10-03-2023, 03:28 PM
ত্রিসপ্ততিতম অধ্যায়
দেখতে দেখতে একটা মাস হয়ে গেল পাঞ্চালি গোপাল নগরে এসেছে।ছুটি শেষ এবার তাকে ফিরতে হবে।বাপি এখন অনেকটা ভালো।মামণি কিছুতেই বাপিকে নীচে নামতে দেবে না।পাঞ্চালী পুরোপুরী ডাক্তার নয় কেউ বুঝতে চায়না।বাধ্য হয়ে রোগী দেখতে হয়েছে বাপির প্যাডে প্রেস্ক্রিপশন করেছে। একদিন সিধু এসেছিল, একসময় সহপাঠি ছিল তাকে আপনা-আপনি করছিল।বেশ মজা লাগে।ওর কথা জিজ্ঞেস করেছিল সিধুও ওর ব্যাপারে কিছু বলতে পারলো না। ফিজ দিতে চাইছিল পাঞ্চালী নেয়নি। পিসিমণির আচরণ অদ্ভুত লাগে।ফোন করলে বাপির খবর নেয় কিন্তু সিকিউরিটি না কে তার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়।সৌমিত্র প্রায়ই ফোন করে,স্পষ্ট করে কিছু বলে না পাঞ্চালীও উচ্চবাচ্য করেনা।ওর জন্য খুব খারাপ লাগে।
পিসিমণিকে মাঝে মাঝে ফোন করলেও একটা অভিমান দানা বেধেছিল মনে।দাদার এত খবর নিচ্ছে অথচ দাদাকে একবার এসে দেখে যাবার সময় হয় না।কলকাতা হতে গোপালনগর ঘণ্টা দেড়েকের পথ। মামণির কাছে শোনার পর পিসিমণির প্রতি সেই অভিমাণ বাষ্পের মতো উবে যায়।
বছর পচিশ ত্রিশ আগের কথা।দাদুকে স্পষ্ট মনে নেই,খুবই ছোটো তখন। দাদু নাকি বলেছিল চৌকাঠের বাইরে পা রাখলে আর এপাশে আসা যাবে না। নিষেধ সত্বেও কলকাতায় চলে গেছিল মোমো।দাদুর মুখের উপর কথা বলে এমন কেউ ছিল না।তারপর একদিন যখন বিয়ের খবর পৌছালো দাদু ঘোষণা করলেন,শোনো দীবা বৌমা তুমিও শোনো, আমি দীপাকে ত্যাজ্য করলাম। মনে রাখবে আমার কথার অন্যথা হলে আমার যেন নরকে ঠাই হয়।আগেকার দিনের মানুষগুলো একটু গোয়ার টাইপ হয়।পাঞ্চালী এত কথা জানতো না।জানার পর ভারাক্রান্ত হয় মন।
পিয়ালী মিত্র স্বামীর মাথা কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলেন,এখন কেমন লাগছে?
ড মিত্র হাসলেন বললেন,ভালো।পলি কোথায়?
নীচে চেম্বারে বসেছে।
কবে যাবে কিছু বলেছে?
বলছিল তো আজই যাবে।
মেয়েটাকে নিয়েই চিন্তা।ড মিত্রের গলায় উদবেগ।
রোগী দেখা শেষ হতে দরজা বন্ধ করে উপরে উঠে এল পাঞ্চালী।বাপির ঘরে উকি দিয়ে দেখল চোখ বুজে শুয়ে আছেন।ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে বাপির মাথার কাছে বসতে ড মিত্র চোখ খুলে তাকালেন।
রোগী দেখা হল?
কি করব কেউ শোনে না।অঞ্চলে কাছাকাছি ডাক্তারও নেই...। লাজুক গলায় বলল পাঞ্চালী।
তোমার মা বলছিল তুমি আজ চলে যাবে।
হ্যা আমার ছুটি তো শেষ।তোমার এখন তো কোনো সমস্যা নেই?
বয়স হয়েছে শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হয় এই যা।আচ্ছা মা কলকাতা থেকে যে ছেলেটি এসেছিল কি যেন নাম?
সৌমিত্র সাহা আমার সঙ্গে পাস করেছে।
ওকে নিয়ে কিছু ভাবছো?
মানে?পাঞ্চালী অবাক।
কলকাতা থেকে একেবারে গোপালনগরে চলে এল--।
শোনো বাপি ও কেন এল আর কিছু ভাবছে কিনা আমি বলতে পারব না।আমার এখন একটাই চিন্তা যেটা ধরেছি সেটা শেষ করা।
তুমি পাস করেছো আর এই হাউসস্টাফ গিরি কয়েকমাস গেলেই শেষ হবে।আমার শরীরের যা অবস্থা তুমি ডাক্তার তোমাকে তো বুঝিয়ে বলতে হবে না।
বাপি তুমি অত চিন্তা কোরো না।এটা শেষ হলেই ভাবা যাবে।তোমার স্নান হয়েছে?
পিয়ালী মিত্র ভাত নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বল্লেন,হ্যা হয়েছে এবার তুমি স্নান করে নেও।
একটা টুলের উপর ভাতের থালা নামিয়ে স্বামীকে ধরে তুলে বসিয়ে দিলেন।ড মিত্র বললেন,যা মা স্নান করে খেয়ে নে তোকে তো আবার বেরোতে হবে।
ডা মিত্র এখন তেল মশলা এড়িয়ে সব সেদ্ধ খান।পিয়ালি মিত্র ভাত মেখে দিলেন।ইদানীং ডা মিত্রের হাত কাপে অথচ এক সময় এই হাত দিয়ে কত অপারেশন করেছেন।
পলির সঙ্গে কথা বললাম।ওই ছেলেটার সঙ্গে তেমন কিছু না।ড মিত্র বললেন।
আমি তো জানি,আমার মেয়েকে আমি চিনি না।আর কিছু বলল?
বলল পড়া শেষ করে ভাববে।
মেয়ে যেভাবে এখানে প্রাকটিশ শুরু করেছে ভেবে দুশ্চিন্তা হয়।তার ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে হোক কলকাতায়।তার মত অবস্থা যেন না হয়।গ্রামের বাড়ীর জন্য ছেলেটা দেশে ফিরল না।কলকাতায় বাড়ী হলে খোকা হয়তো ফিরে আসতো। একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করলেন।
পিয়ালী দত্ত কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে থাকতেন।বাবা মা তিন ভাই এক বোন--ছয় জনের সংসার।পিয়ালী ছিলেন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।মধ্যবিত্ত পরিবার পিয়ালির পড়াশুনা গ্রাজুয়েশন।বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী।দাদা বিএ পাস করে এদিক-ওদিক চাকরির চেষ্টা করছে।বাকী দুই ভাইয়ের একজন কলেজে একজন কলেজে পড়ে। সেদিনটার কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠে মন।বাবা অন্যান্য দিনের মত অফিস গেছেন।
ফিরলেন ফুলে সজ্জিত ম্যাটাডোর ভ্যানে।অফিসে হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল চিকিৎসার সুযোগটুকু নাদিয়ে চলে গেলেন।অফিস কলিগদের সহায়তায় বাবার জায়গায় দাদা চাকরি পেল সেই দুর্দিনে এই এক বড় সান্ত্বনা।দাদা বড়ভাইয়ের কর্তব্য করে গেছে।ভাইদের পড়িয়েছে বোনের বিয়ে দিয়েছে।অফিসের এক কলিগের মাধ্যমে ডাক্তার পাত্রের খবর এল।গোপালনগর শুনে একটা দ্বিধারভাব ছিল।মেয়ে পছন্দ হলে তাদের কোনো দাবীদাওয়া নেই।একদিকে পাত্র অজ পাড়াগায়ে থাকে অন্যদিকে পাত্র পক্ষের কোনো দাবীদাওয়া নেই এবং বিয়ের পর পাত্র বিদেশ যাবে এই দোটানার মধ্যে বিশেষ করে দাদার কথা ভেবে পিয়ালী দত্ত সম্মতি জানিয়েছিল।বিয়ের দশ-বারো দিন পর ও বিদেশ চলে গেল।পেটে তখন খোকা।খোকার জন্ম হয়েছে কলকাতায় মামার বাড়ীতে।কেবলি আশঙ্কা পলির যেন এই অবস্থা না হয়।
দীপশিখা কলেজে বেরিয়ে গেলেন,বাসায় মনু একা।ওর আজ আলিপুরে গিয়ে সিএসসির ফর্ম আনতে যাবার কথা।চাকরি পেলে কি মনুর মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে?মনু যদি চলে যায় খারাপ লাগলেও দীপশিখা কিছু মনে করবেন না। এক তরুণ সম্ভাবনাময় জীবনকে দীপশিখা স্বার্থপরের মতো নষ্ট হতে দিতে চান না।তার সময় ঘনিয়ে এল মনুর সামনে দীর্ঘ পথ। শুক্লা মেটারনিটি লিভ নিয়েছে কলেজে আসছে না।কবে শুনবেন শুক্লা মা হয়েছে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। কলেজে ঢুকে হাজিরা খাতায় সই করে ক্লাসে চলে গেলেন।একের পর এক ক্লাস করতে থাকেন।বেয়ারা এক সময় খবর দিল ক্লাস শেষ হলে প্রিসিপাল ম্যামের সঙ্গে দেখা করে যাবেন।
যখন ক্লাস থাকে না স্টাফ রুমে বসতে হয়।কানে আসে অন্যান্যদের আলোচনার টুকরো টুকরো শব্দ।সবাই উচ্চ শিক্ষিত অবাক লাগে এদের মুখে পরচর্চা শুনে।বসে শোনা ছাড়া উপায় নেই তাই বসতে হয়।প্রিন্সিপাল ম্যাম কেন ডাকলেন কে জানে।শুক্লা থাকলে একজন কথা বলার সঙ্গী থাকতো।মনু এতক্ষনে হয়তো ফিরে এসেছে।ছুটির পর প্রিসিপালের দরজায় গিয়ে বললেন,ম্যাম আপনি ডেকেছেন?
হ্যা আসুন,বসুন।
দীপশিখা বসতে উনি একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন।ইংরেজীতে লেখা Madam, did you know that your college sweetheart Deepshikha mam indulging in immoral life with a boy...এটুকু পড়েই দীপশিখার কান লাল হয়।চোখ তুলে তাকাতে দেখলেন প্রিসিপাল ম্যাম মুচকি হাসছেন।বললেন,দেখুন মিস মিত্র আমাদের সমাজে একা মেয়েদের জীবন যাপন বেশ কঠিণ এই ধরণের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।বিধবা বা ডিভোর্সি মেয়েরা যেন সস্তা তাদের নিয়ে যা খুশি তাই করা যায়।চিঠিটা এসেছে তাই আপনাকে দিলাম। ইচ্ছে হলে পুলিশে ইনফর্ম করতে পারেন আমি ব্যাপারটা ইগনোর করেছি।
আমি আসি ম্যাম।
একটু সাবধানে থাকবেন।
দীপশিখা চিঠীটা মুঠোয় চেপে বেরিয়ে এলেন।বুঝতে পারেন ফেউ লেগেছে।অবন্তীর কথা মনে পড়লো।মেয়েটাকে প্রথম থেকেই সুবিধের মনে হয়নি।এসেই মনুর ঘরে উকিঝুকি।বাস আসতে উঠে পড়লেন বাসে।দীপশিখার চোয়াল শক্ত হয় প্রয়োজনে প্রকাশ্যে মনুকে বৈধ স্বামী হিসেবে ঘোষণা করবেন।
সুখ বাসায় ফিরে জামা প্যাণ্ট খুলে বারমুডা পরল।চোখে মুখে জল দিয়ে বসার ঘরে বসে সিগারেট ধরিয়ে সিএসসি হতে আনা ফর্মটায় চোখ বোলাতে থাকে। আজ একটা বড় কাজ হয়েছে।শুনেছে কদিন পর রেজাল্ট বেরোবে।ফর্ম ফিল আপ করতে রেজাল্ট দরকার। পাস করে যাবে এ বিশ্বাস আছে।কলিং বেলের শব্দ হতে অবাক হয়।মোমো এত তাড়াতাড়ি ফিরে এল?যাক ভালই হয়েছে একটু চা হলে ভালো হয়।আবার বেল বাজে।মোমোর কাছে তো চাবি আছে। উঠে দরজা খুলতে গেল।
দরজা খুলে অবাক সামনে দাঁড়িয়ে অবন্তী।সুখ বলল,ম্যাডাম তো এত তাড়াতাড়ি ফেরেনা।
তাহলে ভিতরে বসে অপেক্ষা করি?
অবন্তীর চোখে দুষ্টু হাসি সুখ সতর্ক হয় বলে,আপনি ঘণ্টা খানেক পরে আসুন।উনি এসে একটু বিশ্রাম করবেন।
অবন্তীর মুখ কালো হয়,সুখ মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।আসার সময় দেখেছিল জানলায় দাঁড়িয়ে আছে।মনে হয় তাকে দেখেই এসেছে।লেখাপড়ায় ভাল মেয়েরাই দুষ্টু হয়।আগেও একদিন এরকম এসেছিল। অবন্তীর দোষ নেই ও জানে না সে ম্যারেড।সুখ সোফায় বসে প্রসপেক্টাসে চোখ বোলাতে থাকে।
কিছু সময় পর আবার বেল বাজে।ঘড়ি দেখল আধ ঘণ্টা হয়েছে ওকে বলেছে ঘণ্টা খানেক পরে আসতে।মেয়েটাকে এক্টূ কড়া করে বলা দরকার।উঠে দরজা খুলে দেখল অবন্তী নয় মোমো দাঁড়িয়ে চোখে মুখে চিন্তার আকিবুকি।
কিছু হয়েছে?
কি হবে?তুমি গেছিলে?
হ্যা একটু আগে ফিরলাম। ফর্ম প্রস্পেক্টাস সব নিয়ে এসেছি।
এত দেরী হল?
তোমাকে জিজ্ঞেস না করে আজ একটা কাজ করেছি।
দীপশিখা ঘুরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন,উর্মিলা ঘোষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
ঝাঃ তুমি না।তোমার এই মেয়েলী স্বভাব গেল না।
আমি মেয়ে তো স্বভাব কেমন হবে?তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।
তোমাকে বলা হয়নি ইউজি আজ প্রায় নমাস আগে চাকরি ছেড়ে স্বামীর কাছে বিদেশ চলে গেছেন।
তাহলে কি করেছো আজ?
আমাদের স্যার ডিসি আমাকে থিসিস করাতে রাজী হয়েছেন।আজ নাম রেজিস্ট্রি করলাম।
দীপশিখা ঘরে গিয়ে পোশাক বদলায়।সুখ দরজায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করে মোমোকে কেমন চিন্তিত লাগছে।
ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন হুকটা খুলে দেও।
সুখ ভিতরে গিয়ে জামার পিছনে হুকটা খুলে দিল।ঘোড়া দেখলে খোড়া।এখন সব তাকে করতে হবে।বিয়ের আগে এসব কে করতো।তখন তো নিজে নিজেই সব করতে।অবন্তীর এসেছিল সে কথাটা বলে না।
দীপশিখা জামা পেটিকোট খুলে নিজেকে অনাবৃত করে বললেন,কাধটা একটু টিপে দেও।আমারও একসময় থিসিস করার খুব ইচ্ছে ছিল।
কাধ টিপতে টিপতে সুখ বলল,তোমার ছাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে।জামাটা পরে নেও।
ওকে আর পড়াবো না।অনেক পড়িয়েছি এবার বাড়ীতেই পড়ুক।তুমি বলো আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যা খুশি করতে পারি না?তাতে কার কি বলার আছে?
মোমোকে জড়িয়ে ধরে সুখ বলল,ঠিকই তো।কেন কেউ কিছু বলেছে সোনা?
কে বলবে?লোকে বলে দীপশিখা মিত্র কিম্বা মিস মিত্র কেউ আমাকে ম্যাম বলে?
সুখ বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে বলল, তোমার ছাত্রীরা তোমাকে তো ম্যাম বলবে না?
এভাবে চেপে ধরে রাখলে মনে হয় সারাদিনের ক্লান্তি কেউ যেন ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিচ্ছে।দীপশিখা বললেন,ছাড়ো এবার চা করতে হবে তো।ওয়ারড্রোব হতে জামাটা দাও।
অবন্তী আসার দিন শাড়ি পরেন আজ হাটু অবধি ঝুল ম্যাক্সি গায়ে দীপশিখা রান্নাঘরে চলে গেলেন। দীপশিখাম্যাম কথাটায় তার সন্দেহ হয়েছে।মানুষের ভালো করতে নেই।চা করে এক কাপ মনুকে দিয়ে গেলেন।
মোমো বোসো ম্যাসাজ করে দিই।
এখন বসলে হবে না।রাতে যত ইচ্ছে কোরো।
সুখ চায়ের কাপ নিয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে বসল।দীপশিখা চা খেতে খেতে ভাত চাপিয়ে দিলেন।ফোন বাজতে দেখলেন পলি।কানে লাগিয়ে বললেন,বল।
আমি হস্টেলে ফিরে এসেছি।
দাদা কেমন আছে?
মোটামুটি এমনি কিছু না বয়স হলে যা হয়।এখন দরকার নার্সিং একা মামণির পক্ষে--।
একা কেন আর সব কি করছে?
কাজের লোক দিয়ে সব হয়?আচ্ছা মোমো তোমার সেই সিকিউরিটি গার্ডের পরীক্ষা কেমন হল?
দীপশিখা বুঝতে পারেন ফোন করার উদ্দেশ্য কি?মৃদু হেসে বললেন,বলছে তো ভালই হয়েছে?
ছেলেটা আগে কোথায় থাকতো?
কি ব্যাপার বলতো ওকে নিয়ে তোর এত চিন্তা কেন?
ওকে নিয়ে চিন্তা করতে বয়ে গেছে।আসলে আমার সঙ্গে একটা ছেলে পড়তো লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল তোমাকে তো আগে বলেছি।জানো মোমো কোথায় যে চলে গেল--খুব খারাপ লাগে---এত ব্রিলিয়াণ্ট কেরিয়ার।
তোর কি ওকে খুব পছন্দ ছিল?
ধ্যেৎ তোমার ঐ এককথা।ভালো ছেলেকে সকলেই পছন্দ করে।
তোকেও কি ওর পছন্দ?
জানি না যাও।একটু থেমে বলল, ছেলেটা একটু ইডিয়ট টাইপ।আমার প্রতি সর্বক্ষন নজর ছিল।
বলছিস ইডিয়ট টাইপ আবার তোকে পছন্দ করত...আমি তো তোর কথা কিছু বুঝতে পারছি না।
পাঞ্চালীর মনে পড়ল একবার সিধুকে কি করেছিল।বলল,তোমার বুঝে দরকার নেই।কোথায় থাকতো বলো।
অত কিছু আমি জানি না।
জানো না, না বলবে না।থাক বলার দরকার নেই রাখছি।ফোন কেটে দিল।
দীপশিখা হাসলেন।এত যখন আগ্রহ এতকাল পরেও মনে রেখেছে ঠোটে ঠোট চেপে বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করেন।মনুর আগের জীবন সম্পর্কে বাস্তবিকই কিছু জানেন না।যেভাবে ওর সঙ্গে যোগাযোগ তাতে জানার আগ্রহও বোধ করেনি।
রাত হয়েছে খাবার টেবিলে খেতে বসেছেন।মনু চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে দীপশিখার মনে প্রিসিপালের দেওয়া চিঠির লেখাগুলো ঘুরঘুর করছে, কেউ কোনো কথা বলে না।অম্বিকার আজ পড়তে আসার কথা কিন্তু আসেনি।দীপশিখার কপালে ভাজ পড়ে।
চাকরি পেলে কি করবে কিছু ভেবেছো?এক সময় দীপশিখা জিজ্ঞেস করেন।
দাঁড়াও আগে পাই।
আজ না হোক কাল একদিন তো পাবে।
পেলে চাকরি করবো।তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি সেই আক্ষেপ মেটাবো।
আমার কোনো আক্ষেপ নেই তুমি যা দিয়েছো তাতেই আমি খুশী। চাকরি করে থিসিস করতে অসুবিধে হবে না?
একটু বেশী পরিশ্রম করতে হবে।সবটা স্যারের উপর নির্ভর করছে।
দেখতে দেখতে একটা মাস হয়ে গেল পাঞ্চালি গোপাল নগরে এসেছে।ছুটি শেষ এবার তাকে ফিরতে হবে।বাপি এখন অনেকটা ভালো।মামণি কিছুতেই বাপিকে নীচে নামতে দেবে না।পাঞ্চালী পুরোপুরী ডাক্তার নয় কেউ বুঝতে চায়না।বাধ্য হয়ে রোগী দেখতে হয়েছে বাপির প্যাডে প্রেস্ক্রিপশন করেছে। একদিন সিধু এসেছিল, একসময় সহপাঠি ছিল তাকে আপনা-আপনি করছিল।বেশ মজা লাগে।ওর কথা জিজ্ঞেস করেছিল সিধুও ওর ব্যাপারে কিছু বলতে পারলো না। ফিজ দিতে চাইছিল পাঞ্চালী নেয়নি। পিসিমণির আচরণ অদ্ভুত লাগে।ফোন করলে বাপির খবর নেয় কিন্তু সিকিউরিটি না কে তার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়।সৌমিত্র প্রায়ই ফোন করে,স্পষ্ট করে কিছু বলে না পাঞ্চালীও উচ্চবাচ্য করেনা।ওর জন্য খুব খারাপ লাগে।
পিসিমণিকে মাঝে মাঝে ফোন করলেও একটা অভিমান দানা বেধেছিল মনে।দাদার এত খবর নিচ্ছে অথচ দাদাকে একবার এসে দেখে যাবার সময় হয় না।কলকাতা হতে গোপালনগর ঘণ্টা দেড়েকের পথ। মামণির কাছে শোনার পর পিসিমণির প্রতি সেই অভিমাণ বাষ্পের মতো উবে যায়।
বছর পচিশ ত্রিশ আগের কথা।দাদুকে স্পষ্ট মনে নেই,খুবই ছোটো তখন। দাদু নাকি বলেছিল চৌকাঠের বাইরে পা রাখলে আর এপাশে আসা যাবে না। নিষেধ সত্বেও কলকাতায় চলে গেছিল মোমো।দাদুর মুখের উপর কথা বলে এমন কেউ ছিল না।তারপর একদিন যখন বিয়ের খবর পৌছালো দাদু ঘোষণা করলেন,শোনো দীবা বৌমা তুমিও শোনো, আমি দীপাকে ত্যাজ্য করলাম। মনে রাখবে আমার কথার অন্যথা হলে আমার যেন নরকে ঠাই হয়।আগেকার দিনের মানুষগুলো একটু গোয়ার টাইপ হয়।পাঞ্চালী এত কথা জানতো না।জানার পর ভারাক্রান্ত হয় মন।
পিয়ালী মিত্র স্বামীর মাথা কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলেন,এখন কেমন লাগছে?
ড মিত্র হাসলেন বললেন,ভালো।পলি কোথায়?
নীচে চেম্বারে বসেছে।
কবে যাবে কিছু বলেছে?
বলছিল তো আজই যাবে।
মেয়েটাকে নিয়েই চিন্তা।ড মিত্রের গলায় উদবেগ।
রোগী দেখা শেষ হতে দরজা বন্ধ করে উপরে উঠে এল পাঞ্চালী।বাপির ঘরে উকি দিয়ে দেখল চোখ বুজে শুয়ে আছেন।ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে বাপির মাথার কাছে বসতে ড মিত্র চোখ খুলে তাকালেন।
রোগী দেখা হল?
কি করব কেউ শোনে না।অঞ্চলে কাছাকাছি ডাক্তারও নেই...। লাজুক গলায় বলল পাঞ্চালী।
তোমার মা বলছিল তুমি আজ চলে যাবে।
হ্যা আমার ছুটি তো শেষ।তোমার এখন তো কোনো সমস্যা নেই?
বয়স হয়েছে শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হয় এই যা।আচ্ছা মা কলকাতা থেকে যে ছেলেটি এসেছিল কি যেন নাম?
সৌমিত্র সাহা আমার সঙ্গে পাস করেছে।
ওকে নিয়ে কিছু ভাবছো?
মানে?পাঞ্চালী অবাক।
কলকাতা থেকে একেবারে গোপালনগরে চলে এল--।
শোনো বাপি ও কেন এল আর কিছু ভাবছে কিনা আমি বলতে পারব না।আমার এখন একটাই চিন্তা যেটা ধরেছি সেটা শেষ করা।
তুমি পাস করেছো আর এই হাউসস্টাফ গিরি কয়েকমাস গেলেই শেষ হবে।আমার শরীরের যা অবস্থা তুমি ডাক্তার তোমাকে তো বুঝিয়ে বলতে হবে না।
বাপি তুমি অত চিন্তা কোরো না।এটা শেষ হলেই ভাবা যাবে।তোমার স্নান হয়েছে?
পিয়ালী মিত্র ভাত নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বল্লেন,হ্যা হয়েছে এবার তুমি স্নান করে নেও।
একটা টুলের উপর ভাতের থালা নামিয়ে স্বামীকে ধরে তুলে বসিয়ে দিলেন।ড মিত্র বললেন,যা মা স্নান করে খেয়ে নে তোকে তো আবার বেরোতে হবে।
ডা মিত্র এখন তেল মশলা এড়িয়ে সব সেদ্ধ খান।পিয়ালি মিত্র ভাত মেখে দিলেন।ইদানীং ডা মিত্রের হাত কাপে অথচ এক সময় এই হাত দিয়ে কত অপারেশন করেছেন।
পলির সঙ্গে কথা বললাম।ওই ছেলেটার সঙ্গে তেমন কিছু না।ড মিত্র বললেন।
আমি তো জানি,আমার মেয়েকে আমি চিনি না।আর কিছু বলল?
বলল পড়া শেষ করে ভাববে।
মেয়ে যেভাবে এখানে প্রাকটিশ শুরু করেছে ভেবে দুশ্চিন্তা হয়।তার ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে হোক কলকাতায়।তার মত অবস্থা যেন না হয়।গ্রামের বাড়ীর জন্য ছেলেটা দেশে ফিরল না।কলকাতায় বাড়ী হলে খোকা হয়তো ফিরে আসতো। একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করলেন।
পিয়ালী দত্ত কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে থাকতেন।বাবা মা তিন ভাই এক বোন--ছয় জনের সংসার।পিয়ালী ছিলেন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।মধ্যবিত্ত পরিবার পিয়ালির পড়াশুনা গ্রাজুয়েশন।বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী।দাদা বিএ পাস করে এদিক-ওদিক চাকরির চেষ্টা করছে।বাকী দুই ভাইয়ের একজন কলেজে একজন কলেজে পড়ে। সেদিনটার কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠে মন।বাবা অন্যান্য দিনের মত অফিস গেছেন।
ফিরলেন ফুলে সজ্জিত ম্যাটাডোর ভ্যানে।অফিসে হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল চিকিৎসার সুযোগটুকু নাদিয়ে চলে গেলেন।অফিস কলিগদের সহায়তায় বাবার জায়গায় দাদা চাকরি পেল সেই দুর্দিনে এই এক বড় সান্ত্বনা।দাদা বড়ভাইয়ের কর্তব্য করে গেছে।ভাইদের পড়িয়েছে বোনের বিয়ে দিয়েছে।অফিসের এক কলিগের মাধ্যমে ডাক্তার পাত্রের খবর এল।গোপালনগর শুনে একটা দ্বিধারভাব ছিল।মেয়ে পছন্দ হলে তাদের কোনো দাবীদাওয়া নেই।একদিকে পাত্র অজ পাড়াগায়ে থাকে অন্যদিকে পাত্র পক্ষের কোনো দাবীদাওয়া নেই এবং বিয়ের পর পাত্র বিদেশ যাবে এই দোটানার মধ্যে বিশেষ করে দাদার কথা ভেবে পিয়ালী দত্ত সম্মতি জানিয়েছিল।বিয়ের দশ-বারো দিন পর ও বিদেশ চলে গেল।পেটে তখন খোকা।খোকার জন্ম হয়েছে কলকাতায় মামার বাড়ীতে।কেবলি আশঙ্কা পলির যেন এই অবস্থা না হয়।
দীপশিখা কলেজে বেরিয়ে গেলেন,বাসায় মনু একা।ওর আজ আলিপুরে গিয়ে সিএসসির ফর্ম আনতে যাবার কথা।চাকরি পেলে কি মনুর মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে?মনু যদি চলে যায় খারাপ লাগলেও দীপশিখা কিছু মনে করবেন না। এক তরুণ সম্ভাবনাময় জীবনকে দীপশিখা স্বার্থপরের মতো নষ্ট হতে দিতে চান না।তার সময় ঘনিয়ে এল মনুর সামনে দীর্ঘ পথ। শুক্লা মেটারনিটি লিভ নিয়েছে কলেজে আসছে না।কবে শুনবেন শুক্লা মা হয়েছে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। কলেজে ঢুকে হাজিরা খাতায় সই করে ক্লাসে চলে গেলেন।একের পর এক ক্লাস করতে থাকেন।বেয়ারা এক সময় খবর দিল ক্লাস শেষ হলে প্রিসিপাল ম্যামের সঙ্গে দেখা করে যাবেন।
যখন ক্লাস থাকে না স্টাফ রুমে বসতে হয়।কানে আসে অন্যান্যদের আলোচনার টুকরো টুকরো শব্দ।সবাই উচ্চ শিক্ষিত অবাক লাগে এদের মুখে পরচর্চা শুনে।বসে শোনা ছাড়া উপায় নেই তাই বসতে হয়।প্রিন্সিপাল ম্যাম কেন ডাকলেন কে জানে।শুক্লা থাকলে একজন কথা বলার সঙ্গী থাকতো।মনু এতক্ষনে হয়তো ফিরে এসেছে।ছুটির পর প্রিসিপালের দরজায় গিয়ে বললেন,ম্যাম আপনি ডেকেছেন?
হ্যা আসুন,বসুন।
দীপশিখা বসতে উনি একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন।ইংরেজীতে লেখা Madam, did you know that your college sweetheart Deepshikha mam indulging in immoral life with a boy...এটুকু পড়েই দীপশিখার কান লাল হয়।চোখ তুলে তাকাতে দেখলেন প্রিসিপাল ম্যাম মুচকি হাসছেন।বললেন,দেখুন মিস মিত্র আমাদের সমাজে একা মেয়েদের জীবন যাপন বেশ কঠিণ এই ধরণের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।বিধবা বা ডিভোর্সি মেয়েরা যেন সস্তা তাদের নিয়ে যা খুশি তাই করা যায়।চিঠিটা এসেছে তাই আপনাকে দিলাম। ইচ্ছে হলে পুলিশে ইনফর্ম করতে পারেন আমি ব্যাপারটা ইগনোর করেছি।
আমি আসি ম্যাম।
একটু সাবধানে থাকবেন।
দীপশিখা চিঠীটা মুঠোয় চেপে বেরিয়ে এলেন।বুঝতে পারেন ফেউ লেগেছে।অবন্তীর কথা মনে পড়লো।মেয়েটাকে প্রথম থেকেই সুবিধের মনে হয়নি।এসেই মনুর ঘরে উকিঝুকি।বাস আসতে উঠে পড়লেন বাসে।দীপশিখার চোয়াল শক্ত হয় প্রয়োজনে প্রকাশ্যে মনুকে বৈধ স্বামী হিসেবে ঘোষণা করবেন।
সুখ বাসায় ফিরে জামা প্যাণ্ট খুলে বারমুডা পরল।চোখে মুখে জল দিয়ে বসার ঘরে বসে সিগারেট ধরিয়ে সিএসসি হতে আনা ফর্মটায় চোখ বোলাতে থাকে। আজ একটা বড় কাজ হয়েছে।শুনেছে কদিন পর রেজাল্ট বেরোবে।ফর্ম ফিল আপ করতে রেজাল্ট দরকার। পাস করে যাবে এ বিশ্বাস আছে।কলিং বেলের শব্দ হতে অবাক হয়।মোমো এত তাড়াতাড়ি ফিরে এল?যাক ভালই হয়েছে একটু চা হলে ভালো হয়।আবার বেল বাজে।মোমোর কাছে তো চাবি আছে। উঠে দরজা খুলতে গেল।
দরজা খুলে অবাক সামনে দাঁড়িয়ে অবন্তী।সুখ বলল,ম্যাডাম তো এত তাড়াতাড়ি ফেরেনা।
তাহলে ভিতরে বসে অপেক্ষা করি?
অবন্তীর চোখে দুষ্টু হাসি সুখ সতর্ক হয় বলে,আপনি ঘণ্টা খানেক পরে আসুন।উনি এসে একটু বিশ্রাম করবেন।
অবন্তীর মুখ কালো হয়,সুখ মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।আসার সময় দেখেছিল জানলায় দাঁড়িয়ে আছে।মনে হয় তাকে দেখেই এসেছে।লেখাপড়ায় ভাল মেয়েরাই দুষ্টু হয়।আগেও একদিন এরকম এসেছিল। অবন্তীর দোষ নেই ও জানে না সে ম্যারেড।সুখ সোফায় বসে প্রসপেক্টাসে চোখ বোলাতে থাকে।
কিছু সময় পর আবার বেল বাজে।ঘড়ি দেখল আধ ঘণ্টা হয়েছে ওকে বলেছে ঘণ্টা খানেক পরে আসতে।মেয়েটাকে এক্টূ কড়া করে বলা দরকার।উঠে দরজা খুলে দেখল অবন্তী নয় মোমো দাঁড়িয়ে চোখে মুখে চিন্তার আকিবুকি।
কিছু হয়েছে?
কি হবে?তুমি গেছিলে?
হ্যা একটু আগে ফিরলাম। ফর্ম প্রস্পেক্টাস সব নিয়ে এসেছি।
এত দেরী হল?
তোমাকে জিজ্ঞেস না করে আজ একটা কাজ করেছি।
দীপশিখা ঘুরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন,উর্মিলা ঘোষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
ঝাঃ তুমি না।তোমার এই মেয়েলী স্বভাব গেল না।
আমি মেয়ে তো স্বভাব কেমন হবে?তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।
তোমাকে বলা হয়নি ইউজি আজ প্রায় নমাস আগে চাকরি ছেড়ে স্বামীর কাছে বিদেশ চলে গেছেন।
তাহলে কি করেছো আজ?
আমাদের স্যার ডিসি আমাকে থিসিস করাতে রাজী হয়েছেন।আজ নাম রেজিস্ট্রি করলাম।
দীপশিখা ঘরে গিয়ে পোশাক বদলায়।সুখ দরজায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করে মোমোকে কেমন চিন্তিত লাগছে।
ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন হুকটা খুলে দেও।
সুখ ভিতরে গিয়ে জামার পিছনে হুকটা খুলে দিল।ঘোড়া দেখলে খোড়া।এখন সব তাকে করতে হবে।বিয়ের আগে এসব কে করতো।তখন তো নিজে নিজেই সব করতে।অবন্তীর এসেছিল সে কথাটা বলে না।
দীপশিখা জামা পেটিকোট খুলে নিজেকে অনাবৃত করে বললেন,কাধটা একটু টিপে দেও।আমারও একসময় থিসিস করার খুব ইচ্ছে ছিল।
কাধ টিপতে টিপতে সুখ বলল,তোমার ছাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে।জামাটা পরে নেও।
ওকে আর পড়াবো না।অনেক পড়িয়েছি এবার বাড়ীতেই পড়ুক।তুমি বলো আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যা খুশি করতে পারি না?তাতে কার কি বলার আছে?
মোমোকে জড়িয়ে ধরে সুখ বলল,ঠিকই তো।কেন কেউ কিছু বলেছে সোনা?
কে বলবে?লোকে বলে দীপশিখা মিত্র কিম্বা মিস মিত্র কেউ আমাকে ম্যাম বলে?
সুখ বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে বলল, তোমার ছাত্রীরা তোমাকে তো ম্যাম বলবে না?
এভাবে চেপে ধরে রাখলে মনে হয় সারাদিনের ক্লান্তি কেউ যেন ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিচ্ছে।দীপশিখা বললেন,ছাড়ো এবার চা করতে হবে তো।ওয়ারড্রোব হতে জামাটা দাও।
অবন্তী আসার দিন শাড়ি পরেন আজ হাটু অবধি ঝুল ম্যাক্সি গায়ে দীপশিখা রান্নাঘরে চলে গেলেন। দীপশিখাম্যাম কথাটায় তার সন্দেহ হয়েছে।মানুষের ভালো করতে নেই।চা করে এক কাপ মনুকে দিয়ে গেলেন।
মোমো বোসো ম্যাসাজ করে দিই।
এখন বসলে হবে না।রাতে যত ইচ্ছে কোরো।
সুখ চায়ের কাপ নিয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে বসল।দীপশিখা চা খেতে খেতে ভাত চাপিয়ে দিলেন।ফোন বাজতে দেখলেন পলি।কানে লাগিয়ে বললেন,বল।
আমি হস্টেলে ফিরে এসেছি।
দাদা কেমন আছে?
মোটামুটি এমনি কিছু না বয়স হলে যা হয়।এখন দরকার নার্সিং একা মামণির পক্ষে--।
একা কেন আর সব কি করছে?
কাজের লোক দিয়ে সব হয়?আচ্ছা মোমো তোমার সেই সিকিউরিটি গার্ডের পরীক্ষা কেমন হল?
দীপশিখা বুঝতে পারেন ফোন করার উদ্দেশ্য কি?মৃদু হেসে বললেন,বলছে তো ভালই হয়েছে?
ছেলেটা আগে কোথায় থাকতো?
কি ব্যাপার বলতো ওকে নিয়ে তোর এত চিন্তা কেন?
ওকে নিয়ে চিন্তা করতে বয়ে গেছে।আসলে আমার সঙ্গে একটা ছেলে পড়তো লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল তোমাকে তো আগে বলেছি।জানো মোমো কোথায় যে চলে গেল--খুব খারাপ লাগে---এত ব্রিলিয়াণ্ট কেরিয়ার।
তোর কি ওকে খুব পছন্দ ছিল?
ধ্যেৎ তোমার ঐ এককথা।ভালো ছেলেকে সকলেই পছন্দ করে।
তোকেও কি ওর পছন্দ?
জানি না যাও।একটু থেমে বলল, ছেলেটা একটু ইডিয়ট টাইপ।আমার প্রতি সর্বক্ষন নজর ছিল।
বলছিস ইডিয়ট টাইপ আবার তোকে পছন্দ করত...আমি তো তোর কথা কিছু বুঝতে পারছি না।
পাঞ্চালীর মনে পড়ল একবার সিধুকে কি করেছিল।বলল,তোমার বুঝে দরকার নেই।কোথায় থাকতো বলো।
অত কিছু আমি জানি না।
জানো না, না বলবে না।থাক বলার দরকার নেই রাখছি।ফোন কেটে দিল।
দীপশিখা হাসলেন।এত যখন আগ্রহ এতকাল পরেও মনে রেখেছে ঠোটে ঠোট চেপে বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করেন।মনুর আগের জীবন সম্পর্কে বাস্তবিকই কিছু জানেন না।যেভাবে ওর সঙ্গে যোগাযোগ তাতে জানার আগ্রহও বোধ করেনি।
রাত হয়েছে খাবার টেবিলে খেতে বসেছেন।মনু চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে দীপশিখার মনে প্রিসিপালের দেওয়া চিঠির লেখাগুলো ঘুরঘুর করছে, কেউ কোনো কথা বলে না।অম্বিকার আজ পড়তে আসার কথা কিন্তু আসেনি।দীপশিখার কপালে ভাজ পড়ে।
চাকরি পেলে কি করবে কিছু ভেবেছো?এক সময় দীপশিখা জিজ্ঞেস করেন।
দাঁড়াও আগে পাই।
আজ না হোক কাল একদিন তো পাবে।
পেলে চাকরি করবো।তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি সেই আক্ষেপ মেটাবো।
আমার কোনো আক্ষেপ নেই তুমি যা দিয়েছো তাতেই আমি খুশী। চাকরি করে থিসিস করতে অসুবিধে হবে না?
একটু বেশী পরিশ্রম করতে হবে।সবটা স্যারের উপর নির্ভর করছে।