20-03-2023, 09:45 PM
(৩)
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিন তমাল শোভাকে বাড়িতে নিয়ে এলো। এই ক'দিনে তমাল রোজই হাসপাতাল এসেছে শোভাকে দেখতে। শোভার কাজের মেয়েটাকে আগে থেকেই খবর দেওয়া ছিল। তাই সে ঘর-দোর পরিষ্কার করে রেখেছিল। শোভারা আসার পর তাদের বসতে দিয়ে সে চা করতে গেল।
— সত্যি, আপনি না থাকলে খুব সমস্যায় পড়তাম! এ যাত্রায় আপনার জন্যই বেঁচে গেলাম।
শোভা বসতে বসতে বলল।
—এমা! ছি! ছি! এসব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না! আমি মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের প্রতি কর্তব্য করেছি মাত্র।
তমাল হেসে উত্তর দিল।
—তাহলেও,এইটুকুই বা আজকাল কতজন করে বলুন!
—হুম! আসলে আজকাল মানুষ অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। আর এই মোবাইল ফোন বেরিয়ে আরো ক্ষতিটা করেছে। সবাই আজকাল দেখবেন, ঘাড় গুজে মোবাইলে কেবল খুটুর-খুটুর করছে। সময়টা এতে খুব ভালো কেটে যায়; কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না, আমরা দিন দিন এর ফলে কতটা একা হয়ে পড়ছি। বুঝলেন তো এখন সবাই ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড। আসল ফ্রেন্ড আর কেউ নেই।
এরই মধ্যে কাজের মেয়েটা চা দিয়ে গেল চা খেতে খেতে শোভা বলল,
—হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন আপনি। মানুষে মানুষে আজকাল যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। প্রথম যখন কলেজ জয়েন করলাম দেখতাম স্টাফ রুমে অফ পিরিয়ডে কত গল্প হতো। এখন সব নিজের মতো মোবাইলে খুট খুট করে।
—আচ্ছা আপনিও কি ওই ফেসবুক টেসবুক করেন নাকি?
—আরে না না! একবার এক জুনিয়র কলিগ জোর করে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল এই ফেসবুকে। ব্যাস ওই পর্যন্তই! তারপর আমার আর ওসব করে ওঠা হয়নি।
—সেটাই স্বাভাবিক। আমরা সব বুঝলেন না ব্যাকডেটেড মানুষ। এইসব আমাদের কম্ম নয়। আচ্ছা আপনার এমনি আত্মীয়-স্বজন বা পুরনো কোন বন্ধু নেই? আসলে হাসপাতালে যখন ছিলেন কাউকে সেভাবে আপনার কাছে আসতে দেখিনি। তাই আউট অফ কিউরিওসিটি জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে করবেন না আবার!
— না না! মনে করার কিছু নেই! আসলে আমার সেভাবে আর কারো সাথে যোগাযোগ নেই। বন্ধুরা সব কলেজ লাইফের পরই আলাদা হয়ে গেছে। আর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইরা আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। আমারও আর যোগাযোগ করা হয়নি কখনো।
—হুম! আমি এটাই আন্দাজ করেছিলাম; কিন্তু একদম একা একা থাকা তো খুব রিস্কি দেখতেই তো পেলেন। আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ না রাখলেন, নতুন বন্ধু করতে সমস্যা কোথায়! বন্ধুরাই কিন্তু বিপদে-আপদে কাজে আসে!
—এই বয়সে আবার কে বন্ধু হবে আমার!
—বন্ধুত্বের কোন বয়স নেই। আপনি কিছু মনে না করলে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারেন।
—বেশতো তাই না হয় হবে।
—তাহলে কিন্তু আমায় 'তমাল বাবু' ডাকা যাবে না। শুধু তমাল ডাকতে হবে। আর তুমি করে বলতে হবে।
—আচ্ছা! তাহলে আমাকেও শুধু শোভা বলে ডাকলেই হবে।
শোভা হেসে বলল।
(৪)
—এই আজকে একটা সিনেমা দেখতে যাবে?
—সিনেমা!!!
—হ্যাঁ! সিনেমা। এতে এত অবাক হবার কি আছে?
—এই বয়সে এইসব সিনেমা-টিনেমা দেখতে যাওয়া আমার দ্বারা হবে না বাপু!
—তোমার এমন কিছু বয়স হয়নি। আর আমি তোমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাব এটাই ফাইনাল। আমি কোন না শুনবো না।
এই কয়দিনে তমাল আর শোভার বন্ধুত্ব ভালই জমে উঠেছে। শোভা কলেজ থেকে ফিরলে তোমার মাঝেমধ্যেই তার বাড়ি ঢুঁ মেরে যায়। দুজনের মধ্যে টুকটাক গল্প গুজব চলে। আর যেদিন রনিতকে পড়ানো থাকে, সেদিনগুলো তমাল নিজের বাইকে করে শোভা কে নিয়ে যায় আবার বাড়ি পৌঁছেও দিয়ে যায়। শোভার অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে তমাল, সুলেখার থেকে, এ ব্যাপারে পারমিশনও জোগাড় করে নিয়েছে। সুলেখা না করেনি। সে শুধু চায় কোনভাবেই যেনো শোভার কাছে রনিতের অংকের টিউশন বন্ধ না হয়।
আপাতদৃষ্টিতে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও ভেতরে ভেতরে তমাল ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। শোভার কাছ থেকে এই পাতানো বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছুর চাহিদা রয়েছে তার। আজকাল সে শোভাকে কল্পনা করে প্রায়ই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এইতো সেদিন উত্তেজনার বসে সুলেখাকেই আঁকড়ে ধরেছিল। প্যান্টের ভেতরে থাকা সত্ত্বেও তার দৃঢ় পুংদণ্ডের খোঁচায় কেঁপে উঠেছিল সুলেখা। সুলেখা, এরপর আগ্রহ দেখালেও,তমাল নিজেকে সামলে নিয়েছিল। তার মনের একটাই সংকল্প হল যে নারী তাকে উত্থান দিয়েছে, তাকেই সে জীবনে প্রথম ভেদ করবে। এই সংকল্পের বশবর্তী হয়েই আজকে শোভাকে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সে। আর কোন অপেক্ষা করতে রাজি নয় তমাল। শোভাকে আজই যে কোন মূল্যে ভেদ করবে সে!
—কিন্তু সুলেখাদি কি ভাববে, আমরা একসাথে সিনেমা দেখতে গেছি শুনলে?
ইতস্তত করছিল শোভা,
—আর তাছাড়া এখানে আমাদের অনেকে চেনে। এভাবে আমাদের একসাথে দেখলে, নানা রকম কথা শুরু হবে। কলেজে আমার অনেক সমস্যা হবে।
— তোমার কথা সব বুঝলাম, এবার আমি কিছু বলি!
তমাল শান্ত গলায় বলতে শুরু করল,
—দেখো সুলেখা তার বন্ধুদের সাথে ঘোরে, আমিও আমার বন্ধুর সাথে ঘুরবো। এতে কারো আপত্তির কিছু নেই। বিয়ে করেছি মানেই সারাক্ষণ বর বউকে একসাথে ঘুরতে হবে তার কোন মানে নেই। আর আমি কাছে-পীঠের সিনেমা হল বুক করিনি, তাই আশা করছি কোন রকম সমস্যা হবে না। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমাদের যেতে সময় লাগবে। আমি একটু পরে তোমাকে নিতে আসছি।
এই বলে তমাল ফোনটা রেখে দিলো।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিন তমাল শোভাকে বাড়িতে নিয়ে এলো। এই ক'দিনে তমাল রোজই হাসপাতাল এসেছে শোভাকে দেখতে। শোভার কাজের মেয়েটাকে আগে থেকেই খবর দেওয়া ছিল। তাই সে ঘর-দোর পরিষ্কার করে রেখেছিল। শোভারা আসার পর তাদের বসতে দিয়ে সে চা করতে গেল।
— সত্যি, আপনি না থাকলে খুব সমস্যায় পড়তাম! এ যাত্রায় আপনার জন্যই বেঁচে গেলাম।
শোভা বসতে বসতে বলল।
—এমা! ছি! ছি! এসব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না! আমি মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের প্রতি কর্তব্য করেছি মাত্র।
তমাল হেসে উত্তর দিল।
—তাহলেও,এইটুকুই বা আজকাল কতজন করে বলুন!
—হুম! আসলে আজকাল মানুষ অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। আর এই মোবাইল ফোন বেরিয়ে আরো ক্ষতিটা করেছে। সবাই আজকাল দেখবেন, ঘাড় গুজে মোবাইলে কেবল খুটুর-খুটুর করছে। সময়টা এতে খুব ভালো কেটে যায়; কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না, আমরা দিন দিন এর ফলে কতটা একা হয়ে পড়ছি। বুঝলেন তো এখন সবাই ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড। আসল ফ্রেন্ড আর কেউ নেই।
এরই মধ্যে কাজের মেয়েটা চা দিয়ে গেল চা খেতে খেতে শোভা বলল,
—হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন আপনি। মানুষে মানুষে আজকাল যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। প্রথম যখন কলেজ জয়েন করলাম দেখতাম স্টাফ রুমে অফ পিরিয়ডে কত গল্প হতো। এখন সব নিজের মতো মোবাইলে খুট খুট করে।
—আচ্ছা আপনিও কি ওই ফেসবুক টেসবুক করেন নাকি?
—আরে না না! একবার এক জুনিয়র কলিগ জোর করে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল এই ফেসবুকে। ব্যাস ওই পর্যন্তই! তারপর আমার আর ওসব করে ওঠা হয়নি।
—সেটাই স্বাভাবিক। আমরা সব বুঝলেন না ব্যাকডেটেড মানুষ। এইসব আমাদের কম্ম নয়। আচ্ছা আপনার এমনি আত্মীয়-স্বজন বা পুরনো কোন বন্ধু নেই? আসলে হাসপাতালে যখন ছিলেন কাউকে সেভাবে আপনার কাছে আসতে দেখিনি। তাই আউট অফ কিউরিওসিটি জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে করবেন না আবার!
— না না! মনে করার কিছু নেই! আসলে আমার সেভাবে আর কারো সাথে যোগাযোগ নেই। বন্ধুরা সব কলেজ লাইফের পরই আলাদা হয়ে গেছে। আর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইরা আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। আমারও আর যোগাযোগ করা হয়নি কখনো।
—হুম! আমি এটাই আন্দাজ করেছিলাম; কিন্তু একদম একা একা থাকা তো খুব রিস্কি দেখতেই তো পেলেন। আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ না রাখলেন, নতুন বন্ধু করতে সমস্যা কোথায়! বন্ধুরাই কিন্তু বিপদে-আপদে কাজে আসে!
—এই বয়সে আবার কে বন্ধু হবে আমার!
—বন্ধুত্বের কোন বয়স নেই। আপনি কিছু মনে না করলে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারেন।
—বেশতো তাই না হয় হবে।
—তাহলে কিন্তু আমায় 'তমাল বাবু' ডাকা যাবে না। শুধু তমাল ডাকতে হবে। আর তুমি করে বলতে হবে।
—আচ্ছা! তাহলে আমাকেও শুধু শোভা বলে ডাকলেই হবে।
শোভা হেসে বলল।
(৪)
—এই আজকে একটা সিনেমা দেখতে যাবে?
—সিনেমা!!!
—হ্যাঁ! সিনেমা। এতে এত অবাক হবার কি আছে?
—এই বয়সে এইসব সিনেমা-টিনেমা দেখতে যাওয়া আমার দ্বারা হবে না বাপু!
—তোমার এমন কিছু বয়স হয়নি। আর আমি তোমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাব এটাই ফাইনাল। আমি কোন না শুনবো না।
এই কয়দিনে তমাল আর শোভার বন্ধুত্ব ভালই জমে উঠেছে। শোভা কলেজ থেকে ফিরলে তোমার মাঝেমধ্যেই তার বাড়ি ঢুঁ মেরে যায়। দুজনের মধ্যে টুকটাক গল্প গুজব চলে। আর যেদিন রনিতকে পড়ানো থাকে, সেদিনগুলো তমাল নিজের বাইকে করে শোভা কে নিয়ে যায় আবার বাড়ি পৌঁছেও দিয়ে যায়। শোভার অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে তমাল, সুলেখার থেকে, এ ব্যাপারে পারমিশনও জোগাড় করে নিয়েছে। সুলেখা না করেনি। সে শুধু চায় কোনভাবেই যেনো শোভার কাছে রনিতের অংকের টিউশন বন্ধ না হয়।
আপাতদৃষ্টিতে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও ভেতরে ভেতরে তমাল ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। শোভার কাছ থেকে এই পাতানো বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছুর চাহিদা রয়েছে তার। আজকাল সে শোভাকে কল্পনা করে প্রায়ই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এইতো সেদিন উত্তেজনার বসে সুলেখাকেই আঁকড়ে ধরেছিল। প্যান্টের ভেতরে থাকা সত্ত্বেও তার দৃঢ় পুংদণ্ডের খোঁচায় কেঁপে উঠেছিল সুলেখা। সুলেখা, এরপর আগ্রহ দেখালেও,তমাল নিজেকে সামলে নিয়েছিল। তার মনের একটাই সংকল্প হল যে নারী তাকে উত্থান দিয়েছে, তাকেই সে জীবনে প্রথম ভেদ করবে। এই সংকল্পের বশবর্তী হয়েই আজকে শোভাকে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সে। আর কোন অপেক্ষা করতে রাজি নয় তমাল। শোভাকে আজই যে কোন মূল্যে ভেদ করবে সে!
—কিন্তু সুলেখাদি কি ভাববে, আমরা একসাথে সিনেমা দেখতে গেছি শুনলে?
ইতস্তত করছিল শোভা,
—আর তাছাড়া এখানে আমাদের অনেকে চেনে। এভাবে আমাদের একসাথে দেখলে, নানা রকম কথা শুরু হবে। কলেজে আমার অনেক সমস্যা হবে।
— তোমার কথা সব বুঝলাম, এবার আমি কিছু বলি!
তমাল শান্ত গলায় বলতে শুরু করল,
—দেখো সুলেখা তার বন্ধুদের সাথে ঘোরে, আমিও আমার বন্ধুর সাথে ঘুরবো। এতে কারো আপত্তির কিছু নেই। বিয়ে করেছি মানেই সারাক্ষণ বর বউকে একসাথে ঘুরতে হবে তার কোন মানে নেই। আর আমি কাছে-পীঠের সিনেমা হল বুক করিনি, তাই আশা করছি কোন রকম সমস্যা হবে না। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমাদের যেতে সময় লাগবে। আমি একটু পরে তোমাকে নিতে আসছি।
এই বলে তমাল ফোনটা রেখে দিলো।