26-03-2023, 11:53 PM
![[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]](https://i.ibb.co/Mp7sMsk/Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg)
১১তম পর্ব
"আয়্যাম সরি" নীলাদ্রির মুখে সরি শুনে সত্যিই অবাক হলো আদিত্য, সে বললো "সরি, কিসের জন্য?"
"আমি আপনার সাথে যা করেছি তার জন্য"
"ইটস্ ওকে, আপনি নিজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার জন্য এটা করেছেন আর আজকাল এরকম বন্ধু খুব কম পাওয়া যায়, আপনাকে একটা কথা বলবো রাখবেন?"
"বলুন"
"আদিত্য আর ফিরবে না, এখন থেকে আপনি শুধু শশাঙ্ক বাবুর নন অতীন্দ্রবাবু আর মায়েরও ছেলে ওনাদের খেয়াল রাখবেন, আর প্রীতিকে খুশি রাখবেন"
"সে ঠিক আছে কিন্তু আপনি.."
"এখানে আমার কাজ শেষ এবার আমাকে যেতে হবে"।
"এসব কি বলছো তুমি আদিত্য" কথাটা অবশ্য বললেন অতীন্দ্রবাবু।
"হ্যাঁ স্যার ঠিক বলছি"
"আদিত্য আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে, এক মুহূর্তের জন্য হলেও তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম তার জন্য'
"স্যার, আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু এবার আমাকে সত্যিই যেতে হবে"
"তোমার অভিমান হয়েছে আমি বুঝতে পারছি আমার উপর, উমার উপরে"
"অভিমান" আদিত্যর ঠোঁটের কোণে আবার একটা অদ্ভুত হাসি দেখা যায় যেটা খুশির নয় দুঃখের "আপনি তো আমার ব্যাপারে সব জানেন স্যার, বেঁচে থেকেও আমি এখন মৃত আর মৃতদের রাগ, অভিমান, সুখ, দুঃখ কিছুই থাকে না আর আপনার বা মায়ের উপরে অভিমান করবো কেন? উনি যা করেছেন সেটাই স্বাভাবিক"।
"আমি উমাকে সব বুঝিয়ে বলবো ও নিশ্চয়ই বুঝবে"
"আর তাতে কি হবে? এটা বদলাবে যে আমি ওনার ছেলে নই এটা কোনোদিন বদলাবে না এতদিন ওনার চোখে আমার জন্য যে স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা দেখেছি সেটা কি আসবে? আসবে না কিছুই আর বদলাবে না স্যার"।
"আদিত্য একবার ফিরে চলো তুমি, তুমি একবার উমার সামনে দাঁড়ালে ও.."
"না স্যার আমি মায়ের সামনে গেলে উনি আরও হাইপার হয়ে উঠবেন তাতে উনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবেন যেটা আমি চাইনা, মনে আছে আপনি আমাকে এখানে এনেছিলেন যাতে আমি আপনার ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারিযাতে মা সুস্থ থাকেন, কিন্তু এখন সবাই সব সত্যিটা জেনে গেছে তাই এখন আর এই অভিনয়ের দরকার নেই এখন আর আমারও দরকার নেই, এবার আমাকে ছুটি দিন স্যার"।
অতীন্দ্রবাবু কি বলবেন ভেবে পেলেন না তিনি ভালো করেই জানেন একে আর রাজী করানো যাবে না। "আপনি কে, মানে আপনার আসল পরিচয় কি?" নীলাদ্রি এবার প্রশ্ন করে, একটু হেসে আদিত্য বলে "বললাম যে আমি এখন একজন মৃত মানুষ আর মৃতদের নাম পরিচয় থাকে না"
"তাহলে আগের টাই বলুন"
"ওটা জেনেও আপনার কোনো লাভ হবে না আর না জানলেও কোনো ক্ষতি হবে না আমি নিজেও ওটা এখন আর মনে করি না তাই ওটা থাক"।
"তুমি সত্যিই চলে যাবে?" অতীন্দ্রবাবু একবার শেষ চেষ্টা করেন, "যেও না থেকে যাও"।
আদিত্য এবার অতীন্দ্রবাবুর পায়ে হাত দিয়ে একটা প্রণাম করে বলে "এবার আমাকে ছেড়ে দিন স্যার, আর আমাকে আটকে রাখবেন না আমি আর থাকতে পারবো না"
অতীন্দ্রবাবু এবার হাল ছেড়ে দেন "তুমি যখন ঠিকই করে নিয়েছো যে থাকবে না তখন আর আটকাবো না কোথায় যাবে কি করবে কিছু ঠিক করেছো?"
"না স্যার এখনো কিছু ঠিক করিনি দেখি জীবন কোথায় নিয়ে যায়"
"ওখানে যাবে?" ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন করেন অতীন্দ্রবাবু।
"ওখানে আর আমার জায়গা নেই স্যার সেটা আপনি জানেন"
"শোনো তোমার অ্যাকাউন্টে আমি মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেবো তাতে."
"ওটি করবেন না, টাকা আমি নিতে পারবো না"
"আদিত্য.. তুমি"
"প্লিজ স্যার, আর ওই অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস কার্ড চেক সহ রুমে ড্রয়ারে রাখা আছে, স্যার আপনি আর মা আমার জন্য যা করেছেন সেটা আমি কোনোদিন ভুলবো না কিন্তু আমি তো টাকার জন্য এখানে আসিনি তাহলে টাকা কেন নেবো? শুধু বাদশাকে নিয়ে যাচ্ছি কারণ এই অবলা প্রাণীটা আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি"
"তোমার সাথে কি আর কোনোদিন দেখা হবে না?"
"জীবনে কার সাথে কি হবে সেটা আগে থেকে প্রেডিক্ট করা যায় না, জানি মা হয়তো আমাকে সহ্য করতে পারবেন না তবে উনি সুস্থ হলে ওনাকে আমার প্রণাম জানাবেন.. আরেকটা কথা এখানে আসার পরে আপনাদের সাথে যে ফ্যামিলি ফটোটা তুলেছিলাম সেটার একটা কপি আমি নিয়ে যাচ্ছি"
"যেখানেই থেকো ভালো থেকো, সুখে থেকো"অতীন্দ্রবাবুর চোখে জল আসে।
"ভালো আর সুখে থাকবো কি না জানিনা তবে বেঁচে থাকবো, আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন ওটাকে নিজে শেষ করে আপনাকে অপমান করবো না"
এইসময় শশাঙ্কবাবুকে এগিয়ে আসতে দেখে আদিত্য ওনাকে জিজ্ঞেস করে "স্যার আমি এখন ফ্রি তো?"
"অবশ্যই তুমি ফ্রী আর ওদেরও কঠিন শাস্তি হবে"
"নীলাদ্রি বাবু আপনি একবার বলেছিলেন যে আপনার বন্ধুর খুনীদের আপনি ছাড়বেন না নিজে শাস্তি দেবেন মনে আছে?"
"আছে, কিন্তু আমি আইনের রক্ষক, আইন ভাঙবো কিভাবে?"
"আইনের ফাঁকও আছে আর আপনি যেটা করবেন সেটা অন্যায় নয় বরং ওরা যদি কোনোভাবে বেঁচে যায় তাহলে সেটা আরও অনেক মানুষের জন্য খারাপ হবে" কথাটা বলে আদিত্য হাতটা বাড়িয়ে দেয় নীলাদ্রির উদ্দেশ্যে, দুজনে করমর্দন করে, তারপর অতীন্দ্রবাবুর উদ্দেশ্যে বলে "চলি স্যার, ভালো থাকবেন" বলে গাড়িতে উঠে পড়ে, গাড়িটি তৎক্ষণাৎ রওনা দিয়ে দেয়, পিছনে অতীন্দ্রবাবু, নীলাদ্রি আর শশাঙ্কবাবু তিনজনেই সেদিকে তাকিয়ে থাকেন, একটা সময় দূরে দিগন্তে নকল আদিত্যকে মিলিয়ে যায় গাড়িটা, সাথে অতীন্দ্রবাবুর দুচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
বি দ্র: "ধূসর পৃথিবী" একটা পার্ট এখানে শেষ, যারা গল্পটা প্রথম থেকে পড়েছেন এবং মনে রেখেছেন তাদের মনে হয়তো কিছু প্রশ্ন আছে যেটার উত্তর এখানে নেই, তাদের বলছি উত্তরগুলো দ্বিতীয় একটা পার্ট লিখে সেখানে দেবো ভেবেছি কিন্তু সেটা তখনই শুরু করবো যখন দেখবো এই পার্টটা ভালো রেসপন্স পাচ্ছে, নাহলে এখানেই ইতি। যদি লাইক রেপু নাও দিতে পারেন তবে অন্তত কমেন্ট করে রিভিউটা দেবেন।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils

