Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
দরিয়া

 
আজকাল পরিশ্রম কম হচ্ছে বলে রাতে ঘুম আসতে চায় না জিনিয়ার। আগে অফিস টাইমের পরে জার্নিতেই যেন শরীর কাবু হয়ে যেত ওর। বাড়ি ফিরে রান্নাবান্নার বালাই থাকত না বেশিরভাগ দিনই। টেক অ্যাওয়ে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিত। আর, ওদের কোম্পানি যেমন স্যালারি দেয়, তেমনি খাটিয়েও মারে। তাই উইক ডেজ গুলো যে কিভাবে কাটত,বুঝতেই পারত না জিনিয়া। আর উইক এন্ড তো এলো আর গেল। সেই ছোটবেলায় পড়া 'সোম মঙ্গল বুধেরা সব আসে তাড়াতাড়ি' র মতো আর কি! তাও ভাল, বাড়ির কাছেই রাজারহাটের মল, তাই মুভি যেতে, শপিং এ যেতে অসুবিধা হয়না।
একটা কনটেন্টের ওপর কাজ করছে ও এখন। আজকের মধ্যে সাবমিট করতে হবে। লিখতে লিখতেই মনে হলো একটু কফি খেলে ভাল হয়। ক্লান্তু লাগছে খুব। স্ট্রেসড লাগছে। ক্যাফাইন মাথায় গেলে হয়ত ভাল আইডিয়া আসবে। কনটেন্ট টা বেটার হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ল্যাপটপ টা টেবিলে রেখে বেডরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনের দিকে এলো ও।
নিউটাউনে একটা কিছুদিন আগে কমপ্লিট হওয়া হাউজিং এ থাকে জিনিয়া। রেন্টেড অ্যাপার্টমেন্ট। কলকাতার এই দিক টা বরাবর ই খুব প্রিয় ওর। সন্ধ্যেবেলা তো মনে হয় এক টুকরো বিদেশ যেন। তাই এবার আগের ফ্ল্যাটের এগ্রিমেন্ট শেষ হবার আগেই বিভিন্ন প্রপার্টি অ্যাপে খোঁজ করছিল এই এলাকায় ফ্ল্যাটের জন্য। শেষমেষ পুজোর পরে সন্ধান পেল এই কমপ্লেক্সের। ওর ফ্ল্যাটটা একজন এন আর আই এর, যিনি রেন্ট আউট করে দিতে চাইছিলেন। একটু বাজেট বেশি হলেও হাতছাড়া করেনি জিনিয়া।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যেতে গিয়ে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াল ও। বাবা আবার সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। খাটে না শুয়ে সোফায় শুলে হয়, ঘাড়ে ব্যথা হবে না? আস্তে আস্তে বাবার দিকে এগিয়ে গেল জিনিয়া।
বাবা কিছুতেই ওর এই ফ্ল্যাটে আসতে চাননি। আসলে বাবা রিটায়ার করার কিছুদিন পরেই মা চলে গেলেন। তারপর থেকেই বাবা একটু যেন চুপচাপ হয়ে গেছেন। কলকাতা আসতেই চান না,বলেন বর্ধমানেই ভাল আছেন। মেয়েকে যেন একটু সমীহ ও করে চলেন। তারপর এই ঝাঁ চকচকে ফার্নিশড ফ্ল্যাট। প্রথমদিন বারবার ওকে জিজ্ঞেস করছিলেন 'ঝুনু, এই খাট, সোফা, রান্নাঘরের জিনিস সব তুই কিনেছিস?' আর জিনিয়া বুঝিয়ে পারে না যে এগুলো সব আগে থেকেই ছিল। এবার ও তো জনতা কার্ফুর আগেরদিন বাবাকে এনেছিল ও, ওদের অফিস ওয়ার্ক ফ্রম হোম ঘোষনা করে দেওয়ায়। ভাগ্যিস এনেছিল, নইলে বাবা ওখানে একা একা কি যে করতেন!
একটু বেশি করে কফি বানিয়ে দুটো মাগে নিয়ে বাবার কাছে এলো জিনিয়া। দেখে বাবার কোলে রাখা নিউজ পেপারের কটা পাতা পড়ে গিয়ে উড়ে গেছে সেন্টার টেবিলের নীচে। আর বাবা কেমন হাঁ করে ঘুমোচ্ছেন...ঘামে চকচক করছে মুখটা।
ঘাম দেখে ওপরের দিকে তাকালো জিনিয়া। যা ভেবেছে তাই! বাবা একা ঘরে থাকলেই ফ্যান বন্ধ করে দেন, দেখেছে জিনিয়া। কি,না ইলেক্ট্রিসিটির বিল বেশি আসবে। এদিকে নিজে কষ্ট পাবেন, সে বেলা কিছু না! গরম ও পরে গেছে যথেষ্ট।
ভাবতে ভাবতেই চোখ টা কেমন কড়কড় করে উঠল জিনিয়ার। প্রাইভেট কোম্পানির একাউন্টেন্ট ছিলেন বাবা। অর্থের অভাব ছিল বাড়িতে, ভালবাসার না। একটাই স্বপ্ন ছিল...মেয়েকে যেন কষ্ট পেতে না হয়! মেয়ে যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে জিনিয়াও। আজ, বারো বছরের কেরিয়ারের পরে মোটামুটি একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে ও। কিন্তু...এত কিছুর মধ্যে হয়ত হারিয়ে গেছে বাবার সেই দুষ্টু মেয়েটা, যে বাবা ফিরলেই নানারকম দুষ্টুমি শুরু করে দিত বাবার সাথে। আর মা বকে উঠলে বাবা ই ওকে প্রশ্রয় দিতেন...,মা কে বলতেন 'না না আমি টায়ার্ড না...একটু চা দাও তো...'
বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে একটা দুষ্টু বুদ্ধি জেগে উঠল ওর মধ্যে। টুক করে নিজের ঘরে ঢুকে নিজের টিপ রাখার বাক্স খুলে একটা লাল টিপ বের করে পরিয়ে দিল বাবার কপালে। একদম ছোটবেলার মতো। একবার তো বাবা সেইভাবে বাজারেও চলে গেছিলেন! ঘটনা টা মনে পড়ে যেতেই হেসে ফেলল ও। তারপর সেন্টার টেবিলে রাখা কফির মাগ টা হাতে নিয়ে বলল 'ও বাবা, ওঠো, কফি খাও!'
বাবা একটু চমকেই উঠলেন যেন 'অ্যাঁ...হ্যাঁ' বলে।
'এসো বাবা, ব্যালকনিতে এসো...কফি খাও...' বলে স্লাইডিং দরজাটা খুলে বারান্দায় গিয়ে বলল ও।
একটু শ্লথ পায়ে এলেন বাবা। কপালে টিপ পরা বাবা। হঠাৎ দেখে পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসা মারাঠি আঙ্কেল -আন্টি বাবার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। বাবা ও একটু সৌজন্যের হাসি হাসলেন দেখে। আন্টি বলে উঠলেন 'হ্যালো দাদা, ইয়োর ডটার ইজ ভেরি নটি...দেখিয়ে আপকে ফোরহেড পে বিন্দি লাগা দি হ্যায়..'
চমকে উঠে বাবা কপালে হাত দিলেন, আর আর ও কপট রাগে আন্টিকে বলে উঠল 'ইস আন্টি, তুমি বলে দিলে? আই ওয়াজ প্লেইং আ গেম উইথ হিম...'
হঠাৎ শোনে, বাবা পাশ থেকে বলছেন 'মেরি বেটি যব ছোটি থি, তব অ্যায়সি হি করতি থি...আভি ভি বড়ি নেহি হুয়ি হ্যায়...' বলে হাসতে হাসতে ওর মাথায় হাত রাখলেন...।
বাবা কতদিন পর এভাবে বললেন ওকে, মাথায় হাত রাখলেন!
আনন্দে শরীর জুড়ে কাঁপুনি আসছে জিনিয়ার।
না, জিনিয়া না, 'পাপা কি পরী' - ঝুনুর।।
 
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 23-03-2023, 12:05 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)