Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
বাবা পুলিশ, মা চোর

---------------------------------
আমার বাবা ছিলেন পুলিশ, আর মা চোর। রোজ সকালে, বাবা স্নানঘর গেলেই দেখতাম, মাকে সন্তপর্ণে, শোওয়ার ঘরে ঢুকে গোপনে রুমালের নিচে চাপা দেওয়া খুচরো পয়সাগুলো নিজের আঁচলে বেঁধে নিতে। ভাত খেয়ে বাবা অফিসের দিকে রওনা হলে, মা যত্ন করে চুরির পয়সা লাল রঙের মাটির ভাঁড়ে জমা করে রাখত। আমি ভাবতাম মা একেবারে দস্যু মোহন - বাবার এতো পয়সা চুরি করে রোজ, আর আমার অবোধ বাবা কিছুই টের পায়না। মার উপর মাঝে মাঝে রাগ হতো। ক্রিস্টিয়ান ইশকুলে লেখাপড়া শেখা আমার নৈতিকতায় রোজকার এই বেহায়া পকেটমারি বড়ো বিতশ্রদ্ধ লাগত।
এই ভাবেই দিন কতেক যাওয়ার পর, একদিন স্নান শেষে শোওয়ার ঘর থেকে হুংকার আসত, " আরে আমার খুচরো গুলো কোথায়? " চোরের মন বোঁচকার দিকে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর উত্তর দিত, " আমি কি করে জানব!"
"না, তুমি জানো না আর। রোজ রোজ অটোওয়ালা নোট ভাঙ্গিয়ে দেবে না। আমার পয়সাগুলো ফেরত দাও। "
চুরি ধরা পড়ে যাওয়াই, অপরাধী মা কেঁদে কেঁদে পয়সা ফেরত দিত - " সব নিয়ে নাও আমার কাছ থেকে। আর কোনদিনও তোমার পার্সে হাত দেবো না। " পয়সার ঠুং-ঠ্যাংর সঙ্গে জড়িয়ে থাকত কেমন একটা অপাপবিদ্ধ অসহায়তাও।
সেইদিন সকালে অফিসের ভাত বাড়ার মধ্যে যদিও লুকিয়ে থাকত রাগ- অভিমান- অভিযোগ , আমি জানতাম, সেইদিন সন্ধ্যেবেলায় বাড়ী ফিরে বাবা কোথা থেকে জোগাড় করে আনা ১টা ৫টাকার কয়েন, মার ঝাঁপিতে আলতো করে ফেলে দেবে। মাও বোধহয় জানত তা। তাই মুখে কিছু না বললেও পর্দার ফাঁক থেকে তার উঁকি চোঁখের মুচকি হাঁসি জানান দিত সব। ঠিক যেমন করে বাবাও জানত পরের দিন সকালে আবার অটোর খুচরো পাওয়া যাবে না।
আমি ভাবতাম এহেন একুশে আইন তো ভালো বটে - পকেট কাটলে সাঁজা নাই। সাঁজার বদলে গজা আছে যখন, তখন আমিও বা পকেট কাটি না কেন। এক সকালে, তাই দস্যু মোহনের আগে আমি নিজেই বাবার পাঞ্জাবিতে সিঁধ কেটে ফেলি। যদিও চুরির মাল উপভোগ করার আগেই আসামি সিধে জেলে আটক। বন্দী দশায় মার হাতের খুন্তির third degree না হয় আজ এখানে নাই মনে করলাম। বুঝলাম দাম্পত্যের নিয়ম বাৎসল্যে খাটে না। অভিযোগী গলায় মাকে বলেছিলাম " তুমি যে রোজ নাও, তাতে কিছু হয় না বুঝি। " মা আরেকবার খুন্তি ঘা মেরে বলেছিল, " গরিবের ঘরে মা বাবার পকেট না কাটলে সংসার চলে না। "
কথাটার মানে তখন (অবশ্যই) বুঝিনি। বুঝেছিলাম ঘটনাটার ১০-১৫ বছর পর, যখন আমার IIT যাওয়া প্রায় বন্ধ টাকার অভাবে। আমার অন্নপূর্ণা মা, সেইদিন, তার দস্যু মোহনের খুলি গুহা থেকে সব গুপ্তধন বেড় করে দিয়েছিল - এই ১০ বছরে জমানো ৫টা লাল মাটির ভাঁড় - আমার বাবার পকেট মেরে জমানো। সাকুল্যে এই ১০ বছরে ১০ হাজার টাকা - সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন। IITর ভর্তি পুরো টাকাটা না হলে, অনেকটাই এসেছিল সেই থরে থরে রাখা মাটির ভাঁড়গুলো থেকে। কসবার এঁদো গলির, এক ফেলি বারান্দায় যার পৃথিবীর পরিধি শেষ - সেই মার ১০ বছরের সবটুকু সঞ্চয় ঢেলে পাঠিয়েছিল আমাকে IIT তে পড়তে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত সব বাড়ীতেই নাকি এইরকমই হয় - আমার, আপনার বেড়ে ওঠার গল্প প্রায় একই - কোন এক বাবা- মার চোর-পুলিসি সঞ্চয়- সম্বল আছে তার পেছনে।
হাতে টোনার কালো leather walletটা নিয়ে এই সব হ-য-ব-র-ল ভাবছি, আর ওইদিক থেকে কেউ একজন walletর জন্যে চেঁচিয়ে মরছে। মার মতন স্বামীর পকেটমারি করার guilty pleasureএ পার্সের মধ্যে সদ্য হাতটি ঢুকিয়েছি - কিন্তু কোথায় কি!!! ডলার তো না হয় ছেঁড়েই দিলাম, এক খানি কুঁচো পেনিও তো হাতে এলো না। পার্সের ১০১ খাপ থেকে শুধু উঁকি মারছে ১০২টি ক্রেডিট কার্ড - লাল, নীল, হলুদ, সবুজ- রথের মেলা মতন। কিন্তু এখানে শুধু রথ দেখেই দিন কাবার, কলা বেচা আর হল না । মনে মনে ভাবি আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর আমার সন্তানের প্রয়োজনে আমি কোথা থেকে নিয়ে আসব সেই যক্ষপূরীর ধন। কোথা থেকে আসবে সেই ঐন্দ্রজালিক লক্ষ্মীর ঝাঁপি?
হায় নরেন্দ্র মোদী, অভাগা এই দেশের লক্ষ্য কটি বাবাদের cashless
করার আগে তুমি কি শুনেছিলে অগুনতি দস্যু মোহন মায়ের আক্ষেপ, তাকিয়ে ছিলে তার লাল মাটির ভাঁড়ের দিকে?
        
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 26-03-2023, 09:47 PM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)