Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#43
[৫১]

মহাসপ্তমীর সকাল। আদালতে সোসাইটির কেস ওঠার কথা। বিষয়টা নিয়ে খুশবন্ত কাউর আগের মত আগ্রহী নয়। আসামী শাস্তি পেল কি মুক্তি পেল তাতে তার কি আসে যায়। রতি বলছিল কাজ করে যাও। রেজাল্ট নিয়ে ভাবার দরকার নেই। তবু চিন্তাটা নাকের ডগায় ঘুরে ফিরে আসছে। অনেক শুনেছে আম্মাজীর কথা, স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি। সেদিন কোথায় গায়েব হল, পেলে দেখিয়ে দিত দৈবী ক্ষমতারেণ্ডির বাচ্চা।
আম্মাজীর অপার ক্ষমতা সবাই জানে। তা হলেও সিদ্ধানন্দ ব্রহ্মানন্দ একটু নার্ভাস। আদালতে আজ তাদের কেস ওঠার কথা। মিথিলার কোনো চিন্তা নেই। অলৌকিক ক্ষমতাবলে আম্মাজী কিই না করতে পারে। আম্মাজী সহায় মানে ভগবান সহায়। সকাল সকাল স্নান সেরে আদালতে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। খাস কামরায় ধ্যানস্থ সকাল থেকে আম্মাজী। বাচ্চাকে ফিরে পাবার আশা নেই বুঝতে পারছেন। এখন ভগবানের প্রতি তার অপরিসীম ক্ষোভ, দিয়ে কেন আবার ফিরিয়ে নিল। আউরতটা শিখ হলেও বহুকাল এই মুলুকে বসবাস করছে, আম্মাজী খবর নিয়েছে। নিমীলিত চোখের কোলে জল চিকচিক করে।
কাল মহাষ্টমী। দুর্গা পুজো নাহলেও এইদিনটি ঘটা করে পালিত হয় রিলিফ সোসাইটিতে। তার আয়োজন ঝাড়পোছ সাজসজ্জা চলছে রিলিফ সোসাইটিতে। প্রতিবারের মত এবারও ভিন রাজ্য হতে অতিথি সমাগম হবার কথা। কয়েকজন বিদেশী অতিথিও উপস্থিত থাকতে পারেন শোনা যাচ্ছে।
ঘুম ভাঙ্গলেও শেষরাতের আমেজ রত্নাকর চাদরে আপাদ মস্তক ঢেকে শুয়ে আছে রত্নাকর। জানকি ঘরে ঢুকে বাক্স ধরে টানতে রত্নাকর মুখের চাদর সরিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হল মাসী?
বাক্সটা ওইদিকি সরায়ে দিচ্ছি। জানকি থতমত খেয়ে বলল।
কি দরকার পায়ের কাছেই থাকনা।
ওঠেন। চা দিচ্ছি। জানকি চা আনতে গেল।
স্নান সারা, গুরু নানকের ছবির সামনে খুশবন্ত ধ্যানস্থ। মন দিয়ে নিজের কাজ করে যাও, ফলাফল বাইগুরুর হাতে। আম্মীর মুখটা মনে পড়ল। একসময় উঠে আসন তুলে রাখল খুশবন্ত। জানকি চা দিয়ে গেল।
সাহেব কি করছে? খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল।
ডেকে দিচ্ছি। জানকি চলে গেল।
রত্নাকর চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে দেখল, খুশীদি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, হাতের ইশারায় বসতে বলল। মর্নিং...না যেমন আছে ...দশ? কিন্তু রয়ালটি কম হয়ে যাচ্ছেনা? ...পরের এডিশন হলে বাড়াবে? ....চেক আমার নামে হলে ভাল হয়...ও সই করে দেবে... থ্যাঙ্ক ইউ রাখছি...শুভ সপ্তমী।
ফোন রেখে রতির তাকিয়ে হাসল, কার ফোন বলতো?
রত্নাকর হাসল, খুশীদিকে বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে। মনে শান্তি থাকলে মানুষকে সুন্দর লাগে।
বাদল বোস ফোন করেছিল। দশ হাজার দেবে তার উপর রয়াল্টি। এবার তোর নামে একটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলতে হবে। চেক দিতে আসলে সই করে নিয়ে নিবি।
খুশীদি নতুন উপন্যাস শুরু করেছি, নাম দেবো "নবজন্ম।"
খুশবন্ত উদাস হয়ে কি যেন ভাবে। আচমকা প্রশ্ন করল, স্যাণ্ডি কি বাঙালী?
রত্নাকর হেসে বলল, হ্যা বাঙালী। ওর বাবার নাম সুনীল গুপ্ত।
সুনীল গুপ্ত? নামটা শোনা-শোনা লাগছে। কোথায় থাকে?
সল্ট লেক।
সমজ গেয়া। ওর সিস্টার ইন ল সোসাইটির সঙ্গে কানেকশন আছে।
রত্নাকর বুঝতে পারে রঞ্জার কথা বলছে, খুশীদিকে সেকথা চেপে গিয়ে বলল, সোসাইটিতে অনেক অভিজাত ফ্যসামিলির লোকজন যায়।
সোসাইটি উপরে তোর বহুৎ দরদ? খুশবন্ত মজা করে বলল।
রত্নাকর কোনো উত্তর দিলনা। খুশবন্ত বলল, গুসসা হল?
রত্নাকর চোখ তুলে তাকাল, চোখের পাতা ভিজে বলল, তুমি দু-তিন বছরের বড়।
চার-পাঁচ বছর।
তুমি যা করেছো আমার মায়ের মত।
সাদি হলনা মা বানিয়ে দিলি?
ভালো চাকরি করছো, এবার সাদি করো।
খুশবন্তকে উদাস মনে হয়, অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, লেড়কা ঠিক হয়ে গেছে। পাঞ্জাবে ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস। তোর পাড়ায় মঞ্জিত আছে, ওর কেমন রিলেটিভ।
ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস? রত্নাকর অবাক হয়ে বলল।
খুশবন্ত হেসে ফেলল, বহুৎ মালদার লোক, তোর খুশীদির মত কয়েকটাকে কিনে নিতে পারে। তোর পছন্দ নয়?
আমার পছন্দে কি এসে যায়? তোমার ইচ্ছেটাই আসল।
খুশবন্তকে বিষণ্ণ মনে হল বলল, সব কি আমার ইচ্ছেতে হবে?
তোমার আম্মীকে বলে দাও।
ধুর বোকা। আমি ভাবছি আজকের মামলার কথা। এই শালা আম্মাজী বহুৎ জাহাঁবাজ আউরত আছে। ওয়াই গুরুর ইচ্ছে।
আদালত চত্বরে ভীড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। পুজোর আগে আজ শেষ দিন। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের জীপ। একটা এ্যাম্বাসাডোরে এসেছে মিথিলা সিদ্ধানন্দ ব্রহ্মানন্দ। মামলা ঊঠতে উঠতে বেলা গড়িয়ে গেল। মিথিলার উকিল দাঁড়িয়ে বলল, মে লার্ড আমরা এখনো চার্জশিট পাইনি। আইও পরেশবাবু আমতা আমতা করে। জজ সাহেব বিরক্ত হয়ে পুজোর পর শুনানির দিন ধার্য করে দিলেন। ব্রহ্মানন্দ সিদ্ধানন্দ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাঠগড়া থেকে নেমে গেল। নিত্যানন্দ ঘোষ শেষ মুহূর্তে জীপ থেকে নেমে যখন আদালতে পৌছালো তখন অন্য মামলার শুনানি শুরু হয়ে গেছে। পরেশবাবুর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানল ওসি সাহেব। এস আই পরেশবাবুকে জীপে উঠতে বলে জিজ্ঞেস করল, স্যার এসেছিলেন?
এসপি সাহেব?
তাছাড়া আবার কে স্যার? মুচকি হেসে বলল নিত্যানন্দ।
না ওনাকে দেখিনি।
আর দেখতে হবেনা। ঐযে বলেনা পীপিলিকার পাখা ওঠে, শালা আম্মাজীর সঙ্গে টক্কর।
ড্রাইভারকে বলল, চালা।
খুশবন্ত চিঠি পাবার পর ডিআইজি আইজি স্বরাষ্ট্র সচিব সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছে। স্যার আমার এখানে একবছরও হয়নি যুক্তি দেখিয়েছে। সবার এককথা আমার হাতে নেই। কার হাতে তাও কেউ খোলসা করে বলল না। একে একে সব অফিস বন্ধ হতে শুরু করে, জীপে বসে খুশবন্ত পকেট থেকে চিঠিটা খুলে আরেকবার দেখল, দার্জিলিং।
রাত হয়েছে, এত রাত হবার কথা নয়। খুশীদি আসছেনা দেখে রত্নাকর অপেক্ষা করতে করতে টিফিন খেয়ে নিল। জানকি বলল, ম্যাডম ঐরকম। এই মাসখানেক একটু তাড়াতাড়ি ফিরছিল।
আদালতে আজ সোসাইটির মামলা ওঠার কথা। এত রাত অবধি আদালত খোলা থাকার কথা নয়। কি হতে পারে খুশীদির কিছু অনুমান করতে পারেনা। রাগ হয় খুশীদির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য। মাথার উপর কেউ বলার নেই একা একা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।
সপ্তমী পুজোর আরতি শুরু হয়েছে। উশ্রীর কি রকম বোন ছন্দা এসেছে দিদির বাড়ী বেড়াতে। মণ্ডপে ভীড়, বঙ্কা ঢাক বাজাচ্ছে। নজর ছন্দার দিকে। মঞ্জিত ঢাকের কাঠি কেড়ে নিয়ে বঙ্কাকে সরিয়ে বাজাতে শুরু করল। শুভ বলল এই হচ্ছে ঢাকের আওয়াজ, সাবু খেয়ে ঢাক বাজানো যায়। শুভর কথা গায়ে মাখেনা বঙ্কা। বেলাবৌদি উশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, কর্তা কই?
সে তো আমার থেকে আপনার ভাল জানার কথা। উশ্রী হেসে বলল।
বেলাবৌদি সম্পাদিকা হলেও উমানাথকে সবদিক সামলাতে হয়। বেলাবৌদি কালকের পুজো নিয়ে চিন্তিত, একশো আটটা পদ্ম দরকার। সোমলতা আসতে পারমিতার মনে পড়ল রতির কথা। কোথায় উধাও হল কে জানে। ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে উল্টোপাল্টা ভাবতে পারে। রতির সঙ্গে সোমলতার কি সত্যিই কিছু ছিল? দেবযানী আণ্টির গা-ঘেষে দাঁড়িয়ে রোজি। উল্টো দিকে শুভ দাঁড়িয়ে, কদিন পরেই তো বিয়ে। তবু কেমন দেখছে যেন আশ মেটেনা। আরতি শেষ হতে সুদীপ ধুনুচি নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচতে শুরু করে। তনিমার সঙ্গে কেটে যাবার পর সুদীপকে এখন সঞ্জনার সঙ্গে দেখা যায়। তনিমার নিরুদ্দেশ রহস্যময় রয়ে গেল। কেউ বলছে ফেল করে পালিয়েছে আবার কারো ধারণা কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। রাত বাড়তে থাকে, উমানাথকে দেখে বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করল, পেয়েছো?
এইমাত্র জগন্নাথ ঘাট থেকে পদ্ম নিয়ে ফিরলাম। কি অবস্থা হিমেশ জানে।
যাক বাবা শান্তি। বেলাবৌদি বলল।
রত্নাকরের মনে শান্তি নেই। খুশীদি বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে, বেরিয়ে খোজ খবর করবে তার উপায় নেই। সেই সকালে লাঞ্চ করে বেরিয়েছে, এতরাত হল কোথায় যেতে পারে? হঠাৎ একটা কথা মনে হতে চমকে উঠল। আম্মাজী কিছু করেনি তো? শুনেছে এরা বাণ-ফান মারতে পারে। কান্না পেয়ে যায়।
জানকি বলল, সাহেব আপনি বেকার বেকার চিন্তা করছেন, ম্যাডম ঐরকম। টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে নেন।
রত্নাকরের ইচ্ছে হল ঠাষ করে এক চড় কষিয়ে দেয়। টেবিলে দুটো প্লেট সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে চোখ ছাপিয়ে জল চলে আসে। খুশীদিকে বহাল তবিয়তে আবার দেখতে পাবে তো? আম্মাজী অলৌকিক ক্ষমতার অধীকারী, কিইনা করতে পারে?
বাইরে জীপের আওয়াজ হতে সজাগ হয়। খুশবন্তর বিধ্বস্ত চেহারা ঢূকে রতিকে দেখে বলল, তুই খেয়ে নে। রাতে আমি খাবোনা। খুশবন্ত নিজের ঘরে ঢুকে গেল।
রত্নাকরের যেন ধড়ে প্রান এল, কোন কথা বলার সাহস হয়না। টেবিলে বসে কিছু খেল কিছু খেলনা। খুশীদির কি হয়েছে না জানা অবধি শান্তি পাচ্ছেনা।
সিকদারবাবু থানাতেই মালের বোতল নিয়ে বসে আছে। আজ নাইট ডিউটী। কাল সোসাইটিতে নেমন্তন্ন। মিথিলার দিকে অনেক দিনের নজর, আম্মাজীকে বলে যদি ব্যবস্থা হয় মাগীটাকে জম্মের শোধ চুদবে। যখন গাড় দুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় প্যাণ্টের ভেতর বাড়াটাও দুলতে থাকে তালে তালে। আনন্দকে না পেয়ে আম্মাজী তার উপর খচে আছে। এসপি মাগীটা বিদায় হলে ঐ বোকাচোদাকে খুজে বের করতে অসুবিধে হবেনা। এর আগে অনেকে ভেগেছে কিন্তু এই ছেলেটার বেলায় আম্মাজী কেন এত মরীয়া হয়ে উঠল বুঝতে পারেনা। সাধু সন্তদের ব্যাপারই আলাদা। কখন কার উপর কৃপা হয় কে বলতে পারে। ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগায়।
ঘোষবাবু? প্লেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি বলুন।
আর দাদা বলবেন না হা-হা-হা।
দাত না কেলিয়ে কি হয়েছে বলবেন তো? সিকদার খিচিয়ে ওঠে।
মনে হচ্ছে মাল পেটে পড়েচে? হা-হা-হা।
এইবার ফোন রেখে দেবো।
না না অমন কম্মটি করবেন না তাহলে রসের কথা হতে বঞ্চিত হবেন।
মনে হচ্ছে রস একেবারে উথলে উঠছে?
চিঠি পাবার পর একবার যদি সুন্দরীর মুখটা দেখতেন হা-হা-হা।
কাউর ম্যাডাম?
মাদী না মদ্দা প্যাণ্টুল খুলে দেখতে ইচ্ছে হয়। হা-হা-হা।
সিকদার ফোন রেখে দিল। চোখের সামনে খুশবন্ত কাউরের মুখটা ভেসে ঊঠল। অত্যন্ত সৎ অফিসার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘ চাকরি জীবনে অভিজ্ঞতা তো কম হলনা। একটাই দোষ ভদ্রমহিলা কল্পনার জগতে বাস করছেন। নিত্যানন্দ ক্যালাচ্ছে অথচ এই নিত্যানন্দকে যখন অন্যায়ভাবে কুল্পিতে বদলি করেছিল এই মিস কাউরই সেটা রদ করেছিলেন বলেই কলকাতায় বসে দাত ক্যালাতে পারছে। আম্মাজী মহিয়ষী মহিলা ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন সিকদারবাবুর তার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই কিন্তু সেখানে ইলাজের নামে যা হয় তাকি খুব ভাল কাজ? মিস কাউর তাহলে বদলি হয়ে গেলেন?
আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন, কিভাবে বাড়া বেরিয়ে আবার গুদের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। কদিন ধরে একটা অন্য চিন্তা মাথায় এসেছিল কিন্তু তার আগেই সব ওলোট পালোট হয়ে গেল। চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। খুশবন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কাদছে কিনা দেখে বোঝা যায় না। দূর থেকে মাইকে গান ভেসে আসছে।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 02-06-2019, 12:20 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)