25-03-2023, 12:08 PM
(This post was last modified: 25-03-2023, 01:14 PM by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বিজয়ের বিসিএস জয়
© শ্রী মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা
পর্ব্বঃ ৫
১৯শে পৌষ, শনিবার
ত্রিশের কোঠায় আসিলে বোধকরি আর নূতন করিয়া স্বপ্ন দেখা সহজ নহে, এক নূতন জীবনের আগমনী গান গাহিতে গেলেও তাহা বাস্তবিক এক স্পর্ধা বলিয়া বিবেচিত হইয়া যায়। তবুও অদম্য জীবন বহিয়া চলে নদীর ধারার ন্যয়, তাহার ধারা বহুকাল আগে শুষ্ক হইয়া যাওয়া ঐ সরস্বতী নদী স্বরূপ, জগৎ সমীপে শুকাইয়া গেলেও মৃত্তিকার অন্তরালে সে বহিয়া যায়। পেরেনিয়াল নহে, বর্ষায় পুষ্ট এফিমেরাল হইয়া, নিত্যবহ হইতে অনিত্যবহ হইয়া সে বহিয়া চলে। দিবস কাটিয়া যায়, সন্ধ্যা নামিয়া আসে, সূর্যালোকের শেষ বিন্দু গোধূলি হইয়া মিলাইয়া যায় আর অন্ধকার ঢাকিয়া লহে সর্বত্র!
রাতি পোহাইবে, কাননে কুসুমকলি সকলই ফুটিবে এই চিন্তা কী আদৌ সেই ব্যাক্তি করিতে পারে, যাহার অন্ধকারে ঝিঁঝিঁর ডাক অবধি নাই! তাহার অন্ধকার নিস্তব্ধ, তাহার ক্যানভাস বেরঙা! তাহার তুলির কালি শুকাইয়াছে! হৃদি শূণ্য, শূণ্য তাহার মন! পরাজয়ে তাহার ডালি সাজিয়াছে আর ব্যাথারা নিঝুম হইয়া তাহার গলায় জমা হইয়াছে, তবুও চিৎকার নাই, বিকার নাই, নাই চেতনা! সে আছে! না থাকিয়াও আছে! দৃশ্যমান তবু অদৃশ্য হইয়া সে আছে! সে বাঁচিয়া আছে একফোঁটা রঙের আশায়, দুইকলি গানের আশায় আর বাঁচিয়া আছে সে একবিন্দু জীবনের আশায়! ফ্যাকাশে বিবর্ণ হইয়া যাওয়া সারস্বত চেতনায় বিলুপ্তির পথ হইতে সরিয়া বশংবদ গোপথে চলিবার এক দূর্নিব্বার কামনায় সে আছে, আবহমানকাল ধরিয়া সে আছে নিজের ছেঁড়া কাঁথায় লুক্কায়িত লাখটাকার স্বপ্ন লহিয়া! একাকি অন্ধকারে পলকহীন জ্যোৎস্নার মত সে ওই স্বপ্নকে সকলের অন্তরালে নাড়িয়া দেখে মরিয়া গেল কীনা! কষ্টেরা পল্লবিত হয় তাহার দেহে, যন্ত্রণারা বিকশিত হয় তাহার মনে, আর পুরানো ক্ষতগুলা জাগিয়া উঠে তাহার আত্মায়!
এতভাবে মরিয়াও সে মরিতে চাহে না! সে বাঁচিয়া থাকে! কীসের আশায়! সব হারাইয়া সর্বস্ব খুইয়াও সে বাঁচিতে চাহে! সে বাঁচিতে চাহে কোন এক দূরহ স্বপ্নের সন্ধানে! তাহা হইলে বাঁচিবার অদম্য ইচ্ছাই কি জীবন! লড়িয়া চলাই কি তবে জীবন! তবে কি জীবনে সংঘর্ষ বলিয়া আদৌ কিছু নাই! আসলে কি সংঘর্ষই জীবন!
প্রভাতে খবর আসিল, আমার মামাতো বোন দেশের কনিষ্ঠতম ব্যাঙ্কারদিগের একজন হইয়াছে! মাত্র তেইশ বৎসর বয়সে জীবনের প্রথম প্রচেষ্টাতেই সে প্রবেশনারি অফিসার হইয়াছে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের! আপন কন্যার এহেন খবর লইয়া আমার ছোট মাতুল স্বয়ং আসিয়াছেন মিষ্টির হাঁড়ি হাতে! আমার এই বোনটি ছোট হইতেই নিজ মেধার পরিচয় বহুবার দিয়াছে, সরস্বতীর বরপুত্রী হইয়া সে জন্ম লহিয়াছে, এমন অসম্ভব সম্ভব যে সে করিবে ইহা তো কাম্য ছিলই, তাহার নামে বিজয় নাই, তবুও সে জিতিয়াছে! বিজয় হইয়াছে তাহার! এমন সন্দেশ পাইয়া আহ্লাদ হওয়া খুব স্বাভাবিক, কনিষ্ঠার প্রতি আশীষ ঝরিবে ইহাই স্বাভাবিক, তাহার খুশীতে ঝুমিয়া উঠিব ইহাই প্রত্যাশিত! তবুও কেন হাসিতে পারিতেছি না! কেন কষ্ট হইতেছে আমার এ খবরে! আমার এই বোন তো চিরকাল আমার ন্যাওটা, বিজুদা বিজুদা বলিয়া সারাক্ষণ পিছনে পড়িয়া থাকে তবুও কেন তাহার সাফল্য আমাকে ক্ষতবিক্ষত করিতেছে!
মনুষ্যমন! দেবা ন জানন্তি! কষ্টের রেশ কাটিলে টের পাইলাম, আমার ছোট বোনের সাফল্যে আমি বাস্তবিক খুশী হইয়াছি, আহ্লাদিত হইয়াছি, আনন্দিতও হইয়াছি! আদতে কষ্ট পাইয়াছি নিজ অবস্থায়! জ্যেষ্ঠ হইয়াও নিজ পায়ের ভরে আমি যেখানে দাঁড়াইতে পারি নাই সেখানে পাঁচ বৎসরের ছোট বোন যদি দৌড়াইতে থাকে তবে তাহার দৌড়াইবার প্রতি নহে নিজ অক্ষমতার প্রতি যন্ত্রণারা জাগে! তাহারা চিৎকার করিয়া আমার ব্যর্থতা, আমার অপদার্থতা তাহারা আমাকে পুনঃস্মরণ করাইয়া দেয়! স্মরণ করাইয়া দেয় যে আঠাশের চৌকাঠ পার করিবার প্রাক্কালে দাঁড়াইয়াও আমার আক্কেল দাঁত এখনও গজায় নাই! হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার পরের কথা, সাম্রাজ্যের নির্ম্মাণই আমি করিতে পারি নাই। পরের পয়সায় এখনও আমার দিনগুজরান হয়, পরার্থে আমার অন্ন জোটে! হোক সে পিতার অর্থ, নিজের তো নহে! উত্তরাধিকার যদি নিষ্কর্মা হয় তবে পূর্ব্বসূরী সম্পত্তি প্রদান করিয়াও দুঃখী হয়! অপাত্রে দান! পাত্র হিসাবে আমার 'অ-প্রাপ্তি' হইয়াছে উহাই বাস্তবিক আমার অপ্রাপ্তি!
আর যেইদিন আমার এই অপ্রাপ্তি ঘুচিবে সেইদিন, সেইক্ষণেই আমার মুক্তি হইবে! ঘটিবে অবসান সকল কষ্টের, কাটিবে সকল আঁধার! আসিবে এক সোনালী প্রভাত! নিঃসীম অন্ধকার চিরিয়া হর্ষের রশ্মিকিরণ ছুঁইয়া যাইবে আমাকে, নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হইবে খুশীদের কল্লোলে, জীবন হইবে প্রাণবন্ত! হয়তো দুইফোঁটা জল আঁখিতে থাকিবে তবে তাহা হইবে উচ্ছ্বাসের! সেইদিন হ্যাঁ হয়তো সেইদিন আপন বোনের সাফল্যও আমি উপভোগ করিতে পারিব! সকল শৃঙ্খল সেইদিন আমাকে ছাড়িয়া দিবে, অর্গলমুক্ত হইবে হৃদি, সংঘর্ষময় জীবনের এক সংঘর্ষে জয়ী হইব আমি! বিজয় হইবে আমার! মুক্তি হইবে…মুক্তি হইবে আমার!
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ॥
দেহমনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে,
গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ॥
আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,
দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।
বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা--
জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।


![[Image: images-13.jpg]](https://i.ibb.co/Nxpgv7F/images-13.jpg)
![[Image: 20230923-133529.png]](https://i.ibb.co/7GCXz9x/20230923-133529.png)
![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)