09-03-2023, 09:47 PM
দুপুরের খাওয়ার সময় দেখা হলো মতিনের চাচার সাথে , যার মেয়ের নাম নিলুফার । জীবনে এই প্রথম নিজেকে চোর চোর লাগছিলো । লোকটার বয়স বেশি না ৫০ ও হবে না মনে হয় । আমার সাথে হয়ত খুব বেশি হলে ১৫ বছরের তফাৎ । অথচ এই লোকের মেয়ে কে বিয়ে করার জন্য আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে । এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে?
নিলুফারের বাবার নাম নাইম শেখ , শক্ত পোক্ত শরীর । বেশ কালো দেখতে গোঁফ আছে , তাতে মনে হয় কলপ করা , কারন মানুষের গোঁফ এতো কালো হয় না । লোকটা আমাকে সুইয়ের মত দৃষ্টতে দেখছে । এমন দৃষ্টির সামনে খাওয়া যায় না । আমি খেতেও পারলাম না । যদিও নাইম শেখ বার বার আমাকে খাওয়ার জন্য জোড় করেছেন ।
“ আপনে করেন কি বাবাজী” খাওয়া শেষে পান খেতে খেতে প্রশ্ন করলেন নাইম শেখ , এই বাবাজী শব্দটা আমার একদম পছন্দ হলো না । উত্তরে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না , আমি তো কিছুই করি না । অবশ্য আমার হয়ে মতিন জবাবা দিলো ,
“চাচাজি ওর তো বিশাল সহায় সম্পত্তি , সেইগুলা দেখা শুনা করে”
চট করে একবার মতিনের দিকে চাইলাম , মতিন এর চোখে আবেদন , আমি যেন উল্টো পাল্টা কিছু না বলি । মতিন কে কি বলবো , আমার নিজের উপরেই আমি বিরক্ত । আমি যে কিছুই করি না ভাড়া তুলে খাই সেটা বলতে আমার বাধলো কেন আমি বুঝতে পারছি না । মনে একটা আশংকা এলো , আমি কি সাবকনশাস ভাবে বিয়ে করতে চাচ্ছি? যদি নাই চাইতাম , তাহলে তখন সফিকুল সাহেবের কাছে নিলুফারের কথা জানতে চাইলাম কেনো ? আমি ছোট বাচ্চা নই , চাইলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা ভ্যান নিয়ে বাস স্টেশন গিয়ে একটা বাস ধরে চলে যেতে পারি । অথবা চাইলেই নাইম শেখের কাছে নিজের সত্যি কথা বলে বিয়ে ভেস্তে দিতে পারি । কিন্তু কিছুই আমি করছি না । মতিনের দোষ দিয়ে বসে আছি ।
“ব্যাবসা বাণিজ্য কিছু করেন না?” নাইম শেখের কণ্ঠে একটা অদৃশ্য আশ্চর্য বোধক চিহ্ন আছে ,
“ সময় নাই চাচা জান , সব দেখা শুনা করতে করতে সময় শেষ , আর করবো কার জন্য , বাড়িতে তো কেউ নাই , বাবা মা মারা গেসে অনেক আগে , তিন বোন আছে সবার বিয়া হইয়া আলাদা আলাদা “
এবারো মতিনের চট জলদি উত্তর , আমি এখনো আমার মনে লুকিয়ে থাকা সেই সৌরভ কে খুঁজে যাচ্ছি , তার মুখোমুখি হওয়া খুব দরকার আমার । সে কেনো সব জেনে বুঝে চুপ করে আছে , সেটা জানা অতিব জরুরি আমার জন্য ।
“আহারে” একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাইম শেখ , তারপর বললেন “ আমিও একলা আসিলাম বাবাজী , তেমন কিছুই আসিলো না আমার , একলা থাকোনের কষ্ট আমি বুঝি , কম বয়সে বিয়া করসি , উপরওয়ালার কৃপায় , আপনের চাচির উসিলায় এই সব হইসে , ঘর ভর্তি মানুষ হইসে”
লোকটা আর আমার দিকে সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেই , এনার মেয়ের জামাই পছন্দ হয়েছে । ওনার দৃষ্টিতে এখন দরদ , একা আমির প্রতি উনি এখন সহানুভূতি দেখাচ্ছেন । গলা শুকিয়ে এলো আমার , কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না , লুকিয়ে থাকা সৌরভ আমাকে বার বার টেনে ধরছে । ওই সৌরভের আশা যে নাইম শেখের মতন একদিন আমার ও সব কিছু হবে । বাড়ি ভর্তি মানুষ হবে , আমিও একদিন এমন দুপুরের খাবার খেতে বসে মেয়ে জামাই কে আমার অতিতের কথা বলবো ।
<><><>
“ভাই সাহেব , গ্রাম কেমন লাগলো” সামনে সফিকুল সাহেব দাড়িয়ে , সন্ধার পর আমি বাহির ঘরের দাওয়ায় বসে আছি , সারাদিন গ্রামে উপভোগ করার মত অনেক জিনিস থাকলেও সন্ধার পর সময় কাটতে চায় না । মতিন অ সাথে নেই , ভেতর বাড়ি গেছে , হয়ত আমাকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে ।
আমি দাওয়ায় বসে আমার করনিয় নিয়ে ভাবছিলাম , না বলে চলে যাবো স্থির করেও রয়ে গেছি । দোষ চাপিয়েছি মতিনের ঘাড়ে । মন কে বলেছি এখন না বলে চলে গেলে মতিনের অসম্মান হবে ।
“ সন্ধার পর বোরিং লাগে , তবে দিনের বেলা ভালো , আপনাকে সারাদিন দেখলাম যে?” কথা বলার একজন সঙ্গী পেয়ে ভালো লাগলো । সফিকুল সাহেব নিজে তেমন কথা না বললেও কথার উত্তর দেয় ।
“ হ্যাঁ ভাই সাহবে গ্রামের এই দোষ আছে , তবে আমার সময় কাটানোর চিন্তা করতে হয় না , সন্ধার পর ছেলে পেলে পড়তে আসে , তারপর এসার নামাজ পরা তারপর খাওয়া দাওয়া ঘুম হে হে হে হে”
আমি চমকে একবার সফিকুল সাহেবের দিকে তাকালাম , এই প্রথম লোকটা নিজের ইচ্ছায় এতো কথা বলল , আমি ওনাকে প্রশ্ন করিনি , উনি নিজে থেকেই বলেছে , আবার উচ্চ শব্দে হেসেছেন ।
“ আমাদের জীবন এই গ্রামের মতন ই বোরিং বুঝলেন ভাই সাহবে” আমাকে আরও আশ্চর্য করে দিয়ে বললেন সফিকুল সাহেব । উনি এখন আমার পাশে দাওয়ায় বসেছেন , আতরের গন্ধ ভরে গেছে চারপাশ , বেশ মিষ্টি আতরের গন্ধ । আমি ভাবলাম হয়ত লোকটাকে চিনতে আমার ভুল হয়েছিলো উনি স্বল্প ভাষী নন , তবে একটু সময় লাগে নিজেকে খুলতে ।
“ আপনি জনাব নামাজ পড়েন না?” প্রশ্নটা করে আমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলেন না নিজের আবার বললেন “নামাজ পড়বেন , নামজ পড়লে মন ফুরফুরা থাকে , অনেকে বলে বিপদ আপদ থাকে না , তবে আমি এইসব বলি না , বিপদ আপদ মানুষ নিজে তৈরি করে , তাই নামাজের সাথে এর যোগাযোগ নাই , পারথনা সাথে মনের সম্পর্ক”
লোকটা কথা আমার খুব ভালো লাগলো ।
“ আপনি কি বিবাহের জন্য আসছেন? নিলুফার মেয়ে ভালো , এই বাড়ির সবাই ভালো লোক”
আমি চুপ করে রইলাম , লুকিয়ে থাকা সৌরভ লুকানো থেকেই কিভাবে যেন আমাকে বলে দিয়েছে বিয়ের কথা উঠলেই চুপ থাকতে হবে ।
“ তবে আপনার বন্ধু বেশি ভালো মানুষ না , উনাকে আমি পছন্দ করি না , বেগানা মেয়ে ছেলে নিয়া থাকে স্বামী ইস্তির মতন, চাইলেই বিবাহ করে ফেলতে পারে কিন্তু করে না এইট হলো ওনার ধৃষ্টতা এটা ভালো মানুষের কাজ না ”
“ গিবত করলাম , মাফ করে দিবেন , কাজটা ঠিক হয় নাই , ভাই সাহেব আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই একটু সাবধান করলাম”
“ না না ঠিক আছে” যদিও মুখে বললাম ঠিক আছে কিন্তু সফিকুল সাহেবের দিকে নতুন করে তাকালাম , লোকটার মুখে এখনো হাসি , কিন্তু সেই হাসি এখন আর মন কে শান্ত করছে না । মনে হচ্ছে এই হাসি আসল হাসি নয় , এর পেছনে অন্য কোন কথা লুকানো আছে ।
“ ভাই সাহেব আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে , এরা আপনাকে জামাই হিসেবে পেলে অনেক ভাগ্যবান হবে”
সফিকুল সাহেবের কথার মাঝে এমন কিছু ছিলো যে মনে হচ্ছে সে আমার ভেতর বাহির সব দেখতে পাচ্ছে । ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে উনি বলতে চাইছে , নিজের একটা কালো অধ্যায় লুকিয়ে রেখে আমি সুন্দর মলাট করা বই সবার সামনে দেখিয়ে যে পাপ করছি সেটা উনি ধরে ফেলেছেন ।
“ আপনাকে পছন্দ করি বলেই আরও একটা কথা বলবো , যদিও এরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে , আর এইটা গিবত না , এক মাত্র বিয়া শাদির ক্ষেত্রে মানুসে দোষ গুন বলা যায়, এই মেয়ে কিন্তু কুমারি না ভাই সাহেব”
“ সফিকুল সাহেব আর বলবেন না প্লীজ” হঠাত আমার রাগ হলো এই সফিকুল সাহেবের উপরে । আমি উঠে চলে গেলাম ঘরের ভেতরে ।
রাতের খাবার আমি আর মতিন করলাম , নাইম শেখ থাক্লেন না আমাদের মাঝে । তবে একজন চল্লিশ এর কাছা কাছি বয়স্ক মহিলা , যার বয়স আমার বড় আপার সমান হবে , পর্দার আড়ালে বসে আমাদের খাওয়া তদারকি করতে লাগলেন । মহিলা আমাদের সামনে বসা কিশোর ছেলেটিকে ডিরেকশন দিচ্ছেন আমাকে কি কি বেড়ে দিতে হবে । এমন কি মহিলা এও জানেন আমি সকালে আর দুপুরে কিছুই খেতে পারিনি । উনি যদিও আমার সামনে আসেন নি তবুও ওনার আচরন আমার কাছে খুব আন্তরিক মনে হয়েছে । এই প্রথম সুধু আমার মনের ভেতরে লুকানো সৌরভ ছাড়াও আমার মনে হতে লাগলো হলে মন্দ কি?
<><><>
নিলুফারের বাবার নাম নাইম শেখ , শক্ত পোক্ত শরীর । বেশ কালো দেখতে গোঁফ আছে , তাতে মনে হয় কলপ করা , কারন মানুষের গোঁফ এতো কালো হয় না । লোকটা আমাকে সুইয়ের মত দৃষ্টতে দেখছে । এমন দৃষ্টির সামনে খাওয়া যায় না । আমি খেতেও পারলাম না । যদিও নাইম শেখ বার বার আমাকে খাওয়ার জন্য জোড় করেছেন ।
“ আপনে করেন কি বাবাজী” খাওয়া শেষে পান খেতে খেতে প্রশ্ন করলেন নাইম শেখ , এই বাবাজী শব্দটা আমার একদম পছন্দ হলো না । উত্তরে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না , আমি তো কিছুই করি না । অবশ্য আমার হয়ে মতিন জবাবা দিলো ,
“চাচাজি ওর তো বিশাল সহায় সম্পত্তি , সেইগুলা দেখা শুনা করে”
চট করে একবার মতিনের দিকে চাইলাম , মতিন এর চোখে আবেদন , আমি যেন উল্টো পাল্টা কিছু না বলি । মতিন কে কি বলবো , আমার নিজের উপরেই আমি বিরক্ত । আমি যে কিছুই করি না ভাড়া তুলে খাই সেটা বলতে আমার বাধলো কেন আমি বুঝতে পারছি না । মনে একটা আশংকা এলো , আমি কি সাবকনশাস ভাবে বিয়ে করতে চাচ্ছি? যদি নাই চাইতাম , তাহলে তখন সফিকুল সাহেবের কাছে নিলুফারের কথা জানতে চাইলাম কেনো ? আমি ছোট বাচ্চা নই , চাইলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা ভ্যান নিয়ে বাস স্টেশন গিয়ে একটা বাস ধরে চলে যেতে পারি । অথবা চাইলেই নাইম শেখের কাছে নিজের সত্যি কথা বলে বিয়ে ভেস্তে দিতে পারি । কিন্তু কিছুই আমি করছি না । মতিনের দোষ দিয়ে বসে আছি ।
“ব্যাবসা বাণিজ্য কিছু করেন না?” নাইম শেখের কণ্ঠে একটা অদৃশ্য আশ্চর্য বোধক চিহ্ন আছে ,
“ সময় নাই চাচা জান , সব দেখা শুনা করতে করতে সময় শেষ , আর করবো কার জন্য , বাড়িতে তো কেউ নাই , বাবা মা মারা গেসে অনেক আগে , তিন বোন আছে সবার বিয়া হইয়া আলাদা আলাদা “
এবারো মতিনের চট জলদি উত্তর , আমি এখনো আমার মনে লুকিয়ে থাকা সেই সৌরভ কে খুঁজে যাচ্ছি , তার মুখোমুখি হওয়া খুব দরকার আমার । সে কেনো সব জেনে বুঝে চুপ করে আছে , সেটা জানা অতিব জরুরি আমার জন্য ।
“আহারে” একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাইম শেখ , তারপর বললেন “ আমিও একলা আসিলাম বাবাজী , তেমন কিছুই আসিলো না আমার , একলা থাকোনের কষ্ট আমি বুঝি , কম বয়সে বিয়া করসি , উপরওয়ালার কৃপায় , আপনের চাচির উসিলায় এই সব হইসে , ঘর ভর্তি মানুষ হইসে”
লোকটা আর আমার দিকে সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেই , এনার মেয়ের জামাই পছন্দ হয়েছে । ওনার দৃষ্টিতে এখন দরদ , একা আমির প্রতি উনি এখন সহানুভূতি দেখাচ্ছেন । গলা শুকিয়ে এলো আমার , কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না , লুকিয়ে থাকা সৌরভ আমাকে বার বার টেনে ধরছে । ওই সৌরভের আশা যে নাইম শেখের মতন একদিন আমার ও সব কিছু হবে । বাড়ি ভর্তি মানুষ হবে , আমিও একদিন এমন দুপুরের খাবার খেতে বসে মেয়ে জামাই কে আমার অতিতের কথা বলবো ।
<><><>
“ভাই সাহেব , গ্রাম কেমন লাগলো” সামনে সফিকুল সাহেব দাড়িয়ে , সন্ধার পর আমি বাহির ঘরের দাওয়ায় বসে আছি , সারাদিন গ্রামে উপভোগ করার মত অনেক জিনিস থাকলেও সন্ধার পর সময় কাটতে চায় না । মতিন অ সাথে নেই , ভেতর বাড়ি গেছে , হয়ত আমাকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে ।
আমি দাওয়ায় বসে আমার করনিয় নিয়ে ভাবছিলাম , না বলে চলে যাবো স্থির করেও রয়ে গেছি । দোষ চাপিয়েছি মতিনের ঘাড়ে । মন কে বলেছি এখন না বলে চলে গেলে মতিনের অসম্মান হবে ।
“ সন্ধার পর বোরিং লাগে , তবে দিনের বেলা ভালো , আপনাকে সারাদিন দেখলাম যে?” কথা বলার একজন সঙ্গী পেয়ে ভালো লাগলো । সফিকুল সাহেব নিজে তেমন কথা না বললেও কথার উত্তর দেয় ।
“ হ্যাঁ ভাই সাহবে গ্রামের এই দোষ আছে , তবে আমার সময় কাটানোর চিন্তা করতে হয় না , সন্ধার পর ছেলে পেলে পড়তে আসে , তারপর এসার নামাজ পরা তারপর খাওয়া দাওয়া ঘুম হে হে হে হে”
আমি চমকে একবার সফিকুল সাহেবের দিকে তাকালাম , এই প্রথম লোকটা নিজের ইচ্ছায় এতো কথা বলল , আমি ওনাকে প্রশ্ন করিনি , উনি নিজে থেকেই বলেছে , আবার উচ্চ শব্দে হেসেছেন ।
“ আমাদের জীবন এই গ্রামের মতন ই বোরিং বুঝলেন ভাই সাহবে” আমাকে আরও আশ্চর্য করে দিয়ে বললেন সফিকুল সাহেব । উনি এখন আমার পাশে দাওয়ায় বসেছেন , আতরের গন্ধ ভরে গেছে চারপাশ , বেশ মিষ্টি আতরের গন্ধ । আমি ভাবলাম হয়ত লোকটাকে চিনতে আমার ভুল হয়েছিলো উনি স্বল্প ভাষী নন , তবে একটু সময় লাগে নিজেকে খুলতে ।
“ আপনি জনাব নামাজ পড়েন না?” প্রশ্নটা করে আমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলেন না নিজের আবার বললেন “নামাজ পড়বেন , নামজ পড়লে মন ফুরফুরা থাকে , অনেকে বলে বিপদ আপদ থাকে না , তবে আমি এইসব বলি না , বিপদ আপদ মানুষ নিজে তৈরি করে , তাই নামাজের সাথে এর যোগাযোগ নাই , পারথনা সাথে মনের সম্পর্ক”
লোকটা কথা আমার খুব ভালো লাগলো ।
“ আপনি কি বিবাহের জন্য আসছেন? নিলুফার মেয়ে ভালো , এই বাড়ির সবাই ভালো লোক”
আমি চুপ করে রইলাম , লুকিয়ে থাকা সৌরভ লুকানো থেকেই কিভাবে যেন আমাকে বলে দিয়েছে বিয়ের কথা উঠলেই চুপ থাকতে হবে ।
“ তবে আপনার বন্ধু বেশি ভালো মানুষ না , উনাকে আমি পছন্দ করি না , বেগানা মেয়ে ছেলে নিয়া থাকে স্বামী ইস্তির মতন, চাইলেই বিবাহ করে ফেলতে পারে কিন্তু করে না এইট হলো ওনার ধৃষ্টতা এটা ভালো মানুষের কাজ না ”
“ গিবত করলাম , মাফ করে দিবেন , কাজটা ঠিক হয় নাই , ভাই সাহেব আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই একটু সাবধান করলাম”
“ না না ঠিক আছে” যদিও মুখে বললাম ঠিক আছে কিন্তু সফিকুল সাহেবের দিকে নতুন করে তাকালাম , লোকটার মুখে এখনো হাসি , কিন্তু সেই হাসি এখন আর মন কে শান্ত করছে না । মনে হচ্ছে এই হাসি আসল হাসি নয় , এর পেছনে অন্য কোন কথা লুকানো আছে ।
“ ভাই সাহেব আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে , এরা আপনাকে জামাই হিসেবে পেলে অনেক ভাগ্যবান হবে”
সফিকুল সাহেবের কথার মাঝে এমন কিছু ছিলো যে মনে হচ্ছে সে আমার ভেতর বাহির সব দেখতে পাচ্ছে । ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে উনি বলতে চাইছে , নিজের একটা কালো অধ্যায় লুকিয়ে রেখে আমি সুন্দর মলাট করা বই সবার সামনে দেখিয়ে যে পাপ করছি সেটা উনি ধরে ফেলেছেন ।
“ আপনাকে পছন্দ করি বলেই আরও একটা কথা বলবো , যদিও এরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে , আর এইটা গিবত না , এক মাত্র বিয়া শাদির ক্ষেত্রে মানুসে দোষ গুন বলা যায়, এই মেয়ে কিন্তু কুমারি না ভাই সাহেব”
“ সফিকুল সাহেব আর বলবেন না প্লীজ” হঠাত আমার রাগ হলো এই সফিকুল সাহেবের উপরে । আমি উঠে চলে গেলাম ঘরের ভেতরে ।
রাতের খাবার আমি আর মতিন করলাম , নাইম শেখ থাক্লেন না আমাদের মাঝে । তবে একজন চল্লিশ এর কাছা কাছি বয়স্ক মহিলা , যার বয়স আমার বড় আপার সমান হবে , পর্দার আড়ালে বসে আমাদের খাওয়া তদারকি করতে লাগলেন । মহিলা আমাদের সামনে বসা কিশোর ছেলেটিকে ডিরেকশন দিচ্ছেন আমাকে কি কি বেড়ে দিতে হবে । এমন কি মহিলা এও জানেন আমি সকালে আর দুপুরে কিছুই খেতে পারিনি । উনি যদিও আমার সামনে আসেন নি তবুও ওনার আচরন আমার কাছে খুব আন্তরিক মনে হয়েছে । এই প্রথম সুধু আমার মনের ভেতরে লুকানো সৌরভ ছাড়াও আমার মনে হতে লাগলো হলে মন্দ কি?
<><><>