Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা)
#5
পর্ব:০৫


একমাস পর,,,,,

সময়ের সুতোর টানে চলে গেলো একটি মাস। প্রতিটা মিনিটে মিনিটে ভালোবাসার মানুষের মুখটা দেখার পিপাসা নিয়ে এই একটা মাস কাটিয়েছে তর্নি ও আরার। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি চলে এলো। কাল তাঁরা দুজন দুজনকে চোখ ভরে দেখবে। ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগপত্র গুছাতে লাগলো তর্নি। পঞ্চগড় থেকে ঢাকা যাওয়া আসাও মুখের কথা নয়। ১২ঘন্টা সময় লাগে আসতে যেতে। সুপ্তি আর জুহা ঢাকা চলে গেছে। রাজশাহী আর কুমিল্লা থেকে তো যাওয়া আসা মুখের কথা বলা যায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে তর্নি কালো শাড়িটা বের করে রাখলো। এটা পড়ে যাবে সে। আরার জেদ ধরেছে কালো শাড়ি আর কালো চুড়ি পরে যেন তর্নি যায়। স্টেশন থেকে সে নিতে আসবে। 

তর্নির হাতে টাকা ছিলো না। তাই কাল তাঁর মায়ের থেকে টাকা চেয়ে এনে শাড়িটা কিনেছে। রাতে তর্নির বাবা বাড়ি এসে তর্নির মাকে মেরেছেন। মারার কারণ ছিলো উনার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা নাকি তর্নির মা না বলে নিয়ে গেছেন। তর্নির বুঝতে কষ্ট হলোনা এই টাকাটাই উনি তর্নিকে দিয়েছেন৷ ভেবেছিলো মায়ের হাতে টাকা আছে তাই চেয়েছিলো, কিন্তু উনি যে তর্নির চাওয়া পূরণেত জন্য জেনে শুনে সাপের গর্তে হাত দিবেন জানতো না সে। জানলে কখনোই টাকা চাইতো না।

রাগে তর্নির মন চেয়েছিলো শাড়িটা আবার দোকানদারকে ফেরত দিয়ে টাকা এনে উনার মুখের উপর ছুঁড়ে ফেলতে। কিন্তু আরারের আবদার এটা। আরার প্রতিদিন বলে যেদিন তর্নি ঢাকা যাবে সেদিন যেন কালো রংয়ের শাড়ী পড়ে যায়। হাত ভরে যেন কালো রংয়ের চুড়ি থাকে। শাড়ি চুড়ি কিনার জন্য তর্নির হাতে টাকা ছিলো না। টুকটাক যা টাকা ছিলো সব ফোনে ফ্লেক্সি দিয়ে দিয়ে শেষ হয়ে গেছে। রোজ রোজ আরারের সাথে মেসেজে কথা বলা ফোনে টাকা তো লাগবেই। আরার বলেছিলো অনেকবার ফ্লেক্সি দিতে তর্নি না বলেছে। মায়ের থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে ৮শ টাকার একটা শাড়ি আর ৮০টাকার দু'ডজন চুড়ি কিনেছে। সবই কম দামের। যে টাকা দিয়ে বড়লোকের ঘর থেকে বের হওয়া খারাপ দেখায় সে টাকায় গরীবের একদফা শপিং হয়ে যায়। 

সব গুছানো শেষে ফোনটা বের করে আরারকে কল দিলো তর্নি। যত দিন যাচ্ছে আরারের জন্য পাগল হচ্ছে সে। একমিনিট আরারে গলা না শুনলে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে।ভালোবাসার অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে সে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘন্টা চলে যায় আরারের সাথে ফোনে কথা বলে বা চ্যাট করে। সারাদিন ঘরে বসে থেকে আরারের সাথে কথা বলা ছাড়া কোনো কাজ নেই তর্নির। সে তাঁর মাকেও জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের সম্পর্কের কথা। উনি তর্নিকে বলেছেন এসব ছেলে ভালো নয়। আজ ভালোবাসি বললে কাল বলবে ভালোবাসি না। এসব সম্পর্ক রাখবি না। তর্নি শুনেনি তাঁর মায়ের কথা। সে তো জানে আরার কেমন ছেলে। তর্নি আরারকে আবার ফোন দিলো। আরার ফোন কেটে মেসেজ দিলো,

_মেঘবতী রেস্টুরেন্টে আছি। সুলভ ও ফারদিন পাশে। পরে ফোন দিবো।

 তর্নি রিপ্লাই দিলো
_আচ্ছা। আমি দুপুরে বাড়ি থেকে বের হবো। রাতের ট্রেনে আসবো। পৌঁছাতে কাল সকাল হবে।

 আরার। রিপ্লাই দিলো 

_তাহলে এখন একটা ঘুম দাও। আমি সকালে স্টেশনে এসে বসে থাকবো। আমার মেঘবতীকে দেখতে। শাড়ি পরে আসবা কিন্তু নয়তো মাইর দিবো।" 

মেসেজটা পড়ে তর্নি হেসে উঠলো। ফোনটা রেখে দিয়ে খেতে গিয়েও ফিরে আসলো৷ আরারের গলা না শুনা পর্যন্ত গলা দিয়ে খাবার নামবে না তাঁর। আবার ফোন হাতে নিয়ে আরারকে মেসেজ দিলো,,,

_এই যে লাগানহীন ভদ্রলোক শুনেন না,স্টেশন থেকে আপনি আমাকে নিতে আসবেন এটা ভেবেই না আমার কেমন জানি লাগছে। আমি খুব নার্ভাসফিল করছি। হাত পা কাঁপছে সাথে হৃদপিণ্ডটাও। আপনারও কি এমন হচ্ছে?

মেসেজ সেন্ড করে তর্নি ফোনটা বুকে রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। আরার শব্দটাও তাকে এলোমেলো করে দেয়। তাহলে এই মানুষটা চোখে সামনে থাকলে নিজেকে গুছাবে কেমনে সে? মিনিট দুএক পরে ফোনে মেসেজ এলো। তর্নি তৎক্ষণাৎ মেসেজ সিন করে,

_কণ্ঠরাণী মেঘবতী। তুমি জানো আমার কেমন লাগছে? কখনো কি আমার কথা ভেবে তোমার শিরায় শিরায় গরম রক্ত স্রোত অথবা শীতল স্রোতের অনুভব করেছো তুমি? আমি করেছি। এখনো করছি৷ জানো তোমার কণ্ঠস্বর শুনলে আমার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে। হৃদপিণ্ড দ্রুত গতিতে চলে। কাল এই কণ্ঠ রাণীর সাথে আমার দেখা হবে। আমি আমার মেঘবতীকে ছুঁয়ে দিবো। নিজ হাতে খাইয়ে দিবো। এসব ভাবতেই অনূভুতির চাদর আমাকে মুড়িয়ে নিচ্ছে। আচ্ছা মেঘবতী, তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কি তুমি লজ্জায় এসে আমার বুকে মুখ লুকাবে? নাকি চোখ বন্ধ করে আমার ছোঁয়া অনুভব করবে? আচ্ছা তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পর আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনো অঘটন ঘটাবো না তো? অথবা তুমি আমার বুকে মাথা রাখলে অতিদ্রুত হৃদস্পন্দনে আমি হার্টঅ্যাট্যাক করবো না তো?

মেসেজের শেষ কথাটা পড়ে তর্নি হেসে উঠলো। তারপর লিখলো,

 _আপনার বুকে মাথা রেখে আমি আপনার হৃদস্পন্দন গুনতে চাই। দেখতে চাই আপনার হৃদ কি আমার হৃদের থেকে বেশি দৌড়ায়। এটাও দেখতে চাই আপনার নাম শুনে যেমন শিহরণে আমি কেঁপে উঠি। তেমনি আপনার ছোঁয়াও আমায় কাঁপিয়ে তুলে কিনা।

তর্নির মেসেজ পরে আরান মিটিমিটি হাসতে লাগলো। তাঁর হাসি দেখে ফারদিন সুলভকে কনুই মেরে আরারের দিকে ইশারা করলো। সুলভ ফারদিনকে উঠে যাওয়ার ইশারা দিলো। তাঁরা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে গেলো। আরারের সেদিকে খেয়াল নেই সে মেসেজ লিখছে,

_মেঘবতী! তোমার মায়াবী চোখ দুটো একবার আকাশে মেলে দাওনা। দেখো, আকাশটা আজ মেঘে ভরে গেছে। তুমি আসবে বলে কি তাঁরা খুশিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, বৃষ্টি হয়ে তোমায় স্বাগতম জানাতে? তাহলে আসুক না তাঁরা। একটা বৃষ্টির দিন হোক না আমাদের। কালো শাড়ি কালো চুড়ি পরা তোমাকে মেঘে ভিজিয়ে জবুথবু করে দিক। তোমার অঙ্গে লেপ্টে যাক ভেজা শাড়ী৷ অঙ্গ ছুঁয়ে বৃষ্টিগুলো বেয়ে পড়ুক। তোমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে হারিয়ে যাই আমি মাতাল হয়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্লজ্জের মতো কান্ড করি দু একবার। তুমি খুব করে আমাকে শাসন করো৷ আমি অবাধ্য হই বার বার।

মেসেজটা পড়ে তর্নির শ্বাস যেন আটকে আসছে। অনুভূতি গুলো বুকে ঘূর্নিঝড় তুলে যাচ্ছে। আরারের প্রেম মাখানো কথা গুলো শুনলে এমনই হয় তর্নির। ইচ্চে করে আরারের বুকে মাথা রেখে খুশিতে কেঁদে দিক। তর্নি ছোট করে মেসেজ দিলো"

_মিস্টার লাগামহীন ভদ্রলোক, আপনি সত্যিই একটা নির্লজ্জ।

 তর্নির মেসেজ পড়ে কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে উঠলো আরার। তারপর রিপ্লাই দিলো

_লাগামহীনতার আর নির্লজ্জতার দেখলে কি? সব তো লজ্জা ভাঙাভাঙির রাতে হবে। তখন দেখবো তোমার লজ্জাটাও কই যায়।

_উঁহু আমাদের ফুলসজ্জায় কোনো লজ্জা ভাঙাভাঙি হবে না। আমাদের ফুলসজ্জা হবে সবার থেকে আলাদা। মাথার উপর থাকবে একটা বিশাল আকাশ। সেই আকাশের ঠিক মাঝখানে থাকবে এক ফালি চাঁদ। চাঁদের চারপাশে থাকবে লক্ষ লক্ষ ঝলমলে তারা। রাস্তার আইলেনের উপর বসে থাকবো আমরা দুজন। লাল বেনারসি পরে থাকবো আমি। আপনার কাঁধে মাথা রেখে দেখবো ব্যস্ত শহরের তারা ভরা আকাশ৷ আর আপনার ঘুম পেলে আমার কোলে মাথা রেখে আকাশের তারা গুনবেন আপনি। আপনার অগোছালো চুলে হাত ভুলিয়ে দিলে পরম আয়েশে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে দু'একটা ছোটখাটো বেয়াদবি করবেন আপনি। আপনার ভারি নিঃশ্বাসের ভারিতে বেয়াদব হবো আমিও। আচ্ছা আমি কেন আপনার মতো কথা বলছি? তবে কি আপনার প্রভাবটা আমার উপর পড়েছে? 

মেসেজটা সেন্ড করার অনেক্ষণ পরেও আরারের কোনো রিপ্লাই এলো না। তর্নি ফোনটা রেখে দিলো৷ বিদ্যুৎ চলে গেছে চার্জও তেমন নাই। সব চার্জ শেষ করে দিলে আরারের সাথে কথা বলবে কেমনে?

____________

অবাকের সপ্তম আকাশে দাঁড়িয়ে আছে আরার। তাঁর চোখের সামনে ফারদিন ও সুপ্তি তুমুলঝগড়া করে যাচ্ছে। একজন আরেকজনের দিকে বার বার তেড়ে যাচ্ছে। সুলভ ও জুহা ওদের আটকাচ্ছে। সুপ্তির সাথে মেসেজে কথা বলা কালীন বাইরে অনেক চিল্লাচিল্লি শুনে আরার বাইরে এসেছিলো সে। এসে এই দৃশ্যটা দেখে মাথায় বাজ পড়েছে তাঁর। সুপ্তি বলল সে আজ আসবে তাঁর বন্ধুরা কাল চলে এসেছে অথচ সুপ্তি কিনা অলরেডি চলে এসেছে? তারমানে আরানকে সে মিথ্যা বলল? আরার এগিয়ে ওদের সামনে আসতেই ওরা ঝগড়া থামিয়ে দিলো। চারদিকে অনেক মানুষজন। আরার সবাইকে নিয়ে অন্যদিকে গেলো। একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যেতেই ফারদিন আরারকে বলল,

_ভাই তোর এই মাথা মোটা গার্লফ্রেন্ডকে তুই সামলা। আমার কোনো রুচি নাই আলাদা ভাবে আড্ডা দেওয়ার। আমি যাচ্ছি।

সুপ্তি চেঁচিয়ে উঠে বলল,
_ওহ হ্যালো মিস্টার দুর্দিন। কাকে মাথা মোটা বলছেন? মাথা মোটা হলেন আপনি? আর আমি উনার গার্লফ্রেন্ড নই শালি লাগি। ওকে?

আরার এমনিতেই সুপ্তির উপর রেগে গেছিলো এখন শালি শুনে আরো রেগে গেলো। তেড়ে এসে সুপ্তির হাত ধরে বলল,

_ওই তুমি কি বলছো এসব? আর তুমি না বললে তুমি আজ ঢাকা আসবে। মিথ্যে বললে কেন?

সুপ্তি অবাক হয়ে বলল,
_আরে জিজু আপনার সাথে তো আমার কথাই হয়নি। 

_কাকে জিজু ডাকছো তুমি? আমি তোমার জিজু লাগি?

জুহা এসব দেখতে দেখতে বলল,

_এক মিনিট। আমার না মাথায় কিছু ঢুকছে না। ও আপনাকে জিজু ডাকলে সমস্যা কি ভাইয়া? আর ফারদিন ভাইয়া, আপনিই বা কেন এটা বললেন যে সুপ্তি উনার গার্লফ্রেন্ড? আমাকে কেউ একটু বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।

সুলভ এগিয়ে এসে জু্হাকে বলল,

_আমি বুঝাচ্ছি। আরার মিস করল্লা ভাবির সাথে,,,,,,"সুপ্তি বড় বড় চোখ করে সুলভের দিকে তাকালো৷ সুলভ শুকনো এক ঢোক গিলে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,"আরার সুপ্তির সাথে প্রেম করলে তো সুপ্তি আরারের গার্লফ্রেন্ডই হবে তাইনা?

সুলভের কথায় সুপ্তি ও তর্নি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। সুপ্তি ফারদিনের দিকে তাকালো। ফারদিনের বিরক্তি চোখ দুটো সুপ্তিকে লবণ মরিচের সাথে পিষে দিচ্ছে। সুপ্তি বুঝতে পারলো ফারদিন কেন সেদিন ভাবি ভাবি ডেকেছিলো। কিন্তু ওরা এটা কেন ভাবে? ওরা কি জানেনা আরার তর্নির সাথে প্রেম করে? জুহা বলল,

_আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইয়া৷ আরার ভাইয়া সুপ্তির সাথে নয়, তর্নির সাথে প্রেম করেন।

জুহার কথাটা যেন বিকট আওয়াজে চারদিকে প্রতিধ্বনি তুললো। আরার সুপ্তিকে বলল,"

_ওওওও এসব কি বলছে সুপ্তি?

সুপ্তি সহজ গলায় বলল,
_তাঁর আগে আপনারা আমাকে বুঝান আপনারা কি বলছেন? আরার দ্রুত নিজের ফোন বের করে মেসেজ দেখিয়ে বলল,

_কি বলি বুঝতে পারো না? কেন ফাজলামো করছো সুপ্তি? এ এ এই দেখো তুমি আমার সাথে চ্যাট করেছো। এই দেখো তুমি কত কত মেসেজ দিয়েছো।

_এটাই তো তর্নি। 

_দেখো মেঘবতী একদম মজা করবে না। এটা তুমি আমি জানি। কেন শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দিতে এসব বলছো? 

জুহা এগিয়ে এসে বলল,

_এক মিনিট আরার ভাইয়া। আমার মনে হয় কোথাও অনেক বড়সড় ভুল হচ্ছে। আপনারা লেটারটা দিয়েছিলেন কাকে?

সুলভ বলল,
_ও তো সুপ্তিকেই লেটার দিয়েছিল।

_কিন্তু ওই পিচ্চি তো তর্নিকে লেটার দিয়েছিলো।

আরার, সুলভ ও ফারদিন এক সাথে "হোয়াট" বলে উঠলো। সুলভ বলল,
_ আরার তো বলে দিয়েছিল নীল ড্রেস পরা চশমা চোখে মেয়েটাকে লেটার দিতে। যেটা সুপ্তি ছিলো। তোমাদের ফ্রেন্ডের মাঝে তো আর কেউ চশমা পরে না তাহলে সব এলোমেলো হয় কেমনে?

সুপ্তি ও তর্নি আরেকদফা শকড হলো। যেদিন পিচ্চিটা লেটার দিয়েছিল সেদিন তো তর্নি মিনিট কয়েকের জন্য সুপ্তির চশমা চোখে দিয়েছিলো। তাহলে কি আরার সুপ্তিকে ভালোবাসে তর্নিকে নয়? 

আরার ধপ করে মাটিতে বসে গেলো। এতদিন তাহলে সে মিথ্যে সুখ অনুভব করেছে? সব মিথ্যে ছিলো? এতো খুশি,এত ভালোবাসা সব মিথ্যে? ফারদিন সুলভ কারও মুখে কোনো কথা নেই। সুপ্তি ও জুহা একদম পাথর হয়ে গেছে। মাত্র শুনা কথাগুলো যেন মানুষকে পাথর করে দেওয়ার কোনো মন্ত্র। যা শুনে তাঁরা পাথর হয়ে গেছে৷ হঠাৎ আরার বসা থেকে উঠে সুপ্তির হাত ধরে বলল,

_সুপ্তি। দেখো আমি তর্নি টর্নি কাউকে চিনিনা। আমি তো তোমাকে চেয়েছি সুপ্তি। তুমি আমার সেই মেঘবতী যাকে আমি মনের গভীর থেকে অনুভব করি। 

বলতে বলতে চোখ ভিজে গেলো আরারের। ফারদিন আরারের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

_আরার বাদ দে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। 

_কি বাদ দিবো? আমি ওকে ভালোবাসি। সাতটা মাস ধরে ভালোবাসি ওকে আমি।"
 
আরার সুপ্তির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত জোর করে বলল, 

_সুপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তর্নি মেয়েটাকে আমি ভালো করে চিনিও না। আমি তোমাকে চাই সুপ্তি।

সুপ্তি ধরা গলায় জুহার হাত ধরে বলল,
_জুহা চল।

সুপ্তি জুহাকে নিয়ে চলে গেলো। আরার ওখানেই বসে থাকলো অনূভুতিহীন দুটো চোখে। 

সেদিন ফারদিন আরারকে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলো। আরার একদম এলোমেলো হয়ে গেছে তাকে এই অবস্থায় বাসায় পাঠালে আরারের মা বোন কেঁদেকেটে বন্যা বানিয়ে দিবে। রাত দুটো হয়ে যায় আরার কিছুই খায়নি৷ মেঘবতী নামে সেভ করা নাম্বার থেকে একেরপর এক কল মেসেজ আসছে রাগে আরার ফোন বন্ধ করে দিলো। সুপ্তিকে ভালোবাসে সে সুপ্তি ছাড়া অন্য-কোনো মেয়েকে নিয়ে কেমনে ভাব্বে? সুলভ আরারের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

_আসলে ফারদিন ঠিকই বলে আমার বুদ্ধিতে কখনো কিছু করা উচিত নয়৷ আমি সেদিন এই বুদ্ধি না দিলে আজ এমনটা হতো না।

আরার সুলভের দু'হাত ধরে মিনতি করে বলল,

_সুলভ। একটাবার সুপ্তিকে বুঝিয়ে বলনা প্লিজ। এই একটা মাস ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। আমি মরে যাচ্ছি ওকে ছাড়া। একটাবার বলনা ও আমাকে মেনে নিতে।

ফারদিন রাগ করে এসে বলল,
_আরার তুই কি পাগল হয়েছিস? ওই মেয়েটার কথা একবার ভাব।

_কি ভাব্ব আমি? ওই মেয়েকে তো ভালোবাসি না আমি৷ এখানে একটা মিস্টেক হয়ে গেছে এটা বুঝালে কেন বুঝবে না ও?

আরারকে অনেক বুঝানোর পরেও বুঝাতে পারলো না ফারদিন বা সুলভ সারাটা রাত কেটে গেলো কারো চোখে ঘুম নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আরার সুপ্তির হোটেলে চলে যায়৷ দারোয়ান আরারকে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও সরাতে পারেনি। পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আগেই সুপ্তি নিচে চলে আসলো। আরারের হাত ধরে টেনে তাকে হোটেল থেকে দূরে নিয়ে আসে। তারপর দু-হাত জোর করে বলে,

_দয়া করে আমার আশেপাশে আসবেন না প্লিজ। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সব কিছু স্বপ্ন ভেবে ভুলে যান।

বলেই সুপ্তি চলে যেতে পা বাড়ালো। আরার খপ করে সুপ্তির হাত ধরে ফেলল। তারপর কান্নাজড়িত গলায় বলল,
_আমি তোমায় ভালোবাসি সুপ্তি। তোমাকে নিয়ে আমার এতো এতো স্বপ্ন এতো এতো অনুভূতি এগুলো মিথ্যে হতে পারে না। এই একটা মাস আমি স্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে পারিনা।

_ক্ষমা করবেন আমাকে। যা হয়ে গেছে একটা এক্সিডেন্ট বলে ভুলে যান। হাত ছাড়ুন।

_এটা তো সত্যিই এক্সিডেন্ট সুপ্তি। এটা ভালোবাসা নয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি। এতদিন আমি কোনো তর্নিকে অনুভব করিনি তোমাকে করেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি সুপ্তি। বিশ্বাস করো অনেক বেশি ভালোবাসি। 

_যখন ভালোবাসার বেসেছেন, এখন ভুলে যান। আমার বান্ধবী যাকে নিয়ে ভেবেছে আমি তাকে নিয়ে ভাবতে পারবো না।

_তোমার বান্ধবীকে বুঝালে সে বুঝবে। তুমি প্লিজ এমন করনা সুপ্তি। আমি মরে যাবো। সত্যি মরে যাবো তুমি ছাড়া।

_পাগলামী করে লাভ নেই। বুঝার চেষ্টা করুন। 

আরার সুপ্তির হাত ছেড়ে বলল,
_ঠিক আছে। বুঝতে বলছো তো। আমার বুঝার একটা রাস্তা আছে। তা মৃত্যু।

আরার দ্রুত হেঁটে গেটের সামনে এসে তাঁর দাঁড় করানো বাইকে উঠতে যায়। ফারদিন সুলভ আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে দৌড়ে গিয়ে আরারকে ধরে আরার তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। খুব রাগ হচ্ছে তাঁর নিজের উপর। কেন সেদিন নিজে সামনে গিয়ে বলেনি ভালোবাসার কথা। আজ তাঁর এতো এতো অনুভূতি গুলো নাকি স্বপ্ন বলে ভুলে যাবে? আরার বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিবে তখনই সুপ্তি তাঁর হাত আরারের বাইকে রাখা হাতের উপর রাখে। আরার কাতর চোখে সুপ্তির দিকে তাকায়। সুপ্তি বলে,

_এতোই যদি ভালোবাসেন তো বলার সাহস পাননি কেন আগে?

সুপ্তির কন্ঠে কোমলতা। কিন্তু তাঁর এই কোমল কণ্ঠ কোমল চাহনির দিকে কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাথে সাথেই ঘৃণায় পরিনত হলো। কেউ নিজের বন্ধুর কথা না ভেবে কিভাবে অন্যের কথা ভাবতে পারে?

_______________________

ট্রেন থেকে নেমে তর্নি পাগলের মতো চারদিকে আরারকে খুঁজলো। কোথাও আরারকে দেখা যাচ্ছে না। কাঁদতে কাঁদতে তর্নির চোখ দুটো মারবেলের মতো হয়ে আছে। কাল থেকে আরারের সাথে কথা হচ্ছে না। আরার কেমন আছে কি করছে সুস্থ আছে কিনা খুব চিন্তা হচ্ছে তাঁর। দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও কিছু খেয়ে আসেনি। সারারাত গেলো কিছু খায়নি সে। আরার কি জানেনা তাঁর সাথে কথা না হলে তর্নির দম বন্ধ হয়ে আসে? সে কিছু গিলতে পারেনা। তাহলে কেন আরার এমন করছে? একটাবার একটা ফোন দেয়না কেন? স্টেশন থেকে নিতে আসবে বলেও আসেনি। কেন আরার এমন করছে? ব্যাগটা নিয়ে কেঁদে কেঁদে হেঁটে যাচ্ছে তর্নি৷ চারদিকে তাকিয়ে কাঙ্গালি দুচোখ শুধু আরারকে খুঁজে যাচ্ছে। কালো শাড়ি কালো চুড়ি পরে এসেছে সে। বুক ভরা আশা নিয়ে এসেছে আরার তাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে। আরারের কথামত সে তর্নিকে কোলে নিয়ে স্টেশন থেকে বের হবে। নিজ হাতে তর্নিকে তাকে খাইয়ে দিবে। অথচ আরার কিনা আসেই নি? আচ্ছা আরার অসুস্থ নয়তো? ও ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো ওর? ভাবতেই কলিজা মুচড়ে উঠে তর্নির। আরারের কিছু হলে যে সে মরেই যাবে।

চলবে,,,,,।

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা) - by Bangla Golpo - 20-03-2023, 10:21 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)