17-04-2023, 05:55 PM
অষ্টম পর্ব
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা নাগাদ নিশিকান্ত বাবু তার বৌমা -তন্দ্রা, দুই ছেলে কুনাল আর মৃনালকে নিয়ে বেরিয়ে সাথে করে বেরিয়ে পড়লেন কাশীনাথ বাবুর মেয়েকে দেখতে আর বিয়ের দিন ঠিক করতে। আড়াই ঘন্টার মধ্যে সবাই কাশীনাথ বাবুর বাড়ি চলে এলেন। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে দিপু বেরিয়ে এলো প্রথমে তারপর শিখা আর কাশীনাথ। সবাইকে অভ্যর্থনা করে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এ বাড়িতে সোফা নেই দুটি মাত্র চেয়ার আর একটা খাট পাতা। সেখানেই সবাই গুছিয়ে বসে পড়ল। তন্দ্রা উঠে দাঁড়িয়ে কাশীনাথের দিকে তাকিয়ে বলল কাকাবাবু- আমি ভিতরে যাবো একবার আমার ছোট জাকে দেখতে চাই। কাশীনাথ - তা যাবে তো নিশ্চই তবে ওর বোন এখন ওর দিদিকে সাজাচ্ছে। তন্দ্রা - না না আমি সাধারণ অবস্থায় ওকে দেখতে চাই। কাশি বাবু আর কোনো আপত্তি করলোনা তাই ছোট মেয়েকে ডাক দিলেন - শিখা মা একবার বারের ঘরে আয় তো মা। শিখা আসতেই তন্দ্রা জিজ্ঞেস করল তুমি সান্তার ছোটো বোন ? শিখা প্রণাম করতে যেতেই তন্দ্রা ওকে ধরে জড়িয়ে ধরে বলল - সান্তার বোন মানে আমারো বোন তুমি আর একদম প্রণাম করবে না। আজ থেকে আমরা বন্ধু। এই কথা শুনে দিপু তন্দ্রার দিকে তাকাতেই তন্দ্রা বলল - ওমনি হিংসে হচ্ছে তোমার, তুমি তো আমার ছেলে বন্ধু ওর ও আমার বান্ধবী। তন্দ্রার কথা শুনে কুনাল আর মৃনাল হেসে উঠে বলল - তাহলে আজ থেকে আমার সবাই তোমার শত্রু তাইতো। তন্দ্রা - কেন তোমাদের দুজনের মধ্যে একজন আমার স্বামী আর একজন আমার দেওর , তোমরা তোমাদের জায়গাতে থাকবে আর এরা আমার বন্ধু ও বান্ধবী। শিখার হাত ধরে আবার বলল চলতো আমরা ভিতরে যাই দেখি তোমার দিদি কেমন সেজেছে। দুজনে ভিতরে চলে গেল। নিশিকান্ত বাবু বললেন - কিছু মনে করবেন না কাশীনাথ বাবু - আমার এই বৌমাটি এরকমই খুব তাড়াতাড়ি সকলকে আপন করে নিতে পারে। দিপু ওদের চলে যেতে দেখে ভাবতে লাগল ওকে কেন সাথে নিলোনা। দিপু ভেবেছিল যে এখানে এলে তন্দ্রা দিদিকে একটু আদর করবে , সব আশাতে জল ঢেলে দিল তন্দ্রা দিদি। তন্দ্রা ভিতরে সান্তা যেখানে বসেছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই সান্তা উঠে দাঁড়িয়ে প্রণাম করতে যেতেই ওর হাত চেপে ধরে শিখার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল - তোমাদের প্রণাম করাটা কি অভ্যেস সবাই প্রণাম করতে হইছো আমার বাবা পায়ের ধুলোর অনেক দাম তাই সবাইকে দিতে পারিনা। হেসে উঠে সান্তাকে জড়িয়ে ধরে বলল - আমি আজ থেকে তোমার বড়দি আমাদের মধ্যে কোনো আড়াল থাকবেনা, বন্ধুর মতো থাকব সবাই , অবস্যই গুরুজনদের বাদ দিয়ে। তন্দ্রার সান্তাকে দেখে খুব ভালো লেগে গেল। ওর হাতের ব্যাগ খুলে একটা ভারী নেকলেস আর কয়েক গাছা চুরি সান্তাকে পড়িয়ে দিতে বলল - দেখি এখন কেমন লাগছে আমার বন্ধুকে। শিখা বলল - দিদি দারুন লাগছে আমার দিদিকে যেন একদম রাজরানী। দাঁড়া এখনো পুরো রাজরানী হয়নি বলে তন্দ্রা ব্যাগ থেকে একটা দামি বেনারসি বের করে ওকে পড়িয়ে দিল বলল এখন একদম রানী লাগছে তাইনারে। ওতো আমাদের বাড়িতে রানীর মতোই থাকবে আমি যেমন আছি। শিখা বিস্ময় মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সান্তার দিকে। তন্দ্রা শিখাকে বলল এই এদিকে আয়। শিক্ষা এমন আন্তরিক ভাবে ওর নাম ধরে আর তুই করে ডাকাতে খুব খুশি হলো কাছে এসে দাঁড়াতেই নিজের গলার একটা বেশ ভারী সোনার হার শিখার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল - দেখ এটা কখন গলা থেকে খুলবি না এটা আমাদের বন্ধুত্বের নিদর্শন। শিখা একটু কুন্ঠিত যে এত দামি একটা হার ওকে দিলো তাই কিছু বলতে যাচ্ছিল। তন্দ্রা ওর মুখ চেপে ধরে বলল - কোনো কথা নয় আমি তোর বড় দিদি আর বন্ধু। তারপর তন্দ্রা সান্তাকে ধরে বসার ঘরে নিয়ে এলো সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কেমন দেখতে লাগছে আমার বোনকে ? নিশিকান্ত বাবু সবার প্রথমে উঠে দাঁড়িয়ে সান্তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন - একদম লক্ষী প্রতিমার মতো লাগছে আমার ছোট বৌমাকে। নিজের পকেট থেকে একটা বালা বের করে সান্তার হাতে দিয়ে বললেন বৌমা ওর হাতে পড়িয়ে দাও তোমার শাশুড়ি মা পাঠিছেন , তিনি তো নিজে আসতে পারলেন না। সবাই খুব খুশি খুব হাসাহাসি আর কথা চলতে লাগল। এসব দেখে কাশীনাথের চোখে জল চলে এলো ভাবছেন এটা তিনি স্বপ্ন দেখেছেন না তো। তন্দ্রা কাশীনাথ বাবুর কাছে এসে বলল - এটা কি হচ্ছে কাকাবাবু আনন্দের দিনে চোখে জল কেন। কাশীনাথ তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে বললেন - মা এটা আনন্দের সুখের আমার সান্তার অনেক জন্মের পুন্য ফলে এমন স্বামী আর শশুরবাড়ি পেল। নিশিকান্ত বাবু - আমার ভাগ্যটা কি খারাপ এমন সুন্দর একটি লক্ষী প্রতিমার মতো বৌমা পেলাম। ওনার কোথায় সবাই একমত হয়ে বলল - ঠিক কথা বলেছ বাবা। কুনাল সান্তার কাছে এসে একটা সুন্দর হিরে বসানো একজোড়া কানের দুল দিলো সান্তার হাতে বলল - এটা তোমার দাদার ছোট্ট উপহার। তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বলল - ওকে এটা পড়িয়ে দাও দেখি কয়েকটা ফটো তুলি মাকে দেখতে হবেতো। তন্দ্রা দুল জোড়া পরিয়ে দিয়ে বলল নাও এবার ভাই বৌয়ের ফটো তোলো। বেশ কয়েকটা ফটো নিল কুনাল। তারপর বাকি সবার নেবার পরে মৃনালকে বলল - এই সান্তার পাশে এসে দাঁড়া তোদের দুজনের ফটো তুলি। বেশ হৈ হৈ করে অনেকটা সময় চলে গেল। তন্দ্রা কাশীবাবুকে বলল - কাকাবাবু খুব খিদে পেয়েছে যে। কাশীনাথ একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন - হ্যা মা সব তৈরী আছে তোমরা বসো আমি এখুনি খাবার দিচ্ছি। তন্দ্রা - আপনি দেবেন মানে টা কি ? আমি সবাইকে খেতে দেব বলে শিখার দিকে তাকিয়ে বলল চলতো বোন কোথায় খাবার আছে দেখিয়ে দে। শিখা বুঝে গেছে একে থামান যাবেনা তাই কিছু না বলে খাবার জায়গাতে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল। কাশীনাথ বাবু - নিশিকান্ত বাবু ও বাকি সকলকে নিয়ে যেখানে আসন পাতা হয়েছে সেখানে নিয়ে গিয়ে বললেন সবাই হাত মুখ ধুয়ে নিন আর খেতে বসুন। কুনাল বলল - কাকাবাবু আমার সবাই এখন একটাই পরিবার তাই এখানে কোনো রকম ফর্মালিটি করার দরকার নেই আর আমাদের সাথে আপনিও বসবেন খেতে নাহলে কিন্তু আমরা কেউই খেতে বোসছিনা।