05-04-2023, 07:34 PM
৪৩ গল্প - বাবান
হ্যা গো কি করছো কি তুমি? তখন থেকে কবেকার একটা পুরানো বই বার করে পড়েই চলেছো।
বান্টির মায়ের কথা শুনে স্বামী বই থেকে মুখ না তুলেই বললেন - বই পড়ার কত উপকারিতা আছে তুমি জানো? কত কিছু জানা যায় শেখা যায়।
বান্টির মা - তোমার এই বয়সে আবার কি জানার আছে হ্যা? যা জানার আর শেখার তা তো বান্টির।
বাবা - ছি ছি এটা কি বললে বলোতো হ্যা? শেখার কি কোনো বয়স আছে? এই যেমন ধরো একটু আগেই জানলাম phallus impudicus বলে এমন এক ধরণের ছত্রাক জন্মায় যেটা দেখতে অনেকটা আমাজন রেন ফরেস্টের Atretochoana- র মতো। আর এই দুই জনেই দেখতে নাকি অনেকটা..ওই .... ওই ইয়ের মতন।
মা - কিসের মতন?
বাবা - ওই যেটা আমার দু পায়ের মাঝে থাকার জন্য বান্টি বাবুর জন্ম হলো।
মা - ধ্যাৎ! কিসব যে বলোনা। নোংরা ভুলভাল কথা যতসব।
এবারে বৌয়ের দিকে তাকিয়ে - ভুলভাল বলছি? দাঁড়াও আমি এক্ষুনি প্রমান করে দিচ্চি। লেখাটা আরেকবার বার করি তারপরে তুমি নিজে হাতে নিয়ে মিলিয়ে নাও।
মা - আমার বয়ে গেছে ওসব দেখতে। শোনোনা..... তখন থেকে ওই বই নিয়ে পড়ে আছো। একটু আমার দিকেও তো নজর দাও। বান্টি খেলতে গেছে। ততক্ষনে একটু আমাকেও তো পড়তে পারো নাকি?
বাবা পুনরায় বইয়ে মুখ গুঁজে - এখন এখন আমি একটা নতুন বইয়ে বুঁদ হয়ে আছি। এখন ডিসটার্ব কোরোনা তো। আর তাছাড়া তোমার আমার এই এতো বছরের দাম্পত্য জীবনে ওই ছোট গল্প বহুবার পড়া হয়ে গেছে।
ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে - কি? আমি ছোট গল্প? আচ্ছা? বান্টি হবার আগে তো এই ছোট গল্পই রোজ রাতে নিয়ে পড়তে বসতে। ভুলে গেছো? রোজ কেমন দুলে দুলে জোরে জোরে পড়তে? শুনে রাখো তাপস বাবু! এই ছোট গল্পই তোমায় রোজ পড়তে হবে। যতদিন না বইয়ের মলাট কুঁচকে যায়। বুঝছো?
বাবা মিনিমিন করে - উফফফফ রোজ রোজ পড়ে মুখস্থ হয়ে গেলো যে গল্প। সে পাতায় আবার নাকি ফুঁ দিতে হবে। যত্তসব।
মা - কি বললে?
বাবা - বললাম যে আমি এখন পড়বোনা ছোট গল্প।
মা - তাইতো! এখন আর ছোট গল্পে মন বসবে কেন? তোমার তো নজর নতুন বইয়ের দিকে। অতই যদি মুরোদ থাকে তো যাওনা যাও। দেখি কে বড়ো গল্প পড়তে দেয় তোমায়।
বাবা রেগে - দেখো জ্বালিও নাতো। আমি যদি চাইনা ছোট থেকে বড়ো গল্প সব রোজ রোজ পড়তে পারি বুঝলে। আর যদি বেশি বোলোনা তাহলে তোমার সামনে নতুন বই এনে পড়তে বসে পড়বো। তুমি হা করে দেখবে বুঝলে? হুহু বাওয়া। বাজারে কি বইয়ের অভাব? আরে বেশি কিছু না পারি একটা ম্যাগাজিন পড়ে ফেলবো স্যাট করে। বেশি সময়ও লাগবেনা। তুমি কি ভাবো? ভালো রাইটারদের অভাব আছে আশেপাশে?
মা রেগে গিয়ে - আচ্ছা তাইনা? তবে শুনে রাখো। এই আমিও তাহলে গেলাম মলাট পাল্টাতে। আগে ভালো করে মলাট পাল্টাবো, তারপরে নতুন কোনো প্রকাশনীতে ছাপাবো। তাও আবার বোল্ড ফন্টে বুঝলে। বাজারে প্রকাশকও গিজ গিজ করছে। হুহ!!
বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে বান্টি মামনি।
বাবা মনে মনে - ওরে আমার ছোট গল্প। নতুন প্রকাশক তোকে ছাপাবে বলে ইচ্ছে করে যে তোর পাতায় কালী ঢেলে ভিজিয়ে দেবে সেটা ভাবলিনা? তারপরে তো ওই ছোটগল্প উপন্যাস হয়ে আমার মাথায় চেপে বসবে। তখন তো আবার টেবিল কিনতে হবে। নানা বাওয়া ক্ষেপিয়ে লাভ নেই। কোনদিন না এ বাড়িটাকে লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলে । তার চেয়ে আরেকবার ছোট গপ্পোটা পড়ে ফেলি।
ওগো শুনছো বান্টির মা? আমি আসছি। রাগ কোরোনা গো।
- বাবান