Thread Rating:
  • 168 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
একাশীতিতম অধ্যায়
 

ট্রেন গোপাল নগরে থামতে দীপশিখা মিত্র উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখলেন।স্টেশনে নেমে অবাক চোখে চারদিক দেখতে থাকেন।তিনি যখন ছিলেন এই স্টেশন ছিল না।কত বদলে গেছে গোপাল নগর।স্টেশন হতে বেরিয়ে মনে হল ঠিক জায়গায় এসেছেন তো।কত গাছ গাছালিতে ঘেরা ছিল গ্রাম।কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে ঢেকে যেতো ফুলে ফুলে।কলেজ যাবার পথে ফুল পায়ে দলে যেতে হতো।পাকা রাস্তা অটো চলছে রাস্তার দুধারে পাকা বাড়ী।কাউকে না জিজ্ঞেস করে যেতে পারবেন কিনা ভাবলেন। অটো স্ট্যাণ্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করলেন,অটো কোথায় যাচ্ছে?
আপনে কই যাবেন?
ডা মিত্রের বাড়ী চেনেন?
অটো ড্রাইভার আপাদ মস্তক লক্ষ্য করে ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকে।
ওর এক মেয়ে আছে সেও ডাক্তার। টাউন লাইব্রেরী চেনেন?
ডাক্তারবাবু নেই।
নেই মানে?অস্ফুটে উচ্চারন করেন।
আজ শেষ রাতে মারা গেলেন।একটু পরেই ডেডবডি নিয়ে মিছিল বের হবে।
দিবাদা নেই! দীপশিখা মিত্র অটোয় ভর দিয়ে টাল সামলালেন।
উনার বাড়ি গেলে বসেন।
কতদিন পর দাদার সঙ্গে দেখা হবে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন। দীপশিখা কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন।এতদূর এসেছেন বৌদির সঙ্গে দেখা নাকরে যাওয়া ঠিক হবে না।এসময় বৌদির পাশে থাকা উচিত।অটোতে উঠে একপাশে বসে আচলে চোখ মুছলেন।ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়তে থাকে।কি ব্যাপার অটো চালক কোথায় গেল।বসতে বলে উধাও?মুখ বাড়িয়ে অটো চালককে দেখতে না পেয়ে অটো হতে নেমে পড়লেন।হেটেই চলে যাবেন।
দীপশিখা হাটতে থাকেন।কত বদলে গেছে গোপালনগর।দুপাশে সারি সারি বাড়ি জানলায় কৌতূহলী মানুষের নজর।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। একসময় তাকে অঞ্চলের সবাই চিনতো।পিছন থেকে সারি দিয়ে অটো আসতে রাস্তার একপাশে সরে দাড়ালেন দীপশিখা মিত্র।একটা অটো গা-ঘেষে দাড়ালো।চালক মুখ বের করে বলল,কি হল নেমে গেলেন?উঠুন আমরা ডাক্তারবাবুর বাড়ী যাচ্ছি।
একটু ইতস্তত করে দীপশিখা আবার অটোয় চেপে বসলেন।অটো স্টার্ট দিয়ে বলল,খোকনদার অর্ডার সবাইকে যেতে হবে মিছিলে।
এইজন্য সব অটো চলেছে।দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,খোকনদা কে?
খোকনদাকে চেনেন না?অটো চালকের গলায় বিস্ময়।খোকনদা পার্টির লিডার আমাদের ইউনিয়নের পেসিডেন।
কিছুটা যেতেই বিশাল ভীড়,অটো দাঁড়িয়ে পড়ল চালক বলল,আর যাওয়া যাবেনা আপনাকে এটুকু হেটে যেতে হবে।
দীপশিখা অটো হতে নেমে ভাড়া দিতে গেলে অটো অলা বলল,আজ তো প্যাসেঞ্জার তুলছি না।এদিকেই আসছিলাম আপনাকে পৌছে দিলাম।
দীপশিখা দেখলেন সারি দিয়ে দাঁড়ানো সব অটোই খালি।জোরাজুরি করতে ইচ্ছে হলনা।ভীড় পেরিয়ে দ্বৈপায়ন ধামের দিকে এগোতে থাকেন।ভীড়ের মুখগুলো থম্থমে কারো মুখে কথা নেই।ডা দেবাঞ্জন মিত্রকে মানুষ এত ভালবাসে?সারা গোপাল নগর যেন শোকস্তব্ধ।  
ভীড় ঠেলে কোনোমতে দ্বৈপায়ন ধামে ঢুকতে দেখলেন বারান্দায় শায়িত মৃতদেহের উপর আছড়ে পড়ে কাদছেন পিয়ালী সেন।একজন মহিলা তাকে ধরে আছে।দীপশিখাকে দেখে ভীড়ের লোকেরা বুঝলো ইনি এ বাড়ীর লোক কেউ বাধা দিলনা।একজন বলল,ডাক্তার ম্যাডাম এবার রওনা হতে হয়।
পাঞ্চালি এগিয়ে এসে বলল,তুমি কখন এলে?
সকালে রওনা হয়েছি।
রক্ত যদি নাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতো তাহলে হয়তো বাচানো যেতো।একেবারে মাথায় উঠে গেছিল।
কেমন নির্বিকার শুয়ে আছেন ডা দেবাঞ্জন মিত্র কয়েক পলক দেখে দীপশিখা নীচু হয়ে দাদার পা ছুয়ে প্রণাম করলেন।
পারুলদি তুমি মামনিকে উপরে নিয়ে যাও।পিসি তুমি মামনীকে একটু দেখো।
পিয়ালীমিত্র জল্ভরা চোখ তুলে দীপশিখা দেখে বললেন,তুমি দীপা না?
বৌদি চলো উপরে চলো।
তুমি শেষে এলে কাল রাতেও যদি আসতে তাহলে দাদার সঙ্গে দেখা হতো।
পিয়ালী মিত্রকে ধরে ওরা উপরে বারান্দায় নিয়ে গেল।নীচে ফুলে সাজানো একটা ম্যাটাডোরে ডাক্তার মিত্রের দেহ তোলা হল।বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন একে একে মৃতদেহে মালা দিতে থাকে।ভীড়ের মধ্যে একটি ছেলে বলল,সামনে কে থাকবে?
কে আবার কাতান খোকন।
এই কি হচ্ছে শুনতে পাবে।
খোকন মণ্ডল এখন লিডার।
মুহূর্তে ভীড় সুসজ্জিত মিছিলে পরিণত হল।একদম সামনে অটোর সারি তারপর মানুষ একেবারে শেষে ম্যাটাডর। ডাক্তার পাঞ্চালী ম্যাটাডরে ড্রাইভারের পাশে বসল।
উপরে বারান্দায় ম্যাটাডরের দিকে তাকিয়ে পিয়ালী মিত্র বললেন,দেখ দীপা স্বার্থপরের মত কেমন চলে যাচ্ছে।
পারুল বলল,তুমি কি যে বলো  বৌদি সারা জীবন মানুষটা নিজির কথা ভাবার সময় পেলোনি।
তুই মুখে মুখে কথা বলিস না।এরে চিনিস ডাক্তারবাবুর বোন। যা দিদির জন্যে একটু চা করে নিয়ে আয়। 
মিছিল ধীরে ধীরে এগোতে থাকে সারা পাড়া ঘুরে শ্মশানের পথ ধরবে।উপর থেকে পিয়ালী মিত্র নির্নিমেষ সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।মিছিল মিলিয়ে যেতে দীপশিখাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
আঃ বৌদি কি হচ্ছে! তোমাকে শক্ত হতে হবে।তুমি এরকম করলে পলির কি হবে ভেবেছো? 
একটা ট্রেতে দু-কাপ চা আর একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এল পারুল।দীপশিখার পেটের মধ্যে চো-চো করে উঠল সকাল থেকে পেটে পড়েনি কিছু।পারুলের বুদ্ধি আছে।হাত বাড়িয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করল।
মধুকে দেখছি না মধু কোথায়?চায়ের কাপ নিয়ে পিয়ালি মিত্র বললেন।
তারে কোথায় পাবা।সেকি মিছিলে না গিয়ে থাকবে।
গেছে ভাল হয়েছে পলি একা গেছে।
সারা পাড়া সুনসান।কোন বাড়ীতে মেয়েরা ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষ নেই।সবাই গেছে মিছিলে।ভালোবাসলে সেই ভালোবাসা ফিরে পাওয়া যায়। শহুরে মেয়ে পিয়ালী মিত্রের আজ আর কোনো খেদ নেই। যে জীবনে এত ওঠা পড়া চঞ্চলতা একদিন তা মাটিতে মিলিয়ে যায়।দাউ দাউ জ্বলে ওঠে চিতা কর্মচঞ্চল জীবন মাটিতে মিলিয়ে গেল।বেলা গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যে হয়ে এল।মধু সারাক্ষন দিদিমণিকে চোখে চোখে রেখেছে।নদীতে ডুব দিয়ে ডা পাঞ্চালী ভিজে কাপড়ে গাড়ীতে উঠে বসল।এত উদ্যোগ আয়োজন সব শেষ সবাই একে একে বাসায় ফিরতে থাকে।
দ্বৈপায়ন ধামে ফিরে উপরে উঠে এল।মামণির ঘরের পাশ দিয়ে যেতে দরজার আড়ালে থমকে দাড়ালো পাঞ্চালী।
পিয়ালি মিত্র বললেন,শেষ দিকে ওর একমাত্র চিন্তা ছিল মেয়েকে নিয়ে।মেয়েটাকে নিয়ে কি যে করি।খোকনটাও পাশে নেই,ছেলের হাতের আগুণ্টুকুও পেলনা।একা একা কি যে করি--
বৌদি তুমি নিজেকে একা ভাবছো কেন,পলির জন্য আমি দেখবো।
পাঞ্চালী আর স্থির থাকতে পারেনা ঘরে ঢুকে বলল,দাদাভাই আসছে।পাশে নেই কে বলল?
দীপশিখা বললেন,দিব্যকে খবর দিয়েছিস?
কালকেই দিয়েছি দাদাভাই এত সময় রওনা দিয়েছে সম্ভবত।মোমো তুমি কি আজই ফিরে যাবে?
ভাবছি ফিরে যাবো খালি খালি কলেজ কামাই করে কি হবে।
মধুদা তুমি পিসিকে স্টেশনে পৌছে দিয়ে এসো।
 নিজের জীবনটা নষ্ট করে উনি এখন আমার দায়িত্ব নেবেন পাঞ্চালী মনে মনে ফোসে।
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 17-04-2023, 06:36 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)