27-12-2018, 02:48 PM
২২।
‘কাল তাহলে সকাল সকালই চলে আসিস...’ ঘরের মধ্যে কাজল ঢুকতে বলে ওঠে পৃথা।
‘তুমি কাল আপিস যাবে?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে কাজল।
‘হ্যা রে... যেতে তো হবেই... আজ তো কামাই হয়ে গেল অফিসটা।’ উত্তর দেয় পৃথা।
‘কটার সময় বেরোও?’ জিজ্ঞাসা করে কাজল।
‘আমি তো মোটামুটি আটটা সোয়া আট্টার মধ্যেই বেরিয়ে যাই... কেন রে?’ জানতে চায় পৃথা।
‘না, তাহলে আমি ছ’টার মধ্যেই চলে আসবো... কেমন? তাতে হবে না?’ জিজ্ঞেস করা কাজল।
‘হ্যা, হ্যা... ছ’টার মধ্যে এলেই এনাফ... ঠিক আছে তাই আসিস... আয় তাহলে এখন...’ উত্তর দেয় পৃথা।
তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কাজল।
‘আর কিছু বলবি?’ বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।
‘না, মানে, বলছিলাম...’ বলে একটু চুপ করে... তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলে, ‘আমি আজকে দুপুরটা থেকেই যাই না দিদিমনি...’ বলে ওঠে কাজল।
‘কেন রে? কি দরকার তোর থাকার আবার?’ অবাক হয় পৃথা।
‘না, মানে তোমার সলিলটা এতোটা খারাপ... সেকানে তোমাকে একা রেকে যেতে মন চাইচে না...’ কাজলের মুখের মধ্যে সত্যিকারের উদবেগের ছায়া দেখে পৃথা... ভালো লাগে ওর এই ধরণের মানবিকতার প্রকাশে।
হেসে বলে সে, ‘দূর পাগলী... সামান্য তো জ্বর হয়েছে... এত চিন্তা করছিস কেন... আমি ঠিক পারবো...’ মনে মনে বলে আমার সাথে তোর দাদাবাবু আছে, তোর আর কিসের চিন্তা কাজল... সেই আমাকে সামলে রাখবে।
‘দেকো... আমি আর কি বলবো... আচ্চা... সোনো... আমি মুর্গির ইস্টু করে রেকে গেলাম... মোটামুটি দু-বেলাই হয়ে যাবে তোমার... একটু বেসি করেই করেচি... রাতে একটু গরম করে নিও... নাকি একবার আসবো সন্দের দিকে? এসে খাবার গরম করে দিয়ে যাবো... বলো... আমি কিন্তু কাচেই থাকি... বললে এসে যাবো... আমার কোন অসুবিদা হবে না...’ গড়গড় করে বলে থামে কাজল।
‘না রে বাবা, তোকে আর আসতে হবে না... আমি ঠিক করে নেবো... তুই পালা এখন...’ বলে পৃথা।
‘আচ্চা... তাহলে আসি...’ বলে চলে যেতে উদ্যত হয়... তারপর আবার কি ভেবে বলে ওঠে, ‘আরে তুমি আমার নাম্বারটাই তো নাও নি... ওটা নিয়ে নাও... অসুবিদা হলেই একটা ফোন করে দেবে, দেখবে তোমার কাজল ঠিক এসে গেচে...’ মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে।
‘হ্যা, ভালো মনে করিয়েছিস... তোর নাম্বারটা বলতো...’ বলে নিজের মোবাইলটায় কাজলের নাম্বারটা সেভ করে নেয় পৃথা।
অনেক অনিচ্ছা নিয়ে বেরিয়ে যায় কাজল, যাবার সময় বাইরের দরজা টেনে দিয়ে যেতে ভোলে না, একবার শুধু গলা তুলে বলে যায়, ‘পরে পারলে উঠে দরজা বন্ধ করে দিও দিদিমনি... আমি শুধু টেনে দিয়ে গেলাম...’ ইয়েল লক থাকার ফলে সে নিয়ে চিন্তা নেই পৃথার।
‘বেলা অনেক হয়েছে... এবার উঠে স্নানটা করে নাও... এর পর করলে কিন্তু ঠান্ডাটা আবার লেগে যাবে...’ পৃথার কানে আসে একদম পাশ থেকে অর্নবের গলা।
হাসি মুখে মুখ তুলে তাকায়... ‘কেন, স্নানটা করিয়ে দেবে?’
‘না, মানে সেটা বলি নি...’ অপ্রস্তুত জবাব অর্নবের... ‘বারোটা বাজতে যায়... এর পরে স্নান করা উচিত নয়, তাই বলছিলাম...’
‘জানি... কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছে না... মাথাটা এখনও বেশ ভার, জানো...’ জানায় পৃথা।
‘তবুও, দেখো... স্নান করলে একটু ভালো লাগবে... আমি গিজারটা চালিয়ে দিয়েছি... মাথায় জল দিও না, একটু গায়ে জলটা দাও... ফ্রেশ লাগবে...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘বাব্বা... অনেক কিছুই জানো দেখছি?’ হেসে বলে পৃথা।
‘একটু তো জানতেই হয়... এতদিন তো নিজেকেই নিজে দেখাশোনা করতে হতো...’ অর্নব বলে।
‘ইশ... সত্যিই... একলাটি কি ভাবে থাকতে বলোতো...’ মুখটা করুন হয়ে ওঠে পৃথার।
‘খারাপ কি? একাই রাজা ছিলাম ঘরে... যেমন খুশি তেমনিই থাকতাম...’ হাসির আওয়াজ আসে।
‘ও... আচ্ছা... আমি এসে খুব অসুবিধা করে দিয়েছি, না?’ ছদ্ম রাগ প্রকাশ পায় কথায়।
‘আমি কি তা বলেছি?’ তাড়াতাড়ি সাফাই গায় অর্নব।
‘বললেই তো... একা রাজা ছিলে ঘরে... যা খুশি তাই করতে পারতে... এখন আমি আসাতে নিশ্চয়ই খুব অসুবিধা হয়ে গেল...’ কথার প্রসঙ্গে জবাব দেয় পৃথা।
‘আচ্ছা, আচ্ছা, হয়েছে... আমার বলা অন্যায় হয়েছে... আর একটা নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না...’ কথা ঘোরাবার প্রয়াশ করে অর্নব।
‘ও... মানে আমি ঝগড়ুটে... এটাই বলতে চাইছ তো?’ অন্য ভাবে চেপে ধরার চেষ্টা করে পৃথা।
‘যা বাব্বা... সেটা আবার কোথায় বললাম?’ গলার স্বরে কাঁচুমাচু হয়ে ওঠার ভাব।
‘এই তো বললে আমি ঝগড়া করছি...’ চোখ পাকিয়ে শূন্যের পানে তাকিয়ে বলে পৃথা।
‘চলো... এতক্ষনে কিন্তু বাথরুমে জল রেডি হয়ে গেছে... এবার যাওয়া উচিত...’ পৃথার কথার উত্তর না দিয়ে বলে ওঠে।
‘ইশ... তুমি আমায় স্নান করিয়ে দেবে নাকি?’ পৃথার গালের ওপরে লালিমার আভা খেলে যায় চকিতে।
‘না, না, আমি তা বলি নি, আমি শুধু তোমাকে বাথরুম অবধি এগিয়ে দিতে চেয়েছি...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘কেন? স্নান করিয়ে দিলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে শুনি?’ ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘এ বাবা, সে কি করে হয়... আমি তোমাকে বাথরুমে পৌছে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবো...’ ফের আত্মপক্ষ রক্ষা করার চেষ্টা করে অর্নব।
‘কেন, আমি বললেও স্নান করিয়ে দেবে না?’ মিচকি হেসে প্রশ্ন করে পৃথা, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে... কিন্তু দাঁড়াতেই মাথাটা একটু টলে যায় যেন।
একটা অদৃশ্য বলিষ্ঠ হাত এসে পৃথার বাহু ধরে ফেলে... পৃথা আস্তে করে হেলে যায় হাতটাকে আন্দাজ করে... দেহটা গিয়ে সাহারা পায় চওড়া একটা প্রসস্ত লোমশ বুকের ওপরে... মুখের হাসিটা আরো চওড়া হয় তার। অদৃশ্য হাতটা তার দেহটাকে বেড় দিয়ে ধরে রাখে, যাতে কোনভাবে পড়ে না যায় পৃথা।
হটাৎ করে ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা... দুহাত দিয়ে না দেখা শরীরটাকে হাতের বেড়ে আঁকড়ে ধরে মুখটা গুঁজে দেয় ওই লোমশ নগ্ন বুকটার মাঝে... মুখ ঘষে লোমশ বুকটায় মেঝের ওপরে দাঁড়িয়ে... তার হাতটা ঘুরে বেড়ায় চওড়া না দেখা পীঠের ওপরে... পেশল বুকের একটু নীচেই চেপে বশে পৃথার পরনের টি-শার্টটার নিচে থাকা ব্রা-হীন নরম গোলাকার দুটো মাংশপিন্ড... চকিতে যেন আপন উত্তেজনায় বেড়ে উঠতে থাকে বুকের বোঁটাদুটো।
‘চলো... এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?’ ফিসফিসিয়ে তাড়া দেয় অর্নব... অস্বস্তি হয় তার পৃথার শরীরটার নিজের দেহের সাথে লেগে থাকার ফলে... শরীরের ওপরে ওই নরম দুটো বুকের সংস্পর্শে এসে।
‘উম্, কি ভালো যে লাগছে...’ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে জানায় পৃথা। পীঠের ওপর থেকে ডান হাতটাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তুলে দেয় ওপর দিকে, অর্নবের মুখ লক্ষ্য করে, হাতটা ঠেকে দাড়ির জঙ্গলের ঢাকা গালের ওপরে... সেই দাঁড়ির জঙ্গলের ওপরেই হাত বোলাতে বোলাতে আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা, ‘অর্নব, আমায় একটু আদর করবে? ভিষন আদর খেতে ইচ্ছা করছে তোমার কাছে... করো না...’ বলতে বলত নিজের শরীরটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে সামনের অদৃশ্য দেহটার সাথে, নরম বুকদুটো আরো চেপে বসে সুঠাম পেটের ওপরে। নিজের তলপেটের ওপরে ছোঁয়া লাগে জড়িয়ে থাকা দেহটার দুই পায়ের ফাঁকে ঝুলতে থাকা একটা বিশেষ অঙ্গের সাথে... তলপেটটাকে আরো চেপে ধরে সে... পীঠের ওপর থেকে বাঁ হাতটাকে সরিয়ে নিয়ে এসে রাখে সুঠাম একটা নগ্ন নিতম্বের ওপরে... পরশ পায় সেখানেও লোমের আধিক্যের।
পৃথার বাহুদুটো ধরে সবল হাতে টেনে নিজের শরীর থেকে আলাদা করে দেয় অর্নব... ‘না তিতির না, এ হয় না... এটা হতে পারে না... তুমি যা চাইছ সেটা কখনো, কোনদিনও হবার নয়... প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড...’ প্রায় হাঁফাতে থাকে অর্নব... নিজেই বুঝতে পারে আর একটু হলেই নিজের শরীর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে দিত... তখন কি ভাবে সামলাতো নিজেকে? কি করে পারতো এই অসীম হাতছানী উপেক্ষা করতে?
‘কেন হয় না অর্নব? হোয়াই?’ করুন চোখে মুখ তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা... এই ভাবে তাকে টেনে আলাদা করে দেওয়ার ফলে আহত হয় তার মনটা... নিথর হয়ে তার দেহের দুই পাশে ঝুলতে থাকে হাত দুটো।
‘দোহাই তিতির... একটু বোঝার চেষ্টা করো... আমি আগেও বলেছি... তুমি যে ভাবে আমাকে চাইছ, সে ভাবে তোমার কাছে যাবার ক্ষমতা আমার নেই... আমি যে দেহ-হীন... আমার কোন অস্তিত্বই যে নেই... সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?’ বোঝাবার আকুল চেষ্টা করে অর্নব। ‘কি বলবে লোককে? কি বলবে তোমার বাবা মা কে? একটু বোঝার চেষ্টা করো তিতির, আমি যে থেকেও নেই... কেউ মেনে নিতে পারবে না আমাদের মধ্যের সম্পর্ক... আর তোমার জীবনটাকে আমি এই ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে পারি না... কখনই না...’
‘আমায় ভালোবাসো না অর্নব? আমি তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য নই?’ ভেজা চোখে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘ভালোবাসলেও আমি কিছু করতে পারি না তিতির... আমি মনে প্রাণে চাইলেও অপারগ... আমি যে অদৃশ্য... নিরাকার... সেখানে তোমায় কি করে এই ভূল সম্পর্কের মধ্যে রাখি বলো... এর থেকে তুমি বরং একটু নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করো... দেখো, আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে... তোমার এত ব্রাইট ফিউচার... সেখানে আমার মত একটা লোকের সাথে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে কেন নষ্ট করবে তুমি?’ গাঢ় গলায় বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।
হটাৎ মাথাটা জ্বলে ওঠে পৃথার... শরীরটাকে ঝটকা দিয়ে অর্নবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় সে... আর এই ভাবে শরীরে ঝাকুনি লাগতে নিজের মাথাটা বোঁ করে ঘুরে যায়... টলে ধপ করে পড়ে যায় বিছানার ওপরে... প্রায় চিৎ হয় পড়ে...
ওকে এই ভাবে পড়ে যেতে ভয় পেয়ে যায় অর্নব, তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে... শরীরে অর্নবের স্পর্শ পেতে আরো যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে পৃথা... হাতের ঝটকায় কাঁধের ওপরে থাকা অদৃশ্য হাতটাকে সরিয়ে দিয়ে চোয়াল চেপে বলে ওঠে, ‘ডোন্ট... ডোন্ট টাচ্ মী... আই ডোন্ট রিকোয়াএর এনি অফ ইয়োর কনসার্ন... লীভ মী... লীভ মী অ্যালোন... বলে বিছানায় উপুড় হয়ে যায়... মুখটা গুজে রাখে বিছানার নরম তোষোকের মধ্যে... বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে সে।
আবার পৃথার পীঠের ওপরে আলতো করে হাত রাখে অর্নব... ‘প্লিজ তিতির... রাগ কোরো না... ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড... আমি যেটা বলছি...’
শেষ করতে দেয় না অর্নবের কথার... মুখটাকে ঘুরিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে শূণ্যের পানে তাকিয়ে... ‘বললাম তো... আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি অফ ইয়োর কনসার্ন... প্লিজ লীভ মী অ্যালোন...’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় বিছানায়।
‘কেন এমন ছেলেমানুষি করছ তিতির... আমি পারলে কি তোমার মত এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে ফিরিয়ে দিতাম বলো... তোমার মত একটা মেয়েকে জীবনে পাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার... কিন্তু কি করবো বলো... ইচ্ছা থাকলেও তো সব কিছু জীবনে পাওয়া সম্ভব হয় না... কিছু কিছু জিনিস কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়... ভাবো না আমার সাথে তোমার কোনদিন দেখাই হয় নি... একটা ফাঁকা ফ্ল্যাটে রয়েছ তুমি... যেখানে আমার কোন অস্তিত্বই নেই... দেখবে অনেক সহজ হয় যাবে পুরো ব্যাপারটা... আসলে...’
অর্নবের কথার ফাঁকেই ঘুরে উঠে বসে পৃথা... ওকে উঠে বসতে দেখে চুপ করে যায় অর্নব... মুখ তুলে একটুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেশ... তারপর হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে... ‘আমি জানি কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারছো না... আসলে তুমি ভাবছ আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে... তাই না... একটা বাজে, নষ্ট মেয়ে... আমি জানি দ্যাট ডে আই হ্যাড কনফেসড এভ্রিথিং টু ইয়ু, আন্ড ইয়ু নো নাউ মাই ডার্ক সাইড... আই অ্যাম আ ব্যাড গার্ল টু ইয়ু... আ স্লাট... ইস ইন্ট ইট... ইয়ু থিঙ্ক আই অ্যাম আ স্লাট... আ রটন পার্সন... দ্যাটস হোয়াই ইয়ু কান্ট লাভ মী... ইয়ু হেট মী অ্যাকচুয়ালি... আই ডোন্ট ডিসার্ভ ইয়োর লাভ...’ বলতে বলতে আরো হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে পৃথা... কাঁদতে কাঁদতে ফের গড়িয়ে পড়ে বিছানার ওপরে... বেঁকে চুড়ে পড়ে থাকে দেহটা বিছানায়... কান্না দমকে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে তার নরম কোমল শরীরটা।
পৃথার পাশে বিছানার খালি জায়গাটায় অর্নব বসে জোর করে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে... দুহাতে আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে থাকা দেহটা... ওর লোমশ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে চলে পৃথা... ‘আমি খুব খারাপ... আমি জানি আমি খুব খারাপ... আমি ভার্জিন নই... সেটা তুমি জেনে গেছ... আর তাই আমাকে আর তোমার করে নিতে পারছো না... আমি আর কক্ষনো তোমার হতে পারবো না...’
পৃথাকে শক্ত করে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলের ওপরে চুমু খায় অর্নব... তারপর খানিকটা সময় চুপ করে নিজের মুখটা ওর মাথার মধ্যে ডুবিয়ে রেখে অপেক্ষা করে কান্নাটা একটু স্তিমিত হবার... তারপর যখন বোঝে যে পৃথার কান্নাটা একটু ধরে এসেছে... তখন শান্ত গলায় বলে, ‘তুমি এত বোকা মেয়ে, তা তো জানতাম না... আমি তো ভেবেছিলাম খুব সাহসী একটা মেয়ে... কিন্তু এখন তো দেখছি একেবারে বাচ্ছা তোমার ভেতরটা... এই মানসিকতায় একটা অচেনা অজানা শহরে এলে কি করে? হু?’
আস্তে আস্তে নিজেও দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা... ওর বুকের মধ্যে মুখ রেখে ছোট্ট করে বলে, ‘জানি না...’
‘বোকা মেয়ে... আমি বলেছি তুমি বাজে, তুমি খারাপ? হু?’ মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলে অর্নব... ‘আচ্ছা আমাদের দুজনের বয়শের ডিফারেন্সটাও দেখবে না... আমার মত একটা বুড়োর সাথে নিজের জীবনটা জড়াবে? সেটা কি ঠিক?’
অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তোলে পৃথা... তুলে তাকায় ওপর পানে... ওই কান্না ভেজা চোখেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে তার... ‘তুমি বুড়ো? হি হি...’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের পেশল বুকের মধ্যে... অস্ফুট স্বরে বলে, ‘কে বলে তুমি বুড়ো?’ বলতে বলতে দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের শরীরটাকে... এবার আর বাধা দেয় না অর্নব... শরীরের ওপরে নরম দুটো মাংসপিন্ডের ছোঁয়া পেতেও।
‘বুড়ো নই? তোমার সাথে আমার বয়সের কত ফারাক তোমার খেয়াল আছে? শুধু ওই ছবিতে আমাকে দেখলেই হবে? ওটা কত বছর আগের তোলা... তারপর কতগুলো দিন... মাস... বছর পেরিয়ে গিয়েছে সেটা জানো তুমি... আজ প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় আমি... তোমার বয়সের ডবলেরও বেশি... সেখানে কি করে তোমার জীবনটাকে আমি জেনে শুনে নষ্ট করতে পারি? বলো তো?’ পৃথার চুলে বিলি কাটে অর্নব।
‘আমার বুড়ো আমার কাছে... তোমাকে কে এত মাথা ঘামাতে বলেছে শুনি?’ অর্নবের বুকের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা... লম্বা শ্বাস টেনে অর্নবের গায়ের পুরুশালী গন্ধ নেয় সে... অনেকটাই এতক্ষনে সামলে নিয়েছে সে নিজেকে... অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা রাখার পরে অভিমানটাও এখন আর নেই।
‘এটা কিন্তু তোমার পাগলামী...’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব।
‘আমার পাগলামী... তোমার তাতে কি?’ ফিসফিসায় পৃথা, অর্নবের বুকের লোমের ওপরে এঁকে দিতে থাকে ছোট ছোট চুম্বন।
নিজের বুকের ওপরে পৃথার তপ্ত ঠোঁটের ছোয়ায় শরীরটা সিরসির করে ওঠে অর্নবের। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে সে... ‘বাহ... আমাকে নিয়ে ঘটনা, আর আমার কিছু নয়? এ কেমন কথা? আর তাছাড়া তুমি আমাকেই বা কতটুকু চেন? বলো? আমার শরীরের কথা, বয়সের কথা, সব না হয় ছেড়েই দিলাম, কিন্তু কতদিন আর তুমি আমাকে চিনেছ? কিছুই না... শুধু ওই প্রণবের কিছুক্ষনের কথাতেই আমাকে চিনে গেলে? আমিও তো একটা বাজে, খারাপ লোক হতে পারি? আগে সেটা জানতে চাইবে না? একটা ছবিতে আমাকে দেখে আর প্রণবের কথা শুনেই আমাকে ভালোবেসে ফেললে? এত বোকামী কেউ করে? আমি তো তোমার ক্ষতিও করতে পারি? সেটা ভাববে না?’
অর্নবের কথা শুনে ওর থেকে ঝট করে আলাদা হয়ে বসে পৃথা... মুখ তুলে হি হি করে হাসতে শুরু করে সে... ওর এই ব্যবহারে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কি হলো... এত হাসার কি হলো এতে? আমি আবার হাসির কথা কি বললাম?’
হাসতে হাসতেই মাথা নাড়ে পৃথা, হাসি মাখা মুখে বলে, ‘হাসবো না... জোক অফ দ্য ইয়ার...’ বলে আরো হি হি করে হাসতে থাকে... হাতের পীঠ দিয়ে জমে থাকা চোখের জলটুকু মুছে নেয় সাথে সাথে।
‘আশ্চর্য তো... হেসেই চলেছে... কি ভুলটা বললাম আমি?’ ফের প্রশ্ন করে অর্নব।
এবার হাসিটা থামায় পৃথা, মুখটাকে খানিক তুলে তাকিয়ে থাকে শূণ্যের পানে, যেখানে অর্নবের অদৃশ্য দাড়ি গোঁফে ভরা মুখটা বর্তমান... ‘মশাই... আমি মেয়ে... একটা ছেলে সে কতটা ভালো আর কতটা খারাপ... সেটা আমরা অনেক আগেই বুঝে যাই... বুঝেছেন?’
‘সে তো বুঝলাম... কিন্তু তুমি আমাকে দেখেছ কোথায় যে আমার সম্বন্ধে তোমার এত বড় ধারণা হয়ে যাবে? হু? দেখেছ তো ওই ছবিটায় শুধু... তাও সেই কত বছর আগের তোলা... আর তাছাড়া এতদিনে ওই ছেলেটা একটা শয়তান লোকে পরিণত হয়ে ওঠে নি, সেটাই বা কি করে এত জোর দিয়ে বলছ?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
এবার আসতে আসতে পৃথার মুখটা সিরিয়াস হয়ে ওঠে যেন... ধীর কন্ঠে বলে, ‘যে লোকটা একটা মেয়েকে একদম ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে দিনের পর দিন পেয়েছে... পেয়েছে সেই মেয়েটিকে একেবারে অসহায় অবস্থায়, এমন কি সময় সময় মেয়েটি ছিল একেবারে নগ্ন... আবার কখন সে ছিল নেশায় ডুবে... কিন্তু সেখানে কখনও, কোন অবস্থাতেও, একবারের জন্যও তার এতটুকু ক্ষতি করার চিন্তাও করেনি, একবারের জন্যও ছুঁয়েও দেখেনি... সুযোগ নিতে কাছে আসে নি... তাকে শয়তান বলবো? তাকে... তাকে বিশ্বাস করব না?’ বলে থামে সে... গভীর দৃষ্টি ফেলে শূণ্যের পানে... তারপর মুখটাকে ফের গুঁজে দেয় অর্নবের বুকের মধ্যে... লোমশ বুকে মুখটাকে বারে বারে ঘষতে ঘষতে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমি যে সেই লোকটাকে আমার নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি গো... বোঝ না?’
অর্নবের মুখ থেকে কথা সরে না আর... কি বলবে সে? আর কি ভাবে বোঝাবে এই পাগলী মেয়েটাকে? কি ভাবে নিরস্ত্র করবে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে না ফেলতে... সেও যে অস্বীকার করতে পারে না যে নিজেও কখন মনটা দিয়ে ফেলেছে এই মিষ্টি মেয়েটাকে... কিন্তু ভেবেছিল সেটা লোকানোই থাকবে শুধু তার নিজের ভেতরে... প্রকাশ্যে আসবে না কখনও... কিন্তু এই মেয়েটা তার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে... কিছুতেই পারছে না নিজেকে সরিয়ে রাখতে মেয়েটির থেকে...
দুজনে দুজনকে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে... ঘড়ির কাঁটা সরে যায় টিকটিক শব্দ করতে করতে... দুটো শরীর যেন একে অপরের সাথে ছুঁয়ে থেকে নিশব্দ আলোড়নহীন তাদের ভালোবাসার আদানপ্রদানে ব্যস্ত হয়ে থাকে... ধীরে ধীরে অর্নবের একটা হাত উঠে এসে থামে পৃথার পীঠের ওপরে... আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে থাকা পৃথাকে... টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে আর একটু ভালো করে... পৃথাও হারিয়ে যায় অর্নববের বুকের মধ্যে অক্লেশে... পরম আবেশে।
‘কাল তাহলে সকাল সকালই চলে আসিস...’ ঘরের মধ্যে কাজল ঢুকতে বলে ওঠে পৃথা।
‘তুমি কাল আপিস যাবে?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে কাজল।
‘হ্যা রে... যেতে তো হবেই... আজ তো কামাই হয়ে গেল অফিসটা।’ উত্তর দেয় পৃথা।
‘কটার সময় বেরোও?’ জিজ্ঞাসা করে কাজল।
‘আমি তো মোটামুটি আটটা সোয়া আট্টার মধ্যেই বেরিয়ে যাই... কেন রে?’ জানতে চায় পৃথা।
‘না, তাহলে আমি ছ’টার মধ্যেই চলে আসবো... কেমন? তাতে হবে না?’ জিজ্ঞেস করা কাজল।
‘হ্যা, হ্যা... ছ’টার মধ্যে এলেই এনাফ... ঠিক আছে তাই আসিস... আয় তাহলে এখন...’ উত্তর দেয় পৃথা।
তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কাজল।
‘আর কিছু বলবি?’ বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।
‘না, মানে, বলছিলাম...’ বলে একটু চুপ করে... তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলে, ‘আমি আজকে দুপুরটা থেকেই যাই না দিদিমনি...’ বলে ওঠে কাজল।
‘কেন রে? কি দরকার তোর থাকার আবার?’ অবাক হয় পৃথা।
‘না, মানে তোমার সলিলটা এতোটা খারাপ... সেকানে তোমাকে একা রেকে যেতে মন চাইচে না...’ কাজলের মুখের মধ্যে সত্যিকারের উদবেগের ছায়া দেখে পৃথা... ভালো লাগে ওর এই ধরণের মানবিকতার প্রকাশে।
হেসে বলে সে, ‘দূর পাগলী... সামান্য তো জ্বর হয়েছে... এত চিন্তা করছিস কেন... আমি ঠিক পারবো...’ মনে মনে বলে আমার সাথে তোর দাদাবাবু আছে, তোর আর কিসের চিন্তা কাজল... সেই আমাকে সামলে রাখবে।
‘দেকো... আমি আর কি বলবো... আচ্চা... সোনো... আমি মুর্গির ইস্টু করে রেকে গেলাম... মোটামুটি দু-বেলাই হয়ে যাবে তোমার... একটু বেসি করেই করেচি... রাতে একটু গরম করে নিও... নাকি একবার আসবো সন্দের দিকে? এসে খাবার গরম করে দিয়ে যাবো... বলো... আমি কিন্তু কাচেই থাকি... বললে এসে যাবো... আমার কোন অসুবিদা হবে না...’ গড়গড় করে বলে থামে কাজল।
‘না রে বাবা, তোকে আর আসতে হবে না... আমি ঠিক করে নেবো... তুই পালা এখন...’ বলে পৃথা।
‘আচ্চা... তাহলে আসি...’ বলে চলে যেতে উদ্যত হয়... তারপর আবার কি ভেবে বলে ওঠে, ‘আরে তুমি আমার নাম্বারটাই তো নাও নি... ওটা নিয়ে নাও... অসুবিদা হলেই একটা ফোন করে দেবে, দেখবে তোমার কাজল ঠিক এসে গেচে...’ মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে।
‘হ্যা, ভালো মনে করিয়েছিস... তোর নাম্বারটা বলতো...’ বলে নিজের মোবাইলটায় কাজলের নাম্বারটা সেভ করে নেয় পৃথা।
অনেক অনিচ্ছা নিয়ে বেরিয়ে যায় কাজল, যাবার সময় বাইরের দরজা টেনে দিয়ে যেতে ভোলে না, একবার শুধু গলা তুলে বলে যায়, ‘পরে পারলে উঠে দরজা বন্ধ করে দিও দিদিমনি... আমি শুধু টেনে দিয়ে গেলাম...’ ইয়েল লক থাকার ফলে সে নিয়ে চিন্তা নেই পৃথার।
‘বেলা অনেক হয়েছে... এবার উঠে স্নানটা করে নাও... এর পর করলে কিন্তু ঠান্ডাটা আবার লেগে যাবে...’ পৃথার কানে আসে একদম পাশ থেকে অর্নবের গলা।
হাসি মুখে মুখ তুলে তাকায়... ‘কেন, স্নানটা করিয়ে দেবে?’
‘না, মানে সেটা বলি নি...’ অপ্রস্তুত জবাব অর্নবের... ‘বারোটা বাজতে যায়... এর পরে স্নান করা উচিত নয়, তাই বলছিলাম...’
‘জানি... কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছে না... মাথাটা এখনও বেশ ভার, জানো...’ জানায় পৃথা।
‘তবুও, দেখো... স্নান করলে একটু ভালো লাগবে... আমি গিজারটা চালিয়ে দিয়েছি... মাথায় জল দিও না, একটু গায়ে জলটা দাও... ফ্রেশ লাগবে...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘বাব্বা... অনেক কিছুই জানো দেখছি?’ হেসে বলে পৃথা।
‘একটু তো জানতেই হয়... এতদিন তো নিজেকেই নিজে দেখাশোনা করতে হতো...’ অর্নব বলে।
‘ইশ... সত্যিই... একলাটি কি ভাবে থাকতে বলোতো...’ মুখটা করুন হয়ে ওঠে পৃথার।
‘খারাপ কি? একাই রাজা ছিলাম ঘরে... যেমন খুশি তেমনিই থাকতাম...’ হাসির আওয়াজ আসে।
‘ও... আচ্ছা... আমি এসে খুব অসুবিধা করে দিয়েছি, না?’ ছদ্ম রাগ প্রকাশ পায় কথায়।
‘আমি কি তা বলেছি?’ তাড়াতাড়ি সাফাই গায় অর্নব।
‘বললেই তো... একা রাজা ছিলে ঘরে... যা খুশি তাই করতে পারতে... এখন আমি আসাতে নিশ্চয়ই খুব অসুবিধা হয়ে গেল...’ কথার প্রসঙ্গে জবাব দেয় পৃথা।
‘আচ্ছা, আচ্ছা, হয়েছে... আমার বলা অন্যায় হয়েছে... আর একটা নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না...’ কথা ঘোরাবার প্রয়াশ করে অর্নব।
‘ও... মানে আমি ঝগড়ুটে... এটাই বলতে চাইছ তো?’ অন্য ভাবে চেপে ধরার চেষ্টা করে পৃথা।
‘যা বাব্বা... সেটা আবার কোথায় বললাম?’ গলার স্বরে কাঁচুমাচু হয়ে ওঠার ভাব।
‘এই তো বললে আমি ঝগড়া করছি...’ চোখ পাকিয়ে শূন্যের পানে তাকিয়ে বলে পৃথা।
‘চলো... এতক্ষনে কিন্তু বাথরুমে জল রেডি হয়ে গেছে... এবার যাওয়া উচিত...’ পৃথার কথার উত্তর না দিয়ে বলে ওঠে।
‘ইশ... তুমি আমায় স্নান করিয়ে দেবে নাকি?’ পৃথার গালের ওপরে লালিমার আভা খেলে যায় চকিতে।
‘না, না, আমি তা বলি নি, আমি শুধু তোমাকে বাথরুম অবধি এগিয়ে দিতে চেয়েছি...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘কেন? স্নান করিয়ে দিলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে শুনি?’ ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘এ বাবা, সে কি করে হয়... আমি তোমাকে বাথরুমে পৌছে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবো...’ ফের আত্মপক্ষ রক্ষা করার চেষ্টা করে অর্নব।
‘কেন, আমি বললেও স্নান করিয়ে দেবে না?’ মিচকি হেসে প্রশ্ন করে পৃথা, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে... কিন্তু দাঁড়াতেই মাথাটা একটু টলে যায় যেন।
একটা অদৃশ্য বলিষ্ঠ হাত এসে পৃথার বাহু ধরে ফেলে... পৃথা আস্তে করে হেলে যায় হাতটাকে আন্দাজ করে... দেহটা গিয়ে সাহারা পায় চওড়া একটা প্রসস্ত লোমশ বুকের ওপরে... মুখের হাসিটা আরো চওড়া হয় তার। অদৃশ্য হাতটা তার দেহটাকে বেড় দিয়ে ধরে রাখে, যাতে কোনভাবে পড়ে না যায় পৃথা।
হটাৎ করে ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা... দুহাত দিয়ে না দেখা শরীরটাকে হাতের বেড়ে আঁকড়ে ধরে মুখটা গুঁজে দেয় ওই লোমশ নগ্ন বুকটার মাঝে... মুখ ঘষে লোমশ বুকটায় মেঝের ওপরে দাঁড়িয়ে... তার হাতটা ঘুরে বেড়ায় চওড়া না দেখা পীঠের ওপরে... পেশল বুকের একটু নীচেই চেপে বশে পৃথার পরনের টি-শার্টটার নিচে থাকা ব্রা-হীন নরম গোলাকার দুটো মাংশপিন্ড... চকিতে যেন আপন উত্তেজনায় বেড়ে উঠতে থাকে বুকের বোঁটাদুটো।
‘চলো... এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?’ ফিসফিসিয়ে তাড়া দেয় অর্নব... অস্বস্তি হয় তার পৃথার শরীরটার নিজের দেহের সাথে লেগে থাকার ফলে... শরীরের ওপরে ওই নরম দুটো বুকের সংস্পর্শে এসে।
‘উম্, কি ভালো যে লাগছে...’ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে জানায় পৃথা। পীঠের ওপর থেকে ডান হাতটাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তুলে দেয় ওপর দিকে, অর্নবের মুখ লক্ষ্য করে, হাতটা ঠেকে দাড়ির জঙ্গলের ঢাকা গালের ওপরে... সেই দাঁড়ির জঙ্গলের ওপরেই হাত বোলাতে বোলাতে আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা, ‘অর্নব, আমায় একটু আদর করবে? ভিষন আদর খেতে ইচ্ছা করছে তোমার কাছে... করো না...’ বলতে বলত নিজের শরীরটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে সামনের অদৃশ্য দেহটার সাথে, নরম বুকদুটো আরো চেপে বসে সুঠাম পেটের ওপরে। নিজের তলপেটের ওপরে ছোঁয়া লাগে জড়িয়ে থাকা দেহটার দুই পায়ের ফাঁকে ঝুলতে থাকা একটা বিশেষ অঙ্গের সাথে... তলপেটটাকে আরো চেপে ধরে সে... পীঠের ওপর থেকে বাঁ হাতটাকে সরিয়ে নিয়ে এসে রাখে সুঠাম একটা নগ্ন নিতম্বের ওপরে... পরশ পায় সেখানেও লোমের আধিক্যের।
পৃথার বাহুদুটো ধরে সবল হাতে টেনে নিজের শরীর থেকে আলাদা করে দেয় অর্নব... ‘না তিতির না, এ হয় না... এটা হতে পারে না... তুমি যা চাইছ সেটা কখনো, কোনদিনও হবার নয়... প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড...’ প্রায় হাঁফাতে থাকে অর্নব... নিজেই বুঝতে পারে আর একটু হলেই নিজের শরীর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে দিত... তখন কি ভাবে সামলাতো নিজেকে? কি করে পারতো এই অসীম হাতছানী উপেক্ষা করতে?
‘কেন হয় না অর্নব? হোয়াই?’ করুন চোখে মুখ তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা... এই ভাবে তাকে টেনে আলাদা করে দেওয়ার ফলে আহত হয় তার মনটা... নিথর হয়ে তার দেহের দুই পাশে ঝুলতে থাকে হাত দুটো।
‘দোহাই তিতির... একটু বোঝার চেষ্টা করো... আমি আগেও বলেছি... তুমি যে ভাবে আমাকে চাইছ, সে ভাবে তোমার কাছে যাবার ক্ষমতা আমার নেই... আমি যে দেহ-হীন... আমার কোন অস্তিত্বই যে নেই... সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?’ বোঝাবার আকুল চেষ্টা করে অর্নব। ‘কি বলবে লোককে? কি বলবে তোমার বাবা মা কে? একটু বোঝার চেষ্টা করো তিতির, আমি যে থেকেও নেই... কেউ মেনে নিতে পারবে না আমাদের মধ্যের সম্পর্ক... আর তোমার জীবনটাকে আমি এই ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে পারি না... কখনই না...’
‘আমায় ভালোবাসো না অর্নব? আমি তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য নই?’ ভেজা চোখে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘ভালোবাসলেও আমি কিছু করতে পারি না তিতির... আমি মনে প্রাণে চাইলেও অপারগ... আমি যে অদৃশ্য... নিরাকার... সেখানে তোমায় কি করে এই ভূল সম্পর্কের মধ্যে রাখি বলো... এর থেকে তুমি বরং একটু নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করো... দেখো, আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে... তোমার এত ব্রাইট ফিউচার... সেখানে আমার মত একটা লোকের সাথে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে কেন নষ্ট করবে তুমি?’ গাঢ় গলায় বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।
হটাৎ মাথাটা জ্বলে ওঠে পৃথার... শরীরটাকে ঝটকা দিয়ে অর্নবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় সে... আর এই ভাবে শরীরে ঝাকুনি লাগতে নিজের মাথাটা বোঁ করে ঘুরে যায়... টলে ধপ করে পড়ে যায় বিছানার ওপরে... প্রায় চিৎ হয় পড়ে...
ওকে এই ভাবে পড়ে যেতে ভয় পেয়ে যায় অর্নব, তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে... শরীরে অর্নবের স্পর্শ পেতে আরো যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে পৃথা... হাতের ঝটকায় কাঁধের ওপরে থাকা অদৃশ্য হাতটাকে সরিয়ে দিয়ে চোয়াল চেপে বলে ওঠে, ‘ডোন্ট... ডোন্ট টাচ্ মী... আই ডোন্ট রিকোয়াএর এনি অফ ইয়োর কনসার্ন... লীভ মী... লীভ মী অ্যালোন... বলে বিছানায় উপুড় হয়ে যায়... মুখটা গুজে রাখে বিছানার নরম তোষোকের মধ্যে... বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে সে।
আবার পৃথার পীঠের ওপরে আলতো করে হাত রাখে অর্নব... ‘প্লিজ তিতির... রাগ কোরো না... ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড... আমি যেটা বলছি...’
শেষ করতে দেয় না অর্নবের কথার... মুখটাকে ঘুরিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে শূণ্যের পানে তাকিয়ে... ‘বললাম তো... আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি অফ ইয়োর কনসার্ন... প্লিজ লীভ মী অ্যালোন...’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় বিছানায়।
‘কেন এমন ছেলেমানুষি করছ তিতির... আমি পারলে কি তোমার মত এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে ফিরিয়ে দিতাম বলো... তোমার মত একটা মেয়েকে জীবনে পাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার... কিন্তু কি করবো বলো... ইচ্ছা থাকলেও তো সব কিছু জীবনে পাওয়া সম্ভব হয় না... কিছু কিছু জিনিস কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়... ভাবো না আমার সাথে তোমার কোনদিন দেখাই হয় নি... একটা ফাঁকা ফ্ল্যাটে রয়েছ তুমি... যেখানে আমার কোন অস্তিত্বই নেই... দেখবে অনেক সহজ হয় যাবে পুরো ব্যাপারটা... আসলে...’
অর্নবের কথার ফাঁকেই ঘুরে উঠে বসে পৃথা... ওকে উঠে বসতে দেখে চুপ করে যায় অর্নব... মুখ তুলে একটুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেশ... তারপর হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে... ‘আমি জানি কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারছো না... আসলে তুমি ভাবছ আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে... তাই না... একটা বাজে, নষ্ট মেয়ে... আমি জানি দ্যাট ডে আই হ্যাড কনফেসড এভ্রিথিং টু ইয়ু, আন্ড ইয়ু নো নাউ মাই ডার্ক সাইড... আই অ্যাম আ ব্যাড গার্ল টু ইয়ু... আ স্লাট... ইস ইন্ট ইট... ইয়ু থিঙ্ক আই অ্যাম আ স্লাট... আ রটন পার্সন... দ্যাটস হোয়াই ইয়ু কান্ট লাভ মী... ইয়ু হেট মী অ্যাকচুয়ালি... আই ডোন্ট ডিসার্ভ ইয়োর লাভ...’ বলতে বলতে আরো হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে পৃথা... কাঁদতে কাঁদতে ফের গড়িয়ে পড়ে বিছানার ওপরে... বেঁকে চুড়ে পড়ে থাকে দেহটা বিছানায়... কান্না দমকে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে তার নরম কোমল শরীরটা।
পৃথার পাশে বিছানার খালি জায়গাটায় অর্নব বসে জোর করে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে... দুহাতে আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে থাকা দেহটা... ওর লোমশ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে চলে পৃথা... ‘আমি খুব খারাপ... আমি জানি আমি খুব খারাপ... আমি ভার্জিন নই... সেটা তুমি জেনে গেছ... আর তাই আমাকে আর তোমার করে নিতে পারছো না... আমি আর কক্ষনো তোমার হতে পারবো না...’
পৃথাকে শক্ত করে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলের ওপরে চুমু খায় অর্নব... তারপর খানিকটা সময় চুপ করে নিজের মুখটা ওর মাথার মধ্যে ডুবিয়ে রেখে অপেক্ষা করে কান্নাটা একটু স্তিমিত হবার... তারপর যখন বোঝে যে পৃথার কান্নাটা একটু ধরে এসেছে... তখন শান্ত গলায় বলে, ‘তুমি এত বোকা মেয়ে, তা তো জানতাম না... আমি তো ভেবেছিলাম খুব সাহসী একটা মেয়ে... কিন্তু এখন তো দেখছি একেবারে বাচ্ছা তোমার ভেতরটা... এই মানসিকতায় একটা অচেনা অজানা শহরে এলে কি করে? হু?’
আস্তে আস্তে নিজেও দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা... ওর বুকের মধ্যে মুখ রেখে ছোট্ট করে বলে, ‘জানি না...’
‘বোকা মেয়ে... আমি বলেছি তুমি বাজে, তুমি খারাপ? হু?’ মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলে অর্নব... ‘আচ্ছা আমাদের দুজনের বয়শের ডিফারেন্সটাও দেখবে না... আমার মত একটা বুড়োর সাথে নিজের জীবনটা জড়াবে? সেটা কি ঠিক?’
অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তোলে পৃথা... তুলে তাকায় ওপর পানে... ওই কান্না ভেজা চোখেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে তার... ‘তুমি বুড়ো? হি হি...’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের পেশল বুকের মধ্যে... অস্ফুট স্বরে বলে, ‘কে বলে তুমি বুড়ো?’ বলতে বলতে দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের শরীরটাকে... এবার আর বাধা দেয় না অর্নব... শরীরের ওপরে নরম দুটো মাংসপিন্ডের ছোঁয়া পেতেও।
‘বুড়ো নই? তোমার সাথে আমার বয়সের কত ফারাক তোমার খেয়াল আছে? শুধু ওই ছবিতে আমাকে দেখলেই হবে? ওটা কত বছর আগের তোলা... তারপর কতগুলো দিন... মাস... বছর পেরিয়ে গিয়েছে সেটা জানো তুমি... আজ প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় আমি... তোমার বয়সের ডবলেরও বেশি... সেখানে কি করে তোমার জীবনটাকে আমি জেনে শুনে নষ্ট করতে পারি? বলো তো?’ পৃথার চুলে বিলি কাটে অর্নব।
‘আমার বুড়ো আমার কাছে... তোমাকে কে এত মাথা ঘামাতে বলেছে শুনি?’ অর্নবের বুকের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা... লম্বা শ্বাস টেনে অর্নবের গায়ের পুরুশালী গন্ধ নেয় সে... অনেকটাই এতক্ষনে সামলে নিয়েছে সে নিজেকে... অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা রাখার পরে অভিমানটাও এখন আর নেই।
‘এটা কিন্তু তোমার পাগলামী...’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব।
‘আমার পাগলামী... তোমার তাতে কি?’ ফিসফিসায় পৃথা, অর্নবের বুকের লোমের ওপরে এঁকে দিতে থাকে ছোট ছোট চুম্বন।
নিজের বুকের ওপরে পৃথার তপ্ত ঠোঁটের ছোয়ায় শরীরটা সিরসির করে ওঠে অর্নবের। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে সে... ‘বাহ... আমাকে নিয়ে ঘটনা, আর আমার কিছু নয়? এ কেমন কথা? আর তাছাড়া তুমি আমাকেই বা কতটুকু চেন? বলো? আমার শরীরের কথা, বয়সের কথা, সব না হয় ছেড়েই দিলাম, কিন্তু কতদিন আর তুমি আমাকে চিনেছ? কিছুই না... শুধু ওই প্রণবের কিছুক্ষনের কথাতেই আমাকে চিনে গেলে? আমিও তো একটা বাজে, খারাপ লোক হতে পারি? আগে সেটা জানতে চাইবে না? একটা ছবিতে আমাকে দেখে আর প্রণবের কথা শুনেই আমাকে ভালোবেসে ফেললে? এত বোকামী কেউ করে? আমি তো তোমার ক্ষতিও করতে পারি? সেটা ভাববে না?’
অর্নবের কথা শুনে ওর থেকে ঝট করে আলাদা হয়ে বসে পৃথা... মুখ তুলে হি হি করে হাসতে শুরু করে সে... ওর এই ব্যবহারে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কি হলো... এত হাসার কি হলো এতে? আমি আবার হাসির কথা কি বললাম?’
হাসতে হাসতেই মাথা নাড়ে পৃথা, হাসি মাখা মুখে বলে, ‘হাসবো না... জোক অফ দ্য ইয়ার...’ বলে আরো হি হি করে হাসতে থাকে... হাতের পীঠ দিয়ে জমে থাকা চোখের জলটুকু মুছে নেয় সাথে সাথে।
‘আশ্চর্য তো... হেসেই চলেছে... কি ভুলটা বললাম আমি?’ ফের প্রশ্ন করে অর্নব।
এবার হাসিটা থামায় পৃথা, মুখটাকে খানিক তুলে তাকিয়ে থাকে শূণ্যের পানে, যেখানে অর্নবের অদৃশ্য দাড়ি গোঁফে ভরা মুখটা বর্তমান... ‘মশাই... আমি মেয়ে... একটা ছেলে সে কতটা ভালো আর কতটা খারাপ... সেটা আমরা অনেক আগেই বুঝে যাই... বুঝেছেন?’
‘সে তো বুঝলাম... কিন্তু তুমি আমাকে দেখেছ কোথায় যে আমার সম্বন্ধে তোমার এত বড় ধারণা হয়ে যাবে? হু? দেখেছ তো ওই ছবিটায় শুধু... তাও সেই কত বছর আগের তোলা... আর তাছাড়া এতদিনে ওই ছেলেটা একটা শয়তান লোকে পরিণত হয়ে ওঠে নি, সেটাই বা কি করে এত জোর দিয়ে বলছ?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
এবার আসতে আসতে পৃথার মুখটা সিরিয়াস হয়ে ওঠে যেন... ধীর কন্ঠে বলে, ‘যে লোকটা একটা মেয়েকে একদম ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে দিনের পর দিন পেয়েছে... পেয়েছে সেই মেয়েটিকে একেবারে অসহায় অবস্থায়, এমন কি সময় সময় মেয়েটি ছিল একেবারে নগ্ন... আবার কখন সে ছিল নেশায় ডুবে... কিন্তু সেখানে কখনও, কোন অবস্থাতেও, একবারের জন্যও তার এতটুকু ক্ষতি করার চিন্তাও করেনি, একবারের জন্যও ছুঁয়েও দেখেনি... সুযোগ নিতে কাছে আসে নি... তাকে শয়তান বলবো? তাকে... তাকে বিশ্বাস করব না?’ বলে থামে সে... গভীর দৃষ্টি ফেলে শূণ্যের পানে... তারপর মুখটাকে ফের গুঁজে দেয় অর্নবের বুকের মধ্যে... লোমশ বুকে মুখটাকে বারে বারে ঘষতে ঘষতে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমি যে সেই লোকটাকে আমার নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি গো... বোঝ না?’
অর্নবের মুখ থেকে কথা সরে না আর... কি বলবে সে? আর কি ভাবে বোঝাবে এই পাগলী মেয়েটাকে? কি ভাবে নিরস্ত্র করবে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে না ফেলতে... সেও যে অস্বীকার করতে পারে না যে নিজেও কখন মনটা দিয়ে ফেলেছে এই মিষ্টি মেয়েটাকে... কিন্তু ভেবেছিল সেটা লোকানোই থাকবে শুধু তার নিজের ভেতরে... প্রকাশ্যে আসবে না কখনও... কিন্তু এই মেয়েটা তার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে... কিছুতেই পারছে না নিজেকে সরিয়ে রাখতে মেয়েটির থেকে...
দুজনে দুজনকে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে... ঘড়ির কাঁটা সরে যায় টিকটিক শব্দ করতে করতে... দুটো শরীর যেন একে অপরের সাথে ছুঁয়ে থেকে নিশব্দ আলোড়নহীন তাদের ভালোবাসার আদানপ্রদানে ব্যস্ত হয়ে থাকে... ধীরে ধীরে অর্নবের একটা হাত উঠে এসে থামে পৃথার পীঠের ওপরে... আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে থাকা পৃথাকে... টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে আর একটু ভালো করে... পৃথাও হারিয়ে যায় অর্নববের বুকের মধ্যে অক্লেশে... পরম আবেশে।