28-02-2023, 08:44 PM
(This post was last modified: 28-02-2023, 08:46 PM by কলমচি৪৫. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বছর পার করে তিনি তাঁর শিল্পীসত্তা সেইন নদীর জলে বিসর্জন করে ফিরে এলেন। তারপর জৈবিক খিদে মেটানোর জন্য প্রয়োজন মতো আমার কাছে আসতেন , আর আমি পর পর পাঁচ সন্তানের মা ( বড় জনকে বাদ দিয়ে) হলাম। কিন্তু তত দিনে আমার মন মরে গেছে।
ইতিমধ্যে কানা ঘুষো শুনতে পেলাম প্রতি রবিবার রাতে তিনি যান ওনার এক আদরিণী রক্ষিতার কাছে। আমি লক্ষ্য করতাম রবিবার বিকেল থেকেই বদলে যেত তাঁর শরীরের ভাষা। পড়তেন ধাক্কা পাড়ের চুনোট করা ধুতি ও গিলে করা পাঞ্জাবী , হাতে যুঁই ফুলের মালা , চোখে সুরমার টান এবং লক্ষ্ণৌ থেকে আনা সুগন্ধি ছড়িয়েছেন সারা গায়ে।
উনি বের হয়ে যাওয়ার পরই মনটা আমার হু হু করে উঠতো। কিন্তু ছেলে মেয়েদের আব্দার মেটাতে গিয়ে ওটা নিয়ে বেশি ভাবার সময় পেতাম না। ধীরে ধীরে আমি ওনার সব ব্যাপারে আশ্চর্য রকমভাবে নিরাসক্ত হয়ে পড়লাম।
এই ভাবেই একটির পর একটি বছর কেটে গেছে, বসন্ত এসেছে চলে গেছে। যৌবন একদিন চলে গেল আমার শরীর থেকে, ক্রমশঃ বার্ধক্য এসে গ্রাস করলো এই দেহটাকে। এখন আমরা দুজনে একঘরে থাকলেও আমাদের মধ্যে রয়েছে একটা অদৃশ্য লক্ষ্মণ রেখা। এখন আমি যত দিন বাঁচবো ততদিন এক সুখী জননী হিসাবেই বেঁচে থাকতে চাই। "
বলতে থাকেন চন্দ্রলেখা - " বিপাশা, তোমরা এ প্রজন্মের মেয়েরা আমাদের এই ব্যথা বুঝতে পারবে না। তোমাদের এমনভাবে কোনোদিন দুঃখের আগুনে পুড়তে হবে না । তোমাদের হৃদয় নিয়ে কোনো পাষন্ড পুরুষ এমনভাবে ছিনিমিনি খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। আমরাই হলাম দুঃখবতী প্রজন্মের শেষ সংস্করণ। এই ভালোবাসার পৃথিবী থেকে এক দিন আমরা চিরতরে হারিয়ে যাব এবং সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে এইরূপ চোখের জলের ইতিহাস।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বিপাশা , তুমি না এলে আমি কখনো মনের আয়নায় নিজের মুখ দেখতাম না। আমি বুঝতে পারতাম না আমার দুঃখ আছে, আমার সুখ আছে, আছে আমার অতৃপ্তির ব্যাখ্যান। আজ আমার অনেক কথা তোমার কাছে বলে আমার এই পোড়াবুক শান্ত হলো। "
দুজনের কথার মাঝে ঘরে ঢোকেন রাজনারায়ণ। তিনি সকালে বাগানে পায়চারি করে ঘরে এলেন। এরপর তিনি সুগন্ধি দার্জিলিং চা তারিয়ে তারিয়ে খাবেন ও খবরের কাগজ পড়বেন। রাজনারায়ণ বাবু ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিপাশা বুঝতে পারে এবার তাকে উঠতে থাকে। সে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে চন্দ্রলেখাকে বলে - " মাসীমা, এখনকার মতো আসি ? পরে প্রয়োজন মতো আপনার কাছে আসব।"
এই বলে রাজনারায়ণ বাবুকে শুভ সকাল জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ।
তৃতীয় অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্ত
ইতিমধ্যে কানা ঘুষো শুনতে পেলাম প্রতি রবিবার রাতে তিনি যান ওনার এক আদরিণী রক্ষিতার কাছে। আমি লক্ষ্য করতাম রবিবার বিকেল থেকেই বদলে যেত তাঁর শরীরের ভাষা। পড়তেন ধাক্কা পাড়ের চুনোট করা ধুতি ও গিলে করা পাঞ্জাবী , হাতে যুঁই ফুলের মালা , চোখে সুরমার টান এবং লক্ষ্ণৌ থেকে আনা সুগন্ধি ছড়িয়েছেন সারা গায়ে।
উনি বের হয়ে যাওয়ার পরই মনটা আমার হু হু করে উঠতো। কিন্তু ছেলে মেয়েদের আব্দার মেটাতে গিয়ে ওটা নিয়ে বেশি ভাবার সময় পেতাম না। ধীরে ধীরে আমি ওনার সব ব্যাপারে আশ্চর্য রকমভাবে নিরাসক্ত হয়ে পড়লাম।
এই ভাবেই একটির পর একটি বছর কেটে গেছে, বসন্ত এসেছে চলে গেছে। যৌবন একদিন চলে গেল আমার শরীর থেকে, ক্রমশঃ বার্ধক্য এসে গ্রাস করলো এই দেহটাকে। এখন আমরা দুজনে একঘরে থাকলেও আমাদের মধ্যে রয়েছে একটা অদৃশ্য লক্ষ্মণ রেখা। এখন আমি যত দিন বাঁচবো ততদিন এক সুখী জননী হিসাবেই বেঁচে থাকতে চাই। "
বলতে থাকেন চন্দ্রলেখা - " বিপাশা, তোমরা এ প্রজন্মের মেয়েরা আমাদের এই ব্যথা বুঝতে পারবে না। তোমাদের এমনভাবে কোনোদিন দুঃখের আগুনে পুড়তে হবে না । তোমাদের হৃদয় নিয়ে কোনো পাষন্ড পুরুষ এমনভাবে ছিনিমিনি খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। আমরাই হলাম দুঃখবতী প্রজন্মের শেষ সংস্করণ। এই ভালোবাসার পৃথিবী থেকে এক দিন আমরা চিরতরে হারিয়ে যাব এবং সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে এইরূপ চোখের জলের ইতিহাস।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বিপাশা , তুমি না এলে আমি কখনো মনের আয়নায় নিজের মুখ দেখতাম না। আমি বুঝতে পারতাম না আমার দুঃখ আছে, আমার সুখ আছে, আছে আমার অতৃপ্তির ব্যাখ্যান। আজ আমার অনেক কথা তোমার কাছে বলে আমার এই পোড়াবুক শান্ত হলো। "
দুজনের কথার মাঝে ঘরে ঢোকেন রাজনারায়ণ। তিনি সকালে বাগানে পায়চারি করে ঘরে এলেন। এরপর তিনি সুগন্ধি দার্জিলিং চা তারিয়ে তারিয়ে খাবেন ও খবরের কাগজ পড়বেন। রাজনারায়ণ বাবু ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিপাশা বুঝতে পারে এবার তাকে উঠতে থাকে। সে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে চন্দ্রলেখাকে বলে - " মাসীমা, এখনকার মতো আসি ? পরে প্রয়োজন মতো আপনার কাছে আসব।"
এই বলে রাজনারায়ণ বাবুকে শুভ সকাল জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ।
তৃতীয় অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্ত