Thread Rating:
  • 168 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
সপ্তসপ্ততি অধ্যায়



মাসাধিক কাল কেটে গেল দীপশিখার মন অস্থির।একটা ব্যাপারে মনটা তার দ্বিধা বিভক্ত।তার জীবনে মনু নেই ভাবলে চারপাশ হতে একটা হাহাকার বোধ তাকে জড়িয়ে ধরে আবার যেদিন তিনি থাকবেন না বেচারী মনু অগাধ সাগরে ভেসে যাবে,এক সম্ভাবনাময় জীবনের করুণ পরিনতির কথা ভেবে ঘুম আসে না।শুক্লা এখন কলেজে আসছে।শুক্লাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,ডাক্তার খুশী ত?
ও ভীষণ বাচ্চা ভালোবাসে।ওইতো সারাক্ষন মেয়ের দেখভাল করে।
তুমি কলেজ এসেছো এখন মেয়েকে কার কাছে রেখে এলে?
একজন আয়া রাখতে হয়েছে।সকালে আসে আমি ফিরলে চলে যায়।
দেখো তো সব সময়ের একজন কাউকে পাওয়া যায় কিনা?
শুক্লা অবাক হয়ে বলল,তুমি লোক রাখবে?
বয়স হচ্ছে টুকটাক আমাকে একটু সাহায্য করবে--।আসি আমার ক্লাস আছে।
শুক্লা তাকিয়ে থাকে দীপুদির জন্য খারাপ লাগে।বিয়ে-থা করল না একা-একাই কাটিয়ে দিল।ওর কাছে শুনেছে দীপুদির দাদার কথা।কয়েকজন সারজেনের মধ্যে একজন।শুক্লা বোস স্টাফ রুমে ঢুকে দেখল এক দিকে গৌরী সেনকে  ঘিরে কি যেন দেখছে।শুক্লা এগিয়ে গিয়ে দেখল গৌরী সেনের হাতে একটা মেয়ের ছবি দেখতে মোটামুটি আবক্ষ ছবি লম্বা কতটা বোঝা যাচ্ছে না।গৌরী সেনের মেয়ে বিটেক পাস করে চাকরি করছে।মেয়ের বিয়ের জন্য চেষ্টা করছেন।সবাইকে দেখানোর উদ্দেশ্য কারো যদি জানা শোনা কেউ থাকে।অতসী জিজ্ঞেস করলেন,কেমন ছেলে খুজছেন?
কেমন আর ওর সঙ্গে মানাবে ধরুন ডাক্তার ইঞ্জিনীয়ার কিম্বা সরকারী অফিসার--।
আরেকজন জিজ্ঞেস করেন,মাস্টার চলবে না?
কলেজের হলে দেখতে পা্রো।
এসব আলোচনায় শুক্লার মজা লাগে।সে সরে এসে এক জায়গায় বসল।
সুস্মিতা মুখার্জী বললেন,শুক্লার বরের চেনা জানা যদি কেউ থাকে--।
শুক্লা হেসে বলল,ছবি তো দেখলাম বলব ওকে।
দুজন ছাত্রী এসে দাড়াতে শুক্লা জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপার?
ম্যাম জিএস ম্যামের ক্লাস।
গৌরী সেন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,যাও ক্লাসে যাও। 
গৌরী সেন ছবিটা ওদের কাছে দিয়ে বললেন,এখন কোন পিরিয়ড?
সিক্সথ।
ইস! একদম খেয়াল ছিল না।আমি ক্লাসটা করে আসছি।
অতসী হেসে বললেন,তাড়াতাড়ি যান ঘণ্টা পড়ার সময় হয়ে এল।   
গৌরী সেন চলে যেতে ওরা হেসে উঠে বলল,মেয়ের বিয়ের চিন্তায় মাথার ঠিক নেই।
ক্লাস শেষ হতে দীপশিখা বেরিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যামের সঙ্গে দেখা।
ক্লাস শেষ হল?
দীপশিখা হাসলেন।চলে যেতে গিয়ে ফিরে এসে বললেন,ম্যাম আর কোনো--।
ধুস এসব নিয়ে ভাববেন নাতো।কোনো চ্যাংড়া ছেলের কাজ।
দীপশিখা স্টাফ্রুমে এসে শুক্লার পাশে বসতে গিয়ে টেবিলের উপর ছবিটা দেখে বললেন,এটা কার ছবি?
জিএসের মেয়ের বিটেক পাস করে চাকরি করছে।ম্যাম মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করছেন। শুক্লা বলে ক্লাসে চলে গেল।
একটু ভালোভাবে ছবিটা দেখলেন দীপশিখা,মনুর বয়সী হবে বোধ হয়।এতক্ষনে মনে হয় ফিরে এসেছে।দীপশিখার একটাই চিন্তা,ছেলেটা কি খবর নিয়ে আসে।পরীক্ষা দিয়েছে ও অথচ ওর কোনো চিন্তা নেই,দিব্যি আছে বাবু।ইদানিং আবার কথায় কথায় চোটপাট করে।খারাপ লাগে না, মুখ টিপে হাসলেন দীপশিখা।শুক্লার মেয়ে হয়েছে ওর বর খুশি।আজকাল মেয়ে হওয়া অনেকে পছন্দ করে না।আগেকার দিনে এসব ছিল না।অবশ্য পর পর মেয়ে হলে বংশ রক্ষার জন্য ছেলের জন্য কিছুটা আকুলতা দেখা যেতো। 
কলেজে একা এসেছেন একাই বাসায় ফিরবেন।কিন্তু তিনি জানেন একজন আছে সব সময় তার ভালমন্দ নিয়ে চিন্তিত,এই জানাটাই বড় শান্তি।ও বলে অবিশ্বাস করার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকাও ভাল।দীপশিখার ইদানীং একটা কথা ঘুরে ফিরে মনে আসছে স্বার্থপরের মতো ছেলেটার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন নাতো?আবার এমন ওতপোত জড়িয়ে গেছেন ওকে ছাড়া ভাবতে গেলে নিজেকে খুব অসহায় বোধ হয়। 
ঘণ্টা বাজতেই উঠে দাড়ালেন দীপশিখা।ছুটি হতেই এক অদৃশ্য টান অনুভব করেন।আগে এমন হতো না। ক্লাস শেষ হতে জিএস স্টাফ রুমে ডিএমের উদ্দেশ্যে বললেন,মিস মিত্র ছবিটা দেখেছেন?
মৃদু হেসে দীপশিখা বললেন,আপনার মেয়ে তো দেখতে বেশ।
 মেয়েটা আমার অন্য মেয়েদের মত নয়।মেয়ে তো বিয়েতে রাজিই হচ্ছিল না।অনেক বোঝাবার পর রাজি হয়েছে।দেখবেন যদি--।
আমি তো পাড়ায় তেমন মিশি না আর আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও বহুকাল যোগাযোগ নেই।ঠিক আছে কোনো যোগাযোগ হলে বলব।চিন্তা করবেন না মেয়ে আপনার বেশ সুন্দরী।
কলেজ থেকে বেরিয়ে দীপশিখা বাস স্টপেজের দিকে এগিয়ে গেলেন।উল্টো দিকে শুক্লার জন্য গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে নজরে পড়ল।বাস আসতেই উঠে পড়লেন।জানলার ধারে একজন উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আসন ছেড়ে দিল।কণ্ডাকটর ঘণ্টি বাজাতে বাস ছেড়ে দিল। বাস যত এগিয়ে চলেছে  শরীরে একটা আনচান ভাব অনুভূত হয়।এতক্ষনে মনু হয়তো ফিরে এসেছে।মৌলালি আসতে নেমে পড়লেন।সামনে একটা ট্রাম এসে পড়ায় দাঁড়িয়ে গেলেন।ট্রাম চলে যেতে রাস্তা পেরিয়ে ফ্লাটের দিকে হাটতে লাগলেন।আনচান ভাবটা বেড়েই চলেছে।সিড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে দরজার সামনে গিয়ে বুঝতে পারেন মনু ফেরেনি।শরীর অবসন্ন বোধ হয়।চাবি বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। ঘরে এসে শাড়ি জামা সব খুলে ফেললেন।একটা কুর্তি গায়ে বাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলেন।একবার ভাবলেন মনুর জন্য অপেক্ষা করবেন তারপর কি ভেবে রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিলেন।চা হয়ে যেতে এক কাপ ঢেলে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।বসারঘরে এসে পাখা চালিয়ে চায়ে চুমুক দিতে থাকেন।মনু থাকলে সারাক্ষন তার শরীর নিয়ে টেপাটিপি করতো।এই শরীরটা যেন ওর খেলার সামগ্রী।গোরী সেনের মেয়েটা বিটেক পাস চাকরি করে।খুব সুন্দরী না হলেও দেখতে শুনতে মন্দ নয়।মনুর সঙ্গে মানাবে।কথাটা ওকে কিভাবে বলবেন ভাবনাটা মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকেন।মনু যদি রাজী হয়ে যায়? রাজী হলে তো ভালোই হল।মনটা বড়ই অস্থির বোধ হয়।এত দেরী করছে কেন?সেই কখন বেরিয়েছে সন্ধ্যে হতে চলল ফেরার নাম নেই।আজ আসুক বাড়িতে।অবশ্য আজকাল কোনো কথা শুনতেই চায় না ।যা বলা হয় তার উল্টোটা করবে।বেশী বললে আবার তেড়ে আসে।স্বামীদের স্বভাবই বুঝি এই।দীপশিখা হাসলেন,ওকে জব্দ করার কৌশলও জানা আছে।মোমোর মুখ ভার মোমো কষ্ট পেয়েছে দেখলে বাবু অস্থির হয়ে ওঠে।মোমো ওর বড় আদরের।সে জন্যই চিন্তা হয়।মোটে সাংসারিক বুদ্ধি নেই।আজকালকার দিনে অত সহজ সরল হলে চলে।তিনি না থাকলে ওর কিযে হবে ভেবে মনে শান্তি পান না দীপশিখা।সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠতে ক্লান্তি বোধ হয়।    
তন্ন তন্ন করে নিজের নামটা খুজতে খুজতে না পেয়ে মহিলাটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।মেয়েদের কাদতে দেখলে সুখর খুব খারাপ লাগে।মহিলাকে জিজ্ঞেস করে,আপনার নামটা জানতে পারি?
চন্দ্রিমা মুখার্জি।
সুখ নোটিশ বোর্ডের কাছে গিয়ে শুরু থেকে চন্দ্রিমা খুজতে থাকে।বার কয়েক চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে চন্দ্রিমার নাম প্যানেলে নেই।চন্দ্রিমা কিছুটা সামলে নিয়েছে।সুখ জিজ্ঞেস করল,আপনি কোথায় থাকেন?
সন্তোষপুর।
চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।
দুজনে ভিআইপির দিকে পাশাপাশি হাটতে থাকে।চন্দ্রিমা হেসে লাজুক গলায় বলল,কি বিচ্ছিরি ব্যাপার হল,নিজেকে সামলাতে পারিনি।
সুখ বুঝতে পারে একটু আগের কথা বলছে।
আপনিও কি পরীক্ষা দিয়েছেন?
ওই আর কি।
তার মানে আপনার নাম উঠেছে?
সুখ মৃদু হাসল।
কিছুদিন পর তাহলে আপনি অধ্যাপক। জানেন এবারের পরীক্ষা আমার খুব ভাল হয়েছিল--ভাবতেও পারি নি পাস করতে পারবো না।
এবার হয়নি তো কি হয়েছে।অবশ্য এসব বলার কোনো মানে হয়না। 
বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে ওরা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।চন্দ্রিমা চশমা খুলে আচলে মুছতে মুছতে বলল,আপনি অন্যদের থেকে আলাদা।
একজন আরেকজনের থেকে আলাদাই হয়।
তা না--অনেকেই তো ছিল ওখানে আমার অবস্থা আর কাউকে তো স্পর্শ করেনি।
চন্দ্রিমা আপনার বাস এসে গেছে।
চন্দ্রিমা বাসে উঠতে উঠতে বলল,ওমা আপনার নামটাই জানা হল না।
সুখ হাত নাড়ে চন্দ্রিমা বাসে উঠে জানলা দিয়ে হাত নাড়ত্র থাকে।বাস চলে গেল সুখর মনে পড়ল মোমোর কথা।কলেজ থেকে ফিরে রেগে কাই হয়ে অপেক্ষা করছে।মেয়েরা রাগলে বেশ মজা লাগে।ওরা রাগ চেপে রাখতে পারে না।ওদের রাগ আগুনের মত যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে তেমনি আবার নিভে যায়।বেশিক্ষন রাগ পুষে রাখতে পারে না।একটু দলাই মলাই করলে মোমোর সব রাগ একেবারে জল।মুখে আপত্তি করলেও সুখ জানে মোমো ব্যাপারটা উপভোগ করে। তার বউ হলেও মোমোর আচরণে মায়ের স্নেহের স্পর্শ পায়।মৌলালী আসতে সুখ বাস হতে নেমে পড়ল।কিছুটা এগোতে নজরে পড়ে কমপ্লেক্সের গেটে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তী।সুখ মাটির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভাবে এগোতে থাকে।  
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 29-03-2023, 10:00 AM



Users browsing this thread: