Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
পাপ-পূণ্য

 
-"হ্যাঁ গা বাছা, মন্দিরে না ঢুকে বাইরের রোয়াকে বসে আছ কেন?"
-"এমনি।"
-"জল ঢালা হয়ে গেছে বুঝি?"
-"না… ঢালব না।"
-"সেকি বাছা! মন্দিরে এয়েছ, বসেও আছ, জল ঢালবে না?"
-"না"
-"কেন?"
-"এমনি।"
-"অ! মানো না, তাই না?"
-"মানলেই বা কী! না মানলেই বা কী!"
-"তা বটে, তোমার আর তাঁর কারোরই কিছু যায় আসে না।"
-"আমার জন্য কারোরই যায় আসে না।"
-"এ কী কথা বাছা! বাপ-মা-বৌ-ছাওয়াল শুনলে কি ভাববে?"
-" যা ভাবা উচিত, তাই ভাববে। আমি একটা অপদার্থ, একটা… কীট!"
-"ওমা, কেন?"
-"কারণ আছে দাদু, তুমি বুঝবে না!"
-"দিব্যি চোকের সামনে মানুষ বসে আছে দেখতে পাচ্ছি…"
-"কেউ দেখতে পায় না আমাকে দাদু। তাই তো…যাক গে, ছাড়ো!"
-"আহা, বলোই না। মনের কথা চেপে রাখতে নেই, জানো না? পেটে বায়ূ হয়!"
-"আর সারা দুনিয়া যে পায়ের তলায় চেপে রেখেছে?"
-"তা যারা রেকেছে, রেকেছে। আবার কেউ তো ভালোওবাসে, তাই না?"
-"নাহ্, কেউ ভালবাসে না।"
-"এ কেমন কতা বাছা!"
-"তুমি বুঝবে না দাদু! দিব্যি আছ, দাঁড়াও গেস করি… রিটায়ার করে গেছ, তাই না? তাই রবিবার দুপুরে, লাঞ্চ-টাঞ্চ করে এই বুড়োরাজ মন্দিরে বসে বিড়ি টানছ?"
-"রিটায়ার? নাহ্ রে বাবা, তার উপায় আছে নাকি? কাজ করে যেতেই হয়!"
-"এখনও কাজ করতে হয় দাদু? আহা রে?"
-"কেন বাছা, 'আহা রে' কেন?"
-"না, তোমার তো বয়স হয়েছে অনেক… এখনও কাজ করতে হয়? এখন তো বিশ্রামে থাকার কথা…"
-"সে আমার দ্বারা হয় না রে বাপধন!"
-"আর দ্যাখো দাদু, আমি সেরকম কিছুই করে উঠতে পারলাম না জীবনে। চেষ্টা করছি, অ্যাপ্লাই করছি বিভিন্ন জায়গায়… কিন্তু ভাল কিছু হচ্ছেই না।"
-"ভাল কিছু মানে?"
-"মানে ধরো, এমন কিছু যাতে একটু ভাল ভাবে বাঁচতে পারি…"
-"মানে গাড়ি, বাড়ি…?"
-"হ্যাঁ…"
-"আর?"
-"আর? ধরো ব্যাঙ্কে দেদার টাকা। যাতে কোনোরকম খরচা করার সময় এতালবেতাল ভাবতে না হয়।"
-"আর?"
-"আবার কি! একটু দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো…এই তো!"
-"আর?"
-"আর কিছু না! এইটুকু হলেই তো হয়ে গেল।"
-"আর কিচ্ছু না, দাদুভাই?"
-"আর ওই তো…"
-"ভালবাসা?"
-"হুম, কিন্তু এসব আর পাচ্ছি কোথায়? মাঝে মাঝে মনে হয়, আর বেঁচে থেকে কী হবে!"
-"আচ্ছা বাছা, আমি তো অনেকক্ষণ ধরেই এখানে বসে আছি, তা দেখলাম তুমি যেন দুটো কুকুরকে কিসব খাওয়ালে? তুমিই ছিলে তো?"
-"কুকুরকে? ওহ্, ওরা তো কালু আর ভুলু! ওরা আমার বন্ধু!"
-"তারমানে ওরা তোমাকে ভালবাসে, তাই তো?"
-"হ্যাঁ, তা বাসে! যেদিন বিস্কুট টিস্কুট কিছু দিতে পারি না, সেদিনও ওরা দৌড়ে দৌড়ে আসে, আদর খাবার জন্য।"
-"সেই তো…। তা বাছা, তুমি কি চাগরি করো কিছু?"
-"না দাদু, বললাম না, অনেক জায়গায় দরখাস্ত পাঠাচ্ছি, কিন্তু কিছু পাইনি এখনও…"
-"তাও তুমি ওদের বিস্কুট খাওয়াতে পারছ… হাতখরচ পাও তার মানে?"
-"বাবা দেন দাদু! আমার নিতে খারাপ লাগে, তাও নিয়ে নিই…"
-"এই যে বললে কেউ ভালবাসে না?"
-"না দাদু, ভালবাসে, বাবা - মা দুজনেই! তাই তো নিজেকে অপরাধী মনে হয়।"
-"বাবা-মা-কালু-ভুলু - এখানেই চারজন হয়ে গেল! তারপর ধরো আমি! আমিও ভালবাসি তোমাকে… সেটাই কী যথেষ্ট নয়?"
-"তুমি তো আমাকে চেনোই না দাদু!"
-"আমি চিনি না? তাও কী হতে পারে!"
-"ও বাবা, তুমি সবাইকেই চেনো নাকি দাদু! তুমি মানুষ, না গুগল ডট কম?"
-"নাহ্! দুটোর কোনোটাই নয়! তবে, আমি বিভূতিভূষণ, বুঝলে? আমি সব জানি!"
-"বিভূতিভূষণ! বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি! তিনি আমার প্রিয় লেখক…"
-"নাহ্, আমার কোনো পদবী নেই। আমি শুধুই নাম।"
-"শুধুই নাম? কোনো পদবী নেই?"
-"না গো বাছা! তুমিই দাদু' বললে, নইলে সবাই তো 'বাবা' বলেন!"
-"বাবা বলেন!"
-"আর তাই বলছি বাছা, তুমি ভাল থাকবে! তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে…"
-"বিভূতিভূষণ! 'বাবা' বলে সবাই আপনাকে!"
-"তা বলে বাছা! আচ্ছা, এবার যাই। অন্য একজনের কাছে যেতে হবে।"
বলেই উঠে চলে যান উনি।
আর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটি।
ছোটবেলায় 'তালনবমী' গল্পটি পড়ে ঝরঝর করে কেঁদেছিল। তারপর 'পুঁইমাচা', 'আম আঁটির ভেঁপু' আরও কত কী! তখন থেকেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওর প্রিয় লেখক। আর, তাই ও জানে, 'বিভূতিভূষণ' আসলে কার নাম! শ্মশানচারী মহাদেবের অলঙ্কার ছাই বা বিভূতি যে!এটা যে 'বুড়োরাজ' মন্দির! আর, সবাই 'বাবা' বলে ডাকে!
তবে কী স্বয়ং 'তিনি'ই ছিলেন? আর বলে গেলেন সব ভাল হবে ওর?
পলক পড়ছিল না ছেলেটির!
এই একটু আগেই মনে হচ্ছিল সব বৃথা - এ জীবন রেখে আর লাভ কী… আর এখন ভাললাগায় ভরে আছে মন…
বাবা! বাবা স্বয়ং বলেছেন ওকে ভালবাসেন!
এদিকে তখন হনহন করে হাঁটছিলেন ভুজঙ্গধরবাবু।
মাঝে মাঝেই মন্দির বা হাসপাতাল চত্বরে চলে যান উনি। কথা বলে বলে ভেঙে পড়া মানুষগুলোকে একটু ভরসা দেন, সেজন্য কখনও একটু ছলনাও করতে হয় বইকি! তবে জানেন, ভাঙা মন জোড়া লাগাতে একটু মিথ্যের প্রলেপ থাকলেও তাতে পাপ নেই! কারণ, উনি প্রতারক নন, শুধুই কবিরাজ মাত্র - মন ভাল করার জন্য ওষুধ দেন শুধু। এখন তো নিজে থেকেই বুঝে যান কার একটু কথা বলার দরকার। যেমন আজ ছেলেটিকে দেখেই কেমন একটা লাগল! উন্মনা - চোখের দৃষ্টিতে পাগলাটে ভাব। অথচ তারমাঝেও কেমন একটা খড়কুটো পেলেই আঁকড়ে ধরবে - এমন একটা বেপরোয়া ভাব!
বহুবছর থিয়েটারে অভিনয় করেছেন, তাই কথার প্যাঁচে ফেলে ছেলেটিকে 'সব ভাল হবে' বিশ্বাস করাতে বেগ পেতে হয়নি।
যেমন গতবছরও অন্য একটি মন্দিরে একটি মেয়েকে হাপুশ নয়নে কাঁদতে দেখে সামনে গিয়ে বলেছিলেন "মা গো, আমি প্রণাম করছিলাম, কিন্তু মনে হল কে যেন আমাকে বলে উঠলেন - ওই মেয়েটিকে গিয়ে বল, ওর সব মনের ইচ্ছে পূরণ হবে!" আর মেয়েটির শুনে সে কী খুশি আর সেই খুশিতে আবার কান্না!
এই নিয়েই আছেন ভুজঙ্গধর, থুড়ি, 'কবিরাজ বাবু!"
পাপী? না প্রতারক? না কি সেসবের বাইরের একজন 'মানুষ'?
কে জানে!
(আংশিক সত্যঘটনা অবলম্বনে)

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 22-02-2023, 01:18 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)