21-03-2023, 08:18 PM
(This post was last modified: 22-03-2023, 03:24 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পাশাপাশি দুটো বাড়ি একটি দোতলা অন্যটি এক তলা । একটি রং করা অন্যটি একটু ফ্যাঁকাসে । এক বাড়ির কর্তা কলেজ শিক্ষক , পাশের বাড়ির কর্তা পাইকারি কারবারি । এই দুই বাড়ির একটিতে বাস রুপার অন্যটিতে সোহেলের । দুজনার মাঝে হৃদয় ঘটিত কিছু ব্যাপার আছে । এটা এই মহল্লার সবাই জানে । সেই ছোট বেলা থেকেই পাশাপাশি দুই বাড়ির বাসিন্দা হওয়ায় অবাধ যাতায়াত । সেই যাতায়াত যে কথন দুই হৃদয়ে শুরু হয়েছে সেটা কেউ বলতে পারে না ।
সোহেল আর রুপা যখন এক রিকশায় বাড়ি ফেরে তখন কেউ আড় চোখে তাকায় না । মহল্লার কুটনি আনটি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে না “ওই দেখ কেমন বেহায়াপনা চলছে”। যখন ওরা ছাদে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে তখন কেউ উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে না , কি চলছে ।
কারো কোন সমস্যা না থাকলেও দুই বেক্তির সমস্যা আছে । এই দুই বেক্তির একজন হচ্ছেন আরমান তালুকদার অন্যজন নওশাদ মজুমদার । মাস্টারি করা শিক্ষিত আরমান তালুকদার পাইকারি বাজারের আড়ৎদার নওশাদ মজুমদার কে কোন কারনে পছন্দ করেন না । আবার এই ব্যাপারটা নওশাদ মুজুমদারের বেলায় ও এক , কলেজে মাস্টারি করা আরমান তালুকদার কে পছন্দ করে না উনি ।
দুজনার ছেলে মেয়ের হৃদয় ঘটিত ব্যাপারের মত এই দুজনের মন কষাকষির ব্যাপারও কবে থেকে শুরু হয়েছে সেটাও কেউ বলতে পারে না । আরমান সাহেবের ভাষ্য এই অসিক্ষিত পাইকারি কারবারির সাথে বাড়ি করে সারাজীবন পচতিয়েছেন, প্রতিবেশী হিসেবে আরও রুচিশীল মানুষের দরকার ছিলো । আর নওশাদ সাহেবের ভাষ্য হচ্ছে , কলেজ মাস্টার আরমান সব জায়গায় মাস্টারি করে । সবাই কে নিজের ছাত্র মনে করে । একে অপরের প্রতি এমন বিরুপ মনভাব থাকলেও কোনদিন ঝগড়া পর্যন্ত গড়ায় নি। না গড়ানোর কারন দুজনের বউদের মাঝে বেশ সখ্য । প্রায় সখি ই বলা যায় ।
নওশাদ পত্নি জাহানারা বয়সে আরমান পত্নি বিলকিসের কিছু ছোট হলেও । দুজনে গলায় গলায় ভাব । আর এই ভাবের কারনেই দুজনের সন্তানদের মাঝে প্রেম ভাবের আদান প্রদান সম্ভব হয়েছে । দুজনের স্বামীর মাঝে ঠাণ্ডা যুদ্ধ থাকার পর ও আচার অনুষ্ঠানে , বিপদে আপদে । মিলে মহাব্বতে যাতায়াত রয়েছে । এই দুই সখির কারনেই আরমান সাহেব আর নওশাদ সাহবের চাইলেও ছেলে মেয়েদের কিছু বলতে পারেন না ।
অবশ্য কিছু বলার অবকাশ রুপা আর সোহেল দেয় ও না । তুখোড় স্টুডেন্ট সোহেল , বাপের সপ্ন পুরনের দিকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে । আরমান সাহেবের ইচ্ছা ছেলে তার বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে , বিরাট গবেষক হবে । দেশে না এলেও সমস্যা নেই , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই হলো ।
সব গুলো বোর্ড পরীক্ষায় সরবচ্চ নাম্বার পেয়ে পাশ করেছে সোহেল । এখন দেশের সবচেয়ে নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে । এখানেও রেজাল্ট ভালো । যে কোন মুহূর্তে স্কলারশিপ হয়ে যাবে । তাহলেই আরমান সাহেবের মুক্তি , ওই নওশাদের মেয়ের কাছ থেকে মুক্তি । এমন নয় যে মেয়েটা খারাপ , বরং উল্টো । বেশ ভালো স্টুডেন্ট , সেই সাথে বাড়ির বৌ হওয়ার জন্য যেসব গুনাগুন থাকতে হয় বলে আরমান সাহেব বিশ্বাস করেন , তার সব ই আছে মেয়েটার । রুপা যখন এই বাড়িতে আসে তখন আরমান সাহেব ও খুশি হন , বাড়িতে কেমন জানি একটা উচ্ছল আনন্দ আনন্দ পরিবেশ তৈরি হয় । মেয়েটা এমনকি ওনার শরীরের খেয়ল ও রাখে । কখন কি ঔষধ খেতে হবে , কি কি খাওয়া ওনার নিষেধ এসব রুপার নখদর্পণে । এমন বৌ ই তো ছেলের জন্য চান উনি । সমস্যা সুধু ওই বাপ টা , সারাক্ষণ টাকার গরম দেখায় ।
আরমান সাহেব মাঝে মাঝে একা একা দুঃখ করেন , এমন একটা ভালো মেয়ে ছেলের বৌ হিসেবে তিনি পাবেন না । উনি নিজেই নিজেকে পেতে দিবেন না । ওনার স্ত্রী তো এক পায়ে খাড়া , অনেক আগেই রুপার মায়ের সাথে কথা পাকা করে ফেলেছে । কিন্তু আরমান সাহেবের ইচ্ছা এই পাকা কথা উনি ভেস্তে দেবেন । যদিও ভাবেন ভেস্তে দেবেন , কিন্তু মন থেকে জোড় পান না তেমন । ছেলে এতো ভালো , ওনার সব কথা শোনে , ছেলের একটা কথা উনি কিভাবে ফেলবেন । নাহয় একটু সহ্য করেই নেবেন ওই আড়ৎদারের মূর্খতা ।
একি ধরনের প্ল্যান নওশাদ সাহেবের মনেও আছে । যদি কোন রকমে মেয়ের বিয়ে ওই মাস্টারের ছেলের সাথে হয়ে যায় তাহলে উনি আর শান্তিতে বাচতে পারবেন না । মাস্টার উনার উপর জন্মের প্রতিশোধ নেবে । কিন্তু এই ভেবে মন খারাপ হয় যে , এমন ছেলে পাওয়া দুস্কর । যেমন ব্রিলিয়ান্ট তেমন ভদ্র । একটা কাজের কথা বললে কোনদিন না করে না । আরতের হিসাব নিকাশের খাতায় এমন বেবস্থা করে দিয়েছে যে ভুল হওয়ার কোন উপায় ই নেই । ফান্ড তসরুফ হওয়ার কোন উপায় ও নেই । বাপটা যদি ভালো হতো তাহলে কোন কথাই বলতেন না নওশাদ সাহবে । মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ের দিকে তাকিয়ে উনি এই সম্পর্ক মেনে নেবেন । আবার মাঝে মাঝে মনে থেকে শ্বায় পান না । তবে একটি কথা উনি জানেন, মেয়ে যদি এসে বলে “বাবা আমি সোহেল কেই বিয়ে করবো” তাহলে আর উপায় থাকবে না নওশাদ সাহেবের ।
<><>
দিন যায় বছর যায় , সব কিছু চলে প্ল্যান মাফিক । সোহেলের স্নাতক শেষ হয়েছে , যেমনটা আশা করা হয়েছিলো তেমন ই হয়েছে। ফুল স্কলারশিপে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যাবস্থাও হয়ে গেছে । রুপার ও স্নাতক শেষ , রেজাল্ট ভালোই তবে সোহেলের মত নয় । এদিকে সোহেলের বিদেশ যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসে , সোহেলের মা চাইলেন ছেলে কে একেবারে বিয়ে করিয়েই পাঠাবেন পর দেশ ।
রুপার মাও নিমরাজি , বিদেশ গিয়ে যদি সোহেল অন্যরকম হয়ে যায় । তাই ভেবে রুপার মা বিয়েতে রাজি হয়ে যায় । বিপদে পরলেন আরমান তালুকদার । এমন সোনার টুকরো ছেলে কে কিভাবে বলবেন যে “না এই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবেনা”। ছেলে যদি বিগড়ে যায় ? যে ছেলে বাপের সব কথা মাথা পেতে নিয়েছে । সেই ছেলে যদি বিদ্রহ করে? তাহলে কি করবেন উনি।
নওশাদ মজুমদার ও একটি নৌকার যাত্রী , মেয়েকে কি করে বলবেন “ না এই ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবো না”। কি ব্যাখ্যা দেবেন আদরের কন্যার কাছে । একটি যুক্তিও যে নিজের পাল্লায় পাচ্ছেন না । যদি জোড় খাটান তাহলে হয়ত হিতে বিপরীত হবে। এই কলেজ মাস্টার যদি জানতে পারে , তাহলে খুশিতে আহ্লাদে ছেলের বৌ করে নেবে মেয়েকে । এমন মেয়ে পাওয়া তো আর চাট্টি খানি কথা না । শেষে চিরজীবনের জন্য মেয়েকে হারাবে ওই মাস্টারের কাছে ।
উপায় না দেখে দুজনে বেয়াই হতে রাজি হয়ে গেলো । তবে মন থেকে নয় অনেকটা বাধ্য হয়ে ।
<><><>
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে , সোহেল আর রুপা আনন্দে তা থৈ তা থৈ নাচে । শপিং চলে দিনরাত , মাস্টার পত্নি আর আড়ৎদার গিন্নি এক হয়ে শপিং করে । আনন্দে তারা আটখানা ।
এরি মাঝে ঘটে এক বিপত্তি । হুবু বেয়াইরা লেগে যায় ঝগড়া । ঝগড়া ঠিক নয় । মাস্টার মশায় অনেকটা এক পেষে জ্ঞান ডান করে আড়ৎদার বেয়াই কে । তিনি ছেলে বিয়েতে একটা সুতাও নেবেন না । আর আড়ৎদার মেয়েকে এক বস্তা স্বর্ণালঙ্কার দেবেন।
এক পর্যায়ে মাস্টার মশায় একটু বাড়াবাড়ি ই করে ফেলেন , জনসম্মুখে মূর্খ খেতাব দিয়ে বসেন হবু বেয়াই কে । সাথে এও বলে বসেন টাকার বড়াই যেন ওনার সামনে না করেন। আর এও বলে দিয়েছেন যে ভাগ্য ভালো যে এমন ছেলে কে জামাই হিশেবে পাচ্ছেন , মূর্খ আড়ৎদার হয়েও। এবং এই ছেলেকে জামাই হিশেবে পাওয়ার জন্য যে নিজের মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছেন এমন বানোয়াট কথা বলতেও পিছপা হন নি । বহুদিনের সপ্ন ছিলো এটা আরমান তালুকদারের এসব কথা বলার , সপ্ন পুরন হলো তবে ভুল সময়ে । সেটা উনিও বুঝতে পারলেন তবে দেরি হয়ে গেছে ।
জনসম্মুখে এমন চপেটাঘাত খেয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন নওশাদ মজুমদার । নইলে উনিও মনে হয় ছেড়ে দিতেন না । সবচেয়ে বড় দুঃখ পেয়েছেন ওনার মেয়েকে লেলিয়ে দেয়ার মিথ্যা অপবাদ শুনে ।
বেশ কয়েকদিন যাবত উৎসব আমেজ ছিলো পাশাপাশি দুই বাড়িতে , আজ সেই দুই বাড়িতেই থমথমে হওয়া। মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ নেই । এতদিনের রুপা সোহলের প্রেমে যে ব্যাপারটা ঘটেনি আজ বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় সেটা ঘটলো । এলাকার লোকজন কানাঘুষা শুরু করলো । কেউ হতাশা ব্যাক্ত করলো কেউবা খুশি হলো ।
আপাত দৃষ্টিতে দুই বাড়ি কে মৃত মনে হলেও । আরমান মজুমদারের বাড়ির ছাদে তখন এক জরুরি মিটিং চলছে । মিটিং টা দ্বিপাক্ষিক , রুপা আর সোহেল । দুজনের মুখ থমথমে , এর আগেও এই ছাদে মিটিং হয়েছে তবে আবহাওয়া এমন ছিলো না কোনদিন ।
“ আমি নিজে গিয়ে ক্ষমা চাচ্ছি চাচার কাছে”
“ তুই কেনো ক্ষমা চাইবি?”
“ প্লীজ রুপা এমন করিস না , বাবা একটা ভুল করেছে , তাই আমাকে কেন শাস্তি দিবি তুই”
“ ব্যাপারটা আর আমার হাতে নেই , এখন বাবা যা বলবে আমি তাই করবো”
“ প্লীজ রুপা এমন করিস না , মা সেই সকাল থেকে কান্না করছে”
“ তুই হলে কি করতি?”
“ আচ্ছা আমি যদি চাচা কে রাজি করাতে পারি তাহলে?”
“ আমি তো বললাম ই বাবা যা বলবে , তবে একটা কথা মনে রাখিস বাবা কে যদি রাজি করাতে পারিস তাহলেই এই বিয়ে হবে “
<><><>
সোহেল যখন অস্ত্রু সিক্ত নয়নে নওশাদ মজুমদারের সামনে দাঁড়ালো , এক ধরনের তৃপ্তি পেল মজুমদার সাহবে । বিজয়ের তৃপ্তি , মনে মনে বললেন দেখ খটাশ মাস্টার তোর ছেলে কেমন দাড়িয়ে আমার সামনে । এই ছেলেকে নিয়েই তো তোর গরব। রাজি হয়ে গেলেন মজুমদার সাহেব ।
বিয়েতে অবশ্য তালুকদার সাহেব অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়েই থাকলেন । এমনকি বিয়েও হলো মজুমদার সাহেবের পছন্দ মতন। এক বস্তা স্বর্ণের সাথে খাট পালঙ্ক ও এলো । বাঁশর ঘরে দুলহান সেই পালঙ্কে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো দুলহার । আমরা কেউ জানি না এটাই ওদের আদর সোহাগের প্রথম রাত/দিন নাকি , কারন সেই ধরনের কোন ইংগিত সোহেল রুপা কাউকেই দেয় নি । আবার কেউ সেই সন্দেহ ও ফেলে দিতে পারে না যে এতদিনের সম্পর্ক…………
“ কি যে খুশি লাগছে , সেই ছোট বেলা থেকে সপ্ন দেখতাম তুই এভাবে বসে থাকবি, একটু হলেই সেই সপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছিলো, চাচা কে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো , সারা জীবনের জন্য তার কাছে রিঙই হয়ে গেলাম”
“ ইস চাচার কাছে ঋণী হয়েছিস , আর চাচার মেয়ের কাছে , আরে বুদ্ধু ওইটা তো বাবার মন রক্ষা করার জন্য বলেছিলাম , আর তোকে পরীক্ষা করার জন্য , আমি তো তোকে ভালবাসি তোর বাবা কে তো না । তাই বাবা রাজি না হলেও এই সপ্ন তোর পুরন হতো”
“ আর হ্যাঁ চাচা কি এখন থেকে বাবা বলবি”
<><><>
সোহেল বিদেশে গিয়েছে বছর দুই হতে চলল , ওখানে পি এইচ ডি করার সুযোগ পেয়েছে । এখন বৌ নিয়ে যেতে পারবে । সেই তোরজোড় চলছে । হয়ত বা মাস ছয়েকের মাঝে রুপা উড়াল দিবে। ব্যাপারটা অনেকটা দ্বিতীয় বিয়ের মত , অনেকদিনের গ্যাপের পর আবারো মিলন হবে । এক দিক থেকে দেখলে প্রথম বিয়ের চেয়ে এটার গুরুত্ব বেশি । প্রথম বিয়ের আগের রাতেও দেখা হয়েছে দুজনের । ছাদে বসে প্রায় সারারাত আড্ডা দিয়েছে । এখন তো প্রায় দুই বছরের গ্যাপ । এই মিলনের আকুলতা বেশি ।
তবে সোহেল রুপার ভাগ্য খারাপ । এবারো একটা সমস্যা দানা বাধতে শুরু করেছে । হ্যাঁ তালুকদার বনাম মজুমদার সমস্যা । তবে এবারের প্লেয়ার ভিন্ন , নওশাদ মুজুমদারের জায়গায় রুপা মজুমদার আর আরমান তালুকদারের জায়গায় সোহেল তালুকদার ।
গতবারের চেয়ে এবারের সমস্যা আরও গুরুতর । সেবার তো দুই গিন্নি আর সোহেল রুপা ওই তালুকদার আর মজুমদারের বিপক্ষে তৃতীয় শক্তি হিশেবে ছিলো । এবার আর তৃতীয় পক্ষ নেই । সবাই কোন না কোন দলে যোগ দিয়েছে । কেউ মিত্র পক্ষ তো কেউ অক্ষ শক্তির দলে রসদ যোগাচ্ছে ।
সোহেলের বাবা মা সোহেলের কাছে নালিশ জানিয়েছে , রুপা আর তাদের তেমন করে খোঁজ খবর রাখে না । বেশিরভাগ সময় নিজের বাবার বাড়িতে কাটায় । এই নিয়ে প্রবাসী সোহেল বেশ চিন্তিত । বেশ কয়েকবার রুপার সাথে কথা বলেছে । কিন্তু সুরহা হয়নি । রুপার মায়ের সাথেও কথা বলেছে , কিন্তু পাত্তা পায়নি । বরং উনি রুপার পক্ষ টেনেই কথা বলেছেন ।
কিন্তু গতকালের নালিশটা বেশ গুরুতর ছিলো , আরমান তালুকদার ভুলে দুইবার হাই প্রেশারের ঔষধ খেয়ে ফেলেছেন । এর প্রধান করান রুপার অবহেলা । চাইলেই শ্বশুর কে দুই বেলা ঔষধ দিতে পারে রুপা । বেজায় খেপেছে সোহেল ,
“ হ্যালো , এসব কি শুনছি রুপা”
“ কি”
“ বাবা নাকি দুবার প্রেশারের ঔষধ খেয়েছেন”
“ হ্যাঁ , উনি শিক্ষিত মানুষ হয়েও কি করে এমন ভুল করলে কে জানে”
“ রুপা!!!!”
“ চেঁচাচ্ছিস কেনো? উনার তো খুব গর্ব উনি শিক্ষিত মানুষ”
“ তুই একটু খেয়াল রাখলে কি হয়?”
“ কিছুই হয় না , আমি যতটুকু খেয়াল রাখার রাখি , চাকরির ফাকে ফাকে রেধে খাওয়াই , যা যা লাগে করে দেই , বিদ্যুৎ বিল , গ্যাস বিল দেই , এর চেয়ে বেশি আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়”
“ প্রতিশোধ নিচ্ছিস”
“না, যদি নিতাম তাহলে ওদের মুখ দেখতাম না”
“ রুপা!!! প্লীজ এমন করিস না, আর কটা দিন এর পর তো চলেই আসবি “
“ আমিও সেটাই বলছি , আমি চলে এলে তখন কি করবে ?”
“ একটা আয়া রেখে দেবো”
“ এখন দে “
“ তাহলে তুই আছিস কি করতে , তুই থাকতে অন্য মানুষ কেন আমার বাবা মা কে দেখবে”
“ তাহলে বলছিস আমি আয়ার সাবস্টিটিউট !!!!”
“ না সেটা কোন হবে , তুই ওনাদের পুত্র বধু , এটা তোর দায়িত্ব”
“ আমি মনে করি না , এটা আমার দায়িত্ব না , আমার মন যতটুকু করতে শ্বায় দেয় সেটা আমি করছি , যদিও সেটা আমার দায়িত্বের মাঝে পরে না, তোর কি আমার কথা মনে নেই ? আমি বলেছিলাম এই বিয়েতে আমি মত দিয়েছি কারন তোকে ভালবাসি বলে , তোর বাবার আর মায়ের পুত্র বধু হওয়ার জন্য নয়”
“ বিয়ের আগে তো তুই খুব খেয়াল রাখতি আমার বাবা মায়ের”
“ হু রাখতাম কারন ওনাদের প্রতি আমার তখন শ্রদ্ধা ছিলো এখন নেই”
“ তাহলে বাবা ঠিক ই বলতেন”
“ কি বলতেন”
“ বাদ দে , যদি আমাকে ভালোই বাসিস তাহলে আমার বাবা মা কে দেখে রাখ”
“ রাখছি যতটুকু সম্ভব”
“ পুরোটা রাখতে হবে , নইলে আমার ভালোবাসা পাবি না”
“ তাহলে তুইও তোর বাবা কে বল সবার সামনে আমার বাবার কাছে মাফ চাইতে , না হলে তুই ও আমাকে আর পাবি না”
“দুই বছর পর এই কথা কেনো বলছিস?”
“ বলছি কারন তুই ও দুইবছর আগের আমি কে দেখতে চাচ্ছিস”
সমাপ্ত
সোহেল আর রুপা যখন এক রিকশায় বাড়ি ফেরে তখন কেউ আড় চোখে তাকায় না । মহল্লার কুটনি আনটি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে না “ওই দেখ কেমন বেহায়াপনা চলছে”। যখন ওরা ছাদে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে তখন কেউ উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে না , কি চলছে ।
কারো কোন সমস্যা না থাকলেও দুই বেক্তির সমস্যা আছে । এই দুই বেক্তির একজন হচ্ছেন আরমান তালুকদার অন্যজন নওশাদ মজুমদার । মাস্টারি করা শিক্ষিত আরমান তালুকদার পাইকারি বাজারের আড়ৎদার নওশাদ মজুমদার কে কোন কারনে পছন্দ করেন না । আবার এই ব্যাপারটা নওশাদ মুজুমদারের বেলায় ও এক , কলেজে মাস্টারি করা আরমান তালুকদার কে পছন্দ করে না উনি ।
দুজনার ছেলে মেয়ের হৃদয় ঘটিত ব্যাপারের মত এই দুজনের মন কষাকষির ব্যাপারও কবে থেকে শুরু হয়েছে সেটাও কেউ বলতে পারে না । আরমান সাহেবের ভাষ্য এই অসিক্ষিত পাইকারি কারবারির সাথে বাড়ি করে সারাজীবন পচতিয়েছেন, প্রতিবেশী হিসেবে আরও রুচিশীল মানুষের দরকার ছিলো । আর নওশাদ সাহেবের ভাষ্য হচ্ছে , কলেজ মাস্টার আরমান সব জায়গায় মাস্টারি করে । সবাই কে নিজের ছাত্র মনে করে । একে অপরের প্রতি এমন বিরুপ মনভাব থাকলেও কোনদিন ঝগড়া পর্যন্ত গড়ায় নি। না গড়ানোর কারন দুজনের বউদের মাঝে বেশ সখ্য । প্রায় সখি ই বলা যায় ।
নওশাদ পত্নি জাহানারা বয়সে আরমান পত্নি বিলকিসের কিছু ছোট হলেও । দুজনে গলায় গলায় ভাব । আর এই ভাবের কারনেই দুজনের সন্তানদের মাঝে প্রেম ভাবের আদান প্রদান সম্ভব হয়েছে । দুজনের স্বামীর মাঝে ঠাণ্ডা যুদ্ধ থাকার পর ও আচার অনুষ্ঠানে , বিপদে আপদে । মিলে মহাব্বতে যাতায়াত রয়েছে । এই দুই সখির কারনেই আরমান সাহেব আর নওশাদ সাহবের চাইলেও ছেলে মেয়েদের কিছু বলতে পারেন না ।
অবশ্য কিছু বলার অবকাশ রুপা আর সোহেল দেয় ও না । তুখোড় স্টুডেন্ট সোহেল , বাপের সপ্ন পুরনের দিকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে । আরমান সাহেবের ইচ্ছা ছেলে তার বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে , বিরাট গবেষক হবে । দেশে না এলেও সমস্যা নেই , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই হলো ।
সব গুলো বোর্ড পরীক্ষায় সরবচ্চ নাম্বার পেয়ে পাশ করেছে সোহেল । এখন দেশের সবচেয়ে নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে । এখানেও রেজাল্ট ভালো । যে কোন মুহূর্তে স্কলারশিপ হয়ে যাবে । তাহলেই আরমান সাহেবের মুক্তি , ওই নওশাদের মেয়ের কাছ থেকে মুক্তি । এমন নয় যে মেয়েটা খারাপ , বরং উল্টো । বেশ ভালো স্টুডেন্ট , সেই সাথে বাড়ির বৌ হওয়ার জন্য যেসব গুনাগুন থাকতে হয় বলে আরমান সাহেব বিশ্বাস করেন , তার সব ই আছে মেয়েটার । রুপা যখন এই বাড়িতে আসে তখন আরমান সাহেব ও খুশি হন , বাড়িতে কেমন জানি একটা উচ্ছল আনন্দ আনন্দ পরিবেশ তৈরি হয় । মেয়েটা এমনকি ওনার শরীরের খেয়ল ও রাখে । কখন কি ঔষধ খেতে হবে , কি কি খাওয়া ওনার নিষেধ এসব রুপার নখদর্পণে । এমন বৌ ই তো ছেলের জন্য চান উনি । সমস্যা সুধু ওই বাপ টা , সারাক্ষণ টাকার গরম দেখায় ।
আরমান সাহেব মাঝে মাঝে একা একা দুঃখ করেন , এমন একটা ভালো মেয়ে ছেলের বৌ হিসেবে তিনি পাবেন না । উনি নিজেই নিজেকে পেতে দিবেন না । ওনার স্ত্রী তো এক পায়ে খাড়া , অনেক আগেই রুপার মায়ের সাথে কথা পাকা করে ফেলেছে । কিন্তু আরমান সাহেবের ইচ্ছা এই পাকা কথা উনি ভেস্তে দেবেন । যদিও ভাবেন ভেস্তে দেবেন , কিন্তু মন থেকে জোড় পান না তেমন । ছেলে এতো ভালো , ওনার সব কথা শোনে , ছেলের একটা কথা উনি কিভাবে ফেলবেন । নাহয় একটু সহ্য করেই নেবেন ওই আড়ৎদারের মূর্খতা ।
একি ধরনের প্ল্যান নওশাদ সাহেবের মনেও আছে । যদি কোন রকমে মেয়ের বিয়ে ওই মাস্টারের ছেলের সাথে হয়ে যায় তাহলে উনি আর শান্তিতে বাচতে পারবেন না । মাস্টার উনার উপর জন্মের প্রতিশোধ নেবে । কিন্তু এই ভেবে মন খারাপ হয় যে , এমন ছেলে পাওয়া দুস্কর । যেমন ব্রিলিয়ান্ট তেমন ভদ্র । একটা কাজের কথা বললে কোনদিন না করে না । আরতের হিসাব নিকাশের খাতায় এমন বেবস্থা করে দিয়েছে যে ভুল হওয়ার কোন উপায় ই নেই । ফান্ড তসরুফ হওয়ার কোন উপায় ও নেই । বাপটা যদি ভালো হতো তাহলে কোন কথাই বলতেন না নওশাদ সাহবে । মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ের দিকে তাকিয়ে উনি এই সম্পর্ক মেনে নেবেন । আবার মাঝে মাঝে মনে থেকে শ্বায় পান না । তবে একটি কথা উনি জানেন, মেয়ে যদি এসে বলে “বাবা আমি সোহেল কেই বিয়ে করবো” তাহলে আর উপায় থাকবে না নওশাদ সাহেবের ।
<><>
দিন যায় বছর যায় , সব কিছু চলে প্ল্যান মাফিক । সোহেলের স্নাতক শেষ হয়েছে , যেমনটা আশা করা হয়েছিলো তেমন ই হয়েছে। ফুল স্কলারশিপে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যাবস্থাও হয়ে গেছে । রুপার ও স্নাতক শেষ , রেজাল্ট ভালোই তবে সোহেলের মত নয় । এদিকে সোহেলের বিদেশ যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসে , সোহেলের মা চাইলেন ছেলে কে একেবারে বিয়ে করিয়েই পাঠাবেন পর দেশ ।
রুপার মাও নিমরাজি , বিদেশ গিয়ে যদি সোহেল অন্যরকম হয়ে যায় । তাই ভেবে রুপার মা বিয়েতে রাজি হয়ে যায় । বিপদে পরলেন আরমান তালুকদার । এমন সোনার টুকরো ছেলে কে কিভাবে বলবেন যে “না এই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবেনা”। ছেলে যদি বিগড়ে যায় ? যে ছেলে বাপের সব কথা মাথা পেতে নিয়েছে । সেই ছেলে যদি বিদ্রহ করে? তাহলে কি করবেন উনি।
নওশাদ মজুমদার ও একটি নৌকার যাত্রী , মেয়েকে কি করে বলবেন “ না এই ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবো না”। কি ব্যাখ্যা দেবেন আদরের কন্যার কাছে । একটি যুক্তিও যে নিজের পাল্লায় পাচ্ছেন না । যদি জোড় খাটান তাহলে হয়ত হিতে বিপরীত হবে। এই কলেজ মাস্টার যদি জানতে পারে , তাহলে খুশিতে আহ্লাদে ছেলের বৌ করে নেবে মেয়েকে । এমন মেয়ে পাওয়া তো আর চাট্টি খানি কথা না । শেষে চিরজীবনের জন্য মেয়েকে হারাবে ওই মাস্টারের কাছে ।
উপায় না দেখে দুজনে বেয়াই হতে রাজি হয়ে গেলো । তবে মন থেকে নয় অনেকটা বাধ্য হয়ে ।
<><><>
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে , সোহেল আর রুপা আনন্দে তা থৈ তা থৈ নাচে । শপিং চলে দিনরাত , মাস্টার পত্নি আর আড়ৎদার গিন্নি এক হয়ে শপিং করে । আনন্দে তারা আটখানা ।
এরি মাঝে ঘটে এক বিপত্তি । হুবু বেয়াইরা লেগে যায় ঝগড়া । ঝগড়া ঠিক নয় । মাস্টার মশায় অনেকটা এক পেষে জ্ঞান ডান করে আড়ৎদার বেয়াই কে । তিনি ছেলে বিয়েতে একটা সুতাও নেবেন না । আর আড়ৎদার মেয়েকে এক বস্তা স্বর্ণালঙ্কার দেবেন।
এক পর্যায়ে মাস্টার মশায় একটু বাড়াবাড়ি ই করে ফেলেন , জনসম্মুখে মূর্খ খেতাব দিয়ে বসেন হবু বেয়াই কে । সাথে এও বলে বসেন টাকার বড়াই যেন ওনার সামনে না করেন। আর এও বলে দিয়েছেন যে ভাগ্য ভালো যে এমন ছেলে কে জামাই হিশেবে পাচ্ছেন , মূর্খ আড়ৎদার হয়েও। এবং এই ছেলেকে জামাই হিশেবে পাওয়ার জন্য যে নিজের মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছেন এমন বানোয়াট কথা বলতেও পিছপা হন নি । বহুদিনের সপ্ন ছিলো এটা আরমান তালুকদারের এসব কথা বলার , সপ্ন পুরন হলো তবে ভুল সময়ে । সেটা উনিও বুঝতে পারলেন তবে দেরি হয়ে গেছে ।
জনসম্মুখে এমন চপেটাঘাত খেয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন নওশাদ মজুমদার । নইলে উনিও মনে হয় ছেড়ে দিতেন না । সবচেয়ে বড় দুঃখ পেয়েছেন ওনার মেয়েকে লেলিয়ে দেয়ার মিথ্যা অপবাদ শুনে ।
বেশ কয়েকদিন যাবত উৎসব আমেজ ছিলো পাশাপাশি দুই বাড়িতে , আজ সেই দুই বাড়িতেই থমথমে হওয়া। মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ নেই । এতদিনের রুপা সোহলের প্রেমে যে ব্যাপারটা ঘটেনি আজ বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় সেটা ঘটলো । এলাকার লোকজন কানাঘুষা শুরু করলো । কেউ হতাশা ব্যাক্ত করলো কেউবা খুশি হলো ।
আপাত দৃষ্টিতে দুই বাড়ি কে মৃত মনে হলেও । আরমান মজুমদারের বাড়ির ছাদে তখন এক জরুরি মিটিং চলছে । মিটিং টা দ্বিপাক্ষিক , রুপা আর সোহেল । দুজনের মুখ থমথমে , এর আগেও এই ছাদে মিটিং হয়েছে তবে আবহাওয়া এমন ছিলো না কোনদিন ।
“ আমি নিজে গিয়ে ক্ষমা চাচ্ছি চাচার কাছে”
“ তুই কেনো ক্ষমা চাইবি?”
“ প্লীজ রুপা এমন করিস না , বাবা একটা ভুল করেছে , তাই আমাকে কেন শাস্তি দিবি তুই”
“ ব্যাপারটা আর আমার হাতে নেই , এখন বাবা যা বলবে আমি তাই করবো”
“ প্লীজ রুপা এমন করিস না , মা সেই সকাল থেকে কান্না করছে”
“ তুই হলে কি করতি?”
“ আচ্ছা আমি যদি চাচা কে রাজি করাতে পারি তাহলে?”
“ আমি তো বললাম ই বাবা যা বলবে , তবে একটা কথা মনে রাখিস বাবা কে যদি রাজি করাতে পারিস তাহলেই এই বিয়ে হবে “
<><><>
সোহেল যখন অস্ত্রু সিক্ত নয়নে নওশাদ মজুমদারের সামনে দাঁড়ালো , এক ধরনের তৃপ্তি পেল মজুমদার সাহবে । বিজয়ের তৃপ্তি , মনে মনে বললেন দেখ খটাশ মাস্টার তোর ছেলে কেমন দাড়িয়ে আমার সামনে । এই ছেলেকে নিয়েই তো তোর গরব। রাজি হয়ে গেলেন মজুমদার সাহেব ।
বিয়েতে অবশ্য তালুকদার সাহেব অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়েই থাকলেন । এমনকি বিয়েও হলো মজুমদার সাহেবের পছন্দ মতন। এক বস্তা স্বর্ণের সাথে খাট পালঙ্ক ও এলো । বাঁশর ঘরে দুলহান সেই পালঙ্কে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো দুলহার । আমরা কেউ জানি না এটাই ওদের আদর সোহাগের প্রথম রাত/দিন নাকি , কারন সেই ধরনের কোন ইংগিত সোহেল রুপা কাউকেই দেয় নি । আবার কেউ সেই সন্দেহ ও ফেলে দিতে পারে না যে এতদিনের সম্পর্ক…………
“ কি যে খুশি লাগছে , সেই ছোট বেলা থেকে সপ্ন দেখতাম তুই এভাবে বসে থাকবি, একটু হলেই সেই সপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছিলো, চাচা কে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো , সারা জীবনের জন্য তার কাছে রিঙই হয়ে গেলাম”
“ ইস চাচার কাছে ঋণী হয়েছিস , আর চাচার মেয়ের কাছে , আরে বুদ্ধু ওইটা তো বাবার মন রক্ষা করার জন্য বলেছিলাম , আর তোকে পরীক্ষা করার জন্য , আমি তো তোকে ভালবাসি তোর বাবা কে তো না । তাই বাবা রাজি না হলেও এই সপ্ন তোর পুরন হতো”
“ আর হ্যাঁ চাচা কি এখন থেকে বাবা বলবি”
<><><>
সোহেল বিদেশে গিয়েছে বছর দুই হতে চলল , ওখানে পি এইচ ডি করার সুযোগ পেয়েছে । এখন বৌ নিয়ে যেতে পারবে । সেই তোরজোড় চলছে । হয়ত বা মাস ছয়েকের মাঝে রুপা উড়াল দিবে। ব্যাপারটা অনেকটা দ্বিতীয় বিয়ের মত , অনেকদিনের গ্যাপের পর আবারো মিলন হবে । এক দিক থেকে দেখলে প্রথম বিয়ের চেয়ে এটার গুরুত্ব বেশি । প্রথম বিয়ের আগের রাতেও দেখা হয়েছে দুজনের । ছাদে বসে প্রায় সারারাত আড্ডা দিয়েছে । এখন তো প্রায় দুই বছরের গ্যাপ । এই মিলনের আকুলতা বেশি ।
তবে সোহেল রুপার ভাগ্য খারাপ । এবারো একটা সমস্যা দানা বাধতে শুরু করেছে । হ্যাঁ তালুকদার বনাম মজুমদার সমস্যা । তবে এবারের প্লেয়ার ভিন্ন , নওশাদ মুজুমদারের জায়গায় রুপা মজুমদার আর আরমান তালুকদারের জায়গায় সোহেল তালুকদার ।
গতবারের চেয়ে এবারের সমস্যা আরও গুরুতর । সেবার তো দুই গিন্নি আর সোহেল রুপা ওই তালুকদার আর মজুমদারের বিপক্ষে তৃতীয় শক্তি হিশেবে ছিলো । এবার আর তৃতীয় পক্ষ নেই । সবাই কোন না কোন দলে যোগ দিয়েছে । কেউ মিত্র পক্ষ তো কেউ অক্ষ শক্তির দলে রসদ যোগাচ্ছে ।
সোহেলের বাবা মা সোহেলের কাছে নালিশ জানিয়েছে , রুপা আর তাদের তেমন করে খোঁজ খবর রাখে না । বেশিরভাগ সময় নিজের বাবার বাড়িতে কাটায় । এই নিয়ে প্রবাসী সোহেল বেশ চিন্তিত । বেশ কয়েকবার রুপার সাথে কথা বলেছে । কিন্তু সুরহা হয়নি । রুপার মায়ের সাথেও কথা বলেছে , কিন্তু পাত্তা পায়নি । বরং উনি রুপার পক্ষ টেনেই কথা বলেছেন ।
কিন্তু গতকালের নালিশটা বেশ গুরুতর ছিলো , আরমান তালুকদার ভুলে দুইবার হাই প্রেশারের ঔষধ খেয়ে ফেলেছেন । এর প্রধান করান রুপার অবহেলা । চাইলেই শ্বশুর কে দুই বেলা ঔষধ দিতে পারে রুপা । বেজায় খেপেছে সোহেল ,
“ হ্যালো , এসব কি শুনছি রুপা”
“ কি”
“ বাবা নাকি দুবার প্রেশারের ঔষধ খেয়েছেন”
“ হ্যাঁ , উনি শিক্ষিত মানুষ হয়েও কি করে এমন ভুল করলে কে জানে”
“ রুপা!!!!”
“ চেঁচাচ্ছিস কেনো? উনার তো খুব গর্ব উনি শিক্ষিত মানুষ”
“ তুই একটু খেয়াল রাখলে কি হয়?”
“ কিছুই হয় না , আমি যতটুকু খেয়াল রাখার রাখি , চাকরির ফাকে ফাকে রেধে খাওয়াই , যা যা লাগে করে দেই , বিদ্যুৎ বিল , গ্যাস বিল দেই , এর চেয়ে বেশি আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়”
“ প্রতিশোধ নিচ্ছিস”
“না, যদি নিতাম তাহলে ওদের মুখ দেখতাম না”
“ রুপা!!! প্লীজ এমন করিস না, আর কটা দিন এর পর তো চলেই আসবি “
“ আমিও সেটাই বলছি , আমি চলে এলে তখন কি করবে ?”
“ একটা আয়া রেখে দেবো”
“ এখন দে “
“ তাহলে তুই আছিস কি করতে , তুই থাকতে অন্য মানুষ কেন আমার বাবা মা কে দেখবে”
“ তাহলে বলছিস আমি আয়ার সাবস্টিটিউট !!!!”
“ না সেটা কোন হবে , তুই ওনাদের পুত্র বধু , এটা তোর দায়িত্ব”
“ আমি মনে করি না , এটা আমার দায়িত্ব না , আমার মন যতটুকু করতে শ্বায় দেয় সেটা আমি করছি , যদিও সেটা আমার দায়িত্বের মাঝে পরে না, তোর কি আমার কথা মনে নেই ? আমি বলেছিলাম এই বিয়েতে আমি মত দিয়েছি কারন তোকে ভালবাসি বলে , তোর বাবার আর মায়ের পুত্র বধু হওয়ার জন্য নয়”
“ বিয়ের আগে তো তুই খুব খেয়াল রাখতি আমার বাবা মায়ের”
“ হু রাখতাম কারন ওনাদের প্রতি আমার তখন শ্রদ্ধা ছিলো এখন নেই”
“ তাহলে বাবা ঠিক ই বলতেন”
“ কি বলতেন”
“ বাদ দে , যদি আমাকে ভালোই বাসিস তাহলে আমার বাবা মা কে দেখে রাখ”
“ রাখছি যতটুকু সম্ভব”
“ পুরোটা রাখতে হবে , নইলে আমার ভালোবাসা পাবি না”
“ তাহলে তুইও তোর বাবা কে বল সবার সামনে আমার বাবার কাছে মাফ চাইতে , না হলে তুই ও আমাকে আর পাবি না”
“দুই বছর পর এই কথা কেনো বলছিস?”
“ বলছি কারন তুই ও দুইবছর আগের আমি কে দেখতে চাচ্ছিস”
সমাপ্ত