02-03-2023, 04:59 PM
৭।
আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। তাতেই একজনের রাগি গলায় কথা বলতে শুনলাম। যতটুকু বুঝলাম এটা মনিষার বাবার গলা। দরজার এক পাশের ফাকা দিয়ে ভেতরে তাকালাম। দেখলাম মনিষা আর তার বাবা মুখোমুখি কথা বলছে।
মনিষার বাবাঃ তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। আগের বার তুমি আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়েছো।
মনিষাঃ বাবা রেহান...
মনিষার বাবাঃ রেহান রেহান রেহান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ওই ছেলেকে বাচিয়ে ফিরে পাঠানো। ওকে যদি সে বারই মেরে ফেলতাম কোন কথাই হতো না। কোন দিন আমার সামনে পরলে ওটাই হবে ওই ছেলের শেষ দিন।
মনিষাঃ বাবা।
মনিষার বাবাঃ কোন কথা নয় বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। আর কোন কথা না ঘরে যাও রেস্ট করো।
মনিষা হেটে একটা ঘরে চলে গেল।
গ্রামের ঘর। এক সিরিয়ালে কয়েকটা ঘর।
কি করি এখন এ বাড়িতে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু। না মরাই ইচ্ছা আমার নাই মনিষাকে নিয়ে বেচে থাকার ইচ্ছে আছে। কি করা যায় কিভাবে এই বাড়িতে প্রবেশ করা যায়। হটাৎ মাথায় একটা আইডিয়া এলো। এই বাড়ির পেছনে যাওয়া যায়। মনিষা যে ঘরে গেছে সে ঘরের একটা জানালা পেলেই কাজ হবে।
বাড়ির পেছনে চলে গেলাম। বাড়ির পেছনে দেখলাম বিশাল দিঘি প্রচুর জঙ্গলে ভরা। দিনের বেলা সবগুলো রুমের জানালা খোলা। খুব সাবধানে প্রতিটা জানালা পার হলাম। বিয়ে বাড়ি প্রতিটা ঘর ভর্তি মানুষ।
অবশেষে মনিষা যে ঘরে সেই ঘরের জানালা পেলাম। ভেবেছিলাম মনিষাকে একাই পাবো। কিন্তু সে ঘরে প্রায় আরও ৫-৬ জন মহিলা ছিলো।
জানালার পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। ভয় একটাই কেউ দেখে ফেললে সমস্যা। প্রায় ১ ঘন্টা পর সুযোগ পেলাম সবাই রুম থেকে বের হয়েছে। মনিষা ঠিক জানালার দিকে পিঠ করে বসে আছে।
মনিষা মনিষা,, এই মনিষা।
মনিষা এবার ফিরে তাকালো।
রেহান তুমি।
মনিষা দ্রুত জানালার দিকে এলো। আমি জানালার গ্রিল ধরে ছিলাম মনিষা আমার হাত ছুয়ে ধরলো।
রেহান আমাকে নিয়ে চলো প্লিজ।
যাবো মনিষা তুমি টেনশন করো না। আমি তোমাকে অবশ্যই নিয়ে যাবো।
তুমি অপেক্ষা করো সুযোগ বুঝেই তোমাকে নিয়ে যাবো। আমি আমার ছোট মোবাইলটা মনিষাকে দিলাম। বললাম তোমাকে ম্যাসেজে জানিয়ে দেব কি ভাবে কখন। তুমি রেডি থেকো।
রেহান,,,,, মনিষা কাদছে।
আমার বুকটা ছেদ করে উঠলে। আমি মনিষার চোখের পানি মুছে দিলাম।
এমন সময় মনিষা মনিষা করতে করতে একজন রুমে ডুকলো।
আমি দ্রুত সরে গেলাম।
কি রে জানালায় কি করছিস।
মনিষাঃ কেন বাইরে তাকিয়ে ছিলাম।
ও ও।
আমি ওই বাসার থেকে প্রায় হাফ কিলো দুরে চলে এলাম।
রাস্তার একটা কালভার্টের উপর বসলাম।
কি করা যায় ভাবছি। আমার মাথায় কোন চিন্তা আসছে না। কি করবো। ওই বাড়িতে এত লোক এত লোকের মাঝে কি ভাবে সম্ভব মনিষাকে বের করে আনা।
প্রায় ১ ঘন্টা আমি সেই কালভার্টের উপর বসে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু কোন উপায় খুজে পেলাম না।
মেঝাঝ গরম হয়ে যাচ্ছে। একটা সিগানেট ধরিয়ে টানছি।
এমন সময় ২ টো ৭ - ৮ বছরের বাচ্চা। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে যাচ্ছি।
জানিস আজকে বড় বাড়িতে বিয়ে।
কই আমি তো কোন বোমার আওয়াজ পেলাম না।
আরে গাধা সেটা তাদের ব্যপার বোমা না ফাটালে কি আর বিয়ে হয় না।
বাচ্চা দুটো বাজি ( ফটকা) ফাটানোর কথা বলছিলো। আইডিয়া।
হুমম এই উপায়টা কাজে লাগানো সম্ভব।
আমার এখন মোটামুটি অনেক বাজির প্রয়োজন।
পুরো গ্রামের কয়েকটি দোকান খুজেও পেলাম না।
শেষে সিদ্ধেশ্বরী উপজেলা বাজারে বাজি পেলাম। এমন বাজি নিয়েছি যেটার একটা তে আগুন দিলে সবগুলো ফাটবে।
দুপুর ২ টা।প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়ে একটা হোটেলে ডুকে পড়লাম খেতে।আমি খাবার অর্ডার করলাম। খাবার আসলো খেতে লাগলাম।
আমার পাশের টেবিলে ২ টা ছেলে। কতই আর বয়স হবে ১৭-১৮ হতে পারে। দুজনের ধান্না কি ভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। তারা নানা রকম প্লান করছে আবার নিজেরাই সেটা ভাঙছে। আমি শুনে যা বুঝলাম দুজনের মধ্যে একজন বিদ্যুৎ এর কাজ করতে পারে।তাদের টাকা ইনকামের কোন উপায়ই সাক্সেস হচ্ছে না। এ দুজনের কথা শুনে আরও বুঝলাম টাকা দিলে এরা মানুষ খিন করতেও দ্বিধা করবে না।
আমার মাথায় হটাৎ বুদ্ধি এলো। কেননা এই দুইটারে আমার প্লানে কোন জায়গায় কাজে লাগাই। আমি হাত ধুয়ে ওদের টেবিলে বসলাম। ওরা আমার দিকে তাকাতেই পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে দিলাম।
ছেলে দুটোর সরাসরি প্রশ্ন কি করতে হবে। বুঝলাম এ দুইটারে দিয়ে কাজ হবে।
বললাম তেমন কিছু না খালি বাজি ফাটাতে হবে।
ওরা তাকিয়ে আমার হাতে বাজির প্যাকেট টা দেখলো। বললো এটা কোন কাজ হলো দেন বাজি ফাটায় দিচ্ছি।
আমি বললাম এখানে না। ফাটাতে হবে অন্য জায়গায়।
ওরা রাজি। কেবল বাজে বিকেল ৩ টা। এই মিশন কম্পিলিট করার সময় নির্ধারন করেছি রাত ৯ টায়।
কার মনিষার বিয়ের লগ্ন আবার রাত ১১টা ৫০ মিনিট। তাই তার ঘন্টা দুইয়েক আগে কাজটা কম্পিলিট করতেই হবে।
মনিষাকে ম্যাসেজ করলাম সব ঠিকঠাক আছে তো।
প্রায় ১০ মিনিট পর রিপ্লাই এলো হ্যা সব ঠিক আছে। মনিষাকে ম্যাসেজে পুরো প্লান জানালাম ও রেডি থাকতে বললো।
সময় যেন যাচ্ছেই না। সন্ধ্যা নেমে এলো ছেলে দুটোকে সবকিছু আবার বুঝিয়ে দিলাম।
রাত ৮ টা ৩০। আমরা ৩ জন সেই বাড়ির আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে লাগলাম। বাড়ি ভর্তি বিয়ের মানুষ কেউ যাচ্ছে কেউ আসতেছে।
ঠিক রাত নটা আমি গেটের সমানে গিয়ে দাড়ালাম।
দুজনের মধ্যে একজনের কাজ হলো বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়া।
২য় জনের কাজ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাজিতে আগুন লাগিয়ে বাড়ির উঠোন বরাবর ঢিল দেয়া।
বিকেল বেলা দুজনে এসে দেখে গেছে বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কোন দিকে দিয়ে গেছে। কপাল ভালো বিদ্যুৎ এর মিটার বাড়ির পেছনের ১ম ঘরের মাত্র ১ মানুষ উচ্চতায় লাগানো আছে। তাই সেটা কাটা কোন ব্যপারই না।
আর দুজনে মিলে মোটামুটি সবগুলে বাজি একত্রে আটকিয়েছে। যাতে একবারে সব ফাটানো যায়।
বাড়ির ওঠোন ভর্তি মানুষ। মনিষাকে বলে রেখেছি বিদ্যুৎ চলে গেলে ও যেন ঠিক ১ম ঘরের বারান্দার একদম কিনারায় চলে আসে। কারন এই জায়গাটা দরজার একদম কাছে। সব্বোচ্চ ১০ ফুট হতে পারে।আরও বলে দিয়েছি হাতের মোবাইলের লাইট টা যেন অনঅফ করে এতে আমার বুঝতে সুবিধা হবে।
রাত নটা বাজতেই বিদ্যুৎ বন্ধ হলো। পুরো অন্ধকারে আমি দরজা দিয়ে ভেতরে ডুকলাম। দৌড়ে বারান্দার একদম সাইডে গিয়ে দাড়াতেই। বাড়ির প্রায় মাঝ বরাবর বাজি টা পরে ফাটতে শুরু করলো। লোকজন দিকবিদিকশুন্য হয়ে এ দিক ও দিক ছুটছে৷ আমি দেখলাম একজন লাইট জ্বালাতে নেভাতে নেভাতে বারান্দার এই দিকেই আসছে বুঝলাম মনিষা। মনিষার হাত ধরে টান দিয়ে দরজার দিকে ছুটলাম। এতক্ষণে বাজি ফাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ঠিক সেই সময় মহিলারা ঘর থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো মনিষা ঘরে নেই। এতক্ষনে হয়তো কারো আর বুঝতে বাকি নেই যে মনিষা কোথায়। দুজনে গেট দিয়ে বের হলাম।
বাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। সবাই বের হও তাড়াতাড়ি খোজ সবাই এখানেই আছে। ওরা যেন গ্রাম থেকে যেন বের না হতে পারে। হারামজাদারে আজকে জিন্দা কবর দেব।
রাস্তা ধরে দৌড় দিতে চাইলাম। মনিষা আমার হাত ধরে টান দিয়ে বাড়ির পেছন দিকে ছুটলো। বাড়ির পেছন দিকে গেলাম এখানে ঝোপের অভাব নেই। অন্ধকারের মধ্যেই একটা ঝোপে দুজনে ডুকে পরলাম। কোন কিছুর ভয় যেন আমাদের আজ দমাতে পারবে না।
পুরো এলাকা জুড়ে চিৎকার। বুঝলাম মনিষার বুদ্ধি ঠিক ছিলো। রাস্তা দিয়ে পালালে এতক্ষনে ধরা পরে যেতাম। এখন কেউ হয়তো স্বপ্নে ও চিন্তা করতে পারবে না আমারা কোথায় আছি। পরো গ্রামে মানুষ ছড়িয়ে পরেছে।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবত আমরা এই ঝোপে লুকিয়ে আছি। একজন আরেক জনের সাথে লেপ্টে আছি। আমাদের মাঝে কোন কথা হচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে দুজন দুজনার হৃদয়ের ধুকধুক শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
বাড়ির ভেতর থেকে পুরুষের কন্ঠে শোনা যাচ্ছে কেউ একজন বলতেছে।
কেউ একজন দেখেছে আমাদের গ্রামের বাইরে যেতে তাই একন সবাই গ্রামের বাইরে যাচ্ছে আর বাসস্ট্যান্ডে আর রাস্তায় প্রতিটা গাড়ি যেন চেক করা হয় সেই জন্য তারা দ্রুত রওনা দিচ্ছে।
আমি আর মনিষা একটু হাসলাম সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। মানুষ তাহলে এ ভাবেই গুজব ছড়ায় আরকি।
মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সব একদম নিশ্চুপ।
প্রায় বিয়ে বাড়ির সকল পুরুষ গ্রামের বাইরে চলে গেছে।
আমরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে বের হলাম। পুরো অন্ধকার রাত। সমস্যা আমরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে গ্রামের বাইরে যতে পারবো না।
বাড়ির পেছন থেকে বের হতেই সামনে একজন মহিলা। আমি মনিষাকে নিয়ো দৌড় দিতে চাইলাম। কিন্তু মনিষা দৌড়ালো না।
মহিলা আসলে আর কেউ না মনিষার মা।
আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন তিনি।।
বললেন আমার মেয়ের খেয়াল রেখ বাবা। গতবার তোমাদের দুজনকে আমি আলাদা করে দিয়েছিলাম। তাই এবার আমি আবার তোমাদের কে একত্র করে দিলাম।
আমি মনিষার দিকে তাকালাম।
তুমি যখন আমার সাথে জানালা দিয়ে কথা বলছিলে মা সব শুনেছে। আর মা না সাহায্য করলে বের হওয়া সম্ভব ছিলো না।
আমি বললাম মনিষা তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।
মনিষার মা বললেন তোমরা রাস্তা দিয়ে গেলে ধরা পড়বে। তোমরা এক কাজ করো। তিনি একটা দিক দেখিয়ে দিয়ে বললেন তোমরা এই দিকে যাও। একটা নদী পাবে। নদীর পার দিয়ে হাটতে থাকবে অন্য গ্রামে পৌছে গেলেই আর ভয় নেই।
আমি আর মনিষা তাই করলাম। প্রায় ১৫ মিনিট হাটার পর একটা নদী পেলাম। আমরা দুজনে নদীর পার ধরে হাটছি তো হাটছি আশে পাশে কোন জন মানব নেই।
ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা ৫০। আমরা এতদুরে চলে এসেছি যে তারা আমাদের আর খুজে পাবে না।।
মনিষা বসে পড়লো। আমিও বসলাম। সামনে নদী পেছনে ফসলের ক্ষেত। আকাশে পূর্ণিমার চাদ। যার আলোও মনিষাকে একদম সোনালি পরীর মত লাগছে।
মনে আছে মনিষা আমি তোমার সকল ইচ্ছা পূরনের কথা বলে ছিলাম।
হুমম।
বল তাহলে। এখন তো আমরা মুক্ত। আর কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
মনিষা আমার কাধে মাথা রেখে বলতে লাগলো তার ইচ্ছার কথা গুলো।
এ অনুভুতি পৃথিবীর সকল অনুভুতিকে হার মানাবে। আজ থেকে ১৬ বছর আগে দেখা সেই মেয়েটি। যাকে আমি বলতে পারিনি কতটা ভালো বাসি আমি তাকে। এখনও তাকে বলিনি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমার কাধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে আমাকে করেছে ধন্য।
তবুও এখনো তাকে বলা হয় নি সে যে
আমার প্রথম প্রেম
আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। তাতেই একজনের রাগি গলায় কথা বলতে শুনলাম। যতটুকু বুঝলাম এটা মনিষার বাবার গলা। দরজার এক পাশের ফাকা দিয়ে ভেতরে তাকালাম। দেখলাম মনিষা আর তার বাবা মুখোমুখি কথা বলছে।
মনিষার বাবাঃ তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। আগের বার তুমি আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়েছো।
মনিষাঃ বাবা রেহান...
মনিষার বাবাঃ রেহান রেহান রেহান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ওই ছেলেকে বাচিয়ে ফিরে পাঠানো। ওকে যদি সে বারই মেরে ফেলতাম কোন কথাই হতো না। কোন দিন আমার সামনে পরলে ওটাই হবে ওই ছেলের শেষ দিন।
মনিষাঃ বাবা।
মনিষার বাবাঃ কোন কথা নয় বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। আর কোন কথা না ঘরে যাও রেস্ট করো।
মনিষা হেটে একটা ঘরে চলে গেল।
গ্রামের ঘর। এক সিরিয়ালে কয়েকটা ঘর।
কি করি এখন এ বাড়িতে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু। না মরাই ইচ্ছা আমার নাই মনিষাকে নিয়ে বেচে থাকার ইচ্ছে আছে। কি করা যায় কিভাবে এই বাড়িতে প্রবেশ করা যায়। হটাৎ মাথায় একটা আইডিয়া এলো। এই বাড়ির পেছনে যাওয়া যায়। মনিষা যে ঘরে গেছে সে ঘরের একটা জানালা পেলেই কাজ হবে।
বাড়ির পেছনে চলে গেলাম। বাড়ির পেছনে দেখলাম বিশাল দিঘি প্রচুর জঙ্গলে ভরা। দিনের বেলা সবগুলো রুমের জানালা খোলা। খুব সাবধানে প্রতিটা জানালা পার হলাম। বিয়ে বাড়ি প্রতিটা ঘর ভর্তি মানুষ।
অবশেষে মনিষা যে ঘরে সেই ঘরের জানালা পেলাম। ভেবেছিলাম মনিষাকে একাই পাবো। কিন্তু সে ঘরে প্রায় আরও ৫-৬ জন মহিলা ছিলো।
জানালার পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। ভয় একটাই কেউ দেখে ফেললে সমস্যা। প্রায় ১ ঘন্টা পর সুযোগ পেলাম সবাই রুম থেকে বের হয়েছে। মনিষা ঠিক জানালার দিকে পিঠ করে বসে আছে।
মনিষা মনিষা,, এই মনিষা।
মনিষা এবার ফিরে তাকালো।
রেহান তুমি।
মনিষা দ্রুত জানালার দিকে এলো। আমি জানালার গ্রিল ধরে ছিলাম মনিষা আমার হাত ছুয়ে ধরলো।
রেহান আমাকে নিয়ে চলো প্লিজ।
যাবো মনিষা তুমি টেনশন করো না। আমি তোমাকে অবশ্যই নিয়ে যাবো।
তুমি অপেক্ষা করো সুযোগ বুঝেই তোমাকে নিয়ে যাবো। আমি আমার ছোট মোবাইলটা মনিষাকে দিলাম। বললাম তোমাকে ম্যাসেজে জানিয়ে দেব কি ভাবে কখন। তুমি রেডি থেকো।
রেহান,,,,, মনিষা কাদছে।
আমার বুকটা ছেদ করে উঠলে। আমি মনিষার চোখের পানি মুছে দিলাম।
এমন সময় মনিষা মনিষা করতে করতে একজন রুমে ডুকলো।
আমি দ্রুত সরে গেলাম।
কি রে জানালায় কি করছিস।
মনিষাঃ কেন বাইরে তাকিয়ে ছিলাম।
ও ও।
আমি ওই বাসার থেকে প্রায় হাফ কিলো দুরে চলে এলাম।
রাস্তার একটা কালভার্টের উপর বসলাম।
কি করা যায় ভাবছি। আমার মাথায় কোন চিন্তা আসছে না। কি করবো। ওই বাড়িতে এত লোক এত লোকের মাঝে কি ভাবে সম্ভব মনিষাকে বের করে আনা।
প্রায় ১ ঘন্টা আমি সেই কালভার্টের উপর বসে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু কোন উপায় খুজে পেলাম না।
মেঝাঝ গরম হয়ে যাচ্ছে। একটা সিগানেট ধরিয়ে টানছি।
এমন সময় ২ টো ৭ - ৮ বছরের বাচ্চা। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে যাচ্ছি।
জানিস আজকে বড় বাড়িতে বিয়ে।
কই আমি তো কোন বোমার আওয়াজ পেলাম না।
আরে গাধা সেটা তাদের ব্যপার বোমা না ফাটালে কি আর বিয়ে হয় না।
বাচ্চা দুটো বাজি ( ফটকা) ফাটানোর কথা বলছিলো। আইডিয়া।
হুমম এই উপায়টা কাজে লাগানো সম্ভব।
আমার এখন মোটামুটি অনেক বাজির প্রয়োজন।
পুরো গ্রামের কয়েকটি দোকান খুজেও পেলাম না।
শেষে সিদ্ধেশ্বরী উপজেলা বাজারে বাজি পেলাম। এমন বাজি নিয়েছি যেটার একটা তে আগুন দিলে সবগুলো ফাটবে।
দুপুর ২ টা।প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়ে একটা হোটেলে ডুকে পড়লাম খেতে।আমি খাবার অর্ডার করলাম। খাবার আসলো খেতে লাগলাম।
আমার পাশের টেবিলে ২ টা ছেলে। কতই আর বয়স হবে ১৭-১৮ হতে পারে। দুজনের ধান্না কি ভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। তারা নানা রকম প্লান করছে আবার নিজেরাই সেটা ভাঙছে। আমি শুনে যা বুঝলাম দুজনের মধ্যে একজন বিদ্যুৎ এর কাজ করতে পারে।তাদের টাকা ইনকামের কোন উপায়ই সাক্সেস হচ্ছে না। এ দুজনের কথা শুনে আরও বুঝলাম টাকা দিলে এরা মানুষ খিন করতেও দ্বিধা করবে না।
আমার মাথায় হটাৎ বুদ্ধি এলো। কেননা এই দুইটারে আমার প্লানে কোন জায়গায় কাজে লাগাই। আমি হাত ধুয়ে ওদের টেবিলে বসলাম। ওরা আমার দিকে তাকাতেই পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে দিলাম।
ছেলে দুটোর সরাসরি প্রশ্ন কি করতে হবে। বুঝলাম এ দুইটারে দিয়ে কাজ হবে।
বললাম তেমন কিছু না খালি বাজি ফাটাতে হবে।
ওরা তাকিয়ে আমার হাতে বাজির প্যাকেট টা দেখলো। বললো এটা কোন কাজ হলো দেন বাজি ফাটায় দিচ্ছি।
আমি বললাম এখানে না। ফাটাতে হবে অন্য জায়গায়।
ওরা রাজি। কেবল বাজে বিকেল ৩ টা। এই মিশন কম্পিলিট করার সময় নির্ধারন করেছি রাত ৯ টায়।
কার মনিষার বিয়ের লগ্ন আবার রাত ১১টা ৫০ মিনিট। তাই তার ঘন্টা দুইয়েক আগে কাজটা কম্পিলিট করতেই হবে।
মনিষাকে ম্যাসেজ করলাম সব ঠিকঠাক আছে তো।
প্রায় ১০ মিনিট পর রিপ্লাই এলো হ্যা সব ঠিক আছে। মনিষাকে ম্যাসেজে পুরো প্লান জানালাম ও রেডি থাকতে বললো।
সময় যেন যাচ্ছেই না। সন্ধ্যা নেমে এলো ছেলে দুটোকে সবকিছু আবার বুঝিয়ে দিলাম।
রাত ৮ টা ৩০। আমরা ৩ জন সেই বাড়ির আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে লাগলাম। বাড়ি ভর্তি বিয়ের মানুষ কেউ যাচ্ছে কেউ আসতেছে।
ঠিক রাত নটা আমি গেটের সমানে গিয়ে দাড়ালাম।
দুজনের মধ্যে একজনের কাজ হলো বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়া।
২য় জনের কাজ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাজিতে আগুন লাগিয়ে বাড়ির উঠোন বরাবর ঢিল দেয়া।
বিকেল বেলা দুজনে এসে দেখে গেছে বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কোন দিকে দিয়ে গেছে। কপাল ভালো বিদ্যুৎ এর মিটার বাড়ির পেছনের ১ম ঘরের মাত্র ১ মানুষ উচ্চতায় লাগানো আছে। তাই সেটা কাটা কোন ব্যপারই না।
আর দুজনে মিলে মোটামুটি সবগুলে বাজি একত্রে আটকিয়েছে। যাতে একবারে সব ফাটানো যায়।
বাড়ির ওঠোন ভর্তি মানুষ। মনিষাকে বলে রেখেছি বিদ্যুৎ চলে গেলে ও যেন ঠিক ১ম ঘরের বারান্দার একদম কিনারায় চলে আসে। কারন এই জায়গাটা দরজার একদম কাছে। সব্বোচ্চ ১০ ফুট হতে পারে।আরও বলে দিয়েছি হাতের মোবাইলের লাইট টা যেন অনঅফ করে এতে আমার বুঝতে সুবিধা হবে।
রাত নটা বাজতেই বিদ্যুৎ বন্ধ হলো। পুরো অন্ধকারে আমি দরজা দিয়ে ভেতরে ডুকলাম। দৌড়ে বারান্দার একদম সাইডে গিয়ে দাড়াতেই। বাড়ির প্রায় মাঝ বরাবর বাজি টা পরে ফাটতে শুরু করলো। লোকজন দিকবিদিকশুন্য হয়ে এ দিক ও দিক ছুটছে৷ আমি দেখলাম একজন লাইট জ্বালাতে নেভাতে নেভাতে বারান্দার এই দিকেই আসছে বুঝলাম মনিষা। মনিষার হাত ধরে টান দিয়ে দরজার দিকে ছুটলাম। এতক্ষণে বাজি ফাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ঠিক সেই সময় মহিলারা ঘর থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো মনিষা ঘরে নেই। এতক্ষনে হয়তো কারো আর বুঝতে বাকি নেই যে মনিষা কোথায়। দুজনে গেট দিয়ে বের হলাম।
বাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। সবাই বের হও তাড়াতাড়ি খোজ সবাই এখানেই আছে। ওরা যেন গ্রাম থেকে যেন বের না হতে পারে। হারামজাদারে আজকে জিন্দা কবর দেব।
রাস্তা ধরে দৌড় দিতে চাইলাম। মনিষা আমার হাত ধরে টান দিয়ে বাড়ির পেছন দিকে ছুটলো। বাড়ির পেছন দিকে গেলাম এখানে ঝোপের অভাব নেই। অন্ধকারের মধ্যেই একটা ঝোপে দুজনে ডুকে পরলাম। কোন কিছুর ভয় যেন আমাদের আজ দমাতে পারবে না।
পুরো এলাকা জুড়ে চিৎকার। বুঝলাম মনিষার বুদ্ধি ঠিক ছিলো। রাস্তা দিয়ে পালালে এতক্ষনে ধরা পরে যেতাম। এখন কেউ হয়তো স্বপ্নে ও চিন্তা করতে পারবে না আমারা কোথায় আছি। পরো গ্রামে মানুষ ছড়িয়ে পরেছে।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবত আমরা এই ঝোপে লুকিয়ে আছি। একজন আরেক জনের সাথে লেপ্টে আছি। আমাদের মাঝে কোন কথা হচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে দুজন দুজনার হৃদয়ের ধুকধুক শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
বাড়ির ভেতর থেকে পুরুষের কন্ঠে শোনা যাচ্ছে কেউ একজন বলতেছে।
কেউ একজন দেখেছে আমাদের গ্রামের বাইরে যেতে তাই একন সবাই গ্রামের বাইরে যাচ্ছে আর বাসস্ট্যান্ডে আর রাস্তায় প্রতিটা গাড়ি যেন চেক করা হয় সেই জন্য তারা দ্রুত রওনা দিচ্ছে।
আমি আর মনিষা একটু হাসলাম সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। মানুষ তাহলে এ ভাবেই গুজব ছড়ায় আরকি।
মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সব একদম নিশ্চুপ।
প্রায় বিয়ে বাড়ির সকল পুরুষ গ্রামের বাইরে চলে গেছে।
আমরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে বের হলাম। পুরো অন্ধকার রাত। সমস্যা আমরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে গ্রামের বাইরে যতে পারবো না।
বাড়ির পেছন থেকে বের হতেই সামনে একজন মহিলা। আমি মনিষাকে নিয়ো দৌড় দিতে চাইলাম। কিন্তু মনিষা দৌড়ালো না।
মহিলা আসলে আর কেউ না মনিষার মা।
আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন তিনি।।
বললেন আমার মেয়ের খেয়াল রেখ বাবা। গতবার তোমাদের দুজনকে আমি আলাদা করে দিয়েছিলাম। তাই এবার আমি আবার তোমাদের কে একত্র করে দিলাম।
আমি মনিষার দিকে তাকালাম।
তুমি যখন আমার সাথে জানালা দিয়ে কথা বলছিলে মা সব শুনেছে। আর মা না সাহায্য করলে বের হওয়া সম্ভব ছিলো না।
আমি বললাম মনিষা তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।
মনিষার মা বললেন তোমরা রাস্তা দিয়ে গেলে ধরা পড়বে। তোমরা এক কাজ করো। তিনি একটা দিক দেখিয়ে দিয়ে বললেন তোমরা এই দিকে যাও। একটা নদী পাবে। নদীর পার দিয়ে হাটতে থাকবে অন্য গ্রামে পৌছে গেলেই আর ভয় নেই।
আমি আর মনিষা তাই করলাম। প্রায় ১৫ মিনিট হাটার পর একটা নদী পেলাম। আমরা দুজনে নদীর পার ধরে হাটছি তো হাটছি আশে পাশে কোন জন মানব নেই।
ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা ৫০। আমরা এতদুরে চলে এসেছি যে তারা আমাদের আর খুজে পাবে না।।
মনিষা বসে পড়লো। আমিও বসলাম। সামনে নদী পেছনে ফসলের ক্ষেত। আকাশে পূর্ণিমার চাদ। যার আলোও মনিষাকে একদম সোনালি পরীর মত লাগছে।
মনে আছে মনিষা আমি তোমার সকল ইচ্ছা পূরনের কথা বলে ছিলাম।
হুমম।
বল তাহলে। এখন তো আমরা মুক্ত। আর কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
মনিষা আমার কাধে মাথা রেখে বলতে লাগলো তার ইচ্ছার কথা গুলো।
এ অনুভুতি পৃথিবীর সকল অনুভুতিকে হার মানাবে। আজ থেকে ১৬ বছর আগে দেখা সেই মেয়েটি। যাকে আমি বলতে পারিনি কতটা ভালো বাসি আমি তাকে। এখনও তাকে বলিনি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমার কাধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে আমাকে করেছে ধন্য।
তবুও এখনো তাকে বলা হয় নি সে যে
আমার প্রথম প্রেম