12-03-2023, 10:02 AM
*রিকশাওয়ালা*
কোচিং ক্লাস শেষ করে প্রতিদিনের মতো বেলঘড়িয়া স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার উদ্যোগে রিক্সা ধরলাম। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে সিগারেট ধরাতে যাব,এমন সময় মনে হলো রিক্সা কাকুকেও একটা অফার করি। কাকু আমার অফার প্রত্যাক্ষান করে পকেটে রাখা বিড়ি ধরিয়ে রিক্সা চালু করলো। দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতো নয়। রাত দশটায় মনে হলো, আমার শহর আজ অন্যভাবে ধরা দেওয়ার অপেক্ষায়।
মেন রাস্তার ধার ঘেষে একের পর এক অট্টালিকা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের রিক্সা।নিস্তব্ধতা ভাঙলো কাকুর বাড়ির ঠিকানা জানতে চাওয়াতে।কাকুর উত্তরে বুঝলাম সেটা বস্তি এলাকা সংলগ্ন। বাড়ির কথা জানতে চাওয়াতে হঠাৎ করেই রিক্সা থামিয়ে দিল। রিক্সা থেকে নেমে বললো,চলো এক কাপ চা খাই। চা-এর দোকানের দিদি টা দু'ভাড় চা এগিয়ে দিল। এক মুখ হাসি নিয়ে আমাকে বললো,'তখনের সেই সিগারেটের অফার টা আছে নাকি?'প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট কাকুর দিকে এগিয়ে দিলাম। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট আর চা এর ভাড়ে চুমুক দিয়ে বলা শুরু করল। বাড়িতে মারনরোগে আক্রান্ত স্ত্রী,ছেলে আর শ্বশুরবাড়ি ফেরত মানসিক ''.ের শিকার ছোট বোন। বোনের বিয়ে দিতে যৌতুকের টাকা জোগাড়ের জন্য নিজের কিডনিটাকেও রেহাই দেয়নি। জামা তুলে দেখানো দাগ এখনও স্পষ্ট। চায়ের কাপে বেশ কয়েকবার চুমুক দেওয়া সত্বেও চাএর পরিমাণ কমতে না দেখে অবাক হলাম। লক্ষ্য করলাম চোখের জলের সাথে চা-এর দুধ মিশে এক অন্য মাত্রা নিয়েছে। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে আমাকেও বাড়ি পৌঁছতে হবে। নাহলে আজ রাতেও ছেলেটা উপোস করে ঘুমিয়ে পড়বে। ছেলের কথা বলতেই কাকুর মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করলাম। কাকু বলে চললো, ছেলে গত বছর পদার্থ বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। বাবু দা(কাকুর রিক্সার মালিক)-কে ধরে ছেলের জন্য একটা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাকুর শেষের কথাটা হজম করতে না পেরে চলন্ত রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে, কাকুর প্রতি সমস্ত সন্মান ভুলে গিয়ে বেড়িয়ে এলো দুটো খিস্তি। কেমন বাপ তুমি?? এতো ভালো ছেলেকে এগিয়ে না দিয়ে, হাতে রিক্সা ধরিয়ে দিয়েছো। কাকু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সমস্যার বাধ ভেঙে অশ্রুধারা নেমে এল। কাদতে কাদতে বললো, আমার শরীরের যা অবস্থা তাতে দিনে দশটা ভাড়াও খাটতে পারি না। বাড়িতে তোমার কাকিমার খরচ, সংসার খরচ দরকার, তা আমার কল্পনার অতীত। কাকুর হাতটা চেপে ধরে, আমার টিউশন ফিজের দুটো খাম গুজে দিলাম। আর শাসানির সুরে বললাম, ছেলে রিকশা চালাচ্ছে চালাক। কিন্তু কাল থেকে যেন আমার কাছে ক্লাস করতে যায়। না হলে বাবা-ছেলে দুজনেরই রিকশা চালানো বন্ধ করে দেব। পরদিন সকালে ক্লাসে ঢুকে দেখি ছিপছিপে একটা ছেলে আমার ক্লাস আলো করে বসে আছে। বেশীদিন ওকে আটকে রাখা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের অফিসার পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, কাজের জন্য আজ ও সোদপুর ছেড়ে দিলে দিল্লী পৌছে গেছে।
সুশান্ত কাকু (আমার গল্পের নায়ক) আজও রিক্সা চালায়। ব্যতিক্রম শুধু এটাই যে, আজ কাকু আমাকে বাড়ি থেকে আনা আর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্যেই রিকশা টা চালায়। আর মাস শেষে আমার কাছ থেকে হাত পেতে "একটাকা" নেয়। যা এত দিন গুরুদক্ষিণা হিসেবে আমি নিয়ে এসেছি। আজ কাকুর রিকশায় আসতে আসতে পুরোনো স্মৃতিচারন করছিলাম। কখন যে আমি পাড়ার মোড়ে পৌছে গেছি খেয়ালই হয়নি। হুশ ফিরল,যখন কাকু প্রতিদিনের মতো সিগারেট অফার করল। রিকশা থেকে নেমে কাকুর দিকে হাত নেড়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। অপেক্ষা করে রইলাম কাল সকালে কাকু আসার।।।।।।।
*অরুণাংশু'র ডায়েরী*
*রিকশাওয়ালা* কোনো গল্প নয়। আমার জীবনের সত্যিকারের একটা অধ্যায়কে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। শুধু কথাগুলো নিজের মত করে সাজানো।
কোচিং ক্লাস শেষ করে প্রতিদিনের মতো বেলঘড়িয়া স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার উদ্যোগে রিক্সা ধরলাম। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে সিগারেট ধরাতে যাব,এমন সময় মনে হলো রিক্সা কাকুকেও একটা অফার করি। কাকু আমার অফার প্রত্যাক্ষান করে পকেটে রাখা বিড়ি ধরিয়ে রিক্সা চালু করলো। দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতো নয়। রাত দশটায় মনে হলো, আমার শহর আজ অন্যভাবে ধরা দেওয়ার অপেক্ষায়।
মেন রাস্তার ধার ঘেষে একের পর এক অট্টালিকা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের রিক্সা।নিস্তব্ধতা ভাঙলো কাকুর বাড়ির ঠিকানা জানতে চাওয়াতে।কাকুর উত্তরে বুঝলাম সেটা বস্তি এলাকা সংলগ্ন। বাড়ির কথা জানতে চাওয়াতে হঠাৎ করেই রিক্সা থামিয়ে দিল। রিক্সা থেকে নেমে বললো,চলো এক কাপ চা খাই। চা-এর দোকানের দিদি টা দু'ভাড় চা এগিয়ে দিল। এক মুখ হাসি নিয়ে আমাকে বললো,'তখনের সেই সিগারেটের অফার টা আছে নাকি?'প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট কাকুর দিকে এগিয়ে দিলাম। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট আর চা এর ভাড়ে চুমুক দিয়ে বলা শুরু করল। বাড়িতে মারনরোগে আক্রান্ত স্ত্রী,ছেলে আর শ্বশুরবাড়ি ফেরত মানসিক ''.ের শিকার ছোট বোন। বোনের বিয়ে দিতে যৌতুকের টাকা জোগাড়ের জন্য নিজের কিডনিটাকেও রেহাই দেয়নি। জামা তুলে দেখানো দাগ এখনও স্পষ্ট। চায়ের কাপে বেশ কয়েকবার চুমুক দেওয়া সত্বেও চাএর পরিমাণ কমতে না দেখে অবাক হলাম। লক্ষ্য করলাম চোখের জলের সাথে চা-এর দুধ মিশে এক অন্য মাত্রা নিয়েছে। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে আমাকেও বাড়ি পৌঁছতে হবে। নাহলে আজ রাতেও ছেলেটা উপোস করে ঘুমিয়ে পড়বে। ছেলের কথা বলতেই কাকুর মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করলাম। কাকু বলে চললো, ছেলে গত বছর পদার্থ বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। বাবু দা(কাকুর রিক্সার মালিক)-কে ধরে ছেলের জন্য একটা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাকুর শেষের কথাটা হজম করতে না পেরে চলন্ত রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে, কাকুর প্রতি সমস্ত সন্মান ভুলে গিয়ে বেড়িয়ে এলো দুটো খিস্তি। কেমন বাপ তুমি?? এতো ভালো ছেলেকে এগিয়ে না দিয়ে, হাতে রিক্সা ধরিয়ে দিয়েছো। কাকু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সমস্যার বাধ ভেঙে অশ্রুধারা নেমে এল। কাদতে কাদতে বললো, আমার শরীরের যা অবস্থা তাতে দিনে দশটা ভাড়াও খাটতে পারি না। বাড়িতে তোমার কাকিমার খরচ, সংসার খরচ দরকার, তা আমার কল্পনার অতীত। কাকুর হাতটা চেপে ধরে, আমার টিউশন ফিজের দুটো খাম গুজে দিলাম। আর শাসানির সুরে বললাম, ছেলে রিকশা চালাচ্ছে চালাক। কিন্তু কাল থেকে যেন আমার কাছে ক্লাস করতে যায়। না হলে বাবা-ছেলে দুজনেরই রিকশা চালানো বন্ধ করে দেব। পরদিন সকালে ক্লাসে ঢুকে দেখি ছিপছিপে একটা ছেলে আমার ক্লাস আলো করে বসে আছে। বেশীদিন ওকে আটকে রাখা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের অফিসার পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, কাজের জন্য আজ ও সোদপুর ছেড়ে দিলে দিল্লী পৌছে গেছে।
সুশান্ত কাকু (আমার গল্পের নায়ক) আজও রিক্সা চালায়। ব্যতিক্রম শুধু এটাই যে, আজ কাকু আমাকে বাড়ি থেকে আনা আর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্যেই রিকশা টা চালায়। আর মাস শেষে আমার কাছ থেকে হাত পেতে "একটাকা" নেয়। যা এত দিন গুরুদক্ষিণা হিসেবে আমি নিয়ে এসেছি। আজ কাকুর রিকশায় আসতে আসতে পুরোনো স্মৃতিচারন করছিলাম। কখন যে আমি পাড়ার মোড়ে পৌছে গেছি খেয়ালই হয়নি। হুশ ফিরল,যখন কাকু প্রতিদিনের মতো সিগারেট অফার করল। রিকশা থেকে নেমে কাকুর দিকে হাত নেড়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। অপেক্ষা করে রইলাম কাল সকালে কাকু আসার।।।।।।।
*অরুণাংশু'র ডায়েরী*
*রিকশাওয়ালা* কোনো গল্প নয়। আমার জীবনের সত্যিকারের একটা অধ্যায়কে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। শুধু কথাগুলো নিজের মত করে সাজানো।