Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা)
#1
_ প্রেম করবি তুই আর প্রপোজ করবো গিয়ে আমি?
_ তো কি হইছে? আমার হয়ে প্রপোজ করবি।
_পরে যদি তোর হয়ে বিয়ে করতে হয় তখন?

ফারদিনের কথা হো হো করে হেসে উঠলো ইরান ও সুলভ। একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাঁদের দিকে তাকালো আরার। তাঁর ভালো নাম হচ্ছে ইমতিয়াজ রাফি আরান। বাড়ির লোকজন ছাড়া সবাই তাকে আরার নামে ডাকে। তাঁর পেছনেও একটা কারণ আছে। আরারকে নিয়ে মজা উড়ানো তাঁর মোটেও পছন্দ হয়না। যেটা এই মুহুর্তে তাঁর বন্ধুরা করছে,কিন্তু বন্ধুদের তো কিছু বলাও যাবে না। প্রপোজটা সে নিজেই করতে পারতো। কিন্তু তাঁর ভয় হয়। যদি মেয়েটা রিজেক্ট করে দেয় এটা ভেবে। আরার রিজেক্ট করার মতো ছেলে নয়। কিন্তু তাকে সবাই ভিলেন বলে জানে। সহজ ভাষায় যাকে মাস্তান বলে। সে জন্য আরারের ভয় হচ্ছে। কোনো মেয়ে নিশ্চয়ই চাইবে না মাস্তান কারো সাথে সম্পর্কে জড়াক। আরার কিন্তু মোটেও মাস্তান নয়। সে যথেষ্ট ভালো স্টুডেন্ট। তবে একবার দুটো কলেজে খুব মারামারি করেছিলো সে। তাঁর বোনদের সাথে ছেলেরা খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো সে জন্য। আর সেই মারামারির মূহুর্ত অনেকে ভিডিও করে সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেয়। তারপর আরো দু এক জায়গায় বোনদের সাথে বাদরামি করেছে বলে ছেলেদের সাথে মারামারি করেছে। সে ভিডিও গুলোও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে সবার চোখে সে মাস্তান। সবাই চুপচাপ বসে ছিলো,হঠাৎ সুলভ বলে উঠলো,

_আইডিয়া।

সুলভের কথায় চট করে সবার জিজ্ঞাসুক চোখ সুলভের উপর এসে স্থির হলো। সুলভ বলল,

_আমরা তো একটা লেটার দিলেই পারি তাইনা।

ফারদিন ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্যাঙ্গ করে বলল, আমরা তো লেটার দিতেই পারি। দেখ তোর মতো নির্বোধ ওই মেয়েটা না।

_তো নির্বোধ না হলে কি হবে? লেটার পেয়ে থাপড়াতে আসবে? 

আরার সুলভের পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,

_ভাই। একটা লেটার লিখে দেনা।
_তোর হাতে কি ফোসকা পড়েছে?
আরার নাটকীয় ভাবে বলল,"
_পড়ে যেতে পারে,রিস্ক চাইনা।

ফারদিন বিরক্ত নিয়ে বলল," দেখ আরার, তুই না ওই নড়বড়ের কথা শুনবি না। ওর বুদ্ধিতে কাজ করলে সব সময় উল্টা পাল্টা কিছু হয়।

আরার ঝাড়িমারা গলায় বলল,"তাহলে তুই একটা আইডিয়া দে। সেটা তো পারবি না। বললাম আমার হয়ে প্রপোজ কর সেটাতেও তোর কলিজা কাঁপে। ওই সুলভ তুই লিখ তো।

সুলভ চট করে খাতা কলম বের করে বাইকের উপর রেখে লিখতে লাগলো। আরার মিটিমিটি হাসছে। তাঁর হাসির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফারদিন। ইরান নোক কামড়াতে কামড়াতে কি যেন ভাবছে। ফারদিন ইরানের মাথায় চাপড় দিয়ে বলল,"ওই চিন্তাবিদ কি ভাবছিস?" ইরান ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল, 

_আচ্ছা মেয়েটা যদি লেটারটা প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখায় তখন কি হবে?

ইরানের কথা শুনে আরার সুলভকে বলল," এই এই এই ওর নাম লিখবি না।

সুলভ নির্বোধ মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
_লেখা শেষ। ওর ও নাম লিখিনি তোর ও নাম লিখিনি। শুধু RR দিছি।" আরার লেটারটা হাতে নিয়ে পড়লো। মোটামুটি ভালোই লিখেছে। সে হলে তো এতোটাই পারতো না। ইরান চাপা গলায় বলল,

_ভাই চেয়ে দেখ ভাবি হল রুমের দিকে যাচ্ছে।

ফারদিন ঝাড়ি দিয়ে বলল,"হ্যাঁ এবার নিয়ে যা লেটার সাথে জুতার বাড়ি খেয়ে আয়।" 

আরার বলল",আচ্ছা ফারদিন তোর এতো জ্বলছে কেন শুনি? তোদের কাউকে যেতে হবেনা।" আরার চারদিকে তাকিয়ে দেখলো ক্যান্টিনের ওখানে সাত-আট বছরের একটা পিচ্চি ছেলে দুজনকে চা দিচ্ছে। আরার ছেলেটাকে ডেকে আনলো। তারপর বলল,

_এইমাত্র হলরুমে যে তিনটা মেয়ে ঢুকেছে তাঁর মধ্যে চশমা চোখে নীল ড্রেস পরা যে মেয়েটা, তাকে এই লেটারটা দিবি।" আরানের কথায় পিচ্চি ছেলেটি মাথা দুলিয়ে আচ্ছা ভাইয়া বলে হল রুমের দিকে দৌঁড় দিলো৷ আরান বাইকে শুয়ে পায়ে পা তুলে মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো। তাঁর বন্ধুগুলো আহাম্মকের মতো তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁর ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে এই দলের নেতা। আর তারা সবাই জ্বি বস জ্বি বস বলা পাবলিক। অথচ সে কিনা সরাসরি ভালোবাসার কথা না জানিয়ে লেটার দিচ্ছে। গত ছ'মাস থেকে আরার একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কখনো মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে মনের কথাটা প্রকাশ করতে পারেনা। অনেকবার ভালোবাসি বলার জন্য মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু বলতে পারেনি। সামনে গেলেই সে বাঘ থেকে বেড়াল হয়ে যায়। হুদাই তাঁর হাত পা কাঁপে।

______________________

পিচ্চিটা হল রুমে ঢুকে দেখলো তিনটা মেয়ে বসে কথা বলছে। আর কেউ নেই শুধু তারা তিনজনই। পিচ্চিটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলো,"

_এখানে তো চশমা পরা মেয়েটা লাল ড্রেস পরে আছে ভাইয়া তো বলল নীল ড্রেস পরা? মনে হয় ভাইয়া রং চিনিনা। নয়তো লাল বলতে গিয়ে নীল বলে দিছে।"

 নিজের মনের করা প্রশ্নের উত্তর নিজে দিয়ে তিনটি মেয়ের সামনে দাঁড়ালো সে। চশমা চোখে লাল ড্রেস পরা মেয়েটার দিকে লেটারটা দিয়ে বলল,"

_আপু এটা তোমাকে আরার ভাইয়া দিছে।"

পিচ্চির ছেলের কথায় তিনজনই ৪৪০ ভোল্টের শকড হয়। আরার নামটা যেন ভূবন কাঁপানোর মতো কোনো শব্দ। তারা তিন বান্ধবী। তর্নি,সুপ্তি,জুহা। দুপাশে জুহা ও সুপ্তি বসা। মাঝখানে বসে আছে তর্নি, যাকে পিচ্চিটা লেটার দিয়েছে। সুপ্তি ও জুহা তর্নির দিকে হা হয়ে তাকায়। তর্নিও আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। আরারের মতো ভিলেন তাকে লেটার দিয়েছে? ওয়ার্নিং লেটার নয়তো? কিন্তু সে তো কিছু করেই নি যে ওয়ার্নিং দিবে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সে। সুপ্তি পিচ্চির হাত থেকে ছু মেরে লেটারটা নিলো। পিচ্চি দৌড়ে হলরুম থেকে বেরিয়ে যায়। সুপ্তি তৎক্ষণাৎ লেটার খুলে জোরে জোরে পড়তে লাগলো,

আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি। জানিনা কেন জানি তোমায় দেখলে আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। হয়তো তুমি আমার চোখে সব থেকে সুন্দরী নারী বলে এমনটা হয়। ****৬৫৮৫৭৭ হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার। তোমার মেসেজের অপেক্ষায় থাকবো।

"RR"

লেটারটা পড়ে দু'মিনিট তিনজন শকডের উপর থাকে। কেমন রিয়েকশন দিবে কেউই বুঝতে পারছে না। হটাৎ সুপ্তি মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,"

_লাইক সিরিয়াসলি? এই যোগে এসে প্রপোজ লেটার? তাও আরারের মতো একটা ভিলেন? লেটারের কথাগুলাই তো সব এলোমেলো। সে আবার তোকে দেখলে এলোমেলো হয়ে যায়? আর কি দিলো এটা? লেটার? আরারের মতো ছেলেরা কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে কি করে জানিস? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বলে,"[পুরুষের মতো কণ্ঠ করে] ওই শুন আমি তোকে ভালোবাসি। তুই আমাকে ভালোবাসবি নাকি বাসবি না এটা তোর ব্যাপার। সোজা কথা তুই শুধু আমার অন্যকারো না।" 

সুপ্তিকে থামিয়ে জুহা বলল,"

_ইয়ার মুখ বন্ধ কর। এই লেটারের লেখাও যেমন এলোমেলো তোর কথাগুলাও তেমনি এলোমেলো। তবে যাই বলিস। আরার পুরো ভার্সিটির ক্রাশ।

সুপ্তি মুখ বাঁকিয়ে ভ্যাঙ্গ করে বলল,
_পুরো ভার্সিটির ক্রাশ। পুরো ভার্সিটি না। কয়েকজনের ক্রাশ।
_একই তো। সে আমাদের তর্নির মতো গাঁধীকে লাভ করে এটা কিন্তু আমাদের সবারই সৌভাগ্য।" তর্নি জুহার দিকে রাগি লুকে তাকালো। সুপ্তি বলল,"

_ওই সৌভাগ্য হবে কেন? সে কি বিল গেটসের ছেলে?
_ওই তুই থাম তো। 
_তুইও থাম। তর্নি তুই শুন। তোর না কপালটাই খারাপ। আজ এক মাসের জন্য ভার্সিটির বন্ধ দিবে। আর আজই কিনা আরার তোকে লেটার দিলো৷ দুদিন আগে দিলেই পারতো একটু দেখা সাক্ষাৎ করতি। আর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা ওতো দিলো। তোর তো Android ফোন নাই কথা বলবি কেমনে? শুধু মেসেজ আর ফোনালাপ?"

 জুহা বলল,"তাতে কি হয়েছে একমাস পরে দেখা হবে। তবুও না বলবি না কিন্তু তর্নি।
_ও না বলবে কেন? ও নিজেই তো আরারের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
_তাও ঠিক। তবে যাই বলিস আরার কিন্তু অনেক হট রে।" 

তর্নি চোখের চশমাটা খুলে টাস করে টেবিলে রেখে বলল,"চুপ যা তোরা,মুখে যা আসছে তাই বলছিস।" সুপ্তি চশমা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলল,"ওরে আল্লাহ ভেঙে দিছে। এতো জোরে রাখলি কেন, যদি ভেঙে যেতো? পড়তে দিছি বলে এভাবে রাখবি?
_আমি কি জোর করে পড়েছি নাকি? তুই তো পড়তে দিলি। কানি কোথাকার।
_মোটেও আমাকে কানি ডাকবি না। চশমা পড়তেও কপাল লাগে যেটা আমার আছে। জানিস তোর ওই আরার আমায় একদিন বলেছিলো, আমাকে নাকি চশমা পড়লে অনেক সুন্দর লাগে। এখন যদি আমার স্বাদের চশমাটা ভেঙে যেতো তাহলে সেই সুন্দরটাও লাগতো না। আসলে চশমায় তোরে কেমন লাগে দেখতে চাওয়াই আমার ভুল ছিলো।"

 বলতে বলতে চোখে চশমা পড়ে নেয় সুপ্তি। সুপ্তির বলা কোনো কথাই তর্নির কানে আসছে না। সে আরারের ভাবনায় মগ্ন। আসলেই কি আরার তাকে ভালোবাসে? এই ভার্সিটিতে এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে। সুপ্তি আর জুহার মতো সুন্দরী থাকতে তাঁর মাঝে এমন কি দেখলো যে আরার তাকে ভালোবাসলো? তর্নি যে অসুন্দরী তাই নয় কিন্তু তর্নি গ্রাম থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। যা আরারের মতো ছেলের পছন্দ হওয়ার কথাই নয়। আরারের মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই হেসে উঠলো তর্নি। আরারকে সে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলছিলো।

চলবে,,,,,।

https://www.facebook.com/groups/41899633...group_link

 ভালোবাসা, খুনসুটি,মান অভিমান,পারিবারিক, সামাজিক,কমেডি, বাস্তবতা সব মিলিয়ে গল্পের প্লট সাজিয়েছি। জানিনা সবার কাছে গল্পটা কেমন লাগবে। চার-পাঁচ জুটির অদ্ভুত প্রেম কাহিনি। আশা করি আপনারা সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন। ভালো কিছু লিখার চেষ্টা করবো। অবশ্যই জানাবেন কেমন হয়েছে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
রোমান্টিক গল্প: মেঘবতী (লেখিকা:সুলতানা_সিমা) - by Bangla Golpo - 20-03-2023, 10:10 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)