Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা)
#3
পর্ব:০৩


_হাই মেঘবতী।
_কে মেঘবতী?
_তুমি।
_আ আমি?
 _হুম তুমি। এক আকাশ মেঘ নিয়ে তুমি আমায় প্রথম দেখা দিয়েছিলে। আর আজ সকালটাও আকাশ ভরা মেঘ ছিলো। তাই তুমি মেঘবতী। আমি তো তোমাকে মেঘবতী বলেই ডাকবো।

আরানের কথায় তর্নির হৃদপিণ্ড চলাচলের গতি বাড়তে লাগলো৷ যেদিন প্রথম তাঁরা তিন বান্দবী ভার্সিটিতে পা রেখেছিলো, সেদিন হঠাৎ করেই আকাশটা মেঘের চাদরে মোড়িয়ে গেছিলো। পুরো আকাশ জুড়ে ছিলো মেঘের খেলা। ভার্সিটির গেট পেরিয়েই তর্নির চোখ আটকে গেছিলো শ্যামবর্ণ এক সুদর্শন যুবকের উপর। যে কালো চশমা চোখে তাকিয়ে ছিলো গেটের দিকে। সেই প্রথম দেখাতেই তর্নি আরার নামের মানুষটার প্রেমে পড়ে যায়। সেই প্রেমে পড়ার প্রথম অনুভূতি আজও অনুভব করে তর্নি। জুহা আর সুপ্তি মিটিমিটি হাসছে। আরান হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। লজ্জায় তর্নি কিছু বলতে পারছে না। আচমকা লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে তর্নিকে। আরান বলল,

_মেঘবতী শুনতে পাচ্ছো? 
_জ্বি। 
_তোমাকে মেঘবতী ডাকার অধিকারটা দিবে তো আমায়?
তর্নি কিছু বলল না৷ আরান বলল,
_তুমি কি আমার এলোমেলো অগোছালো জীবনের সঙ্গী হবে মেঘবতী?

তর্নি ঠোঁট কামড়ে হাসলো৷ জুহা ও সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওরাও হাসছে। তর্নি কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। আরান বলল,

_হবে মেঘবতী? তর্নি ছোট করে "হুম" বলল। আরান আনন্দিত গলায় বলল, 
_সত্যিইইইই? 
আরানের খুশি দেখে হেসে উঠলো তর্নি। আরান স্নিগ্ধ গলায় বলল, 
_আচ্ছা মেঘবতী। তোমার এটা মনে হয়না যে আমি খারাপ বা আমার হ্যাবিট গুলো তোমার সাথে যায় না। সবার সাথে আমি রুড বিহেভ করি।
_আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।
_কিভাবে জানো?
_আপনি মেয়েদের অনেক সম্মান করেন। নারীদের সম্মান করার গুনটা শুধু ভালো পুরুষদের মাঝেই থাকে।" 
তর্নির কথা জুহা ও সুপ্তি বড় বড় চোখ করে ঠোঁট উল্টে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো৷ দুজনই টিটকারি মেরে ইশারায় মজা উড়ালো৷ আরান বলল,
_আচ্ছা চলো না আমরা ভিডিও কলে কথা বলি।
_আব,,আমার স্মার্ট ফোন নেই।
_তোমার হাতে মনে হয় আমি স্মার্ট ফোনই দেখেছিলাম।
_আসলে আমার ফ্রেন্ডদের ফোন মাঝে মাঝে হাতে নেই।
_অহ। ইটস ওকে, থাক। কাল একবার দেখা করবে?
_কাল?
_হুম।

তর্নি সুপ্তি ও জুহার দিকে তাকালো৷ আজ রাতের ট্রেনে যে যার বাড়িতে রওনা দিবে, সেখানে কাল দেখা করা কি করে সম্ভব? তর্নি বলল,

_আমি তো রাতের ট্রেনে চলে যাবো।
_তাহলে এখন আসো। নয়তো আমি আসি তোমার হোটেলের সামনে?

সুপ্তি ও জুহা দুহাতে না বুঝালো। এখানে আরার আসলে বিরাট সমস্যা হবে। আর এই সময়ে দেখা করাও সম্ভব নয়। তর্নি বলল,

_আমি এখনো লাগেজ গুছাইনি। সব জিনিসপত্র গুছাতে সময় লাগবে। সন্ধ্যা হতে তো বেশিক্ষণ নেই।
_অহ।
_আপনার বাবা মা ভালো আছেন?
_হুম। মা ভালো আছে,বাবা নেই।
_সরি। 

আরারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় তর্নি। ফোন রাখার পর তর্নি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। অনুভূতি গুলো হাতুড়ি হয়ে হৃদপিণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হাতুড়ি পেটানোর ধুকপুক শব্দে তর্নির সবার্ঙ্গ কাঁপছে। কানে লেপ্টে লেগে আছে আরারের মেঘবতী বলা ডাকটা। হঠাৎ সুপ্তি ও জুহা ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি চোখ মেলে চেয়ে দেখল জুহা আর সুপ্তি বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। তাঁরা যে তর্নিকে নিয়ে হাসছে সেটার কোনো সন্দেহ নেই। আজ ছয় মাস থেকে যাকে নিয়ে ভেবে এসেছে তর্নি তাকেই আজ ভালোবাসা হিসাবে পেয়েছে। তাঁর অনুভূতি গুলো কেমনে দমাবে সে? ফোনটা বিছানায় রাখতেই ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। তিন বান্ধবীর তিনটি হাত এসে হামলে পড়লো ফোনের উপর। তর্নি টান দিয়ে ফোন এনে দেখলো আরানের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ফোনের ছোট স্ক্রীনের উপর তিন বান্ধবীর চোখ তিনজোড়া চোখ রেখে মেসেজ পড়তে লাগলো,"

"_তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মেঘবতী। তোমার এলোমেলো চুলগুলো একবার ছুঁয়ে দিতে মনটা ছটফট করছে। জানো, খুব হিংসা হয় যখন দেখি অবাধ্য বাতাস তোমার চুল গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো লাজ লজ্জা ভুলে তাঁর ছোঁয়া পেয়ে সুখের আকাশে উড়ছে। আমারও তখন ইচ্ছে করে বাতাস হয়ে তোমার মাঝে মিশে যাই। যেন অন্য কেউ আমায় না দেখতে পারে। শুধু তুমি আমায় অনুভব করো। আর আমি ছুঁয়ে দিয়ে যাই তোর শরীরের প্রতিটি পশম। আমার ছোঁয়া পেয়ে তুমি কেঁপে উঠো ক্ষণে ক্ষণে। আচ্ছা মেঘবতী,তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো একবার আমাকে ছুতে দিবে? আমি দেখতে চাই সে কতটা উড়ে আমার ছোঁয়া পেয়ে। তোমার ক্লিপগুলোর মতো একবার তোমার মেঘ কালো চুলো নাক ডুবাতে চাই। নেশাতুর হতে চাই তোমার চুলের সুগন্ধে। ঘোর লাগা গলায় বলতে চাই,মেঘবতী তুমি অনেক আবেদনময়ী। নির্লজ্জ চুলের অধিকার লজ্জাবতী তুমি তখন আমায় তোমার চুল থেকে ছাড়াতে চাইবে। আর আমি বেহায়া ক্লিপের মতো তোমার দু একটা চুল আঁকড়ে ধরে আটকে থাকতে চাই। দেবে কি আমায় সেই অধিকার মেঘবতী?"

মেসেজটা পড়ে সুপ্তি বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বলল,
_আয় হায় কি রোমান্টিক। আমার তো ইচ্ছে করছে তর্নি হয়ে আমি আরারের সাথে প্রেম করি।

জুহা বলল,
_ইয়ার এটা তো unbelievable। আরারের মতো ছেলে এত্তো কিউট কিউট কথা বলে? সম্পর্কের শুরুতেই এত্ত এত্ত রোমান্টিক কথাবার্তা?"জুহা বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল," হায় রাব্বা। আই ওয়ান্ট এ ভিলেন বয়ফ্রেন্ড।

_জুহা বিশ্বাস কর তোর পঞ্চাশতম ক্রাশের কসম। আরার যদি এখন এসে আমাকে বলে তর্নি বাদ সুপ্তি ডান আমি কিন্তু এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে যাবো।

তর্নি একটা বালিশ নিয়ে সুপ্তি ও জুহার উপর ছুঁড়ে মারলো। ওরা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকে চোখ বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি হলো সর্বনাশা অনুভূতি। এই অনূভুতি একা একা হাসায়৷ লোক সমাজেও এই হাসি চলে আসে। সব কিছু তখন তেঁতু তেঁতু লাগে। আশেপাশের এতো মানুষকে বিরক্ত লাগে। শুধু ভালোবাসার মানুষটা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। লজ্জায় তর্নির গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। চোখ মেলে থাকাতেও লজ্জা লাগছে তাঁর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের খোপাটা খুলে দিলো তর্নি। জুহা ও সুপ্তির জোরাজোরিতে বেশ কয়েকদিন চুল ছেড়ে ভার্সিটি গিয়েছে সে। নয়তো সব সময় বেনি করেই যেতো। আসলেই তর্নি এতো সুন্দর? নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো সে। আরারের মেসেজের কথাগুলো মনে পড়তেই লজ্জা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। হেসে উঠে দুহাতে মুখ ঢেকে ধরলো সে।


তর্নিকে মেসেজ দিয়ে কিছুক্ষণ রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করলো আরান। কোনো রিপ্লাই আসলো না। হয়তো টাকা নাই সুপ্তির ফোনে এটা ভেবে ফোনটা রেখে দিলো আরান। সুপ্তি এভাবে তাকে একসেপ্ট করে নিবে কল্পনাই করেনি সে। ভেবেছিলো অন্য মেয়েদের মতো সুপ্তিও তাকে মাস্তান ছেলে ভেবে ফিরিয়ে দিবে। আরার মুচকি হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে গেলো। এখনো ফ্রেশ হয়নি সে। আয়নায় নিজের মুখটা দেখতেই কানে বাজলো তাঁর মেঘবতীর বলা কথাটা,"আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।" আচ্ছা সুপ্তির গলা এতো মিষ্টি কেন? আরার তাকে ভালোবাসে বলে কি এতো মিষ্টি তাঁর গলা? মুখে পানির ছিঁটা দিয়ে আয়নায় তাকালো আরান। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। এ কোন সর্বনাশ হলো তাঁর? একা একা হাসে কেন সে?
_______________________

 ফারদিন আর সুলভ একই বিভাগের ছেলে। তাই ভার্সিটির ছুটিতে তাঁদের একসাথেই যাওয়া আসা হয়। এবারও ব্যতিক্রম নেই। দুই বন্ধু এক সাথে মিলে আপন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিবে। দৌড়ে দু বন্ধু এসে ট্রেনে উঠলো। তাঁদের সিট পড়েছে ৬নং কেবিনে। নিজেদের কেবিনে ঢুকে দেখলো এক বৃদ্ধা মহিলা ও একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা জানালার দিকে মুখ করে আছে তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দুই বন্ধু ব্যাগপত্র রেখে বসা মাত্রই চোখে পড়লো চশমা চোখে হলুদ ড্রেস পড়া সুপ্তির উপর। এতোক্ষণ জানালার বাইরে সে-ই তাকিয়ে ছিলো । সুলভ আর ফারদিন অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। ফারদিন চট করে উঠে গিয়ে সুপ্তি ও বৃদ্ধা মহিলার মাঝখানে বসলো। মহিলাটি ফারদিনের দিকে আগুন চোখে তাকালেন। এভাবে আচমকা কেউ বসায় সুপ্তিও কেঁপে উঠলো। পাশ ফিরে ফারদিনকে দেখে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে বলল," 

_আরে আপনি?
_হ্যাঁ আপনিও যে?
_আমি তো রাজশাহী যাবো।
_সত্যি? আমরাও রাজশাহী যাচ্ছি।" সুপ্তি সামনের সিটে তাকিয়ে দেখলো সুলভ বসে আছে। অন্য সময় হলে এদের সাথে কথাই বলতো না। কিন্তু এখন তর্নি ও আরারের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সুবাদে তো কথা বলতেই হবে। যতই হোক তাঁদের দুলাভাইয়ের বন্ধু বলে কথা। সুপ্তি সুলভকে বলল,
_আরে সুবল ভাই ভালো আছেন?
সুলভ চট করে সোজা হয়ে বসে মাথার চুল ও কলার ঠিক করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভালো। তবে সুবল না সুলভ।
_অহ সরি সঠিক জানিনা। এখন জেনে যাবো। আপনারা এখন আমাদের মেহমান হয়ে যাবেন।
"ফারদিন বলল,"
_হ্যাঁ ঠিকি বলেছেন ভাবি।"

ভাবি ডাক শুনে সুপ্তির মুখের হাসি উদাও হয়ে গেলো। আঁড়চোখে একবার সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিন ভাবি বলল কেন? এই ছেলেটা তাকে ভালোবাসে নাকি? সুপ্তি কড়া চোখে ফারদিনের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ধারালো গলায় বলল,

_মুখ সামলে কথা বলবেন,ফাজলামি আমার একদম পছন্দ না। 
_ফাজলামি কই করলাম ভাবি? আপনি আমার বন্ধুর বউ হলে তো আপনি ভাবি লাগেন তাইনা?

সুপ্তি আবার তাকালো সুলভের দিকে। সুলভ তাঁদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুপ্তি এবার কড়া করে বলল,

_আর একবার ভাবি বলে ডাকবেন তো এক্ষুনি আপনার বন্ধু আরার কে ফোন লাগিয়ে নালিশ করবো। তখন দেখবেন সে আপনাদের কি হাল করে। 
ফারদিন তাঁর বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
_কিছুই করবে না। সে জানে বন্ধুর বউদের সবাই ভাবি ডাকে।

সুপ্তির রাগ এবার সপ্তম আকাশে চড়ে গেলো। অগ্নি তীক্ষ্ণ দুটো চোখ দিয়ে সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিনকে দিয়ে ভাবি ডাকিয়ে সে বসে বসে মজা নিচ্ছে? দাঁতে দাঁত চেপে ফারদিনকে বলল,

_উঠেন।
ফারদিন না শুনার ভান করে সুপ্তির দিকে কান বাড়িয়ে বলল,"
_জ্বি বুঝিনি।

সুপ্তির ইচ্ছে করলো ফারদিনকে লাত্তি দিয়ে সিট থেকে তুলে দিতে৷ কিন্তু তর্নির মাত্র প্রেমটা শুরু হয়েছে। এখন যদি আরারের বন্ধুদের সাথে তাঁরা খারাপ বিহেভ করে তাহলে তো ওরা যেভাবেই হোক তর্নির উপর সে শোধ নিবে। বেচারি সাদামাটা তর্নিটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে। তার থেকে ভালো সুপ্তি রাগ কন্ট্রোল করুক। সুপ্তি নিজেকে শান্ত করে জোরপূর্বক হেসে বলল, 

_আপনার সিটে যান ভাইয়া।
ফারদিন উঠে নিজের সিটে চলে গেলো। বৃদ্ধা মহিলাটি কেমন তীক্ষ্ণ চোখে তাঁদের দেখে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে উনি মনে মনে সুপ্তি ফারদিন ও সুলভকে চোদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিচ্ছেন। সুপ্তির অগ্নি চোখ দুটো আবারও সুলভকে খুন করে যাচ্ছে। সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,

_এই ফারদিন, ভাবি এভাবে আমার দিকে তাকায় কেন?" ফারদিন তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি সুপ্তি রাক্ষসী রূপে তাকিয়ে আছে। ফারদিন বলল,"তুই জুহাকে পছন্দ করিস, সেটা মনে হয় আরার বলে দিছে। 
_তাই বলে এভাবে তাকাবে ভাই? দেখ চোখ দুটো কেমন ডাইনির মতো লাগছে। যেন চশমা না থাকলে চোখ দুটো বেরিয়ে যেতো।

ওদের ফিসফিসানি দেখে সুপ্তি ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
_ওই কি কানাকানি করেন?

ফারদিন আগের ন্যায় কান বারিয়ে বলল,
_কি বুঝিনি।
সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, "
_আমার মনে হয় ভাইয়া আপনি কানে একটু কম শুনেন। বাসায় গিয়ে না আগে কানের ডাক্তার দেখাবেন। 
ফারদিন আগের মতোই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল, 
_আমাদের এলাকায় না কানের ডাক্তার পাওয়া যায়না। এই সুলভ তোদের এলাকায় পাওয়া যায়?" সুলভ না সূচক মাথা নাড়ায়। ফারদিন বলে,"
_ভাবি আপনাদের এলাকায় পাওয়া যায়?" সুপ্তি আবার রাগান্বিত চোখে তাকায়। ফারদিনের চোখে চোখ পড়তেই হেসে বলে,"
_না দুর্দিন ভাইয়া পাওয়া যায়না।"
_আমার নাম ফারদিন, দুর্দিন না।
_আমি দুর্দিন বলিনি দূর্দিন বলেছি। দ ঊ কারে দূ র দূর। দূর্দিন।

ফারদিনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সুলভ ফারদিনের একটা হাতে ধরে শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিলো৷ ফারদিন মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে বলল,

_বুঝতে পেরেছি মিস করল্লা।
_কিহ? আমি,,,,আমি করল্লা?

সুলভ ফারদিনকে বলল,
_ভাই করল্লা না অনেক তিতা। পেয়াজ বল পেয়াজের অনেক দাম।

সুপ্তি ব্যাগের উপর থাকা চকলেটটা সুলভের উপর ছুঁড়ে মেরে বলল,

_আপনার চৌদ্দগুস্টি পেয়াজ। নিজেদের নাম তো একেকটা ডাসবিন থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে। কারো নাম আরার কারো নাম দুর্দিন কারো নাম আবার সুলভ। সুলভ মানে কি জানেন? মূল্যহীন,তুচ্ছ। একজন তো পুরো দেশের নাম রেখে ফেলছে। আহা, ইরান। এর থেকে তো উগান্ডা নামটা ভালোই মানাতো। আপনাদের মতো ছেলেদের এসব ট্রেনে উঠতে দেয় কে বলেন তো? যত্তসব আজাইরা।"
ফারদিন এতোক্ষণ নিজেকে শান্ত করে রেখেছে আর পারলো না। সিট থেকে উঠে তেড়ে আসতে চায়। সুলভ কোমর জড়িয়ে ধরে আটকায়। ফারদিন রাগান্বিত গলায় বলে,"
_ওই কাকে আজাইরা ডাকলেন? আমরা আজাইরা?
সুপ্তি শীতল গলায় জবাব দেয়,"
_না মিস্টার দুর্দিন। আপনারা আজাইরা হবেন কেন? আপনারা নাম্বার ওয়ান খচ্চর।
_কিহ আমরা খচ্চর? আর দুর্দিন কে হ্যাঁ? নাম উচ্চারণ করতে পারেন না তো নাম ধরে ডাকেন কেন?
_রেগে যাচ্ছেন কেন, ভুল কি বললাম? আপনার নাম কি? fardin,, far মানে দূর। সেই হিসাবে আপনি হলেন দূর্দিন।

ফারদিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আপনাকে যে কোন এঙ্গেল থেকে আমার বন্ধু পছন্দ করে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারিনা। দেখেই না একদম ডাইনিদের মতো লাগে। চশমা ছাড়া চলতে পারে না কানা কোথাকার।
_আর আপনি কি হ্যাঁ? নাক মোটা বাদর কোথাকার।
_আমার নাক মোটা?
_শুধু নাক না আপনার মাথাটাও মোটা।

সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,
_আহ ফারদিন কি করছিস? আরার জানলে কিন্তু সমস্যা হবে।"
ফারদিন ঝাড়া দিয়ে সুলভের হাত ছাড়িয়ে বলল,
_হোক সমস্যা। এতো ভয় পাইনা আমি।" বলতে বলতে সুপ্তির ছুঁড়ে ফেলা চকলেটের উপর বসে পড়লো ফারদিন। এটা দেখেই সুপ্তি তৎক্ষণাৎ উঠে এসে টান দিয়ে ফারদিনকে বসা থেকে তুললো। ফারদিন রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,"হোয়াট দ্যা হেল।" সুপ্তি চকলেট হাতে নিয়ে আবার জায়গা মতো বসে গেলো। সুপ্তির এমন কান্ডে বৃদ্ধা মহিলা থেকে শুরু করে তাঁরা দুই বন্ধু অবাক হয়ে গেলো। ফারদিন মিনমিন করে সুপ্তিকে বকা দিতে দিতে গিয়ে সিটে বসলো। সুপ্তি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো। এই ফারদিনের মতো মাথা মোটার সাথে ঝগড়া করার থেকে গান শুনাই ভালো।
_____________________

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরার। আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। চাঁদে যেন সুপ্তির মুখটা ভেসে উঠছে বার বার। মনের গভীরে এক সুখের দোলা লাগছে। অজানা সুখ। এই সুখটা চিনেনা আরার। আজ ভালোবাসার শুরু হয়েছে তাঁর। এই নিয়ে চারবার তাঁর মেঘবতীর সাথে কথা হয়েছে। তবুও মনে হচ্ছে পিপাসা মিটেনি৷ সুপ্তি বলেছে সে তাঁর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। আর কাল কথা হবে তাঁদের মাঝে। ট্রেনে থেকে কথা বলতে পারবে না বলে জানিয়েছে তাঁর মেঘবতী। আরারের ইচ্ছে করছে আবার তাঁর মেঘবতীর সেই নেশাভরা কণ্ঠটা শুনতে। একবার দেখার প্রবল ইচ্ছে মনের ঘরটা বার বার কাঁপিয়ে তুলছে। কিন্তু আফসোস। সুপ্তির অ্যান্ড্রয়েড ফোন নাই। নয়তো বলতো একটাবার ভিডিও কল দিতে। তাঁর মধুর কণ্ঠের একটা ভয়েস দিতে। আরান ফোন বের করে মেঘবতী নামে সেভ করা নাম্বারে মেসেজ দিলো, 

_"মেঘবতী তুমি কিন্তু আমার তখনের মেসেজের রিপ্লাই দাওনি। আমি অপেক্ষায় আছি।"

মেসেজটা সেন্ড করে পাঁচমিনিট ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে গেলো আরার৷ তাঁর বোনরা বসার রুমে বসে টিভি দেখছে। আরার নিচে যেতে পা বাড়াতেই ভাইব্রেশনে ফোনটা কেঁপে উঠলো। মেঘবতী মেসেজ দিয়েছে। আরারের মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে রুমে চলে গেলো। তাঁর এইভাবে রুমে যাওয়াটা চোখ আওড়ালো না তাঁর বোনদের। আরার ঘরে এসে মেসেজটা সিন করলো।

_"আমার নির্লজ্জ চুলগুলো আপনার হাতের ছোঁয়া পেতে বড্ড ছটফট করছে। ওরা আপনার হাতের ছোঁয়া পেয়ে লজ্জাবতী হয়ে নুয়ে পড়তে চায়৷ আপনার ঘোর লাগা গলার দু একটা লাগামহীন কথা শুনতে চাচ্ছে ওরাও। আপনি আসেন না একবার বাতাস হয়ে আমায় ছুঁয়ে দিতে। যেন সবার সামনে ছুঁয়ে দিলেও কেউ দেখেনা আপনায়। আমি চোখ বন্ধ করে আপনায় অনুভব করতে চাই। আমার সাথে সাথে আমার নির্লজ্জ বেহায়া চুলেও আপনায় লেপ্টে রাখতে চাই। নির্লজ্জ চুলের বাঁধনে আপনাকে বেঁধে রাখতে চাই। আপনার হাতের ছোঁয়ায় আমার খোপা বাঁধতে চাই। সেই খোপার মাঝে একটা বেলি ফুলের মালা চাই৷ আমার এতো চাওয়ার পরেও শুধু আপনাকে চাই।

চলবে,,,,,,,।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা) - by Bangla Golpo - 20-03-2023, 10:14 PM



Users browsing this thread: