02-04-2023, 12:27 PM
ম র ণ কা ম ড়
১.
০৭.০৪.২০২২
১.
আমার স্বামী; একজন নম্র, ভদ্র, স্বল্পভাষী মানুষ।
রোজগার করতেন অল্প, কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন অজস্র।
আমাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। অথচ মুখ ফুটে সে কথা কখনও প্রকাশ করেননি।
আমার স্বামী লুকিয়ে কবিতা লিখতেন। কাউকে দেখাতে, ভারি লজ্জা পেতেন।
কখনও কোনও পত্রিকাতেও সে সব লেখা পাঠাননি।
তবে আমাকে কখনও-সখনও ঘনিষ্ঠ হয়ে শোনাতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি তখন সে সবে বিশেষ কান-টান দিইনি।
২.
স্বামী থাকতেন নিজের কাব্য-জগতে, আর আমি সংসারের জাঁতাকলে। এক ছাদের তলায় থাকলেও, তাই দু'জনের মধ্যে ব্যবধান হয়ে গিয়েছিল বহু দূরের।
হয় তো আমার মুখচোরা স্বামী, আমাকে তাঁর মতো করে, খুব মৃদুস্বরে কাছে টানতে চাইতেন, কিন্তু আমি তাও গ্রাহ্য করিনি।
৩.
এ সংসারে আমার সবথেকে বেশি ভাব ছিল বাবলু-ঠাকুরপোর সঙ্গে।
বাবলু-ঠাকুরপো, আমার স্বামীর খুড়তুতো ভাই; পাশের শড়িকী-বাড়িতেই থাকেন। ঠাকুরপোর বয়স, আমার স্বামীর কাছে-পিঠেই; তবে বিয়ে করেননি।
বিয়ের পর থেকেই বাবলু-ঠাকুরপো, আমার খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। স্বামীর থেকেও বেশি।
আমার স্বামীর ভাবুক-উদাস স্বভাবটাই, তাঁকে কখনও আমার বন্ধু, কিম্বা প্রেমিক, কিছুই করে তুলতে পারেনি।
আমি এতোদিন শুধু বাবলু-ঠাকুরপোর সঙ্গেই মন খুলে হাসি-গল্প করতাম, আর ভাবতাম, আমার স্বামী মানুষটা, আমার প্রতি কতোটা ইনসেন্সিটিভ!
৪.
সেদিন দুপুরবেলায় হঠাৎ করেই আমার স্বামী, কাজ থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলেন। এমন সময়ে তিনি কখনও ফিরতেন না।
তখন আমার ঘরের দরজাটা ভেজানো ছিল মাত্র; ভিতরে, খাটের উপর, আমি, আর বাবলু-ঠাকুরপো শুয়েছিলাম।
আমার স্বামী, আচমকা ঘরের দরজাটা খুলেই, রীতিমতো চমকে উঠলেন।
আমিও অসময়ে, এই অকুস্থলে তাঁকে দেখে, বুকের কাছে কোনওমতে বিছানার চাদরটাকে টেনে নিয়ে, থরথর করে কেঁপে উঠলাম।
কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই, আমার স্বামী, চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে, ধীর-পদে ফিরে গেলেন।
৫.
বেডরুমের পাশেই, আমার স্বামীর একটা ছোটো পড়াশোনার ঘর আছে। ওখানেই দিনরাত বসে-বসে তিনি কবিতা লিখতেন।
সেই অসম্বৃত দুপুরে, আমি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দেখলাম, আমার স্বামী, তাঁর প্রিয় পড়া-ঘরের দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন।
৬.
সে রাতে আর তিনি তাঁর স্টাডি-ঘর থেকে কিছুতেই বাইরে বের হলেন না।
আমি অনেকবার দরজা ধাক্কালাম, ডাকাডাকি করলাম, তবুও না।
তারপর ভোররাতে, আমি সমস্ত লজ্জার মাথা খেয়ে, বাবলু-ঠাকুরপোকে ঘুম থেকে তুলে আনলাম।
ঠাকুরপো এসে, গায়ের জোরে, আমার স্বামীর পড়ার ঘরের বন্ধ দরজাটাকে ভেঙে ফেলল।
তারপর সিলিং থেকে স্বামীর ঝুলন্ত ও নিথর দেহটাকে নামিয়ে, বাবলু-ঠাকুরপোই সব ব্যবস্থা করে, শবদেহ নিয়ে শ্মশানে চলে গেল।
তখন আমি পায়ে-পায়ে স্বামীর ঘরে ঢুকে দেখলাম, টেবিলের উপর তাঁর এই সদ্য লেখা কবিতার পাণ্ডুলিপিটা পড়ে রয়েছে।
আমি লেখাটা তখনই এক-দমে পড়তে শুরু করলাম। আমার চোখ বেয়ে গরম জলের ধারা, নিজের অজান্তেই হুড়মুড়িয়ে নামতে লাগল।
৭.
আমার মুখচোরা স্বামীর শেষ লেখা কবিতা। পড়তে-পড়তে আমি যেন নিশ্চল, পাথর মতো হয়ে গেলাম।
অস্ফূটে, নিজের মনেই বলে ফেললাম, ‘সত্যি, আপনি আমাকে এতোটা ভালোবাসতেন!’
৮.
বাবলু ঠাকুরপো শ্মশান থেকে ফিরে এসেছে। স্নান-খাওয়া সেরে, আজ বিনা বাধা, বিনা অনুমতিতেই আমার বিছানায় গিয়ে উঠেছে। এখন আমায় কাছেও ডাকছে; যেমন আগেও অনেক দুপুরে অবলীলায় ডেকে নিয়েছে…
৯.
কিন্তু আমি আজ আর কিছুতেই নিজের শোয়ার ঘরের চৌকাঠ ডিঙোতে পারলাম না।
আজ থেকে যে আমার প্রকৃত বৈধব্য শুরু হল!
প্রকটভাবে আছে
দুইটি পায়ের খাঁজে
নরম মাংস
প্রেমের অংশ
আঁধার গুল্মে ঢাকা
খানিক উপরে পাকা
দুটি লোভী ফল
কে কে খাবি, বল?
কে কে গুহা দিয়ে
কামান চালিয়ে
যুদ্ধ করতে যাবি?
নিঃসৃত মধু পাবি
ঝাঁঝালো মিষ্টি
মোহিত দৃষ্টি
স্বরে শীৎকার
চাদরে আবার
লাল-লাল ফোঁটা
ঢেকো না গো ওটা
খুলে ফ্যালো
দু'পা মেলো
গোলাপি গভীরে
ভরে যাক ক্ষীরে
গেলে দাও মধু
বাংলার বধূ
বসন্তে বেড়ি
সমস্ত ছাড়ি
এসো কোলে
খিদে পেলে
তলপেটে
কাদা ঘেঁটে
করি খেলা
যায় বেলা
কাঁদো তুমি
চুষি আমি
ঘেমে-ঘেমে
আসি নেমে
সেইখানে
ফুলবনে
রসে ভরা
করি ত্বরা
গভীরে ঢুকিয়ে
যাই নাও বেয়ে
রোমাঞ্চ ফোটে
তোমার দু'ঠোঁটে
আমি হেরে যাই
ক্ষীরপুলি খাই
তোমার পাঁজরে
দ্বিতীয় প্রহরে
ঘরেতে আঁধার
বিছানার ধার
হয়েছে সিক্ত
আমি আসক্ত
তোমার ওখানে
টিপে, আর টেনে
দিই সুখ-ব্যথা
ভাঙো নীরবতা
করে জলকেলি
চলো, আরও খেলি
সেই ঘন খেলা
তোর ছেড়ে ফেলা
বাকল সকল
করেছি দখল
সিঁদ কেটে-কেটে
তোর ধণু-পিঠে
চুম্বন দাগ
জল হল রাগ
সেই তাপ-দাহে
তোর খোলা গায়ে
করেছি রচনা
মোর বাবুসোনা
উঠে তেড়েফুঁড়ে
যাবে তোর ঘরে
নরম যেখানে
উষ্ণতা আনে
কালো ঘাসবন
হয়ে নির্জন
সোঁদা বাষ্পরা
দিল আসকার
পাড়াময় জানে
শরীর এইখানে
পাতা হয়ে যায়
আরও ব্যথা চায়
যেখানে রক্ত
পিপাসা রাখত
দহন দুপুরে
নরমকে কুড়ে
রসনায় রস
চেয়েছি সাহস
বসেছে উপরে
ঘোড়া-পিঠে চড়ে
করেছি কামনা
অযুত যাতনা
খনির আড়ালে
ঘেমে ওঠা খালে
পুঁতেছি অশণি
তব যোনি-মণি
শিহরিয়া উঠে
আমার দু'ঠোঁটে
ডেকে যাও বাণ
তোমার মহান
নিতম্ব-স্তুপে
অবারিত রূপে
সঞ্চিত মেদ
বাঁকা-চাঁদ পেট
তারই শেষে বন
ব-দ্বীপ মতোন
দু'পায়ের ফাঁকে
ওইটাকে দেখে
উঠেছে দাঁড়িয়ে
আমাকে ছাড়িয়ে
আমার বোমারু
খেলা হবে শুরু
তাই এই ঘরে
ঘন আন্ধারে
বিছানার গদি
হয়েছে আমোদি
কটিবাস ছেড়ে
পোকাদের মেরে
এসো, শুয়ে পড়ি
বেজে যাক ঘড়ি
হাপরের তালে
নাও যাক খালে
ফোয়ারার ফেনা
ভেজাক বিছানা
গায়ে, বা বগোলে
চুঁয়ে পড়া চুলে
বিঁধে যাক সুখ
ডালিমের মুখ
গিলুক আমাকে
চেরা মৌচাকে
যেখানে আঠারা
করে রাখে খাড়া
আমার শিকারি
পুরুষ-প্রহরী
তোমার অতলে
গুঁতো মেরে চলে
কেঁদে ওঠো তুমি
যেন মরুভূমি
ওয়েসিস থেকে
কাদা-জল ছেঁকে
পিপাসার দিনে
আমার টিফিনে
বমি করো সুধা
আমিও বসুধা
তোমার গোলাপে
অতি উত্তাপে
ছাপি পাপ-দাগ
তোমার সোহাগ
নিয়ে সারা গায়ে
ফিরে যাই গাঁয়ে
যেখানে আড়ালে
তুমি ছেড়েছিলে
সায়া, ছায়াতলে
এক-গলা জলে
গোপনে দুপুরে
আমি ঘুরে-ঘুরে
দেখেছিনু খাঁজে
পড়ে গিয়ে লাজে
তুমি এসে ঘরে
ডাকিলে আমারে
সিক্ত-বসনা
আমার কামনা
তোমার দু'চোখে
ঝরেছে পুলকে
চেয়েছি তোয়ালে
আমি রসাতলে
পড়ে যেতে-যেতে
তোমার স্তনেতে
রেখেছি দংষ্ট্রা
তোমাকে স্রষ্টা
কুঁদেছে একাকী
তবু হাত রাখি
তোমার ওখানে
সন্ধেরা জানে
মাংসের স্বাদ
ভেঙে গেছে বাঁধ
এবারে ও মুখে
রতি রাখি সুখে
বুকের পশমে
নরমে গরমে
হবে প্রেমখেলা
কেটে যাবে বেলা
দু'পায়ের ফাঁকে
ছবির এঁকে-এঁকে
ভারি-জল আর
ঘন রসাধার
মিশে গিয়ে শেষে
ধস্ত বালিশে
দু'জনার দেহ
লুকোইনি কেহ
লাজ গেছে ঘুচে
শরীর পুড়েছে
সেই ওইখানে
প্রেমিক যেখানে
অবৈধ শরে
বিঁধেছে তোমারে
প্রতি নিঃশ্বাসে
তলপেটে, ঘাসে
যেখানে বিরহ
করে সমারোহ
শরীর-সাধনা
মোরা দুইজনা
এক-দেহ হয়ে
নদী যায় বয়ে
চুমুতে ভাসিয়া
বেয়ে যাব খেয়া
দু'ঠ্যাঙের ফাঁকে
শুধুই তোমাকে
পুজো করে যাব
আকন্ঠ খাব
অমৃত-বারি
আমাদের গাড়ি
থামবে না বলে
দুই চোখ মেলে
ফাঁকা এই ঘরে
ঠিক দুপ্পুরে
ফেলে দেহ-খোসা
শুরু করি চষা
প্রাকৃতিক কৃষি
বসন্ত নিশি
হবে কাক-ভোর
দহনের ঘোর
নিয়ে দুটি দেহে
ছেলে, আর মেয়ে
আমরা দুটিতে
মাতব ছুটিতে
শরীরে ও মনে
প্রেম উপবনে
দুপুরে, বা রাতে
এই ছোটো খাটে
বাকি কথা ভুলে
সব খুলে ফেলে…
সব কিছু খুলে
চুদিব তোমারে
যে রাতে মোর
দুয়ারখানি ভাঙল ঝড়ে…
১০.
বাবলু-ঠাকুরপো এইমাত্র শ্মশান থেকে ফিরল। দাহকার্য মিটে গেছে; শুনলাম, ওই নাকি মুখাগ্নি করেছে।
মাঝরাত থেকে ঠাকুরপোর উপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা গেল। তাই মুখটা ওর এখন শুকিয়ে গিয়েছে।
১১.
বাবলু-ঠাকুরপো শ্মশান থেকে ফিরেই স্নানে ঢুকল। ও ভালো সাঁতার জানে না। তাই আর গঙ্গা-স্নানের রিস্কটা নেয়নি।
বাথরুম থেকে বেড়িয়ে, পোশাক পাল্টে, ঠাকুরপো খেতে বসল।
আজ থেকে আমাদের হব্যিষাণ্ন রান্না হবে; তেল-হলুদ ছাড়া; আগামী আরও বারোদিন।
১২.
বাবলু-ঠাকুরপো খানিকটা ফ্যান-ভাত, আর আলুসেদ্ধ হাপুস-হুপুস করে খেলা, সামান্য একটু নুন দিয়ে মেখে।
তারপর লুঙ্গির গাঁটটাকে আলগা করে দিয়ে, সরাসরি আমার ঘরের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল।
ঠাকুরপো খাটে শুয়েই একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল। তারপর লুঙ্গির আলগা বাঁধনটা সরিয়ে, জঙ্ঘা বের করে চুলকোতে-চুলকোতে, আমার দিকে তাকিয়ে বলল: "কী হল? তুমি আবার সঙের মতো হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলে কেন?
কাপড়-চোপড় ছেড়ে, চটপট বিছানায় উঠে এসো। আর তো বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ নেই তোমার…"
১৩.
আমি তবু ঘরের চৌকাঠের কাছে, পাথরের মতো নিশ্চল হয়েই দাঁড়িয়ে রইলাম। এক-পাও নড়তে পারলাম না।
কেউ যেন একটা অদৃশ্য শেকল দিয়ে আমার দু’পায়ে আজ সত্যিকারের সংযমের বেড়ি পড়িয়ে দিয়েছে!