্লোল সৃষ্টি করে। তার দুটো বিশাল দুধ ও প্রকাণ্ড পাছার দিকে একবার নজর গেলে সব মরদেরই চোখ কোঠরের ভিতর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে পড়ে। তার লম্বা রেশমি চুল, হরিণের মত বড় বড় দুটো বাদামী চোখ আর ফর্সা চিকন ত্বক পুরুষদের কাছে তাকে আরোবেশি আকাঙ্খিত তোলে।
দোলার উত্তুঙ্গ আবেদনময়ী রূপের আঘাতে জয় প্রথম আলাপেই সম্পূর্ণ ঘায়েল হয়ে পড়ে তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দোলা কিন্তু তৎক্ষণাৎ হ্যাঁ করে না। সে বাড়ির লোকেদের সাথে আলোচনা করার জন্য একটা দিন সময় চায়। বাড়ি ফিরে গিয়ে সে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলে এবং তিনজনে মিলে কালবিলম্ব না করে পাত্রের যোগ্যতা বিচার করতে বসে যায়। জয়কে অবশ্যই সম্ভাব্য বর হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। বছর দশেক ধরে সে আমেরিকাতে বসবাস করছে। গ্রিন কার্ড, বিপুল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, বিলাসবহুল গাড়ি, নিজস্ব বাড়ি তার সবই রয়েছে। তবে সে দোলার চেয়ে অত্যন্ত বারো বছরের বড়। আহামরি কিছু দেখতে নয়। বড়জোর সাধারণ বলা চলে। মায়ের আদুরে দুলালের মত গোলগাল চেহারা। তেমন একটা লম্বা নয়, টেনেটুনে পাঁচ ফুট সাত-আট ইঞ্চি। চোখে যথেষ্ট পাওয়ার আছে। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে। চুলও পাতলা হয়ে আসছে। অচিরেই টাক পড়বে। অবশ্য গায়ের রংটা সাহেবদের মত ফর্সা। আর খুব শৌখিন মানুষ। সবসময় ফিটফাট থাকে। বাড়িতেও গায়ে দামী ডিও মেখে ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় পড়ে থাকে।
তুল্যমূল্য বিচার করলে, জয়কে বিয়ে করতে দোলার রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। তার বাবা-মায়ের অন্তত তাই অভিমত। তাঁদের মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য জয় একজন আদর্শ বর। এমন একজন সুপাত্রকে বিয়ে করলে দোলাকে কোনোদিনও পয়সাকড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আর উপরি হিসেবে সে আমেরিকার মত প্রথম বিশ্বের এক সমৃদ্ধিশালী দেশে বাকি জীবনটা কাটানোর সুযোগও পাচ্ছে। শুধুমাত্র চেহারার ভিত্তিতে এমন একজন পাত্রকে হাতছাড়া করা নেহাৎ বোকামি হয়ে যাবে। বাবা-মায়ের অকাট্য যুক্তি দোলা কোনোভাবেই খণ্ডাতে পারে না। সে পরের দিনই জয়দের বাড়িতে ফোন করে বিয়েতে সম্মতি জানিয়ে দেয়। এক সপ্তাহের ভিতরে এক আলিশান রিসোর্টে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আর বিয়ের ঠিক দুটো দিন বাদে নবদম্পতি আমেরিকায় চলে আসে।
আজ তাদের বাড়িতে কোম্পানির বার্ষিক পিকনিক হচ্ছে। জয় স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে বন্দুক নিয়েছে। অবশ্য তার পিছনে স্বার্থ আছে। কোম্পানিতে অপারেশন্স লিডারের পদটা খুব শীঘ্রই খালি হতে চলেছে। বুড়ো হেনরী সাদারল্যান্ড এই মাসটা শেষ হলেই অবসর নেবেন। ওনার পদে যাদেরকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে জয়ও একজন। কোম্পানির সিইও মিঃ মার্কাস জনসনকে যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারবে, তারই কপাল খুলে যাবে। জয় এই সোনার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না। এই ইঁদুর দৌড়ে তাকে টক্কর দেওয়ার মতো একজনই আছে, লি ওয়াং। ওনার মা সিরিয়া থেকে আসা একজন অভিবাসী বলে এশীয় আমেরিকানদের প্রতি মিঃ জনসন স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। গত সপ্তাহে উনি লি ওয়াং আর তার সুন্দরী স্ত্রীয়ের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়ে খানাপিনা করেছেন। অবশ্যই বিনা নিমন্ত্রণে নয়। তার চীনা প্রতিযোগী ঠিক কোন উদ্দেশ্যে বসকে বাড়ি ডেকে এনে খাওয়াচ্ছে, সেটা জয় অন্তত সহজেই আন্দাজ করতে পেরেছে। ইঁটের বদলে পাটকেল ছুড়তে তাই আজকের কোম্পানির বার্ষিক পিকনিকের অনুষ্ঠানটিকে সে যেচে পড়ে আয়োজন করতে চেয়েছে। তবে তাকে নিজের পকেট থেকে কিছু খরচ করতে হচ্ছে না। সবই তাদের কোম্পানি দিচ্ছে। সে শুধুমাত্র তার বিশাল বাড়িটিকে সুইমিং পুল আর বাগান সহ ব্যবহার করতে দিচ্ছে। অবশ্য তার বদান্যতায় কোম্পানির যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। বলতে গেলে খরচ প্রায় অর্ধেক কমেছে।
বাড়ি ডেকে এনে বসকে ভালোমন্দ খাইয়ে লি ওয়াং ভেবেছিল যে জয়কে গোল দেবে। মোক্ষম চালে সে সেটা শোধ করে দিয়েছে। এবার শুধু মিঃ জনসনকে কব্জা করতে পারলেই ষোলো কলা পূর্ণ হয়। আর ঠিক এইখানে তার রূপবতী স্ত্রী তার অনেক কাজে লাগতে পারে। আর পাঁচজন সফল পুরুষদের মতন সুন্দরী মহিলাদের প্রতি তার বসের মনেও স্বাভাবিক দুর্বলতা রয়েছে। দোলা যদি মিঃ জনসনকে তার চটকদার রূপ দেখিয়ে মুগ্ধ করতে পারে, তাহলে আশা করা যেতেই পারে যে কোম্পানির অপ্স হেড পদে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে উনি জয়কেই বেছে নেবেন। বেশি কিছু নয়। পার্টি চলাকালীন সময়ে-অসময়ে একটু হাসি-মস্করা করলেই বসের মন গলে যাবে।
তার স্বামীর বসের সাথে দোলার আলাপ আছে। এর আগে একবারই জয়ের অফিসে ওনার সাথে তার দেখা হয়েছে। নেহাতই সৌজন্যমূলক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ। কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রলোকটি বয়েসে তার থেকে অনেকটাই বড়। অন্তত দ্বিগুন তো হবেই। তবে খুবই লম্বা, অন্তত ছয় ফুট তিন-চার ইঞ্চি। এবং সেইরকম হাট্টাকাট্টা গড়ন। সারা শরীরে পেশীশক্তির আস্ফালন অত্যন্ত স্পষ্ট। কর্মকর্তা না হয়ে, বডি বিল্ডার হলে ওনাকে বেশি মানাতো। অবশ্য ওনার ধারালো মুখ আর ক্ষুরধার চোখ দুটো পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে ভদ্রলোক কর্তৃত্ব করতেই অভ্যস্ত। দোলার স্পষ্টভাবে মনে আছে যে মিঃ জনসনের সাথে করমর্দন করার সময় তার হাতটাকে ঠিক কতটা ছোট মনে হয়েছিল আর কেমন করে তার দেহটা জয়ের তাগড়াই কৃষ্ণাঙ্গ বসের শক্তসমর্থ বড়োসড়ো হাতের স্পর্শে শিরশির করে উঠেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের সম্পর্কে প্রচলিত একটা প্রবাদ মনে পড়ে যেতেই সে শিহরিত হয়ে ওঠে। কথাটা কি আদ্য সত্যি?
অতিথিরা আসতে শুরু করলে বিবাহিত দম্পতি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাতে সবাই অনুষ্ঠানের রম্য পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। দোলা হাসিমুখে সবাইকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় আর তার স্বামী অভ্যাগতদের তাদের বিশাল বাড়িখানা ঘুরিয়ে দেখায়। যখন মিঃ জনসন এলেন, তখন দোলা মিষ্টি হেসে তাকে করমর্দন করে অভিবাদন জানায়। উনি এক হাতে তার হাতটা দৃঢ়ভাবে চেপে ধরেন আর একইসাথে ওনার অন্য হাতটা তার কনুই এবং বাহুতে আলতো করে বুলিয়ে দেন। তার স্বামীর কৃষ্ণাঙ্গ বসের কাছে এমন উদ্ধত আচরণ দোলা প্রত্যাশা করেনি। তার গোটা দেহে অবৈধতার শিহরণ খেলে যায়। সত্যি হোক কিংবা মিথ্যে, তার মনে হয় যে উনি তাকে ভালো করে ছুঁয়ে দেখতে চান। এবং সম্ভবত ওনার পিছনে বাকি সবাই লাইনে না দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো উনি ঠিক তাই করতেন।
জয়ের বসের অভিবাদনের অবশেষে অবসান হলে দোলা পরবর্তী আগমনকারীদের শুভেচ্ছা জানায়। তবে সে মার্কাস জনসনের প্রলম্বিত স্পর্শানুভব ভুলতে পারে না। যখন সে দেখে যে অতিথিরা সবাই চলে এসেছে, দোলা কয়েকজন মহিলাদের সাথে গল্প করতে লাগে। সে আড়চোখে লক্ষ্য করে বারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কৃষ্ণাভ মানবমূর্তি তার দিকে তাকিয়ে আছে। বারের দিকের সরাসরি তাকাতেই সে দেখতে পায় যে তার প্রিয় স্বামীর বস হাতের হুইস্কির পেগে চুমুক দিতে দিতে তাকে রীতিমত খুঁটিয়ে দেখছেন। তার চোখে চোখ পড়তেই উনি মিটিমিটি হাসেন। প্রতিদানে তাকেও মিষ্টি করে হাসতে হয়।
ধীরে ধীরে সূর্য ডুবতে শুরু করলে অনেক অতিথি হাতে পানীয় নিয়ে বাগানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে লাগে। ঠিক যখন দোলা কয়েকজন মহিলার সাথে যোগ দিতে যাবে, একটা শক্তপোক্ত হাত এসে তার ডান কাঁধটা খপ করে ধরে। সহজাত প্রবৃত্তিতে সে বুঝে যায় এই হাত কার এবং তার বরের বসকে হাসিমুখে তার সাথে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখতে বাগানে যেতে অনুরোধ করে। হাঁটতে হাঁটতে মিঃ জনসন ওনার বড়োসড়ো হাতটা দিয়ে তার কোমরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতে সে খানিকটা অস্থির হয়ে ওঠে।
সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মিঃ জনসন তাকে বলেন, "তুমি হয়তো জানো যে আমাকে লি ও জয়ের মধ্যে কোনো একজনকে অপ্স হেডের পজিশনে নির্বাচন করতে হবে। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি সত্যিই খুব মুশকিলে পড়েছি। দুই সমযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার পক্ষে যথেষ্ট কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই আমি গত সপ্তাহে ওয়াং আর ওর সুন্দরী বউয়ের স্ত্রীর সাথে ডিনার করেছি। আর আমার ইচ্ছে আছে আগামী সপ্তাহে তোমার আর তোমার স্বামীর সাথে একদিন ডিনার করার। আমি জানতে চাই যে দুজনের মধ্যে কে বেশি তার স্ত্রীয়ের কাছে সমর্থন পেয়ে থাকে। কোম্পানির বড় বড় মক্কেলদের সাথে মাঝেমধ্যেই সামাজিক মেলামেশা করা এই এই হাই প্রোফাইল জবের এক অত্যাবশ্যক অংশ। যেখানে সকলকে নিয়মিত সন্তুষ্ট রেখে চলতে হয়, সেখানে কেউ সফল হতে চাইলে তার জীবনসঙ্গিনীকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ওয়াং দম্পতিকে আমার দেখা হয়ে গেছে। এবার তোমাদের পালা।"
মিঃ জনসনের মন্তব্যের উত্তরে ঠিক কি বলা যায় তা বুঝতে না পেরে দোলা কিছুটা ইতঃস্তত করে বলল, "আমি.......... আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি যে আমি জয়ের সর্বোত্তম স্বার্থকে সর্বদা রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং আমার স্বামী প্রমোশনটা পেলে আমি অবশ্যই সবকিছু করতে রাজি আছি।"
ঠিক সেই সময় দোলা দেখে যে পরবর্তী নির্দেশাবলীর অপেক্ষায় প্রধান ক্যাটারার তাকে ইশারায় ডাকছে। সে সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে শুনতে পায় তার স্বামীর বস তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, "সেসব তো ঠিক আছে। কিন্তু আমি জানতে চাই যে জয়ের প্রমোশনটিকে একেবারে নিশ্চিত করে ফেলার জন্য তুমি কতদূর যেতে রাজি আছো।"
উনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন, সেটা জিজ্ঞাসা করার আগেই মিঃ জনসন কোম্পানির অন্য একজন কর্মচারীকে অভ্যর্থনা জানাতে হাঁটা দিলেন। সে যখন প্রধান ক্যাটারারকে পরবর্তী নির্দেশ তালিকা যত্ন সহকারে বোজাচ্ছে, তখন দোলা বারবার খালি একইকথা ভাবে যে তার স্বামীর ঝানু বস ওনার শেষ মন্তব্যটিতে আসলে কী ইঙ্গিত রাখতে চাইলেন। সে মনস্থির করে যে রাত শেষ হওয়ার আগে সে আসল বিষয়টা খুঁজে বের করে করবে। তাদের কথোপকথন থেকে এটা স্পষ্ট যে যেহেতু জয় এবং লি উভয়েই সমানভাবে যোগ্য প্রার্থী, তাই এবার তাদের বউয়ের উপর নির্ভর করতে চলেছে যে প্রমোশনটি কার ভাগ্যে জুটবে। মিঃ জনসন যার স্ত্রীকে কোম্পানির মক্কেলদের বিনোদনের দিকটা সামলানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করবেন, তাকেই অপ্স হেডের পদে নির্বাচিত করা হবে। একটি রক্ষণশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে তার স্বামীর বসের মন্তব্যের প্রকৃত অর্থ কখনোই তার মগজে ঢোকে না।
দোলা আরো একবার বসার ব্যবস্থা থেকে খাবারদাবারের যোগান সমস্তকিছুর উপর চোখ বুলিয়ে নেয়। আজ একটা বিশেষ দিন। আজ সবকিছু নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন। সে সন্তুষ্ট হলো, "যাক, মনে হচ্ছে সব ঠিকই আছে।"
বড় সুইমিং পুল এবং সাজানো বাগান সমেত তাদের বিশাল বাড়িটি এক বড়োসড়ো অতিথি দলকে মনোরঞ্জন করার জন্য সত্যিই একটি চমৎকার স্থান। প্রথম যেদিন দোলা এই বাড়িতে পা রাখে, সেদিন সে জয়কে মশকরা করে বলেছিল যে তারা যখন এখানে পার্টি রাখবে, তখন তাদের বাগানটিতে কপোত-কপোতীরা লুকিয়ে দুষ্টুমি করার জন্য অনায়াসে অঢেল জায়গা খুঁজে পাবে। আর এক ঘন্টার মধ্যেই অতিথিরা আসতে শুরু করে দেবে। সে ঠিক করলো যে একটা হলুদ রঙের সুতির আরামদায়ক মিডি আর হিল্স পড়ে অভ্যাগতদের সাদর অভ্যর্থনা জানাবে। যদিও জয়দের কোম্পানি অনুষ্ঠানটিকে একটা সাধারণ পিকনিকের শ্রেণীতে ফেলেছে, তবু এই বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য চমৎকার খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
জয়কে বিয়ে করে দোলার জীবনটা যথেষ্ঠ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটছে। তারা আমেরিকায় সাউথ ফ্লোরিডা অঞ্চলে মায়ামি শহরে থাকে। জয় মেগানেট সল্যুশন্সের মতো এক নামজাদা সফ্টওয়ার কোম্পানিতে প্রজেক্ট লিডারের পদে চাকরি করে। মাস গেলে মোটা মাইনে পায় আর হাত খুলে খরচ করে। প্রতি সপ্তাহান্তে সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে যায়। সারাদিন দুজনে জলকেলি করার পর সন্ধ্যাবেলায় কখনো ডাইন-ইনে, কখনো বা টেক-আউটে, কিংবা কোনো দামী রেস্তোরাঁয় খেয়েদেয়ে বাড়ি ফেরে।
মাস তিনেক আগে অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে জয় দেশে ফেরে। একদিন তার বোন রমার সাথে দেখা করতে দোলা তাদের বাড়িতে আসে। ওরা একই কলেজে পড়ত। দোলা জানতো যে তার বান্ধবীর একটা দাদা আছে, যে বিদেশে মস্তবড় চাকরি করে। তবে আগে কখনো তাদের সাক্ষাৎ হয়নি। সেদিনই তাদের প্রথম আলাপ। আর প্রথম দর্শনেই জয় দোলার প্রেমে পড়ে যায়। আর পড়বে নাই বা কেন? দোলাকে অবিকল স্বর্গের অপ্সরাদের মত দেখতে। তার লাস্যময়ী রূপযৌবন দেখে যে কোনো পুরুষেরই মাথা ঘুরে যাবে। তার পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতা, চৌষট্টি কিলো ওজন আর ৩৮ডিডি-৩০-৪২ চিত্তাকর্ষক গঠন কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল বয়সের পুরুষদের মনে হিল্লোল সৃষ্টি করে। তার দুটো বিশাল দুধ ও প্রকাণ্ড পাছার দিকে একবার নজর গেলে সব মরদেরই চোখ কোঠরের ভিতর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে পড়ে। তার লম্বা রেশমি চুল, হরিণের মত বড় বড় দুটো বাদামী চোখ আর ফর্সা চিকন ত্বক পুরুষদের কাছে তাকে আরোবেশি আকাঙ্খিত তোলে।
দোলার উত্তুঙ্গ আবেদনময়ী রূপের আঘাতে জয় প্রথম আলাপেই সম্পূর্ণ ঘায়েল হয়ে পড়ে তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দোলা কিন্তু তৎক্ষণাৎ হ্যাঁ করে না। সে বাড়ির লোকেদের সাথে আলোচনা করার জন্য একটা দিন সময় চায়। বাড়ি ফিরে গিয়ে সে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলে এবং তিনজনে মিলে কালবিলম্ব না করে পাত্রের যোগ্যতা বিচার করতে বসে যায়। জয়কে অবশ্যই সম্ভাব্য বর হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। বছর দশেক ধরে সে আমেরিকাতে বসবাস করছে। গ্রিন কার্ড, বিপুল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, বিলাসবহুল গাড়ি, নিজস্ব বাড়ি তার সবই রয়েছে। তবে সে দোলার চেয়ে অত্যন্ত বারো বছরের বড়। আহামরি কিছু দেখতে নয়। বড়জোর সাধারণ বলা চলে। মায়ের আদুরে দুলালের মত গোলগাল চেহারা। তেমন একটা লম্বা নয়, টেনেটুনে পাঁচ ফুট সাত-আট ইঞ্চি। চোখে যথেষ্ট পাওয়ার আছে। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে। চুলও পাতলা হয়ে আসছে। অচিরেই টাক পড়বে। অবশ্য গায়ের রংটা সাহেবদের মত ফর্সা। আর খুব শৌখিন মানুষ। সবসময় ফিটফাট থাকে। বাড়িতেও গায়ে দামী ডিও মেখে ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় পড়ে থাকে।
তুল্যমূল্য বিচার করলে, জয়কে বিয়ে করতে দোলার রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। তার বাবা-মায়ের অন্তত তাই অভিমত। তাঁদের মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য জয় একজন আদর্শ বর। এমন একজন সুপাত্রকে বিয়ে করলে দোলাকে কোনোদিনও পয়সাকড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আর উপরি হিসেবে সে আমেরিকার মত প্রথম বিশ্বের এক সমৃদ্ধিশালী দেশে বাকি জীবনটা কাটানোর সুযোগও পাচ্ছে। শুধুমাত্র চেহারার ভিত্তিতে এমন একজন পাত্রকে হাতছাড়া করা নেহাৎ বোকামি হয়ে যাবে। বাবা-মায়ের অকাট্য যুক্তি দোলা কোনোভাবেই খণ্ডাতে পারে না। সে পরের দিনই জয়দের বাড়িতে ফোন করে বিয়েতে সম্মতি জানিয়ে দেয়। এক সপ্তাহের ভিতরে এক আলিশান রিসোর্টে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আর বিয়ের ঠিক দুটো দিন বাদে নবদম্পতি আমেরিকায় চলে আসে।
আজ তাদের বাড়িতে কোম্পানির বার্ষিক পিকনিক হচ্ছে। জয় স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে বন্দুক নিয়েছে। অবশ্য তার পিছনে স্বার্থ আছে। কোম্পানিতে অপারেশন্স লিডারের পদটা খুব শীঘ্রই খালি হতে চলেছে। বুড়ো হেনরী সাদারল্যান্ড এই মাসটা শেষ হলেই অবসর নেবেন। ওনার পদে যাদেরকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে জয়ও একজন। কোম্পানির সিইও মিঃ মার্কাস জনসনকে যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারবে, তারই কপাল খুলে যাবে। জয় এই সোনার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না। এই ইঁদুর দৌড়ে তাকে টক্কর দেওয়ার মতো একজনই আছে, লি ওয়াং। ওনার মা সিরিয়া থেকে আসা একজন অভিবাসী বলে এশীয় আমেরিকানদের প্রতি মিঃ জনসন স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। গত সপ্তাহে উনি লি ওয়াং আর তার সুন্দরী স্ত্রীয়ের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়ে খানাপিনা করেছেন। অবশ্যই বিনা নিমন্ত্রণে নয়। তার চীনা প্রতিযোগী ঠিক কোন উদ্দেশ্যে বসকে বাড়ি ডেকে এনে খাওয়াচ্ছে, সেটা জয় অন্তত সহজেই আন্দাজ করতে পেরেছে। ইঁটের বদলে পাটকেল ছুড়তে তাই আজকের কোম্পানির বার্ষিক পিকনিকের অনুষ্ঠানটিকে সে যেচে পড়ে আয়োজন করতে চেয়েছে। তবে তাকে নিজের পকেট থেকে কিছু খরচ করতে হচ্ছে না। সবই তাদের কোম্পানি দিচ্ছে। সে শুধুমাত্র তার বিশাল বাড়িটিকে সুইমিং পুল আর বাগান সহ ব্যবহার করতে দিচ্ছে। অবশ্য তার বদান্যতায় কোম্পানির যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। বলতে গেলে খরচ প্রায় অর্ধেক কমেছে।
বাড়ি ডেকে এনে বসকে ভালোমন্দ খাইয়ে লি ওয়াং ভেবেছিল যে জয়কে গোল দেবে। মোক্ষম চালে সে সেটা শোধ করে দিয়েছে। এবার শুধু মিঃ জনসনকে কব্জা করতে পারলেই ষোলো কলা পূর্ণ হয়। আর ঠিক এইখানে তার রূপবতী স্ত্রী তার অনেক কাজে লাগতে পারে। আর পাঁচজন সফল পুরুষদের মতন সুন্দরী মহিলাদের প্রতি তার বসের মনেও স্বাভাবিক দুর্বলতা রয়েছে। দোলা যদি মিঃ জনসনকে তার চটকদার রূপ দেখিয়ে মুগ্ধ করতে পারে, তাহলে আশা করা যেতেই পারে যে কোম্পানির অপ্স হেড পদে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে উনি জয়কেই বেছে নেবেন। বেশি কিছু নয়। পার্টি চলাকালীন সময়ে-অসময়ে একটু হাসি-মস্করা করলেই বসের মন গলে যাবে।
তার স্বামীর বসের সাথে দোলার আলাপ আছে। এর আগে একবারই জয়ের অফিসে ওনার সাথে তার দেখা হয়েছে। নেহাতই সৌজন্যমূলক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ। কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রলোকটি বয়েসে তার থেকে অনেকটাই বড়। অন্তত দ্বিগুন তো হবেই। তবে খুবই লম্বা, অন্তত ছয় ফুট তিন-চার ইঞ্চি। এবং সেইরকম হাট্টাকাট্টা গড়ন। সারা শরীরে পেশীশক্তির আস্ফালন অত্যন্ত স্পষ্ট। কর্মকর্তা না হয়ে, বডি বিল্ডার হলে ওনাকে বেশি মানাতো। অবশ্য ওনার ধারালো মুখ আর ক্ষুরধার চোখ দুটো পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে ভদ্রলোক কর্তৃত্ব করতেই অভ্যস্ত। দোলার স্পষ্টভাবে মনে আছে যে মিঃ জনসনের সাথে করমর্দন করার সময় তার হাতটাকে ঠিক কতটা ছোট মনে হয়েছিল আর কেমন করে তার দেহটা জয়ের তাগড়াই কৃষ্ণাঙ্গ বসের শক্তসমর্থ বড়োসড়ো হাতের স্পর্শে শিরশির করে উঠেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের সম্পর্কে প্রচলিত একটা প্রবাদ মনে পড়ে যেতেই সে শিহরিত হয়ে ওঠে। কথাটা কি আদ্য সত্যি?
অতিথিরা আসতে শুরু করলে বিবাহিত দম্পতি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাতে সবাই অনুষ্ঠানের রম্য পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। দোলা হাসিমুখে সবাইকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় আর তার স্বামী অভ্যাগতদের তাদের বিশাল বাড়িখানা ঘুরিয়ে দেখায়। যখন মিঃ জনসন এলেন, তখন দোলা মিষ্টি হেসে তাকে করমর্দন করে অভিবাদন জানায়। উনি এক হাতে তার হাতটা দৃঢ়ভাবে চেপে ধরেন আর একইসাথে ওনার অন্য হাতটা তার কনুই এবং বাহুতে আলতো করে বুলিয়ে দেন। তার স্বামীর কৃষ্ণাঙ্গ বসের কাছে এমন উদ্ধত আচরণ দোলা প্রত্যাশা করেনি। তার গোটা দেহে অবৈধতার শিহরণ খেলে যায়। সত্যি হোক কিংবা মিথ্যে, তার মনে হয় যে উনি তাকে ভালো করে ছুঁয়ে দেখতে চান। এবং সম্ভবত ওনার পিছনে বাকি সবাই লাইনে না দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো উনি ঠিক তাই করতেন।
জয়ের বসের অভিবাদনের অবশেষে অবসান হলে দোলা পরবর্তী আগমনকারীদের শুভেচ্ছা জানায়। তবে সে মার্কাস জনসনের প্রলম্বিত স্পর্শানুভব ভুলতে পারে না। যখন সে দেখে যে অতিথিরা সবাই চলে এসেছে, দোলা কয়েকজন মহিলাদের সাথে গল্প করতে লাগে। সে আড়চোখে লক্ষ্য করে বারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কৃষ্ণাভ মানবমূর্তি তার দিকে তাকিয়ে আছে। বারের দিকের সরাসরি তাকাতেই সে দেখতে পায় যে তার প্রিয় স্বামীর বস হাতের হুইস্কির পেগে চুমুক দিতে দিতে তাকে রীতিমত খুঁটিয়ে দেখছেন। তার চোখে চোখ পড়তেই উনি মিটিমিটি হাসেন। প্রতিদানে তাকেও মিষ্টি করে হাসতে হয়।
ধীরে ধীরে সূর্য ডুবতে শুরু করলে অনেক অতিথি হাতে পানীয় নিয়ে বাগানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে লাগে। ঠিক যখন দোলা কয়েকজন মহিলার সাথে যোগ দিতে যাবে, একটা শক্তপোক্ত হাত এসে তার ডান কাঁধটা খপ করে ধরে। সহজাত প্রবৃত্তিতে সে বুঝে যায় এই হাত কার এবং তার বরের বসকে হাসিমুখে তার সাথে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখতে বাগানে যেতে অনুরোধ করে। হাঁটতে হাঁটতে মিঃ জনসন ওনার বড়োসড়ো হাতটা দিয়ে তার কোমরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতে সে খানিকটা অস্থির হয়ে ওঠে।
সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মিঃ জনসন তাকে বলেন, "তুমি হয়তো জানো যে আমাকে লি ও জয়ের মধ্যে কোনো একজনকে অপ্স হেডের পজিশনে নির্বাচন করতে হবে। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি সত্যিই খুব মুশকিলে পড়েছি। দুই সমযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার পক্ষে যথেষ্ট কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই আমি গত সপ্তাহে ওয়াং আর ওর সুন্দরী বউয়ের স্ত্রীর সাথে ডিনার করেছি। আর আমার ইচ্ছে আছে আগামী সপ্তাহে তোমার আর তোমার স্বামীর সাথে একদিন ডিনার করার। আমি জানতে চাই যে দুজনের মধ্যে কে বেশি তার স্ত্রীয়ের কাছে সমর্থন পেয়ে থাকে। কোম্পানির বড় বড় মক্কেলদের সাথে মাঝেমধ্যেই সামাজিক মেলামেশা করা এই এই হাই প্রোফাইল জবের এক অত্যাবশ্যক অংশ। যেখানে সকলকে নিয়মিত সন্তুষ্ট রেখে চলতে হয়, সেখানে কেউ সফল হতে চাইলে তার জীবনসঙ্গিনীকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ওয়াং দম্পতিকে আমার দেখা হয়ে গেছে। এবার তোমাদের পালা।"
মিঃ জনসনের মন্তব্যের উত্তরে ঠিক কি বলা যায় তা বুঝতে না পেরে দোলা কিছুটা ইতঃস্তত করে বলল, "আমি.......... আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি যে আমি জয়ের সর্বোত্তম স্বার্থকে সর্বদা রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং আমার স্বামী প্রমোশনটা পেলে আমি অবশ্যই সবকিছু করতে রাজি আছি।"
ঠিক সেই সময় দোলা দেখে যে পরবর্তী নির্দেশাবলীর অপেক্ষায় প্রধান ক্যাটারার তাকে ইশারায় ডাকছে। সে সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে শুনতে পায় তার স্বামীর বস তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, "সেসব তো ঠিক আছে। কিন্তু আমি জানতে চাই যে জয়ের প্রমোশনটিকে একেবারে নিশ্চিত করে ফেলার জন্য তুমি কতদূর যেতে রাজি আছো।"
উনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন, সেটা জিজ্ঞাসা করার আগেই মিঃ জনসন কোম্পানির অন্য একজন কর্মচারীকে অভ্যর্থনা জানাতে হাঁটা দিলেন। সে যখন প্রধান ক্যাটারারকে পরবর্তী নির্দেশ তালিকা যত্ন সহকারে বোজাচ্ছে, তখন দোলা বারবার খালি একইকথা ভাবে যে তার স্বামীর ঝানু বস ওনার শেষ মন্তব্যটিতে আসলে কী ইঙ্গিত রাখতে চাইলেন। সে মনস্থির করে যে রাত শেষ হওয়ার আগে সে আসল বিষয়টা খুঁজে বের করে করবে। তাদের কথোপকথন থেকে এটা স্পষ্ট যে যেহেতু জয় এবং লি উভয়েই সমানভাবে যোগ্য প্রার্থী, তাই এবার তাদের বউয়ের উপর নির্ভর করতে চলেছে যে প্রমোশনটি কার ভাগ্যে জুটবে। মিঃ জনসন যার স্ত্রীকে কোম্পানির মক্কেলদের বিনোদনের দিকটা সামলানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করবেন, তাকেই অপ্স হেডের পদে নির্বাচিত করা হবে। একটি রক্ষণশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে তার স্বামীর বসের মন্তব্যের প্রকৃত অর্থ কখনোই তার মগজে ঢোকে না।