Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ_প্রেম
#29
(31-12-2022, 03:24 PM)ddey333 Wrote: প্রস্তাবটা কিন্তু মন্দ নয় !!   Smile

ভাই আপনার জন্য আমি গল্পটা শেষ করছি, 
আর যে ভাই পোস্ট করছিলেন আমি খমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার কাছে। 





পর্ব:১০ & শেষ পর্ব




রাইমা আর অরিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুজনেরই চোখ মুখ বিষন্ন হয়ে আছে। অরিকের গায়ের সাদা পাঞ্জাবীটা দেখে রাইমা মৃদু হাসল। তবে সেই হাসির কোনো প্রাণ নেই। রাইমা অনেকক্ষণ সময় নিল। অরিক তার মুখ পানে চেয়ে রইল কিছু শোনার অপেক্ষায়। রাইমা এক পর্যায়ে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল। অরিকের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,

'আপনি বলেছিলেন না আপনাকে শাস্তি দেয়ার কথা। বলেছিলেন আমি যেন আপনার বন্ধুকে ক্ষমা করে দেই, যা শাস্তি দেয়ার আপনাকে দেই। তবে তাই হোক। আমি ক্ষমা করে দিব আপনার বন্ধুকে। তবে তার বিনিময়ে আমার একটা শর্ত আছে।'

অরিক চোখ বুজে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,

'কি শর্ত?'

রাইমা চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকাল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে গম্ভীর সুরে বললো,

'আপনাকে এখন বাইরে গিয়ে সবার সামনে সবটা সত্যি বলতে হবে। আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন তা সব। আর এই সমস্ত কিছু শোনার পর যদি আপনার আর আমার পরিবার আপনাকে ক্ষমা করে দেয়, তবে আমিও আপনাকে ক্ষমা করে দিব। কিন্তু তার জন্য আগে আপনাকে এই কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে। আর এটাই আপনার শর্ত কিংবা আবার শাস্তিও বলতে পারেন।'

অরিক স্তব্ধ হয়ে গেল। এবার তার কি বলা উচিত? তার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো তো কোনো সঠিক উত্তর পাঠাচ্ছে না। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এসব কথা শোনার পর তার মায়ের কি অবস্থা হবে সেটা ভেবে তার বুক কেঁপে উঠছে। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা ক্রমাগত তার স্পন্দন বাড়িয়ে যাচ্ছে। ভয় হচ্ছে খুব। কিন্ত তাও সে মেনে নিল। নিজেকে মানিয়ে নিল। বুঝে নিল, অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। আর তারও শাস্তি পাওয়ার সময় চলে এসেছে। তাই সে ঠিক করলো বলে দিবে সবাই কে সবটা। সত্যিটা যতই তেতো হোক না কেন সবাই ঠিকই বাধ্য হয়ে সেটা হজম করে নেয়। আর এই মানুষগুলোও সেটা পারবে যেই মানুষগুলো অধীর আগ্রহে বাইরে অপেক্ষা করে চলছে তাদের মতামত শোনার জন্য।

অরিক জোরে দম নিল। হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বললো,

'ঠিক আছে, আমি সবাইকে সবটা বলবো।'
.
.
দুজনেই শক্ত মনে ড্রয়িং রুমে সকলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সবার উৎসুক দৃষ্টি তাদেরকে ঘিরে। যেন সবাই একটা 'হ্যাঁ' এর অপেক্ষায় মত্ত। 

অরিক নিজেকে শক্ত করলো। কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই যেন তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ইশ, তখন যদি এই মুখটা একবার তার মনে ভেসে উঠত, তবে জীবনেও এই ঘৃণ্য কাজটা সে করতে পারতো না। অরিকের শরীর ঘামছে, বুকটা কাঁপছে। সে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললো,

'আমার সবাইকে কিছু বলার আছে।'

অরিকের মা জবাবে বললেন,

'হ্যাঁ বাবা, আমরা তো তখন থেকেই অপেক্ষা করছি তোমাদের মতামত শোনার জন্য। কি সিদ্ধান্ত নিয়েছ বলো?'

'সিদ্ধান্তের কথায় পরে আসছি মা। তার আগে আমার অন্য কিছু বলার আছে।'

সবাই বুঝতে পারছে না অরিক ঠিক কি বলতে চাইছে। রাইমার বাবা তখন বললেন,

'ঠিক আছে বাবা, বলো তুমি কি বলবে? আমরা শুনছি তোমার কথা।'

অরিক এবার একবার মায়ের দিকে তাকাল তো একবার রাইমার দিকে তাকাল। বুক ধরফর করছে তার। মাথার চুলগুলো ঘামে লেপ্টে আছে। অরিক চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিজেকে সর্বোচ্চ কঠিন করে বললো,

'মা, আমি অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। আমি জানি তুমি আমার সেই ভুলের কথা জানার পর আমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না। তাও ক্ষমা চাচ্ছি। শুনেছি সন্তান হাজার টা ভুল করার পরও মা তাকে ক্ষমা করে দেয়। তাই ক্ষমা চেয়ে নিলাম, যদি পারো কোনোদিন আমায় ক্ষমা করে দিও।'

অরিকের মা হতভম্ব হয়ে তার ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন। কি বলছে সে? তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তাই রেগে গেলেন তিনি। ধমক দিয়ে বললেন,

'কি সব বলছো বলতো? কি অন্যায়ের কথা বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।'

'বলছি মা, সবটা বলছি। মা, এক মাস আগে এক রাতে আমি বলেছিলাম না, আমি আজ রাতে নিরবের বাসায় থাকব। সেই রাতে অামি নিরবের বাসায় না থেকে পার্টিতে চলে যাই। সেখানে অনেক মানুষ ছিল। আর আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েরা সব তখন নাচ গান আর ড্রিং করাতে ব্যস্ত ছিল। ঐ সময় আমিও এসব খেয়ে ফেলি। অনেকটাই খেয়ে ফেলি। আর তারপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সারারাত উন্মাদের মতো নাচানাচি আর ড্রিংস করার পর ভোরের দিকে আমরা সেখান থেকে বের হই। আর তখন সেই রাস্তায় রাইমা ও ছিল। হয়তো সেই পথেই কোথাও যাচ্ছিল। নেশাগ্রস্ত থাকায় তখন একা রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখে আমি টিচ করে বসি। আর রাইমা তখন রেগে যায় আর রেগে গিয়ে সে আমাকে চড় মেরে বসে। সেই চড়টাই আমার মস্তিষ্ককে পুরোপুরি বিগড়ে দেয়। আর তখন আমি রাগের বসে..(থেমে একটু দম নেয়)..রাগের বসে ওকে আমি র-রে'প করে বসি। আর এই কথাটা ও কাউকে বলেনি। ওর মা বাবা কষ্ট পাবে বলে নিজের মনেই সবটা চেপে রেখেছিল। ম-মা ত-তোমার ছেলে একজন ধর্ষক। এবার তুমি তোমার ছেলেকে শাস্তি দাও মা, খুব কঠিন শাস্তি দাও।'

অরিকের কন্ঠ থেমে যায়। আর পারছে না সে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তার গালের উপর উষ্ণ কিছুর স্পর্শ পেতেই সে অনুভব করে সে কাঁদছে। 
.
 
পুরো বাড়ি জুড়ে পিনপতন নিরবতা কাজ করছে। প্রত্যেকটা মানুষ যেন নিষ্প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেবল। রাইমা তখন তার মা বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ভেজা গলায় বলে উঠে,

'মা বাবা, তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। সেদিন পারিনি আমি তোমাদের কিছু বলতে। মনে হচ্ছিল তোমরা সহ্য করতে পারবে না। কিন্ত কতদিন আর লুকিয়ে রাখতাম বলো? আর যে পারছিলাম না। তাই আজ উনাকে দিয়েই উনার অন্যায়টা সবার মাঝে আনি। সেদিনের রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক রাত ছিল। আগের দিন ভার্সিটি বন্ধ দেওয়ায় ভেবেছিলাম কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দিব। তাই রাতের ট্রেনেই বেরিয়ে যাই। আর পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাতের শেষ প্রহর এসে পড়ে। চারদিকে যখন নতুন এক দিনের সূচনা ঘটছিল। অন্ধকারের পর যখন আবারও পৃথিবী নতুন আলোতে সাজতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেসময় আমার জীবনের আলোটা নিভে যায়। আমার দিনটা অন্ধকারে ঢেকে যায়। আমি কখনও ভাবিও নি মা বাবাকে সারপ্রাইজ দিতে এসে আমার জীবনেও এত বড়ো সারপ্রাইজ ঘটে যাবে। আমি ঐ রাতটা কখনও ভুলতে পারবো না। তবে তোমাদের জন্য জীবনের ঐ কালো অধ্যায়টাকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে পারবো। এবার তোমরাই সিদ্ধান্ত নাও, আমার এখন কি করা উচিত?'

নিস্তব্ধতার বুক চিরে রাইমার মায়ের গগন বিদারী কান্নার শব্দ শোনা গেল। সেই কান্নার তীক্ষ্ণ সুর সকলের হৃদয়কে যেন খান খান করে দিচ্ছে। রাইমা এবার আর মাকে আটকাল না। মায়ের সাথে সেও চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় যে ছিল সে। কবে সে একটু মন খুলে কাঁদতে পারবে। কবে তার মায়ের বুকে মাথা রেখে তার কষ্ট লাগব করতে পারবে। এবার শান্তি পাচ্ছে সে। ভীষণ শান্তি।
.
.
রাইমার পরিবারের সবার চোখ থেকেই সমান তালে জল পড়ছে। তারা যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না কিছু। এত কিছু হয়ে গেল এই মেয়েটার সাথে অথচ তারা কেউ কিছু বুঝলো না? নিজেদের বোকামীতে নিজেরাই এখন মাথা চাপড়াচ্ছে। রাইমা মামা চাচারা রেগে গিয়ে অরিককে মারতে পর্যন্ত গিয়েছিলেন কিন্তু রাইমা বাঁধা দেওয়ায় আর পারেননি। অরিক এখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐদিকে লিমা সোবহান কাঁপা কাঁপা হাতে তার ফোনটা হাতে নিলেন। তারপর কার একটা নাম্বারে কল করে বললেন,

'আমার ছেলে একজন ধর্ষক। আপনারা এসে তাকে গ্রেফতার করুন। আমি আমার ছেলেসহ '''' এই জায়গায় আছি। আপনারা প্লীজ চলে আসুন।'

সবার আর বুঝতে বাকি ছিল না তিনি কাকে কল দিয়েছেন। সকলেই এবার শান্ত হয়। অরিকের মা বোন নিরব হয়ে বসে আছে। তারা আজ থেকে এক ধর্ষকের মা আর বোন। কথাটা ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠল তাদের। তাও একটা টু শব্দ করলো না কেউ। অরিক এক পলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলল। তার মনে হলো সে আর তার এই মুখ কোনোদিন মাকে দেখাতে পারবে না। 

পুলিশ এল। তদন্ত করলো অনেক। অরিক আবারও তার সব দোষ স্বীকার করলো। মায়ের সামনে তার ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। ছেলের বিয়েতে এসেছিল এক বুক আনন্দ নিয়ে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে তার। তিনি এখন বাড়ি ফিরে যাবেন তবে শূন্য বুকে। একজন ধর্ষকের মায়ের তো এটাই প্রাপ্য।
 যাওয়ার আগে রাইমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আর তারাও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। 
.
.
অরিক বর্তমানে জেলে। রাইমার বলা শেষ কথাগুলো এখনও তার মস্তিষ্কে বিচরণ করে,

'কি পরিমাণ কষ্ট পেলে একজন মা তার ছেলেকে নিজে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জানেন? হয়তো জানেন না। কিন্তু আজ থেকে জানবেন। আমি আপনাকে চাইলেই ক্ষমা করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমার বিবেক আমাকে সেটা করতে দেয়নি। তাই আমি বাধ্য হয়েছি এত কিছু করতে। পারলে আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আমি আশা আল্লাহও আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন হয়তো। আর হ্যাঁ একটা কথা, আপনাকে আমি কোনদিন ভুলবো না। আমার এই তেইশ বছরের জীবনে আপনি আমার এক চির স্মরণীয় অধ্যায়, সরি কালো অধ্যায়। যে অধ্যায়কে আমি আমার জীবন থেকে কখনোই মুছে ফেলতে পারবো না, কখনোই না।'

"সমাপ্ত"

(লেখিকা আপুর বানি)

(একটা ছোট্ট ভুল পুরো জীবনটাকে তছনছ করে দেয়। তাই কিছু করার আগে একবার হলেও ভাববেন, কোন ভুল করছেন না তো। আর সবসময় নিজের রাগকে কন্ট্রোলে রাখবেন। এই একটাই জিনিস আপনার পুরো জীবন ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। ভালো থাকবেন সবাই। গল্পটা আর বাড়ালাম না। কারণ এটা অনুগল্প হিসেবে লিখবো বলেই ভেবেছিলাম। তাও অনেক পর্ব হয়ে গিয়েছে। কেউ এটা বলবেন না যে গল্পে কেন হিরো হিরোইনের মিল দিলাম না। মূলত এই গল্পের কোন হিরো ছিল না। আর এই গল্পটাতে আমি ইচ্ছে করেই কোনো হিরো আনিনি। সব গল্পের হিরো হিরোইনের প্রয়োজন হয় না আর সবসময় হিরো হিরোইনের মিলনও সব গল্পের কাম্য বিষয় না। এটা সাধারণ একটা মেয়ের গল্প। কোন প্রেমের গল্প না। তাই এই গল্পে কোনো হিরো হিরোইনের মিল হয়নি। হয়েছে সত্যের জয়, আর অসত্যের পরাজয়। আর হ্যাঁ, গল্পের নাম নিয়ে কেউ কনফিউশনে পড়বেন না প্লীজ। গল্পে যেহেতু প্রেম আসেনি তাই আমি গল্পের নাম নিষিদ্ধ প্রেম দিয়েছিলাম, এটার অন্য অর্থও বোঝায় তবে এই গল্পের ক্ষেত্রে আমার এই নামটায় মাথায় এসেছিল। আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন। শীঘ্রই নতুন গল্প আসবে। ততদিন পর্যন্ত সবাই উৎফুল্ল মনে তার অপেক্ষায় থাকুন। ভালো থাকুন।    

(ধন্যবাদ সবাইকে) 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ_প্রেম - by Bangla Golpo - 20-03-2023, 10:34 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)