Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#42
[৪৯]

খাবার টেবিলে বসে একটু আগে বলা রতির কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে খুশবন্ত। দেবাঞ্জন আভিজাত্যের বেড়া ডিঙোতে পারেনি এর উল্টোটাও হতে পারত। সুচী অন্তরাল ছিন্ন করে বেরোতে পারেনি কিম্বা মানুষের অনেক ইচ্ছে আমরণ সুপ্তই থেকে যায় বাস্তবের মাটিতে অঙ্কুরিত হয়না। “রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে”। মনকে উদাস করে দেয় কথাটা। রত্নাকর আড়চোখে খুশীদিকে দেখে আনমনাভাবে যখন হাত ভাজ করে মুখে খাবার তুলছে হাতের গুলি ফুলে উঠছে ছেলেদের মত। চোখাচুখি হতে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, রতি তোর রাতে রুটি খেতে অসুবিধে হয়?
কিছু একটা খেতে পেলেই হল, আমার ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করল, খুশীদি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছো, জরুরী ফোনও তো আসতে পারে। বিয়েতে যাইনি উমাদাও ফোন করতে পারে।
খেয়ে ওঠ, জরুরী ফোন দেখাচ্ছি।
খাওয়া সেরে রত্নাকর ঘরে ঢুকে বিছানা ঠিক করে শোবার উদ্যোগ করছে, খুশবন্ত ঢূকে ওর হাতে মোবাইল দিয়ে বলল, কথা বল।
রত্নাকর মোবাইল কানে দিয়ে হ্যালো বলতে ওপার হতে মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এল, সোম হিয়ার?
হ্যা, আপ?
এ্যাড্রিয়ান, ভেরি হরনি প্লীজ টু-মরো।
কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখল খুশীদি তার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে, লজ্জা পেয়ে রত্নাকর ফোন ফিরিয়ে দিল। খুশবন্ত বলল, শুয়ে পড়। তোকে একটা অন্য সিম দেবো। তুই উমানাথকে ফোন করে নতুন নম্বর জানিয়ে দিবি। গুড নাইট।
রিলিফ সোসাইটি থমথম করছে। মনিটরে চোখ রেখে আম্মাজী ওরফে আন্না পিল্লাই বসে দেখছেন মিথিলা ইলাজ করছে। ফোন বাজতে ধরে বললেন, আমার বাচ্চা।
আম্মাজী কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি কিন্তু সুইচ অফ।
আপনার জন্য দুইচ অন করে রাখবে? রাবিশ।
ডেরাতে নেই, নজরদারি চলছে। নিত্যানন্দ ঘোষ বলল।
একটা মানুষ হাবিস হয়ে গেল? খবর না থাকলে ফোন করবেন না। বিরক্ত আম্মাজী ফোন কেটে দিলেন। ল্যাণ্ড লাইন বেজে উঠল, বলছি....শুনুন মিসেস আগরবাল, ওভাবে হয়না কে ইলাজ করবে সোসাইটি ঠিক করবে....আনন্দ বিজি আছে...ফোনে নয় অফিসে এসে কথা বলবেন...গুড নাইট।
আম্মাজী "ল্যাসিবিয়াস আউতর" বলে গজগজ করতে করতে খাস কামরায় ফিরে মনিটরে চোখ রাখলেন। মিথিলা খাটে চিত হয়ে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। দুই উরুর ফাকে মুখ গুজে লোকটা চুষছে। দেখতে দেখতে আম্মাজীর বাচ্চার কথা মনে পড়ল। যখন চুষতো জরায়ুতে শুরশুর করত। অমৃত রসের জন্য কি করতো। এখন মনে হচ্ছে ওকে এখানে ঘর দিয়ে রাখলে আজ এমন হতনা। একটা ছেলে সোসাইটির নীচে ঘুরঘুর করছিল সিকদার বলল, তাকে এ্যারেস্ট করেছে। ছেলেটি . বলেই সন্দেহ হয়েছিল। পুজোর মুখে আরো সতর্ক হতে হবে।
সকাল হতে ঠেলা গাড়ীতে আরেক ঠেলা বাঁশ এল। প্যাণ্ডাল বাধা শুরু হয়ে গেছে। এবারে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে মেয়েরা। বেলাবৌদি সম্পাদক হয়েছে। শুভ একটা বেসরকারী ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে। হুগলীতে ব্যাঙ্ক যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যায়। বেসরকারী ব্যাঙ্ক বলে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত দেবযানী আণ্টি বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। পুজোর ঠিক পরেই নভেম্বরে বিয়ে ঠীক। বিয়ে ঠিক হবার পর রোজির সঙ্গে ফোনে যা একটু কথা হয় কিন্তু চাক্ষুষ দেখা হয়না। রতিদের ফ্লাট সম্পুর্ণ হয়নি তারই মধ্যে দোতলার একটা ফ্লাট তাগাদা দিয়ে বাসযোগ্য করে দিবাকর সপরিবারে সত্যনারায়ন পুজো করে ঢূকে পড়েছে। আল্পনাবৌদিও মেয়েদের সঙ্গে চাঁদা তুলতে বের হয়। একরকম নিরুদ্দেশ হলেও এখনো মাঝে মাঝে ঠাকুর-পোকে নিয়ে আলোচনা হয়, তখন অস্বস্তি বোধ করে আল্পনাবৌদি। মনীষা একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, ওর দাদা খোজখবর নিয়েছে কিনা? কোথায় খোজ নেবে, দাদার সঙ্গে কোনোদিন যোগাযোগ রাখতো? তা ছাড়া তার নিজের সংসার আছে, কোনদিক দেখবে বলুন? ঠাকুর-পোর আক্কেল দেখুন, আরে দাদা কি তোর শত্রূ?
নণ্টূকে কলেজ বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে গেল উশ্রী। বিয়ের পর এই দায়িত্ব নিজে যেচে নিয়েছে। উশ্রীর ইচ্ছে চাকরি করার, উমানাথ আপত্তি করেনি। কোনো কলেজে যদি চাকরি হয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খুশবন্ত কাউর খবর পেয়েছে তার একজন খবরি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছিচকে পকেট্মার এলাকার খবরাখবর দিত। সোসাইটির উপর নজর রাখতে বলেছিল। কদিন পর মহালয়া, তার আগেই সন্দীপন প্রকাশিত হবে। পুজো সংখ্যায় রতির উপন্যাস থাকবে আগেই জানিয়েছিল বাদলবাবু। বিজ্ঞাপন যোগাড় করে দিয়েছে খুশবন্তকাউর। রতি নিয়মিত লিখছে, খুশবন্ত বাস্কেটে ফেলে দেওয়া বাতিল কাগজগুলো কুড়িয়ে পড়ে রতি জানেনা। একদিন একটা লেখায় নজর আটকে যায়। "স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছিল তখন এক জলপরী টেনে তুলে তাকে নব জীবন দেয়।" জলপরী কে, কার কথা বলছে তার কথা কি? সময় পেলে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবে রেখেছে। গুরু নানকের ছবিতে প্রণাম করে বেরিয়ে গেল খুশবন্ত কাউর।
রত্নাকর ঘরে বসে লিখছে। জানকি মাসী ঢুকে জিজ্ঞেস করল, সাহেব চা দেবো?
খুশীদির সঙ্গে একটু আগে চা খেয়েছে, তাহলে এখনই আবার চায়ের কথা বলছে কেন? মনে হয় মাসী তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। রতি লেখা থেকে মুখ তুলে হেসে বলল, দাও। জানকি চা নিয়ে এসে টেবিলে রেখে মেঝেতে বসে পড়ল।
রত্নাকর চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল, মাসী কিছু বলবে?
জানকি ইতস্তত করে আঁচলের গিট খুলে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, একটু পড়ে দেবেন?
রত্নাকর দেখল ইংরেজিতে লেখা একটা চিঠি। অনেক ভুল থাকলেও বুঝতে অসুবিধে হয়না। নীচে স্বাক্ষর সুভদ্রা। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, সুভদ্রা কে?
আমার মেয়ে।
তোমার মেয়ে কতদুর লেখাপড়া করেছে?
বেশি না, এটা জামাই লিখে দিয়েছে। জানকি বলল।
ছোটো কয়েক লাইনের চিঠি, রত্নাকর পড়ে বলল, মাসী ভাল খবর। তোমার মেয়ে মা হতে চলেছে, তোমাকে পুজোয় যেতে লিখেছে, সবাই ভাল আছে।
জানকি চুপ করে কোন ভাবনায় ডুবে যায়। রত্নাকর ভাবে মাসীর কি মন খারাপ হয়ে গেল? তুমি খুশি হওনি?
খুশি হবনা কেন, ম্যাডমরে বলি ছুটি নিতে হবে, যাতায়াতের খরচ পুজোয় তো খালি হাতে যাওয়া যায়না। আপনি বসেন আমি আসিছি।
জানকি মাসী চলে যাবার পর রত্নাকর লিখতে বসে কিন্তু লেখা এগোয় না। মনটা পুরানো দিনে ঘোরাফেরা করে। কত মুখ মনে পড়ে, পাড়ায় এখন পুজোর ব্যস্ততা। কল্পনায় দেখতে পায় দল বেধে চাদা তুলতে বেরোচ্ছে সবাই। চ্যারিটিকে কেন্দ্র করে পাড়া আরো সংগঠিত। কেউ কি তার কথা ভাবছে? নাকি আর পাচটা ঘটনার মত হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। বিয়ের পর উমাদা কি আগের মত সময় দেয়? ফ্লাট অনেকটা হয়েছিল দেখে এসেছে এখন কি অবস্থা কে জানে। সরদার পাড়ায় সে থাকেনা বাবুয়া এতদিনে নিশ্চয় জেনে গেছে। দাদাও জানবে, খোজাখুজি করছেনা তো? দাদা বরাবর এমন ছিল না, এখন রাতারাতি কেমন বদলে গেছে। খুশীদির সঙ্গে দেখা না হলে এতদিনে কোন অন্ধকারে তলিয়ে যেত ভেবে শিউরে ওঠে। নতুন জীবনের আস্বাদ পেয়েছে কিন্তু ভয় হয় কতদিন স্থায়ী হবে? এবারের শারদীয়ায় তার লেখা বেরোবে, পারমিতা বা সোমলতার হাতে পড়তেও পারে। বেলাবৌদির ম্যাগাজিন কেনার অভ্যাস আছে, তার নাম দেখে ভাববে একী সেই রত্নাকর? ম্লান হাসি ফোটে মুখে। খুশীদির আসার সময় হয়ে এসেছে, এখন আবার জানকি কোথায় গেল?
মনে হল জানকি এল। একটা প্লেটে দুটো রসগোল্লা সাজিয়ে জানকি এসে বলল, সাহেব মিষ্টিমুখ করেন।
এসব আনতে গেলে কেন?
এতবড় একটা খপর দেলেন। জানকির শরীর থেকে যেন উচ্ছ্বাস চুইয়ে পড়ছে।

সোসাইটীতে উপাসনা মন্দিরে সাজসজ্জা সম্পুর্ন। প্রদীপ জ্বলছে চন্দন ধুপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একে একে লোকজন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন খবর আম্মাজীর মনকে আলোড়িত করলেও বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়না। শান্ত সমাহিত স্মিত হাসিতে ভরা মুখ। চারতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে কয়েকজন মহিলা বসে আছে। এক একজনের এক একরকম উপসর্গ ইলাজ করাতে এসেছে। অফিসের দায়িত্বে রাগিনী। কিছু কিছু খবর তার কানে এসেছে। রঞ্জাও খোজ করছিল আনন্দ এখানে আসে কিনা? ব্রহ্মানন্দ মেঘানন্দ সিদ্ধানন্দ এসে গেছে, সবাই এরা পুরানো। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এদের আনা হয়েছে, এখানে তাদের নতুন নামকরণ করা হয়। সবার নামের শেষে আনন্দ, আনন্দ বিতরন করাই এদের কাজ। বয়স সবারই চল্লিশের নীচে তার বেশি হলে চলে যেতে হয়।
ব্রহ্মানন্দকে তিন নম্বরে এবং সিদ্ধানন্দকে পাঁচ নম্বরে যেতে বলল রাগিনী। ব্রহ্মানন্দ পেশেণ্টের ইতিহাস দেখে বিরূপ। বয়স পঞ্চাশের উপর, কিন্তু এ ব্যাপারে তার মতামতের গুরুত্ব নেই। আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন। তিন নম্বরের ভ্যাজাইনা বেরিয়ে এসে ঝুলছে। খাটে ভর দিয়ে পাছা উচু করে রয়েছে। ব্রহ্মানন্দ নিজের লিঙ্গটা নাড়িয়ে মহিলার মুখের কাছে ধরতে ঘুরে বসে চুষতে শুরু করল। ব্রহ্মানন্দ মহিলার চুলের মুঠি চেপে ধরে নিজের দিকে চাপ দিচ্ছে। ডান হাত দিয়ে গালে ঠাষ ঠাষ করে চাপড় দিচ্ছে। আম্মাজী পাঁচের দিকে দেখলেন সিদ্ধানন্দ মেয়েটার পা তুলে ধরেছে মেয়েটি কেদরে গেছে। সিদ্ধানন্দ ওই অবস্থায় ঢূকিয়ে ঠাপাতে শুরু করেছে। আম্মাজী চমকে ওঠেন, কারা ঢুকল ঘরে? এরা তো সোসাইটির কেউ বলে মনে হচ্ছেনা। সোসাইটিতে পুলিশ ঢুকেছে ছড়িয়ে পড়ে খবর। আম্মাজী মুহূর্তে কোথায় অদৃশ্য হলেন, কারো জানার উপায় নেই।
জানকির এই একটিমাত্র সন্তান, ভরত মিস্ত্রী মেয়ের বিয়ে দিয়ে গেছেন। কত বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে হয়েছে? সুভদ্রাকে দেখেনি রত্নাকর। জানতে ইচ্ছে হয় যখন বিয়ে হয় তার মনে কি বিয়ের বাসনা জেগেছিল নাকি বাপ-মায়ের বাধ্য সন্তান হিসেবে তাদের ইচ্ছে মেনে নিয়ে সম্মত হয়েছে? একটা মেয়ের মনে বিয়ের ইচ্ছে জন্মে কত বছর বয়সে? খুশীদিকে দেখে তো মনে হয়না তার মধ্যে বিয়ের জন্য ব্যাকুলতা আছে। সারাক্ষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিন্তা। সামাজিক অবস্থান ভেদে বিয়ের ইচ্ছের বয়সের তারতম্য হয় কি? রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, মাসী তোমার মেয়ের বয়স কত হবে?
এককুড়ি পার হয়ে গেছে কবে।
এত অল্প বয়সে।
রত্নাকরের উদবেগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল মাসী। হাসি থামিয়ে বলল, আপনে বুঝবেন না। বাচ্চা বিয়োনেতে যে কি সুখ মেয়ে হলে বুঝতেন।
নতুন কথা শেখা হল। সন্তান জন্ম দিয়ে মেয়েরা সুখ পায়। মনে হয় ম্যাডম এল। জানকি চলে গেল।
খুশবন্ত ঢুকল বেশ খুশি খুশি ভাব। হাতে একটা বই। ঘরে ঢুকে হাতের বইটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে চেঞ্জ করল। জানকি এক গেলাস সরবৎ নিয়ে উপস্থিত। খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, সাহেব কি করছে?
লিখতেছে। জানকি বানিয়ে বলল।
ওকে পাঠিয়ে দাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি তুলে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছল। রত্নাকর দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, খুশীদি ডাকছো? খাটের উপর সন্দীপন পত্রিকাটা পড়ে থাকতে দেখে বলল, ছেপেছে?
ছাপবেনা মানে? ছাপা হয়েছে ছাপ্পা মারা হয়েছে। খুশবন্তের গলায় আত্মবিশ্বাস।
রত্নাকর বুঝতে পারেনা খুশীদির কথা। মোবাইল বাজতে টেবিল থেকে ফোন তুলে কানে লাগায়। খুশবন্তের চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে....এর মধ্যে আদালতে জামীন হয়ে গেল? .....ঠিক আছে ঠিক আছে সিসিটিভির ফুটেজ আছে অসুবিধে হবেনা. ..নানা আপনি কি করবেন...রাখছি?
খুসীদির মুখ থমথমে রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
খুশীদি মুখে হাসি টেনে যা বলল, আজ দুপুরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সোসাইটী থেকে কজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। আম্মাজীকে খুজে পায়নি। একটু আগে সবাই জামীনে মুক্ত হয়ে গেল।
রত্নাকর শুনে কোন কথা বলল না। খুশীদি বলল, তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে।
আমার মন খারাপ হবার কি আছে? তুমি যা ভাল বুঝেছো করেছো।
রতির কথায় খুশবন্ত বিরক্ত হয়। গলা চড়িয়ে বলল, জানকি খানা লাগাও।
হাসিখুশি খুশীদিকে গম্ভীর দেখতে ভাল লাগেনা। রত্নাকরের খারাপ লাগে। খুশীদি যা করেছে জীবনেও সে ঋণ শোধ করতে পারবেনা। খেতে বসে জিজ্ঞেস করল, খুশীদি তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
তুই কে? তোর উপর আমি কেন রাগ করব?
কেউ না? তাহলে তুমি আমার জন্য এত করছো কেন?
বাজে কথা থাক। খাওয়া হলে লেখাটা পড়। কোনো বদল করতে হলে করবি। বাদলদা বলল, ঘোষ এ্যাণ্ড বোস পাব্লিশার্স লেখাটা বই হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। ওরা আসবে টাকা পয়সার কথা যা বলার বলে ঠিক করে নিবি।
আমি কি বলব, তুমি যা বলার বলবে।
তোর ব্যাপার তুই যা ভাল বুঝবি বলবি।
রত্নাকর মনে মনে হাসে, খুশিদি তার কথা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এখন না মেজাজ শান্ত হোক পরে কথা বলা যাবে। খুশবন্ত খেয়ে উঠে পড়ল। ঘরে এসে ভাবছে ঘোষবাবুর কাছে সিসি টিভির ফুটেজ রয়েছে নষ্ট করে ফেললে তার হাতে কিছু থাকবেনা। আম্মাজী বেশ প্রভাবশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার কাছে খবর ছিল আম্মাজী সোসাইটিতে আছে কিন্তু কোথায় গা-ঢাকা দিল? তন্ন তন্ন খুজেও পাওয়া গেলনা। কোনো চোর কুঠরি আছে হয়তো। হতে পারে মহিলা হয়তো মুখোস পিছনে আছে আসল মুখ।
খুশীদি আসব? খুশবন্ত তাকিয়ে দেখল দরজায় রতি দাঁড়িয়ে।
রত্নাকর ঘরে ঢুকে বলল, একটু বসবো?
তোকে বললাম না, অদল বদল কিছু করার থাকলে কর। কয়েকদিনের মধ্যেই ওরা আসবে।
আমি একটা অন্য কথা বলতে এসেছি।
খুশবন্ত লুঙ্গি হাটূ পর্যন্ত তুলে খাটে আসন করে বসে বলল, বল কি বলবি?
গদার মত খুশীদির পা গুলো। রত্নাকর খাটে মুখোমুখি বসে শুরু করল, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে সবই হয়তো আমাদের মনোপুত নয়। না ঘটলেই বুঝি ভাল হতো।
তুই কি আজকের ব্যাপারে বলছিস?
বিশ্বাস করো খুশীদি তোমার পরাজয় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
জয়-পরাজয়ের কথা আসছে কেন?
সোসাইটিতে কি হয় তুমি কি ভাবছো কেউ জানেনা?
আমি মনে করি সোসাইটি একটা প্রস্টিট্যুট।
আমি কি অন্যকথা বলেছি?
তোর খুব দরদ দেখছি। রেইড করেছি সামাজিক স্বার্থে।
তাতে বন্ধ হয়ে যাবে তুমি মনে করো?
বন্ধ হল কি থাকল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, অন্যায় বুঝেছি করেছি।
তোমার স্বার্থ আছে।
কি বললি? আমার স্বার্থ আছে? সেদিন তোকে রাগাবার জন্য বলেছিলাম, আমি সোসাইটিতে যাবো।
আজ তুমিই রেগে যাচ্ছো।
রতি এবার কিন্তু ঠাষ করে একটা চড় মারব।
রত্নাকর হেসে বলল, তা তুমি পারো। আমাকে শেষ করতে দাও। সোসাইটির শেকড় অনেক গভীরে তা তুমি আমার থেকে ভাল জানো। দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করে কিছুই করতে পারবে না তাও তুমি জানো না তা নয়। তাহলে তুমি কেন করছো? নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য আকাঙ্খ্যা তোমার মনে। কড়া অফিসার সৎ অফিসার শুনতে তোমার ভাল লাগে। গীতায় আছে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন, দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ ধন্নজয়। বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ। ।
মতলব?
কাম্য কর্ম নিষ্কাম কর্ম অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট। অতএব কামনাশূণ্য হয়ে সমত্ব বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ কর। ফলাকাঙ্খী হয়ে যারা কাজ করে তারা অতি হীন।
খুশবন্ত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে রত্নাকরের দিকে। এক সময়ে হেসে ফেলে বলল, রতি কি বই বললি, বইটা আমাকে দিস তো, পড়বো।
খুশীদি এইজন্য তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে। জানার ইচ্ছে জীবনের লক্ষণ। যে মুহূর্তে এই ইচ্ছে লুপ্ত হয় মানুষ তখন বেচে থেকেও মৃত।
খুশবন্তের মনের সমস্ত গ্লানি যেন স্বেদবিন্দুর মত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। রত্নাকর খাট থেকে ম্যাগাজিনটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
খুশবন্ত অন্য মনস্কভাবে চিন্তা করে। ভাল কাজ করার অন্তরালে কি রয়েছে তার আত্মপ্রতিষ্ঠার উদগ্র আকাঙ্খ্যা? আপন মনে হাসল। যেখানে মেয়েদেরই প্রশ্রয় আছে সেখানে বেশ্যাবৃত্তি দূর করে সাধ্য কার। রতিকে যারা ফোন করছে তাদের সঙ্গে বেশ্যাদের ফ্যারাক কতটুকু? সব অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে বউ সব, কেউ তো তাদের বাধ্য করেনি। কল খুলে রেখে জল সেচে কি লাভ? আগে বন্ধ করতে হবে কল। ধরা পড়ার পরমুহূর্তে কিভাবে জামীন পেয়ে গেল?

[৫০]

বেলা পড়ে এসেছে একবার বেরোতে হবে। খুশবন্ত মনে মনে ভাবে রতি বছর চার-পাঁচ ছোট হবে বয়সে কিন্তু কথা বলে বিজ্ঞের মত। ওর সঙ্গে কথা বলে মনটা বেশ হালকা মনে হয়। রতির কথাটা মিথ্যে নয়, সত্যি হয়তো খ্যাতির জন্য একটু বেশি লালায়িত হয়ে পড়েছিল। আমিই ভাল আর সবাই খারাপ এই চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়। গুরু নানকের হাসি-হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করে বিশাল এই পৃথিবী, তুলনায় মানুষ অতি ক্ষুদ্রজীব। রতিকে এখন বাইরে বেরোতে দেওয়া যাবে না।
জানকি চা নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে, সাহেব কি করছে?
বই পড়তেছে। ডাকবো?
কি ভেবে বলল, না থাক। ফিরে এসে টিফিন করব।
অবস্থাটা সামলে নিতে হবে, এরা অত্যন্ত প্রভাবশালী সহজে ওকে ছেড়ে দেবে মনে হয়না। খুশবন্ত বেরিয়ে গেল। জানকি চা নিয়ে রত্নাকরের ঘরে যেতে জিজ্ঞেস করে, ম্যাডম বেরিয়ে গেল? কখন আসবে কিছু বলেছে?
বলল ফিরে এসে টিফিন করবে।
রত্নাকর বই থেকে মুখ তুলে হেসে বলল, তোমার ম্যাডম কেমন মানুষ?
মানুষ খারাপ না। তবে এক জায়গায় সুস্থির বসে থাকতে পারেনা। সবাই যদি আপনেরে যমের মত ভয় পায় আপনের ভাল লাগবে?
রত্নাকর অবাক হয়ে জানকিকে দেখে। লেখাপড়া জানেনা একজন সাধারন বিধবা কত সুন্দর একটা কথা বলল নিজেই জানেনা। রত্নাকর বলল, মাসী তুমি সুন্দর কথা বলো।
সুন্দর কথা বললি সে সুন্দর হয়না।
মানে?
সুন্দর মুখ সুন্দর কথা সব বাইরে ভিতরে যে কে ঘাপটি মেরে বসে আছে যতক্ষণ না বেরোচ্ছে বুঝবার উপায় নাই।
রত্নাকরের মনে হয় মাসী কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলল। রত্নাকর জানকিকে তাতিয়ে দেবার জন্য বলল, তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে।
জানকি উৎসাহিত হয়ে বলল, এইযে আমারে দেখে আপনের কেমন মনে হয়?
ভাল মানুষ।
আমিও প্রেত্থম তাই ভেবেছিলাম। জানকি হাসল।
জানকি কি যেন ভাবছে লক্ষ্য করে রত্নাকর। সম্ভবত মনের দ্বিধা কাটিয়ে বলল, কদিন পর মেয়ের কাছে যাবো, আবার দেখা হবে কিনা জানিনা।
দেখা হবেনা কেন?
সব কি আমার উপর নিবভর করে, জগন্নাথের ইচ্ছে। বুকের মধ্যে চাপা একটা কথা আজ পর্যন্ত কাউরে বলিনি। আপনেরে বলে ময়লাটা বের করে দিতে চাই।
রত্নাকর বইটা পাশে সরিয়ে রাখে। জানকি কিছু ইঙ্গিতে কিছু শব্দে তার কাহিনী বলতে শুরু করল। সুভদ্রার বাবা মারা যাবার পর চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল। সেই সময় একজন মানুষ দেবদুতের মত পাশে এসে দাড়িয়েছিল। মানুষটা জানকির মুখ চেনা। ভরত বেচে থাকতে কয়েকবার এসেছিল বাড়ির কল সারাবার জন্য। প্লাম্বার হিসেবে ভরতের বেশ খ্যাতি ছিল মহল্লায়। লোকটি পাশে বসে সান্ত্বনা দিয়েছে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।
অসহায় জানকির মনে হয়েছিল যার কেউ নেই তার ভগবান আছে। শ্রাদ্ধ মিটে গেলেও লোকটি আসতো, আলুটা মুলোটা দিয়ে যেত, জানকি রান্না করত লোকটা পাশে বসে গল্প করতো। জানকি তাকে দাদা বলত। একদিন রান্না করতে করতে দেখল হাটু মুড়ে এমনভাবে বসেছে লুঙ্গির ফাক দিয়ে ল্যাওড়া বেরিয়ে আছে। জানকির মনে হল দাদার হয়তো খেয়াল নেই। মেয়ে মানুষের মন নজর ঘুরে ফিরে ল্যাওড়ার দিকে পড়ে। আপনে বলেন সোমত্ত বয়স মাথার ঠিক থাকে? মজা করে হাতে জল নিয়ে ল্যাওড়ার উপর ছিটিয়ে দিলাম যাতে বুঝতে পেরে ঢেকে বসে। ফল হল উলটো দাদা বলল, এই অসভ্য। আমার আঁচল টেনে ল্যাওড়াটা মুছতে লাগল। আমি আঁচলটা টেনে নিলাম। কি ইচ্ছে হল আঁচল নাকের নীচে ধরতে ঝাজালো গন্ধে শরীর কেমন করে উঠল।
তারপর?
তারপর আবার কি? ভিতরের আসল মানুষটা বেইরে এসে আমারে ঠেষে ধরে ঐটূক জায়গা তারই মধ্যে।
তুমি চিৎকার করতে পারতে?
কি বোঝলেন? ভিতরের মানুষটা বেরিয়ে এসে চিৎকার করতে দিলে তো? তবে মিথ্যে বলব না ঐ দাদাই এই বাংলোয় কাজ ঠিক করে দিয়েছে।
জানকির কাহিনী ধীরে ধীরে রত্নাকরের মাথায় ঢোকে। সেই লোকটি এবং জানকি দুজনের ভিতরের মানুষ সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে এসেছিল। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, কবে যাবে?
অষ্টমী পার করে যাব ইচ্ছে আছে। এখন টীকিট পেলি হয়।
ম্যডম জানে?
আভাস দিয়েছি, টিকিট পেলি বলব। যাই টিফিন করিগে ম্যাডমের আসার সময় হয়ে গেল। কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে সাবধান করে গেল, আপনে এসব ম্যাডমরে বুলবেন না।
রত্নাকরের মাথায় নানা ভাবনা খেলা করে। নতুন লেখা শুরু করতে পারছেনা, খুশীদি বলে গেছে উপন্যাসটা পড়ে দেখতে। প্রয়োজনে যদি কিছু অদল বদল করতে হয়। জানকির কথা অনুযায়ী মেয়েরা একটা সময় অবধি বাধা দিতে পারে তারপর নিজেই ইনভল্ভড হয়ে বাধা দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
কেসের দিন পড়েছে ৯ তারিখ, ঐদিন মহাসপ্তমী। তারপর পুজোর ছুটি পড়ে যাবে আদালত বন্ধ। নিত্যানন্দ ঘোষ লোকটা মিনমিনে শয়তান। সিকদারই বা শয়তান কম কি? একটা অফিসারও তার সঙ্গে নেই। যারা অসৎ ঘুষখোর তারাই সমাজে সংখ্যা গরিষ্ঠ, এইকথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় খুশবন্ত কাউর। বাসায় ফেরার পথে নজরে পড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে ফূর্তিতে মেতে আছে। পবিত্র শিশু মনকে সমাজের কলুষ স্পর্শ করতে পারেনা। জীপ থামিয়ে একটা মণ্ডপে গিয়ে একটি বাচাকে কোলে নিয়ে আদর করে। পুলিশী ধড়াচূড়া দেখে শিশুটী অস্বস্তি বোধ করে। অবোধ শিশু বুঝতে পারেনা উর্দির আড়ালে প্রচ্ছন্ন এক মাতৃহৃদয়ের আকুলতা। উধম শিং পাশে দাঁড়িয়ে স্যারের কাজ দেখে মুচকি হাসছে। খুশবন্ত কাউর দূরে দাঁড়ানো বেলুনঅলাকে ডেকে মণ্ডপের সব বাচ্চাকে একটি করে বেলুন দিতে বলল। বেলুনের দাম মিটিয়ে জীপে উঠে বসল। জীপ স্টার্ট করতে মনে হল মোবাইল বাজছে। রাস্তার পাশে জীপ দাড় করিয়ে মোবাইল কানে দিয়ে বলল, হ্যালো?
রত্নাকর? আমি স্যাণ্ডি বলছি।
মহিলা সম্ভবত তার গলার আওয়াজ বুঝতে পারেনি। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে, এই নম্বর আপনি কোথায় পেলেন?
এটা রত্নাকরের নম্বর নয়? স্যরি।
রত্নাকরের নম্বর কিন্তু আপনি কোথায় পেলেন?
ওপারের মহিলা সম্ভবত ঘাবড়ে গিয়ে থাকবেন বললেন, না মানে উনি আমাকে একসময় পড়াতেন।
আপনি নম্বরটা কোথায় পেলেন বলেন নি।
সন্দীপন পত্রিকা দপ্তর থেকে আমাকে এই নম্বর দিয়েছে। তাহলে হয়তো ভুল হয়েছে।
না ভুল হয়নি। শুনুন আপনি ওর সঙ্গে কথা বলতে হলে এই নম্বরে আধ ঘণ্টা পরে ফোন করুন।
আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়, প্রথমে ভেবেছিল রতির কোনো ক্লায়েণ্ট। পরে বুঝতে পারে এটা তার নম্বর পত্রিকা দপ্তরে দিয়েছিল, ক্লায়েণ্ট জানবে কি করে? রতি মেয়েটিকে একসময় পড়াত ভেবে মনে মনে হাসে খুশবন্ত। অনেক ঘাটের জল খেতে খেতে রতি শেষে এই ডোবায় এসে পড়েছিল।
ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। কলকাতা এখন হাওয়ায় ভাসছে, দুর্গা পুজো বাঙালীদের বড় উৎসব। একসময় সেও দরজায় দরজায় ঘুরে চাদা তুলেছে। বিসর্জনের মিছিলে সামিল হয়ে নেচেছে। মেয়েরা তখন নাচতো না সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতো। বাপুর জিদে পাড়া ছাড়তে হল। কিন্তু সেও জিদ করে আইপিএস পরীক্ষায় বসেছে। নিয়োগ পত্র পেয়ে যখন মুসৌরীতে ট্রেনিং নিচ্ছে খবর পেল বাপুজী গুজর গয়া। রাতের ট্রেনে পাঞ্জাব, শেষ কৃত্য সেরে আবার মুসৌরী। অতীতের কথা ভেবে মনটা উদাস হয়। আম্মী বিয়ের কথা বলেছিল খুশবন্ত বলেছিল চাকরিতে থিতু হয়ে ভাববে। সেসব দিন কোথায় হারিয়ে গেছে। রতির সঙ্গে আবার দেখা হবে কখনো ভাবেনি। বাংলোর সামনে গাড়ী থামিয়ে নেমে পড়ল খুশবন্ত কাউর।
আপনি পুজোয় দেশে যান না?
ছট পুজাতে যাই। উধম সিং বলল।
আমার সঙ্গে থেকে আপনার খাটনি বেড়ে গেছে।
না স্যার এখন দেখছি আপনি জলদি বাসায় আসছেন। উধম শিং হেসে বলল।
উধম সিং-র কথায় খুশবন্তের খেয়াল হয় ঠিকই ইদানীং একটু তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে আসছে।
ঘরে ঢূকে চেঞ্জ করল। সোসাইটীর কেস নিয়ে এখন আর মাথা ব্যথা নেই। রতি ঠিক বলেছে সে একলা কি করতে পারে? অঞ্চলের লোকেরা একটা ম্যাস পিটিশন করতে পারতো। কই গাড় খুলে রাখলে দুসরা কই গাড় মারলে তাকে দোষ দিয়ে লাভ কি? শালা খিস্তি কি আপনি আপনি আসে?
জানকি জিজ্ঞেস করে, ম্যাডম টিফিন দিই?
সাহেব কই?
সাহেব সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে।
ওকে এখানে পাঠিয়ে টিফিন দিয়ে যাও।
রত্নাকর ম্যাগাজিন নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, তোর পুজো দেখতে ইচ্ছে করেনা?
তুমি তো বেরোতে মানা করেছো।
ঠিক আছে অষ্টমীর দিন তোকে নিয়ে তোর যতীনদাস পাড়ায় যাবো।
সত্যিই? খুশীদি তোমাকে দেখলে সবাই অবাক হয়ে যাবে। রত্নাকর উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল।
জানকি টিফিন দিয়ে গেল। দুজনে টিফিন খেতে লাগল। রত্নাকর বলল, কতদিন আগে লিখেছি এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে যেন সব নতুন।
কোনো চেঞ্জ করার থাকলে।
কোনো চেঞ্জ করার দরকার নেই। চেঞ্জ করতে গেলে সবটাই বদলাতে ইচ্ছে হবে। তার চেয়ে নতুন উপন্যাস শুরু করব ভাবছি।
নব জীবন কেমন নাম হয়?
ঐ রকম কিছু ভাবছি। রত্নাকরের খটকা লাগে খুশীদি নব জীবন কেন বলল? জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তুমি নব জীবন কেন বললে?
মোবাইল বেজে উঠতে স্পীকার অন করে রতিকে দিয়ে বলল, কথা বল।
হ্যালো কে বলছেন?
রত্নাকর সোম?
হ্যা বলুন।
আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি স্যাণ্ডী।
রত্নাকর তাকিয়ে দেখল খুশিদি মুচকি হাসছে।
ওহ তুমি? স্যাণ্ডি তুমি এখন কি করো?
সেণ্ট জেভিয়ার্সে ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি। তোমার লেখাটা আমি বার কয়েক পড়েছি।
কেমন লাগলো?
বলতে পারব না কিন্তু পুরানো কথাগুলো ভীষণভাবে মনে পড়ছিল। আচ্ছা তুমি কি বানিয়ে বানিয়ে লিখেছো?
এই পৃথিবীর মাটি নিয়ে তাকে মূর্তিরূপ দিয়েছি।
দারুণ বলেছো। আমারও তাই মনে হয়েছে বাস্তবের বাগানে ফুটে থাকা ফুল নিয়ে তুমি মালা গেথেছো।
তুমিও দারুণ বলেছো।
হি-হি-হি তোমার কাছে শেখা।
তোমার মা আণ্টি সব ভালো আছেন?
সবাই ভাল আছে। সোম তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
তোমার যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারো।
স্যাণ্ডিকে তুমি ভুলে যাওনি তো?
তোমার কাছে যেটুকু পেয়েছি সযত্নে রেখে দিয়েছি।
আচ্ছা এমন কোন কথা কি আছে যা আমাকে বলতে চেয়েছ কিন্তু বলতে পারনি?
অবশ্যই আছে। সব সময় সব কথা কি বলে ওঠা যায়?
কি কথা? নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো।
সেসব হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে।
ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া যায়না। রত্নাকর বলল, কি হল স্যাণ্ডি?
কিছুনা। পরে তোমায় ফোন করতে পারি?
খুব আনন্দ পাবো।
রত্নাকর ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, খুশীদি তুমি স্পীকার অন করেছিলে কেন? তুমি ভেবেছো সেইসবতাই না?
খুশবন্ত বলল, না। এটা আমার নম্বর, সেইসব এখানে আসবে না। একটু আগে এই মেয়েটী ফোন করেছিল, কেন যেন কৌতুহল হল। তুই রাগ করেছিস?
খুশীদি আমি চেষ্টা করেছি তবু তোমার উপর রাগ করতে পারিনা কেন বলতো?
চেষ্টা করে যা একদিন না একদিন পারবি। খুশবন্ত হাসতে হাসতে বলল।
খুশবন্ত গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল, স্যাণ্ডিকে তুই ভালবাসিস?
খুশীদি তুমি নাসব সময় ইয়ার্কি ভাল লাগেনা।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 02-06-2019, 12:00 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)