01-04-2023, 08:23 PM
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি বিছানায় শোয়া , অপরিচিত বিছানা, কোথায় আছি বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগলো । প্রথম যে কথা মনে এলো সেটি হচ্ছে “আমি সে মানুষ নই” । কথাটা বেশ অধভুত তাই না ? একজন অপরিচিত মানুষের মুখে শুনেও ঠিক হজম করতে পারছি না ।
মতিন প্রথম আমার জ্ঞান ফেরা টের পেল । অমনি দ্রুত উঠে এলো আমার কাছে ঝুকে জিজ্ঞাস করলো “এখন কেমন আছিস?” উত্তরে কিছু বললাম না , সুধু মুচকি হাসলাম একটু । এই হাসির অর্থ ঠিক আছে সব কিছু । অবশ্য ঠিক না থাকার কিছু নেই । এই ঘটনার পর এই বাড়িতে আমার ঠিক বেঠিক বলে কিছু নেই । আশেপাশে একবার তাকালাম , মতিন ছাড়াও সফিকুল সাহেব কে দেখলাম । প্রথম দিন লোকটার চোখে মুখে যে কোমল সারল্য দেখেছিলাম সেটা আবার ফিরে এসেছে । আমাকে তাকাতে দেখে হাসিমুখে জিজ্ঞাস করলো “ ভাই সাহবে এখন কেমন বোধ করছেন?”
আমি সফিকুল সাহেব কেও একি ধরনের হাসি দিয়ে উত্তর দিলাম । উনি উঠে এলেন , উনার একটা হাত আমার কপালে রাখলেন। তারপর বিড়বিড় করে কিছু আওড়ালেন , শেষে আমার শরীরে ফু দিয়ে দিলেন । সফিকুল সাহবের হাত বেশ শীতল। ওনার স্পর্শ বেশ ভালো লাগলো । মনে হচ্ছে আমার শরীর থেকে কিছুটা তাপ শুষে নিচ্ছে ওনার হাতের তালু । বুঝতে পারলাম জ্বর এসেছে ।
বেশ কিছুক্ষন পর সফিকুল সাহবে আমার কপাল থেকে হাত তুলে নিলেন । এমন সময় বাহিরে হট্ট গোল শুনতে পেলাম । একটা নারী কণ্ঠ বেশ উচ্চ স্বরে চেচাচ্ছে । কণ্ঠটা আমার পরিচিত , কণ্ঠটা মেজো আপার । “ আমারাও জানি সব কিছু , কি জিনিস আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেটা আমরা জানি”
এর পর নাইম শেখের গলা শুনতে পেলাম “ কথা বার্তা সাবধানে বলবেন কইয়া দিলাম , আমার মাইয়া যাই হোক মৃগী রুগির লগে বিয়া দেওনের আগে কাইট্টা নদীত ভাসাইয়া দিমু”
বুঝলাম এই হট্টগোল অনেক্ষন যাবত হচ্ছে , আমি মতিনের দিকে তাকালাম , বেচারার মুখ পাংশু হয়ে আছে । আমি তাকাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওর বুক থেকে । বুঝলাম মতিন সব কিছুই গোপন করেছে , বেচারার জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব । হয়ত মতিন ভালো মনে করেই এসব করছিলো । আমি মতিন কে কাছে ডাকলাম , বললাম “ চল , বের হই”
মতিন কোন দ্বিরুক্তি করলো না , বলল “ঠিক আছে”
এই রাতেই ভ্যান ডাকা হলো , বেশ দুর্বল লাগছিলো তাই আমি একটা ভ্যানে শুয়ে রইলাম , আমার পাশে বসে মেজো আপা । অন্য ভ্যানে মেজো দুলাভাই, সাদিক আর মতিন । ভ্যানে উঠতে সাহায্য করেছে সফিকুল সাহেব । যখন ভ্যান ছেড়ে দেবে তখন আমার হাত ধরে বলল “ ভাই সাহেব আপনি খুব ভালো মানুষ , আপনার সাথে অন্যায় করেছি , পারলে মাফ করে দিয়েন”
আমার সাথে করা সফিকুল সাহেবের কোন অন্যায়ের কথা মনে করতে পারিনি তখন । তাই উত্তর ও দেয়া হয়নি , তবে চলে আসার সময় নিলুফারের মায়ের সাথে একবার দেখা করতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো । ওই মহিলা দুবার পর্দার আড়ালে বসে আমাকে খাইয়েছেন । কিন্তু আমার প্রতি ওনার যে দরদ ছিলো সেটা পর্দা আড়াল করতে পারেনি । একবার দেখার ইচ্ছা হয়েছিলো সেই দরদ কি এখনো আছে ? অবশ্য না দেখা হয়েই ভালো হয়েছে , যদি ওই দরদ এখন না থেকে থাকে তাহলে খুব মন কষ্ট পেতাম।
ভ্যান ছাড়তেই মেজো আপা ঘ্যানর ঘ্যানর করতে শুরু করলো , কেন আমি ওদের না জানিয়ে এখানে এসেছি ? ওদের জানালে কি ওরা ব্যবস্থা করতো না ? এই সব প্রশ্ন সেই সাথে মতিনের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে ফাকে ফাকে । আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিলো , তাই বললাম “আপা একটু চুপ কর আমাকে ঘুমাতে দে” মেজো আপা আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যি চুপ করে গেলো। আর আমিও সাথে সাথে ঘুমে তলিয়ে গালাম ।
আমাকে যখন ঘুম থেকে তোলা হলো তখন একটি বাস এসে দাঁড়িয়েছে । বুঝলাম যতক্ষণ বাস না পাওয়া গেছে আমাকে ঘুম থেকে জাগানো হয় নি ভ্যান ও রেখে দিয়েছে । মেজো দুলাভাই আর সাদিক মিলে আমাকে ভ্যান থেকে তুলে দার করালেন। আমি আসে পাশে মতিন কে দেখতে পেলাম না । তাই মেজো দুলাভাইয়ের কাছে মতিনের কথা জিজ্ঞাস করতেই । উনি দুরে দাড়িয়ে থাকা মতিন কে দেখিয়ে দিলেন । বুঝালাম আমাকে এই ঝামেলায় ফেলার কারনে এতক্ষন মতিন কে বেশ কথা শুনতে হয়েছে ।
আমি মেজদুলাভাইয়ের কাছে বললাম মতিন কে ডেকে দিতে , মতিনের সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে , বিশেষ জরুরি। এতক্ষন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি একটা রহস্যের সমাধান পেয়েছি । আমি এমন একজন মানুষ কে খুঁজে পেয়েছি যে হয়ত সেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে যে মানুষ আমি হতে পারলাম না ।
মতিন আমার কাছে আসতেই আমি একা কথা বলার জন্য বাকিদের চলে যেতে বললাম । এদিকে বাসের হেল্পার খুব তাড়া দিচ্ছে।
“ মতিন তুই আমাদের সাথে যেতে পারবি না”
আমার কথা শুনেই মতিনের মুখ আরও পাংশু হয়ে গেলো । বেচারাকে দেখে খুবি লজ্জিত মনে হচ্ছে । কিন্তু কোন উত্তর দিলো না । আমি আবারো বললাম “ তুই নিলুফারদের বাড়ি যাবি” । এবার মতিনের চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠলো বলল “ তুই কি পাগল , ওই বাড়িতে যাওয়ার আর মুখ নাই আমার”
“ মুখ না থাকলে মুখ ঢেকে যা , গিয়ে সফিকুল সাহবে কে আমার কথা বলবি , বলবি আমি ওনাকে ক্ষমা করে দিতে পারি এক সর্তে , যদি সে নিলুফারের কাছে গিয়ে নিজের মনের কথা বলে”
“ মানে?” মতিন আরও অবাক হয়ে বলল , তারপর রাগে গজ গজ করতে করতে করতে বলল “ ওই ব্যাটা কত বড় ফাজিল তুই জানিস , ওই সবচেয়ে বেশি চিল্লাইয়া চল্লাইয়া বলসে তোর নাকি মৃগী রোগ আছে”
আমি একটু হাসলাম , তারপর বললাম “ বলেছে ভালো করেছে , তুই যদি নিজের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাস তাহলে যা , নাইলে আর কোনদিন আমার সামনে আসবি না, আমি যে মানুষ হতে পারবো না , সফিকুল সাহেবের সেই মানুষ হয়ে ওঠার চান্স আছে “
কথা গুলো বলে আমি বাসে উঠে গেলাম , বাকিরা আগেই উঠে গিয়েছিলো , সাদিক আমাকে বাসের দরজা থেকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো । মতিনের কথা জিজ্ঞাস করলে আমি বললাম “ ও আসবে না”
মতিন প্রথম আমার জ্ঞান ফেরা টের পেল । অমনি দ্রুত উঠে এলো আমার কাছে ঝুকে জিজ্ঞাস করলো “এখন কেমন আছিস?” উত্তরে কিছু বললাম না , সুধু মুচকি হাসলাম একটু । এই হাসির অর্থ ঠিক আছে সব কিছু । অবশ্য ঠিক না থাকার কিছু নেই । এই ঘটনার পর এই বাড়িতে আমার ঠিক বেঠিক বলে কিছু নেই । আশেপাশে একবার তাকালাম , মতিন ছাড়াও সফিকুল সাহেব কে দেখলাম । প্রথম দিন লোকটার চোখে মুখে যে কোমল সারল্য দেখেছিলাম সেটা আবার ফিরে এসেছে । আমাকে তাকাতে দেখে হাসিমুখে জিজ্ঞাস করলো “ ভাই সাহবে এখন কেমন বোধ করছেন?”
আমি সফিকুল সাহেব কেও একি ধরনের হাসি দিয়ে উত্তর দিলাম । উনি উঠে এলেন , উনার একটা হাত আমার কপালে রাখলেন। তারপর বিড়বিড় করে কিছু আওড়ালেন , শেষে আমার শরীরে ফু দিয়ে দিলেন । সফিকুল সাহবের হাত বেশ শীতল। ওনার স্পর্শ বেশ ভালো লাগলো । মনে হচ্ছে আমার শরীর থেকে কিছুটা তাপ শুষে নিচ্ছে ওনার হাতের তালু । বুঝতে পারলাম জ্বর এসেছে ।
বেশ কিছুক্ষন পর সফিকুল সাহবে আমার কপাল থেকে হাত তুলে নিলেন । এমন সময় বাহিরে হট্ট গোল শুনতে পেলাম । একটা নারী কণ্ঠ বেশ উচ্চ স্বরে চেচাচ্ছে । কণ্ঠটা আমার পরিচিত , কণ্ঠটা মেজো আপার । “ আমারাও জানি সব কিছু , কি জিনিস আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেটা আমরা জানি”
এর পর নাইম শেখের গলা শুনতে পেলাম “ কথা বার্তা সাবধানে বলবেন কইয়া দিলাম , আমার মাইয়া যাই হোক মৃগী রুগির লগে বিয়া দেওনের আগে কাইট্টা নদীত ভাসাইয়া দিমু”
বুঝলাম এই হট্টগোল অনেক্ষন যাবত হচ্ছে , আমি মতিনের দিকে তাকালাম , বেচারার মুখ পাংশু হয়ে আছে । আমি তাকাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওর বুক থেকে । বুঝলাম মতিন সব কিছুই গোপন করেছে , বেচারার জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব । হয়ত মতিন ভালো মনে করেই এসব করছিলো । আমি মতিন কে কাছে ডাকলাম , বললাম “ চল , বের হই”
মতিন কোন দ্বিরুক্তি করলো না , বলল “ঠিক আছে”
এই রাতেই ভ্যান ডাকা হলো , বেশ দুর্বল লাগছিলো তাই আমি একটা ভ্যানে শুয়ে রইলাম , আমার পাশে বসে মেজো আপা । অন্য ভ্যানে মেজো দুলাভাই, সাদিক আর মতিন । ভ্যানে উঠতে সাহায্য করেছে সফিকুল সাহেব । যখন ভ্যান ছেড়ে দেবে তখন আমার হাত ধরে বলল “ ভাই সাহেব আপনি খুব ভালো মানুষ , আপনার সাথে অন্যায় করেছি , পারলে মাফ করে দিয়েন”
আমার সাথে করা সফিকুল সাহেবের কোন অন্যায়ের কথা মনে করতে পারিনি তখন । তাই উত্তর ও দেয়া হয়নি , তবে চলে আসার সময় নিলুফারের মায়ের সাথে একবার দেখা করতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো । ওই মহিলা দুবার পর্দার আড়ালে বসে আমাকে খাইয়েছেন । কিন্তু আমার প্রতি ওনার যে দরদ ছিলো সেটা পর্দা আড়াল করতে পারেনি । একবার দেখার ইচ্ছা হয়েছিলো সেই দরদ কি এখনো আছে ? অবশ্য না দেখা হয়েই ভালো হয়েছে , যদি ওই দরদ এখন না থেকে থাকে তাহলে খুব মন কষ্ট পেতাম।
ভ্যান ছাড়তেই মেজো আপা ঘ্যানর ঘ্যানর করতে শুরু করলো , কেন আমি ওদের না জানিয়ে এখানে এসেছি ? ওদের জানালে কি ওরা ব্যবস্থা করতো না ? এই সব প্রশ্ন সেই সাথে মতিনের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে ফাকে ফাকে । আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিলো , তাই বললাম “আপা একটু চুপ কর আমাকে ঘুমাতে দে” মেজো আপা আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যি চুপ করে গেলো। আর আমিও সাথে সাথে ঘুমে তলিয়ে গালাম ।
আমাকে যখন ঘুম থেকে তোলা হলো তখন একটি বাস এসে দাঁড়িয়েছে । বুঝলাম যতক্ষণ বাস না পাওয়া গেছে আমাকে ঘুম থেকে জাগানো হয় নি ভ্যান ও রেখে দিয়েছে । মেজো দুলাভাই আর সাদিক মিলে আমাকে ভ্যান থেকে তুলে দার করালেন। আমি আসে পাশে মতিন কে দেখতে পেলাম না । তাই মেজো দুলাভাইয়ের কাছে মতিনের কথা জিজ্ঞাস করতেই । উনি দুরে দাড়িয়ে থাকা মতিন কে দেখিয়ে দিলেন । বুঝালাম আমাকে এই ঝামেলায় ফেলার কারনে এতক্ষন মতিন কে বেশ কথা শুনতে হয়েছে ।
আমি মেজদুলাভাইয়ের কাছে বললাম মতিন কে ডেকে দিতে , মতিনের সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে , বিশেষ জরুরি। এতক্ষন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি একটা রহস্যের সমাধান পেয়েছি । আমি এমন একজন মানুষ কে খুঁজে পেয়েছি যে হয়ত সেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে যে মানুষ আমি হতে পারলাম না ।
মতিন আমার কাছে আসতেই আমি একা কথা বলার জন্য বাকিদের চলে যেতে বললাম । এদিকে বাসের হেল্পার খুব তাড়া দিচ্ছে।
“ মতিন তুই আমাদের সাথে যেতে পারবি না”
আমার কথা শুনেই মতিনের মুখ আরও পাংশু হয়ে গেলো । বেচারাকে দেখে খুবি লজ্জিত মনে হচ্ছে । কিন্তু কোন উত্তর দিলো না । আমি আবারো বললাম “ তুই নিলুফারদের বাড়ি যাবি” । এবার মতিনের চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠলো বলল “ তুই কি পাগল , ওই বাড়িতে যাওয়ার আর মুখ নাই আমার”
“ মুখ না থাকলে মুখ ঢেকে যা , গিয়ে সফিকুল সাহবে কে আমার কথা বলবি , বলবি আমি ওনাকে ক্ষমা করে দিতে পারি এক সর্তে , যদি সে নিলুফারের কাছে গিয়ে নিজের মনের কথা বলে”
“ মানে?” মতিন আরও অবাক হয়ে বলল , তারপর রাগে গজ গজ করতে করতে করতে বলল “ ওই ব্যাটা কত বড় ফাজিল তুই জানিস , ওই সবচেয়ে বেশি চিল্লাইয়া চল্লাইয়া বলসে তোর নাকি মৃগী রোগ আছে”
আমি একটু হাসলাম , তারপর বললাম “ বলেছে ভালো করেছে , তুই যদি নিজের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাস তাহলে যা , নাইলে আর কোনদিন আমার সামনে আসবি না, আমি যে মানুষ হতে পারবো না , সফিকুল সাহেবের সেই মানুষ হয়ে ওঠার চান্স আছে “
কথা গুলো বলে আমি বাসে উঠে গেলাম , বাকিরা আগেই উঠে গিয়েছিলো , সাদিক আমাকে বাসের দরজা থেকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো । মতিনের কথা জিজ্ঞাস করলে আমি বললাম “ ও আসবে না”