02-03-2023, 10:05 AM
*পাপের বাপ কে ?*
এক শহরে এক ব্রাহ্মন বাস করতেন। তাঁর একটি সন্তান ছিল। বিদ্যা শিক্ষার জন্য তাকে গুরুকুলে পাঠানো হল। কিছু বছর শিক্ষা সম্পূর্ণ করে সে বাড়ি ফিরে এল। এসে তাঁর পিতা কে বলল- পিতা আমি সকল শাস্ত্র তথা বেদ ,পুরান , ভাগবত , ন্যায়, স্মৃতি সব অধ্যায়ন করে এসেছি। কোনও কিছুই আর বাকি নেই। আপনি আমায় পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- সে ঠিক আছে , তো ওসব নয় পরে জিজ্ঞাসা করে দেখা যাবে, তুমি এত শিখে এসেছ যখন তখন তোমায় একটা প্রশ্ন করি তার যদি উত্তর দিতে পারো তবে জানবো তোমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বলল- বেশ আপনি জিজ্ঞাসা করুন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- আচ্ছা পাপ কি জানো তো? পুত্র বললে- হ্যাঁ। তখন ব্রাহ্মন বললেন- বলতো পাপের বাপ কে ? পাপের বাপ!! শুনে তো ব্রাহ্মন পুত্র অনেক চিন্তা করলেন , কিন্ত কিছুতেই উত্তর খুঁজে পেলেন না। তখন সে তার লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন আর পিতা কে বলে গেলেন- আমি যাচ্ছি এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে , যত দিন না এর উত্তর পাই ততদিন আমি আমি এই গৃহে ফিরবো না।
এই বলে ব্রাহ্মন পুত্র দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো আর সকল কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো – পাপের বাপ কে? কিন্ত কারোর কাছেই এর সদুত্তর পেলো না। একদিন ঘুরতে ঘুরতে এক গ্রামে উপস্থিত হল। দেখে সামনেই এক সুন্দর বাড়ি। সারা বাড়ি সুন্দর করে মাটি দিয়ে নিকানো। সামনে তুলসী মঞ্চ। এদিকে ব্রাহ্মন পুত্রের খুব তেষ্টা পেয়েছে , তাই ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই এক সুশীলা রমণী বেরিয়ে এসে বললেন- হে ঠাকুর আমার গৃহে আপনার পদস্পর্শে ধন্য হল। বলুন আপনার কি সেবা করতে পারি? তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- আমি খুব তৃষ্ণার্ত আমায় একটু জল দিতে পারেন? রমণী বললেন- সে কি ঠাকুর ! সামান্য জল , সে আর দিতে পারব না। দাঁড়ান আমি এখুনি এনে দিচ্ছি। বলে ভিতর থেকে পরিস্কার নির্মল এক পাত্র ঠাণ্ডা জল এনে দিল ব্রাহ্মন পুত্র কে। পরম তৃপ্তি তে সেই জল পান করে পাত্র টি ওই রমণীর হাতে দিয়ে ব্রাহ্মন পুত্র জিজ্ঞাসা করলেন- আচ্ছা , এই গৃহের মালিক কে? সেই ব্রাহ্মন বৈষ্ণব কে দেখছি না তো? কারণ ব্রাহ্মন পুত্র ভেবেছে যে , যে বাড়িতে তুলসী মঞ্চ আছে সেই বাড়ি নিশ্চয়ই কোনও বৈষ্ণবের বাড়ি। যাই হোক ব্রাহ্মন পুত্র এর প্রশ্নের উত্তরে ওই রমণী বললেন- ঠাকুর , এ কোনও ব্রাহ্মন এর গৃহ নয় এ হল বেশ্যার গৃহ। আমি এই গৃহের মালিক। এই শুনে ব্রাহ্মন পুত্র তিন লাফ খেয়ে উঠে বলল- ছিঃ ছিঃ! হায় রাম! এ কি করলাম আমি? পাপের বাপ খুঁজতে এসে নিজেই পাপ করে বসলাম! বেশ্যার হাতে জল খেয়ে আমি এ কি পাপ করলাম!! হায় ভগবান আমায় এখন গঙ্গা স্নান ও প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে! ওরে ও হতভাগী কুলটা! তোর এত টুকু বুক কাঁপল না আমাকে জল দিতে? আমি তোকে অভিশাপ দেব। সঙ্গে সঙ্গ রমণী বললেন- ঠাকুর আমার একটি নিবেদন আছে। পাপ তো যা হবার হয়েছেই। বলি কি আমি আপনার ভোজনের ব্যবস্থা করি , আপনি দুটো খেয়ে যান।আপনি না হয় একটার বদলে দুটো ডুব দেবেন গঙ্গায় আপনার পাপ ধুয়ে যাবে। আর আপনার ভোজন দক্ষিণা হিসাবে আমি আপনাকে পাঁচটি স্বর্ণ মুদ্রা দেব। ব্রাহ্মন পুত্র মনে মনে ভাবলেন , তাই তো পাপ যা হবার হয়েইছে যদি ভোজন করে একেবারে প্রায়শ্চিত্ত করি ক্ষতি কি উল্টে দক্ষিনাও মিলবে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- ঠিক আছে চাল , ডাল ইত্যাদি এনে দাও আমি স্বপাকে ভোজন করবো। তখন আবার রমণী বললেন- ঠাকুর একটা নিবেদন আছে , যদি আমি স্বহস্তে আপনাকে রান্না করে দিই। আপনি ভোজন করবেন। আমি না হয় ২০ স্বর্ণ মুদ্রা আপনাকে দেব দক্ষিণা স্বরূপ। আপনি না হয় গঙ্গায় তিনটে ডুব দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে নেবেন। ব্রাহ্মন পুত্র অনেক ভেবে সম্মত হলেন। তখন ওই রমণী কিছুক্ষণ পর ভোজন প্রস্তুত করে ব্রাহ্মন পুত্র এর সামনে রাখলেন।ব্রাহ্মন পুত্র আচমন করে খেতে যাবেন অমনি ওই রমণী বলে উঠলেন- ঠাকুর ! আমার একটি নিবেদন ছিল। আমার খুব সাধ আমি আপনাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিই। অবশ্য এর জন্য আপনাকে ৫০ স্বর্ণ মুদ্রা আমি দক্ষিণা স্বরূপ দেব। আর আপনি একেবারে গঙ্গায় গিয়ে পাঁচ ডুব লাগাবেন আর আপনার সব পাপ ও ধুয়ে যাবে। তা ব্রাহ্মন পুত্র চিন্তা করে রাজি হলেন। তখন ওই রমণী এসে নিচু হয়ে মুখে খাবার তুলে দেবার পরিবর্তে সজোরে এক চড় মারলেন। তখন ব্রাহ্মন পুত্র ক্রোধে আসন ছেড়ে উঠে বললেন- কুলটা !! তোর এত সাহস! তুই আমার গালে চড় মারিস!! তোর সমুহ সর্বনাশ হবে। তখন ওই রমণী বললেন- ঠাকুর!তুমি যে আমার হাতে খেতে চাইলে , এক কুলটার হাতে খেতে চাইলে কেন বলতে পারো? ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- তোমার ভক্তি ভাবে আমি রাজি হয়েছিলাম। রমণী বললেন- ভুল। তুমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে দেখ!! কোনও ভাব , প্রেম নয় তুমি স্বর্ণ মুদ্রার লোভে রাজি হয়েছিলে। শোন ঠাকুর তুমি দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে পাপের বাপ কে জানতে? শোন পাপের বাপ হল লোভ। পৃথিবীতে যত পাপ সংঘটিত হয় সব লোভের দ্বারা পরিচালিত হয়ে। তুমি ব্রাহ্মন পুত্র তবুও তোমার লোভ তোমাকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। লোভ কে জয় করো তাহলে পাপ ও দূরীভূত হবে। জেনে রাখবে পাপের বাপ হল লোভ। ব্রাহ্মন পুত্র অধোবদনে সব শুনে আস্তে আস্তে ওই গৃহ পরিত্যাগ করে নিজ গৃহের দিকে যাত্রা করলেন ।
(সংগৃহীত.. )
এক শহরে এক ব্রাহ্মন বাস করতেন। তাঁর একটি সন্তান ছিল। বিদ্যা শিক্ষার জন্য তাকে গুরুকুলে পাঠানো হল। কিছু বছর শিক্ষা সম্পূর্ণ করে সে বাড়ি ফিরে এল। এসে তাঁর পিতা কে বলল- পিতা আমি সকল শাস্ত্র তথা বেদ ,পুরান , ভাগবত , ন্যায়, স্মৃতি সব অধ্যায়ন করে এসেছি। কোনও কিছুই আর বাকি নেই। আপনি আমায় পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- সে ঠিক আছে , তো ওসব নয় পরে জিজ্ঞাসা করে দেখা যাবে, তুমি এত শিখে এসেছ যখন তখন তোমায় একটা প্রশ্ন করি তার যদি উত্তর দিতে পারো তবে জানবো তোমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বলল- বেশ আপনি জিজ্ঞাসা করুন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- আচ্ছা পাপ কি জানো তো? পুত্র বললে- হ্যাঁ। তখন ব্রাহ্মন বললেন- বলতো পাপের বাপ কে ? পাপের বাপ!! শুনে তো ব্রাহ্মন পুত্র অনেক চিন্তা করলেন , কিন্ত কিছুতেই উত্তর খুঁজে পেলেন না। তখন সে তার লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন আর পিতা কে বলে গেলেন- আমি যাচ্ছি এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে , যত দিন না এর উত্তর পাই ততদিন আমি আমি এই গৃহে ফিরবো না।
এই বলে ব্রাহ্মন পুত্র দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো আর সকল কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো – পাপের বাপ কে? কিন্ত কারোর কাছেই এর সদুত্তর পেলো না। একদিন ঘুরতে ঘুরতে এক গ্রামে উপস্থিত হল। দেখে সামনেই এক সুন্দর বাড়ি। সারা বাড়ি সুন্দর করে মাটি দিয়ে নিকানো। সামনে তুলসী মঞ্চ। এদিকে ব্রাহ্মন পুত্রের খুব তেষ্টা পেয়েছে , তাই ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই এক সুশীলা রমণী বেরিয়ে এসে বললেন- হে ঠাকুর আমার গৃহে আপনার পদস্পর্শে ধন্য হল। বলুন আপনার কি সেবা করতে পারি? তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- আমি খুব তৃষ্ণার্ত আমায় একটু জল দিতে পারেন? রমণী বললেন- সে কি ঠাকুর ! সামান্য জল , সে আর দিতে পারব না। দাঁড়ান আমি এখুনি এনে দিচ্ছি। বলে ভিতর থেকে পরিস্কার নির্মল এক পাত্র ঠাণ্ডা জল এনে দিল ব্রাহ্মন পুত্র কে। পরম তৃপ্তি তে সেই জল পান করে পাত্র টি ওই রমণীর হাতে দিয়ে ব্রাহ্মন পুত্র জিজ্ঞাসা করলেন- আচ্ছা , এই গৃহের মালিক কে? সেই ব্রাহ্মন বৈষ্ণব কে দেখছি না তো? কারণ ব্রাহ্মন পুত্র ভেবেছে যে , যে বাড়িতে তুলসী মঞ্চ আছে সেই বাড়ি নিশ্চয়ই কোনও বৈষ্ণবের বাড়ি। যাই হোক ব্রাহ্মন পুত্র এর প্রশ্নের উত্তরে ওই রমণী বললেন- ঠাকুর , এ কোনও ব্রাহ্মন এর গৃহ নয় এ হল বেশ্যার গৃহ। আমি এই গৃহের মালিক। এই শুনে ব্রাহ্মন পুত্র তিন লাফ খেয়ে উঠে বলল- ছিঃ ছিঃ! হায় রাম! এ কি করলাম আমি? পাপের বাপ খুঁজতে এসে নিজেই পাপ করে বসলাম! বেশ্যার হাতে জল খেয়ে আমি এ কি পাপ করলাম!! হায় ভগবান আমায় এখন গঙ্গা স্নান ও প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে! ওরে ও হতভাগী কুলটা! তোর এত টুকু বুক কাঁপল না আমাকে জল দিতে? আমি তোকে অভিশাপ দেব। সঙ্গে সঙ্গ রমণী বললেন- ঠাকুর আমার একটি নিবেদন আছে। পাপ তো যা হবার হয়েছেই। বলি কি আমি আপনার ভোজনের ব্যবস্থা করি , আপনি দুটো খেয়ে যান।আপনি না হয় একটার বদলে দুটো ডুব দেবেন গঙ্গায় আপনার পাপ ধুয়ে যাবে। আর আপনার ভোজন দক্ষিণা হিসাবে আমি আপনাকে পাঁচটি স্বর্ণ মুদ্রা দেব। ব্রাহ্মন পুত্র মনে মনে ভাবলেন , তাই তো পাপ যা হবার হয়েইছে যদি ভোজন করে একেবারে প্রায়শ্চিত্ত করি ক্ষতি কি উল্টে দক্ষিনাও মিলবে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- ঠিক আছে চাল , ডাল ইত্যাদি এনে দাও আমি স্বপাকে ভোজন করবো। তখন আবার রমণী বললেন- ঠাকুর একটা নিবেদন আছে , যদি আমি স্বহস্তে আপনাকে রান্না করে দিই। আপনি ভোজন করবেন। আমি না হয় ২০ স্বর্ণ মুদ্রা আপনাকে দেব দক্ষিণা স্বরূপ। আপনি না হয় গঙ্গায় তিনটে ডুব দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে নেবেন। ব্রাহ্মন পুত্র অনেক ভেবে সম্মত হলেন। তখন ওই রমণী কিছুক্ষণ পর ভোজন প্রস্তুত করে ব্রাহ্মন পুত্র এর সামনে রাখলেন।ব্রাহ্মন পুত্র আচমন করে খেতে যাবেন অমনি ওই রমণী বলে উঠলেন- ঠাকুর ! আমার একটি নিবেদন ছিল। আমার খুব সাধ আমি আপনাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিই। অবশ্য এর জন্য আপনাকে ৫০ স্বর্ণ মুদ্রা আমি দক্ষিণা স্বরূপ দেব। আর আপনি একেবারে গঙ্গায় গিয়ে পাঁচ ডুব লাগাবেন আর আপনার সব পাপ ও ধুয়ে যাবে। তা ব্রাহ্মন পুত্র চিন্তা করে রাজি হলেন। তখন ওই রমণী এসে নিচু হয়ে মুখে খাবার তুলে দেবার পরিবর্তে সজোরে এক চড় মারলেন। তখন ব্রাহ্মন পুত্র ক্রোধে আসন ছেড়ে উঠে বললেন- কুলটা !! তোর এত সাহস! তুই আমার গালে চড় মারিস!! তোর সমুহ সর্বনাশ হবে। তখন ওই রমণী বললেন- ঠাকুর!তুমি যে আমার হাতে খেতে চাইলে , এক কুলটার হাতে খেতে চাইলে কেন বলতে পারো? ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- তোমার ভক্তি ভাবে আমি রাজি হয়েছিলাম। রমণী বললেন- ভুল। তুমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে দেখ!! কোনও ভাব , প্রেম নয় তুমি স্বর্ণ মুদ্রার লোভে রাজি হয়েছিলে। শোন ঠাকুর তুমি দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে পাপের বাপ কে জানতে? শোন পাপের বাপ হল লোভ। পৃথিবীতে যত পাপ সংঘটিত হয় সব লোভের দ্বারা পরিচালিত হয়ে। তুমি ব্রাহ্মন পুত্র তবুও তোমার লোভ তোমাকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। লোভ কে জয় করো তাহলে পাপ ও দূরীভূত হবে। জেনে রাখবে পাপের বাপ হল লোভ। ব্রাহ্মন পুত্র অধোবদনে সব শুনে আস্তে আস্তে ওই গৃহ পরিত্যাগ করে নিজ গৃহের দিকে যাত্রা করলেন ।
(সংগৃহীত.. )