02-04-2023, 11:05 AM
অধ্যায় - পাঁচ
রূপকথার উপাখ্যান
পরিচ্ছেদ - ১ রূপকথার সাক্ষাৎকার
নিঃস্তব্ধে পদ্মাবতীর ঘরে বসেছিলো বিপাশা। নিশ্চুপ হয়ে গেছেন পদ্মাবতী। ওনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বোধহয় এই চোখের জলে তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে চাইছেন। এমন সময় সেই ঘরে ঢোকে মালতী। সেই বিপাশাকে এই ঘরে নিয়ে এসেছিলো। সে বললো - " বিপাশাদি , এখানে বেশীক্ষণ থেকে কি-ই বা আর করবেন। দেখতেই তো পাচ্ছেন মানুষটা শুয়ে শুয়ে তাঁর মৃত্যুর দিন গুনছেন।"
তবুও বিপাশার মনে হয় , আরো কিছুটা সময় যদি সে থাকতে পারে এখানে, যদি সে দেখতে পারে কিভাবে মৃত্যু এসে তার সীমাহীন উল্লাসে পদ্মাবতীর ফুলের মতো জীবটাকে ক্ষত-বিক্ষত করে তাকে জীবন বিমুখ করে তুলেছে, তাহলে জীবনের পাতা আরো বেশী সমৃদ্ধশালী হবে তার।
সে ভাবে , এখনো অনেক কিছু জানা বাকি থেকে গেছে তার। এখনো এই জীবনের অনেক রহস্য উন্মোচন করেনি তার মুখ। এখনো অনেকটা পথ তাকে হাঁটতে হবে একাকিনী।
এখন আর বাড়ী ফিরে এসে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না বিপাশার। সে শুধু ভাবে কখন ভোর হবে , আবার সে চৌধুরী ভিলাতে পা দেবে। গতকাল রাতে যে সমস্ত সংলাপ অসমাপ্ত লিখে এসেছিলো সেগুলো শেষ করবে। এক শিল্পীর মতো সকাল থেকে রঙের পর রঙ দিয়ে সে এঁকেছে চৌধুরী ভিলার এক অসমাপ্ত ছবি। তাতে এখনও সে চোখের পরশ দেয়নি, এখনো প্রাণের সঞ্চার ঘটায়নি, এবার সবটুকু শেষ করতে হবে তাকে।
ভাবনায় বিভোর বিপাশার সম্বিত ফেরে ফোনের ক্রিং ক্রিং আওয়াজে। ফোন করেছে নীল। সে বলে - " বিপাশা, তোমার অভিযান কেমন হয়েছে? ভয় নেই, কাল থেকে আমি থাকবো তোমার সঙ্গে। কাল থেকেই জমজমাট হয়ে উঠবে চৌধুরী ভিলা। কাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে পড়ছেন অনাবাসী আশুতোষ, সঙ্গে তাঁর অতি আধুনিকা স্ত্রী মহুয়া এবং সদ্য কৈশোর অতিক্রম করা বছর উনিশের লিসা। আর জামশেদপুর থেকে আসছেন শিবতোষ , মোনালি ও তাদের পুত্র সুকান্ত। এদিকে দীপ্তেন্দু যোগ দেবেন সান্ধ্যকালীন চায়ের বা ককটেলের আসরে।
কাল থেকে বদলে যাবে চৌধুরী ভিলার পরিবেশ। যাঁরা আসছেন ওঁরা ক'দিন হৃদয়ের অনেক উত্তাপ এবং ভালোবাসা জমা করবেন চৌধুরী ভিলার অভ্যন্তরে। তার আগে বিপাশা তোমাকে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে। কাল একেবারে সকালে তুমি ঘুম ভাঙাবে রূপকথার , তাকে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলবে ম্যাডাম আপনি অবিবাহিতা , গান করেন এবং ভারতনাট্যমের একজন গুনী শিল্পী। আপনি হতে পারেন আমার এই চিত্রনাট্যের সবচেয়ে বিস্ফোরক চরিত্র। অনুগ্রহ করে আপনি কি আমাকে এক ঘন্টা সময় দেবেন?
আমার জানতে ইচ্ছে করছে এতো সুন্দরী ও আধুনিকা আপনি , কিন্তু কিভাবে চৌধুরী ভিলার এই প্রাগৈতিহাসিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে আছেন এখনো ? আপনার কি কখনো বিদ্রোহিনী হতে ইচ্ছে করে না? কখনো মনে হয় না যদি এইভাবে এখানে আটকে থাকতে না হতো , তাহলে আরো বেশি বিস্তৃত হতো আপনার আকাশ ? আপনার সেই সময়কার প্রতিদ্বন্দ্বিনীরা যারা আপনার দিকে করুণা ছুঁড়ে দেয় তাদের সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে আপনি চলে যেতেন ?
তোমাকে কাল খুব সকালেই এই চ্যালেঞ্জটা পূরণ করতে হবে। সকলে চলে এলে তুমি কিন্তু আর সময় পাবে না। রূপকথা তখন কিন্তু নিজেকে একটা খোলসে ঢেকে ফেলবে। তুমি তখন আসল সত্যটা জানতে পারবে না। "
একটানা এতগুলো কথা বলে থামলো নীল। তারপর বললো , " আজ অনেক রাত হলো। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল অনেক সকালে তোমাকে উঠতে হবে। "
বিপাশা খাওয়াদাওয়া সেরে বালিশে মাথা দিলেও ঘুম আসে না চোখে। এভাবেই আধা ঘুম ও আধা জাগরণে কেটে যায় রাতটা।
তারপর দে দৌড় , এসে থামে রূপকথার ঘরে। তখন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে রূপকথা। তার দু'চোখে তখনো অনেক স্বপ্ন লেগে আছে। তার ঘুম ভাঙা শরীরে তখনো একটু আলস্য জড়িয়ে রয়েছে।
আপনি বা তুমি , কি বলে সম্বোধন করবে, প্রায় সমবয়সিনী এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটিকে , যখন এসব কথাই ভাবছে বিপাশা , তখন হঠাৎ সে শুনতে পায় , তার হাসির হিল্লোল এবং রূপকথার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে ফুটে উঠেছে বন্ধুত্বের আহ্বান। সে বিপাশার দিকে দু'হাত বাড়িয়ে বলে - " তুমি আমাকে তুমি করেই বলতে পারো , হয়তো , তোমার থেকে বেশী বড় হবো না।"
এক মুহূর্তের মধ্যেই হারিয়ে যায় অপরিচিতির বাঁধন। বিপাশা রূপকথার সুন্দর করে সাজানো ঘরে বসে বাইরের ফুলের টবগুলোকে দেখতে থাকে, টবেতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলে এসেছে যৌবন।
রূপকথা বলে - "ফুলচর্চা আমার অবসেশান। যখনই সময় পাই তখন কথা বলি আমার প্রিয় গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকার সাথে।"
-- "এত কিছু করে তুমি এতো সময় পাও কোথা থেকে?"
রূপকথা বলে -- " বিপাশা, আরো অনেক কিছু করতে হবে আমাকে। যখন আমি নাচি তখন মনে হয় অনেক কিছু করতে পারিনি আমি। সত্যিই এই রূপকথা চৌধুরী , চৌধুরী ভিলার এক জীবন্ত বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।"
এমন সময় চা নিয়ে ঘরে ঢোকে মালতী। সে বলে - " মেজদি , বড়ো দাদাবাবু চলে এসেছে। তুমি একবার নীচে আসবে না?"
বিপাশা শুনতে পেয়েছে নীচে কারা যেন হৈচৈ করছে। সে মালতীর কথায় বুঝতে পারে বাড়িতে পা রেখেছেন রাজনারায়ণ বাবুর বড় ছেলে আশুতোষ চৌধুরী, বছর চল্লিশের সেই অনাবাসী ভারতীয়টি , যিনি বহুদিন বাদে প্রাচ্য দেশের যাত্রী হয়েছেন।
তবুও বিপাশা রূপকথার কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করে না। বুঝতে পেরেছে সে , এই মেয়েটির নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে , আছে অনুপম ব্যক্তিত্ব। হয়তো , এভাবে সকলের সামনে অনায়াসে সে ভেঙে পড়তে চায় না।
রূপকথা বললো -- " তুমি চা খেতে খেতে তোমার যা প্রশ্ন তা গুছিয়ে জিজ্ঞেস করো আমাকে। আমি তো মনে মনে অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম আমার এই দিনযাপন, সুখ-দুঃখ , পুরুষ জাতটার প্রতি আমার বিতৃষ্ণার কারণ সব কিছু যদি কারুর কাছে অকপটে বলতে পারতাম তাহলে বুক থেকে জগদ্দল একটা পাথর নেমে যেত।
লক্ষ্মীটি বিপাশা, যা কিছু শুনবে আমার মুখ থেকে তার সব কিছু ভুলে যেও কেমন। ও তোমার এই ছোট্ট যন্ত্রটাতো আমার সব কথা রেকর্ড করে রাখবে। বিপাশা, তোমাকে আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারি তো ? তোমাকে আমার জীবনের সব গোপন কথা খুলে বলবো কিন্তু তুমি সব কথা সবাইকে শোনাতে পারবে না। যেটুকু না জানালেই নয় সেটুকুই জানাবে। "
বিপাশা তখন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে , " রূপকথা , এই পৃথিবীতে বিশ্বাস না থাকলে কি করে বাঁচবে বলো ?"
মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় রূপকথার শরীরি ভাষা। সে কেঁপে কেঁপে উঠছে একটা আশ্চর্য ভয়ে , দু'হাতে মুখ ঢেকে প্রায় আর্তনাদের সুরে রূপকথা বলে চলে, "বিপাশা, বিশ্বাস! তুমি বিশ্বাসের কথা বলছো!! এই বিশ্বাস করতে গিয়েই আমি জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুলটা করেছি। যতবার আলো ভেবে আমি হাত দিয়েছি, আগুনে পুড়ে গেছে শরীর। যতবার আমি ছুটে গেছি সকালের সূর্যের কাছে , একটুকু উষ্ণতার আশায় , বহ্নিশিখা জ্বলে উঠে পুড়িয়ে ছারখার করেছে আমার মনটাকে। শোনো, তোমাকে প্রথম দেখাতেই আমার মনে হয়েছে তুমি যেন একেবারে অন্যরকম। তোমার হৃদয় আছে, বোধহয় আবেগও আছে। তুমি হয়তো আমার সবকিছু বুঝতে পারবে।"
বিপাশা উঠে যায়। তার ছোট্ট টেপরেকর্ডারটা অন করে দেয়। তারপর তাকিয়ে থাকে তারই প্রায় সমবয়সী অসামান্য লাবণ্যবতী যুবতীটির দিকে। রাত পোশাকে কি অনন্যা রূপকথা। পাতলা রাত পোশাকে তার দেহের সমস্ত বাঁক, চড়াই উৎরাই সব কিছু বোঝা যাচ্ছে। মাদকতাময় দেহসৌষ্ঠবের অধিকারিণী এই যুবতী। ভেতরে অন্তর্বাস না থাকায় পীনোন্নত স্তনদুটির বৃন্তদুটিও রাত পোশাকের ওপর দিয়েই ফুলের কুঁড়ির মতো ফুটে আছে। রূপকথার দেহসুধা বিপাশাকেই চুম্বকের মতো টানছে, বিপাশা ভাবে তাহলে পুরুষদের কি অবস্থা হয়!
এই মুহূর্তের প্রসাধনহীন রূপকথা যদি এতটা আকর্ষণীয় হয় তাহলে যখন সেজে ওঠে মেয়েটি , ভারতনাট্যমের নর্তকী হয়ে , যখন সে চোখের কোণে সযত্নে টানে কাজলরেখা, গাল দুটি আরো একটু লালাভ করে, হাতে করে মেহেন্দির কারুকাজ, যখন সে কৃত্রিম চুলের ফণাটিকে অনেকটা নামিয়ে দেয়, যখন সে শিথিল কবরীতে বাঁধে জুঁইয়ের মালা , তখন কেমন দেখায় তাকে? তখন কি লাস্যে বিভূষিতা হয় রূপকথা ? সে রূপ বিপাশা দেখেনি , তবে কল্পনার দৃষ্টি দিয়ে সে বুঝতে পারে রূপকথার সেই লাস্যময়ী রূপ পুরুষ দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তোলে। মনে হয় বিপাশার পৃথিবীর বুকে এখনো এতরূপ লুকিয়ে আছে , সেটা রূপকথার সঙ্গে দেখা না হলে জানতে পারতো না।
রূপকথা বলতে শুরু করে - বিপাশা , কোথা থেকে শুরু করি বলো তো ? আমার মনে হয় , যে মুহূর্তে মেয়েরা প্রথম যুবতী হয়ে ওঠে , তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তার গল্পগাথা। প্রথম কাকে আমি দিয়েছিলাম সবকিছু, তোমার কাছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তিনি হলেন আমার গান ও নাচের গুরু নীলেশদা। হয়তো খবরের কাগজের পাতায় তাঁর নাম দেখেছো তুমি? মাঝে মাঝে ট্রুপ নিয়ে এদিকে ওদিকে ছুটে যান তিনি। টিভির পর্দাতেও মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে তাঁর মুখ।
তুমি বুঝতে পারছো এই পরিবারের মেয়েদের রক্ষণশীলতার শিকল পরতে হয় পায়ে। নেহাত আমার বাবা বিদ্রোহী দুর্বিনীত, এ জীবনে অনেক দুঃসাহসিক কাজ তিনি অনায়াসে করেছেন। বাবাই আমাকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন নীলেশদার ড্যান্স অ্যাকেডেমিতে। সেই থেকেই পায়ে নূপুর বেঁধেছি আমি। আমি ভেবেছি, একদিন আমিও অনেকের সামনে নেচে উঠবো, সকলে প্রশংসায় ভরিয়ে দেবে আমাকে।
নীলেশদা তখন সবে বিবাহ বিচ্ছিন্ন, সেই সময় হঠাৎ অধিকার করে বসেছিলেন আমাকে এবং এক অসংযমী মুহূর্তে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন আমার মন, আমার শরীর করেছিলেন অশুচি।
তবুও তোমাকে গোপনে বলে রাখি , আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে নীলেশদার বাড়িতে একটা নাচের রিহার্সালের পর আমার কুমারীত্ব হরণ করেছিলেন নীলেশদা। মাথাটা অবশ হয়ে গেছিল। একটা ঝিমঝিম অনুভূতি সমস্ত শরীরে। তারপর, ভীষণ নির্ভার মনে হয়েছে নিজেকে।
আমি চেয়েছিলাম ঐ কলঙ্কিত পুরুষটির হাতেই তুলে দিতে এ জীবনের সব কিছু। কিন্তু কি আশ্চর্য নীলেশদা এক কামুক ও লম্পট পুরুষ। কোনো এক নারীকেই শেষ পর্যন্ত সমর্পণ করতে পারে না তার হৃদয়। সেটা উপলব্ধি করার পর থেকেই নীলেশদার সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি শোনা গেছে আরো একটি মেয়ের একই রকম সর্বনাশ করেছে নীলেশদা। মেয়েটি আমার কাছে এসে সব বলে গেছে। সে এসেছিল আমার কাছে নীলেশদার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য। কিন্তু লোকলজ্জা ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে আমি তার সঙ্গ দিতে পারিনি। কিন্তু মেয়েটা আমার মতো হরিণী নয়। বাঘিনীর গর্জন করে উঠেছে সে। হয়তো , তুমি বা তোমার সাংবাদিক বন্ধুরা শুনে ফেলেছো ঘটনাটা। খুব গোপনে তদন্ত চলছে , এখনো শেষ হয়নি। তবে মনে হয় নীলেশদার এবার আর নিস্তার নেই, জেলের ভাত তাকে খেতেই হবে।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রূপকথা একটু থামে। আর বিপাশা ভাবতে বসে এই নিষ্পাপতম সুন্দরীর ফুলের মতো দেহেও বিষাক্ত কীট আক্রমণ করেছে। তার কোমল নিম্ননাভিতে রয়েছে পুরুষ ফলার পরশ। এত বড়ো ঘটনাটা রূপকথা বাড়ির লোকের কাছেও গোপন করে গেছে, কিন্তু তার কাছে নিকটতম বন্ধুর মতো স্বীকার করেছে তার জীবনের গোপনতম সত্যটা। সে মনে মনে ধন্যবাদ জানায় নীলকে। আর ভাবে নীল যদি তার অফিসে বসে কাটাছেঁড়া না করতো চিত্রনাট্যখানা , তাহলে কি আজ বিপাশা একাকী প্রবেশ করতো চৌধুরী ভিলাতে এবং দেখতে পেতো কি সন্ধ্যার নীড়ে যারা ফিরে আসে তারা ডানাতে কি বহন করে আনে ?
ধন্যবাদ নীল। ধন্যবাদ এই অভিযানে সাথী হিসেবে সুযোগ দেওয়ার জন্য। মনে মনে উচ্চারণ করে বিপাশা আর দেখে ঘরে ঢুকে পড়েছে সবেমাত্র কৈশোর অতিক্রম করা এক কন্যা , যার পায়ের ব্রেচেস, ঈষৎ ফাঁপানো লালচে চুল , ম্যানিকিওর করা হাতের নখ , বলে দিচ্ছে সে দূর দেশবাসিনী।
মেয়েটি এগিয়ে এসে মিষ্টি হেসে রূপকথার হাত ধরে বলে - হাই আন্টি , কত দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলো তো ?
রূপকথা আগন্তুক মেয়েটির দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে বলে - লিসা এ কবছরে একেবারে লেডি হয়ে উঠেছিস তুই ?
এবার লিসা বিপাশার দিকে ফিরে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে - আপনিই কি সেই লেডি যে দাদুর কথা মতো ভিডিও অ্যালবাম তৈরি করছে ? নীচে আপনার কথা শুনলাম।
বিপাশা একটু হেসে বলে - তুমিই তাহলে লিসা। রাজনারায়ণ বাবুর আদরের নাতনি। তাই নয় কি ?
লিসা এবার বেশ জোড়ে হেসে ওঠে। ভাঙতে থাকে তার শরীর, বয়সের তুলনায় তার শরীরের বাঁকগুলো অনেক বেশি স্পষ্ট। অবাক হয় বিপাশা , এই বয়সেই মেয়েটা শিখেছে দুরন্ত ছলাকলা। হয়তো ওদেশে এখনই শরীরের সুখ চেখে ফেলেছে। সুতরাং এই মেয়েটির সঙ্গেও বেশ কিছু নিভৃত প্রহর তাকে কাটাতে হবে। জানতে হবে সদ্য কৈশোর পেরোনো এই কন্যাটির মনের গোপন কথা।
।।পঞ্চম অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ সম্পূর্ণ।।
রূপকথার উপাখ্যান
পরিচ্ছেদ - ১ রূপকথার সাক্ষাৎকার
নিঃস্তব্ধে পদ্মাবতীর ঘরে বসেছিলো বিপাশা। নিশ্চুপ হয়ে গেছেন পদ্মাবতী। ওনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বোধহয় এই চোখের জলে তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে চাইছেন। এমন সময় সেই ঘরে ঢোকে মালতী। সেই বিপাশাকে এই ঘরে নিয়ে এসেছিলো। সে বললো - " বিপাশাদি , এখানে বেশীক্ষণ থেকে কি-ই বা আর করবেন। দেখতেই তো পাচ্ছেন মানুষটা শুয়ে শুয়ে তাঁর মৃত্যুর দিন গুনছেন।"
তবুও বিপাশার মনে হয় , আরো কিছুটা সময় যদি সে থাকতে পারে এখানে, যদি সে দেখতে পারে কিভাবে মৃত্যু এসে তার সীমাহীন উল্লাসে পদ্মাবতীর ফুলের মতো জীবটাকে ক্ষত-বিক্ষত করে তাকে জীবন বিমুখ করে তুলেছে, তাহলে জীবনের পাতা আরো বেশী সমৃদ্ধশালী হবে তার।
সে ভাবে , এখনো অনেক কিছু জানা বাকি থেকে গেছে তার। এখনো এই জীবনের অনেক রহস্য উন্মোচন করেনি তার মুখ। এখনো অনেকটা পথ তাকে হাঁটতে হবে একাকিনী।
এখন আর বাড়ী ফিরে এসে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না বিপাশার। সে শুধু ভাবে কখন ভোর হবে , আবার সে চৌধুরী ভিলাতে পা দেবে। গতকাল রাতে যে সমস্ত সংলাপ অসমাপ্ত লিখে এসেছিলো সেগুলো শেষ করবে। এক শিল্পীর মতো সকাল থেকে রঙের পর রঙ দিয়ে সে এঁকেছে চৌধুরী ভিলার এক অসমাপ্ত ছবি। তাতে এখনও সে চোখের পরশ দেয়নি, এখনো প্রাণের সঞ্চার ঘটায়নি, এবার সবটুকু শেষ করতে হবে তাকে।
ভাবনায় বিভোর বিপাশার সম্বিত ফেরে ফোনের ক্রিং ক্রিং আওয়াজে। ফোন করেছে নীল। সে বলে - " বিপাশা, তোমার অভিযান কেমন হয়েছে? ভয় নেই, কাল থেকে আমি থাকবো তোমার সঙ্গে। কাল থেকেই জমজমাট হয়ে উঠবে চৌধুরী ভিলা। কাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে পড়ছেন অনাবাসী আশুতোষ, সঙ্গে তাঁর অতি আধুনিকা স্ত্রী মহুয়া এবং সদ্য কৈশোর অতিক্রম করা বছর উনিশের লিসা। আর জামশেদপুর থেকে আসছেন শিবতোষ , মোনালি ও তাদের পুত্র সুকান্ত। এদিকে দীপ্তেন্দু যোগ দেবেন সান্ধ্যকালীন চায়ের বা ককটেলের আসরে।
কাল থেকে বদলে যাবে চৌধুরী ভিলার পরিবেশ। যাঁরা আসছেন ওঁরা ক'দিন হৃদয়ের অনেক উত্তাপ এবং ভালোবাসা জমা করবেন চৌধুরী ভিলার অভ্যন্তরে। তার আগে বিপাশা তোমাকে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে। কাল একেবারে সকালে তুমি ঘুম ভাঙাবে রূপকথার , তাকে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলবে ম্যাডাম আপনি অবিবাহিতা , গান করেন এবং ভারতনাট্যমের একজন গুনী শিল্পী। আপনি হতে পারেন আমার এই চিত্রনাট্যের সবচেয়ে বিস্ফোরক চরিত্র। অনুগ্রহ করে আপনি কি আমাকে এক ঘন্টা সময় দেবেন?
আমার জানতে ইচ্ছে করছে এতো সুন্দরী ও আধুনিকা আপনি , কিন্তু কিভাবে চৌধুরী ভিলার এই প্রাগৈতিহাসিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে আছেন এখনো ? আপনার কি কখনো বিদ্রোহিনী হতে ইচ্ছে করে না? কখনো মনে হয় না যদি এইভাবে এখানে আটকে থাকতে না হতো , তাহলে আরো বেশি বিস্তৃত হতো আপনার আকাশ ? আপনার সেই সময়কার প্রতিদ্বন্দ্বিনীরা যারা আপনার দিকে করুণা ছুঁড়ে দেয় তাদের সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে আপনি চলে যেতেন ?
তোমাকে কাল খুব সকালেই এই চ্যালেঞ্জটা পূরণ করতে হবে। সকলে চলে এলে তুমি কিন্তু আর সময় পাবে না। রূপকথা তখন কিন্তু নিজেকে একটা খোলসে ঢেকে ফেলবে। তুমি তখন আসল সত্যটা জানতে পারবে না। "
একটানা এতগুলো কথা বলে থামলো নীল। তারপর বললো , " আজ অনেক রাত হলো। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল অনেক সকালে তোমাকে উঠতে হবে। "
বিপাশা খাওয়াদাওয়া সেরে বালিশে মাথা দিলেও ঘুম আসে না চোখে। এভাবেই আধা ঘুম ও আধা জাগরণে কেটে যায় রাতটা।
তারপর দে দৌড় , এসে থামে রূপকথার ঘরে। তখন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে রূপকথা। তার দু'চোখে তখনো অনেক স্বপ্ন লেগে আছে। তার ঘুম ভাঙা শরীরে তখনো একটু আলস্য জড়িয়ে রয়েছে।
আপনি বা তুমি , কি বলে সম্বোধন করবে, প্রায় সমবয়সিনী এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটিকে , যখন এসব কথাই ভাবছে বিপাশা , তখন হঠাৎ সে শুনতে পায় , তার হাসির হিল্লোল এবং রূপকথার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে ফুটে উঠেছে বন্ধুত্বের আহ্বান। সে বিপাশার দিকে দু'হাত বাড়িয়ে বলে - " তুমি আমাকে তুমি করেই বলতে পারো , হয়তো , তোমার থেকে বেশী বড় হবো না।"
এক মুহূর্তের মধ্যেই হারিয়ে যায় অপরিচিতির বাঁধন। বিপাশা রূপকথার সুন্দর করে সাজানো ঘরে বসে বাইরের ফুলের টবগুলোকে দেখতে থাকে, টবেতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলে এসেছে যৌবন।
রূপকথা বলে - "ফুলচর্চা আমার অবসেশান। যখনই সময় পাই তখন কথা বলি আমার প্রিয় গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকার সাথে।"
-- "এত কিছু করে তুমি এতো সময় পাও কোথা থেকে?"
রূপকথা বলে -- " বিপাশা, আরো অনেক কিছু করতে হবে আমাকে। যখন আমি নাচি তখন মনে হয় অনেক কিছু করতে পারিনি আমি। সত্যিই এই রূপকথা চৌধুরী , চৌধুরী ভিলার এক জীবন্ত বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।"
এমন সময় চা নিয়ে ঘরে ঢোকে মালতী। সে বলে - " মেজদি , বড়ো দাদাবাবু চলে এসেছে। তুমি একবার নীচে আসবে না?"
বিপাশা শুনতে পেয়েছে নীচে কারা যেন হৈচৈ করছে। সে মালতীর কথায় বুঝতে পারে বাড়িতে পা রেখেছেন রাজনারায়ণ বাবুর বড় ছেলে আশুতোষ চৌধুরী, বছর চল্লিশের সেই অনাবাসী ভারতীয়টি , যিনি বহুদিন বাদে প্রাচ্য দেশের যাত্রী হয়েছেন।
তবুও বিপাশা রূপকথার কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করে না। বুঝতে পেরেছে সে , এই মেয়েটির নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে , আছে অনুপম ব্যক্তিত্ব। হয়তো , এভাবে সকলের সামনে অনায়াসে সে ভেঙে পড়তে চায় না।
রূপকথা বললো -- " তুমি চা খেতে খেতে তোমার যা প্রশ্ন তা গুছিয়ে জিজ্ঞেস করো আমাকে। আমি তো মনে মনে অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম আমার এই দিনযাপন, সুখ-দুঃখ , পুরুষ জাতটার প্রতি আমার বিতৃষ্ণার কারণ সব কিছু যদি কারুর কাছে অকপটে বলতে পারতাম তাহলে বুক থেকে জগদ্দল একটা পাথর নেমে যেত।
লক্ষ্মীটি বিপাশা, যা কিছু শুনবে আমার মুখ থেকে তার সব কিছু ভুলে যেও কেমন। ও তোমার এই ছোট্ট যন্ত্রটাতো আমার সব কথা রেকর্ড করে রাখবে। বিপাশা, তোমাকে আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারি তো ? তোমাকে আমার জীবনের সব গোপন কথা খুলে বলবো কিন্তু তুমি সব কথা সবাইকে শোনাতে পারবে না। যেটুকু না জানালেই নয় সেটুকুই জানাবে। "
বিপাশা তখন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে , " রূপকথা , এই পৃথিবীতে বিশ্বাস না থাকলে কি করে বাঁচবে বলো ?"
মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় রূপকথার শরীরি ভাষা। সে কেঁপে কেঁপে উঠছে একটা আশ্চর্য ভয়ে , দু'হাতে মুখ ঢেকে প্রায় আর্তনাদের সুরে রূপকথা বলে চলে, "বিপাশা, বিশ্বাস! তুমি বিশ্বাসের কথা বলছো!! এই বিশ্বাস করতে গিয়েই আমি জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুলটা করেছি। যতবার আলো ভেবে আমি হাত দিয়েছি, আগুনে পুড়ে গেছে শরীর। যতবার আমি ছুটে গেছি সকালের সূর্যের কাছে , একটুকু উষ্ণতার আশায় , বহ্নিশিখা জ্বলে উঠে পুড়িয়ে ছারখার করেছে আমার মনটাকে। শোনো, তোমাকে প্রথম দেখাতেই আমার মনে হয়েছে তুমি যেন একেবারে অন্যরকম। তোমার হৃদয় আছে, বোধহয় আবেগও আছে। তুমি হয়তো আমার সবকিছু বুঝতে পারবে।"
বিপাশা উঠে যায়। তার ছোট্ট টেপরেকর্ডারটা অন করে দেয়। তারপর তাকিয়ে থাকে তারই প্রায় সমবয়সী অসামান্য লাবণ্যবতী যুবতীটির দিকে। রাত পোশাকে কি অনন্যা রূপকথা। পাতলা রাত পোশাকে তার দেহের সমস্ত বাঁক, চড়াই উৎরাই সব কিছু বোঝা যাচ্ছে। মাদকতাময় দেহসৌষ্ঠবের অধিকারিণী এই যুবতী। ভেতরে অন্তর্বাস না থাকায় পীনোন্নত স্তনদুটির বৃন্তদুটিও রাত পোশাকের ওপর দিয়েই ফুলের কুঁড়ির মতো ফুটে আছে। রূপকথার দেহসুধা বিপাশাকেই চুম্বকের মতো টানছে, বিপাশা ভাবে তাহলে পুরুষদের কি অবস্থা হয়!
এই মুহূর্তের প্রসাধনহীন রূপকথা যদি এতটা আকর্ষণীয় হয় তাহলে যখন সেজে ওঠে মেয়েটি , ভারতনাট্যমের নর্তকী হয়ে , যখন সে চোখের কোণে সযত্নে টানে কাজলরেখা, গাল দুটি আরো একটু লালাভ করে, হাতে করে মেহেন্দির কারুকাজ, যখন সে কৃত্রিম চুলের ফণাটিকে অনেকটা নামিয়ে দেয়, যখন সে শিথিল কবরীতে বাঁধে জুঁইয়ের মালা , তখন কেমন দেখায় তাকে? তখন কি লাস্যে বিভূষিতা হয় রূপকথা ? সে রূপ বিপাশা দেখেনি , তবে কল্পনার দৃষ্টি দিয়ে সে বুঝতে পারে রূপকথার সেই লাস্যময়ী রূপ পুরুষ দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তোলে। মনে হয় বিপাশার পৃথিবীর বুকে এখনো এতরূপ লুকিয়ে আছে , সেটা রূপকথার সঙ্গে দেখা না হলে জানতে পারতো না।
রূপকথা বলতে শুরু করে - বিপাশা , কোথা থেকে শুরু করি বলো তো ? আমার মনে হয় , যে মুহূর্তে মেয়েরা প্রথম যুবতী হয়ে ওঠে , তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তার গল্পগাথা। প্রথম কাকে আমি দিয়েছিলাম সবকিছু, তোমার কাছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তিনি হলেন আমার গান ও নাচের গুরু নীলেশদা। হয়তো খবরের কাগজের পাতায় তাঁর নাম দেখেছো তুমি? মাঝে মাঝে ট্রুপ নিয়ে এদিকে ওদিকে ছুটে যান তিনি। টিভির পর্দাতেও মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে তাঁর মুখ।
তুমি বুঝতে পারছো এই পরিবারের মেয়েদের রক্ষণশীলতার শিকল পরতে হয় পায়ে। নেহাত আমার বাবা বিদ্রোহী দুর্বিনীত, এ জীবনে অনেক দুঃসাহসিক কাজ তিনি অনায়াসে করেছেন। বাবাই আমাকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন নীলেশদার ড্যান্স অ্যাকেডেমিতে। সেই থেকেই পায়ে নূপুর বেঁধেছি আমি। আমি ভেবেছি, একদিন আমিও অনেকের সামনে নেচে উঠবো, সকলে প্রশংসায় ভরিয়ে দেবে আমাকে।
নীলেশদা তখন সবে বিবাহ বিচ্ছিন্ন, সেই সময় হঠাৎ অধিকার করে বসেছিলেন আমাকে এবং এক অসংযমী মুহূর্তে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন আমার মন, আমার শরীর করেছিলেন অশুচি।
তবুও তোমাকে গোপনে বলে রাখি , আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে নীলেশদার বাড়িতে একটা নাচের রিহার্সালের পর আমার কুমারীত্ব হরণ করেছিলেন নীলেশদা। মাথাটা অবশ হয়ে গেছিল। একটা ঝিমঝিম অনুভূতি সমস্ত শরীরে। তারপর, ভীষণ নির্ভার মনে হয়েছে নিজেকে।
আমি চেয়েছিলাম ঐ কলঙ্কিত পুরুষটির হাতেই তুলে দিতে এ জীবনের সব কিছু। কিন্তু কি আশ্চর্য নীলেশদা এক কামুক ও লম্পট পুরুষ। কোনো এক নারীকেই শেষ পর্যন্ত সমর্পণ করতে পারে না তার হৃদয়। সেটা উপলব্ধি করার পর থেকেই নীলেশদার সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি শোনা গেছে আরো একটি মেয়ের একই রকম সর্বনাশ করেছে নীলেশদা। মেয়েটি আমার কাছে এসে সব বলে গেছে। সে এসেছিল আমার কাছে নীলেশদার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য। কিন্তু লোকলজ্জা ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে আমি তার সঙ্গ দিতে পারিনি। কিন্তু মেয়েটা আমার মতো হরিণী নয়। বাঘিনীর গর্জন করে উঠেছে সে। হয়তো , তুমি বা তোমার সাংবাদিক বন্ধুরা শুনে ফেলেছো ঘটনাটা। খুব গোপনে তদন্ত চলছে , এখনো শেষ হয়নি। তবে মনে হয় নীলেশদার এবার আর নিস্তার নেই, জেলের ভাত তাকে খেতেই হবে।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রূপকথা একটু থামে। আর বিপাশা ভাবতে বসে এই নিষ্পাপতম সুন্দরীর ফুলের মতো দেহেও বিষাক্ত কীট আক্রমণ করেছে। তার কোমল নিম্ননাভিতে রয়েছে পুরুষ ফলার পরশ। এত বড়ো ঘটনাটা রূপকথা বাড়ির লোকের কাছেও গোপন করে গেছে, কিন্তু তার কাছে নিকটতম বন্ধুর মতো স্বীকার করেছে তার জীবনের গোপনতম সত্যটা। সে মনে মনে ধন্যবাদ জানায় নীলকে। আর ভাবে নীল যদি তার অফিসে বসে কাটাছেঁড়া না করতো চিত্রনাট্যখানা , তাহলে কি আজ বিপাশা একাকী প্রবেশ করতো চৌধুরী ভিলাতে এবং দেখতে পেতো কি সন্ধ্যার নীড়ে যারা ফিরে আসে তারা ডানাতে কি বহন করে আনে ?
ধন্যবাদ নীল। ধন্যবাদ এই অভিযানে সাথী হিসেবে সুযোগ দেওয়ার জন্য। মনে মনে উচ্চারণ করে বিপাশা আর দেখে ঘরে ঢুকে পড়েছে সবেমাত্র কৈশোর অতিক্রম করা এক কন্যা , যার পায়ের ব্রেচেস, ঈষৎ ফাঁপানো লালচে চুল , ম্যানিকিওর করা হাতের নখ , বলে দিচ্ছে সে দূর দেশবাসিনী।
মেয়েটি এগিয়ে এসে মিষ্টি হেসে রূপকথার হাত ধরে বলে - হাই আন্টি , কত দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলো তো ?
রূপকথা আগন্তুক মেয়েটির দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে বলে - লিসা এ কবছরে একেবারে লেডি হয়ে উঠেছিস তুই ?
এবার লিসা বিপাশার দিকে ফিরে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে - আপনিই কি সেই লেডি যে দাদুর কথা মতো ভিডিও অ্যালবাম তৈরি করছে ? নীচে আপনার কথা শুনলাম।
বিপাশা একটু হেসে বলে - তুমিই তাহলে লিসা। রাজনারায়ণ বাবুর আদরের নাতনি। তাই নয় কি ?
লিসা এবার বেশ জোড়ে হেসে ওঠে। ভাঙতে থাকে তার শরীর, বয়সের তুলনায় তার শরীরের বাঁকগুলো অনেক বেশি স্পষ্ট। অবাক হয় বিপাশা , এই বয়সেই মেয়েটা শিখেছে দুরন্ত ছলাকলা। হয়তো ওদেশে এখনই শরীরের সুখ চেখে ফেলেছে। সুতরাং এই মেয়েটির সঙ্গেও বেশ কিছু নিভৃত প্রহর তাকে কাটাতে হবে। জানতে হবে সদ্য কৈশোর পেরোনো এই কন্যাটির মনের গোপন কথা।
।।পঞ্চম অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ সম্পূর্ণ।।