Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
অন্ধকারের গান --- রাখাল হাকিম
#23
চোখের সামনে দেখতে দেখতে রিমিও কত বড় হয়ে গেছে। রিমিকে দেখলে নিজেরও মনে হয়, বুঝি বয়স বাড়ছে। কলেজ থেকেই বুঝি ফিরছিলো। তানিয়ার অপরিপক্কতার আঘাত মাথায় নিয়ে অন্যমনস্কভাবেই বাড়ী ফিরছিলাম। হঠাৎই রিমির গলা শুনতে পেলাম, ভাইয়া!


রিমি আমাকে খুব ছোটকাল থেকেই ভাইয়া বলে ডাকতো। অথচ, কেনো যেনো রিমির মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে, আমার বুকটা হু হু করে উঠে। বয়সের ব্যবধান খুব বেশী না, মাত্র চৌদ্দ। তারপরও, কিছু কিছু ব্যাপার থাকে। আমি ফিরে তাঁকালাম রিমির দিকে।
ঠিক মায়ের চেহারা পেয়েছে রিমি। তবে, মায়ের চাইতে একটু বেশী দীর্ঘাঙ্গী। ঠোটগুলো যেমনি সরু, চৌকু, দাঁতগুলোও ঠিক দুধে সাদা।
উর্মি কিংবা শর্মি অতটা লম্বা ছিলো না। তিন বোনের মাঝে উর্মিই বুঝি ছিলো সবচেয়ে খাট, আর রিমি একটু অতিরিক্ত লম্বা। মাঝে মাঝে মনে হয়, ঠিক আমার গড়নই পেয়েছে।

শর্মিও যখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো, তারপর দীর্ঘদিনই উর্মিদের বাড়ীতে যাওয়া হয়নি। রিমির সাথে কুশলাদী বিনিময় হয় পথে ঘাটেই, কদাচিৎ। আমি বললাম, কলেজ থেকে ফিরছো বুঝি?
রিমি ঘাড়টা বাঁকিয়ে আহলাদী হাসিই হাসলো চক চক করা সাদা দাঁতগুলো বেড় করে। বললোজী ভাইয়া। শুনলাম, মিনা নাকি তোমাদের বাড়ীতে থাকে?
মিনা? কোথায় যেনো নামটা শুনেছি! হ্যা, নুতন সেই কাজের মেয়েটার নামই তো মিনা। আমি বললাম, হ্যা, চিনো নাকি মিনাকে?
রিমি বললো, ভাইয়া, কি যে বলো? মিনাকে চিনবো না? আমার বান্ধবী, খুব তোখোর ছাত্রী! এস, এস, সি, তে বোর্ডে স্ট্যাণ্ড করা!
আমি বললাম, তাই নাকি?
রিমি রাস্তার পাশের, কাঠের রেলিংটার উপরই চেপে বসলো। খিল খিল করে হেসে বললো, ভাইয়া, তুমি নিজে খুব ব্রিলিয়্যান্ট তো, তাই অন্য কোন ব্রিলিয়্যান্টদের খুব পাত্তা দিতে চাও না। এবার বলো, মিনা কলেজে যায়নি কেনো?
আমি বললাম, মিনা কলেজে যায়নি, তা আমি কি করে বলবো? আমি কি বাড়ীতে ছিলাম নাকি? আমার কত কাজ!
রিমি বললো, তোমার আবার কাজ, গাড়ী থাকতে পায়ে হেঁটে চলো, অযথা সময় নষ্ট করো।
আমি বললাম, না রিমি, অযথা সময় নষ্ট করিনা। হাঁটলে অনেক কিছু চিন্তা করার সুযোগ থাকে। গাড়ী চালালে সব সময় মাথার ভেতর একটা ঝুকি চেপে থাকে। কখন এক্সিডেন্ট করে ফেলি।
রিমি বললো, তা না হয় বুঝলাম। তো একটা কথা বলি। দিন দিন কিন্তু তোমার মাথাটা এক্কেবারে যাচ্ছে।
আমি অবাক হয়েই বললাম, মানে?
রিমি বললো, আর কত? অহনা আপুর কথা শুনেছি। দেখেছিও। একটা মেয়ে হলো? তুমি বরং মিনাকে বিয়ে করে ফেলো।

রিমির কথায় আমি হঠাৎই থতমত খেয়ে গেলাম। বিয়ে তো আমি করেছি, গোপনে। এমন একটা অপরিপক্ক মেয়েকে বিয়ে করেছি যে, সামাজিক ভাবে প্রকাশও করতে পারছিলাম না। আমি অন্যমনস্ক ভাবে বিড় বিড় করেই বললাম, বিয়ে?
রিমি বললো, হ্যা বিয়ে! মিনা গরীব ঘর এর মেয়ে হতে পারে, বাট, ভেরী বিউটিফুল, ব্রিলিয়্যান্ট! তোমার জন্যে অমন একটি মেয়েই দরকার, যে তোমাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারবে।

রিমি মিথ্যে বলেনি। এই কয়দিনে মিনা যেভাবে বাড়ীটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছিলো, খাবার দাবার সহ আমাকে মদের নেশা থেকেও বারণ করছিলো, তাতে করে মনে হয়, এমন একটি মেয়েকেই বুঝি আমার বিয়ে করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে, বিয়ে তো আমি করেই ফেলেছি। তানিয়া নামের অপরিপক্ক একটা মেয়েকে, যে কিনা রিমি কিংবা মিনার চাইতেও তিন চার বছরের ছোটই হবে।
আমি মাথা নীচু করে চুপ চাপ দাঁড়িয়েই ছিলাম। রিমি হঠাৎই কাঠের রেলিংটার উপর থেকে নেমে আমার সামনা সামনি এসে দাঁড়ালো। ফিক ফিক করেই হাসলো সাদা চক চক করা দাঁত গুলো বেড় করে। ঠিক তার মায়ের মতোই সুন্দর সুদৃশ্য দাঁত! পাগল করা এক ফালি দাঁত! হঠাৎই আমার ঠোটে একটা চুমু দিয়ে বললো, মিনাকে বিয়ে না করলে, আমিই কিন্তু তোমাকে বিয়ে করে ফেলবো।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্ধকারের গান --- রাখাল হাকিম - by ddey333 - 15-04-2023, 06:27 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)