03-03-2023, 09:02 PM
পর্ব- বারো
পড়ার টেবিলে থাকা মোবাইলটা একবার ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠলে। পড়তে বসার আগে মোবালইটা সাইলেন্ট করে রেখেছিল যেন পড়াশোনাতে ব্যাঘাত না ঘটে। তবে দশ ইন্দ্রিয়ের দেহের ঐ মোবাইলের দিকেও সজাগ হয়ে আছে সেটা আজকাল কার ছেলে মেয়েদের বলে দিতে হয় না। দুনিয়ার সবকিছু একদিকে তো এই মোবাইলটা একদিকে। জীবনের এখন অনেক কিছু না থাকলে চলে তবে মোবাইল খানা হাতের কাছে না থাকলে খুব মুশকিল। সেই মোবাইলটা খানিক শব্দ করে কেঁপে উঠতেই হাতখানা আপনা থেকেই ছুটে যায় মোবাইলের দিকে। প্রিয়তমের ক্ষুধে বার্তা এসেছে,
কি করছো??
এইতো পড়ছিলাম, তুমি?
কাল তো পরীক্ষা নেই তাই একটু রিল্যাক্স মোডে আছি। খাওয়া হইছে?
হুম কতক্ষণ আগেই খেয়েছি। এই এক সমস্যা তোমার একটু প্রেশার কম থাকলেই লেখাপড়া সিলিং এ উঠে পড়ে। কাল পরীক্ষা নেই তো কি হয়েছে পড়তে কি মানা আছে।
না ম্যাডাম, সন্ধ্যা থেকে তো পড়াতেই ছিলাম। সবসময় এমন ঝাড়ি দেও কেন বলতো? একটু মিষ্টি করেও তো বলতে পারো তাই না?
তাই বুঝি? আমি সবসময় আমার জানপাখিটারে বকাবকি করি? মিষ্টি করে কথা বলি না? সরি জান আর এমন হবে না গো।
না না তুমি ঝাড়ি দিও মাঝে মাঝে, তোমার মিষ্টি ঝাড়ি গুলো ছাড়াও তো ভালো লাগে না।
ঝাড়ি সেটাও আবার মিষ্টি?
হুমমম অনেক মিষ্টি তবে একটার চেয়ে কম?
কম! কিসের থেকে??
তোমার চুমু থেকে৷ তোমার ঠোঁটের থেকে বেশি মিষ্টি আর কিছুই নেই।
ধ্যাত বদমাশ ছেলে। আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ে....
সত্যি বলছি গো সোনা। তোমার ঠোঁট দুটো খুব মিষ্টি ঠিক যেন রসগোল্লা না না তার থেকেও বেশি মিষ্টি।
বুঝেছি বুঝেছি তুমি কিসের ধান্দায় আছো, অন্য কিছু বলার থাকলে বলো। এখন কোন ভিডিও কল করা যাবে না আগেই বলে দিলাম।
তুমি না কেমন জানি হয়ে গিয়েছো, আমি কি ভিডিও কল করতে বলেছি নাকি? বুঝেছি আমার সাথে কথা বলতে তোমার ভালো লাগছে না, থাক তুমি পড়ো পড়ে কথা হবে।
ঐ দেখো বাবু একটুতেই রাগ করে। আমি কখন বললাম যে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, তুমিও না কি সব যে ভাবো...
না না আমি রাগ করি নি।
কিন্তু আমি তো দেখতে পারছি রাগে তোমার মুখটা কালো হয়ে আছে, দাঁড়াও তোমার রাগ ভাঙিয়ে দিচ্ছি, উম্মাহহহহহহ....
আমার কিছু লাগবে না, আগে নিজ থেকে দিবে তারপর আবার আমাকেই দোষ দিবে।
না না তোমাকে কোন দোষ দেব না তো। লক্ষীসোনা আমার রাগ করে থাকে না। তুমি রাগ করলে তো আমার ভালো লাগে না। এই যে তোমাকে অনেক গুলো আদর দিচ্ছি, উম্মাহহ উম্মাহহ উম্মাহহহহ....
আমি রাগ করি নাই তো, এতো মিষ্টি পাবার পরও কেউ রাগ করে থাকতে পারে নাকি। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে গো সোনা...
মাত্রই তো দিলাম, তাতে মন ভরলো না?
একটু মিষ্টিতে কি মন ভরে! ইচ্ছে করছে আরও বেশি করে মিষ্টি পেতে। উফফ তোমাকে এখন কাছে পেলে....
কি? কাছে পেলে কি করতে?
কি করতাম না সেটা বলো! প্রথমেই তো তোমার মিষ্টি ঠোঁট দুটো চুষে সবটুকু মিষ্টি শুষে নিতাম৷
ছিঃ অসভ্য কোথাকার, এমন করে কেউ বলে!
বারে অসভ্যের কি হলো? আমার জানের ঠোঁট দুটো তো আমিই চুষবো নাকি অন্য কেউ?
অন্য কেউ মানে? শয়তান একটা। তুমিই তো চুমো খাবে তাই বলে এমন করে?
এমন করে না হলে কেমন করে সোনা? আমি তো তোমাকে আমার কোলে বসিয়ে দু হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তোমার ওষ্ঠের যত মধু সঞ্চিত আছে তা পান করে নেব।
ইশশশ! এমন করে বলে না সোনা। কেমন জানি লাগে...
কেমন লাগে? ভালোই লাগবে জান যখন আমরা দুজন দুজনাকে আয়েশ করে চুমো খাবো দেখবে ভালই লাগবে, মন চাইবে আরও বেশি করে ঠোঁট জোড়া চুষে নিতে।
তুমি না দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো কিন্তু...
আমার প্রেয়সী কে আদর করবো ভালবাসবো তাতে লজ্জা কিসের বলতো? নাকি তুমি আদর করতে দিবে না!
না করলাম কখন?
না করলেও শুনবো নাকি আমি? জানো তুমি যদি এখন কাছে থাকতে তবে প্রথমে তোমার ঠোঁটে আদরের পরশ বুলাতাম। তারপর ধীরে ধীরে তোমার ঐ টসটসে গাল দুটো হয়ে কানের লতিতে চুমো খেতাম। জিভ দিয়ে রেখা টেনে দিতাম গলা অব্দি। আমার আদরে আদরে তুমি একটু একটু করে লালচে হয়ে উঠতে সেটা দেখে তো আমি আরও পাগল হয়ে যেতাম।
ওহহ! প্লিজ এমন করে বলো না সোনা। আমার কেমন জানি লাগে..
কেমন লাগে সোনা??
জানি না জান, শরীরটা কেমন কেমন করে যেন।
এইটা কিছুই না সোনা, জাস্ট একটা অনুভূতি। শুধু কল্পনা করে দেখো বাস্তবে যদি ওমন করে আদর করতাম তবে কেমন লাগতো তোমার। অনেক ভালো লাগতো তখন, তুমিই তখন বলবে আরও আদর করতে।
ইশশ পাজি ছেলে কেমন করে বলে দেখো।
একটু পাজি না হলে তো আদর করে মজা নেই সোনা। যখন তোমার বুকের উপর আদর করবো দেখবে তখন কতো ভালো লাগবে এই পাজি ছেলেটাকে।
এই তুমি থামবে? অনেক হয়েছে এসব কথা...
এমন করে কি থামা যায়? আমার তো খুব ইচ্ছে করছে তোমার বুকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে। তোমার দুধ গুলোতে চুমো খেতে, জিভ দিয়ে তোমার দুধের বোটা দুটো ভিজিয়ে দিতাম। একটা দুধ মুখে নিয়ে চুষতাম আর অন্য টা আলতো করে আঙুল দিয়ে মুচড়ে দিতাম। উফফ দেখতে সোনা তুমি সুখে ছটফট করতে, আমার মাথাটা তোমার বুকের সাথে চেপে ধরতে সুখের আবেশে।
অনির্বাণের আবেশিত কথা জাদুতে রুমার শরীরে টান পড়তে থাকে৷ রক্তের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেহের আনাচে কানাচে। শিরা ধমনি গুলোতে রক্তের চাপ বাড়তে থাকে। উত্তেজনার পারদে গরম হয়ে উঠতে থাকে শরীর, সেটার প্রভাব কমাতেই বুঝি রুমা এক পায়ের পাতায় আরেক পা ঘসে চলেছে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সাথে ভারী হয়ে চলেছে শ্বাসের গতি। ক্রমশ অবাধ্য হয়ে উঠা মনের লাগাম টানতে চায় রুমা। সে যে মনে মনে ঠিক করেছে এমন করে স্রোতে গা ভাসালে যে তার চলবে না। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা চালায় সে। মন আর শরীর রিপুর বশে যাবার আগেই ফিরতে হবে পথে,
হুমম বুঝেছি, অনেক হয়েছে আজ এসব কল্পনার কথাবার্তা। যদি পড়া না থাকে তবে ঘুমিয়ে পড়ো সকালে উঠে পড়বে তাড়াতাড়ি। আমার কিছু পড়া বাকি আছে সেগুলো কমপ্লিট করি।
ছন্দের পতনে খানিক মনঃক্ষুণ্ন হলেও নিজেকে সামলে নেয় অনির্বাণ। সে এবার ধীর গতিতে আগাবার তালেই আছে, তবুও মনের কোনে কিঞ্চিৎ অনুযোগের সুর বেজে উঠে,
উফফ!! দিলে তো সুন্দর একটা মূহুর্তের বারোটা বাজিয়ে, তুমিও না কেমন কেমন। আচ্ছা তুমিও বেশি রাত করো না জান, গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট, কাল কথা হবে।
চুপচাপ বিছানার উপরে শুয়ে আছে মাধুরী, মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে মনের কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয়। কলেজ থেকে ফেরার পর থেকেই মুখটা ভার করে আছে। মা, ছোট বোন, ঠাম্মা কত কি জিজ্ঞেস করলো কেন মন খারাপ কি হয়েছে সেটা বলতে, কিন্তু কিছুই যে বলতে পারছে না সে। কি ই বা বলবে মাধুরী! কারণটা সে নিজেও যে ভালো করে বুঝতে পারছে না। এমন মন খারাপের যন্ত্রণা টা একটু বেশিই হয়, কাউকে কিছুই বলা যায় না। আর অন্যকেই বা কি বলবে সে যে নিজেও সবটা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারছে না। ঠিকমত চিনে না জানে না মানুষটা সম্পর্কে তবুও কেন এমন আকর্ষণ। মনের ভেতরে যে কি হয়ে চলেছে না পারছে কাউকে বুঝিয়ে বলতে না পারছে কারও সাথে শেয়ার করতে। তাই বুঝি মাধুরী এতটা নীরব আজ।
ঘরের ভেতরের সাউন্ড সিস্টেমে অল্প আওয়াজে গান বাজছে আর বিছানায় উপুর হয়ে মরার মত শুয়ে আছে মাধুরী। মাঝে মাঝে এপাশ ওপাশ করছে বলেই ওকে জীবত আছে বলা যাচ্ছে নইলে হঠাৎ করে কেউ দেখলে অন্য কিছু ভাবলে খুব একটা ভুল করবে না। দরজা টা হালকা সরিয়ে কারও একজোড়া চোখ ভেতরের পরিবেশটা একবার দেখে নিলো। পরিস্থিতি বোধগম্য হতেই আবার দরজাটা টেনে দিয়ে সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে গেল। মাধুরী কিছুটা টের পেলেও সেদিকে নজর না দিয়ে প্লে লিস্টের একটা গান বদলে আরেকটা দিয়ে দিলো।
জানালার কাছেই জলন্ত সিগারেট হাতে সুমন দাঁড়িয়ে আছে আর একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে। কিছুক্ষণ আগেই আলেয়া কে মেসেজ করেছিল কথা বলবে বলে কিন্তু আলেয়া প্রতিত্তোরে খুদেবার্তায় জানিয়েছে ওর বাবা বাসায় এসে গিয়েছে তাই এখন কথা বলা যাবে না। অন্যদিন হলে ব্যাপারটা সুমন স্বাভাবিক ভাবেই নিতো তবে আজকের পরপর ঘটনা গুলোর পর স্বাভাবিক নিতে পারছে না। সেটারই ধারাবাহিকতায় এখনকার আলেয়ার উত্তরটা কেন জানি নিছক একটা অজুহাত মনে হচ্ছে ওর কাছে।
ক্লাস শেষে সুমন অপেক্ষা করছিলো আলেয়ার জন্য, অনেক করে নিজেকে শান্ত করেছে। ভেবেছিল মিষ্টি করেই জিজ্ঞেস করবে সকালের ঘটনার বিষয়ে। সে দেখতে চায় আলেয়ার তরফ থেকে কেমন উত্তর আসে। তারপর না হয় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। সুমনের আজ শেষের দিকে কোন ক্লাস সিডিউল ছিল না তাই প্রায় ঘন্টা দেড়েক কঠিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছিল ওকে। অন্যদিন হলে সুমন কল বা মেসেজ করে আলেয়া কে জানিয়ে দিতো তবে আজ সারপ্রাইজ দিবে ভেবে সেটাও আর করে নি।
এদিকে ঘটনা ঘটে চলেছে অন্য কোন ভাবে। কোচিং ক্লাস নিতে হলে কিছু সরঞ্জাম তো দরকার তাই কৌশিক আলেয়া কে আগেই বলে রেখেছিল কলেজ ছুটি হলে আলেয়া যেন কৌশিকের সাথে একটু কেনাকাটায় হেল্প করে। তাই ওদের প্ল্যান মতই ক্লাস শেষে আলেয়া চলে গিয়েছিল স্টাফ রুমের কাছে। কৌশিক আগে থেকেই আলেয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিলো তাই তো ও আসতেই বেড়িয়ে পড়লো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তবে পার্কিং এর কাছে এসে আলেয়া খানিকটা ইতস্তত বোধ করতে থাকে, ওকে যে স্যারের সাথে বাইকে যেতে হবে। ব্যাপারটা ওর কাছে একটু অদ্ভুত লাগে, তাছাড়া কলেজের বাকিরাও কে কি ভাবে কে জানে৷ তবে কৌশিকের আদেশের কাছে আলেয়া নাদান শিশু, তাই তো চুপটি করে স্যারের পেছনে বসে পড়ে তবে খানিকটা ফাঁকা রেখেই। বাইকটা চলতে শুরু করতেই আলেয়া একবার আশেপাশে তাকাতেই দেখলো শত শত উৎসুক চোখ ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ নাহ! ওর আর সাহসে কুলাতে পারে নি তাই তো দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে দিয়ে চুপটি করে বসে রইলো। তবে বাকিদের কি তাতে কিছু আসা যায়? ওরা তো অবাক চোখে কৌশিকের বাইক আর তাতে নতুন আরোহী টাকে নিয়ে নানা রকমের গল্পে মশগুল হয়ে পড়েছে।
বেচারা সুমন গেটের কাছেই অপেক্ষা করছিলো তবে আলেয়া ওকে খেয়াল না করলেও সুমন যে বোকার মত সবটাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। আরও একজন দূর থেকেই কৌশিক আর আলেয়া কে একসাথেই বাইকে যেতে দেখেছে তবে একটু বেশিই চুপচাপ হয়ে। শান্ত প্রকৃতি নাকি ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়!
সুমনের সিগারেট টা জ্বলতে জ্বলতে শেষ প্রান্তে কখন যে চলে এসেছে সেটা খেয়াল করে নি। সিগারেটের গনগনে আগুনটা আঙুলটা পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হয়, তবে ততোক্ষণে ভাবনার রণে ভঙ্গ দিয়ে তড়িৎ গতিতে সিগারেটের ফিল্টার টা জানালার বাইরে ছুড়ে দেয় সুমন। আঙুলের মাথা টা লালচে হয়ে গিয়ে বেশ জ্বালা করছে, সেটাতে ফুঁ দিতে দিতে জানালা থেকে সড়ে আসে।
হঠাৎ করেই মিউজিক সিস্টেম টা থেমে যেতেই চোখ মেলে তাকায় মাধুরী, ওর ছোট বোন লিলি দাঁড়িয়ে আছে সামনে। এতোক্ষণ উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল বোনকে দেখেই বিরক্তি ভরা চোখমুখে চিৎ হয়ে শুয়ে জিজ্ঞেস করে,
কিরে তুই এখানে কি করিস? হাতে কি?
দুধভর্তি গ্লাস টা টেবিলের উপর রেখে বলে উঠে,
তার আগে তুই বল তো দিদি কি হয়েছে তোর? সেই বিকেল থেকে ওমন গুমড়া মুখে ঘরে বসে আছিস। আমাদের সাথে গল্প করতে গেলি না, রাতে খেতে এলি না। কিছু হয়েছে কি??
মাধুরী আগে থেকেই জানতো লিলি যখন তখন আসতে পারে। কারণ ওর যখন মন ভালো থাকে না তখন বাড়ির অন্য কারও হুকুম ওর উপরে চলে না তবে লিলির দিদিগিড়ির সাথে ও পেরে উঠে না,
কি হবে আবার কিছুই হয় নি, এমনিই ভালো লাগছিলো না তাই খাই নি। একটু ঘুমোলেই ঠিক হয়ে যাবে, তুই যা আমি এখন ঘুমাবো।
সে তো কখন থেকেই ঘুমাচ্ছিস দেখতেই পারছি। কিছু না হলে তো ভালোই, তবে আরও ভালো হবে যদি চুপচাপ দুধটুকু খেয়ে নিস। নইলে কিন্তু বাবাকে কল করতে হবে (হাতে থাকা মোবাইলটা সামনে রাখে)
ধুর আমার দুধ খেতে ভালো লাগে না তো।
তাহলে আমি কিন্তু কল করছি (মোবাইলটা হাতে তুলে নিয়ে কল করার ভান করে)
ধ্যাত! ভালো লাগে না, গ্লাস টা দে খেয়ে নিচ্ছি (শুয়া থেকে উঠে বসে মাধুরী)
মাধুরীর দিকে দুধের গ্লাস টা এগিয়ে দিতেই ওর মুখের অভিব্যক্তি টা বদলে যায়। নাকমুখ কুঁচিয়ে দুধটা খেয়ে নেয় এক নিঃশ্বাসে।
এই তো ভালো মেয়ে, তা এবার বল তো কি হয়েছে রে দিদি! (মুখটা অদ্ভুত ভঙ্গিতে বাঁকিয়ে) বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছো বুঝি!
মাধুরী চোখ রাঙানি দিয়ে,
তোকে বলেছে! বেশি পাকনামি করছিস দেখি আজকাল। আর আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হলেও তোকে বলবো কেন বলতো?
মিষ্টি হাসি দিয়ে,
বারে! আমি কিন্তু আর ছোট নেই বুঝলি। আমারও এখন বয়ফ্রেন্ড আছে মনে রাখিস, আমিও সব বুঝি।
তোর আবার বয়ফ্রেন্ড! দাঁড়া বাবাকে আমি সব বলবো ফোন করে। তা তোর বয়ফ্রেন্ড টা কে?
বাবাকে বললেও আমাকে কিছুই বলবে না বুঝলি। আর ওদিন না বললাম তোকে এর মাঝেই ভুলো গেলি, ঐ যে সামনের বাসার ছেলেটা ও তো আমার বয়ফ্রেন্ড। জানিস ওতো তোদের কলেজে পড়ায়, উফফ যখন বাইকটা নিয়ে রাস্তা দিয়ে যায় তখন কি হ্যান্ডসাম যে লাগে তুই না দেখলে বুঝতে পারবি না।
মাধুরী অবাক হয়ে লিলির কথা শুনে,
কি নাম রে তোর বয়ফ্রেন্ডের?
তুই কিন্তু নাম ধরে ডাকিস না তোর কিন্তু স্যার হয়। ওর নাম কৌশিক।
মাধুরীর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে, মুহূর্তের মাঝেই সারাদিনের মন খারাপের ছুটি হয়ে গেল এই বুঝি। অবশেষে একটা প্রশ্নের উত্তর মিললো তবে,
তাই নাকি এতো হ্যান্ডসাম তোর বয়ফ্রেন্ড। তা একদিন দেখাস তো, আমিও তো দেখি কোন হনুমান তোকে ওর গার্লফ্রেন্ড বানালো।
একদম ভালো হবে না দিদি বলে দিলাম, ওকে কিছু বললে আমার সহ্য হবে না কিন্তু। আর তুই ওকে দেখিস নি এখনো? ওদিন তো মাকে বললো তোদের ডিপার্টমেন্টেই ক্লাস নেয়। তবুও যখন বলছিস তবে কাল তোকে নিয়ে যাবো নে সাথে করে।
তোর বুঝি খুব আসা যাওয়া ও বাড়িতে!
আরে না না! কাল থেকে ওখানে কোচিং ক্লাস করবো তাই যাবো। তখন দেখে নিস ও কতো হ্যান্ডসাম, শুধু হা করে তাকিয়ে থাকবি। এখন যাই তুইও মন খারাপ করে বসে না থেকে ভালো মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড়। আর বেশি খারাপ লাগলে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে সবটা মিটিয়ে নে (কথাটা বলেই মাধুরীর গাল দুটো টেনে দেয়)
বেশি পাকামো হয়ে যাচ্ছে, দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে মজা (মাধুরী হাত বাড়াতেই লিলি দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়)
মনটা কিছুটা হলেও ভালো হয়েছে মাধুরীর, যাক সামনাসামনি দেখা হবার একটা সুযোগ তো পেল। সেই সাথে ছবিটা একে দেবার জন্য ধন্যবাদ টাও দিতে পারবে।
অনেকক্ষণ ধরে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না। অদ্ভুত এক অস্থিরতায় কাবু হয়ে গিয়েছে পুরো শরীর। একবার ডান কাতে কিছুক্ষণ থাকছে তো একটু পর বা কাতে ঘুমানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মী। তবে ঘুম যেন আজ অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গিয়েছে। বারবার সন্ধ্যার ঘটনাটা মনে পড়তেই পুরো শরীর শিউরে উঠছে। যতই চাচ্ছে সবকিছু থেকে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে সামলে নিতে ততই যেন আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে সেসবের মাঝেই। বাড়ির ফেরার পথে কত কি ভেবে রেখেছিল কিন্তু বাড়ি আসার পর ঐ সন্ধ্যের মূহুর্তে সব যে আবার এলোমেলো লাগছে লক্ষ্মীর কাছে। চঞ্চল মনে বেড়ি পড়ানো কঠিন কাজ তার মাঝে দেহেও যদি জোয়ার আসে তবে তো অবস্থা বেগতিক হওয়া ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে। কতটা বিজ্ঞান সম্মত জানা নেই তবে পিরিয়ডের সময় হয়ে এলে শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়৷ তাই হয়তো লক্ষ্মীর পরিস্থিতি সামাল দিতে একটু বেশিই হিমসিম খেতে হচ্ছে।
বাকি দিনগুলির মতই সন্ধ্যায় তুলসী তলায় প্রদীপ দেখিয়ে ঘরের টুকটাক কাজ করছিলো। পাশেই মাটিতে ছালা বিছিয়ে রঙিন বইয়ের পাতায় থাকা বাহারি ছবিতে মজে আছে পচুই। মালিকের বাড়ি থেকে বই গুলো লক্ষ্মী কে দিয়ে দিয়েছে, ওদের আর বইগুলো দরকার নেই। ছেলেকে সামনের বছর কলেজে ভর্তি করবে ভাবছে তাই লক্ষ্মীও বই গুলো নিয়ে এসেছে। হঠাৎ করেই রাস্তার দিকে গাছটার এখানে পাতা মাড়ানোর শব্দ হলো। লক্ষ্মীর গা টা ছমছমিয়ে উঠে। নিখিল কে অনেক আগেই না করে দিয়েছিল যেন সন্ধ্যে বেলা ওদের এখানে না আসে। লোকে দেখলে কত কি বলবে। নিখিল যেহেতু আসার কথা না তাই ভয়টা একটু বেশিই লাগছে। ছোট্ট টর্চ টা জ্বালিয়ে আশপাশটা একবার দেখে নেয়। না কেউ তো নেই, মনের ভুল হবে হয়তো। আবারও হাতের কাজে মন দেয় লক্ষ্মী।
কিছুক্ষণ পড়েই চোখের সামনে একটা ছায়া পড়তেই লক্ষ্মী চমকে উঠে তবে লম্বা ছায়াটা ওর চেনা চেনা লাগে। পিছন ফিরে নিখিল কে দেখেই না চাইতেও ঠোঁটের কোনে চিলতে হাসি ফুটে উঠে। নিখিলের একটা হাত ওর পেছনে লুকানো। লক্ষ্মী চোখের ইশারায় জানতে চায় পেছনে কি লুকিয়ে রেখেছে। নিখিল মুচকি হেসে লুকানো হাতটা বের করে আনে, ঠোঙা ভর্তি গরমাগরম বাদাম এগিয়ে দেয় লক্ষ্মীর দিকে। নারী চরিত্র বড় অদ্ভুত কখনো কখনো পাহাড় সম ঐশ্বর্য দিয়েও মন পাওয়া যায় না আবার কখনো কখনো দশ টাকার বাদাম কিংবা পাঁচ টাকার আইসক্রিমের বদলে দুনিয়া উজাড় ভালোবাসায় ভাসায়। বাদামের ঠোঙ্গা টা দেখতেই চোখ জোড়া জ্বল জ্বল করে উঠে লক্ষ্মীর, খানিক আগের মনের দোলাচল ভুলে গিয়ে যান্ত্রিক পুতুলের মত হাত বাড়িয়ে দেয়। আর তখনি সেই মূহুর্তের সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক নিয়মের অনুসরণ করে। বাদামের ঠোঙ্গা বিনিময়ের শর্তে নিখিলের খসখসে পুরুষালী আঙুল গুলো ছুঁয়ে যায় লক্ষ্মী কোমল নরম চাঁপা কলার কলির মত আঙুল গুলো। এতো শুধু নিছক একটা স্পর্শ নয় যেন বরফ ঠান্ডা মেঘে মেঘে ঘর্ষনে বজ্রের ঝলকানি। শরীর জুড়ে শীতল রক্তের উষ্ণতা ছড়িয়ে দেবার সে কি তৎপরতা। শ্বাসের গতিতে বুকের ভেতর যেন হাঁপড় টানছে কেউ। বুকের বাম পাশে হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি টা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শরীরের ধমনি শিরা উপশিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অদ্ভুত এক শিহরণ। ওমন করে হালকা একটা স্পর্শের জাদুতে কতটা সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে দুজনের মাঝে সে খেয়াল কে রাখে। একটুখানি স্পর্শে কত কি ঘটে যায় দুটো মন দুটো দেহের মাঝে সেটা শুধু তারাই জানে যারা চাতকের মতো সেই মায়াভরা স্পর্শের সন্ধানে অহর্নিশি ব্যাকুল থাকে।
নিখিল হয়তো ভেবেই এসেছিল খানিকটা এগিয়ে যাবার তাই তো আঙুল গুলো সর্পের মত একে বেঁকে এগিয়ে গেল কব্জির দিকে আরো কিছুটা ছোঁয়া বিলিয়ে দেবার অজুহাতে। তবে বাস্তবতায় থেকে সুখপ্রদ সময় উপভোগ করা বড়ই যে কঠিন। লক্ষ্মী তো আজন্ম কলঙ্কিত হবার ভয়ে ভীত থাকা এক নারী তাই বুঝি পুরুষ স্পর্শের মোহ ভঙ্গ হয় নিখিলের অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা অনুভব করেই। ওর দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায় সঙ্গে সঙ্গেই, হাতটা ছাড়িয়ে আনে এক ঝটকায়। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দৃষ্টি নামায় মাটির দিকে, লাজুকলতার মত নুইয়ে পড়া লক্ষ্মীকে দেখে ফিক করে হেসে দেয় নিখিল। লক্ষ্মী আর ব্যতিব্যস্ত করতে চায় না সে, কিছুটা সময় দিতে চায়। তাই ওখানে আর দেরি না করে বিদায় নিয়ে চলে যায় নিজ ঠিকানায়।
লক্ষ্মী এখনো সেই সন্ধ্যের সময়টাতেই পড়ে আছে, ভেতরের অস্থিরতার ভাবটা কোন মতেই পাশ কাটাতে পারছে না। যতবার চোখ বুজে ঘুমাতে চেষ্টা করে ততোবারই সেই স্পর্শের মূহুর্তটাই ঘুরে ফিরে সামনে চলে আসে। তাজা হয়ে ধরা দেয় কোমল মনের কোনায়। রাত বাড়ছে সেই সাথে চারিদিকের নীরবতাও, লক্ষ্মী পাশ ফিরে নিজের ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভাবতে থাকে। পচুইকে নিজের দিকে টেনে এনে বুকের সাথে মিশিয়ে দেয় ওর ছোট্ট কপালে স্নেহের চুমো খায়, এবার ঘুমোতেই হবে....