Thread Rating:
  • 18 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL আমার প্রথম প্রেম
#6
Heart 
৩।
দেখলাম মনিষা উঠে পরেছে ঘরের এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে অবাক চোখে। দরজার দিকে তাকাতেই সে আমাকে দেখলো। মনিষা কিছু বলার আগেই আমি ও জিজ্ঞেস করলাম এখন তার কেমন লাগছে। মনিষা আমাকে বললো সে এখানে কিভাবে এলো আমি তাকে সব খুলে বললাম।
আরও বললাম জ্বর কমেছে কি না সে বললো তার জ্বর নেই। বিছানা থেকে নেমে পড়লো সে কিছু একটা বলতে চেয়েও চুপ হয়ে গেল জিজ্ঞেস করলাম কিছু বলবে কি না। একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলো ওয়াসরুম। আমি রুমের সাথে লাগোয়া ওয়াসরুম দেখিয়ে দিলাম। সে ওয়াসরুমে চলে গেল আমি সেই রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং এ এসে বসলাম। প্রায় দশ মিনিট পর মনিষা রুম থেকে বের হয়ে আসলো।  আর প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো তার কাপর কে চেঞ্জ করে দিয়েছে। আমি তাকে সব বললাম বিশ্বাস মনে হয় করলো। জিজ্ঞেস করলো আর কে কে থাকে আমার সাথে। বললাম আমি একা থাকি বাবা মা তো দেশের বাড়িতেই থাকে। আর বোনের তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমি তাকে বললাম তুমি এখানে ঢাকায় একা রাস্তায় কি করছিলে। মনিষা মাথা নিচু করে ফেললো। প্রায় ১ মিনিট সে চুপ আমি আর তাকে কিছু বললাম না। দেখলাম সে কাঁদতে শুরু করেছে। তার কান্না দেখে মনে হলো আমার কলিজায় কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। আমি তাকে থামতে বললাম আরও বললাম আমাকে বলতে না চাইলে সমস্যা নেই। মনিষা চুপ করে রইলো।
আমি বললাম কাল থেকে তোমার কোন খাওয়া দাওয়া হয় নি আমি তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি। আমি রান্না ঘরের দিকে চলে আসলাম কফির জন্য পানি গরম দিলাম। কিন্তু এই ভোর ৬ টার সময় কি খেতে দেব। তাড়াহুড়া করে কফি আর বিস্কিট খেতে দিলাম।  আর বললাম এটা দিয়ে শুরু করো আমি বাইরে খেতে কিছু খাবার কিনে আনি।
মনিষা বললো এত ব্যস্ত হবার কিছু নেই।আমারা দুজনে কফি খেতে থাকলাম। ওর যে প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে সে আমি বুঝলাম।  আমি বললাম মনিষা তুমি থাকো আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। ফ্লাট থেকে বের হয়ে বাসার কাছাকাছি একটা খাবারের হোটেলে গেলাম কয়েকটা নান  ডাল আর সবজি নিয়ে ফিরে এলাম। মনিষা তখনও ডাইনিং এই বসে আছে। আমি দ্রুত তাকে প্লেট এ করে খাবার সাজিয়ে দিলাম। বুঝলাম সে একটু লজ্জা বোধ করছে তাকে খেতে বলে আমি খাওয়া শুরু করলাম আমারও প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে কাল রাতে কিছু খাওয়া হয় নি। খাওয়া শেষে মনিষাকে বললাম রুমে শুয়ে রেস্ট নিতে। মনিষা সেখানেই বসে রইলো আমি বললাম কিছু বলবে সে মাথা নাড়ালো বললাম বলো। সে বলা শুরু করলো তুমি তখন জিজ্ঞেস করলে না আমি একা ঢাকায় কি করি।আমি মাথা নাড়লাম।  সে বললো পরশু আমার বিয়ের কথা ছিলো আমি বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি ঢাকাতে। ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে আমার গত ২ বছর যাবত কথা হতো।  খুব বিশ্বাস করে তার কথায় আমি বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। সে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসতে বলে। বাসা থেকে কিছু কাপর আর আমার বিয়ের ৬ ভরি গহনা আর আমার জমানো ২৫০০০ ছিলো সাথে একটা ব্যাগে। শহিদ মিনারের ওখানে তার সাথে আমার দেখা হয় সে বলে চলো তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাই। এই বলে সে একটা সিএনজি ডাকতে যায় কিছুসময় পর সে একটা সিএনজি ডেকে আনে।  আমার হাত থেকে  ব্যাগ আর আমার কাধের ব্যাগটা নিয়ে সিএনজিতে রাখে।  আর সে উঠে বসে সিএনজিতে আমি উঠতে যাবো আর ঠিক সেই সময় সিএনজি একটানে সেখান থেকে চলে যায়। আমি অবাক হয়ে শুনছি সব কথা বললাম কয়টা ঘটনা এটা বললো ২ টার দিকের।  আমি যখন গতকাল মনিষা দেখেছি তখন প্রায় ৫ টা বাজে মানে ৩ ঘন্টা মনিষা সেখানেই দাড়িয়ে ছিলো। মনিষা বলতে লাগলো যাকে ভালো বেসে বাবা মা মান সম্মানের কথা না ভেবে বাড়ি থেকে পালিয়ে এলাম সে আমাকে এভাবে ধোকা দিলো। দেখলাম মনিষার চোখ বেয়ে পানি পরছে। আমি বললাম এর আগে তোমরা কত বার দেখা৷ করছো মনিষা বললো এই প্রথম।  আমি বললাম যাকে পূর্বে দেখ নি তার উপর এ ভাবে বিশ্বাস করা টা ঠিক হয় নি।
আচ্ছা ওর ছবি আছে তোমার কাছে পুলিশ কমপ্লেন করা যাবে। মনিষা বললো ওর মোবাইলে ছিলো কিন্তু ওর মোবাইল ও তো নিয়ে গেছে। আমি বললাম ওর ফেসবুক আইডি ওখানে তো আছে তাই না এই বলে আমার মোবাইলটা মনিষার দিকে এগিয়ে দিলাম।  মনিষা বললো না ওর আইডিতে ওর কোন ছবি দেয়া নেই। তারপরও আমি বললাম আচ্ছা হোক তুমি ওর আইডি বের করো দেখি যদি কিছু বের করাই যায়। মনিষা আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলো না পাওয়া গেল না।  নির্ঘাত সেই আইডি ডিএক্টিভেট করছে। বললাম ওর নম্বর এ কল দাও।  না ওই নম্বর এ কল ও ডুকছে না।
আর কোন উপায় নাই এখন আর কি তবুও বললাম সমস্যা নেই আমার একজন পরিচিত লোক আছে এই নম্বর যে এনএইডি দিয়ে কেনা সেটা বের করা যায়।
মনিষা একটা বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো বুঝলাম সে পুরো হতাশাগ্রস্ত।  মনিষার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি ঝরছে আমি বলা কেঁদে না। মনিষা বললো এখন আমি কি করবো,  বাসা ফেরা আমার পক্ষে সম্ভব না,  এই মুখ নিয়ে আমি আমার বাবার সামনে দাড়াতে পারবো না।আমার কি বলা উচিত আমি বুঝলাম না।  মনিষা উঠে দাড়ালো বললো তার কাপড় গুলো কোথায় আসি বললাম বারান্দায়। সাথে করে নিয়ে দেখিয়ে এলাম সে কাপড়গুলো নিলো।  সারারাতে সব শুকিয়ে গিয়েছে।  রুমের দরজা লক করে কিছুক্ষণ পর সে বের হয়ে আসলো। তার কাপড় সে পরে নিয়েছে।  আমাকে বললো রেহান আমার যাওয়া উচিত।  আমি বললাম কোথায় যাবে ও বললো জানি না। তবে বাড়ি ফেরা সম্ভব না।  এ বলে সে দরজা৷ দিকে যাচ্ছে।
আমি বললাম মনিষা তুমি একটা মেয়ে মানুষ৷ এ শহরের দিনের বেলায় ও মেয়েরা সেফ না। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা যখন নেই তখন যাবে কোথায়।  মনিষা চুপ করে রইলো। আমি বললাম মনিষা তুমি আমার এখানে থাকতে পারো আমার কোন সমস্যা নেই। মনিষা আমার দিকে তাকালো ।  আমি বললাম না মানে যতদিন তোমার কোন ব্যবস্থা না হচ্ছে আর কি এখানে থাকো। মনিষা বললো এ হয় না রেহান আমি তোমার উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি বললাম আমি তোমাকে বোঝা মনে করি না। মনিষা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আমি বললাম আসলে আমি বলতে চাচ্ছি আমরা তো বন্ধু তাই না। একসাথে স্কুল কলেজ পড়লাম। আর আজ তুমি বিপদে পড়েছে তোমাকে আমি সাহায্য করবো না।মনিষা চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো আমি বললাম যাও ঘরে গিয়ে রেস্ট করো।
মনিষা আমার দিকে চেয়ে রইলো আমি বললাম যাও রুমে যাও। আস্তে আস্তে হেঁটে মনিষা আমার সামনে দিয়ে রুমে চলে গেল। আর আমার মনে এক অন্য রকম আনন্দের অনুভুতি হলো।
অফিসে ফোন করে বললাম গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে আমি জ্বরে আক্রান্ত তাই অফিস যাবো না।
বসে বসে ভাবতে লাগলাম এখন কি করা উচিত সর্বপ্রথম যেটা মাথায় এলো তা হলো মনিষার জন্য পোষাকের ব্যবস্থা করতে হবে। দেখলাম ১০.৩০ বাজে মার্কেট খুলেছে তাহলে মনিষার পোশাক কেনার জন্য বের হওয়া উচিত। আমি মনিষার রুমের দরজায় টোকা দিলাম।  মনিষা বের হয়ে এলো আমি বললাম মনিষা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।  দরজা বাইরে থেকে লক করে যাচ্ছি। আর এই ফোনটা রাখো এটা আমার নম্বর দেখিয়ে দিলাম কোন সমস্যা হলে আমাকে জানিয়ো। আর অন্য কোন নম্বর৷ থেকে কল এলে ধরার দরকার নেই। মনিষার হাতে আমার বাটল ফোন টা দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম।মার্কেট এ চলে এলাম কি কিনবো।  বাসায় তো পরবে তাহলে থ্রি পিছ  ভালো হবে। একটা দোকান থেকে ৫ টা থ্রি পিছ নিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো এটা তো সেলাই করতে হবে। মার্কেটের বাইরেই টেইলাস এর দোকান পেয়ে গেলাম। দেখলাম ৪ জন ৪টা মেশিনে কাপড় সেলাই করছে।  ৩জন ছেলে একজন মেয়ে আর সবার সামনে একজন লোক বসে আছে বুঝলাম ইনি মালিক। তাকে বললাম থ্রি পিছ সেলাই করা লাগতো একটা বের করে দেখালাম। বললো হবে দিয়ে যান ৪০ড় টা পিছ মজুরি আমি বললাম ঠিক আছে করে দিন। বললো  কাল নিয়ে যাবেন আমি বললাম কাল না না আজকেই লাগবে। বললো আজকে হবে না আমাদের ডেলিভারি আছে। আমি বললাম দিন না মাত্র তো ৫টা আপনার কর্মচারি আছে ৪ ছন। সবাই মিলে করলে আর কত সময়ই বা লাগবে। না রাজি হচ্ছে না বললাম আমি একটা জন্য ডাবল মজুরি দেব ৪০০ এর  জায়গায় ৮০০ দেব। লোকটা একটু কাচুমাচু করে বললো আচ্ছা দিন।  বললো দিন পুরাতন জামা দিন সেটার মাপে সেলাই করে দিচ্ছি। আমি বললাম পুরাতন জামা তো নেই। লোকটা বললো তাহলে মাপ পাবো কই। এখন কি করি আসলেই তো।  বললাম ফোনে মাপ শুনে করে দিতে পারবেন। বললো পারবে তবে জামা নষ্ট হলে তার দোষ দিতে পারবো না। আমি মনিষাকে ফোন দিলাম কয়েকবার রিং হবার পর ফোন ধরলো আমি বললাম মনিষা এই টেইলাস এ একটু কথা বলো তো ফোনে জিজ্ঞেস করতেই দেখলাম টেইলাস  মাস্টার খাতায় লেখছে ৩৪-৩২ আরও কি কি লেখলো। তারপর ফোনটা কেটে দিলো। প্রায় ৪০ মিনিট বসে থেকে সেলাই করে নিলাম। ঘড়িতে তখন ১২.৩৯  বাজে বের হয়ে হোটেল থেকে দুপুরের খাবার কিনে বসায় গেলাম। মনিষার হাতে কাপড়গুলো দিতেই মনিষা বললো এগুলোর কি দরকার ছিলো। আমি বললাম তোমার তো লাগবে তাই আনলাম।  দুপুরে একসাথে খাবার খেলাম হরেক রকম গল্প করতে করতে যে কখন রাত হয়ে গেল বুঝলামি না। সকালে অফিস যেতে হবে দ্রুত বাইরে গিয়ে বেশি করে খবার কিনে আনলাম যাতে মনিষা কাল দুপুরে ও খেতে পারে।অফিসের কাজে মন বসছে না বাসায় মনিষাকে রেখে আসলাম একা।ভাবলাম অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হবো। বের হলাম তাড়াতাড়ি কিন্তু ঢাকার যানজট আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে দিলো না। প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে যখন মনিষাকে দেখলাম মনে হলো আমার সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল। রাতের খাবার আনতে বাইরে যাবো মনিষা বললো বাসায় রান্না হয় না।  আমি বললাম হয় কিন্তু কাজের মেয়ে ছুটিতে আছে।মনিষা বললো আচ্ছা তাহলে কাল থেকে আমি রান্না করবো এমনি বসে বসে বোর হতে হয়। আমি বললাম ঠিক আছে কাল শুক্রবার বাজার আনবো সকালে রান্না করো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাজার করতে গেলাম বেশ কিছু বাজার নিয়ে ফিরলাম।  মনিষা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমি টুকটাক সাহায্য করছি। গরমে মনিষা ঘেমে যাচ্ছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন ওর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রান্না শেষ আজ প্রথম মনিষার হাতে রান্না করা কিছু খাবো। দুপুরে এক সাথে খেতে বসলাম আহ অনেকদিন পর এমন বাসার রান্না খেলাম। কাজের লোকেরা কি যেন রান্না করে কে জানে।মনিষাকে ধন্যবাদ জানালাম এমন রান্নার জন্য। বিকেলটা ঘুমিয়েই কাটালাম।সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে অথচ মনিষা এখনো রুম থেকে বের হলো না। আমি ওর রুমের দরজার কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাক দিলাম ভেতর থেক বললো আসে।  দেখলাম বিছানার এক কিনারে বসে আছে। কেমন যেন লাগছে।মনিষা কোন সমস্যা।  কিছু একটা বলতে চেয়েও যেন বলতে পারছে না।  আমি বললাম কিছু বলতে চাইলে বল। ওর মুখটা যেন লাল হয়ে গেল বললো রেহান আসলে মানে। আমি বললাম হুমম বল কি বল। রেহান আসলে প্যাড। বলে মাথাটা নিচু করে ফেললো আমি বুঝলাম। আমি বললাম আমি নিয়ে আসছি বের হয়ে গেলাম।  একটা কসমেটিক এর দোকানে ডুকে প্যাড চাইলাম। দোকানদার বললো বেন্ট না প্যান্টি সিস্টেম।আরে এবার কোনটা নেব তাড়াহুড়োতে ফোন ও রেখে চলে এসেছি।কি করি এবার বললাম প্যান্টি সিস্টেম টাই দেন।বুঝলাম আসলে তো একটা মেয়ের অনেক কিছুই লাগে কাল তো শুধু জামা কিনে দিয়েছি এটা তো ভাবি নাই।দোকারদার কে বললাম ব্রা এবং প্যান্টির কথা সাইজ জিজ্ঞেস করলো মনে পড়লো দর্জির লেখা ৩৪-৩২। অনুমান করলাম ব্রা ৩৪ আর প্যান্টি ৩২ হবে। ৩ সেট নিলাম। দোকানের শ্যাম্পু সাবান দেখে মনে হলো এগুলো তো নেয়া দরকার। বড় ২টা ডাভ সাবান, ডাভ শ্যাম্পু, ফেয়ার এন্ড লাভলি ক্রিম, বডি স্প্রে নিলাম।  দ্রুত প্য়ে ফ্লাটে ফিরলাম মনিষার হাতে পুরে প্যাকেটটা দিয়ে বের হয়ে এলাম।
[+] 6 users Like rehan301's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার প্রথম প্রেম - by rehan301 - 25-02-2023, 02:55 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)