12-04-2023, 08:31 PM
(This post was last modified: 12-04-2023, 08:33 PM by আমিও_মানুষ. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
মাস্টার মশাই, আপনি সব দেখেছেন!
ক্লাস ফাইভে সবার মাথায় চক ছুঁড়েছিলাম, ক্লাস সেভেনে লুকিয়ে আনন্দলোক এনে টিফিন টাইমে দেখাচ্ছিলাম,
ক্লাস নাইনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম,
আর এই সবকটা ঘটনার কোনোটাই আপনার নজর এড়ায়নি, মাস্টারমশাই।
আপনি গার্জেন অর্থাৎ অভিভাবকদের কল করেননি!
হেড মাস্টার মশাইয়ের কাছে নিয়ে যাননি, কলেজ থেকে সাসপেন্ড করেননি…
কান ধরে বেঞ্চে দাঁড় করিয়েছিলেন দু’বার, আর একবার নিল ডাউন, তার সাথে প্রবল ধমক তো ছিলোই।
সেই শাসনে আপনাকে বা আমাকে, কাউকেই মা বাবাকে ধরে টানতে হয়নি।
মাস্টারমশাই, আমার কখনো মনে হয়নি আপনি কেন মারছেন, আপনারও শাসন করতে সংকোচ হয়নি।
বাবা মা আর আপনি . এরাই তো আমার বাল্য-কৈশোরের ঠিক বেঠিক চিনিয়ে বাকি জীবনের রাস্তায় রওনা করিয়ে দিলেন।
শাস্তি দিয়ে শুরু করলাম বটে, তাই বলে স্মৃতির আলমারিতে ওইগুলোই শুধু গুছানো নেই।
সেইসব দিনগুলো আপনার ওপরে বড় রাগ হতো, মাস্টারমশাই, আমার সব প্রিয় কাজে বাধা ওই বাড়ির দু’জন আর আপনি।
আজ বুঝি, কতখানি আপন ভাবলে অমন করে ফিরিয়ে আনা যায় ভুল রাস্তা থেকে।
অনিন্দ্য যেদিন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো, সেদিন আপনি ওকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে, ওর মা বাবা নেই,
মামার বাড়ির এককোণে পড়ে থাকা এক অবলা কিশোর,
সেটা কি আপনি জানতেন, মাস্টারমশাই?
আজও জানিনা সেটা, শুধু জানি সেদিন রাতে আর কেউ নয়, আপনিই ছিলেন ওর পাশে জেগে, সব ওষুধ কিনে দিয়ে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন আপনিই।
একথা আপনি কোনোদিন বলেননি, মাস্টারমশাই,
অনিন্দ্য বলেছে গত রিইউনিয়নে হিউস্টন থেকে এসে।
শুধুই পড়ানো আপনার কাজ ছিলোনা, মাস্টারমশাই।
রেজাউল যে অভাবের তাড়নায় বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে, আপনি জানতেন।
তাই দুটো টিফিনবাক্স আসতো আপনার সাথে,
আর ওর বাড়ি ফেরা হতো আপনার বাড়ি ঘুরে। রেজাউল আজও খুব কেউকেটা কেউ না,
তবে জিতু চাকরিতে সচ্ছল , আর পাঁচটা অনাথ বাচ্চার খাওয়াপড়ার অভিভাবক।
ওই পাঁচটা অনাথ আপনার নাম জানে মাস্টারমশাই।
আসলে আপনি সব কিছু দেখতেন মাস্টারমশাই।
আমাদের গুণগুলো আপনার হাতে তীক্ষ্ণমুখ হয়ে বর্তমানের তূণে আগামীর সাথে লড়ার বাণ হয়ে যেতো, আমাদের দোষগুলো মাথাচাড়া দেওয়ার আগে দশবার ভাবতো,
আপনার চোখে পড়ে গেলে কি হবে, আপনি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা কিছু ছাত্র তৈরি করেননি, মানুষ করতে চেয়েছেন আমাদের প্রত্যেককে।
এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজে পড়ে, কেউ বা সেই গণ্ডী পার হয়ে কলেজে।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখন কেমন শিঁটিয়ে থাকেন, নিজের বিষয় ছাড়া আর কিছু আগ বাড়িয়ে বলতে যাননা,
কারণ অভিভাবক তথা ‘গার্জেন’রা সেটা পছন্দ করেন না নাকি।
এখন আর আপনি কারো গার্জেন হতে পারতেন না মাস্টারমশাই,
মানুষ গড়ার কারিগর আর এ সমাজ চায় না, তার চাহিদা বেশি নম্বরের উপায় বলে দেওয়া পেশাদার শিক্ষাজীবী,
যেখানে ফেলো কড়ি মাখো নম্বরটাই মূলমন্ত্র। আমরা মানুষের বদলে কিছু রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে গেছি, মাস্টারমশাই।
উত্তর প্রজন্মের কাছে আপনারা ফসিল মাস্টারমশাই। এখন আপনার কিচ্ছু দেখা বারণ, আর দেখলেও সেটা ছাত্র বা বাবা মা কে দেখানো তো ভয়াবহ অপরাধের মধ্যে পড়ে!
এই সব দেখি, আর মনে মনে ্প্রনাম জানাই আপনাকে।
ভাগ্যিস আপনি সব দেখতেন , মাস্টারমশাই!
ক্লাস ফাইভে সবার মাথায় চক ছুঁড়েছিলাম, ক্লাস সেভেনে লুকিয়ে আনন্দলোক এনে টিফিন টাইমে দেখাচ্ছিলাম,
ক্লাস নাইনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম,
আর এই সবকটা ঘটনার কোনোটাই আপনার নজর এড়ায়নি, মাস্টারমশাই।
আপনি গার্জেন অর্থাৎ অভিভাবকদের কল করেননি!
হেড মাস্টার মশাইয়ের কাছে নিয়ে যাননি, কলেজ থেকে সাসপেন্ড করেননি…
কান ধরে বেঞ্চে দাঁড় করিয়েছিলেন দু’বার, আর একবার নিল ডাউন, তার সাথে প্রবল ধমক তো ছিলোই।
সেই শাসনে আপনাকে বা আমাকে, কাউকেই মা বাবাকে ধরে টানতে হয়নি।
মাস্টারমশাই, আমার কখনো মনে হয়নি আপনি কেন মারছেন, আপনারও শাসন করতে সংকোচ হয়নি।
বাবা মা আর আপনি . এরাই তো আমার বাল্য-কৈশোরের ঠিক বেঠিক চিনিয়ে বাকি জীবনের রাস্তায় রওনা করিয়ে দিলেন।
শাস্তি দিয়ে শুরু করলাম বটে, তাই বলে স্মৃতির আলমারিতে ওইগুলোই শুধু গুছানো নেই।
সেইসব দিনগুলো আপনার ওপরে বড় রাগ হতো, মাস্টারমশাই, আমার সব প্রিয় কাজে বাধা ওই বাড়ির দু’জন আর আপনি।
আজ বুঝি, কতখানি আপন ভাবলে অমন করে ফিরিয়ে আনা যায় ভুল রাস্তা থেকে।
অনিন্দ্য যেদিন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো, সেদিন আপনি ওকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে, ওর মা বাবা নেই,
মামার বাড়ির এককোণে পড়ে থাকা এক অবলা কিশোর,
সেটা কি আপনি জানতেন, মাস্টারমশাই?
আজও জানিনা সেটা, শুধু জানি সেদিন রাতে আর কেউ নয়, আপনিই ছিলেন ওর পাশে জেগে, সব ওষুধ কিনে দিয়ে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন আপনিই।
একথা আপনি কোনোদিন বলেননি, মাস্টারমশাই,
অনিন্দ্য বলেছে গত রিইউনিয়নে হিউস্টন থেকে এসে।
শুধুই পড়ানো আপনার কাজ ছিলোনা, মাস্টারমশাই।
রেজাউল যে অভাবের তাড়নায় বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে, আপনি জানতেন।
তাই দুটো টিফিনবাক্স আসতো আপনার সাথে,
আর ওর বাড়ি ফেরা হতো আপনার বাড়ি ঘুরে। রেজাউল আজও খুব কেউকেটা কেউ না,
তবে জিতু চাকরিতে সচ্ছল , আর পাঁচটা অনাথ বাচ্চার খাওয়াপড়ার অভিভাবক।
ওই পাঁচটা অনাথ আপনার নাম জানে মাস্টারমশাই।
আসলে আপনি সব কিছু দেখতেন মাস্টারমশাই।
আমাদের গুণগুলো আপনার হাতে তীক্ষ্ণমুখ হয়ে বর্তমানের তূণে আগামীর সাথে লড়ার বাণ হয়ে যেতো, আমাদের দোষগুলো মাথাচাড়া দেওয়ার আগে দশবার ভাবতো,
আপনার চোখে পড়ে গেলে কি হবে, আপনি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা কিছু ছাত্র তৈরি করেননি, মানুষ করতে চেয়েছেন আমাদের প্রত্যেককে।
এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজে পড়ে, কেউ বা সেই গণ্ডী পার হয়ে কলেজে।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখন কেমন শিঁটিয়ে থাকেন, নিজের বিষয় ছাড়া আর কিছু আগ বাড়িয়ে বলতে যাননা,
কারণ অভিভাবক তথা ‘গার্জেন’রা সেটা পছন্দ করেন না নাকি।
এখন আর আপনি কারো গার্জেন হতে পারতেন না মাস্টারমশাই,
মানুষ গড়ার কারিগর আর এ সমাজ চায় না, তার চাহিদা বেশি নম্বরের উপায় বলে দেওয়া পেশাদার শিক্ষাজীবী,
যেখানে ফেলো কড়ি মাখো নম্বরটাই মূলমন্ত্র। আমরা মানুষের বদলে কিছু রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে গেছি, মাস্টারমশাই।
উত্তর প্রজন্মের কাছে আপনারা ফসিল মাস্টারমশাই। এখন আপনার কিচ্ছু দেখা বারণ, আর দেখলেও সেটা ছাত্র বা বাবা মা কে দেখানো তো ভয়াবহ অপরাধের মধ্যে পড়ে!
এই সব দেখি, আর মনে মনে ্প্রনাম জানাই আপনাকে।
ভাগ্যিস আপনি সব দেখতেন , মাস্টারমশাই!