Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোপন কথাটি রবে না গোপনে
#62
চন্দ্রলেখার শুষ্ক ঠোঁট দুটো থরথর করে কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন - " এই মেয়ে , কি লাভ বলো এইভাবে হারানো দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে ? যা চলে গিয়েছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় , কি হবে অতীতকে খুঁড়ে ?"

বিপাশা বলে - " আমি কথা দিচ্ছি মাসীমা , তেমন কোনো গোপন কথা থাকলে আমি কখনোই দেখাবো না। আপনাকে আগে ভিডিওটা দেখাবো , আপনি যতটুকু বলবেন ততটুকুই সকলে দেখবে। "

-- " তুমি সত্যি বলছো তো বিপাশা ? তোমরা এযুগের আধুনিক মেয়েরা কাজ আদায় করার জন্য অনেক মিথ্যা কথা বলে থাকে। তোমাকে দেখে অবশ্য আমার মনে হচ্ছে তুমি সেই দলে নও।"

এই বলে চন্দ্রলেখা একটু উদাস হয়ে যান। তারপর তিনি বলতে শুরু করেন - " জানো বিপাশা , আমার ছোটো মেয়ে মানসী , তাকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে আমার এখন। সে বেঁচে থাকলে তোমার বয়সী হতো। তার দেহে তখন সদ্য যৌবন পা রেখেছে, একটু ছটফটে সেই মেয়েটা পাখির মতো কলরবে ভরিয়ে রাখতো গোটা বাড়িটা। সে হাসলে তোমার মতোই তার গালেও টোল পড়তো। কিন্তু মারনব্যধি ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়া তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে, তুমি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না , বলো কি বলতে হবে আমাকে ? চল্লিশ বছরের এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের কোথা থেকে শুরু করতে হবে বলো? "

-- " যে দিন প্রথম আপনার সঙ্গে রাজনারায়ণ বাবুর দেখা হয়েছিল কিংবা যেদিন আপনি প্রথম সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে বাড়ির গৃহিণী হিসেবে চৌধুরী ভিলাতে পদার্পণ করেছিলেন সেদিন থেকে।"

-- " তাহলে তো আমাকে অনেক বছর আগের পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে।
তুমি আমাকে তাক থেকে ওই বটুয়াটা এনে দিতে পারবে ? "

বিপাশা , ঘরের দেওয়াল আলমারির তাক থেকে একটা বটুয়া এনে চন্দ্রলেখার হাতে দিল। সেখান থেকে যত্ন করে বের করে আনলেন একটা ছবি। আর বললেন -- " দেখতো মা এঁকে চিনতে পারো কিনা?"

বিপাশা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখে ছবিটা প্রায় হলুদ হয়ে গেছে। একটি অপূর্ব সুন্দরী সদ্য যুবতীর সঙ্গে সুপুরুষ এক যুবক।

বিপাশা বলল -- " আমি আন্দাজ করছি যুবতীটি আপনি এবং আপনার সঙ্গে পুরুষটি রাজনারায়ণ বাবু।"

ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্রলেখা বলেন, " ঠিক বলেছো। এটা বিয়ের পর পরই প্রায় চল্লিশ বছর আগে স্টুডিওতে গিয়ে তোলা। সে নিয়ে রক্ষণশীল এই চৌধুরী ভিলাতে কি আলোড়ন। কিন্তু আমার স্বামী বাড়ির কোনো বিধিনিষেধই মানতেন না। একদিন আমাকে নিয়ে সাহেব পাড়াতে গিয়ে এই ছবি তুলে আনেন। দেখো , তখন উনি কতটা সুপুরুষ ছিলেন।"

বিপাশা চোখ বন্ধ করে রাজনারায়ণ বাবুর চেহারাটা একবার ভেবে নেয়। সবে সত্তর পার হওয়া মানুষটি এখনও জাগ্রত পৌরুষের জ্বলন্ত চিহ্ন। এখনো ইচ্ছে হলে তিনি যৌবনের বিবিক্ত উন্মাদনাকে যেন মুঠোবন্দী করতে সক্ষম।
বিপাশা সন্তপর্ণে টেপটা চালিয়ে দেয়। ক্যামেরাটা ফোকাস করে চন্দ্রলেখা দেবীর ওপরে। বলে - " তাহলে আপনার মুখ থেকে শোনা যাক আপনার বিয়ের গল্প।"

চন্দ্রলেখা বলতে থাকেন , " কালীঘাটের এক গরীব ', পরিবারে। তিন বোনের মধ্যে আমি ছোট। কালীঘাটে পুজো দিতে গিয়ে আমাকে দেখে শুধুমাত্র রূপের জন্য আমার শ্বাশুড়ীমা তাঁর একমাত্র ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের ঠিক করেন। বিয়ের রাতেই প্রথম তাঁকে ভালো করে দেখার সুযোগ পাই আমি। তখন আমি সবেমাত্র আঠারো বছর পার হয়েছি। লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমার বরের দিকে , আর ভাবছি এত রূপ কি কোনো পুরুষের মানুষের হতে পারে, মনে হয় যেন দেবদূত নেমে এসেছে। কিন্তু এই সুপুরুষ মানুষটিই আমাকে চল্লিশ বছর ধরে ভুগিয়েছে। সেসব কিছু খুলে বলতে গেলে একটা মহাভারত হয়ে যাবে।"
[+] 3 users Like কলমচি৪৫'s post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোপন কথাটি রবে না গোপনে - by কলমচি৪৫ - 28-02-2023, 08:42 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)