Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
মাঝরাতে হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেল আজও অমিতবাবুর, লাবণ্যপ্রভার আঃ উঃ শুনে। সাতষট্টি বর্ষীয়া লাবণ্যপ্রভা আমিতবাবুর উনপঞ্চাশ বছরের জীবন সঙ্গিনী, সুখ দুঃখের ভাগীদার। জীবনের নাগরদোলায় দুজনে এক সাথে পেরিয়েছেন অনেকগুলো দিন, স্মৃতির দেওয়ালে আজও ঝলমল করছে কত শত অম্লমধুর অনুভূতি। বেলাশেষের ক্ষণে এসে আজকাল বড্ড মনে পড়ে সেসব। হয়ত মনের এখন অখণ্ড অবসর বলেই। তাই এই ছাড় ছুট। নইলে এতগুলো বছরে সময়ই কোথায় হয়েছে আর সুযোগই বা কোথায় মিলেছে, দায়িত্ব কর্তব্যকে লক্ষ বানিয়ে অবিরত ছুটে চলাই তো ছিল অভ্যাস! আজ আর সে তাড়া নেই, নেই ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার দুশ্চিন্তাও। ঈশ্বরের কৃপায় যা আছে, যতটুকু আছে, কত্তা গিন্নীর চলেই যাবে হেসে খেলে। ছেলেমেয়েরাও নিজের নিজের মত সুপ্রতিষ্ঠিত। এখন শুধু বসে জিরিয়ে, গড়িয়ে যাওয়া সেই অন্তিম ক্ষণের দিকে।

চলে যাওয়ার কথা ভাবলেই বুকটা যেন টনটন করে আজকাল অমিতবাবুর। লাবণ্যপ্রভার জন্য। উনপঞ্চাশটা বছর কম কথা তো নয়। অষ্টাদশী লাবু আজ তার অস্তিত্বে মিশে একাকার। তাকে ফেলে যান কি করে! তাকে রেখেই বা যান কোন ভরসায়!এই একটা ভাবনাই আজকাল দুশ্চিন্তা হয়ে জ্বালায় অমিতবাবুকে। আর এমনই জ্বালা, মন খুলে কাউকে বলতেও পারেন না এ কথা। লাবুকে তো নাই, সে বেচারী শুনে নিশ্চিত প্রেসার বাড়িয়ে ফেলবে চাড্ডি। ছেলেমেয়েরা শুনলেও বুঝতে পারবে না এ যাতনা! অগত্যা মনের ভেতরেই ডালপালায় বাড়ে ভাবনাগুলো। অতএব, মনে মনেই তাদের ছেঁটে কেটে ফেলার জন্য "আজ"টাকে আঁকড়ে ধরার অভ্যাস করেন অমিতবাবু। যা গেছে তা ফিরে পাবার উপায় নেই যখন, যেটুকু বেঁচে বর্তে আছে, তার শেষ বিন্দু নির্যাসও নিংড়ে নেওয়া আর কি!
যাপনের এই নতুন অভ্যাসে আর একজনও মহা খুশী, লাবণ্যপ্রভা। হবে না, এই যে এত খেয়াল রাখে আজকাল মানুষটা, ঘুমের মধ্যে আঃ উঃ করলেও লাইট জ্বালিয়ে উৎকন্ঠিত গলায় বলে, "কি হয়েছে লাবু, কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে, বলো আমায়"... এমনটা শোনার অপেক্ষা নিয়েই তো কেটে গেছে এতগুলো বছর। কিন্তু সদা ব্যস্ত মানুষটা বরাবর যেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত নিজের স্ত্রীয়ের প্রতি। নিশ্চিন্ত নাকি বেখেয়ালী? এমন প্রশ্নও লাবণ্যর মনে আসেনি তা নয়, উত্তরও পেয়েছেন সময়ের হাত ধরে। হ্যাঁ, প্রথম দিকে কষ্ট পেলেও ক্রমশঃ স্বামীর এই নির্লিপ্ততা আর উদাসীনতার অভ্যাস হয়ে গেছে লাবণ্যর। বুঝেছেন বলেই হয়তবা।
কত সময় এমন হয়েছে, ছেলেমেয়েরাও রেগে গেছে বাবার বেখেয়ালীপনায়, সামলেছে লাবণ্যই। এইত সেবার বাবি ফোন করেছে সিডনি থেকে। বোন টুসিদেরকেও নিয়েছে গ্রুপ কলে। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে জামাই যমজ নাতি, নাতনি সবাই ঠেলাঠেলি করছে মোবাইলের সাড়ে সাত ইঞ্চি পর্দায়। সবার এক প্রশ্ন এক অভিযোগ! বাবা কই মা, এখনও আসে নি? আজকের দিনেও? আজ গেলই কেনো অফিসে? এত কিসের কাজ কাজ? উফফ, বাবাকে নিয়ে আর পারা যায় না!বাবাকে না দেখে হই হই করে উঠেছে দুই ভাই বোন।
আর যথারীতি রক্ষণাত্মক হয়েছে লাবন্য। বলেছে, "তাতে হয়েছেটা কি শুনি। কাজ কম্মো মাথায় তুলে অফিস ছুটি করে কি সকাল থেকে নাচবে আমায় মাথায় করে? বিয়ের দিন বলে? বিয়ের দিন তো কি ? তিন যুগ আগের কথা! আজও কি সেই আনন্দে হাত পা তুলে ধেই ধেই করতে হবে? আজ বাদে কাল রিটায়ার করবে। এত দায়িত্বশীল পদ! হুট পুট ছুটি নেব বললেই হলো। তোরাও হয়েছিস যেমন। ঘুরতে ফিরতে খালি এই দিন, ওই দিন... জম্মো দিন, বিয়ের দিন, প্রেমের দিন, কবিতার দিন,...বাপরে বাপ! আসলে, হুল্লোড় করার ফন্দি ফিকির যত!"
পিছন থেকে এসে স্ত্রীয়ের কথার কিছুটা শুনে ফেলে অমিতবাবু। দরজা আলগা ভেজানো ছিল। স্বামী এক্ষুণি ফিরবে ভেবেই এমন ব্যবস্থা লাবুর। খেটেখুটে এসে মানুষটাকে যেন অপেক্ষা করতে না হয় দুদণ্ড। এতটাই খেয়াল লাবুর। কিন্তু তার নিজের? এত ভুল হয় কি করে বারবার? ভুল নাকি এ তার ইচ্ছাকৃত অভ্যাস? সত্যিই তো, কেন মনে ছিল না আজকের দিনটার কথা? বিশেষ একটা দিন, বিশেষ ভাবে পালন করা, সেটাই ত স্বাভাবিক। তবু কেমন ওকে আগলেই ঢাল হয়েছে লাবু। বরাবরের মত। সেই প্রথম বছর বিবাহ বার্ষিকীর দিন থেকেই।
খবর না দিয়ে সেবার আচমকা চলে এসেছিল লাবুর বাবা মা ভাই বোন। একরাশ উপহার নিয়ে। মেয়ে জামাইকে চমকে দিতে। অফিস থেকে ফিরে তাদের মুখোমুখি হয়ে ভারী বিব্রত বোধ করছিল অমিতবাবু। কেউই কিছু বলে নি, প্রশ্ন করে নি তাও। নিশ্চই কিছু গল্প বানিয়ে বলেছে লাবু ওদের, তাই প্রশ্নের বদলে সম্ভ্রম তাদের চোখে মুখে। রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই চলে যেতে বউকে বুকে জড়িয়ে আদর করেছিল হৈম। লাবণ্যর শাশুড়ি। বড় বউকে এজন্যই আজীবন চোখে হারাতো অমিতবাবুর মা। গর্ব করে বলত, "সংসারের ছোট ছোট ফুটিফাটা বড় হতে দিতে নেই, এভাবেই রিফু করে নিতে হয় ক্ষমা, দয়া, প্রশ্রয় ভালোবাসা দিয়ে। এক সুতোয় সবাইকে বেঁধে রাখা কি যে সে কথা! তবে বড় বউ পারবে, নিঃসন্দেহে। আরে বাবা জহুরীর মেয়ে আমি, এমন রত্ন চিনতে কি আর আমার ভুল হয় কখনো?"
ঠিকই বলত মা। রত্ন বলেই তো এত অযত্নেও তার এমন দ্যুতি! এতগুলো বছর কি আর পেল লাবু? পিতৃহীন পরিবারে মায়ের দায়িত্ব, ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব সবটাই ছিল তার একার কাঁধে। সেসব সামলে জন্মদিন বিয়ের দিন পালন ছিল নিতান্ত বিলাসিতা। ওসব তো পরের কথা, মধুচন্দ্রিমাতে নতুন বউকে কোথায় নিয়ে গেছিল সে, না দেশের বাড়ী চণ্ডীপুরে, তাও মাকে সাথে নিয়ে। তবু কি খুশিই না হয়েছিল লাবু। শহরের ইট কাঠের ঘড়ি বাঁধা জীবন থেকে ছুটি পেয়ে কটা দিন যেন স্বপ্নের মতই কেটেছিল ওদের। দীঘির জলে পা ডুবিয়ে নিটোল গোল চাঁদকে সাক্ষী রেখে প্রথমবার সাহসী হয়েছিল লাবু। এদিক ওদিক তাকিয়ে ঠোঁট ছুঁয়েছিল স্বামীর ঠোঁটে, আর অমিতবাবু? তার যেন বুকে হাতুড়ি পিটছিল কে দুম দুম করে। "এমন করেই ভালো বাসবে ত আমায় সবসময়? আমার কিন্তু অনেক দোষ। সব থেকে বড় দোষ বোধহয় বেখেয়াল। মা বলে।" পরম আশ্লেষে বউকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল সে। উত্তরে হেসেছিল লাবন্য। বলেছিল "সে ঠিক আছে, তোমার ভাগের খেয়াল আমিই রেখে নেব, আমি আছি তো!"
আমি আছি ! এই ভরসাটাকেই উপভোগ করে এতগুলো বছর এমন চোখ বুঁজে কাটিয়ে দিল অমিতবাবু, একি নির্ভরতার অভ্যাস না বেখেয়ালের বদভ্যাস?? ছুটি না নিলেও আধ ঘন্টা আগে বেরিয়ে আসা, যেতেই তো পারতো! আর আসার সময় মনে করে বিশুর থেকে একটা জুঁই এর মোটা মালা নিয়ে আসলেই তো ঝলমলিয়ে উঠত ও মুখ, হাজার বাতির রোশনাইয়ের মত, তবে...
না, মুখে কোনোদিন এসব নিয়ে কিছু বলেনি লাবু ঠিকই, কোন অভিযোগ অসন্তোষও করেনি। হাসিমুখেই মেনে নিয়েছে স্বামীর যত অপারগতা। কিন্তু মনে মনে নিশ্চই আশা করেছে, নিশ্চই ভেবেছে, এবার হয়ত মনে পড়ে যাবে মানুষটার। ইস,ভারী অন্যায় হয়েছে তার প্রতি। ঘটাপটা আদিখ্যেতা, আড়ম্বর না হলেও এটুকু তো করাই যেত। ভালোবাসাও কিন্তু সবাক হতে চায় কখনও কখনও। উপহারের ভাষায়। আদরের ছোঁয়ায়। কেন যে বোঝেনি আগে অমিতবাবু!!
নির্ভেজাল আনন্দে হৈ হুল্লোড় করার দিন আসলে খুবই সীমিত জীবনের পরিক্রমায়। সময়ের অভাব, সুযোগের অভাব, অর্থের অভাব, ইচ্ছের অভাব... অভাব একটা না একটা থেকেই যায় ঠিক, যদি না ইচ্ছেটা অভ্যাস করা হয়। প্রথমদিন থেকেই যারা ছোট ছোট আনন্দ উদযাপনের জন্য খুব সাদামাটা হৈ হুল্লোড় করারও ফন্দি ফিকির খুঁজে নেয়, তাদের অভ্যাস হয়ে যায় আমোদ করার, জীবনকে উপভোগ করার। থোর বড়ি খাড়া জীবন চিরহরিৎ তাদের জন্য। দীর্ঘতম টেস্ট ইনিংসের প্রতিটি দিনই আসলে এক একটা টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচ। বিনা আফসোসে, বিনা হাহাকরে বিদায় নিতে হলে সব কটা ম্যাচই সমান উৎসাহে খেলে যেতে হয় তাই হয়ত। সেঞ্চুরি হোক বা শূন্যে আউট সব মিলিয়ে তুমিই তখন ম্যান অফ দি সিরিজ এই জীবনের!!
আজ বুঝেছে অমিতবাবু, দাম্পত্যের ছত্রিশটা বসন্ত অযত্নের অভ্যাসে কাটিয়ে দেবার পর। সব সম্পর্কেই একটা যত্ন লাগে, একটা সুন্দর বোঝাপড়া হওয়ার জন্য। তবেই স্থায়ী হয় সম্পর্ক। কিন্তু ওনার ভাগে তো শুধুই ফাঁকির হিসেব। সে ইচ্ছে অনিচ্ছে যে কারণেই হোক। তবু ওনার ভাগের যত্নের অভাবটা কখনো বুঝতেই দেয় নি লাবু। উল্টে দ্বিগুণ যত্নে, প্রশ্রয়ে ভরিয়ে রেখেছে, বিপদে আপদে ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে টান টান হয়ে। কিন্তু মনের অগোচরে কোথাও কি কোনো ক্ষোভ জমে আছে লাবুর? নাকি সইতে সইতে এভাবে সইয়ে নেওয়াকেই অভ্যাস করে নিয়েছে সে!! বুঝতেই হবে আমায়, নইলে যে চিরকালের মত অপরাধী হয়ে থাকতে হবে লাবণ্যর কাছে। একান্তে বিড়বিড় করেন অমিতবাবু।
নিয়তির এমন পরিহাস সুখ এলেও তার যাবার তাড়া বড় বেশি চিরকালই। বাষট্টিতে রিটায়ার করে অমিতবাবু যখন ভাবলেন এবার চুটিয়ে উসুল করে নেবেন জীবনের না পাওয়া আনন্দের অনুভূতিগুলো লাবুর সাথে নির্ঝঞ্ঝাট, একাধিক রোগের একশো হাত যেন আস্টে পৃষ্ঠে ঘিরে ধরল লাবণ্যকে। আজ রক্তে চড়চড় করে বাড়ছে চিনি তো কাল হাঁটু অবশ, পরশু থাইরয়েড, তরশু উচ্চ রক্তচাপ। তবে সব কিছুর চেয়ে ভয়ের হল তার বিস্মৃতির অসুখ।ডাক্তার বলল বয়সের দোষ। এমন হয় অনেকেরই। আদর, ভালোবাসা আর যত্নে সেরে উঠতেও পারেন রোগী। অমিতবাবু কিন্তু জানেন এ রোগের কারণ তিনিই। তার ভাগের দায় দায়িত্ব, ভালো মন্দ, মনে রাখতে রাখতেই আজ জবাব দিয়েছে লাবুর মন। কত আর সইবে? কত আর সামাল দেবে স্বামীর বেখেয়ালী পনার? আর কত?
অনেককিছুই আজকাল ভুলে যায় লাবণ্য। খেই হারিয়ে ফেলে কিছু বলতে বলতে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফ্যালফ্যাল করে। তাড়াতাড়ি সামলায় অমিতবাবু। অন্য কিছু মজার কথা বলে, হাসিয়ে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে। কি আশ্চর্য ভাবে উল্টে পাল্টে গেছে সব হিসেব! চিরকালের বেখেয়ালী মানুষটা আজ ভীষন ভাবে মনে রাখে সংসারের প্রতিটা খুঁটি নাটি, লাবুর ওষুধ,পথ্য,পছন্দ অপছন্দও। পুরোন অভ্যাসগুলো চলে যেতে যেতে কিছু নতুন অভ্যাসও রপ্ত হয়েছে আজকাল অমিতবাবুর।
উপলক্ষ ছাড়াই বাজার থেকে আজকাল অর্কিড আনেন অমিতবাবু। সাজিয়ে রাখেন বসার ঘরের কাঁচের লম্বা ফুলদানিটায়। কিংবা অনিতা রাতের খাবার রেঁধে বেড়ে যাবার পরেও উনি হঠাৎ করেই বানিয়ে ফেলেন এক বাটি ঝুরঝুরে আলুভাজা। ছোট ছোট পদক্ষেপ, তবু উনি খেয়াল করে দেখেছেন লাবণ্যর চোখ মুখ যেন জ্বল জ্বল করে খুশিতে।
এভাবেই চলছিল দিন। নিয়ম অনিয়ম যাই হোক না কেন, নিয়মিত চলতে চলতেই তো অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় একদিন। এ গল্পেও তাই হলো। কিন্তু নতুন অভ্যাসে দক্ষ হবার আপ্রাণ চেষ্টা স্বত্ত্বেও সেই ফাঁকিতেই পড়তে হলো অমিতবাবুকে। পঞ্চাশ বছর পূর্তির ঠিক একদিন আগেই সারাজীবন সাথে থাকার প্রতিশ্রুতিকে ফাঁকি দিয়ে রাতে ঘুমের মধ্যেই চির ঘুমের দেশে চলে গেল লাবণ্যপ্রভা। একবার অস্ফুট আঃ উঃ করেই। রোজকার মত ধড়মড় করে জেগে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে কি হয়েছে লাবু, কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো, বলো আমায়, বললেও উত্তর এলো না আর। নিথর নিস্পন্দ মানুষটার ঠোঁটের কোণায় যেন যুদ্ধ জয়ের সুখ। যেন নিঃশব্দে বলছে, "আমার কাজ শেষ। এবার তোমার পালা। তোমায় খেয়াল রাখার অভ্যাস হয়ে গেছে, ব্যাস এবার নিশ্চিন্ত আমি।"
সাতদিন হলো মানুষটা ছাই হয়ে গেছে তবু রোজ মাঝরাতে নিয়ম করে ঘুম ভেঙে যায় অমিতবাবুর। ঘুমের মধ্যেও লাবুর আঃ উঃ শুনতে পান উনি। আর জেগে ওঠেন ধড়মড়িয়ে। তারপর সারাটা রাত জেগেই কাটান। জল খান, পায়চারি করেন, লাবণ্যর ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করেন, বকবক করেন, কখনো সুখের কথা, কখনো দুঃখের, হাসেন, কাঁদেন, মনে হয় এইত পাশেই আছে লাবু, কোথাও যায় নি তো তাকে ছেড়ে।চোখ ভারী হয়ে আসে তবু ঘুমোন না আর। রাত হলেই এই এক ঘটনা চলছে বিগত এক সপ্তাহ। কোনক্রমে চোখে পড়ে গেল একদিন টুসির। জল খেতে উঠে বাবাকে এমন করতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে ডেকে দেখালো সে। ভাই বোনে আলোচনা হল নিচু গলায়। ঠিক হল সকাল হলে বুঝিয়ে বলবে বাবাকে।নিজের নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে ওদেরও শিগগির।এভাবে বাবাকে একা রেখে যাওয়া তো অসম্ভব!
সেদিন সকালে যখন ছেলে মেয়েরা বুঝিয়ে বলল, বিনা প্রতিবাদে ওদের পুরো কথা শোনেন অমিতবাবু। হ্যাঁ, চিন্তা হওয়ারই কথা ওদের। কিন্তু এই যে রোজ রাতে স্ত্রীয়ের সাথে মন খুলে সুখ দুখের গপ্পো করার সদ্য এক নতুন অভ্যাস পেয়ে বসেছে তাকে, তার কি হবে ওদের সাথে চলে গেলে ? লাবু যে একেবারে হারিয়ে যাবে তার থেকে।এই বাড়ি, এই বিছানা, এই বালিশ সব কিছুতেই যে লাবুর গন্ধ। আর সেই গন্ধকে বুকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার অভ্যাসটাও তো আর আজকের কথা নয়। তাই তার একটাই উত্তর "না"। আজ নয়ত কাল চলেই যেতে হবে যখন, তখন আর কিসের চিন্তা! রাতে ঘুম না হলে তেমন, দিনেই ঘুমিয়ে নেবেন। ক্লান্তি এলে ঘুমও আসবে ঠিক আপনা আপনি। কিন্তু লাবণ্যকে এখানে এভাবে ছেড়ে, কোথাও যেতে পারবেন না তিনি। এই যাপন শুধু অভ্যাস নয়, এ এক অনুভূতি যাকে শব্দ দিয়ে বা অক্ষরে বোঝানো যায় না, মন দিয়ে স্পর্শ করতে হয় বুঝতে চাইলে।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 29-03-2023, 07:35 AM



Users browsing this thread: 26 Guest(s)