01-03-2023, 08:33 PM
(This post was last modified: 01-03-2023, 09:03 PM by Bumba_1. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। বনকাপাশীর জঙ্গলের দিক থেকে শিয়ালদের কনসার্ট শুরু হবে একটু পরে। যজ্ঞিডুমুরের ঝোপে জোনাকিরা ভীড় জমাচ্ছে একটু একটু করে। একটা বিশাল জলঢোঁড়া একাদশীর চাঁদের আলো পড়া পুকুরের আয়না চুরমার করে হিলিবিলি তুলে অদৃশ্য হলো। খানিক পরে জলের ধার থেকে কলকল করে ব্যাঙেদের ডাক শুরু হলো। একটা মৃদু জোলো হাওয়া বইছে পুকুরের ওপারের ওই মাঠ থেকে। ভৈরবীর মাঠ .. বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সচরাচর কেউ যায়না ওইদিকে।
ভৈরবীর ওই মাঠে আড়াআড়ি একটা পায়ে চলা পথ। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশি। প্রকৃতির এই রূপ বহুদিন ধরে দেখছে সে। কিন্তু প্রতিরাতে একবার বোসেদের পুরনো বাগানবাড়ির এই পুকুরঘাটে তার এসে বসা চাইই চাই। তার বরাবর বড়ো ভালো লাগে এই নিরালাটুকু। খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর একসময় সে একটা সুর ধরে শিস্ দিতে আরম্ভ করলো। কর্কশ আওয়াজ তুলে একটা রাতচরা পাখী উড়ে গেলো। কোনো একসময় সুন্দর বাঁশি বাজাত সে। এখন বাঁশি নেই, কিন্তু সুরের শিক্ষাটুকু ভোলেনি। শ্রোতা কেউ সে'রাতে তার সামনে বসে থাকলে তারিফ করে অবশ্যই এ'কথা বলতো তাকে।
হঠাৎ তার সুরসাধনায় ছেদ পড়লো। 'খসখস' একটা শব্দ কানে এলো তার। মাঠের পথ ধরে কেউ কি আসছে? নাকি কোনো জন্তুর চলাচলের শব্দ? প্রিয় সুরে বাধা পড়ায় বেশ বিরক্ত হয় নিশি। নাহ্ কোনো জন্তু নয়, একটা লোকই বটে! বেশ ফিটফাট সাহেবি পোশাকের একজন ভদ্রলোক। হনহন করে মাঠের মাঝের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে, সম্ভবত খেয়াঘাটে যাবে। মহেশগঞ্জের ঘাটে শেষ খেয়া হয়তো যায়নি এখনও। সেখানে যাওয়ার অন্য পথ থাকলেও কখনো-সখনো কেউ কেউ সময় বাঁচাতে এ পথে আসে বটে, আর তখনই ...।
যাক সে কথা, একটু আলাপ করা যাক, লোকটার সাথে। তারপর না হয়...! "বাবু মশাই, কোথা থেকে আসছেন?" প্রশ্নটা করেই নিশি মনে মনে ভাবলো .. ইসসস্ এমন ঘাড়ের কাছে গিয়ে ফোঁস করে কথাগুলো বলা বোধহয় উচিৎ হয়নি তার। লোকটা মনে হয় ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছে।
সাহেবি পোশাক পড়া ভদ্রলোকটি ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিশির দিকে আড়চোখে দেখে নিয়ে সে বললো "আসছি পরেশডাঙা থেকে, একটা বিয়েবাড়ি ছিলো, কেন তোমার কি দরকার? আর তাছাড়া একটা মেয়ে হয়ে এত রাতে একলা এখানে তুমি কি করছো? কি নাম তোমার?" নিশি খেয়াল করলো লোকটার কাঁধে একটি চামড়ার ব্যাগ আর সে এই কথা বলেই ব্যাগটা যেন চেপে ধরে। বয়স খুব বেশি নয় লোকটার, সম্ভবত পঁয়ত্রিশের আশপাশে হবে।
নিশি মুচকি হেসে বললো "না বাবু, এমনিই জিজ্ঞাসা করা। আসলে কাছেপিঠেই থাকি তো, আর ইদানিং সুখ দুঃখের কথা বলার লোক খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। তাই এট্টু আলাপ জমাতে এলাম আর কি! ভয়ডর আমার বরাবরই কম। আমার নাম নিশি .. বিরক্ত হলেন বাবু?"
এবার যেন তমালের ভয়টা একটু কমে। ঠিকই তো, এমন একটা সময় এসেছে যে মানুষ মানুষের সাথে কথা বলে কোথায়? যে যার নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। আর তাছাড়া মেয়েটা যদি কিছু সময় তার সাথে থাকে একলা এই মাঠের পথে, হাঁটবার একঘেয়েমিটাও কাটবে। কিন্তু এই ঘন অন্ধকারে মেয়েটির মুখ এবং তার পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে তমাল কিছুই ঠাওর করতে পারলো না। শুধুমাত্র অনুভব করলো তার অস্তিত্ব।
আবার বলে ওঠে নিশি "এই বাবু আপনাদের শহরের লোকেদের এক দোষ, গাঁ-গঞ্জের মানুষকে খুব অল্পেই চোরচোট্টা ধরে নেন .. ঠিক বললাম না বাবু?"
"না না, তা কেনো .." কথাটা বলে বটে তমাল, তবে মেয়েটি খুব কাছে এলেই কিরকম যেন একটা অস্বস্তি হতে থাকে তার শরীর আর মনের ভিতর।
বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করেই কথা ঘোরাতে গলা খাঁকারি দিয়ে নিশি বলে ওঠে, "তা বাবুর মাঠের পথে আসা হলো কেনো? মহেশগঞ্জের পথ তো ইদিকে নয়!"
হাঁটতে হাঁটতেই কথা হচ্ছিলো দু'জনের। কথাটা এড়িয়ে তমাল এবার সরাসরি জিজ্ঞাসা করলো "কিন্তু তুমি তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না! এত রাতে তুমি এখানে কি করছো?"
এই প্রশ্নে, নিশি খিলখিল করে হেসে বললো "আর কি করবো বাবু ? ঘুরে ঘুরে বেড়াই আর এই পুকুরধারে বসে থাকি। এমন সোন্দর চাঁদের আলো বড়ো ভালো লাগে আমার.."
একবার চাঁদের আলোয় ঘড়ি দেখে নিয়ে তমাল বললো "বেশ অদ্ভুত তো! গ্রাম হোক বা শহর এই যুগে এখনো কিছু মানুষের এইসব পাগলামো আছে বুঝি! ভালো .. ভালো .. ঘাটের পথ আর কতদূর বলতে পারো?"
নিশি অন্ধকারে আবার মুচকি হেসে বললো "এই তো বাবু এসে পড়লো বলে .." তমাল তার হাসিটা দেখতে পায় নি, কিন্তু হঠাৎ করেই আগত একটা ঠাণ্ডা বাতাসে কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
প্রায় আধঘণ্টা হাঁটছে তমাল। কিন্তু ঘাটের তো দেখাই নেই! কি আশ্চর্য ! লম্বা পথ হেঁটেই চলেছে, দু'পাশে শুধু মাঠ আর মাঠ। দূরে শুধু একটা বনের আউটলাইন চোখে পড়লো। তবে যে সুধন্য বলেছিল এই শর্টকাট পথে নাকি পনেরো মিনিটেই পৌঁছে যাবে ঘাটে! ভীষণ রাগ হচ্ছিলো তার সহকর্মীটির ওপর। কি কুক্ষণেই যে ওর কথায় এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুরে আসতে গেলো! সুধন্যর কথারও কোনো দাম নেই, বলেছিলো ফেরবার জন্য ঘাট অবধি একটা ব্যবস্থা করবে, কিন্তু ..।
"হ্যাঁ বাবু, ব্যবস্থা তো একটা হবেই .." চমকে ওঠে তমাল কথাটা শুনে। নিজের ভাবনায় সে এতটাই মশগুল ছিলো যে পাশের মানুষটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো! কিন্তু তার মনের কথা এই মেয়েটি পড়তে পারলো কিভাবে! "কি বললে তুমি, এইমাত্র?" জিজ্ঞাসা করলো তমাল।
উত্তরে কানে এলো "দেখে পথ হাঁটেন বাবু, সামনে একটা চন্দ্রবোড়া রাস্তা পার হচ্ছে .." তমালের খেয়াল হলো আকাশের চাঁদ কখন যেন একগোছা মেঘের মধ্যে সেঁটে গিয়েছে .. সে থমকে দাঁড়ালো, "এত অন্ধকারে তুমি দেখতে পাচ্ছ কি করে? এমনকি সাপের জাতটাও বলে দিলে?"
"আজ্ঞে .. আজ্ঞে বাবুমশাই, আমার চোখ জ্বলে কিনা .. হেহেহে .." কথাটা বলেই আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো নিশি। মেয়েটির এহেন উত্তরে বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো তমালের। মনের অস্বস্তিটা এবার আশঙ্কায় পরিণত হলো তার। ঘন অন্ধকারে সেই অর্থে কিছুই দেখতে না পেলেও তার আপাতভাবে মনে হওয়া গ্রামের একজন অত্যন্ত সাধারণ গৃহবধূ অথবা মেয়ের সাথে এতটা রাস্তা সে একসঙ্গে আসছে বটে, অথচ এতক্ষণ মেয়েটির পায়ের কোনো আওয়াজ পায়নি সে। তখনি চকিতে মেয়েটির মুখের দিকে তাকালো তমাল।
★★★★
দুর্ভেদ্য অন্ধকারের বুকে আলোর উৎস বলতে শুধু মধ্য গগনের একাদশীর চাঁদ আর অগণিত নক্ষত্ররাজি। মাঝে মাঝে জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতো বড় বড় গাছের সারির অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে। চার পাশে শুধু অনন্ত অন্ধকার আর মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা। কখনো কখনো রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে হায়নার হাসি আর আকাশ কাঁপিয়ে নেকড়ের ডাক ভেসে আসছে। এরকম এক মৃত্যুপুরীর হাত থেকে বাঁচার জন্য তমাল নিজের সমস্ত জীবনী শক্তিকে একত্রিত করে ছুটে চলেছে। তার একটাই লক্ষ্য .. এই ভৈরবীর মাঠ অতিক্রম করে কোনো রকমে খেয়াঘাটে গিয়ে পৌঁছানো। কিন্তু পথের যেন আর শেষ নেই। তার মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে সে শুধু ছুটে চলেছে। এক সময় তমালের মনে হলো তার চলার গতি যেন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু থেমে থাকলে তো হবে না, তাকে এখান থেকে বেরোতেই হবে। সে যখন আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে ছুটে যেতে চাইছে তখন কোথা থেকে যেন একদল বাদুড় তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। তমাল তখন ভয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে গিয়ে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলো মাটিতে। মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে থাকা অবস্থাতে মাথা তুলে দেখলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একজন।
ধীরে ধীরে চোখ সয়ে এলো সেই ঘন অন্ধকারে। এক অনির্বচনীয় দ্যুতি ছড়িয়ে তার চোখের সামনে ক্রমশ প্রকাশিত হলো তার সামনের দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিটি। আলো-আঁধারির খেলায় তমাল স্পষ্ট দেখতে পেলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অসাধারণ সুন্দরী শ্যামবর্ণা সম্পূর্ণ উলঙ্গিনী যুবতী। যে সুক্ষ্মদন্তিনী, গভীর তার নিম্ননাভি, সরু কোমর, সুগঠিত তার দুই উরু, গুরু নিতম্বের অধিকারিনী, তার ভারী স্তনযুগল ঈষৎ নিম্নগামী, সামান্য ফাঁক করা অস্বাভাবিক রকমের রক্তিম ওষ্ঠদ্বয় যেন আহ্বান জানাচ্ছে নিজেদের দিকে। ধীরে ধীরে তমাল তাকালো নারী মূর্তিটির চোখের দিকে। সে দেখতে পেলো তার দিকে দুটো জ্বলন্ত হিংস্র চোখ নিষ্পলকে তাকিয়ে আছে। জ্ঞান হারালো তমাল।
অদূরের জঙ্গল থেকে সেইমুহূর্তে শোনা গেলো সমস্বরে নেকড়ের ডাক। তার কিছুক্ষণ পরে পালে পালে তারা ছুটে এলো। যখন তাদের আগমন ঘটে, তখন দু’চোখে আঁধার নেমে আসে। শকুনের দল শুষে নেয় সব আলো। বুকে তাজা রক্তের ছাপ, আকাশের গায়ে লেগে থাকে সেই রক্তের প্রতিচ্ছবি। গভীর আঁধারে ঢেকে যায় সমগ্র ভৈরবীর মাঠ। অশুভ বাতাসে শিউরে ওঠে গৃহস্থের দরজা। অনেকগুলো থাবা আর একটিমাত্র দেহ .. রাতের আঁধারে ছিঁড়ে খায় নেকড়ের দল। আড়ালে নয়, সাক্ষী রেখেছে নিষ্পাপ এই প্রান্তরের তৃণঘাস। এই ভয়ঙ্কর রাতে মাটিতে এঁকেছে বিভীষিকা জলছাপ। রক্তমাখা দেহটা পড়ে থাকে এই মাটির কোলে। সারাদেহে তার নরদানবের উল্লাস।
পরের দিন বনকাপাশীর জঙ্গলের ধার থেকে পুলিশ প্রশাসন একটা লাশ উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে লাশটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। দেহটা জঙ্গলের হিংস্র পশুর দল খুবলে খেয়েছে .. এ কথা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ থাকলেও, আশ্চর্যের ব্যাপার এই, শরীরটাতে একফোঁটা রক্তও ছিলো না।
[url=https://de.imgbb.com/][/url]


![[Image: Polish-20230301-094646903.jpg]](https://i.ibb.co/L9XdnV1/Polish-20230301-094646903.jpg)
![[Image: Images-3-1.jpg]](https://i.ibb.co/RN7fmFF/Images-3-1.jpg)
![[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]](https://i.ibb.co/V2jFPGW/Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e04c001a911ac0.gif)
![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)