Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#55
পর্ব:২০

 

        "কখন এলে?" নদী ছাঁদে আসতেই আলিফের সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেলে সে তাকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে জিজ্ঞেস করলো।
       আলিফ ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে নদীকে বলল, "এইতো মাত্রই।" 
       নদী হেঁটে তার সামনে দাঁড়ালো। সে বলল, "কেমন আছো?"
       "ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?" আলিফ উত্তরের সাথে নদীকেও প্রশ্নটা করলো।
       "ভালো আছি।" নদীও নিরবে হাত নেড়ে তাকে উত্তর দিলো। 

       তারপর নিরবতা নেমে এলো। কেউ কাকে কিছু বলল না। একে অন্যের দিকে তাকালো। দুইজন দুইজনকে দেখলো। 
       নদী অনেক দিন পর আলিফের সাথে দেখা করতে এসেছে। সে গতকাল রাতেই আলিফকে আজ ছাঁদে আসার জন্য বলেছে। 
       সেই ঘটনার পরে আলিফকে ক্রমাগত উপেক্ষা করাতে একটা সময় আলিফও নদীকে বিরক্ত করা কমিয়ে দেয়। তাদের দেখা হলে আলিফ প্রথমে কথা বলার চেষ্টা করলেও, নদী আগ্রহ দেখাত না। একটা সময় পর আলিফও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে কথা বলা কমিয়ে দিলো। দুই এক সময় হাতের ইশারায় হাই দিলেও নদীর কোনো উত্তর আসতো না। তারপর আলিফও আগাতো না। নদীর সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করলে সে তাকে মেসেজ দিতো কিন্তু নদী হুটহাট ভাগ্যের জোরে দুইএকটা রিপ্লাই দিলেও বেশিরভাগ সময় মেসেজগুলো উত্তর বিহীন অবহেলায় পড়ে থাকতো৷ 

       নদী আলিফকে খোলাসা করে কিছুই বলেনি। সে কেনো এমন করছে তা বলেনি। আলিফ জিজ্ঞেস করেনি এমন না। নদী বলেছে, "তোমার কোনো কারণে এমন করছি না। আমি চাই না আমার এরকম একটা জীবন কারো সাথে জড়াতে। আমি আর মা ভালো আছি। এভাবেই একদিন নদী আলিফকে কথাগুলো বলেছিল। 

       নদী ছাঁদের কর্ণারে দূরে তাকিয়ে ছিলো। আলিফ তার হাত ছুঁয়ে তাকে ডাকলো। নদী ফিরলে আলিফ বলল, "মন খারাপ?" 
       "হ্যাঁ।" নদী উত্তরে বলল।
       "অনেক বেশি?"
       "অনেকটা!"
       "কেনো? কিছু হয়েছে?"
       "কিছুই হয় নি। এমনিতেই ভালো লাগছে না। খুব খারাপ লাগছে৷" 
       "তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।" 
       নদী কিছু সময় চুপ থেকে বলল, "এখন বলতে ইচ্ছে করছে না। অন্য সময় বলবো। তুমি আমার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ?"
       "আচ্ছা..." বলে আলিফ নদীর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। সে আর কোনো কথা বলল না। নদীকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। 

       নদী আর আলিফ অনেকটা সময় একে অন্যের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। একটা সময় সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নদীর হাতটা ধরলো আলিফ। আলিফের ওইটুকু স্পর্শ, নদী কেমন করে হঠাৎ বদলে গেলো। বুকের ভেতর জমে থাকা একখন্ড বরফ গলে গেলো। সেই গলে যাওয়া বরফ তার চোখ বেয়ে নেমে এলো।

       আলিফ হাত বাড়িয়ে নদীর গালে লেগে থাকা অশ্রু মুঁছে দিলো। সে তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না।
       অনেকটা সময় পর নদী কান্না থামালো। আলিফ তার পাশে বটবৃক্ষের মত পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে রইলো। 

       তাদের মধ্যে তেমন আর কোনো কথা হলো না। সন্ধ্যা নামলেই তারা চলে গেলো। কিন্তু তারপর থেকে তাদের মাঝে বেড়ে উঠা অদৃশ্য দেয়ালটা ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হতে থাকলো। তারা আবারো কথা বলা শুরু করলো, দেখা করা শুরু করলো। এবার আলিফ আগের চেয়ে অনেক শান্ত। বন্ধুর মত নদীর পাশে রইলো। তার জন্য এটুকুই অনেক। সে শুধু নদীর পাশে থাকতে চায়। 

       আলিফ অনেকদিন ক্যাম্পাসে যায় না। সে ঠিক করলো আবার সবকিছু আগের মত ঠিকঠাক করে নিবে। অনেকদিন রুদ্রের সাথেও তার ভাল করে কথা হয় না। মূলত অন্য সবার সাথেই সে যোগাযোগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিল। রুদ্রের জন্য তার অনেক কথা জমে আছে। 
       আলিফের খারাপ লাগতে শুরু করলো। এভাবে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে নিজেকে চার দেয়ালের মধ্যে আঁটকে রাখা তার উচিত হয় নি। সে বেলকনিতে বসে ছিলো। হঠাৎ রাস্তার দিকে চোখ যেতেই তার মন ভালো হয়ে গেলো। সে বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। 

       "আলিফ, ওই আলিফ...!" আলিফকে বেলকনিতে বসে থাকতে দেখে নিচ থেকেই রুদ্র জোরে জোরে তাকে ডাকলো।
       "তোরা সবাই এখানে?" আলিফ বেলকনি থেকেই জিজ্ঞেস করলো।
       "তোকে দেখতে এলাম। আমাদের-তো খোঁজ খবর নিবি না, তাই আমরাই এলাম।" রুদ্র বলল। 

       আলিফ ছুটে নিচে চলে এলো। সাত্যকি, ইরিনা, ফাহিম এবং রুদ্রকে দেখে সে প্রচন্ড খুশি হয়েছে। তার মন চাচ্ছিলো, সবার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে। তার চাওয়াটা এভাবে পুরোন হয়ে যাবে সে ভাবতে পারে নি। 

       "এতোকিছু এনেছিস কেনো?" আলিফ কৌতুহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। 
       "সবাই মিলে ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করলাম।" হেসে উত্তর দিলো ফাহিম।
       "আন্টি আবার কিছু বলবে না-তো?" ইরিনা জানতে চাইলো।
       "আরে না। আম্মু কি বলবে। আম্মু বরং তোদের সবাইকে দেখে খুশিই হবে।" আলিফ উত্তর দেয়।
       "আমাদের রাস্তায় এভাবে দাড় করিয়ে রাখবি?" রুদ্র ঠাট্টা করার ভঙ্গিতে বলে।
       "কি যে বলিস। বাসায় চল।" আলিফ হেসে বলে।
       "হ্যাঁ, চল। আগে ফ্রেশ হতে হবে।" সাত্যকি বলে। 

       সবাই হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আলিফের রুমে এসে বসলো। ঠিক তখন আলিফের মা রুমে এলো। আলিফই তার মাকে আসতে বলেছে, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
       আলিফ একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবার সাথে প্রয়োজনীয় দুই একটা কথা বলল তার মা। আলিফের মা বলল, "রাতে কিন্তু তোমরা খেয়ে যাবে।" 
       "আন্টি আপনার শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না। দেখেন, আমরা কত খাবার দাবার নিয়ে এসেছি।" ইরিনা বলল।
       "এগুলো বললে হবে না। আমি এখনই রান্না বসাচ্ছি৷ তোমরা আড্ডা দেও।" এটা বলেই আলিফের মা চলে গেলো। 

       "আলিফ, আন্টিকে শুধু শুধু কষ্ট করতে নিষেধ কর।" রুদ্র বলল।
       "তোরা কি যে বলিস। এই প্রথম সবাই একসাথে বাসায় এলি, তোদের কিছু না খাইয়ে ফেরত পাঠাতে পারি? আম্মুর কোনো কষ্ট হবে না। তোরা চিন্তা করিস না।" আলিফ সবার উদ্দেশ্য বলল। 

       রুদ্রকে ইশারায় ইরিনা কিছু একটা বলতেছিলো দেখে ফাহিম জিজ্ঞেস করলো, "কিছু বলবি?" 
       "না না, কিছু না।" ইরিনা বলল।
       "আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো? বলে দে।" রুদ্র মাঝখান থেকে বলল।
       "কিছু বলতে চাইলে বলতে পারিস। সমস্যা নেই।" ফাহিম আবার বললো।
       "তোর মন ভালো আছে?" পাশ থেকে ফাহিম জিজ্ঞেস করলো।
       "হঠাৎ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিস কেনো? আমাকে দেখে কি তোদের মন খারাপ মনে হচ্ছে?" আলিফ জানতে চাইলো।
       "না, তা মনে হচ্ছে না।" এবার সাত্যকি বলল।
       "তাহলে?" আলিফ আবার জানতে চাইলো।
       "আসলে হয়েছে কি?" এটুকু বলে ইরিনা রুদ্রের দিকে ফিরে বলল, "রুদ্র, তুই বল।"
       "কিছু কি হয়েছে রুদ্র?" আলিফ এবার কৌতুহল বোধ করছে।
       "আরে তেমন কিছু না৷ তোর আর নদীর ব্যাপারটা সেদিন সবাইকে জানিয়েছি। তাই ওই ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে সবাই।" অবশেষে রুদ্র বলল।
       রুদ্র ভেবেছিল আলিফ রাগ করবে। কিন্তু আলিফ রাগ করলো না। সে বলল, "এই ব্যাপার। আমি আবার ভয় পেয়ে গেছিলাম, সিরিয়াস কিছু হলো কি-না।" 
       "তাহলে...!" নদীর ব্যাপারে বলতে ইরিনা ঈঙ্গিত দিলো।
       "একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়ে গয়েছিলো। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।" আলিফ বলল।
       "তাহলে তো খুশির খবর।" ফাহিম বলল।
       "তোকে আগে কিন্তু এরকম দেখিনি। একজনের প্রেমে হাবুডুবু খেতে।" ইরিনা বলল।
       "আমিও জানিনা কখন কীভাবে কি হয়ে গেলো। যখন বুঝলাম, তখন দেখলাম আমি সত্যিই ওকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে। আগে এই রকম ফিলিং কখনো হয় নি।"
       "এবার তাহলে একবারে ফেসে গেছিস।" ফাহিম বলল।
       "যাক, তাহলে ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে রুদ্র বাদে সবারই একটা হিল্লে হয়ে গেলো। কি বলিস ইরিনা।" সাত্যকি হঠাৎ কথাটা মুখ ফুসকে বলে ফেললো।
       "রুদ্র বাদে সবার মানে?" আলিফ বিস্মিত হয়ে প্রশ্নটা করলেও রুদ্রের মুখেও একই কৌতুহল। 

       ইরিনার এবার লজ্জা লাগছে। সাত্যকিকে কথাটা বলা ঠিক হয় নি সে ভাবলো। 
       "তুই এখনো অন্য কাউকে বলিস নেই, আমি জানতাম না ইরিনা। আমি ভেবেছিলাম সবাই জানে।" সাত্যকি লজ্জিত বোধ করছে।
       "আরে কি যে বলিস। একটু সময় নিয়ে সবাই কে-ই জানাতান। তুই বলে দিয়ে ভালোই হয়েছে।" ইরিনা হাসার চেষ্টা করলো।
       "কনগ্রাচুলেশন, ফাহিম।" রুদ্র এবং আলিফ একসাথে বলে উঠলো। 
       ফাহিম লজ্জা পেলো। সে কোনো রকম ভাবে বলল, "ধন্যবাদ।" 

       "এবার রুদ্রের একটা কিছু হয়ে গেলেই হয়।" পরিবেশটা স্বাভাবিক করতে ইরিনা বলল। 
       "আমার কিছু হবে না। মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে একবারে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।" রুদ্র বলল।
       "কখন প্রেম এসে হৃদয়ে বাঁধিবে ঘর, সখা তুমি জানিতে পারিবে না। একবার প্রেমের জালে আটকে গেলে ছুটিতে পারবে না।" রুদ্রকে গানের সুরের মত করে ইরিনা বলল। 

       তারা সবাই নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা দিলো। হাসি তামাশা করলো। হঠাৎ ইরিনা বলল, "ফাহিম, নদীকে একটা মেসেজ দে।" 
       "ওকে মেসেজ দিয়ে কি করবো? আলিফ বলে।
       "আরে বুদ্দু, আসতে বলবি।" ইরিনা বলল।
       "হ্যাঁ, আলিফ। নদীকে নেসেজ দিয়ে আসতে বল। আমরা কেউ ওকে দেখেনি। ও আমাদের দেখেনি। এছাড়া ও এলে ভালোই হবে।" রুদ্র বলল।
       "কিন্তু...!" 
       "কিন্তু কি?" আলিফের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ফাহিম বলল।
       "তোরা নিশ্চয় জানিস, ও আসলে....!" কথা বলতে গিয়ে বলতে পারল না আলিফ।
       "তাতে কি হয়েছে? আমাদের কি অবুঝ মনে হয়, যে ওকে বুঝবো না। তুই কোনো চিন্তা করিস না। ওকে মেসেজ দিয়ে বল আসলে। দেখ ও কি বলে।" ইরিনা বলল।
       "আচ্ছা, বলছি।" ফাহিম কথা শেষ করে উঠে গেলো।
       "দেখছিস রুদ্র। শুধু মেসেজ দিবে তবুও অন্য রুমে চলে গেলো।" হতাশ গলায় ইরিনা বলল। 

       আলিফ অন্য রুমে চলে গেলে ইরিনা আর ফাহিম বসা থেকে উঠে বেলকনির দিকে গেলো। সাত্যকিও উঠে রুমটা ঘুরে-ঘুরে দেখছে। রুদ্র একা বসে আছে ফোন হাতে। 

       আলিফকে ঘরে ঢুকতে দেখেই রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, "কি বললো? আসবে?"
       "হ্যাঁ আসছে। তবে একটু সময় লাগবে।" আলিফের মুখে হাসি ফুটে এলো।
       ফাহিম এবং ইরিনা বেলকনিতে থেকে ফিরে এসে আলিফের হাসি দেখেই বুঝে নিলো নদী আসছে। 

       নদী এলো কিছুসময়ের মধ্যেই। অল্প সময়ে সামান্য সাজগোজ করেছে সে। তাকে দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। কপালে টিপ দিয়েছে, ঠোঁটে হালকা করে লিপিস্টিক, চোখেকাজল, চুলগুলো সিঁথি করে আঁচড়ানো, হাতে পুরনো স্টাইলের একটা ঘড়ি, যে থ্রিপিসটা পরেছে সেটা ইস্ত্রি কর, ভাজ দেখে বোঝা যাচ্ছে। 
        সবাই অবাক চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদীকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সবাই মনে মনে কথাটা ভাবলো। সেই সাথে সবাই খানিকটা অবাকও হয়েছে, কারণ শ্যামলা বর্নের একটা মেয়ে বাস্তবে এতো সুন্দর। নদীকে কোনো গল্প-উপন্যাসের নাইকাদের মত লাগছে। তাছাড়া চেহারার মধ্যে এতো মায়া। আলিফ কেনো এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে সবাই এবার বুঝতে পারলো। চাইলেও পৃথিবীতে কিছু মানুষকে উপেক্ষা করা যায়, ভালো না বেসে থাকা যায় না। সেই অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে নদী একজন। 

       নদী এসে দাঁড়িয়েই আছে। তাকে দেখেই সবাই চুপ হয়ে গেছে, একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নদীর লজ্জা লাগছে। ভীষণ লজ্জা করছে। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। 
       ইরিনা হাতের ইশারায় নদীকে ডাকলো।
       নদী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ইরিনা ডাকতেই সে ভেতরে ঢুকলো।
       ইরিনা আবার হাতের ইশারায় তাকে তার পাশে বসতে বলল।
       নদী এসে ইরিনার পাশে বসলো।
       "তোমাকে সুন্দর লাগছে।" ইরিনা এবারও হাতের ইশারায় তাকে বলল।
       নদী হেসে তার ভাষায় বলল, "ধন্যবাদ।"
       "হ্যাঁ, ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমাকে।" পাশ থেকে সাত্যকি বলল। 
       সাত্যকি ঠিক কি বলল নদী বুঝলো না। সে শুধু কিছু অস্পষ্ট শব্দ শুনে সাত্যকির দিকে তাকালো। তার মুখ নড়তে দেখলো। সে প্রায়ই মুখের বাচনভঙ্গি লক্ষ করে। যখন কেউ কথা বলে তখন সে ভালো করে কথা বলা লোকটার ঠোঁটের দিলে লক্ষ করলে প্রায় সময় আজকাল ঠোঁটের ভাষা বুঝতে পারে। কারণ সে আজকাল ঠোঁটের বাচনভঙ্গি শেখার চেষ্টা করছে। তাহলে যে কারো কথা সে কানে স্পষ্ট ভাবে না শুনলেও সে তার ঠোঁট দেখেই বুঝতে পারবে। এই ইচ্ছেটা হয়েছে, আলিফের সাথে পরিচয় হওয়ার পরে। সে চায় আলিফ তার ভাষায় কথা বলুক। সে তার ঠোঁট দেখেই তার কথা বুঝুক।
       নদীকে চুপচাপ থাকতে দেখে আলিফ বলল, "সাত্যকি, তুই কি বলেছিস নদী মনে হয় বুঝেনি। কেউ কোনো কথা বললে নদী স্পষ্ট সেটা শুনতে পায় না। হ্যাঁ, কেউ কিছু বলছে সেটা বুঝতে পারে। আমরা যে শব্দগুলো দিয়ে একটা বাক্য বলি, নদী তার মধ্যে কিছু শব্দ অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পারে। মানে, ধর কেউ লোহাতে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। তখন আমরা যে শব্দটা শুনতে পাই, তেমন নদীরকাছে মানুষের কথাগুলো সেরকম লাগে। শুধু বুঝতে পারে কেউ কথা বলছে।" 
       "সরি। আমি বলেছি তোমাকে সুন্দর লাগছে।" সাত্যকি অনেক চেষ্টা করে শেষমেশ ইশারায় নদীকে বোঝাতে সক্ষম হলো। 
       নদী এবারও ছোট্ট কোরে বলল, "ধন্যবাদ।" 

       নদী এবং আলিফ বেলকনিতে গেলো তারো অনেক পরে। ঘরের মধ্যে বাকী সবাই নানা বিষয় নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। আড্ডা দিচ্ছে। একে অন্যকে খেপাচ্ছে। কেউ কারো সিক্রেট জানলে সেটা বলে দিচ্ছে। 

       "তোমার বন্ধু গুলো ভীষণ ভালো।" নদী বলল।
       "হ্যাঁ, ওরা সবাই খুব ভালো।" আলিফ বলল।
       "আজ হঠাৎ সবাই একসাথে তোমার বাসায় এলো। আজ কি কোনো বিশেষ দিন?" 
       "তেমন কোনো কারণ নেই। আমি অনেকদিন ক্যাম্পাসে যাই না। ওদের সাথে ভাল করে যোগাযোগ করি না। তাই হঠাৎ সবাই আজ একসাথে চলে এসেছে আমার সাথে আড্ডা দেওয়া জন্য।" 
       "কেনো যাও না?" নদী বলল।
       "ক্যাম্পাসে?" আলিফ বুঝতে পেরে বলল।
       "হ্যাঁ।" নদী উত্তর দিলো।
       "এমনিতেই।" আলিফ বলতে পারলো না কেনো সে নিজেকে এভাবে একা করে রেখেছে। এতোদিন সে একটুও ভালো ছিলো না। সবসময় তার মন খারাপ থাকতো। সবসময় নদীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো, দেখা করতে ইচ্ছে করতো। আলিফ সে-সব কিছুই বলল না নদীকে।
       "আমার জন্য?" 
       নদীর কাছ থেকে সরাসরি এরকম প্রশ্ন আলিফ আশা করে নি। সে রীতিমতো ভেবাচেকা খেয়ে গেছে। সে বলল, "এমনিতেই। ভালো লাগে নি কোথাও যেতে।"
       "সরি।" নদী আলিফের হাতের উপর হাত রাখলো।
       আলিফ বেলকনিতে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। তার হাতের উপরই নদী হাত রেখেছে। এটুকুতেই তার হার্টবিট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সে কোনো রকম ভাবে কাপা কন্ঠে বলল, "সরি কেনো বলছ। আমি বললাম না, এমনিতেই যাই নি।" 
       নদী আর কিছু বল না। চুপচাপ আলিফের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। 

       "আলিফ, খেতে আয়।" রুদ্র ডাকলো।
       আলিফ আর নদী ঘরের ভেতর চলে গেলো। সবাই মিলে যা যা এনেছিলো সেই সব কিছু বের করে খাটের উপর সাজানো গুছানো।
       "তুই তো প্রেম করায় ব্যস্ত ছিলি। তাই আন্টির কাছ থেকে পেলেট চেয়ে সবকিছু সাজিয়ে ফেলেছি।" ইরিনা সবার সামনে সরাসরি কথাগুলো বলল। 
       আলিফ লজ্জার হাত থেকে বাঁচলো। কারণ সে জানে নদী বুঝতে পারেনি ইরিনা তাদের নিয়ে কথা বলেছে। বুঝতে পারলে তার অনেক লজ্জা লাগতো।
       ইরিনা কথা বলার সময় নদী তার ঠোঁটের দিকে ভাল করে তাকিয়ে ছিল। সে ঠোঁট পড়ার চেষ্টা করে অর্ধেক কথা বুঝেছে যে ইরিনা আসলে তাদের দুইজনের সম্পর্কে কথা বলেছে। নদী বুঝতে পেরেও তেমন কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না। তাই কেউ সেদিকে লক্ষ করলো না। 

       সবাই নাস্তা করে আরো একদফা আড্ডা দিলো। সবাই ট্রুট এন্ড ডেয়ার খেললো। হাসি-তামাশায় পুরো সময়টা কেটে গেলো। অনেকদিন পর সবাই মিলে একটা ভালো সময় কাটলো। 

       তারা সবাই ডিনার করে ন'টার দিকে বেরিয়ে পড়লো। আলিফ এবং নদী সবাইকে এগিয়ে দিতে নিচ পর্যন্ত এলো। একে একে সবাই চলে গেলে নদী আর আলিফ নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। 
       আলিফের দরজার সামনে এসে নদী বলল, "ধন্যবাদ।" 
       আলিফ জিজ্ঞেস করলো, "কীসের জন্য?"
       "আজকের জন্য। অনেক দিন পর সবার সাথে এতো সুন্দর কিছু সময় কাটালাম। আসলে আমার তো কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। সারাজীবন একাই কেটেছে। তা-ই আজ সবার সাথে সময় কাটিয়ে ভালো লাগলো।" 
       "তুমি চাইলে মাঝেমধ্যে আমার ক্যাম্পাসে আসতে পারো। আমরা প্রায় সময় ক্লাস শেষ করে কড্ডা দেই। তুমি মাঝেমধ্যে যুক্ত হলে সবাই খুশিই হবে।"

       "ছাঁদে যাবে?" আলিফের সেই কথা উপেক্ষা করে নলী বলে।
       "এই সময়?" নদীর কথা শুনে আলিফ কিছুটা অবাক হয়।
       "হ্যাঁ, কোনো সমস্যা? আমাদের ছাঁদ তো সবসময় খোলাই থাকে।" 
       আলিফ কিছু সময় ভেবে বলল, "তোমার বাসায় যেতে দেরি হলে আন্টি কিছু বলবে না?"
       "না, আম্মুকে বলেই এসেছি তোমাদের বাসায় এসেছি।" 
       "আচ্ছ, তাহলে চলো যাই।" 

       তারা দুইজনে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে মস্ত বড়ো চাঁদ। চাঁদের আলোয় পুরো ছাঁদটা মৃদু আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। গাছের পাতায় চাঁদের আলো পড়ে প্রতিফলন হচ্ছে। নদীর সবকিছু ভীষণ ভালো লাগলো। আলিফের এই সময়টা নদীকে পাশে পেয়ে ভালো লাগছে। 

       তারা দুইজন পাশাপাশি অনেক সময় দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো সময় চুপচাপ, কোনো সময় দুই'একটা কথা বলতে বলতে দূরের চাঁদটাকে গভীর মনোভাব দিয়ে দেখলো। 

       "চাঁদটা কি ভীষণ সুন্দর, তাই না?" নদী বলল।
       "হ্যাঁ, ভীষণ সুন্দর।" আলিফ তার কথার সাথে একমত পোষণ করল। 

       "তোমাকেও আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।" এবার আলিফ বলল।
       নদী হাসলো। সে বলল, "আমার মত কালো একটা মেয়েকে সুন্দর লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না।মিছেমিছি প্রশংসা করতে হবে না।"
       নদীর এরকম কথায় আলিফের মন খারাপ হলো। তার চোখে নদী মোটেও কালো নয়। তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর তম মানুষ। 
       "অন্য মানুষের কাছে তুমি কেমন আমি জানিনা। তবে আমার কাছে তুমি সুন্দর। আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে, কাজল আর টিপটার কারণে।" আলিফ বলল।
       নদী দ্বিমত পোষন করল না। সে বলল, "টিপ কিংবা কাজল পরলেই কি বেশি সুন্দর লাগে?"
       "তোমাকে টিপে মানায়। সুন্দর লাগে।"
       "আচ্ছা, তাহলে দেখি টিপে তোমাকে কেমন লাগে।" নদী কথটা বলেই তার কপাল থেকে টিপটা উঠিয়ে আলিফের কপালে লাগিয়ে দিলো। তারপর সে বলল, "বাহ! তোমাকে তো ভীষণ সুন্দর লাগছে।" 
       আলিফ একগাল হাসি দিয়ে বলল, "ধন্যবাদ।"
        "ওয়েলকাম।" 
       "এই টিপ কিন্তু আমি আর দিচ্ছি না।" 
       "কেনো?" অবাক কন্ঠে নদী বলে।
       "আমাকে যেহেতু সুন্দর লাগছে, আমি মাঝেমধ্যে পরবো।" আলিফ কথা শেষ করে হাসলো।
       নদীও হাসলো। সে বলল, "আচ্ছা রেখে দেও।"
       "অনেক রাত হয়ে গেছে। চলো এবার বাসায় যাই।" আলিফ কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করলো।
       আলিফের হাত ধরে তাকে থামালো নদী।
       একমুহূর্তে নদীর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে বলল, "কি হয়েছে? কিছু বলবে?"
       "হ্যাঁ। তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার।"
       "তোমার সম্পর্কে?" 
       নদী মাথা নাড়ালো।
       "তাহলে দরকার নেই। পুরনো কথা বললে তোমার মন খারাপ হবে। তারপর বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি করবে। সেটা দেখতে আমার ভালো লাগবে না।" 
       "তবুও কথাগুলো তোমাকে বলা দরকার।" 
       "কোনো দরকার নেই। আমি কিছু শুনতে চাই না।" 
       "তুমি এমন কেনো?" 
       "কেমন?"
       "এইযে এমন। এতো ভালো। আমি তোমাকে কখনো কোনো কষ্ট দিতে চাই না। তাই, কথাগুলো তোমাকে আগেই বলা উচিত।" 
       "আমাকে মন খারাপের কোনো কথা বলতে হবে না। আমি শুনতে চাই না।" আলিফ কথাটা বলে আবার হাঁটা শুরু করলো। 
       নদী দাঁড়িয়ে আছে। আলিফ আস্তে করে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ সে দৌড়ে গিয়ে আলিফকে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। 
       আলিফ মুহুর্তে বরফের মত জমে গেলো। সে দাঁড়িয়ে রইলো। পিছনে ঘুরে তাকালো না। সে জানে, নদী এখন কান্না করছে। তার পরনের শার্টের পিছনের একটা আংশ ইতিমধ্যে ভিজে গেছে নদীর চোখের অশ্রুতে।
       আলিফের চোখ'টাও হঠাৎ ভাড়ী হয়ে উঠলো। গলার কাছে কিছু একটা এসে আটকে রইলো। সে ওই অবস্থায় রইলো। তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ এইভাবেই রইলো।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 28-02-2023, 09:41 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)