Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
একজন মা আর একটি ছেলে এবং একটি ভাই আর একজন মেয়ে (সংগৃহীত)
#11
Lightbulb 
একটি ভাই আর একজন মেয়ে (২য় ও শেষ অংশ)
লেখক: Unknown


লেখাপড়া, শিক্ষা দীক্ষা, পাশ ডিগ্রী, এসবের কি অর্থ, আমার জানা নেই। তারপরও কেনো যেনো মনে হতে থাকলো, লোপার ইউনিভার্সিটিতে লেখা পড়া করা উচিৎ!

অন্য সব দিন গুলোর মতোই পাখি ডাকা ভোরে আমার ঘুমটাও ভাঙলো। অথচ, প্রতিদিনের মতোই, বিছানার মায়াটা ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না কিছুতেই। আমি আবারও পাশ ফিরে, পা টা ভাঁজ করে সুখ নিদ্রাতেই কাটাতে চাইলাম।
প্রতিদিন একই তো কাজ! ঘুম ভাঙার পর সবাই যখন ধীরে সুস্থে হাত মুখ ধুয়ে, নাস্তার আয়োজনে ব্যাস্ত থাকে, অথবা প্রাতঃ ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে, অথবা কেউ কেউ ধর্মীয় কোন কাজে নিজেকে বিলিয়ে দেবার ফুরসৎ খোঁজে, আমি তখন মুখে পানি ছিটিয়ে, ছুটে চলি ঝাউতলা বাজারে।

জীবিকার জন্যে পৃথিবীতে মানুষ কত কিছুই না করে। এই তো চোখের সামনে, কুলি মজুর, ফেরীওয়ালা, আরো কত পেশার মানুষকেই তো চোখে পরে প্রতিদিন! এদের কতজনের খবরই বা কতজন রাখে! আমিও তাদেরই একজন। পরিশ্রম করে পয়সা উপার্জনের মাঝে যে আনন্দ, অন্য কিছুতে বোধ হয় তা নেই। পরিশ্রমের তো অনেক ধরনই আছে। কেউ মাথার পরিশ্রম করে, কেউ দেহের পরিশ্রম করে। আমি দেহের পরিশ্রমটাই করি।

আমার কাজটা খুব সহজ। ডেলিভারী সার্ভিসের কাজ! একটু ব্যাখ্যা করি। খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠি। নাকে মুখে পানি ছিটিয়ে চলে যাই, ঝাউতলা বাজারে। কাঁচা বাজার থেকে, পাইকারী দরে শাক সবজী থেকে শুরু করে মাছ মাংস, চাল ডাল সবই কিনে নিই। তারপর আমার মন্দের ভালো ভাঙা চূড়া মটর ভ্যানটাতে বোঝাই করে, ছুটে চলি পার্শ্ববর্তী অভিজাত এলাকায়। অলিতে গলিতে বাড়ী বাড়ী বাজার পৌঁছে দিয়ে, যে লভ্যাংশ থাকে, তাতে করে সুন্দর সংসার চলে যায়। সংসারটা আমার শুধু এক জনের তো! তাই!

আসলে, এই ব্যবসাটা অনেক ভেবে চিন্তেই শুরু করেছিলাম। প্রতিদিন সকালে যখন, চট্টগ্রাম শহরের এই ঝাউতলা বাজারে, এলাকার লোকজনেরা সবাই নিজেদের মুল্যবান সময় নষ্ট করে বাজার করতে আসে, তাদের দেখে খুব মায়াই হতো। শিক্ষিত মানুষগুলো কাঁচা বাজার করে শুধু শুধু সময় নষ্ট করবে কেনো? তার চাইতে, অশিক্ষিত এই আমি যদি বাড়ী বাড়ী বাজার পৌঁছে দিই ন্যায্য মূল্যে, তাহলে তো উভয়েরই লাভ! শিক্ষিত লোক গুলো পত্রিকা পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাবে, সেই সময়ে কাঁচা বাজারও বাড়ী পৌঁছে যাবে। অথচ, সেদিন ভোরে, আবারো বড্ড ঘুম পাচ্ছিলো। হঠাৎই মনে হলো লোপার কথা! আমি তাড়াহুড়া করেই বিছানা ছাড়লাম। যে করেই হউক, রেগ্যুলার কাষ্টোমার মিসেস হাবীব এর বাজার পৌঁছে দিতে হবে। তারপর, সোজা সদরঘাট!

লোপা!
আমি লাফিয়ে লাফিয়েই কল তলায় ছুটে গেলাম। নাকে মুখে পানি ছিটিয়ে, মটর ভ্যানে প্যাডেল চালিয়ে, সোজা ছুটলাম বাজারে। দাম দর না করেই, মিসেস হাবীব এর জন্যে, এক কেজি গরুর মাংস, এক পোয়া কাঁচা মরিচ, আঁধা কেজি ঢেরশ, আর একটা আস্ত ইলিশ মাছ কিনে, ছুটলাম মটর ভ্যানটা নিয়ে।

আমি মিসেস হাবীবকে বাজার বুঝিয়ে দিয়েই ছুটলাম, সদরঘাটের দিকে! কারন লঞ্চটা কখন এসে পৌঁছুবে, নিজেও জানিনা। লোপা তো জানিয়েছিলো সকাল সাড়ে আটটার দিকে। এখন কত বাজে কে জানে? ধ্যাৎ! ঘড়ি খোঁজবে কে! আগে, সদরঘাট গিয়ে পৌঁছলেই হলো!

আমি পংখীরাজের মতোই আমার মটর ভ্যানটা চালচ্ছিলাম। ওই বাড়ীর বয়স্কা মহিলাটিকে বরাবরই দাদী দাদী করেই যান দিয়ে ডাকি! সেও আমাকে নাতি ডেকে ডেকে যান দিয়ে দেয়। সময় পেলে দুজনে সুখ দুঃখের আলাপও করি! সেই বাড়ীর সামনে দিয়ে পেরোতেই, পিছু ডাক শুনতে পেলাম, এই পথিক, আর কত পথ চলবি? আমার পান কই?
আমি মটর ভ্যান থামিয়ে, হাত জোড় করেই বললাম, দাদী, পানের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। একটা পানও কি নাই! আমাকে দুই ঘন্টা সময় দাও! পান তোমার হাতে এনে দেবো!
বুড়ী দাদী পানের প্যাচকি ফেলে ধমকের সুরেই বললো, তোর পানের আশায় কি বসে থাকিরে? তোর এক বিড়া পানের জন্যে এত বড় গাড়ী লাগে? আমার পানের দামে কি তোর গাড়ীর তেলের দাম হয়? তুই শখ করে আনিস! তাই রাখি! দাঁড়া!
এই বলে বুড়ী ভেতর ঘরে গিয়েই ঢুকলো। ফিরে এসে আমার হাতে একশ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে বললো, ঐদিন বলেছিলি তোর বোন নাকি আসবে? ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবে? এসেছে? এইটা রাখ! তোর বোনকে দিস! মেয়েদের অনেক বাড়তি খরচ লাগে!
আমি খুশী হয়েই বললাম, ঠিক আছে দাদী! এখন লোপাকেই আনতে যাচ্ছি! সদরঘাটে!
বুড়ী মমতার ঠোটেই হাসতে থাকলো, আহা, ইউনিভার্সিটি পড়বে! একটু সাঁজ গোঁজ না করলে কি চলে? পাউডার স্নো কিনতে বলিস!
আমি মটর ভ্যান স্টার্ট করেই বললাম, ঠিক আছি দাদী!

খানিকটা দূরেই ইউনিভার্সিটি ছাত্রদের একটা মেস আছে। অধিকাংশরাই আমার সমবয়েসী। সেই ছাত্রগুলো থেকে কাঁচা বাজারের রেগ্যুলার অর্ডারটাই পেয়ে থাকি। তার বড় কারন, মেসের একটি ছেলে আমারই ছোট বেলার বন্ধু। খুব বেশী লেখাপড়া আমি করিনি। যখন চট্টগ্রাম শহরে ক্লাশ সেভেনে ভর্তি হয়েছিলাম, তখনই রাজীবের সাথে বন্ধুত্বটা হয়ে গিয়েছিলো। দীর্ঘদিন পর কাকতালীয় ভাবে পুনরায় দেখা হবার পর যেনো বন্ধুত্বটা পাকা পুক্তই হয়ে উঠলো। সেই মেসের সামনে দিয়ে পার হতেই রাজীবেরও পিছু ডাক পেলাম, কিরে, বাজার না দিয়ে কই যাস! বুয়াকে সব বুঝিয়ে ট্রেন ধরতে হবে তো!
আমি গাড়ী থামিয়ে হাত জোড় করেই বললাম, দোস্ত! আজকে অনেক কাজ! আজকের দিনটা কোন রকমে সামলে নে!
রাজীব ধমকেই বললো, শালা, সামলাবো কি? মেসে কি আমি একা থাকি নাকি? তুই আছিস বলেই নিশ্চিন্তে থাকি! বাজার করতে হয় না!
আমি হাত জোড় করেই বললাম, স্যরি, ছোট বোন আসছে চাঁদপুর থেকে। সারা রাত লঞ্চের জার্ণি! এতক্ষণে বোধ হয়, আমাকে খোঁজছে!
রাজীব চোখ গোল গোল করেই বললো, তোর বোন! তোর বোন আছে বলে তো কখনো বলিসনি!
আমি বললাম, আছে!
এই বলে আমিও মটর ভ্যানটা স্টার্ট করলাম। পেছন থেকে রাজীবের গালই বোধ হয় কানে ভেসে এলো, শালা! সারা রাত গাঁজা টেনেছিস! ভ্যু ভ্যু ভ্যু!

আমি দ্রুত গতিতেই ডানে বামে না তাঁকিয়েই মটর ভ্যানটা চালাতে থাকলাম সদরঘাটের দিকে। গাড়ীটা পার্ক করে, এদিক সেদিকই উঁকি ঝুঁকি দিতে থাকলাম। কোন মেয়েটি লোপা হতে পারে, সেটিই শুধু বিচার করে দেখতে থাকলাম। ওই তো! কে যেনো আমার দিকেই হাত ইশারা করছে! ওই তো লোপা! কত্ত ছোট দেখেছিলাম। এতদিনে, এত্ত বড় হয়ে গেছে!

রাতারাতি ধনী হবার কোন শখ না থাকলেও, অপেক্ষার প্রহর গুনতে আমারও ভালো লাগে না। এতটা দিন পর, লোপাকে দেখার জন্যে আমার মনটাও খুব ছটফট করছিলো।
আমার মনে পরে, মা পৃথিবী ত্যাগ করার আগে, একটাই অনুরোধ আমাকে করেছিলো। বলেছিলো, লোপাকে তুই দেখে রাখিস। লোপা তখন আমাদের সেই তথা কথিত বাবা কাদের ইব্রাহীমের হেফাজতেই ছিলো। আমি অনেক কৌশলেই লোপাকে নিজ আয়ত্ত্বে এনেছিলাম। গ্রামের বাড়ী চাঁদপুরে দাদুর সন্ধানটাও অনেক খোঁজাখোঁজি করেই পেয়েছিলাম। লোপাকে দাদুর হেফাজতে রেখে নিজেও চাঁদপুরে টুকটাক কিছু করতে চেয়েছিলাম। জীবিকার টানে পুনরায় বড় শহর চট্টগ্রামেই ফিরে এসেছিলাম। মায়ের দেয়া দামী গাড়ীটা বিক্রী করে, ভাংগা চুড়া ভ্যান গাড়ীটাই কিনেছিলাম। বাকী টাকা দিয়েই কাঁচা বাজারের ছোট খাট ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম।
[+] 1 user Likes Farhan06's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: একজন মা আর একটি ছেলে এবং একটি ভাই আর একজন মেয়ে (সংগৃহীত) - by Farhan06 - 19-04-2023, 09:35 PM



Users browsing this thread: