24-03-2023, 09:31 AM
অন্য রূপকথা
একগাদা জামাকাপড় ইস্ত্রি করতে দেওয়া ছিল, সেগুলো নিয়ে আসার জন্য পাড়ার লন্ড্রিতে গেছিলাম।। আমার স্লিপটা নিয়ে দোকানের দাদা দোকানের পিছনের একচিলতে জায়গায় ঢুকে গেলেন। এদিকে, আমার আগেই দোকানে আরও দুজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। মানে, একজন 'ছিল', অন্যজন 'ছিলেন'। একজন তো বাচ্চা মেয়ে, কলেজ - টলেজ পড়ে, আরেকজন মেয়েটির মা...টিপিক্যাল 'মা' 'মা' চেহারা।
তা যাই হোক, মিনিট পাঁচেক কেটে গেল, দোকানের দাদা আসেন না। ভদ্রমহিলা বেশ উসখুশ করছিলেন, একবার জোরে ডাকলেন ও "ও শান্তিদা, কি হলো তোমার?" ভেতর থেকে উত্তর এলো "বৌদি, এইঘরটা একটু রং হলো তো, মাল ওলোট-পালোট হয়েছে। তবে আছে, হারায় নি কিছু, একটু দাঁড়ান।"
উনি একবার মোবাইল টিপে সময়টা দেখলেন, তারপর মেয়েকে বললেন "তুই জামা ক'টা নিয়ে বাড়ি চলে আসবি? আমি চলে যাই?"
মেয়ে বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে বলল "উফ মা, দাঁড়াও তো চুপচাপ। গিয়ে তো দেখবে ওই অখাদ্য বাংলা সিরিয়াল গুলো! যত কূটকাচালি শেখায়। লাউড মিউজিক! মেক আপ! অসহ্য! ওসব দেখার দরকার নেই। তুমি দাঁড়াও।"
খুব সাধারণ কথা। আমরা সবাই কম বেশি বলেই থাকি। কিন্তু যে উত্তরটা শুনলাম, সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি একেবারেই।
ভদ্রমহিলা একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বলে উঠলেন "হ্যাঁ, কূটকাচালি... লাউড মিউজিক, মেক আপ, সব ই ঠিক। তাও আমি দেখব। কারণ আমার ভালো লাগে। কিছুক্ষণের জন্য আমি ওই জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই। মনে হয়, আমি একা না, আমার থেকেও খারাপ অবস্থায় কেউ আছে, আর সে জিতেও যায়। এতে আমার মনের জোর বাড়ে। আর তোরা যে মোবাইলে রাতদিন মুখ গুঁজে পড়ে থাকিস? আমাকে তো একদিন দেখালি...কি মির্জাপুর না কি নাম ছিল। গালিগালাজ, বীভৎস দৃশ্য, খুনোখুনি...কি নেই সেখানে! সেগুলো দেখা যদি তোর চয়েস হয়, আমার বাংলা সিরিয়াল দেখাও আমার চয়েস!"
আমি ঘুরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। দেখলাম, মেয়েটি মাথা নীচু করে রেখেছে। 'মাই চয়েসের' সপাট চপেটাঘাতেই বোধহয়।
অদ্ভুত লাগছিল আমার।
বাংলা সিরিয়াল, বা, হিন্দি সিরিয়াল নিয়েও কত কথা শুনি। 'কথা' না বলে 'খিল্লি' বলাই ভালো। আর, তার যে একটা উল্টোদিক আছে, থাকতে পারে...যেখানে জীবনের নেগেটিভ দিক সরিয়ে আশার আলো দেখা যায়... এভাবে তো ভাবিনি কখনও, সত্যি।
আর চয়েস! নিজেরা বড় হয়ে গিয়ে বাবা - মায়ের চয়েস নিয়ে অনেক কথাই বলি বা ভাবি আমরা। নিজেদের মতটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করি কম বেশি সবাই। কিন্তু কতটা ভাবি ওঁদের নিজস্ব ইচ্ছে - অনিচ্ছের কথা? চয়েসের কথা? আবার, উল্টোটাও হয়। অন্যের চাপে নিজের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিই আমরা প্রায়শই। নিজেদের মনে কষ্ট পাই, গুমরে মরি...তাও, মুখ খুলি না।
কেন খুলি না? কেন ভাবি না?
আজ একজন তথাকথিত ছাপোষা মানুষ আমাকে সেই প্রশ্নটাই করলেন।
ভাবছি আমি। দেরি করে ফেলেছি বড্ড, তাও ভাবছি।
সাধে কি আর সেই জ্যোতিষ্কের মতো মানুষটি বলেছিলেন "ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিশ করুন।"
ভাবছি আমি। ভাবছি।
একগাদা জামাকাপড় ইস্ত্রি করতে দেওয়া ছিল, সেগুলো নিয়ে আসার জন্য পাড়ার লন্ড্রিতে গেছিলাম।। আমার স্লিপটা নিয়ে দোকানের দাদা দোকানের পিছনের একচিলতে জায়গায় ঢুকে গেলেন। এদিকে, আমার আগেই দোকানে আরও দুজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। মানে, একজন 'ছিল', অন্যজন 'ছিলেন'। একজন তো বাচ্চা মেয়ে, কলেজ - টলেজ পড়ে, আরেকজন মেয়েটির মা...টিপিক্যাল 'মা' 'মা' চেহারা।
তা যাই হোক, মিনিট পাঁচেক কেটে গেল, দোকানের দাদা আসেন না। ভদ্রমহিলা বেশ উসখুশ করছিলেন, একবার জোরে ডাকলেন ও "ও শান্তিদা, কি হলো তোমার?" ভেতর থেকে উত্তর এলো "বৌদি, এইঘরটা একটু রং হলো তো, মাল ওলোট-পালোট হয়েছে। তবে আছে, হারায় নি কিছু, একটু দাঁড়ান।"
উনি একবার মোবাইল টিপে সময়টা দেখলেন, তারপর মেয়েকে বললেন "তুই জামা ক'টা নিয়ে বাড়ি চলে আসবি? আমি চলে যাই?"
মেয়ে বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে বলল "উফ মা, দাঁড়াও তো চুপচাপ। গিয়ে তো দেখবে ওই অখাদ্য বাংলা সিরিয়াল গুলো! যত কূটকাচালি শেখায়। লাউড মিউজিক! মেক আপ! অসহ্য! ওসব দেখার দরকার নেই। তুমি দাঁড়াও।"
খুব সাধারণ কথা। আমরা সবাই কম বেশি বলেই থাকি। কিন্তু যে উত্তরটা শুনলাম, সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি একেবারেই।
ভদ্রমহিলা একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বলে উঠলেন "হ্যাঁ, কূটকাচালি... লাউড মিউজিক, মেক আপ, সব ই ঠিক। তাও আমি দেখব। কারণ আমার ভালো লাগে। কিছুক্ষণের জন্য আমি ওই জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই। মনে হয়, আমি একা না, আমার থেকেও খারাপ অবস্থায় কেউ আছে, আর সে জিতেও যায়। এতে আমার মনের জোর বাড়ে। আর তোরা যে মোবাইলে রাতদিন মুখ গুঁজে পড়ে থাকিস? আমাকে তো একদিন দেখালি...কি মির্জাপুর না কি নাম ছিল। গালিগালাজ, বীভৎস দৃশ্য, খুনোখুনি...কি নেই সেখানে! সেগুলো দেখা যদি তোর চয়েস হয়, আমার বাংলা সিরিয়াল দেখাও আমার চয়েস!"
আমি ঘুরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। দেখলাম, মেয়েটি মাথা নীচু করে রেখেছে। 'মাই চয়েসের' সপাট চপেটাঘাতেই বোধহয়।
অদ্ভুত লাগছিল আমার।
বাংলা সিরিয়াল, বা, হিন্দি সিরিয়াল নিয়েও কত কথা শুনি। 'কথা' না বলে 'খিল্লি' বলাই ভালো। আর, তার যে একটা উল্টোদিক আছে, থাকতে পারে...যেখানে জীবনের নেগেটিভ দিক সরিয়ে আশার আলো দেখা যায়... এভাবে তো ভাবিনি কখনও, সত্যি।
আর চয়েস! নিজেরা বড় হয়ে গিয়ে বাবা - মায়ের চয়েস নিয়ে অনেক কথাই বলি বা ভাবি আমরা। নিজেদের মতটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করি কম বেশি সবাই। কিন্তু কতটা ভাবি ওঁদের নিজস্ব ইচ্ছে - অনিচ্ছের কথা? চয়েসের কথা? আবার, উল্টোটাও হয়। অন্যের চাপে নিজের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিই আমরা প্রায়শই। নিজেদের মনে কষ্ট পাই, গুমরে মরি...তাও, মুখ খুলি না।
কেন খুলি না? কেন ভাবি না?
আজ একজন তথাকথিত ছাপোষা মানুষ আমাকে সেই প্রশ্নটাই করলেন।
ভাবছি আমি। দেরি করে ফেলেছি বড্ড, তাও ভাবছি।
সাধে কি আর সেই জ্যোতিষ্কের মতো মানুষটি বলেছিলেন "ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিশ করুন।"
ভাবছি আমি। ভাবছি।