Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
অন্ধকারের গান --- রাখাল হাকিম
#25
আমি মিনার কথা বিশ্বাস করলাম। তার মাথার কাছেই বসলাম। ডান হাতটা তার কপালেই রাখলাম। কি? জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে! আমি বললাম, কি ব্যাপার? তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর! আমাকে বলোনি কেনো?

মিনা অভিমান করেই বললো, বলার সুযোগ দিলেন কোথায়?
আমি বললাম, স্যরি মিনা, নিশ্চয়ই ঔষধও খাওনি। আমি টেলিফোন করে দেখছি, কোন ডাক্তার পাওয়া যায় কিনা।
মিনা বললো, ডাক্তার লাগবে না। গরীবদের জ্বর বেশীক্ষণ থাকে না। একটু ঘুমুলেই সেরে যায়।
আমি বললাম, তুমি একটা মেধাবী মেয়ে, এমন কথা বলতে পারো? অসুখকে না সারালে, সেটা পরবর্তীতে আরো বড় অসুখ হয়ে ধরা পরে।
মিনা আব্দার করেই বললো, না মামা, বললাম তো, ডাক্তার লাগবে না।
আমি মিনার কথা শুনলাম না। ডাক্তার ডেকে, তার চেক আপটা করিয়ে নিলাম। ডাক্তার যকন নিশ্চিত করলো, সাধারন জ্বর, তখনই আমি আশ্বস্ত হলাম। মিনা বললো, দেখলেন তো? শুধু শুধুই এত গুলো টাকা নষ্ট করলেন।
আমি মিনার নাকটা টিপে বললাম, এত গুলো টাকা নষ্ট করিনি। তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার দেখাশুনা করবে কে?
মিনা উঠে বসতে চাইলো, বললো, মামা দুপুরের রান্না বান্না তো কিছুই হয়নি। আপনি হাত মুখটা ধুয়ে আসেন। আমি খাবার রেডী করছি।
আমি মিনার থুতনীটা টিপে আদর করে বললাম, তোমার এই শরীর নিয়ে রান্না বান্না করবে? শোন মেয়ে, যখন আমিও ছাত্র ছিলাম, নিজ হাতেই রান্না করতাম। আজ আমি রান্না করবো, আর আমিই তোমাকে খাইয়ে দেবো।
মিনা অনুযোগ করে বললো, মামা, আমি একটা বস্তির মেয়ে! আপনি আমার জন্যে?
আমি বললাম, চুপচাপ শুয়ে থাকো। তুমি বস্তিতেই থাকতে আর রাজমহলেই থাকতে, ওসব আমি জানতে চাই না। এখন তুমি আমার বাড়ীতে থাকো। এই বাড়ীরই একজন। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে তাকার জন্যেই তো মানুষ! নাকি?
মিনা আবারো শুয়ে পরলো। আমার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখ মেলেই তাঁকিয়ে রইলো। আমি এই তো গুড গার্ল।
মিনা বিড় বিড় করেই বললো, মামা, মা ঠিকই বলতো, তোমার সেবা করাতেও অনেক পূণ্য!
আমি রান্না ঘরের দিকেই এগুতে থাকি।
রান্না ঘরের টুকরি গুলোতে খোঁজা খোঁজি করে দেখলাম, করলা, পটল, হরেক রকমের সব্জিই আছে। জ্বরের মাঝে করলার সাথে আলুর ভাজিটাই আমার ভাল লাগতো। আমি করলা আর আলু কুটতে থাকলাম। তারপর একটা পাতিলে আমার পছন্দের পুই শাকের সাথে ঘন ডাল বসিয়ে দিলাম।
খাবার রেডী করে, মিনার ঘরেই সব নিয়ে গেলাম। মিনা ঘাড়টা কাৎ করে বললো, মামা, আপনি খেয়েছেন?
আমি বললাম, আজকে এক সাথেই খাবো। এক লোকমা তোমাকে খাইয়ে দেবো, আরেক লোকমা আমি খাবো।
এই বলে এক লোকমা খাবার হাতে তুলে, মিনার মুখে বাড়িয়ে দিলাম। মিনা খাবার গুলো মুখে নিয়ে বললো, জীবনে বাবার স্নেহ কখনো পাইনি। আমার যদি বাবা থাকতো, তাহলে বোধ হয় এমনি করেই খাইয়ে দিতো।
আমি এক লোকমা খাবার নিজের মুখেও পুরে দিয়ে বললাম, তোমার বুঝি বাবা নেই?
মিনা বললো, জী মামা, জন্মের আগেই মারা গেছে। কখনো দেখারও সুযোগ হয়নি।
আমি মিনার মুখে আরেক লোকমা খাবার তুলে দিয়ে বললাম, ভেরী স্যাড, নাও খাও।
মিনার মুখে আবারো খাবার তুলে দিয়ে বললাম, একটা সত্য কথা বলবে?
মিনা আমার চোখে চোখ রেখে বললো, আপনি সব সময়ই আমাকে অবিশ্বাস করেন। আমি মিথ্যে বলি না।
আমি বললাম, হুম, বুঝলাম। রিমি তোমাকে কেমন অপমান করেছিলো?
মিনা জ্বরের মাঝেই হাসলো। আদুরে গলায় বললো, ওসব কিছু না মামা। তুমি আমাকে ওই নুতন জামাগুলো কিনে দিলে না? তার একটা গতকাল পরেছিলাম। রিমি দেখেছিলো। ভালোই তো নাগর জুটিয়েছো! নুতন নুতন জামা। কলিকালে আরো কত কি দেখবো!
রিমির এত বড় সাহস? মিনাকে এমন আমাকে জড়িয়ে এমন বিশ্রী কথ বলেছে? আমার মুখে আর খাবার রোচলো না। প্লেটের বাকী খাবারগুলো মিনার মুখেই তুলে দিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকলাম। মিনা বললো, মামা, আপনি খাচ্ছেন না যে?
আমি বললাম, তুমি আগে সুস্থ হয়ে নাও, তারপর, তুমিও এমন করে আমাকে খাইয়ে দিও।
মিনা মিষ্টি করেই হাসলো। মিনার দাঁতও গেঁজো। দুপাশের দুটি গেঁজো দাঁত অদ্ভুত মিষ্টি লাগে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্ধকারের গান --- রাখাল হাকিম - by ddey333 - 15-04-2023, 11:33 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)