20-03-2023, 10:12 PM
পর্ব:০২
চলছে চৈত্র মাস। আকাশের রঙ বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সকালের আকাশ দেখলে বিকালের আকাশ কেমন হবে তা আন্দাজ করা যায়না। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। কাল সারারাত অনেক বৃষ্টি ছিলো। সকালটাও ছিলো মেঘলা। অথচ দুপুর হতেই আকাশটা চকচকে হয়ে গেছে। সাথে আছে তার প্রখর রোদ৷ বিকাল হতে যাচ্ছে রোদের তেজ এখনো কমছে না। এই রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে ছাতা বিহীন গাড়ি বিহীন হেঁটে যাচ্ছে আরান। তাঁর বাইকটা ইরান নিয়েছে। কোথায় নাকি যাবে সে। তাই তাকে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। এই রোদের মধ্যে ঘেমে একদম একাকার হয়ে গেছে। তবুও তাঁর ক্লান্তি লাগছে না। আজ তাঁর মনটা ফুরফুরে। সুপ্তিকে আজ তাঁর মনের কথা জানিয়েছে, হোক সেটা পত্রের মধ্যেই। তবু তো আজ বলেছে মনের কথাটা। আরারের মাথায় প্রশ্ন জাগে," আচ্ছা সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করবে তো?" কিছুক্ষণ ভাবার পরে উত্তর খুঁজে পায়,না করলে ক্ষতি কি? আবার প্রপোজ করবো। এভাবে করতে করতে একদিন সুপ্তি হ্যাঁ বলে দিবে। প্রায় একঘন্টা হাঁটার পরে আরার বাসায় পৌঁছে যায়। সাদা রংয়ের দোতলা একটা বিল্ডিং। বাসাটা বেশ সুন্দর। দোতলার বারান্দায় নানা ফুলের টব সাজানো। ফুল তাঁর বাহার দিয়ে বাসাটার সৌন্দর্য দ্বিগুন বারিয়ে দিছে। আরান কলিং বেল টিপলো। কলিং বেল দেওয়া মাত্রই দরজা খুলে দেয় ১১-১২ বছরের একটা মেয়ে। যেন এতোক্ষণ দরজা খুলার জন্যই বসে ছিল সে। মেয়েটার গায়ের রং আরানের মতোই উজ্জ্বল শ্যামলা। হলুদ রঙের একটা টপস পড়েছে সে। হলুদ রং যেন তাঁর গায়ের রংটা মলিন করে দিছে। আরার তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখটা মলিন। আরান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ভিতরে পা বারিয়ে বলল,"
_কিরে আঞ্জু কালি। তোর আবার কি হলো? মুখটা গোমড়া করে রাখছিস কেন?"
আরানের কথায় মেয়েটা ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। আরান অবাক হয়ে পিছনে থাকায়৷ মেয়েটাকে ধরে গিয়ে সোফায় বসে চোখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,
_কাঁদিস কেন? আম্মু বকেছে তোকে?
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই তিনটা যুবতি মেয়ে দৌড়ে এসে আরানকে ঘিরে ফেলে। একজনের হাতে টাওয়াল। একজনের হাতে পানির গ্লাস। একজনের হাতে একটা হাতপাখা। টাওয়াল হাতে মেয়েটার নাম আশু,এই মেয়েটাও আরানের মতোই শ্যামলা। গ্লাস হাতে মেয়েটার নাম আনু আর পাখা হাতে মেয়েটার নাম আরু। দুজনই জমজ। সুন্দর কাকে বলে এই দুটো মেয়েকে না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। দুজন একই রকম দেখতে হলেও আরুর চুল শর্ট আর আনুর চুল কোমর পেরিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে। আরুর কণ্ঠ হলো ভারি আর আনুর চিকন। আশু হলো আরু ও আনু থেকে দু বছরের বড়। তবে দেখলে মনে হয় একই বছরে এই তিনটা মেয়ের জন্ম হয়েছে৷ আরান আনুর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো। আশু টাওয়াল নিয়ে আরারের কপালের ঘাম মুছে দেয়। আরু পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। আরান গ্লাসটা টে টেবিলের উপর রেখে বলল,
_কি ব্যাপার আজ এতো সেবা করা হচ্ছে সিস্টার্স। কোনো প্ল্যান ক্ল্যান চলছে নাকি?
আরানের কথায় আনু আশু আরু বড় চোখ করে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। তারপর সূচক মাথা নেড়ে এক সাথে বলল,
_কোনো প্ল্যান নেই ভাইয়া।" আশু টাওয়াল রেখে আরানের ডান পাশে বসে আহানের হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_তুমি আমাদের চার বোনের একটা মাত্র ভাই। তুমি কি কম আদরের বলো?
আনু আঞ্জুকে তুলে আরানের বাম পাশে বসে আরানের বাম হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_ভাই তুমি কত টায়ার্ড। তোমার মতো টায়ার্ড হলে না আমার খুব ঘুম পায়। তোমারও এখন ঘুমানো উচিত। চলো রুমে চলো।
আরু পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভাইয়া চলো ঘুমাবে। তোমাকে ভিষণ টায়ার্ড লাগছে। হ্যাঁ না রে আপুনি?
আরান দুহাত এটে সোজা হয়ে বসলো। তারপর একেক বার একেকজনের দিকে তাকালো। আরানের এভাবে তাকানো দেখে তিন বোনের চেহারায় চোরের মতো লোকচুরি ভাব চলে আসে। যেন এই পালালে লুকিয়ে বাঁচবে। আরান সরু চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কাহিনি কি? অন্যদিন তো বাসায় ঢুকা মাত্রই তোরা চকলেটের জন্য আমার পকেট ছিঁড়ে ফেলিস। আজ এতো কদর কেন?
আশু বাঁজ খাই গলায় বলল,"কদর করলে কি হয়? আমরা কি তোকে কদর করিনা।
_কদর করিস কিন্তু তোদের কদরের মাঝে ঘাপলা থাকে। হয় তোরা আমার পকেট মারতে কদর করিস, নয় আমার হয়ে আম্মুর পকেট মারতে কদর করিস।
আনু আরানকে আহ্লাদী গলায় বলল,
_ভাইয়া কারো কদরে যদি কোনো ঘাপলা থাকে, তাহলে সেটা আপুর। আমরা তো সুইট কিউট আর নম্র ভদ্র মেয়ে। হ্যাঁ না রে আরু?
আশু দুহাত কোমরে রেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আমার কদরে ঘাপলা আছে?
_নাতো কি। এক ভাইয়াই আছে, যে আমাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর তুমি? নিজের একটা ড্রেসই পড়তে দাওনা।
_বেশ করি। আমি ভাইয়ার মতো হতে পারবো না, ঠিক আছে। তবে আমি তোদের মতো হতে পারি।
আরু ও আনু বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রফুল্ল হয়ে বলল" আমাদের মতো কেমন?
আশু মুখ বাঁকিয়ে বলল,
_সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই।
_আপুউউউউউউ।
আরান বোনদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে বলল,"
_তোরা ঝগড়া কর আমি সুপ্তির মাঝে যাচ্ছি।
_কার মাঝে?
_আরে ঘুমের মাঝে।
সুপ্তি ভ্রু নাচিয়ে বলল,"
_তুমি অন্যটা বলেছো ভাইয়া।
_সুপ্তি মানে ঘুম। মানে আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।"
বলেই আরান উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। আশু আনু ও আরু খুশিতে গদগদ করতে করতে তাঁদের ঘরে চলে গেলো। আনজু এতোক্ষণ বসে বসে বোনদের তামশা দেখেছে৷ এখন উঠে গেলো আরানের ঘরের দিকে। আরান ওয়াসরুমে যাচ্ছিলো আনজুর ক্ষীণস্বরে ভাইয়া ডাক শুনে দাঁড়ায়। আনজু রুমে ঢুকে আরানের সামনে দাঁড়ালো। আরান বলল,
_কিছু বলবি কালি?
আঞ্জু দরজার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বলল,
_ভাইয়া। আপুরা আজ ছাদে উঠে নেচে সেটা ভিডিও করেছে। পাশের ছাদে একটা ছেলেও ছিলো।
_আম্মু কই ছিলো?
_আম্মু কলেজে ছিলো। আম্মু আসার পর আমি আম্মুকে বলেছি বলে আপুরা আমায় বকা দিয়েছে। আম্মু আপুদের বকেছে আর বলেছে তুমি বাসায় আসলে সব বলে দিবে।
আরানের নাকের ডগা ফুলে উঠলো। সেদিন এতো করে বুঝানোর পরেও আজ তাঁরা ছাদে উঠেছে? তাও ভিডিও বানানো? আরান রাগে বোনদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। বড় হয়েছে বলে একটার গায়েও হাত তুলেনা। আজ একদম মেরেই দিবে। কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা ছাদে উঠে নাচানাচি করে। আশেপাশের লোক দেখলে কি বলবে? কই যাবে এই মানসম্মান? আরান রুম থেকে বের হতেই তাঁর ফোন বেজে উঠে। আরান হেঁটে হেঁটে কল রিসিভ করে কর্কশ গলায় বলে,
_হ্যালো কে?
কেউ কথা বলল না। আরান দু তিন বার হ্যালো হ্যালো করে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রাগান্বিত গলায় বলল,
_ওই মিয়া কথা বলেন না কেন?
_আ আ আপনি লেটার দিছিলেন।"
তৎক্ষণাৎ আরানের পা থেমে গেলো। এতোক্ষণে সে তাঁর বোনদের দরজায় এসে গেছে। তাকিয়ে দেখলো তাঁর বোনরা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেই মধুর কণ্ঠটা বলে উঠলো,
_শুনতে পাচ্ছেন?" আরান মৃদু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তাঁর বোন গুলো অবাক হয়ে একজন আরেজনের দিকে তাকলো। তারপর খুশিতে নেচে উঠলো।
★
আরান রুমে এসে দরজা বন্ধ করে গিয়ে খাটে বসলো। উত্তেজনায় তাঁর হাত পা কাঁপছে। সুপ্তি তাকে কল দিয়েছে? তার মানে সুপ্তি তাকে মেনে নিয়েছে? খুশিতে আরানের ইচ্ছে করছে ডান্স করতে। রুমে আসতে আসতে কল কেটে গেছে। আরান আবার কল দিতে গিয়ে থেমে গেলো। কেমন জানি একটা অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। খুব খুশি খুশি লাগছে। আরান কল দিলো ফারদিনকে। প্রথম রিংয়েই ফারদিন কল রিসিভ করে। আরান আনন্দিত গলায় বলল,
_ফারদিন জানিস সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করেছে। ও আমায় কল করেছিলো।
_আচ্ছা ঠিক আছে রাখ।
_রাখবো মানে? আরে ভাই জীবনের প্রথম প্রেম করতে যাচ্ছি। congratulations বল।
_রাখ তোর জীবনের প্রথম প্রেম আমি টয়লেটে আছি।
_টয়লেট মানে? ছিঃ ফারদিন তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেট ব্যবহার করিস?
_তুই কোন অভদ্রের বাচ্চারে যে টয়লেট করিস না?
_আরে ছিঃ ছিঃ এটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চাইছি তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করিস?
_তো তুই কেন ভদ্র ঘরের বাচ্চাদের টয়লেটে থাকা অবস্থায় ফোন দিস?
_দ্যাত রাখ ফোন।
_তুই রাখ।
আরান ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ আগে কল আসা নাম্বারটা বের করলো। ইশ নাম্বারটা দেখেই কি প্রশান্তি লাগছে তাঁর। না জানি এই নাম্বারের মানুষটার সাথে কথা বললে কেমন লাগবে। ভয়ার্ত গলার বলা আপনি লেটার দিছিলেন কথাটা বার বার কানে বাজছে আরানের। ভয়েসটা এতো মিষ্টি কেন? আরান ফোন দিলো। দুতিন বার দেওয়ার পরেও কেউ ফোন তুললো না।
★
খাটের উপর দুহাতে পা এটে বসে আছে সুপ্তি। পা বাজ করে কোলে বালিশ নিয়ে বসে আছে জুহা। বালিশে কনুই ঠেকে নোক কামড়াচ্ছে সে। তাঁদের দুজনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তর্নি।তাঁর এই অসহায় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে একটু পর পর তাঁর দিকে তাকাচ্ছে দুজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ। তাঁর উপর প্রচন্ড রেগে আছে সুপ্তি ও জুহা। তাঁরা দুজন এক পাহাড় উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে আরান কিভাবে কথা বলে তা শুনার জন্য। আর তর্নি কিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যাচ্ছে? তাও তাঁরা দুজন জোর করে একবার ফোন দেওয়ালো তো এখন আরান ফোন দিচ্ছে সে ফোন ধরছে না। জুহা কোলের বালিশটা টাস করে বিছানায় রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
_আমি বুঝতে পারছি না এখানে এতো ভয় পাওয়ার কি হলো? সে তো নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য তাইনা?
_এটা ঠিক না জুহা। উনি মাত্র একটা লেটার দিলেন আর আমি কিনা চট করে উনাকে কল দিয়ে দিবো?
সুপ্তি রাগে পা এটে রাখা হাত দুটো নাচিয়ে বলল,
_এখন তোকে বস্তা বস্তা লেটার দিতে হবে বুঝি?
_আরে না সেটা বলছি না। আমাদের তো দু একদিন ভাবা উচিত তাইনা?'"
তর্নির কথা শেষ হতেই আবার কল এলো৷ সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
_এখন যদি ফোন না ধরেছিস তোকে লাত্তি দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিবো।
_দেখ সুপ্তি তুই বাড়াবাড়ি করছিস। এসব ঠিক না।
জুহা বলল,
_দেখ তর্নি আরারকে না জিজু হিসাবে আমাদের বেশ লেগেছে। তাই চাই ঘটনা মুচড় দেওয়ার আগে তুই ঝাপটে ধর। আরে ভাই আজকাল মানুষ রাস্তা ঘাটে প্রেম করে৷ তুই ঘরে বসেও করতে পারবি না?
সুপ্তি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চাপা গলায় বলল,"এই ভুও চুপ চুপ।" বলে সুপ্তি ফোন রিসিভ করে নিলো৷ তর্নিকে ফোনটা দিয়ে ফিসফিস করে বলল," নে কথা বল।"তর্নি ভিতু চোখে তাকিয়ে দুহাত মাথা এক সাথে নাড়িয়ে না বলল। জুহা ধমকের চোখে তাকালো। তর্নি কাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়৷ তাঁর বাটনের ছোট ফোনটাও যেন ধরার শক্তি নেই তাঁর। ফোনটা লাউডে দেওয়া আছে। জুহা সুপ্তি একফালি উত্তেজনা নিয়ে বসলো, আরানের মতো মাস্তান ছেলেটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা দেখতে। তর্নি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা হ্যালো।
_হাই মিস,,,,,,,
চলবে,,,,,,,।
চলছে চৈত্র মাস। আকাশের রঙ বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সকালের আকাশ দেখলে বিকালের আকাশ কেমন হবে তা আন্দাজ করা যায়না। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। কাল সারারাত অনেক বৃষ্টি ছিলো। সকালটাও ছিলো মেঘলা। অথচ দুপুর হতেই আকাশটা চকচকে হয়ে গেছে। সাথে আছে তার প্রখর রোদ৷ বিকাল হতে যাচ্ছে রোদের তেজ এখনো কমছে না। এই রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে ছাতা বিহীন গাড়ি বিহীন হেঁটে যাচ্ছে আরান। তাঁর বাইকটা ইরান নিয়েছে। কোথায় নাকি যাবে সে। তাই তাকে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। এই রোদের মধ্যে ঘেমে একদম একাকার হয়ে গেছে। তবুও তাঁর ক্লান্তি লাগছে না। আজ তাঁর মনটা ফুরফুরে। সুপ্তিকে আজ তাঁর মনের কথা জানিয়েছে, হোক সেটা পত্রের মধ্যেই। তবু তো আজ বলেছে মনের কথাটা। আরারের মাথায় প্রশ্ন জাগে," আচ্ছা সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করবে তো?" কিছুক্ষণ ভাবার পরে উত্তর খুঁজে পায়,না করলে ক্ষতি কি? আবার প্রপোজ করবো। এভাবে করতে করতে একদিন সুপ্তি হ্যাঁ বলে দিবে। প্রায় একঘন্টা হাঁটার পরে আরার বাসায় পৌঁছে যায়। সাদা রংয়ের দোতলা একটা বিল্ডিং। বাসাটা বেশ সুন্দর। দোতলার বারান্দায় নানা ফুলের টব সাজানো। ফুল তাঁর বাহার দিয়ে বাসাটার সৌন্দর্য দ্বিগুন বারিয়ে দিছে। আরান কলিং বেল টিপলো। কলিং বেল দেওয়া মাত্রই দরজা খুলে দেয় ১১-১২ বছরের একটা মেয়ে। যেন এতোক্ষণ দরজা খুলার জন্যই বসে ছিল সে। মেয়েটার গায়ের রং আরানের মতোই উজ্জ্বল শ্যামলা। হলুদ রঙের একটা টপস পড়েছে সে। হলুদ রং যেন তাঁর গায়ের রংটা মলিন করে দিছে। আরার তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখটা মলিন। আরান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ভিতরে পা বারিয়ে বলল,"
_কিরে আঞ্জু কালি। তোর আবার কি হলো? মুখটা গোমড়া করে রাখছিস কেন?"
আরানের কথায় মেয়েটা ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। আরান অবাক হয়ে পিছনে থাকায়৷ মেয়েটাকে ধরে গিয়ে সোফায় বসে চোখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,
_কাঁদিস কেন? আম্মু বকেছে তোকে?
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই তিনটা যুবতি মেয়ে দৌড়ে এসে আরানকে ঘিরে ফেলে। একজনের হাতে টাওয়াল। একজনের হাতে পানির গ্লাস। একজনের হাতে একটা হাতপাখা। টাওয়াল হাতে মেয়েটার নাম আশু,এই মেয়েটাও আরানের মতোই শ্যামলা। গ্লাস হাতে মেয়েটার নাম আনু আর পাখা হাতে মেয়েটার নাম আরু। দুজনই জমজ। সুন্দর কাকে বলে এই দুটো মেয়েকে না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। দুজন একই রকম দেখতে হলেও আরুর চুল শর্ট আর আনুর চুল কোমর পেরিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে। আরুর কণ্ঠ হলো ভারি আর আনুর চিকন। আশু হলো আরু ও আনু থেকে দু বছরের বড়। তবে দেখলে মনে হয় একই বছরে এই তিনটা মেয়ের জন্ম হয়েছে৷ আরান আনুর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো। আশু টাওয়াল নিয়ে আরারের কপালের ঘাম মুছে দেয়। আরু পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। আরান গ্লাসটা টে টেবিলের উপর রেখে বলল,
_কি ব্যাপার আজ এতো সেবা করা হচ্ছে সিস্টার্স। কোনো প্ল্যান ক্ল্যান চলছে নাকি?
আরানের কথায় আনু আশু আরু বড় চোখ করে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। তারপর সূচক মাথা নেড়ে এক সাথে বলল,
_কোনো প্ল্যান নেই ভাইয়া।" আশু টাওয়াল রেখে আরানের ডান পাশে বসে আহানের হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_তুমি আমাদের চার বোনের একটা মাত্র ভাই। তুমি কি কম আদরের বলো?
আনু আঞ্জুকে তুলে আরানের বাম পাশে বসে আরানের বাম হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_ভাই তুমি কত টায়ার্ড। তোমার মতো টায়ার্ড হলে না আমার খুব ঘুম পায়। তোমারও এখন ঘুমানো উচিত। চলো রুমে চলো।
আরু পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভাইয়া চলো ঘুমাবে। তোমাকে ভিষণ টায়ার্ড লাগছে। হ্যাঁ না রে আপুনি?
আরান দুহাত এটে সোজা হয়ে বসলো। তারপর একেক বার একেকজনের দিকে তাকালো। আরানের এভাবে তাকানো দেখে তিন বোনের চেহারায় চোরের মতো লোকচুরি ভাব চলে আসে। যেন এই পালালে লুকিয়ে বাঁচবে। আরান সরু চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কাহিনি কি? অন্যদিন তো বাসায় ঢুকা মাত্রই তোরা চকলেটের জন্য আমার পকেট ছিঁড়ে ফেলিস। আজ এতো কদর কেন?
আশু বাঁজ খাই গলায় বলল,"কদর করলে কি হয়? আমরা কি তোকে কদর করিনা।
_কদর করিস কিন্তু তোদের কদরের মাঝে ঘাপলা থাকে। হয় তোরা আমার পকেট মারতে কদর করিস, নয় আমার হয়ে আম্মুর পকেট মারতে কদর করিস।
আনু আরানকে আহ্লাদী গলায় বলল,
_ভাইয়া কারো কদরে যদি কোনো ঘাপলা থাকে, তাহলে সেটা আপুর। আমরা তো সুইট কিউট আর নম্র ভদ্র মেয়ে। হ্যাঁ না রে আরু?
আশু দুহাত কোমরে রেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আমার কদরে ঘাপলা আছে?
_নাতো কি। এক ভাইয়াই আছে, যে আমাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর তুমি? নিজের একটা ড্রেসই পড়তে দাওনা।
_বেশ করি। আমি ভাইয়ার মতো হতে পারবো না, ঠিক আছে। তবে আমি তোদের মতো হতে পারি।
আরু ও আনু বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রফুল্ল হয়ে বলল" আমাদের মতো কেমন?
আশু মুখ বাঁকিয়ে বলল,
_সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই।
_আপুউউউউউউ।
আরান বোনদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে বলল,"
_তোরা ঝগড়া কর আমি সুপ্তির মাঝে যাচ্ছি।
_কার মাঝে?
_আরে ঘুমের মাঝে।
সুপ্তি ভ্রু নাচিয়ে বলল,"
_তুমি অন্যটা বলেছো ভাইয়া।
_সুপ্তি মানে ঘুম। মানে আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।"
বলেই আরান উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। আশু আনু ও আরু খুশিতে গদগদ করতে করতে তাঁদের ঘরে চলে গেলো। আনজু এতোক্ষণ বসে বসে বোনদের তামশা দেখেছে৷ এখন উঠে গেলো আরানের ঘরের দিকে। আরান ওয়াসরুমে যাচ্ছিলো আনজুর ক্ষীণস্বরে ভাইয়া ডাক শুনে দাঁড়ায়। আনজু রুমে ঢুকে আরানের সামনে দাঁড়ালো। আরান বলল,
_কিছু বলবি কালি?
আঞ্জু দরজার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বলল,
_ভাইয়া। আপুরা আজ ছাদে উঠে নেচে সেটা ভিডিও করেছে। পাশের ছাদে একটা ছেলেও ছিলো।
_আম্মু কই ছিলো?
_আম্মু কলেজে ছিলো। আম্মু আসার পর আমি আম্মুকে বলেছি বলে আপুরা আমায় বকা দিয়েছে। আম্মু আপুদের বকেছে আর বলেছে তুমি বাসায় আসলে সব বলে দিবে।
আরানের নাকের ডগা ফুলে উঠলো। সেদিন এতো করে বুঝানোর পরেও আজ তাঁরা ছাদে উঠেছে? তাও ভিডিও বানানো? আরান রাগে বোনদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। বড় হয়েছে বলে একটার গায়েও হাত তুলেনা। আজ একদম মেরেই দিবে। কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা ছাদে উঠে নাচানাচি করে। আশেপাশের লোক দেখলে কি বলবে? কই যাবে এই মানসম্মান? আরান রুম থেকে বের হতেই তাঁর ফোন বেজে উঠে। আরান হেঁটে হেঁটে কল রিসিভ করে কর্কশ গলায় বলে,
_হ্যালো কে?
কেউ কথা বলল না। আরান দু তিন বার হ্যালো হ্যালো করে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রাগান্বিত গলায় বলল,
_ওই মিয়া কথা বলেন না কেন?
_আ আ আপনি লেটার দিছিলেন।"
তৎক্ষণাৎ আরানের পা থেমে গেলো। এতোক্ষণে সে তাঁর বোনদের দরজায় এসে গেছে। তাকিয়ে দেখলো তাঁর বোনরা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেই মধুর কণ্ঠটা বলে উঠলো,
_শুনতে পাচ্ছেন?" আরান মৃদু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তাঁর বোন গুলো অবাক হয়ে একজন আরেজনের দিকে তাকলো। তারপর খুশিতে নেচে উঠলো।
★
আরান রুমে এসে দরজা বন্ধ করে গিয়ে খাটে বসলো। উত্তেজনায় তাঁর হাত পা কাঁপছে। সুপ্তি তাকে কল দিয়েছে? তার মানে সুপ্তি তাকে মেনে নিয়েছে? খুশিতে আরানের ইচ্ছে করছে ডান্স করতে। রুমে আসতে আসতে কল কেটে গেছে। আরান আবার কল দিতে গিয়ে থেমে গেলো। কেমন জানি একটা অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। খুব খুশি খুশি লাগছে। আরান কল দিলো ফারদিনকে। প্রথম রিংয়েই ফারদিন কল রিসিভ করে। আরান আনন্দিত গলায় বলল,
_ফারদিন জানিস সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করেছে। ও আমায় কল করেছিলো।
_আচ্ছা ঠিক আছে রাখ।
_রাখবো মানে? আরে ভাই জীবনের প্রথম প্রেম করতে যাচ্ছি। congratulations বল।
_রাখ তোর জীবনের প্রথম প্রেম আমি টয়লেটে আছি।
_টয়লেট মানে? ছিঃ ফারদিন তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেট ব্যবহার করিস?
_তুই কোন অভদ্রের বাচ্চারে যে টয়লেট করিস না?
_আরে ছিঃ ছিঃ এটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চাইছি তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করিস?
_তো তুই কেন ভদ্র ঘরের বাচ্চাদের টয়লেটে থাকা অবস্থায় ফোন দিস?
_দ্যাত রাখ ফোন।
_তুই রাখ।
আরান ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ আগে কল আসা নাম্বারটা বের করলো। ইশ নাম্বারটা দেখেই কি প্রশান্তি লাগছে তাঁর। না জানি এই নাম্বারের মানুষটার সাথে কথা বললে কেমন লাগবে। ভয়ার্ত গলার বলা আপনি লেটার দিছিলেন কথাটা বার বার কানে বাজছে আরানের। ভয়েসটা এতো মিষ্টি কেন? আরান ফোন দিলো। দুতিন বার দেওয়ার পরেও কেউ ফোন তুললো না।
★
খাটের উপর দুহাতে পা এটে বসে আছে সুপ্তি। পা বাজ করে কোলে বালিশ নিয়ে বসে আছে জুহা। বালিশে কনুই ঠেকে নোক কামড়াচ্ছে সে। তাঁদের দুজনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তর্নি।তাঁর এই অসহায় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে একটু পর পর তাঁর দিকে তাকাচ্ছে দুজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ। তাঁর উপর প্রচন্ড রেগে আছে সুপ্তি ও জুহা। তাঁরা দুজন এক পাহাড় উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে আরান কিভাবে কথা বলে তা শুনার জন্য। আর তর্নি কিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যাচ্ছে? তাও তাঁরা দুজন জোর করে একবার ফোন দেওয়ালো তো এখন আরান ফোন দিচ্ছে সে ফোন ধরছে না। জুহা কোলের বালিশটা টাস করে বিছানায় রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
_আমি বুঝতে পারছি না এখানে এতো ভয় পাওয়ার কি হলো? সে তো নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য তাইনা?
_এটা ঠিক না জুহা। উনি মাত্র একটা লেটার দিলেন আর আমি কিনা চট করে উনাকে কল দিয়ে দিবো?
সুপ্তি রাগে পা এটে রাখা হাত দুটো নাচিয়ে বলল,
_এখন তোকে বস্তা বস্তা লেটার দিতে হবে বুঝি?
_আরে না সেটা বলছি না। আমাদের তো দু একদিন ভাবা উচিত তাইনা?'"
তর্নির কথা শেষ হতেই আবার কল এলো৷ সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
_এখন যদি ফোন না ধরেছিস তোকে লাত্তি দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিবো।
_দেখ সুপ্তি তুই বাড়াবাড়ি করছিস। এসব ঠিক না।
জুহা বলল,
_দেখ তর্নি আরারকে না জিজু হিসাবে আমাদের বেশ লেগেছে। তাই চাই ঘটনা মুচড় দেওয়ার আগে তুই ঝাপটে ধর। আরে ভাই আজকাল মানুষ রাস্তা ঘাটে প্রেম করে৷ তুই ঘরে বসেও করতে পারবি না?
সুপ্তি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চাপা গলায় বলল,"এই ভুও চুপ চুপ।" বলে সুপ্তি ফোন রিসিভ করে নিলো৷ তর্নিকে ফোনটা দিয়ে ফিসফিস করে বলল," নে কথা বল।"তর্নি ভিতু চোখে তাকিয়ে দুহাত মাথা এক সাথে নাড়িয়ে না বলল। জুহা ধমকের চোখে তাকালো। তর্নি কাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়৷ তাঁর বাটনের ছোট ফোনটাও যেন ধরার শক্তি নেই তাঁর। ফোনটা লাউডে দেওয়া আছে। জুহা সুপ্তি একফালি উত্তেজনা নিয়ে বসলো, আরানের মতো মাস্তান ছেলেটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা দেখতে। তর্নি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা হ্যালো।
_হাই মিস,,,,,,,
চলবে,,,,,,,।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)