Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#56
পর্ব:২১


        আলেয়া মারা গেছে৷ এই খবরটা রুদ্রের কাছে পৌছালো তার পরীক্ষার তিরিশ মিনিট আগে৷ সে ঘড়ি দেখলো, ইতিমধ্যে দশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে। সময় এতো দ্রুত যাচ্ছে কেনো? রুদ্র সিন্ধান্ত নিতে পারছে না, সে কি করবে? বিশ মিনিট পরেই তার সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষাটা৷

        "রুদ্র, এই রুদ্র।" 
        ইরিনার ডাকে রুদ্র সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, "হ্যাঁ, কিছু বলছিস?"
        "কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?" 
        "দাদী মারা গেছে।" কথাটা বলতে রুদ্রের বুক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। একটা তীব্র কষ্ট দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে আটকে রইলো।
        "কি বলিস?" ইরিনা প্রচন্ড অবাক হলো। সে মনে মনে বলল, "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন!" সে আবার বলল, "কখন মারা গেছে? হঠাৎ কীভাবে কি হলো?" 
         "আমি কিছু জানিনা। আম্মু কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানালো।" 
        "কি করবি এখন?"
        "বুঝতে পারছি না। একটু পরেই পরীক্ষা।" 
        "এটাই শেষ পরীক্ষা। আমার মনে হয় পরীক্ষাটা না দেওয়া বোকামি হবে। একটা বছর লস হয়ে যাবে।"
        "কিন্তু..!" রুদ্র আর কিছু বলতে পারলো না।
        "আমি জানি, আমি স্বার্থপরের মত কথা বলছি কিন্তু তুই-ই ভেবে দেখ। পরীক্ষাটা না দিলে, পুরো একটা বছর লস।" 
        "হ্যাঁ, সেটা অবশ্য ঠিক বলেছিস।" 
        "আমি কি বলেছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। তুই নিজে ভেবেচিন্তে সিন্ধান্ত নে কি করবি।" 
        "আমি-তো কিছুই ভাবতে পারছি না৷ বুকের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণাটা ক্রমশ বাড়ছে। কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে।" 
        "এভাবে ভেঙে পড়িস না। এই সময় শক্ত থাকতে হবে। তোকেই সবকিছু সামলাতে হবে।" 
        "হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু এভাবে একটা মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। সেটা মেনে নেওয়া কি সহজ?" 
        "বড্ড কঠিন। তবে আমাদের মানিয়ে নিতে হয়। ভুলে যেতে হয়। মানুষ ভুলে যায়। সৃষ্টিকর্তা মানুষের মনে যেমন ভালোবাসা দিয়েছে, তেমন ভুলে যাওয়া ক্ষমতা দিয়েছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে।" 
        "উঁহু।" রুদ্র আর কিছু বলল না।
        "তুই দ্রুত ভেবে দেখ। হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। এছাড়া তুই চাইলে দুইঘন্টায় কোনো রকম পরীক্ষা দিয়ে চলে যেতে পারিস, যদি যাওয়াটা জরুরি হয়।"
        "আচ্ছা। তুই থাক আমি একটু আসছি।" 
        "কোথায় যাচ্ছিস?"
        "মা'কে একটা কল করবো। এছাড়া ওয়াশরুমে যাবো।" 
        "আচ্ছা, যা। কিন্তু প্লিজ, যতই কষ্ট হোক পরীক্ষাটা মিস দিস না। এই শেষ সময়ে এসে এভাবে মিস দেওয়া উচিত হবে না।" 
        "আচ্ছা।" বলে রুদ্র হেঁটে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগল।

        "হ্যালো, রুদ্র।" জাহানারা ফোন রিসিভ করেই বলল।
        "হ্যাঁ, আম্মু। শুনতে পাচ্ছো?" রুদ্র বলল। 
        "হ্যাঁ, পাচ্ছি।"
        "আমার কি এখনোই আসতে হবে? যদি জরুরি না থাকে তাহলে পরীক্ষা শেষ করেই সোজা চলে আসছি।" কথাগুলো ভীষণ কষ্ট করে বলল রুদ্র।
        "সেটাই করো। আমিও ফোন দিয়ে তোকে খবরটা দেওয়ার পরে আমার খেয়াল এসেছে আজ তোর পরীক্ষা। পরে খারাপ লাগতেছিলো৷ তোকে ফোন দেওয়া উচিত হয় নি আমার। আসলে হুট করে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।" 
        "মা...!"
        "কি?"
        "একটু শান্ত হও। কিছু হয়নি। আমি কিছুক্ষণ পরেই আসছি৷ ততক্ষণ তুমি একটু একা হাতে সামলে নেও।" 
        "আচ্ছা।" জাহানারা এটুকু বলতে কান্না করে দিলো।
        "একটুও কান্না করবে না। আমি না আসা পর্যন্ত কাঁদবে না।" 
       জাহানারা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, "আচ্ছা। তুই ভালো করে পরীক্ষা শেষ কর।" 
        "আচ্ছা মা, রাখছি তাহলে। সময় নেই হাতে।" 
        "আচ্ছা।" জাহানারা ফোন কেটে দিলো। কিন্তু সে তার কথা রাখতে পারলো না। সে আবার কাঁদতে লাগল।

        পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। স্যার প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছে। ক্লাসের সবাই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে প্রশ্ন দেখছে। কোন প্রশ্নটা আগে লিখবে সেটাই ভাবছে। সকলের মধ্যে একজন এখনো প্রশ্নের দিকে তাকায় নি। তার হাতে প্রশ্ন কিন্তু তার চোখ ক্লাসের দরজার দিকে। রুদ্র আসছে না বলে সে বিচলিত হচ্ছে। তার চিন্তা হচ্ছে। রুদ্র কি চলে গেলো? ইরিনা নানা সম্ভাবনার কথাই
 ভাবছে, তার মধ্যেই হাত মুখ ভেজা অবস্থায় রুদ্র দরজার সামনে এলে দাঁড়ালো। স্যার ইশারায় তাকে আসতে বললে সে ঢুকে তার সিটে গিয়ে বসলো। 
        ইরিনার উত্তরপত্র লেখার চেয়ে বেশি মনোযোগ রুদ্রের দিকে। সে খাতায় লিখছে, আর কিছুক্ষণ পরপর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। রুদ্রকে খেয়াল করছে। রুদ্র ঠিক আছে কি-না এটা দেখছে।
        রুদ্রও লেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। বারবার তার মনোভাব এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বাসার কি অবস্থা? সবাই কি পরিস্থিতিতে আছে? এই সব ভাবনাই তার মাথায় ঘুরেফিরে বারবার আসছে। 
        ইরিনাও কিছুক্ষণ পর পর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। তারও ভাল লাগছে না। রুদ্র ভাল নেই সেটা সে বুঝতে পারছে। তবুও এই পরিস্থিতিতে সে ভালই শক্ত রয়েছে।

        দুই ঘন্টা হলেই রুদ্র খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে এলো। সে যা লিখছে তাতে পাশ হয়ে যাবে। রেজাল্ট অবশ্য ভাল হবে না৷ কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা নিয়ে সে ভাবছে না।
        রুদ্র কোথাও সময় নষ্ট না করে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসেই সে অনেক লোক দেখতে পেলো। মানুষ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সব মানুষের মধ্যে তার পরিচিত কিছু মুখ আছে৷ সে মানুষগুলো একদিন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। তাদের টেলে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। তার বাবা মারা যাওয়ার পরের প্রতিটা দিন তার এখনো মনে আছে। সম্পত্তির লোভ মানুষকে কতটা পশুতে পরিণত করতে পারে সে সেই সবদিনে নিজের চোখে দেখেছে। সে সেই সব দিনের কথা ভাবতে চাচ্ছে না। সে কখনোই সেই সব দিনের কথা মনে করতে চায় না। কিন্তু আজকের সেই সব মানুষের মুখ তাকে মনে করতে বাধ্য করছে। 
        রুদ্র ভীড় ঢেলে তার মায়ের কাছে গেলো। তার মায়ের মুখ মলিন হয়ে আছে। চোখ ফুলে গেছে। তার বুঝতে বাকী রইলো না, এই মানুষটা কতটা কেঁদেছে। সে এটাও জানে এখন সবকিছু দ্রুত ঘটতে থাকবে। সেই সাথে অনেকে খাতা-কলম নিয়ে হিসাব করতে বসে যাবে। দুনিয়াতে মানুষ বড্ড লোভী।
        রুদ্র যা ভেবেছিল তাই হলো। সবকিছু দ্রুত ঘটতে লাগল। তার দাদীকে এম্বুলেন্স করে গ্রামে নেওয়া হলো। তারা এম্বুলেন্স গেলো। আত্মীয় স্বজনকে ফোনে জানানো হলো, যারা এখনো জানতো না। 
        সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আলেয়াকে কবর দেওয়া হলো। তারপর শুরু হলো আসল হিসাবনিকাশ। তার ভাগের সম্পত্তির হিসাবনিকাশ। কিন্তু রুদ্ররা সেই সন্ধ্যার পরেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলো। তাদের এই ফিরে আসাতে সবাই অখুশি হলো। কিন্তু জাহানারা সেইসব কিছুরই তোয়াক্কা করলো না৷ সে কোনো ভাবে সেখানে থাকতে রাজি হলো না। সে বলে এলো, "আমি এই সব হিসাবনিকেশর মধ্যে নেই। আগেও ছিলাম না, এখনও নেই।" 

        পরীক্ষা শেষ হলেই ইরিনা সবাইকে খবরটা জানালো। বিকালের দিকে সবাই মিলে রুদ্রের বাড়ি এলেও তাকে পেলো না। ততক্ষণে রুদ্র তার দাদীকে নিয়ে গ্রামে দিকে রওনা করেছিল।
        রুদ্রের সাথে ইরিনার যোগাযোগ হলো রাতে। তখন রুদ্র বাসে। তারা ঢাকায় ফিরছে।
        "কেমন আছিস? আন্টি কেমন আছে? ইরিনা বলল।
        "ভাল আছি। আম্মুও এখন অনেকটা ভাল।" রুদ্র মিথ্যে করে বলল।
        "সত্যি ভালো আছিস তো?"
        "উঁহু।" 
        "কোথায় আছিস? বিকেলে আমরা সবাই তোর বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু ততক্ষণে তোরা চলে গিয়েছিলি। আশপাশের সবাই বলল, তোর দাদীকে নিয়ে গ্রামে গেছিস।"
        "হ্যাঁ, দাদীর ইচ্ছে ছিল গ্রামেই তাকে দাদার পাশে কবর দেওয়া হোক।" 
        "এখন কি গ্রামের বাড়ি?"
        "বাসে, ঢাকায় ফিরছি।"
        "আজই! কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?"
        "ইরিনা?"
        "হ্যাঁ, বল।"
        "তোর সাথে পরে কথা বলি। এখন ভাল লাগছে না। একটু চোখ বুঝবো। মাথাটা ব্যথা করছে।" 
        "আচ্ছা। সাবধানে আসিস। আর আন্টির খেয়াল রাখিস।" 
        "আচ্ছা।" 

        আলের শোক সপ্তাহ খানেক মিলি, জাহানারা এবং রুদ্রকে আচ্ছন্ন করে রাখলো। তারপর ক্রমশ তারা সেই শোক থেকে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করলো। মিলি আবার কলেজে যাওয়া শুরু করেছে। জাহানারা নিয়মিত অফিস যাচ্ছে। শুধু রুদ্রের কোনো কাজ নেই। ভার্সিটি আপাতত বন্ধ। সে সারাদিন ঘরে থাকে। কিন্তু হুটহাট তার প্রচন্ড খারাপ লাগে। কয়দিন আগেও এই ঘরে জলজ্যান্ত একটা মানুষ থাকতো। আজ সে নেই। কেউ কাশতে কাশতে তাকে এখন আর দাদু বলে ডাকে না। আলেয়ার কথা মনে পড়লেই রুদ্রের বুকের মধ্যে শূন্যতা ভরে উঠে। কী অদ্ভুত এক জীবন। সেই জীবন যখন-তখন এক নেনো সেকেন্ডের ব্যবধানে একদিন সমাপ্ত হবে। তারপর কি? রুদ্র আজ-কাল এইসব চিন্তা করে, তাকে ভাবায়। তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। 

        রুদ্রের একাকীত্ব দূর করতে হুট করেই আলিফের আগমন হয়। সে মাঝেমধ্যে আসে৷ আলিফের পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি। তবুও আলিফ সময় করে এসে তার সাথে গল্প করে, আড্ডা দেয়। রুদ্রের এই সময়টা ভালো লাগে। তারা দুইজন সিগারেট টানতে টানতে তাদের জীবনে দুঃখ ভুলে যাওয়ার মিছেমিছি অভিনয় করে। দুনিয়াটা মাত্রই অভিনয় স্টেজ। আমাদের প্রত্যেকের যে কাজটা সেই কাজটাই আমরা করি। শুধু পার্থক্য এখানে আমরা বিবেকবুদ্ধি দিয়ে নিজেদের পথ নিজেরাই বেছে নেই। তারপর এগিয়ে চলি মৃত্যুর পথে। 

        সময় যেমন থেমে থাকে না। তেমন জীবনও থেমে থাকে না। আমরা যেমনই থাকি, জীবন জীবনের নিয়মে চলতে থাকে। আমাদের চলতে হয়। সেই ভাবে সবাই নিজেদের ব্যস্ততা নিয়ে আজকাল ব্যস্ত। ইরিনা একটা ব্যাংকে ইন্টার্নি করছে। ফাহিম থিসিস করবে বলেও সে একটা কর্পোরেট কোম্পানিতে আছে। সবাই যেটা ভেবেছিল সাত্যকির ব্যাপারে সেটাই সঠিক হয়েছে। সে জয়ের অফিসে জয়েন্ট করেছে। জয়ই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এদিকে রুদ্রের সবকিছু এলোমেলো। সে ইন্টার্নশিপ করার জন্য কোথাও তার সিভি জমা দেয় নি। শেষমেশ সে থিসিস পেপারের কাজ করছে। বর্তমানে এটা নিয়েই তার ব্যস্ততা, দৌড়াদৌড়ি। বলা যায়, সে তার দাদীর শোক কাটিয়ে উঠেছে। ব্যস্ততায় সে তরুকে কিছুটা সময় ভুলে থাকতে পারছে। সে ভাল আছে। আজকাল তার অতোটা মন খারাপ হয় না। অতোটা বিষাদ জমে না বুকের কোনে। তবুও কোথাও যেনো কেউ নেউ। ব্যস্ততা কমে এলে, রাত নেমে এলে, শূন্যতা নেমে আসে বুকের কোনে।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 07-03-2023, 01:01 AM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)